কিতাবঃ আল ফিতান
মূলঃ ইমাম নুয়াইম বিন হাম্মাদ (رحمة الله)
ফিতনাকালীন মানুষ কান্ডজ্ঞানহীন হওয়া প্রসঙ্গেঁ
হাদিস – ১০৭
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত হোজাইফা ইবনু ইয়ামান (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লহ (ﷺ) এরশাদ করেছেন, কিয়ামতের পূর্বে এমন ফিতনা প্রকাশ পাবে, যদ্বারা মানুষের জ্ঞান লোপ পাওয়ার উপক্রম হবে। এমনকি তখন অনেক তালাশ করেও কোনো জ্ঞানী লোক পাওয়া যাবেনা। এরপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তৃতীয় প্রকার ফিতনার কথা উল্লেখ করেছেন।
➥ [আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১০৭]
___________________________________
হাদিস – ১০৮
হযরত উমাইর ইবনে হানী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, তৃতীয় ফিতনা হলো অন্ধকারাচ্ছন্ন ফিতনা। সে ফিতনাতে লোকজন এমন ভাবে যুদ্ধ করবে যে, সে জানবেনা সে কি সত্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে? নাকি বাতিলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে।
➥ [আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১০৮]
___________________________________
হাদিস – ১০৯
হযরত হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মানুষের অন্তরে ফিতনাসমূহ এমন ভাবে প্রবেশ করবে, যেমন আঁশ একটির পর আরেকটি বিছানো হয়ে থাকে। (রাবী ফাযারী বলেন,) হাসীর হলো রাস্তা। সুতরাং যে অন্তর তাকে স্থান দেয়না তাতে একটি সাদা দাগ পড়ে। আর সেই অন্তরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে তা প্রবেশ করে তাতে একটি কালো দাগ পড়ে। ফলে মানুষের অন্তরসমূহ পৃথক পৃথক দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। এক প্রকার অন্তর হয় মর্মর পাথরের ন্যায় শ্বেত, যাকে আসমান ও জমীন বহাল থাকা পর্যন্ত (অর্থাৎ কিয়ামত পর্যন্ত) কোনো ফিতনাই ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারবেনা। পক্ষান্তরে দ্বিতীয় প্রকার অন্তর হয় কয়লার মতো কৃষ্ণ। যেমন উপুড় হওয়া পাত্রের ন্যায়, যাতে কিছুই ধারন করার ক্ষমতা থাকে না। (তিনি বললেন যেমন তার হাত দ্বারা উল্টানো হয়) তা ভালোকে ভালো জানার এবং মন্দকে মন্দ জানার ক্ষমতা রাখেনা, ফলে কেবলমাত্র তাই গ্রহণ করে যা তার প্রবৃত্তির চাহিদা হয়। তার সম্মুখে একটি আবদ্ধ দরজা হবে। আর সেই দরজাটি হলো এমন ব্যক্তি যে, হত্যা হওয়ার অথবা নিহত হওয়ার উপক্রম হবে। এটি এমন হাদীস যা কোন গোলক ধাঁধা নয়।
➥ [আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১০৯]
___________________________________
হাদিস – ১১০
হযরত হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন ফিতনা মানুষের অন্তরে প্রবেশ করে, তখন সেই অন্তর তাকে প্রথমবার স্থান দেয়না তাতে একটি সাদা দাগ লিখা হয়। আর যে অন্তর প্রথমবার তাকে স্থান দেয়, তখন তাতে একটি কালো দাগ লিখা হয়। অতঃপর আবার ফিতনা মানুষের অন্তরে প্রবেশ করে, যদি তাকে স্থান না দেয়, যেমন প্রথমবারে দেয়নি, তখন তাতে একটি সাদা পড়ে। আর যদি তাকে স্থান দেয় যেমন প্রথমবারে দিয়েছিল, তখন তাতে একটি কালো দাগ পড়ে। অতঃপর পুনরায় ফিতনা মানুষের অন্তরে প্রবেশ করে, যদি তাকে স্থান না দেয়, যেমন আগের দুইবার দেয়নি,তখন তাতে আরো বেশী সাদা ও বেশী স্বচ্ছ দাগ পড়ে। ফলে কখনো ফিতনা তাকে কোন ক্ষতি করতে পারবেনা। আর যদি তাকে স্থান দেয় যেমন প্রথম দুই বার দিয়েছিল, তখন তাতে একটি কালো দাগ পড়ে বরং পুরো অন্তর একেবারে বেশী কয়লার মত কালো হয়ে যায়। অতঃপর পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নেয়া হবে। ফলে তা ভালকে ভাল জানার এবং মন্দকে মন্দ জানার ক্ষমতা রাখেনা।
➥ [আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১১০]
___________________________________
হাদিস – ১১১
হযরত আবু হারুন আল-মাদীনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, যখন ভালকে মন্দ মনে করতে থাকবে, আর মন্দকে ভাল মনে করতে থাকবে, তখন তোমাদের কী অবস্থা হবে? লোকেরা জিজ্ঞাসা করলো ইয়া রাসূলুল্লাহ এমনটা ঘটবে কী? তখন রাসূল (ﷺ) বললেন, হ্যাঁ, ঘটবে।
➥ [আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১১১]
___________________________________
হাদিস – ১১২
আবু মা’লাবা খুশনী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কিয়ামতের আলামত সমূহ থেকে কিছু আলামত হচ্ছে, মানুষের জ্ঞান হ্রাস পাবে, আত্মীয়তার সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে এবং মানুষের মধ্যে পেরেশানী বৃদ্ধি পেতে থাকবে।
➥ [আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১১২]
___________________________________
হাদিস – ১১৩
হযরত ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, নিশ্চয় আমার পরে আমার উম্মতকে ফিতনা সমূহ এমনভাবে ছেয়ে ফেলবে যে, তাতে মানুষের অন্তর মরে যাবে, যেমন তার দেহ মরে যায়।
➥ [আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১১৩]
___________________________________
হাদিস – ১১৪
হযরত আবুয্ যাহেরিয়া থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যদি কোনো গোত্রের উপর ফিতনা আসতে থাকে তাহলে তাদের মাঝে নবীগণ থাকলে তিনিও আক্রান্ত হয়ে পড়বে। প্রত্যেক জ্ঞানী ব্যক্তির জ্ঞান লোপ পেয়ে যাবে। প্রত্যেক সিদ্ধান্ত দাতার সঠিক সিদ্ধান্তে ঘাটতি দেখা যাবে। আর প্রত্যেক বুঝমান ব্যক্তির বুঝের মধ্যেও পরিবর্তন এসে যাবে। এভাবে যতদিন আল্লাহর ইচ্ছা ততদিন চলতে থাকবে। এরপর আল্লাহ তাআলা তাদের জ্ঞান, বুদ্ধি এবং বিবেক ফিরিয়ে দিতে থাকবেন। ফলে নির্বুদ্ধিতার কারণে তারা যে সবকিছু থেকে মাহরুম হয়েছে তার জন্য আফসোস করতে থাকবে। অতঃপর হাদীস বর্ণনকারী বলেন, তাদের জ্ঞানীদের মধ্যে স্বল্পসংখ্যকই বাকি থাকবে।
➥ [আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১১৪]
___________________________________
হাদিস – ১১৫
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু মুসা আশআরী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কিয়ামতের পূর্বে বিশেষ কিছু হত্যার কথা আলোচনা করেছেন, এমনকি মানুষ তার প্রতিবেশি, ভাই এবং চাচাতো ভাইকেও হত্যা করবে। এক পর্যায়ে সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করেন, সেদিন কি আমাদের সাথে আমাদের জ্ঞান থাকবে? জবাবে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, সে যুগের অধিকাংশ লোকের জ্ঞান ছিনিয়ে নেয়া হবে। মানুষের মধ্যে নির্বোধ ও বোকারাই বাকি থাকবে। তারা নিজেদেরকে খুবই তুচ্ছ মনে করবে, আসলেই তারা অত্যন্ত তুচ্ছ হবে।
➥ [আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১১৫]
___________________________________
হাদিস – ১১৬
উমাইদ ইবনে মুতাসাম্মাছ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হযরত আবু মুসা আশআরী (رضي الله عنه) কে বলতে শুনেছি উল্লিখিত হাদীস; যেখানে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কথা বলা হয়নি। তবে উক্ত হাদীসের শেষে উল্লেখ রয়েছে, যেমন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের থেকে ওয়াদা নিয়েছেন।
➥ [আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১১৬]
___________________________________
হাদিস – ১১৭
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) বলেন, আমি তোমাদের উপর ভয় করছি ফিতনা সম্পর্কে যেন তা ধোঁয়া। তাতে মানুষের অন্তর মরে যাবে। যেমন তার দেহ মরে যায়।
➥ [আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১১৭]
___________________________________
হাদিস – ১১৮
হযরত আবুযর আব্দুর রহমান ইবনে ফুজালা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন কাবিল তার ভাই হাবিলকে হত্যা করে তখন তার জ্ঞান সম্পূর্ণরূপে লোপ পেয়েছিল এবং তার অন্তর একেবারে বুদ্ধি শুন্য হয়ে গিয়েছিল। যার জন্য যে মৃত্যু পর্যন্ত পেরেশান ছিল।
➥ [আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১১৮]
___________________________________
হাদিস – ১১৯
হযরত হোজাইফা ইবনুল ইয়ামান (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, কেউ তাকে একদিন জিজ্ঞাস করে যে, কোন ধরনের ফিৎনা সবচেয়ে মারাত্মক ও ভয়াবহ? জবাবে তিনি বললেন, যখন তোমার অন্তরে কল্যাণ-অকল্যাণ উভয়টি পেশ করা হবে, আর তুমি কোনটি গ্রহণ করবে তা নিয়ে দ্বিধাদন্ধে পতিত হবে।
➥ [আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১১৯]
___________________________________
হাদিস – ১২০
আবু আম্মার হযরত হোজাইফা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, তিনি বলেন, মানুষের মাঝে এমন একযুগ আসবে, সকালে মানুষ বিচক্ষণ থাকবে, সন্ধ্যা হতে হতে সে পরিপূর্ণরূপে বোকা হয়ে যাবে।
➥ [আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১২০]
___________________________________
হাদিস – ১২১
হযরত ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ঘোর অন্ধকার রাত্রির টুকরোর ন্যায় এই ফিতনা আবির্ভূত হবে। যখনই তন্মধ্যে থেকে কোন এক ধরনের ফিতনা চলে যাবে, তখন আরেক প্রকার ফিতনা আসবে। তাতে মানুষের অন্তর মৃত্যুবরণ করবে যেমন তার দেহ মৃত্যু বরণ করে।
➥ [আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১২১]
___________________________________
হাদিস – ১২২
হযরত আবু ওয়ায়েল থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হযরত আবু মুসা আশআরী (رضي الله عنه) কে বলতে শুনেছি, হে লোক সকল! নিঃসন্দেহে তোমাদের মাঝে এমন এক ফিতনা প্রকাশ পাবে, যা পরস্পর মহব্বত ভালোবাসাকে নষ্ট করে দিবে, তখন খুবই ধৈর্য্যশীল লোক পর্যন্ত ছোট্ট শিশুর ন্যায় অধৈর্য্য হয়ে যাবে।
তোমাদের মধ্যে এমন অস্থিরতা যা মূলতঃ পেটের পীড়ার আকার ধারণ করবে আর সেটা থেকে মুক্তির কোনো উপায় খুঁজে পাওয়া যাবেনা।
➥ [আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১২২]
___________________________________
হাদিস – ১২৩
হযরত আবু সা’লাবা আল্খুশনী (رحمة الله) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমরা দুনিয়ার এমন পণ্যের সুসংবাদ গ্রহণ করো,যা তোমাদের ঈমান ছিনিয়ে নিয়ে যাবে। তোমাদের মধ্যে যারা সেদিন দৃঢ়তার সহিত আল্লাহ তাআলার উপর পরিপূর্ণ ঈমান রাখতে পারবে তাদের কাছে ফিতনা ধবধবে সাদা অবস্থায় প্রকাশ পাবে। আর যারা সেদিন আল্লাহ তাআলার ক্ষেত্রে সন্দিহান হবে, তাদের কাছে ফিতনাটি অন্ধকারাচ্ছন্ন কালো বর্ণ ধারন করে আসবে। তারপর যেকোনো জনপদের উপর চলতে গিয়ে সামান্যতমও আল্লাহকে ভয় করবেনা।
➥ [আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১২৩]
___________________________________
হাদিস – ১২৪
হযরত কাসীর ইবনে যুররা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ করেছে, বালা-মসিবতের নিদর্শন এবং কিয়ামতের আলামত হচ্ছে, মানুষের জ্ঞান নষ্ট হয়ে যাবে, বুদ্ধি হ্রাস পাবে, পেরেশানী বেড়ে যাবে হক্বের আলামতগুলো উঠিয়ে নেয়া হবে এবং জুলুম প্রকাশ্যরূপ ধারন করবে।
➥ [আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১২৪]
___________________________________
হাদিস – ১২৫
হযরত আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, পঞ্চম ফিতনা হলো, অন্ধ ফিতনা,পূর্ণ বধির ফিতনা,তাতে মানুষ চতুষ্পদ প্রাণীর মত হবে।
➥ [আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১২৫]
___________________________________
হাদিস – ১২৬
দ্বিতীয় সুত্র থেকে আলী (رضي الله عنه) থেকে একই হাদিস বর্নিত হয়েছে।
➥ [আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১২৬]
___________________________________
হাদিস – ১২৭
হযরত আবু হোরায়রা (رضي الله عنه) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনে বলেন, চতুর্থ ফিতনা হচ্ছে এমন যা মানুষের সাথে চামড়ার ন্যায় মিশ্রিত হয়ে যাবে। বালা-মসিবদ মারাত্মক আকার ধারণ করবে। এ পর্যায়ে তারা সৎ কাজকে ভালো জানবে না এবং অসৎ কাজকে খারাপ জানবে না।
➥ [আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১২৭]
___________________________________
হাদিস – ১২৮
হযরত আবু হোরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ করেন, আমার পরে তোমাদের নিকট চার ধরনের ফিতনার আগমন ঘটবে। তার মধ্যে চতুর্থ ফিতনা হচ্ছে, লাগাতার বধীর,অন্ধত্বের ফিতনা, যা মানুষের সাথে চামড়ার ন্যায় মিশ্রিত হয়ে থাকবে। এমনকি এসময় অসৎ কাজকে সৎ মনে করা হবে এবং অসৎ কাজকে সৎ কাজ মনে করা হবে। তাদের অন্ত সমূহ এমনভাবে মৃত্যুবরণ করবে যেমন তাদের শরীর মারা যায়।
➥ [আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১২৮]
___________________________________
হাদিস – ১২৯
হযরত হোজাইফা ইবনুল ইয়ামান (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নিশ্চয় আমি ইচ্ছা করছি, আমার কাছে যদি স্বর্ণের ন্যায় উজ্জল অন্তর বিশিষ্ট একশত লোক থাকবে, যাদেরকে নিয়ে আমি বিশাল এক পাথরে আরোহন করব অতঃপর —- তাদের একটি হাদীস বয়ান করব, যদ্বারা পরবর্তীতে কখনো কোনো ফিতনা তাদের ক্ষতি করতে পারবেনা। এরপর আমি এমনভাবে গায়েব হয়ে যাব, আমাকে তারা কখনো দেখবেনা আর আমিও তাদেরকে কখনো দেখবোনা।
➥ [আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১২৯]
___________________________________
হাদিস – ১৩০
হযরত হোজাইফা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নিঃসন্দেহে ফিতনা মানুষের অন্তরের গভীরে প্রবেশ করবে। যেসব অন্তর এসব ফিতনা গ্রহন করবে তাদের অন্তরে একটি কালো দাগ লেগে যাবে। এবং যেসব অন্তর উক্ত ফিতনাকে গ্রহন করবেনা তাদের অন্তরে একটি উজ্জল দাগ প্রকাশ হবে। তোমাদের মধ্যে যাদের উক্ত ফিতনা সম্বন্ধে জানার আগ্রহ থাকবে না হয় থাকবেনা তারা যেন গভীরভাবে উপলব্ধি করে। তারা হালাল কোনো বিষয়কেও দেখলে হারাম মনে করবে এবং হারাম কোনো বিষয়কে দেখলে হারাম মনে করবে এবং হারাম কোনো বিষয়কে দেখলে হালালই মনে করতে থাকবে। তাহলে বুঝতে হবে তারা উক্ত ফিতনার সম্মুখিন হয়ে পড়েছে। এরপর হযরত হোজাইফা (رضي الله عنه) বলেন, কোনো মানুষ সকালে বিচক্ষণ হিসেবে থাকলেও সন্ধ্যা হতে হতে তার এমন অবস্থা হবে সে নিজের পশম পর্যন্ত দেখতে পাবেনা।
➥ [আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১৩০]
___________________________________
হাদিস – ১৩১
হযরত তাবী (رحمة الله) হযরত কা’ব (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, যখন আনুমানিক একশত ষাট বৎসর হবে তখন জ্ঞানী লোকের জ্ঞান এবং বিচক্ষণ লোকের বিচক্ষণতা ব্যাপকভাবে লোপ পেতে থাকবে।
➥ [আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১৩১]
___________________________________
হাদিস – ১৩২
হযরত হোজাইফা ইবনুল ইয়ামান (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ফিতনাকালীন হক্ব-বাতিল উভয়টা একটি আরেকটির সাথে মিশ্রিত হয়ে যাবে কিন্তু যারা হক্বকে যথাযথ ভাবে জানবে এবং বুঝবে কোনো ধরনের ফিতনা তাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবেনা।
➥ [আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১৩২]
___________________________________
হাদিস – ১৩৩
হযরত আবু মুসা আশআরী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) কিয়ামতের পূর্বের ফিতনা সম্পর্কে আলোচনা করলেন। হযরত আবু মুসা আশআ’রী বলেন, আমি বললাম, আমাদের মাঝে তো আল্লাহর কিতাব তথা কুরআন মাজীদ রয়েছে (অর্থাৎ তা সত্যেও কি ফিতনা হবে)। রাসূল (ﷺ) বললেন,হ্যাঁ, তোমাদের মাঝে আল্লাহর কিতাব রয়েছে। (অর্থাৎ তা সত্যেও ফিতনা আসবে) আবু মুসা (رضي الله عنه) বলেন, আমি বললাম, আমাদের সাথেতো আমাদের বিবেক রয়েছে, রাসূল (ﷺ) বললেন, হ্যাঁ, তোমাদের সাথে তোমাদের সাথে রয়েছে। (অর্থাৎ তা সত্যেও ফিতনা আপতিত হবে।)
➥ [আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১৩৩]
___________________________________
হাদিস – ১৩৪
হুজাইল ইবনে শুরাইবীল (رحمة الله) বলেন, একদিন হযরত আবু মাসউদ আনসারী (رضي الله عنه) বিশিষ্ট সাহাবী হযরত হোজাইফা ইবনুল ইয়ামান (رضي الله عنه) এর কাছে জানতে চাইলেন যে, এমন কোনো বিষয় সম্বন্ধে আমাদেরকে সংবাদ দিয়ে যান,যার পর আমরা সেটার উপর আমল করতে পারি। জবাবে হযরত হোজাইফা (رضي الله عنه) বলেন, নিঃসন্দেহে পরিপূর্ণ পথভ্রষ্টা হচ্ছে, তুমি যখন অসৎ জিনিসকে সৎ মনে করবে এবং সৎ বিষয় অসৎ মনে করবে, অতঃপর তুমি পর্যবেক্ষণ করবে, আজকে কিসের উপর রয়েছ, পরবর্তীতেও সেটাকে আকড়িয়ে ধরবে। তখন কখনো কোনো ফিতনা তোমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।
➥ [আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১৩৪]
___________________________________
হাদিস – ১৩৫
আমের (رحمة الله) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত হোজায়ফা (رضي الله عنه) কে সবচেয়ে মারাত্মক ও কঠিন ফিতনা সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, যখন তোমার অন্তরে ভাল এবং খারাপ বিষয় পেশ করা হয় আর তুমি সংশয়ের মধ্যে থাকো যে, কোনটা গ্রহণ করবে, তখনই মনে কর যেন কঠিন ফিতনার সম্মুখিন হয়েছো।
➥ [আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১৩৫]
___________________________________
হাদিস – ১৩৬
ইবরাহীম ইবনে আবু আবলা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার নিকট হাদীস পৌঁছেছে যে, নিঃসন্দেহে কিয়ামত এতন কিছু লোকের উপর সংঘটিত হবে, যাদের জ্ঞান হবে চড়–ই পাখির জ্ঞানের ন্যায়।
➥ [আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১৩৬]
___________________________________
হাদিস – ১৩৭
হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করা হয়েছে, তিনি বলেন, অনেক কম যুদ্ধে তোমরা বিজয় লাভ করতে পারবে। প্রথম জিহাদ হবে তোমাদের হাতের মাধ্যমে, এরপরের জিহাদ হবে তোমাদের মুখের দ্বারা, এরপরের জিহাদ চালাতে থাকবে কেবলমাত্র তোমাদের অন্তর দ্বারা। অতঃপর যে অন্তর সৎ কাজকে সৎকাজ এবং অসৎ কাজকে অসৎকাজ হিসেবে বুঝতে পারবেনা তারা উচ্চ স্তর থেকে নিম্নস্তরে পরিণত হবে।
➥ [আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১৩৭]
___________________________________
হাদিস – ১৩৮
হযরত আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন কোনো অন্তর ভালো কাজকে ভালো এবং খারাপ কাজকে খারাপ হিসেবে জানবেনা তার অধঃপতন শুরু হতে থাকে। অতঃপর যে উচ্চতায় উপনিত হোকনা কেন নিম্নমুখী হতে থাকবে।
➥ [আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১৩৮]
___________________________________
হাদিস – ১৩৯
হযরত আবু মাসউদ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি এরশাদ করেন, সেই অন্তর সম্বন্ধে তোমাদের কি ধারণা, যে অন্তর এক সময় উপুড় হয়ে পতিত হয়ে পড়বে।
➥ [আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১৩৯]
___________________________________
হাদিস – ১৪০
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে বুছর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা কারীগণ বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, তোমাদের অবস্থা কি হবে, যখন তোমরা বিশজন বা তার চেয়েও অধিক লোককে দেখবে যে, তাদের মধ্যে কেউ আল্লাহ তাআলাকে ভয় করেন।
➥ [আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১৪০]