কিতাবঃ প্রিয় নবীর পরকালীন জীবন (পর্ব ৪), হাদিস ৬-১০ : হায়াতুন্নবী ﷺ, ইউসূফ (আঃ) এর সৌন্দর্য্য ও মেরাজের ঘটনা

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

হাদিস ১১

عن عبد الله بن مسعوډ قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «كأني أنظر إلى موسی بن عمران في هذا الوادي محرما بين قطوانيتين»

رواه الطبراني وأبو يعلي وقال المنذري والهيثمى : إسناده حسن

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু মসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, হুযূর নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি (সে সময়ও) যেমন হযরত মূসা ইবনু ইমরানকে সে উপত্যকায় দু’খানা ক্বিতওয়ানী চাদরের মধ্যখানে এহরাম অবস্থায় দেখতে ছিলাম।

এ হাদিসকে ইমাম ত্বাবরানী, আবু ইয়া’লা এবং আবু নাঈম বর্ণনা করেছেন। ইমাম মুনযেরী এবং হায়ছমী বলেন, ইহার ইসনাদ হল হাসান।

______________________
ক. তাবরানী : আল মু’জামূল কবীর, ১০/১৪২, হাদিস : ১০২৫৫; মু’জামুল আওসাত, ৬/৩০১, হাদিস : ৬৪৮৭;
খ. আবু ইয়ালা : আল মুসনাদ, ৭/২৭, হাদিস : ৫০৯৩;
গ. মূনযির : আত্ তারগীব ওয়াত তারহীব, ২/১১৮, হাদিস : ১৭৪০;
ঘ. হায়ছূমী : মাজমাউয যাওয়ায়েদ, ৩/২২১ এবং ৮/২০৪;

হাদিস ১২

عن عبد الله بن عباس، أن رسول الله صلى الله عليه وسلم أتي على وادي الأزرق فقال: «ما هذا؟» قالوا: وادي الأزرق فقال: «كاني أنظر إلى موسی بن عمران مهبطا له خوار إلى الله بالتكبير، ثم أتى على ثنية، فقال: «ما هذه الثنية؟ قالوا: ثنيه كذا وكذا؟ فقال: «كاني أنظر إلى يونس بن متى على ناقة حمراء جعدة خطامها ليف وهو يلبي، وعليه جبة صوف –

رواه الحاكم وابن حبان وأبو نعيم وأبو عوانة والطبراني . وقال الحاكم : هذا حديث صحيح على شرط مسلم،

হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাছ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা বয়ান করেন যে, হুযূর নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ওয়াদিয়ে আজরকের দিকে আসলেন এবং জানতে চাইলেন ইহা কি? সাহাবাহ কেরাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম আরজ করলেন (এয়া রাসূলাল্লাহ!) ইহা ওয়াদিয়ে আজরক। তখন হযরত সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি যেমন মূসা ইবনু এমরানকে দেখতে ছিলাম যে, তিনি এ উপত্যকায় আল্লাহ তা’আলার মহত্ব বয়ান করতঃ অবতীর্ণ হচ্ছেন। তারপর তিনি সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এক পাহাড়ী পথের দিকে গমন করলেন, তখন তিনি সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানতে চাইলেন, ইহা কোন পাহাড়ী পথ? সাহাবাহ কেরাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম আরজ রলেন, ইহা অমুক অমুক পাহাড়ী পথ। তখন তিনি সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি যেমন হযরত ইউনুছ ইবনু মাত্তা আলায়হিস সালামকে লাল রঙের এলােমেলাে কেশওয়ালা উষ্ট্রীর উপর বসা অবস্থায় দেখতে ছিলাম। সে উষ্ট্রীর লাগাম খেজুরের ছালের ছিল। এবং তিনি তলবিয়াহ বলতে ছিলেন এমতাবস্থায় তার পরনে পশমের জুব্বা ছিল।

এ হদিসকে ইমাম হাকেম ইবনু হিব্বান, আবু নাঈম, আবু উ’য়ানা এবং তাবরানী বর্ণনা করেছেন। ইমাম হাকেম বলেন, এ হাদিস ইমাম মুসলিম এর শর্তাবলীর ভিত্তিতে সহীহ।
______________________
ক. হাকেম : আল মুসতাদরাক, ২/৩৭৩, ৬৩৮, হাদিস : ৩৩১৩;
খ. ইবনে হিব্বান : আস সহীহ, ১৪/১০৩, হাদিস : ৬২১৯;
গ. তাবরানী : আল মু’জামুল কবীর, ১২/১৫৯, হাদিস : ১২৭৫৬;
ঘ. আবুনাঈম : হিলইয়াতুল আওলিয়া, ২/২২৩, ৩/৯৬;
ঙ. আবু আওনা : আল মুসনাদ, ২/৪২১, হাদিস : ৩৬৮২;

হাদিস ১৩

عن ابن عباس رضي الله عنهما ، أنه قال : لقد سلك فج الروحاء سبعون نبيا حجاجا عليهم ثياب الصوف ، ولقد صلى في مسجد الخيف ثبعون نبيا.

رواه الحالكم و الطبراني والبيهقي . وقال الهيثمي : رجاله ثقات.

হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাছ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা বয়ান করেন যে, ৭০ (সত্তর) জন আম্বিয়ায়ে কেরাম আলায়হিমুস সালাম হজ্ব আদায়ের উদ্দেশ্যে রাওহাহ এর পথে রওয়ানা দিলেন, যাদের পরনে পশমের কাপড় ছিল এবং ৭০ (সত্তর) জন অম্বিয়ায়ে কেরাম আলায়হিমুস সালাম মসজিদে খাইফে নামায আদায় করেন।

এ হাদিসকে ইমাম হাকেম, ত্ববরানী এবং বায়হাক্বী বর্ণনা করেছেন। ইমাম হায়ছূমী বলেন, এ হাদিসের বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযােগ্য।

_________________________
ক. হাকেম : আল মুসতাদরাক, ২/৬৫৩, হাদিস : ৪১৬৯;
খ. ইবনে হিব্বান : আস্ সহীহ, ১৪/১০৩, হাদিস : ৬২১৯;
গ. তাবরানী : আল মু’জামূল কবীর, ১২/৪৭৪, হাদিস : ১৩৫২৫;
ঘ. বায়হাকী : আস্ সুনানুল কুবরা, ৫/১৭৭, হাদিস : ৯৬১৮;
ঙ. ফাকেহী : আখবারু মক্কা, ৪/২৬৬, হাদিস : ২৫৯৪;
চ. হায়ছূমী : মাজমাউয যাওয়াদে, ৩/২৯৭;

হাদিস ১৪

عن ابن عباس، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «صلى في مسجد الخيف سبعون نبیا منهم موسی كأني أنظر إليه وعليه عباءتان  قطوانيتان وهو محرم على بعير من إبل شنوءة مخطوم بخطام ليف له ضفران»

رواه الطبراني أبو نعيم والفاكهى . وقال الهيثمي : رجاله ثقات .

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাছ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, হুযূর নবী আকরম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেন, মসজিদে খাইফে ৭০ (সত্তর) জন আম্বিয়ায়ে কেরাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম নামায আদায় করেছেন। যাদের মধ্যে হযরত মূসা আলায়হিস্ সালামও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। (সে সময়ও) আমি যেমন তাঁকে দেখতে ছিলাম এবং তাঁর পরণে দু’খানা ক্বিতওয়ানী চাদর ছিল। এবং তিনি এহরাম পরা অবস্থায় শানুয়াহ গােত্রের উষ্ট্ৰীসমূহের একটি উষ্ট্রীর উপর আরােহী ছিলেন। যার লাগাম খেজুরের ছালের ছিল। যাতে দুইটি রশি ছিল।

এ হাদিসকে ইমাম ত্ববরানী আবু নঈম এবং ফাকেহী বর্ণনা করেছেন, ইমাম হায়ছুমী বলেন, ইহার বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযােগ্য।

_____________________
ক. তাবরানী : আল মু’জামূল কবীর, ১১/৪৫২, হাদিস : ১২২৮৩;
খ. আবু নাঈম : হিলইয়াতুল আওলিয়া, ২/১০;
গ. ইবনে আদী : আল কামেল, ৬/৫৮;
ঘ. ফাকেহী : আখবারু মক্কা, ৪/৬২২, হাদিস : ২৫৯৩;
ঙ. দায়লামী: আল মুসনাদুল ফিরদাউস, ২/৩৯২, হাদিস : ৩৭৪০;
চ. হায়ছুমী : মাজমাউয্ যাওয়ায়েদ, ৩/২২১, ২৯৭;

হাদিস ১৫

عن عمار بن یاسر ، يقول : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: إن الله وكل بقبري ملكا أعطاه أسماع الخلائق ، فلا يصلي على أحد إلى يوم القيامة إلا ابلغني باسمه واسم ابيه، هذا فلان ابن فلان قد صلى عليك –

رواه البزار والبخاري في الكبير ، وقال الهيثمي : فيه ان الجميري لا أعرفه وبقية رجاله رجال الصحيح

وروى أبو الشيخ ابن حبان ولفظه : قال رسول الله صلى الله تعالى عليه وسلم : إن الله تبارك وتعالي ملگا أعطاه أسماع الخلائق كلهم ، فهو قائم على قبري ، إذا مت الى يوم القيامة ، فليس أحد من صلى على صلاة إلا سماه باسمه واسم آبیه ، فقال : يا محمد ، صلي عليك فلان، فيصلي الرب تبارك وتعالى علي ذالك الرجل بكل واحد عشرا.

হযরত আম্মার ইবনু ইয়াসির রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত যে, হুযূর নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা আমার কবরের উপর একজন ফেরেশতা নিয়ােগ করেছেন, যাকে আল্লাহ তা’আলা সমস্ত সৃষ্টিকুলের শব্দ শ্রবণের (এবং বুঝার) শক্তি দান করেছেন, তখন কেয়ামত দিবস পর্যন্ত যে-কেউ আমার উপর দরূদ পাঠ করবে সে ফেরেশতা ঐ দরূদ পাঠকের নাম এবং তার পিতার নাম আমার নিকট পৌছাবেন এবং আবেদন করবেন, এয়া রাসূলাল্লাহ! (দ.) অমুকের পুত্র অমুক আপনার উপর দরূদ প্রেরণ করেছেন।

এ হাদিসকে ইমাম বাজ্জার এবং বুখারী আত্তারিখুল কবীর এ এবং মুনজেরী ও বর্ণনা করেছেন। ইমাম হায়ছুমী বলেন, ইহার সনদে ইবনু হুমায়রী বর্ণনাকারীকে আমি চিনি না। তিনি ছাড়া সকল বর্ণনাকারীগণ সহীহ হাদিসের বর্ণনাকারী হন।

আবূ শায়খ ইবনু হাইয়্যান এর বর্ণনার শব্দসমূহ এরূপ যে, হুযূর নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা’আলার এক ফেরেশতা আছে, যাকে আল্লাহ তা’আলা সমস্ত সৃষ্টিকুলের শব্দ শােনার (এবং বুঝার) শক্তি দান করেছেন, তখন সে ফেরেশতা আমার ওফাতের পর কেয়ামত পর্যন্ত আমার কবরের উপর দণ্ডয়মান থাকবে, অতঃপর আমার উম্মতের মধ্য থেকে যে-কেউ আমার উপর দরূদ প্রেরণ করবে সে ফেরেশতা তার নাম এবং তার পিতার নাম নেবেন এবং বলবেন, হে মুহাম্মদ! (আমার মনিব) অমুক ব্যাক্তি আপনার খেদমতে দরূদ প্রেরণ করেছেন। তখন আল্লাহ তা’আলা সে ব্যাক্তির উপর প্রতি দরূদের বিনিময়ে দশটি রহমত অবতীর্ণ করবেন।

_______________________
ক. বাযযার : আল মুসনাদ, ৪/২৫৫, হাদিস : ১৪২৫, ১৪২৬;
খ. বুখারী : তারিখুল কবীর, ৬/৪১৬, হাদিস : ২৮৩১;
গ. ইবনে হাইয়ান: আল আযমা, ২/৭৬২, হাদিস : ১;
ঘ. হায়ছুমী : মাজমাউয যাওয়ায়েদ, ১০/১৬২;

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment