ধরুন— সারাদিন ধরে ছেলেটি ডোবায় মাছ ধরার জন্য সেচ করছে। অন্যদিকে সেই ডোবাতে আবার অন্য জায়গা থেকে পানিও আসছে একটি নল দিয়ে। সে নলটি বন্ধ না করে— দিন, রাত এক করে সেচ করলো। দিনশেষে দেখা গেল, আগে যতটুকু পানি ছিল ততটুকু রয়ে গেছে! তাহলে সারাদিনের পরিশ্রম গেল কই? একদিকে পানি আসল আরেকদিকে সেচ করলাম। লাভ— শূন্য।
আমার অনেক বোন পর্দা করেন। আলহামদুলিল্লাহ! খুব ভালো। এটা শরীয়াহ’র আইন। তবে তাদেরকে আবার দেখা যায় মুখমন্ডল খোলা রেখে ফেসবুকে এসে নাত গাইতে, কিছুক্ষণ পর-পর নিজের বোরখা ওয়ালা ছবি বিভিন্ন ভঙ্গিতে আপলোড করতে। তাই সন্দেহ হয় এটা আসলেই শরীয়াহ অনুযায়ী পর্দা নাকি নিজেকে শো-অফ করা? নাকি আবার ফেসবুকে নাত আপলোড করে নেকী অর্জন উদ্দেশ্য? নাকি নিজের ভয়েস টা একবার মানুষকে শুনিয়ে নেয়া উদ্দেশ্য? মানে ওই ওপরের ঘটনার মতো হলো। একদিকে পানি আসল, আরেকদিকে সেচ করলাম। একদিকে পর্দাশীল হলাম, অন্যদিকে পর্দার বিধানকে নিজের মন-মতো করে ফেললাম।
উল্লেখিত সবকটি কাজ শয়তানের ফাঁদের অন্তর্ভুক্ত। আপনি পর্দা করছেন। এখন শয়তান চাইবে এটা দিয়েই কিভাবে আবার আপনাকে গোমরাহ করা যায়! তাই তার বিভিন্ন ফাঁদ পাতা আছে আপনার জন্য। আপনি ভাবছেন— নাত আপলোড দিয়ে খুব নেকী অর্জন করছেন! না। আপনি পর্দার বিধান লঙ্ঘন করছেন। নারী প্রদর্শনের বস্তু নয়। নারী গোপন করার বস্তু। গোপনীয়তা নারীর সম্মান, মর্যাদাকে নিরাপদ রাখে।
রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘নারী গোপন করার বস্তু। যখন সে বের হয় শয়তান তাকে উঁকি মেরে দেখে।’ [১]
তাই নারীর প্রত্যেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গোপণ করার জিনিস। এমনকি নারীর কন্ঠেরও পর্দা রয়েছে। পর-পুরুষকে প্রয়োজন ব্যতীত নিজের কন্ঠস্বর শোনানোও নিষেধ। যদি সেটা নাত বা কুরআন তিলাওয়াত এর মাধ্যমেও হয় তবে— সেটাও। এটা শয়তানের সুক্ষ্ম একটি ফাঁদ। ‘নেক সুরতে শয়তানের ধোঁকা’— বলা চলে। ‘হে নবী-পত্নিগণ, তোমরা অন্য কোন নারীর মত নও। যদি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে (পরপুরুষের সাথে) কোমল কণ্ঠে কথা বলো না, তাহলে যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে সে প্রলুব্ধ হয়। আর তোমরা ন্যায়সঙ্গত কথা বলবে।’ [২]
যেখানে সেই পুতঃ পবিত্র আত্মাগণকে উদ্দেশ্য করে বলা হচ্ছে কন্ঠস্বরকে হেফাজত করার কথা সেখানে আপনার মতো পর্দাশীল তো কিছুই না। নিজের সুন্দর কন্ঠ না-মাহরামদেরকে শুনাতে নিষেধ হচ্ছে। আর সেখানে আপনি নাত গেয়ে ফেসবুকে শত না-মাহরামকে শুনাচ্ছেন! আসলেই কি শরয়ী পর্দা হলো? ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে নিজেকে প্রশ্ন করে দেখবেন।
‘ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ [৩]
পর্দার কতটুকু গুরুত্ব এই আয়াতে কারীম থেকেই বুঝতে পারবেন আশা করি। যেখানে পদচারণায় পর্যন্ত সতর্ক করা হয়েছে সেখানে নিজেকে হিজাব আবৃত রেখে, মুখ-মন্ডল খোলা রেখে নাত গেয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত? নিঃসন্দেহে এসব কাজ হারাম এর পর্যায়ে পরে। তাই সতর্ক হোন। পর্দা আপনার সম্মান। এই সম্মান যেন শয়তান নষ্ট করে না দেয় তার সুক্ষ্ম ধোঁকার দ্বারা।
আরও আশ্চর্য হতে হয়— সারাদিন যারা মিডিয়াতে ইসলাম, ইসলাম করে তাদেরকেও এসব ভিডিও তে— ‘মাশাআল্লাহ’ ‘আলহামদুলিল্লাহ’ এসব কমেন্টে লিখে উৎসাহ প্রদান করতে দেখা যায়। আস্তাগফিরুল্লাহ! তারা কোথায় বাধা দিবে তা না, উল্টো উৎসাহ দিচ্ছে!
‘যারা পছন্দ করে যে, ঈমানদারদের মধ্যে অশ্লীলতা প্রসার লাভ করুক, তাদের জন্যে ইহাকাল ও পরকালে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না।’ [৪]
সুতরাং— সতর্কতা সকলের জন্য।
Reference:
[১] তিরমিজি, কিতাবুর রিদা’আ, অধ্যায়- ১৮, ২/৩৯২, হাদীস- ১১৭৬।
[২] সূরা আহযাব, আয়াত- ৩৩।
[৩] সূরা নূর, আয়াত- ৩১।
[৪] সূরা নূর, আয়াত- ১৯।





Users Today : 431
Users Yesterday : 1415
This Month : 11098
This Year : 150575
Total Users : 266438
Views Today : 1142
Total views : 3220097