কুরবানী ও আক্বীকা আলাদা করা আওলা তথা উত্তম । তবে একত্রে করলে আদায় হয়ে যাবে। এছাড়াও কুরবানী-আকীকা একত্রে করলে দুটোই আদায় হবে। কারণ আক্বীকাও এক প্রকার কুরবানী। হাদীস শরীফে আক্বীকার উপরও ‘নুসূক’ শব্দের প্রয়োগ হয়েছে। আর এখানে ‘নুসূক’ অর্থ কুরবানী।
#হাদীসে বলা হয়েছে,
سئل رسول الله صلى الله عليه وسلم عن العقيقة، فقال : لا أحب العقوق كأنه كره الاسم، قالوا يا رسول الله! نسألك عن أحدنا يولد له، فقال : من أحب منكم أن ينسك عن ولده فليفعل، على الغلام شاتان مكافأتان، وعلى الجارية شاة.
(দ্র. আলমুসান্নাফ, আব্দুর রাযযাক : ৭৯৬১; আলমুসনাদ, আহমদ : ৬৭১৩, ৬৭২২; আসসুনান, আবু দাউদ ( আক্বীকা অধ্যায়) ২৮৪২; আস-সুনান, নাসায়ী : ৭/১৬২, ১৬৩; আলমুসান্নাফ, ইবনে আবী শাইবা ১২/৩২৪ হাদীস : ২৪৭২৭; আলমুসতাদরাক, হাকিম, ৫/৩৩৭, হাদীস : ৭৬৬৬)
#আরো বলা হয়েছে-
سئل رسول الله صلى الله عليه وسلم عن العقيقة، فقال : لا يحب الله العقوق، من ولد له منكم ولد فأحب أن ينسك عنه فليفعل.
( আলমুসান্নাফ, ইবনে আবী শাইবা ১২/৩২১, হাদীস : ২৪৭২২; আলমুয়াত্তা, ইমাম মালিক, আকীকাঅধ্যায়, হাদীস : ৬৫৮)
💚আক্বীকা যখন এক প্রকারের কোরবানী তখন একটি গরু বা উট দ্বারা একাধিক ব্যক্তির (সাত জন পর্যন্ত) আলাদা-আলাদা কুরবানী আদায় হওয়ার হাদীসগুলো থেকে কুরবানী-আক্বীকা একত্রে আদায়ের অবকাশও রয়েছে। এটা ইসলামী শরীয়তে স্পষ্ট, গরু বা উটের ক্ষেত্রে একটি ‘জবেহ’ সাত জনের সাতটি জবেহের স্থালাভিষিক্ত বলে গণ্য হবে। একারণেএকটি উট বা গরু সাতজনের পক্ষে যথেষ্ট হবে।
💜সহীহ মুসলিমে,
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে, ‘আমরা হজ্বেরইহরাম বেঁধে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে বের হলাম। তিনি আমাদেরকে আদেশ করলেন, যেন প্রত্যেক উট ও গরুতে সাতজন করে শরীক হয়ে কুরবানী করি।’
(সহীহ মুসলিম, কিতাবুল হজ্ব, হাদীস : ১৩১৮/৩৫১
خرجنا مع رسول الله صلى الله عليه وسلم مهلين بالحج، فأمرنا رسول الله صلى الله عليه وسلم أن نشترك في الإبل والبقر، كل سبعة منا في بدنة.
অন্য এক বর্ণনায় আছে, হযরত নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘(একটি) গরুতে সাতজনের পক্ষ হতে এবং একটি উট সাতজনের পক্ষ হতে (কুরবানী জায়েয)।’
البقرة عن سبعة والجزور عن سبعة.
(আস-সুনান, আবু দাউদ, হাদীস : ২৮০১, কিতাবুল আযাহী)
💚সারকথা, ‘নুসুক’ বা কুরবানীর ক্ষেত্রে শরীয়তের প্রতিষ্ঠিত মূলনীতি এই যে, ছাগল,ভেড়া ও দুম্বার ক্ষেত্রে একটি ‘জবাই’ (إراقة الدم) দ্বারা একটি কুরবানী আদায় হলেও উট ও গরুর ক্ষেত্রে একটি ‘জবাই’ দ্বারা সাতটি কুরবানী আদায় হবে। অর্থাৎ এখানে‘জবেহে শরীক হওয়ার ব্যাপারে (সর্বোচ্চ সাত জন ব্যাক্তি) কুরবানী আদায়ের পক্ষে যথেষ্ট । আক্বীকাও যেহেতু ‘নুসুক’ বা কুরবানী তাই এ মূলনীতিতে আক্বীকাও শামিল হবে। সুতরাং ‘একটি পশু জবেহ’ করা দ্বারা যেমন আদায় হবে, তেমনি নির্ধারিত নিয়মে‘জবেহে শরীক হওয়া’ (شركة في دم) দ্বারাও তা আদায় হবে।
সুতরাং এ প্রশ্নের অবকাশ থাকবে না যে, ‘আক্বীকার ক্ষেত্রে যে একই পশু জবেহ করতে হবে। অতএব অন্তত একটি পশু জবাইয়ের দ্বারাই তা আদায় সম্পূর্ণ হবে।’ কারণ শরীয়তের দৃষ্টিতে পশু জবাই (إراقة الدم)-এর দায়িত্ব যেমন একটি পশু জবেহ করার দ্বারা আদায় হবে। তেমনি নির্ধারিত পশুতে ‘শরীক হওয়ার’ দ্বারাও (شركة في دم) আদায় হবে। আক্বীকার ক্ষেত্রে এই মূলনীতি প্রযোজ্য নয় বলে দাবি করলে ব্যতিক্রমের বিধানসম্বলিত দলীল প্রয়োজন হবে। ওলামায়ে কেরামের মতে এমন কোনো দলীল নেই।
এখন, দুই ধরনের কুরবানী এক পশু দ্বারা আদায় হওয়ার প্রশ্ন, তো এটি একটি ইজতিহাদী বিষয়। একারণে মুজতাহিদ ইমামগণের মাঝে এ বিষয়ে কিছু মতপার্থক্য আছে। কিন্তু নস বা কুরআন-সুন্নাহতে সুষ্পষ্ট কোনো বিধানে এ বিষয়ে নিষেধ আছে বলে, পাওয়া যায় না, বরং অনুমোদনের পক্ষে হাদীস-আছারের দলীল আছে। পক্ষে বিখ্যাত তাবেয়ী ইমাম ‘আতা ইবনে আবী রাবাহ (রহঃ). এর ফতোয়াটিই সম্ভবত বিজ্ঞজনের জন্য যথেষ্ট হবে। তিনি বলেছেন, ‘উট ও গরু সাতজনের পক্ষ হতে কুরবানী হতে পারে। আর এতে শরীক হতে পারে কুরবানীকারী, তামাত্তু হজ্বকারী এবং হজ্বের ইহরাম গ্রহণের পর হজ্ব আদায়ে অপারগ ব্যক্তি।
( আসসুনান, সায়ীদ ইবনে মানসূর-আল কিরা লি-কাসিদি উম্মিল কুরা, পৃ. ৫৭৩)
প্রখ্যাত তাবেয়ী হযরত হাসান বসরী (রহঃ) বলেন-
إذَا ضَحُّوا عَنْ الْغُلَامِ فَقَدْ أَجْزَأَتْ عَنْهُ مِنْ الْعَقِيقَةِ .
যদি শিশুর পক্ষ থেকে কুরবানীর দিন কুরবানী করা হয় তাহলে উক্ত কুরবানী শিশুর আক্বীকার জন্যও যথেষ্ট হবে । (অর্থাৎ এর দ্বারা আক্বীকাও আদায় হবে) , মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৫/৫৩৪।