- দ্বীনদারী ও সতী-সাধ্বী
নেককার নারীর প্রথম গুণ হলো- দ্বীনদার ও সতী-সাধ্বী হওয়া। কুরআনুল কারিমে মহান আল্লাহ তাআলা صَّالِحَاتُ তথা দ্বীনদার সতী-সাধ্বী গুণের অধিকারী হিসেবে নারীকে উল্লেখ করেন।
আয়াতে এ শব্দের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনে জারীর তবারী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, ‘দ্বীনের সঠিক অনুসারণকারীণী ও সৎকর্মশীল নারীগণ।’ নেককার নারীদের সম্পর্কে হাদিসে এসেছে-
হজরত সাওবান (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, ‘সোনা-রূপা সম্পর্কিত আয়াত নাজিল হওয়ার পর রাসুলুল্লাহ (ﷺ)কে জিজ্ঞাসা করা হল, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা কোন ধরনের মাল সঞ্চয় করব? তিনি বললেন, তোমাদের প্রত্যেকেই যেন সঞ্চয় করে- কৃতজ্ঞ অন্তর, জিকিরকারী মুখ এবং পরকালীন কর্মকাণ্ডে সহায়তাকারিনী মুমিনা নারী।’ (মুসনাদে আহমাদ, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘দুনিয়া হলো ক্ষণিক উপভোগের বস্ত্ত। আর দুনিয়ার সর্বোত্তম সম্পদ হল সতী নারী।’ (মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ)
হজরত আবু উমামা (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘কোনো মুমিনের জন্য আল্লাহর ভয় অর্জনের পর নেককার স্ত্রীর চেয়ে কল্যাণকর কিছু নেই। কারণ স্বামী তাকে আদেশ করলে সে আনুগত্য করে, তার দিকে দৃষ্টিপাত করলে সে (স্বামী) মুগ্ধ হয়। তাকে নিয়ে শপথ করলে সে তা (শপথকৃত কর্ম) পূরণ করে। স্বামীর অনুপস্থিতিতে নিজেকে (অন্যায়-অপকর্ম থেকে) এবং স্বামীর সম্পদ সংরক্ষণ করে।’ (ইবনে মাজাহ)
- বিশ্বস্ত ও অনুগত হওয়া
নারীর দ্বিতীয় গুণ হলো- স্বামীর অনুগত ও বিশ্বস্ত হওয়া। কুরআনুল কারিমে কানিতাত শব্দ দিয়ে তা বোঝানো হয়েছে। আল্লাহ তাআলা ও স্বামীর অনুগত নারীদের কানিতাত বলা হয়। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, নারী যখন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবে, রমজান মাসের রোজা রাখবে, নিজ লজ্জাস্থানের হেফাজত করবে এবং স্বামীর আনুগত্য করবে তখন তাকে বলা হবে, যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা জান্নাতে প্রবেশ কর।’ (মুসনাদে আহমাদ)
হজরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (ﷺ)কে জিজ্ঞাসা করা হল, নারীদের মধ্যে কোন নারী উত্তম। তিনি বললেন, স্বামী যাকে দেখলে আনন্দবোধ করে, যাকে আদেশ করলে আনুগত্য করে, স্ত্রীর বিষয়ে এবং সম্পদের ব্যাপারে স্বামী যা অপছন্দ করে তা থেকে বিরত থাকে।’ (মুসনাদে আহমাদ, নাসাঈ)
- সতীত্ব ও সম্পদের হেফাজত কারিনী
তৃতীয় গুণ হলো- সতীত্ব ও সম্পদের হেফাজত করা। কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা যেভাবে বলেছেন-
حَافِظَاتٌ لِّلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللّهُ
তথা নিজের সতীত্বের হেফাজত করা এবং স্বামীর (অনুপস্থিতিতে তার) ধন-সম্পদ হেফাজত করা।
(সুরা নিসা : আয়াত ৩৪)
আয়াতের এই বাক্যের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনে জারীর তবারী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
‘নারীগণ তাদের স্বামীর অবর্তমানে নিজেদের লজ্জাস্থান হেফাজত করবে এবং এক্ষেত্রে কোনো ধরনের খেয়ানত করবে না। আর স্বামীর ধন-সম্পদ সংরক্ষণ করবে। তাদের উপর এ দায়িত্ব আল্লাহর পক্ষ থেকেই আরোপিত।’
হাদিসের এসেছে-হজরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘উত্তম স্ত্রী সে, যার প্রতি দৃষ্টিপাত করলে তোমাকে আনন্দিত করে, আদেশ করলে আনুগত্য করে, তুমি দূরে থাকলে তার নিজের ব্যাপারে এবং তোমার সম্পদের ব্যাপারে তোমার অধিকার রক্ষা করে। তারপর তিনি কুরআনের উক্ত আয়াত (পুরুষ নারীদের অভিভাবক) তেলাওয়াত করেন।’ (তাফরিরে তবারি)
- পবিত্র ও চরিত্রবান হওয়া
নারীর চতুর্থ গুণ হলো- নিজে পবিত্র থাকা এবং সৎচরিত্রবান হওয়া। কুরআনুল কারিমের অন্য এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَالطَّيِّبَاتُ لِلطَّيِّبِينَ وَالطَّيِّبُونَ لِلطَّيِّبَاتِ
তথা পবিত্র নারীরা পবিত্র পুরুষদের উপযুক্ত আর পবিত্র পুরুষরা পবিত্র নারীদের উপযুক্ত। (সুরা নুর : আয়াত ২৬ )
হাদিসে এসেছে-হজরত আবু সাঈদ খুদরি (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, তিন গুণের যে কোনো একটি গুণের কারণে নারীকে বিয়ে করা যায়- ধন-সম্পদের কারণে, রূপ-সৌন্দর্যের কারণে ও দ্বীনদারির কারণে। তুমি দ্বীনদার ও চরিত্রবানকেই গ্রহণ কর।’
(ইবনে আবি শায়বা, মুসনাদে আহমাদ)
- নিষ্কুলুষ চরিত্রের অধিকারী হওয়া
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন- ‘তারা বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে চারিত্রিক পবিত্রতাসম্পন্ন হবে, ব্যভিচারিনী হবে না এবং গোপনে কোনো অবৈধ সম্পর্ক স্থাপনকারিনী হবে না।’ (সুরা নিসা : আয়াত ২৫ )
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় হজরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, চারিত্রিক নিষ্কলুষতার অধিকারিনী নারীগণ, যারা প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে ব্যভিচারিনী হবে না এবং সঙ্গোপনে অবৈধ বন্ধু গ্রহণকারিনী হবে না। তিনি বলেন, জাহেলি যুগের লোকেরা প্রকাশ্যে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়াকে হারাম মনে করত, কিন্তু গোপনে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়াকে হালাল মনে করত। এই প্রেক্ষিতেই আল্লাহ তাআলা কুরআনের আয়াত নাজিল করলেন- তোমরা প্রকাশ্যে হোক, অপ্রকাশ্যে হোক কোনো রকম অশ্লীল কাজের কাছেও যেও না (সুরা আনআম : আয়াত ১৫১)।’ (তাফসিরে তবারি)
- সরলমনা হওয়া
নারীর ষষ্ঠ গুণ হলো- দ্বীনদার ও চরিত্রবান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সরল মনের অধিকারিণী হওয়া। আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন- ‘চরিত্রবান, সরলমতী ঈমানদার নারীরা।’ (সুরা নুর : আয়াত ২৩)
এই আয়াতাংশের ব্যাখ্যায় আল্লামা আলুসি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, পবিত্রতার সার্বিক উপাদান নিয়ে বেড়ে উঠা এবং উত্তম চরিত্রের উপর লালিত-পালিত হওয়ার কারণে অন্য কোনো চিন্তা ও মানসিকতা যাদের কল্পনায়ও আসে না। এই গুণ পূর্ণ নিষ্কলুষতা ও চারিত্রিক পবিত্রতার প্রমাণ বহন করে, যা শুধু মুহাসানাত (সতী নারী) শব্দের মধ্যে পাওয়া যায়।’ (রূহুল মা’আনি)
- ঘরে অবস্থানকারী ও নিজেদের সৌন্দর্য গোপনকারী
নারীর সপ্তম গুণ হলো- ঘরে অবস্থান করা। বিনা প্রয়োজনে ও বেপর্দা বাইরে চলাফেরা না করা। যেমনটি ঘোষণা করেছেন মহান আল্লাহ-
‘তোমরা নিজ নিজ ঘরে অবস্থান কর। (পর পুরুষকে) সাজসজ্জা প্রদর্শন করে বেড়িও না যেমন প্রাচীন জাহেলি যুগে প্রদর্শন করা হত।’ (সুরা আহযাব : আয়াত ৩৩)
হজরত আনাস (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, নারীরা রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর কাছে আগমন করে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! পুরুষরা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ ও অন্যান্য মর্যাদায় অগ্রগামী হয়েছেন। আমাদের জন্য কি এমন কোনো আমল রয়েছে যার মাধ্যমে মুজাহিদীনের সমপর্যায়ের মর্যাদা ও সওয়াবের অধিকারী হতে পারব? রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, তোমাদের থেকে যারা নিজ ঘরে অবস্থান করবে সেটাই তাদেরকে মুজাহিদদের ফজিলত ও সাওয়াবে উপনীত করবে।’ (মুসনাদে বাযযার, তাফসিরে ইবনে কাসির)