ড. মুহাম্মদ লিয়াকত আলী:
সৃষ্টির শুরু থেকে আল্লাহ্ তাআলা মানুষকে তাঁর নির্দেশিত পথে পরিচালনা করার জন্য যুগে যুগে তাঁর মনোনীত নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে,
اللَّهُ يَصْطَفِي مِنَ الْمَلَائِكَةِ رُسُلًا وَمِنَ النَّاس
ِ“আল্লাহ্ ফিরিশতা ও মানব থেকে রাসূল মনোনীত করে থাকেন।” সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রিসালাত ছিল অনন্য বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন।
রিসালাত পরিচয়
রিসালাত আরবী বর্ণ (ر س ل)রা, সিন, লাম থেকে উদগত। এটি اسم مصدرএকবচন, বহুবচনে اَلرَّسَائِلُ বা اَلرِّسَالَاتُ আভিধানিক অর্থে রিসালাত হল বার্তাবহন বা দৌত্যকার্য, চিঠি, পত্র, বার্তা, সন্দর্ভ, থিসিস, পুস্তিকা, মিশন, কর্তব্য, উদ্দেশ্য, লক্ষ্য, রিসালত, সম্বোধন, কিতাব, লিখিত সহীফা, লিখিত বিষয়বস্তু বা মাকতুব । বক্তব্য যা কোন ব্যক্তি অন্যের নিকট প্রাপ্ত হয়ে বহন করে নিয়ে আসে, চাই সেটা লিখিত হোক অথবা অলিখিত প্রভৃতি। সাধারণ অর্থে যা কিছু প্রেরণ করা হয় তাকেই আমরা রিসালাত বলে জানি। ইংরেজীতে একে গবংংধমব, খবঃঃবৎ, ঘড়ঃব, উরংঢ়ধঃপয, ঈড়সসঁহরপধঃরড়হ বলা হয়।
ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় আল্লাহ রাব্বুল আলামীন জিন ও মানুষের হিদায়াতের জন্য তাদের মধ্য হতে মনোনীত নবী-রাসূল-এর মাধ্যমে যে সব বাণী পাঠিয়েছেন তা রিসালাত। আর যাঁরা এর বাহক তাঁরা হলেন রাসূল। আল্লাহ্ তাআলা একান্ত ইচ্ছায় তাঁদের মনোনয়ন দিয়েছেন।
ইরশাদ হয়েছে,
وَإِنَّهُمْ عِنْدَنَا لَمِنَ الْمُصْطَفَيْنَ الْأَخْيَار
ِ “নিশ্চয় তাঁরা ছিলেন আমার মনোনীত উত্তম বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত।”
আল্লামা নাসাফী (রা.) বলেন,
هِىَ سَفَارَةُ العَبْدِ بَيْنَ اللهِ وَ بَيْنَ ذَوِى الْألْبَابِ مِنْ خَلِيْقَتِه
“রিসালাত হল আল্লাহ্ তা‘আলা ও তাঁর সৃষ্টিকুলের জ্ঞানীদের মধ্যে কোন বান্দার মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করা।”
অতএব আল্লাহ তা‘আলা যাঁদের মনোনীত করেন তাঁদের মধ্যে দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা ও গুণাবলী জন্ম ও স্বভাবগতভাবে সৃষ্টি করে দেন। মক্কার কাফিররা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রিসালাতের অস্বীকার করলে আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন,
اللَّهُ أَعْلَمُ حَيْثُ يَجْعَلُ رِسَالَتَهُ “
আল্লাহ্ তাঁর রিসালাতের ভার কার উপর অর্পণ করবেন তা তিনিই ভাল জানেন।”
লুইস মালূফ বলেন,
هِىَ دَعْوَةُ الرَّسُوْلِ لِلنَّاسِ إلىٰ مَا أُوْحِىَ إلَيْهِ
“রাসূলদের মাধ্যমে আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর প্রদত্ত প্রত্যাদেশ মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়াই রিসালাত।”
ইমাম আবূ জা‘ফর ত্বাহাবী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন,
إنَّ الرِّسَالَةَ هِىَ أنْ يَّجْعَلَ اللهُ مِنْ عِبَادِهِ الْمُخْلِصِيْنَ الصَّالِحِيْنَ نَبِيًّا ثُمَّ نَبَّأهُ بِخَبَرِ السَّمَاءِ ثُمَّ أمَرَهُ أنْ يُّبَلِّغَ غَيْرَهُ.
“আল্লাহ্ তা‘আলা তার একনিষ্ঠ বান্দাদের থেকে কাউকে নবী নির্বাচিত করার পর তাঁকে আসমানী সংবাদ প্রেরণ করে অন্যদের নিকট তা পৌঁছানোর দায়িত্ব প্রদানকে রিসালাত বলে।”
ইমাম রাগিব ইস্পাহানী বলেন,
اَلرِّسَالَةُ هِىَ أنْ يَّبْعَثَ اللهُ الرَّسُوْلَ بِشَرْعٍ يَعْمَلُ بِهٖ وَيُبَلِّغُهُ
“রিসালাত হল, আল্লাহ্ তা‘আলা কর্তৃক শরিয়ত সহকারে কোন দূত প্রেরণ, যা তিনি পালন করেন এবং এর প্রচার করে থাকেন।”
এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে,
رُسُلًا مُبَشِّرِينَ وَمُنْذِرِينَ لِئَلَّا يَكُونَ لِلنَّاسِ عَلَى اللَّهِ حُجَّةٌ بَعْدَ الرُّسُلِ وَكَانَ اللَّهُ عَزِيزًا حَكِيمًا
“আমি সুসংবাদদাতা ও সাবধানকারী করে রাসূল প্রেরণ করেছি, যাতে রাসূল আসার পর আল্লাহ্র বিরুদ্ধে মানুষের কোন অভিযোগ না থাকে। আল্লাহ্ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।”
কুরআনুল কারীমের আলোকে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রিসালাত
ইসলাম আল্লাহ্র নিকট একমাত্র মনোনীত ধর্ম। আল্লাহ্ তা‘আলা এর প্রচার ও প্রসারের মহান দায়িত্ব দিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণ করেছেন।
ইরশাদ হয়েছে,
هُوَ الَّذِي بَعَثَ فِي الْأُمِّيِّينَ رَسُولًا مِنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ “
তিনি সে সত্ত্বা, যিনি উম্মী লোকদের মধ্যে এক রাসূল প্রেরণ করেছেন, যেন তাদেরকে তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করে শুনান, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন