লিখেছেনঃ উম্মে আব্দুল্লাহ
ঘটনা ১:
রুকিয়া নিয়ে কাজ করার প্রথমদিকের কথা এক আপু ইনবক্সে তার সমস্যা জানানোর পর সমাধান না চেয়ে পেছনের কারন জানতে চাইলেন। সমস্যাটা উনার ছিলো না। ছিলো উনার মামীর। সমস্যা শুনে মনে হচ্ছিলো বদনজর আর সিহরের সমস্যা(বাকি আল্লাহ তা’আলাই ভালো জানেন)। উনাকে বললাম আপু এইগুলা হতে পারে। মজার ব্যাপার হচ্ছে উনারা নিজেরাও জানেন এই সমস্যা। উনি আসলে চাচ্ছিলেন এই ঘটনার পেছনে কে আছে তা জানতে। আমি উনাকে যতই বুঝানোর চেষ্টা করি উনি কিছুতেই বুঝেন না। উনার একই কথা উনাকে জানতে হবে আর উনি আমাকে নক দিয়েছেন এই কারনেই যে কেউ ইস্তেখারা করে কিনা। উনাকে এমন একজন আলেম খুঁজে দিতে হবে যিনি কিনা জানাবেন আসল ঘটনা কি। এর আগে তিনি বহুজনকে দিয়ে ইস্তেখারা করিয়েছেন। কিন্তু তিনি বিশেষ কিছু জানতে পারেন নি। তাই তিনি হতাশ হয়ে পড়েছেন।
তার উপর তার অভিযোগ ছিলো যে এতো ইস্তেখারা করছি সমস্যা তো কমেনি। আমি উনাকে বুঝানোর চেষ্টা করলাম যে ইস্তেখারা করেছেন ভালো কথা এখন একটু সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন। সমস্যা সমাধানের জন্য তো মানুষ ইস্তেখারা করেনা। কিন্তু উনি নাছোড়বান্দা। উনি ইস্তেখারাই করবেন আবার।
ওয়াল্লাহি, উনি যতসময় ধরে ইস্তেখারা করছেন তত সময় যদি সমস্যা সমাধানের পেছনে দিতেন তার সমস্যা সমাধান হয়ে যেত। (আল্লাহ চান তো)
ঘটনা ২:
এক আপুর এস এম এস ছিলো এমন,
আপু আপনি কি কবিরাজ??
না আপু।
আপনি কি গননা করেন? (মানে উনি বলতে চাচ্ছিলেন গায়েব জানি কিনা)
না আপু গায়েবের খবর একমাত্র আল্লাহ তা’আলা জানেন। কোন মানুষেরই গায়েব জানার/বলার ক্ষমতা নাই। আর যারা এইগুলা করে বা বলে তাদের থেকে দুরত্ব বজায় রাখাই উত্তম।
উনি আমার উত্তরে সন্তুষ্ট হতে পারেন নি।পরে উনার কথা শুনে বুঝলাম উনি এমন কাউকে খুঁজছেন যিনি কিনা হাত গননা করেন। মানে উনার সমস্যা সমাধানের থেকে সমস্যার পেছনের কারন জানা দরকার।
ঘটনা ৩:
পরিচিত এক আন্টি যাদু-টোনার সমস্যায় ভুগছিলেন। অনেক হুজুর কবিরাজ দেখিয়েছেন।যাইহোক এইবার কোন এক কবিরাজ উনাদের বলেছেন যে উনার খুব কাছের এক আত্মীয়(নির্দিষ্ট করে বলেছেন) উনাদের যাদু করেছেন। ব্যাস! আন্টিরা উনাদের সেই আত্মীয়কে ধরলেন। আর এরপরের বাকিটা ইতিহাস….
ঘটনা ৪:
এক আপুর কথা বলি উনারও সিহরের সমস্যা। বেশ কয়েকবছর থেকে ভুগতেছেন। উনার যে ধরনের সমস্যা সেই সমস্যা থেকে অনেকেই শিফা লাভ করছেন আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু ইনার বিশেষ কোন ফায়দা হয়না। কারন উনি সমস্যা সমাধানের থেকে বেশি পেছনের কারনগুলো নিয়ে বেশি ব্যস্ত। এর পেছনে কি কারন থাকতে পারে? কে বা কারা এইটা করেছে?
উপরে তো শুধুমাত্র চারটা ঘটনার কথা বললাম এ যাবৎ পর্যন্ত যত জনের সমস্যা শুনেছি তাদের বেশিরভাগই এ ধরনের চিন্তা ভাবনা পোষন করেন। অনেকে তো আরো কয়েকধাপ এগিয়ে উনারা নিজেরাই জানেন কে বা কারা এ ঘটনার পেছনে আছেন। আর সেটা পাব্লিকলিও বলে বেড়ান। যদি বলা হয় কিভাবে জানছেন। উত্তর আসে অমুক হুজুর,তমুক কবিরাজ এর জেনেছেন। অনেকে আবার আলেম ব্যক্তি, বুজুর্গ ইনাদের থেকেও নাকি শুনেন। অনেক হয়েছে এইবার বন্ধ করেন এইসব। আর কত!
আপনি শিরক কুফরের ভয়ে রুকিয়া করাতে চাচ্ছেন অথচ সমস্যার কারন জানার জন্য আবার তাদের কাছেই যাচ্ছেন। ব্যাপারটা হচ্ছে এমন, ডাকাতি করা গুনাহ দেখে আপনি ডাকাতি বাদ দিয়ে চুরি করা ধরছেন। অথচ এ সম্পর্কে হাদিস শরিফে নানাভাবে হুশিয়ারি দেয়া হয়েছে। নবী কারীম (স) বলেন: “যে ব্যাক্তি কোন জ্যোতিষীর নিকট গেলো এবং তার নিকট কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করলো তবে ৪০ রাত পর্যন্ত তার নামাজ কবুল হবেনা।” (সহিহ মুসলিম)
অন্য এক হাদিসে আছে,”যে ব্যক্তি জ্যোতিষি,যাদুকর বা কোন গনকের নিকট আসলো আর সে যা বলে তা বিশ্বাস করলো তাহলে সে মুহাম্মদ (স) এর প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা কুফুরি করলো।” (তারগীব ৪/৫৩)
এরপরে আর কিছু বলার দরকার আছে বলে আমার মনে হয়না।
বেশিরভাগ ভিক্টিমই তাদের সমস্যার কথা বলতে গিয়ে বলেন, আমার অমুক আত্মীয় আমাকে যাদু করেছে। কেউ কেউ পরিবারের সদস্যের কথাও বলেন। অথচ আমাদের একে অপরকে সন্দেহ করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। তারপরেও আমরা ওই কাজই করছি। তাও আবার কার কথা শুনে যাদুকর, কবিরাজ এদের কথা শুনে। যারা কিনা শয়তানের সাহায্য নেন। আর শয়তান? যে কিনা আপনাকে জান্নাতে যেতে না দেয়ার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তাহলে এখন ভাবুন আপনি কোন পথে যাবেন। আপনি কেন বুঝতেছেন না এইটা শয়তানের একটা সুক্ষ্ম চাল আমাদের গোমরাহ করার। আমাদের দিয়ে শিরক কুফরের মত ভয়ংকর গুনাহ করানোর। অন্যদিকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অভিযুক্ত ব্যক্তিরা খুবই কাছের হন। আর ফলাফল সম্পর্কে ফাটল। আর এইটা সবারই জানা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী কখনো জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেনা। তাহলে এতকিছু করে আপনার লাভটা হলো কি?
গুনাহর খাতায় নতুন নতুন গুনাহ যোগ, মানুষিক অশান্তি আর জান্নাতে প্রবেশ না করতে পারার গ্যারান্টি। আর হ্যাঁ একটা অনুরোধ আপনি যখন আপনার সমস্যার কথা জানাবেন তখন দয়া করে এই বিষয়গুলো পরিহার করবেন। কোন কবিরাজ, কোন হুজুর আপনাকে কি বললো বা কোন আত্মীয় আপনাকে কি করলো এইগুলা জানার কোন প্রয়োজন নেই আমাদের। আমরা বিশ্বাস করি একমাত্র রব্বুল আ’লামীনই গায়েব জানেন।
তিনি ব্যতীত অন্য কোন মাখলুকাতের গায়েবের খবর বলার ক্ষমতা নেই। সুতরাং যারা এইগুলা বলে বা করে তাদের থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন। আর ইতিমধ্যে যদি এমন কিছু আপনার দ্বারা হয়ে যায় তাহলে তার জন্য দ্রুত তওবা করুন। কেননা ইস্তেগফারই সমস্যা সমাধানের উত্তম চিকিৎসা। রব্বুল আ’লামীন আমাদের সকলকে শিরক, কুফরের মত ভয়ংকর গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করুন। আমীন।