মাসয়ালা (১) - কুরবানীর মাংস নিজে খেতে পারে অথবা কোনো গরীব অথবা কোন ধনীকে ও প্রদান করতে পারে। কুরবানী দাতার জন্য কুরবানী মাংস খাওয়া মুস্তাহাব। কুরবানীর মাংস তিন অংশ করা মুস্তাহাব। একাংশ গরীবের জন্য, একাংশ আত্মীয়-স্বজনের জন্য এবং এক অংশ নিজের জন্য রাখবে। একাংশের কম দান করা উচিৎ নয়। সমস্ত মাংস সাদকা করে দেয়া জায়েজ। অনুরূপ সমস্ত মাংস নিজের জন্য রেখে দেয়াও জায়েজ। তিন দিনের অধীক কুরবানীর মাংস রেখে খাওয়া জায়েজ। যদি কুরবানী দাতা গরীব হয় এবং সংসারে অনেক মানুষ থাকে, তাহলে নিজের বাড়ির জন্য সমস্ত মাংস রেখে দেয়া উত্তম। (আলমগীরি)
মাসয়ালা(২) - ভারতীয় অমুসলিম হারবী কাফের। কুরবানীর মাংস হারবী কাফেরকে দেয়া জায়েজ নয়। (বাহারে – শরিয়াত ও কানুনে – শরিয়াত ও আনওয়ারুল – হাদীস)।
– বিশেষ বিজ্ঞপ্তি –
=========
কাফের তিন প্রকার। যথা – মুস্তামিন, জিম্মী, হারবী।
যে কাফের মুসলিম বাদশাহর নিকট থেকে আশ্রয়ের অনুমতি নিয়ে মুসলিম দেশে এসেছে তাকে বলা হয় মুস্তামিন। যে কাফের মুসলমান বাদশাকে জিজিয়া দেবার শর্তে মুসলিম দেশে বাস করে তাকে বলা হয় জিম্মী। যে কাফের নিজ ধর্ম পালনে স্বাধীন তাকে বলা হয় হারবী।
প্রকাশ থাকে যে, হারবী কাফেরের হুকুম সম্পূর্ণ সতন্ত্র। এবার এখানকার কাফেররা কোন পর্যায় পড়ছে তা লক্ষ্যনীয়। আরো প্রকাশ থাকে যে হুজুর সাল্লালাহু তায়ালা আলাইহি ওসাল্লামের যুগে মক্কা ও মদীনা শরীফে হারবি কাফের ছিলোনা। সুতরাং হাদীস পাকে যে কাফেরকে মাংস দেয়ার কথা বলা হয়েছে সে কাফের ছিলো জিম্মী। তা বোঝার মতো বোধ ওহাবীদের মধ্যে নেই। তাই তারা এখানকার অমুসলিমকে কুরবানী মাংস দেয়া জায়েজ বলে থাকে।
মাসয়ালা(১) – যদি কুরবানী মান্নতের হয়, তাহলে কুরবানী দাতা গরীব হলে ও নিজে খেতে পারবেনা এবং কোনো ধনীকেও খাওয়াতে পারবেনা। বরং সমস্ত মাংস সাদকা করে দেয়া ওয়াজিব। (যায়লাই, ও বাহারে শরীয়ত)
মাসয়ালা(২) - মৃত ব্যক্তির পক্ষ হতে কুরবানী করলে তার মাংস নিজে খেতে পারে। ধনী ও গরীব সবাইকে খাওয়াতে পারে। তিন অংশ করতে পারে। প্রয়োজনে সমস্ত মাংস নিজের জন্য রাখতে পারে। অবশ্য মৃত ব্যক্তি যদি তার পক্ষ হতে কুরবানী করার জন্য অসীয়ত করে যায়, তাহলে সমস্ত মাংস সাদকা করতে হবে। (রদ্দুল মুহতার)
মাসয়ালা(৩) - কুরবানীর চামড়া এবং তার দড়ি ইত্যাদি সমস্ত জিনিস সাদকা করতে হবে। কুরবানীর চামড়া বিক্রয় না করে নিজের কাজে ব্যবহার করতে পারে। যথাঃ নামাজের মুসাল্লা, মশক, থলী ইত্যাদি করা জায়েজ (দুররে মুখতার)।
মাসয়ালা(৪) - কুরবানী চামড়া দ্বারা নিজের কোনো প্রয়োজনীয় জিনিষ তৈরি করলে তা ভাড়ায় দেয়া জায়েজ। যদি ভাড়ায় দিয়ে থাকে তাহলে সেই পয়সা সাদকা করতে হবে। (রদ্দুল মুহতার)
মাসয়ালা(৫) – কুরবানী চামড়ার পরিবর্তে কোরআন শরীফ ও কিতাব নেয়া জায়েজ। (দুররে মুখতার)
মাসয়ালা(৬) - কুরবানীর চামড়া অথবা তার পয়সা এক ব্যক্তিকে অথবা একাধিক ব্যক্তিকে সাদকা করা জায়েজ। কুরবানীর চামড়া অথবা পয়সা দ্বীনি মাদ্রাসা দেয়া জায়েজ। (বাহারে – শরিয়াত ও কানুনে – শরীয়ত)
মাসয়ালা(৭) – ওহাবী দেওবন্দী মাদ্রাসায় জাকাত, উশুর ও কুরবানী এবং ফিতরার পয়সা দান করা হারাম। অনুরূপ তাবলীগ জামায়াত ও জামায়াতে ইসলামী তহবিলে দান করা ও হারাম (ফাতাওয়ায়ে - উলামায়ে – আহলে – সুন্নাত)।
মাসয়ালা(৮) – কুরবানীর মাংস ও চামড়ার পরিবর্তে কোনো খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করা জায়েজ নয়। পরিবর্তন করলে সাদকা করতে হবে। (দুররে মুখতার ও হিদায়া)
মাসয়ালা(৯) – কুরবানীর পশুর চর্বি, পশম ইত্যাদির পরিবর্তে কোনো খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করলে সাদকা করতে হবে (আলমগিরী)।
মাসয়ালা(১০) – কুরবানীর মাংস, চামড়া অথবা তার অন্য কোনো অংশ জবেহ করার পারিশ্রমিক হিসেবে দেয়া জায়েজ নয়। (হিদায়া)
মাসয়ালা(১১) - কষাইকে অথবা যারা মাংস তৈরি করে থাকে, তাদের পারিশ্রমিক হিসেবে মাংস দেয়া জায়েজ নয়। পারিশ্রমিক হিসেবে পয়সা দেয়া হবে। অবশ্য অন্য মুসলমানদের ন্যায় তাদের মাংস দেয়া জায়েজ। (বাহারে – শরিয়াত)
মাসয়ালা(১২) – চিহ্ন স্বরূপ ভেড়ার লোম কেটে নিলে তা ফেলে দেয়া জায়েজ নয়। বরং সাদকা করে দিতে হবে (আলমগীরী)
মাসয়ালা(১৩) – নিজের কোনো কাজের জন্য জবেহ করার পূর্বে কুরবানীর পশুর পশম কেটে নেওয়া, দুধ দহন করা, পশুর পিঠের উপর আরোহণ করা, তার পিঠের উপর করে কোনো জিনিষ বহন করা ও পশুকে ভাড়ায় দেয়া ইত্যাদি মাকরূহ এবং নিষেধ (দুররে মুখতার ও রদ্দুল মুহতার)।
মাসয়ালা(১৪) - জবেহ করার পর পশুর পশম কেটে নিজের কাজে ব্যবহার করা জায়েজ। অনুরূপ জবেহ করার পর দুধ দহন করে নিজে পান করতে পারে। (আলমগীরি)
মাসয়ালা(১৫) – কুরবানী করার পূর্বে পশুর বাচ্চা হয়ে গেলে বাচ্চাকেও জবেহ করে দিতে হবে। যদি বাচ্চাকে বিক্রয় করে থাকে তাহলে তার পয়সা সাদকা করে দিতে হবে। যদি জবেহ করা না হয় বা বিক্রয় করা না হয় এবং কুরবানীর দিনগুলো অতিক্রম হয়ে যায় তাহলে জীবিত অবস্থায় সাদকা করে দিতে হবে। যদি কিছুই করা না হয় এবং পরের বৎসর তাকে কুরবানী করে থাকে তাহলে কুরবানী জায়েজ হবে না। পুনরায় কুরবানী করতে হবে। উক্ত জবেহ করা সমস্ত মাংস সাদকা করতে হবে (আলমগিরী)।
মাসয়ালা(১৬) – কুরবানী করার পর পেট থেকে যদি জীবিত বাচ্চা বের হয় তাহলে তাকে জবেহ করে খাওয়া জায়েজ। যদি মরা বাচ্চা বের হয় তাহলে তা খাওয়া হারাম (হিদায়া ও বাহারে – শরিয়াত)।