প্রত্যেক বালিগ, স্থায়ী বাসিন্দা, মুসলমান পুরুষ-নারী, নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিকের উপর কুরবানী ওয়াজিব। (আলমগিরী, ৫ম খন্ড, ২৯২ পৃষ্ঠা)
নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়ার দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, ঐ ব্যক্তির নিকট সাড়ে ৫২ তোলা রূপা অথবা তত পরিমাণ সম্পদের মূল্য অথবা তত পরিমাণ সম্পদের ব্যবসার মাল অথবা তত পরিমাণ সম্পদের মৌলিক প্রয়োজন ছাড়া সরঞ্জাম হোক এবং তার উপর আল্লাহ্ তাআলা বা বান্দাদের এত কর্জ না থাকে যা আদায় করতে গিয়ে বর্ণিত নিসাব বাকী থাকবে না। ফোকাহায়ে কেরাম বলেন: মৌলিক প্রয়োজন (অর্থাৎ জীবনের প্রয়োজনীয়তা) থেকে ঐ জিনিস উদ্দেশ্য যেগুলোর সাধারণ ভাবে মানুষের প্রয়োজন হয় এবং এগুলো ছাড়া জীবন ধারণ করা খুবই কঠিন আর অভাব অনুভূত হয় যেমন- থাকার ঘর, পরিধানের কাপড়, বাহন, ইলমে দ্বীনের কিতাবসমূহ এবং পেশার সরঞ্জাম ইত্যাদি। (আল হিদায়া, ১ম খন্ড, ৯৬ পৃষ্ঠা)
যদি ‘মৌলিক প্রয়োজন’ এর সংজ্ঞা চোখের সামনে রাখা হয়, তবে ভালভাবে জানা যাবে যে, “আমাদের ঘরের অনেক জিনিস” এমন রয়েছে, যা মৌলিক প্রয়োজনের অন্তর্ভূক্ত নয়। এমনকি যদি ঐ গুলোর মূল্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা’র সমপরিমাণে পৌঁছে তবে কুরবানী করা ওয়াজিব হবে।
(১) কিছু লোক সম্পূর্ণ পরিবারের পক্ষ থেকে একটি ছাগল কুরবানী দিয়ে থাকে। অথচ অনেক সময় নিছাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়ার কারণে পরিবারের একাধিক সদস্যের উপর কুরবানী দেওয়া ওয়াজিব হয়েছে। এদের পক্ষ থেকে পৃথক পৃথক কুরবানী দিতে হবে। একটি ছাগল যা সবার পক্ষ থেকে কুরবানী দেয়া হয়েছে, কারো পক্ষ থেকে ওয়াজিব আদায় হয়নি, কেননা ছাগল এক অংশের চেয়ে বেশি অংশ হতে পারেনা। কোন এক নির্ধারিত ব্যক্তির পক্ষ থেকে ছাগল কুরবানী হতে পারে।
(২) গরু, মহিষ এবং উট দ্বারা সাত জনের পক্ষ থেকে কুরবানী হতে পারে।
(ফতোওয়ায়ে আলমগীরী, ৫ম খন্ড, ৩০৪ পৃষ্ঠা)
(৩) নাবালেগ সন্তানের উপর যদিও কুরবানী ওয়াজিব নয়, তবুও তার পক্ষ থেকে কুরবানী দেওয়া উত্তম (এবং এক্ষেত্রে তাদের অনুমতি নেওয়ারও প্রয়োজন নেই)। প্রাপ্ত বয়স্ক সন্তান বা স্ত্রীর পক্ষ থেকে কুরবানী দিতে চাইলে তাদের অনুমতি নিতে হবে। যদি তাদের অনুমতি ব্যতীত তাদের জন্য কুরবানী দেওয়া হয় তাহলে তাদের পক্ষ থেকে ওয়াজিব আদায় হবেনা। (ফতোওয়ায়ে আলমগীরী, ৫ম খন্ড, ২৯৩ পৃষ্ঠা। বাহারে শরীয়াত, ৩য় খন্ড, ৪২৮ পৃষ্ঠা) অনুমতি দু’ধরনের হয়ে থাকে; (১) প্রকাশ্য ভাবে। যেমন- তাঁদের মধ্য থেকে কেউ যদি সুস্পষ্ট ভাবে বলে দেয় যে, “আমার পক্ষ থেকে কুরবানী দিয়ে দাও।” (২) প্রমাণ সহকারে (যেমন- অনুমতি বুঝা যায় এমন আচরণের মাধ্যমে) যেমন- সে নিজের স্ত্রী কিংবা সন্তানদের পক্ষ থেকে কুরবানী আদায় করছে আর তারাও (স্ত্রী, সন্তানরা) এ ব্যাপারে অবগত আছে এবং সন্তুষ্টও রয়েছে। (ফতোওয়ায়ে আহলে সুন্নাত)
(৪) কুরবানীর সময় কুরবানী করাটাই আবশ্যক। অন্য কোন বস্তু কুরবানীর স্থলাভিষিক্ত হতে পারে না। যেমন পশু কুরবানী করার পরিবর্তে পশুটি ছদকা করে দেওয়া বা এটির মূল্য দান করে দেওয়া যথেষ্ট নয়। (ফতোওয়ায়ে আলমগীরী, ৫ম খন্ড, ২৯৩ পৃষ্ঠা। বাহারে শরীয়াত, ৩য় খন্ড, ৩৩৫ পৃষ্ঠা)
আ‘লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, মাওলানা শাহ ইমাম আহমদ রযা খান ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ কে প্রশ্ন করা হল, “যদি যায়েদের নিকট থাকার ঘর ছাড়া দু’একটি আরো (বেশি) ঘর থাকে, তবে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে কি-না? উত্তর: ওয়াজিব। যখন শুধু ঘর বা তার এবং তার সম্পদে ‘মৌলিক প্রয়োজন থেকে বেশি হয়, (অর্থাৎ- এতটুকু সম্পদ, যা সাড়ে বায়ান্ন তোলা চাঁদির সমপরিমাণের মূল্যে পৌছে। যদিও ঐ ঘরগুলো ভাড়ার ভিত্তিতে চালায় বা খালি পড়ে আছে বা সাধারণ জমি বরং (যদি) বসবাসের ঘর এত বড় যে, তার এক অংশ ঐ ব্যক্তির ঠান্ডা এবং গরম উভয় মৌসুমে বসবাসের জন্য যথেষ্ট এবং অপর অংশ প্রয়োজন থেকে অতিরিক্ত আর এ (অপর অংশের) মূল্য একাকী বা এরকম মৌলিক প্রয়োজন) থেকে অতিরিক্ত সম্পদের সাথে মিলে নিসাব পর্যন্ত পৌঁছে। তখনও কুরবানী ওয়াজিব। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ২০তম খন্ড, ৩৬১ পৃষ্ঠা)
সম্পদ এবং অন্যান্য শর্তাবলী কুরবানীর দিনসমূহের (অর্থাৎ ১০ই জিলহজ্জের সুবহে সাদিক থেকে শুরু করে ১২ই জিলহজ্জ সূর্যাস্ত পর্যন্ত) মধ্যে পাওয়া গেলে, তখনই কুরবানী ওয়াজিব হবে। এ মাসআলা বর্ণনা করতে গিয়ে সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরীকা হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতী আমজাদ আলী আযমী ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ “বাহারে শরীয়াত” এর মধ্যে বলেন: এটা আবশ্যক নয় যে, দশম তারিখেই কুরবানী করে ফেলবে। এটার জন্য অবকাশ রয়েছে, সম্পূর্ণ সময়ে যখন চাইবে করতে পারবে (১০ই জিলহজ্জের সকাল) তার উপযুক্ত ছিল না। ওয়াজিব হওয়ার শর্তাবলী পাওয়া যায়নি আর শেষ সময়ে (অর্থাৎ ১২ই জিলহজ্জের সূর্যাস্তের পূর্বে) উপযুক্ত হয়ে গেল অর্থাৎ কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার শর্তাবলী পাওয়া গেল, তবে তার উপর (কুরবানী) ওয়াজিব হয়ে গেল এবং যদি শুরুর সময়ে ওয়াজিব ছিল আর এখনো (কুরবানী) করেনি এবং শেষ সময়ে শর্তাবলী বিলুপ্ত হয়ে যায়, তবে কুরবানী ওয়াজিব রইলনা। (ফতোওয়ায়ে আলমগীরি, ৫ম খন্ড, ২৯৩ পৃষ্ঠা)