কোরআনে কী মাযহাব অনুসরণের কথা বলা হয়েছে?

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

✍ইফতেখার মিশুক

জবাবঃ পবিত্র কোরআন এমন একটি গ্রন্থ যেখানে কোন বিষয় নেই যা বর্ণনা নেই।তবে যারা উদ্ধার করতে জানেন তারাই বের করতে পারেন।মাযহাবের মত এত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের আলোচনাও কোরআনে অবশ্যই আছে।

যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেন—

يٰأَيُّهَا الَّذينَ ءامَنوا أَطيعُوا اللَّهَ وَأَطيعُوا الرَّسولَ وَأُولِى الأَمرِ مِنكُم

“হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর ও তাঁর রসুলের আনুগত্য কর এবং তোমাদের মধ্যে যারা আদেশ প্রদানকারী(মুজতাহিদ ফকিহ) রয়েছেন তাদের আনুগত্য কর।”( সূরা নিসা: আয়াত নং-৫৯)

আয়াতের সারমর্মঃ এ আয়াতে মহান রব তা’আলা যাদের আনুগত্যের আদেশ করেছেন তারা হলেন—–

  ১)আল্লাহর(কোরআনের) আনুগত্য

  ২)রাসূলের(সুন্নাতের) আনুগত্য

  ৩)আদেশ দাতাগণের অর্থাৎ ফিকহবিদ মুজতাহিদ আলিমগণের আনুগত্য।

লক্ষণীয় যে,উক্ত আয়াতে আতীউ শব্দটি দুবার ব্যবহৃত হয়েছে– আল্লাহর জন্য একবার এবং রাসূলে পাক ﷺও আদেশ প্রদারকারী মুজতাহি ফকিহগণের জন্য একবার।এর রহস্য হল আল্লাহ যা হুকুম করবেন,শুধু তাই পালন করা হবে,তার কর্ম কিংবা নীরবতার ক্ষেত্রে আনুগত্য করা যাবে না।তিনি কাফিরদেরকে আহার দেন,কখনও কখনও তাদেরকে বাহ্যিকভাবে যুদ্ধে জয়ী করান।তারা কুফরী করলেও সাথে সাথে শাস্তি দেন না।এসব ব্যাপার আমরা আল্লাহকে অনুসরণ করতে পারি না।কেননা এতে কাফিরদেরকে সাহায্য করা হয়।কিন্তু নবী করীম ﷺ ও মুজতাহিদ ইমামের প্রত্যকটা হুকুমে,প্রত্যেকটি কাজে, এমন কি যে সমস্ত ক্ষেত্রে তাঁরা নীরবতা অবলম্বন করেন,সে সমস্ত ক্ষেত্রেও তাঁদের আনুগত্য করা যায়।এ পার্থক্যের জন্য আতীউ শব্দটি দুবার ব্যবহৃত হয়েছে।

যদি কেউ বলে “উলীল আমর ” দ্বারা ইসলামী শাসনকর্তাকে বোঝানো হয়েছে,এতে উপরোক্ত বক্তব্যে কোনরুপ তারতম্য ঘটবে না।কেননা শুধু শরীয়তসম্মত নির্দেশাবলীতেই শাসনকর্তার আনুগত্য করা হবে,শরীয়ত বিরোধী নির্দেশাবলীর ক্ষেত্রে আনুগত্য করা যাবে না।ইসলামী শাসনকর্তা হচ্ছেন কেবল হুকুম প্রয়োগকারী।তাকে শরীয়তের যাবতীয় আহকাম মুজতাজিদ আলিমগণের নিকট থেকে জেনে নিতে হবে।দেখা যাচ্ছে আসল আদেশ প্রদানকারী হচ্ছে ফিকহবিদগণ।

উদাহরণ:

————-

এ আয়াতে এ বিষয়ের প্রতিও পরোক্ষ ইঙ্গিত রয়েছে যে,অনুশাসন তিন রকমের আছে।

১) কতগুলো অনুশাসন সরাসরি কোরআন থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত।যেমন: অন্তঃসত্তা নয় এমন মহিলার স্বামী মারা গেলে,তাকে ৪মাস ১০ দিন ইদ্তত পালন করতে হয়।এদের প্রতি আল্লাহর নির্দেশ ‘আতীউল্লাহ’ থেকে অনুশাসন গৃহীত হয়েছে।

২) আর কতগুলো অনুশাসন সরাসরি হাদিস থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত।যেমনঃসোনারুপা নির্মিত অলংকার ব্যবহার পুরুষের জন্য হারাম।এ ধরনের অনুশাসন মেনে চলার জন্য ‘আতীউর রসুল’ বলা হয়েছে।

৩)আর কতগুলো অনুশাসন আছে যেগুলো স্পষ্টভাবে কোরআন বা হাদিস থেকে প্রতীয়মান হয় না।যেমনঃস্ত্রীর সঙ্গে পায়ুকামে লিপ্ত হবার ব্যাপারটি অকাট্যভাবে হারাম হওয়ার বিধান।এ ধরনের অনুশাসন মেনে চলার জন্য ‘উলীল আমরে মিনকুম’ তথা মুজতাহিদদের আনুগত্যের কথা বলা হয়েছে।

✍এই আয়াত নিয়ে সাহাবীদের তাফসীরঃ

———————————————————–

ইমাম হাকেম নিশাপুরী(ওফাত ৪০৫হিজরী) বর্ণনা করেন,  ” বিশিষ্ট সাহাবী হযরতজাবের বিন আবদুল্লাহ(রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) সূরা নিসার ৫৯ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন,(কোরআন সুন্নাহের পর)উত্তম মুজতাজিদ ফকিহগণের আনুগত্য কর।”

(আল মুস্তাদরাক: ১/২১১পৃঃ,হাদিস নং-৪২২)

✍ইমাম হাকেম ও ইমাম যাহাবী সনদটিকে সহীহ বলেছেন।

✍লক্ষণীয় যে,সাহাবীদের কোরআনের তাফসীর মারফু হাদিসের ন্যায়।ইমাম হাকেম নিশাপুরী বলেন,”ইমাম বোখারী মুসলিমের নিকট সাহাবীদের তাফসীর মারফু হাদিসের ন্যায়”।(আল মুস্তাদরাক: ১/২১১পৃঃ,হাদিস নং-৪২২)

ইমাম নববী আশ শাফেয়ী (ওফাত ৬৭৬হিজরী) বলেন,”সাহাবীদের কোরআনের কোন ব্যাখ্যা মারফু হাদিসের ন্যায়”।(আল তাক্ববীর ওয়াল তাইসীরঃ৩৪ পৃঃ)

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় রঈসুল মুফাসসির হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)হতে একটি ব্যখ্যা সংকলন করে ইমাম হাকেম—

“হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস(রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেন,এ আয়াতে (উলীল আমরে মিনকুম) আদেশ দাতা হল দ্বীনের মুজতাজিদ ফকিহগণ।”(হাকেম: মুস্তাদরাক,১/২১১পৃঃ,হাদিস নং-৪২৩)

✍আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় যে,আল্লাহর নবীর পরে সাহাবীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী যিনি কোরআন বুঝেছেন তিনি হলে সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস(রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)।কেননা তার জন্য রসুলে পাকﷺ দোআ করেছেন।ইমাম বোখারী বর্ণনা করেন—

“তাবেয়ী হযরত ইকরামা(রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেন,সাহাবী ইবনে আব্বাস(রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেন,রাসূলে পাক ﷺ তাঁর বক্ষের সাথে আমাকে লাগিয়ে দোয়া করেছেন, হে আল্লাহ! তাকে তুমি কিতাবের(কোরআনের) জ্ঞান দান কর।”

(বোখারী: ১/২৬ পৃঃ,হাদিসঃ৭৫)

(ইনশাআল্লাহ চলবে)

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment