কিতাবঃ প্রিয় নবি (ﷺ) নূরের সৃষ্টি (দেওবন্দী ও আহলে হাদিসদের দৃষ্টিতে)”
গ্রন্থনা ও সংকলনেঃ মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বাহাদুর প্রতিষ্ঠাতা, ইমাম আযম রিসার্চ সেন্টার, বাংলাদেশ।
Text ready : মাসুম বিল্লাহ সানি
সম্পাদনাঃ মুফতি মাওলানা আলাউদ্দিন জিহাদী বিশিষ্ট ইসলামী লিখক ও গবেষক।
পৃষ্ঠপোষকতায়ঃ মাওলানা কামালুদ্দীন আযহারী
ফকীহ, নেছারিয়া আলিয়া কামিল মাদরাসা, চট্টগ্রাম
পরিবেশনায়ঃ ইমাম আযম (রা.) রিসার্চ সেন্টার, বাংলাদেশ।
Text ready : মাসুম বিল্লাহ সানি
উৎসর্গঃ
আমার শ্রদ্ধেয় উস্তাদ শাইখুল ইসলাম আল্লামা মুহাম্মদ আমিনুল করিম (বাবা হুযুর)(رحمة الله)‘র চরণ যুগলে।
গ্রন্থস্বত্বঃ লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত।
প্রথম প্রকাশঃ
৭ই এপ্রিল, ২০১৫ইং
দ্বিতীয় প্রকাশ, ২৫ ই এপ্রিল ২০১৬ইং
পরিবেশনায়ঃ ইমাম আযম (রা.) রিসার্চ সেন্টার, বাংলাদেশ।
শুভেচ্ছা হাদিয়া ৪০/= টাকা।
যোগাযোগঃ দেশ-বিদেশের যে কোন স্থানে বিভিন্ন সার্ভিসের মাধ্যমে কিতাবটি সংগ্রহ করতে যোগাযোগ- মোবাইলঃ ০১৮৪২- ৯৩৩৩৯৬
মোবাইলঃ ০১৭২৩-৯৩৩৩৯৬
সূচিপত্র
১ম অধ্যায়ঃ
রাসূল (ﷺ) নূরের সৃষ্টি বিষয়ে দেওবন্দীদের সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেমদের অভিমত
১. কেন লিখলাম এ গ্রন্থ/
২. এ বিষয়ে মুজাদ্দিদে আলফেসানী (رحمة الله)-এর অভিমত/
৩. আল্লামা শাহ আব্দুর রহিম মুহাদ্দিসে দেহলভীর অভিমত/
৪. আল্লামা শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله)‘র দৃষ্টিভঙ্গি/
৫. আল্লামা আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) এর দৃষ্টিভঙ্গি/
৬. আল্লামা শাহ আব্দুল আযিয মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) এর অভিমত/
৭. দেওবন্দীদের পীরানে পীর হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজেরে মক্কী (رحمة الله) দৃষ্টিভঙ্গি/
২য় অধ্যায়ঃ
রাসূল (ﷺ) নূরের সৃষ্টি সম্পর্কে দেওবন্দী আকাবীরদের দৃষ্টিভঙ্গি
১. এ বিষয়ে মাওলানা রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী সাহেবের দৃষ্টিভঙ্গি/
২. এ বিষয়ে দেওবন্দীদের শ্রদ্ধাভাজন মাওলানা আব্দুল হাই লাখনৌভীর দৃষ্টিভঙ্গি/
৩. এ বিষয়ে দেওবন্দীদের হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী সাহেবের আক্বিদা/
৪. দেওবন্দ মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা কাসেম নানুতবীর আক্বিদা/
৫. দেওবন্দীদের শাইখুল হাদিস হুসাইন আহমদ মাদানীর আক্বিদা/
৬. তাফসীরে মা‘রিফুল কোরআন প্রণেতা মুফতি শফি সাহেবের আক্বিদা/
৭. শাহ ইসমাঈল দেহলভী এর দৃষ্টিভঙ্গি /
৮. মুহাদ্দিস শাব্বির আহমদ উসমানীর আক্বিদা কী ছিল/
৯. দেওবন্দীদের শাইখুল হাদিস আনোয়ার শাহ কাশ্মীরীর আক্বিদা/
১০. এ বিষয়ে মাওলানা কারামাত আলী জৈনপুরীর আক্বিদা কী ছিল/
১১. তাবলীগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতার ছেলে ইদরিস কান্দ্রলভীর দৃষ্টিভঙ্গি/
১২. পাকিস্তানের দেওবন্দীদের মুহাদ্দিস সরফরাজ খান সফদরের দৃষ্টিভঙ্গি/
১৩. দেওবন্দী তাফসিরকারক আব্দুল মাজিদ দরিয়াবাদীর আক্বিদা/
১৪. বাংলাদেশের দেওবন্দী শাইখুল হাদিস আজিজুল হকের আক্বিদা কী ছিল/
১৫. বাংলাদেশের দেওবন্দীদের শাইখুল হাদিস মুফতি মনসূরুল হকের দৃষ্টিভঙ্গি/
১৬. তাফসীরে নুরুল কোরআনের লেখক দেওবন্দী আলেম মাওলানা আমিনুল ইসলামের আক্বিদা কী ছিল/
১৭. মাসিক মদিনার সম্পাদক মাওলানা মহিউদ্দিন খানের দৃষ্টিভঙ্গি/
১৮. দেওবন্দী আলেম আব্দুর কাদের দেহলভীর আক্বিদা/
১৯. থানবী সাহেবের প্রধান খলিফা শামসুল হক ফরিদপুরী সাহেবের আক্বিদা কী ছিল/
২০. বর্তমান বাংলাদেশী দেওবন্দীদের খতিবে আযম নুরুল ইসলাম ওলীপুরীর দৃষ্টিভঙ্গি/
২১. দেওবন্দী সুপরিচিত চরমোনাই দরবারে প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ছৈয়দ ইছহাকের আক্বিদা কী ছিল/
২২. বর্তমান দেওবন্দী মাদরাসা চট্টগ্রামের দারুল মা‘রিফের প্রতিষ্ঠাতা সুলতান যওক নদভীর আক্বিদা/
২৩. বি-বাড়ীয়ার বড় হুযুর নামে খ্যাত মুফতি সিরাজুল ইসলামের আক্বিদা কী ছিল/
২৪. হেফাজতে ইসলামের আমীর শাহ্ আহমদ শফির আক্বিদা/
৩য় অধ্যায়ঃ
রাসূল (ﷺ) নূরের সৃষ্টি বিষয়ে আহলে হাদিসদের আকাবীরদের দৃষ্টিভঙ্গিঃ
১. আহলে হাদিসদের ইমাম ইবনে তাইমিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি/
২. আহলে হাদিসদের ইমাম ইবনে কাসিরের দৃষ্টিভঙ্গি /
৩. আহলে হাদিসদের ইমাম ইবনুল কাইয়্যুম জাওযীর দৃষ্টিভঙ্গি/
৪. আহলে হাদিসদের ইমাম শাওকানীর দৃষ্টিভঙ্গি/
৫. আহলে হাদিসদের তথাকথিত ইমাম নাসিরুদ্দীন আলবানীর দৃষ্টিভঙ্গি/
৬. আহলে হাদিসদের মুফতি শায়খ হুসাইন আল-মাগরীবী আল-মিশরীরর দৃষ্টিভঙ্গি/
৭. আহলে হাদিসদের সরদার সানাউল্লাহ অমৃতস্বরীর দৃষ্টিভঙ্গি/
৮. আহলে হাদিসের কাযী সুলায়মান মানসূরপুরীর দৃষ্টিভঙ্গি/
চতুর্থ অধ্যায়ঃ
বাতিলপন্থীদের কয়েকটি খোঁড়া যুক্তির নিষ্পত্তি
১. আপত্তিঃ নবীজি বাশার ছিলেন আর সমস্ত বাশার মাটির তৈরী; তাই নবীজিও মাটির তৈরী/
২. সমস্ত মানুষ কী মাটির তৈরী?/
৩. সাধারণ মানুষ নুতফা থেকে সৃষ্টি এ মর্মে কোরআনের ১১টি আয়াত/
৪. রাসূলের সৃষ্টি আগে না আদমের?/
৫. চলমান আহলে হাদিসদের ও দেওবন্দীদের সপক্ষে শুধু ধোঁকা আর জাল হাদিসই প্রধান পুঁজি/
৬. এ বিষয়ে একটি জাল হাদিসই তাদের পুঁজি/
৭. তথাকথিত আহলে হাদিস ও দেওবন্দীদের প্রতি আমার আকুল আবেদন/
কেন লিখলাম এ গ্রন্থ?
আল্লাহ তা’য়ালার মহান দরবারে অসংখ্য কৃতজ্ঞতা সহ সিজদা আদায়ের পর, সৃষ্টির শ্রেষ্ঠতম উপঢৌকন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)র পূণ্যময় চরণে লক্ষ কোটি দরুদ ও সালাম পেশ করছি। সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! আমার এই ক্ষুদ্র পুস্তকে একটি অতিব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর আলোকপাত করছি। যে বিষয়টি যুগযুগ ধরে সমগ্র মুসলিম সম্প্রদায়ের বিশ্বাস পোষণ করে এসেছে। আমরা জানি একমাত্র আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতই নাযাত প্রাপ্ত দল। এ বিষয়ে বিস্তারিত আমি আমার লিখিত ‘আকায়েদে আহলে সুন্নাহ’’ গ্রন্থের ৪-১৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছি। বিস্তারিত জানার জন্য পাঠকবৃন্দের সেখানে দেখার অনুরোধ রইল। বর্তমানের অন্যতম চলমান দেওবন্দী, তাবলীগ জামাত এবং তথাকথিত আহলে হাদিসরাও মুখে মুখে প্রকৃত আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের অনুসারী বলে দাবী করে। সকলেরই জানা কথা যে একমাত্র নাযাত প্রাপ্ত দল আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকায়েদের ইমাম হলেন আবুল হাসান আশ‘আরী (رحمة الله) [ওফাত. ৩২৪ হি.]ও তাঁর সহচর ইমাম আবুল মানসুর মাতুরীদি (رحمة الله) [ওফাত. ৩৩৩ হি.]। যারা এ দুই ইমামসহ তাদের অনুসারীদের আক্বিদায় বিশ্বাসী তারাই এ দলের অনুসারী বলে বিবেচিত হবেন। তাদের বিরূপ আকিদার বিশ্বাসীগণ নিঃসন্দেহে এ দল থেকে বহিষ্কৃত।
আমি অনুসন্ধান করে দেখেছি যে, উক্ত দুই মহান ইমাম রাসূল (ﷺ) কে নূরের সৃষ্টি বলে বিশ্বাস করতেন এবং বিশ্বাস রাখতে হবে বলে তাদের বিভিন্ন গ্রন্থে লিখে গেছেন।
❏ ইমাম আবুল হাসান আশ‘আরী (رحمة الله)[ওফাত.৩২৪ হি.]বলেন-
انه تعالى نور ليس كالانوار وروح النبوية القدسية لمعة من نوره والملائكة اشرار تلك الانوار وقال صلى الله عليه وسلم أول ما خلق الله نورى ومن نورى خلق كل شئ- مطالع المسرات : صـ ٢٦٥جواهر البحار: ٢/٢٢٠
-‘‘আল্লাহ তা‘য়ালা নূর কিন্তু অন্যান্য নূরের মতো নন। এবং নবী করীম (ﷺ) এর রুহ মোবারক তাঁর নূরের জ্যোতি আর ফেরেশতারা হলো ঐ নূর সমূহের শিখা। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন : আল্লাহ তা‘য়ালা সর্ব প্রথম আমার নূরকে সৃষ্টি করেছেন আর আমার নূর হতে প্রত্যেক কিছু সৃষ্টি হয়েছে।’’
❏ তাঁর অন্যতম শাগরীদ সূরা মায়েদার ১৫ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আকায়েদের অন্যতম ইমাম মাতুরিদী (رحمة الله) [ওফাত.৩৩৩হি.] লিখেন-
وقال غيره: النور: هو مُحَمَّد، والكتاب: هو القرآن،
-‘‘অনেক মুফাস্সিরগণ বলেছেন উক্ত আয়াতের নূর দ্বারা হযরত মুহাম্মাদ (ﷺ) কে উদ্দেশ্য আর কিতাব দ্বারা কুরআন উদ্দেশ্য।’’
❏ সূরা নূরের ৩৫ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় তিনি লিখেন-
(مَثَلُ نُورِهِ)، يقول: نور مُحَمَّد –
‘‘আল্লাহর নূরের উপমা হচ্ছে নূরে মুহাম্মদী।’’
অতএব বুঝা গেল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকায়েদের ইমামদের আক্বিদা ছিল রাসূল (ﷺ) নূরের সৃষ্টি। পাঠকবৃন্দ! যারা ইমামের কথা মানে না তারা কী তাদের অনুসারী দাবী করতে পারেন? তাই আমরা সালফে সালেহীনের এবং এ মহান দুই ইমামের আক্বিদায় বিশ্বাসী। হাস্যকরের বিষয় হলো এ উপমহাদেশের ভয়ঙ্কর দুটি ফিতনা চলমান দেওবন্দী এবং আহলে হাদিসরা উপরোক্ত দুই ইমামের আক্বিদায় বিশ্বাসী হওয়ার দোহাই দিয়ে রাসূল কে মাটির তৈরী বলে সমাজে প্রচার করে ফিতনা সৃষ্টি করছেন প্রতিনিয়ত। তাদের বিপরীত আক্বিদা যারা পোষণ করবে তাদেরকে তারা কাফির পর্যন্ত ঘোষনা দিতে দ্বিধাবোধ করছেন না। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল আমরা অনুসন্ধান করে দেখেছি যে বর্তমান এ দুটি চলমান ফিতনাবাজদের আকাবিরগণ রাসূল (ﷺ) কে নূরের সৃষ্টি বলে তাদের বিভিন্ন গ্রন্থে উল্লেখ করে গেছেন। তাই বলতে পারি বর্তমান চলমান এই দুই ফিতনাবাজদের ফতোয়ায় তাদের পূর্বসূরী আকাবিরগণ ইবনে তাইমিয়া, গাঙ্গুহী, থানবী প্রভৃতি কাফির সাব্যস্ত হন। তাই তাদের আকাবিরদের দলিলের আলোকে এই ক্ষুদ্র পুস্তকটি তৈরী করলাম যাতে করে তাদের এবং তাদের পূর্বসূরিদের আক্বিদার পার্থক্য সকলের সামনে প্রকাশিত হয়ে যায়। তাই এসব বিভ্রান্তি থেকে সহজ সরল মুসলমানের সতর্কতার লক্ষ্যে আমার এই ক্ষুদ্র্রপ্রয়াস। আমার স্নেহের বড় বোন সৈয়দা হাবিবুন্নেছা দুলন এ পুস্তুকের নামকরণ করেছেন ‘‘দেওবন্দী ও আহলে হাদিসদের দৃষ্টিতে রাসূল (ﷺ) নূরের সৃষ্টি’’ ।
প্রিয় পাঠক মহল! অদীর্ঘ এই পুস্তুকটি পরোপুরি পড়ে বিবেকের আদালতে মুখোমুখি হবেন। এতে আপনার অন্তর চক্ষু খোলে যাবে, ইনশাআল্লাহ! সফলতার মুখ দেখবে আমার পরিশ্রম।
অধম রচয়িতা মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বাহাদুর
তারিখ.২২.০৪.১৬ইং
_______________
আলোচনাঃ
ক. রাসূল (ﷺ) নূরের সৃষ্টি বিষয়ে দেওবন্দীদের সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেমদের অভিমত-
১. মুজাদ্দেদিয়া তরিকার ইমাম ইমামে রব্বানি মুজাদ্দিদে আলফেসানি শায়খ আহমদ ফারুকী সেরহিন্দী (رحمة الله) স্বীয় মাকতুবাত শরীফে বলেন,
حقيقت محمد عليه من الصلوة افضلها ومن التسليمات اكملها كہ ظهور اول است وحقيقة الحقائق است باں معنى كہ حقائق ديگر چه حقائق انبياء كرام وچہ حقائق ملائك عظام عليه الصلوة والسلام كا اظلال اندمر او واجل حقائق است قال اول ما خلق الله نورى وقال عليه الصلوة والسلام خلقت من نور الله والمؤمنون من نورى-
-“হাকিকতে মুহাম্মদি (ﷺ) বিকাশের দিক দিয়ে সর্বপ্রথম এবং সকল হাক্বীক্বতের হাকিকত । সকল আম্বিয়ায়ে কেরাম (عليه السلام) এবং সম্মানিত সকল ফিরিশতাগণ হুযুর (ﷺ) এর হাক্কিকতের নির্যাস। রাসূলে খােদা (ﷺ) বলেছেন, সর্বপ্রথম আল্লাহ তায়ালা যা সৃষ্টি করেছেন তা হল- আমি আল্লাহর নূর হতে এবং সকল ঈমানদারগণ আমার নূর হতে সৃষ্টি।”
● মুজাদ্দেদে আলফেসানী : মকতুবাত শরীফ, ৩য় খন্ড : ২৩১।
রাসূল (ﷺ) আপাদ মস্তক নূর ছিলেন তাই তাঁর ছায়া ছিল না।
❏ এ প্রসঙ্গে মুজাদ্দিদে আলফেসানি (رحمة الله) আরও বলেন,
ادرا صلی اللہ علیہ وسلم سایہ نبود در عالم شہادت سایہ ہر شخص از شخص لطیف ترست چون لطیف تر از وے صلی اللہ علیہ وسلم در عالم نباشد اورا سایہ چہ صورت دارد؟
-“হুযুর (ﷺ) এর ছায়া ছিল না, কারণ ইহ জগতে প্রত্যেক ব্যক্তির ছায়া তাঁর চেয়েও সুক্ষ্মতম হয়। যেহেতু হুযুর অপেক্ষা সুক্ষ্মতম কোন বস্তু জগতে নেই, অতএব হুযুরের ছায়া কিরূপে হতে পারে?”
● মাকতুবাত শরীফ : তৃতীয় খন্ড, ৯৩প,
২.দেওবন্দীদের শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি –
আল্লামা শাহ ওয়ালি উল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) এর পিতা আল্লামা শাহ আবদুর রহিম মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) এর প্রসিদ্ধ গ্রন্থ “আনফাসে রহিমিয়াহ’ তে এ বিষয়ে লিখেন,
از عرش تا بفرش وملائكة علوى و جنس سفلى همہ ناشى ازاں حقيقته محمديہ صلى الله عليہ وسلم است وقول رسول مقبول اول ما خلق نورى وخلق الله من نورى وقول الله تعالى لو لاك لما خلقت الافلاك وقوله لولاك لما اظهرت الربوبيتى-
-“আরশ থেকে ফরশ পর্যন্ত উর্ধ্ব জগতের সকল নুরি ফেরেশতা, নিম্নজগতের সকল সৃষ্টি হাক্বীক্বতে মুহাম্মদিয়া থেকেই সৃষ্টি করা হয়েছে।
নবী করিম এর বাণী- সর্বপ্রথম আল্লাহ তায়ালা আমার নূরকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমার নূর থেকেই সকল বস্তুকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তায়ালা প্রিয় মাহবুব (ﷺ) কে লক্ষ্য করে ইরশাদ করেছেন –
“হে মাহবুব [ﷺ] আপনি না হলে আমি কোন কিছুই সৃষ্টি করতাম না এবং আপনি না হলে আমি আমার প্রভুত্ব প্রকাশ করতাম না।”
● আলামা শাহ আব্দুর রহিম দেহলভী : আনফাসে রহিমিয়াহ : পৃ. ১৩
৩. ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম হাদিস বিশারদ এবং দেওবন্দী, আহলে হাদিস সকলের নিকট গ্রহনযােগ্য মুহাদ্দিস
● আল্লামা শাহ ওয়ালি উল্লাহ মুহাদ্দেসে দেহলভী (رحمة الله) স্বীয় – তাফসীরাতে এলাহিয়া’ কিতাবের ১ম খন্ডের ২০৭ পৃষ্ঠায় হযরত যাবের (رضي الله عنه) এর নূরের হাদিসটি বর্ণনা করেন।
● এ হাদিসটি মূলত ইমাম আব্দুর রাযযাকের মুসান্নাফের হাদিস, তিনি এ হাদিসটি তাঁর কিতাব থেকে সংকলন করেছেন মাত্র । হাদিসটি আব্দুল হাই লাখনৌভির আলােচনায় ১৬ নং টিকায় বিস্তারিত আলােকপাত করা হয়েছে।
৪. দেওবন্দীরা যাকে অস্বীকার করলে তাদের হাদিসের সনদ হারিয়ে ফেলে যিনি উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠতম মুহাদ্দিস ছিলেন তিনি হচ্ছেন –
❏ আল্লামা আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله)। মুহাদ্দিস সাহবে স্বীয় সিরাত গ্রন্থ “মাদারিজুন নবুয়ত” এর দ্বিতীয় খন্ডের ২য় পৃষ্ঠায় – রাসূল (ﷺ) এর সৃষ্টি সম্পর্কে উল্লেখ করেন।
بدانك اول مخلوقات وواسطہ صدور كا ئنات وواسطہ خلق عالم وادم عليه السلام نور محمد صلى الله عليہ وسلم ست چنانچہ حديث در در صحيح دار دشده كہ اول ما خلق الله نورى وسائر مكونات علوى وسفلى ازاں نور وازاں جوهر پاك پيدا شده-
-“জেনে রেখাে, সর্বপ্রথম সৃষ্টি এবং কুল মাখলুকাত তথা আদম সৃষ্টিরও একমাত্র মাধ্যম নূরে মুহাম্মদী । কেননা সহিহ হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে-
اول ما خلق الله نورى
‘আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম আমার নূর মােবারক সৃষ্টি করেছেন এবং উৰ্ব্ব ও নিম্ন জগতের সবই তারই নূরে পাক ও মৌলিক সত্ত্বা থেকেই সৃষ্ট।”
● শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী : মাদারেজুন নবুয়্যাত : ২/২
❏ তিনি তাঁর কিতাবে সূরা আনআমের ১৬৩ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় আরও বলেন-
اما اول وى صلى الله عليہ وسلم اوليت درايجاد كہ اول ما خلق الله نورى اوليت در نبوت كہ كنت اويست نبيا وادم منجدل فى طينة واول در عالم در روز ميثاق الست بربكم قالوا بلى واول من امن بالله وبذالك امرت وانا واول المسلمين-
-‘‘তিনি সৃষ্টির মধ্যে সর্বপ্রথম। ইরশাদ করেন, আল্লাহ তা‘য়ালা সর্বপ্রথম যা সৃষ্টি করেছেন, তাহলো আমারই নূর। তিনি নবুওয়াত প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও সর্বপ্রথম। অতপর ইরশাদ ফরমান, আমি নবী ছিলাম যখন আদম (عليه السلام) মাটির সাথে গড়াগড়ি খাচ্ছিল (এর সৃষ্টি সম্পন্ন হয়নি)। তিনি নবীগণের নিকট থেকে অঙ্গীকার গ্রহণের দিন আল্লাহর বাণী ‘আমি কি তোমাদের রব নই?’ এর বেলায় সর্বপ্রথম ‘হ্যা’ বলে সম্মানিত উত্তরদাতা। তিনিই সর্বপ্রথম আল্লাহ তা‘য়ালার প্রতি ঈমান স্থাপনকারী।’’
● শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী : মাদারেজুন নবুয়্যাত : ১/৬ পৃ.
রাসূল আপাদ মস্তক নূর ছিলেন তাই তাঁর ছায়া ছিল না। এ প্রসঙ্গে শায়খুল মুহাদ্দিসীন হযরত মাওলানা শাহ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) বলেন,
ونبود مر آں حضرت صلی اللہ علیہ وسلم را سایہ در آفتاب نہ در قمر
-‘‘নূরে মুজাস্সাম (ﷺ) এর ছায়া না সূর্যালোকে ছিল, না চন্দ্রালোকে।’’
● মাদারিজুন্নবুওয়ত, ১/৪৩ পৃ.
২.ত্রয়ােদশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ আল্লামা শাহ আব্দুল আযিয মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) [ওফাত, ১২৩৯হি.) সমস্ত দেওবন্দী আলেমরা তাকে শ্রদ্ধা করে থাকে। অধিকাংশ বাংলাদেশের শাজরায় যার নাম রয়েছে। তিনি স্বীয় “তাফসীরে আযিযী”তে বলেন,
در عالم ارواح اول كسے كہ پيدا شد ايشاں بودند-
-‘‘রূহ জগতে (আলমে আরওয়াহে) সর্বপ্রথম যাকে সৃষ্টি করা হয়, তিনি হচ্ছেন রাসূল ।’’
● শাহ আজিজ মুহাদ্দিস দেহলভী : তাফসীরে আযিয়ী (শেষ জিলদ) : ৩০ পারা : প-২১৯
রাসূল (ﷺ) আপাদ মস্তক নূর ছিলেন তাই তাঁর ছায়া ছিল না। এ প্রসঙ্গে মুহাদ্দিস (رحمة الله) বলতে গিয়ে তিনি বলেন-
سایہ ایشاں بر زمین نمی افتاد
-‘‘হুযুর (ﷺ) এর ছায়া যমীনে পড়তো না।’’
● শায়খ আব্দুল আজিজ মুহাদ্দিস দেহলভী : তাফসীরে আযীযী, সূরা ওয়াদ্দোহাঃ ৩/৩১২,
২. এ বিষয়ে দেওবন্দী আলেমদের দৃষ্টিভঙ্গি ।
ক. এখন দেওবন্দীদের পীরানে পীর যাকে অস্বীকার করলে তাদের পীরানী শেষ।
❏ হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী (رحمة الله) এর আক্বিদা তুলে ধরবাে ।
رہايہ اعتقاد كہ مجلس مولد ميں حضور پر نور صلى الله عليہ وسلم رونق افروز ہو تے ہیں اسى اعتقاد كو كفر و شرك كہنا حد سے بڑهنا كيوں كہ يہ امر ممكن عقلا ونقلا – بلكہ بعض مقامات پر اس كا وقوع بهى و ہوتاہے–
-“এ আক্বীদা ও বিশ্বাস রাখা যে, মিলাদ মাহফিলে হুযুর পুরনুর উপস্থিত হন, এটা কুফর’ বা ‘শিরক নয়, বরং এমন বলা সীমা লঙ্গন ছাড়া কিছুই নয়। কেননা এ বিষয়টি যুক্তিভিত্তিক ও শরীয়তের দলীলের আলােকে সম্ভব। এমনকি অনেকক্ষেত্রে বাস্তবে তা ঘটেও থাকে।”
● আল্লামা হাজী এমদাদুলাহ মুহাজিরে মক্কী : কুন্দ্রীয়াতে এমদাদীয়া, পৃ: ১০৩ মাকতবাতে থানবী,
দেখুন নবিজির নূর হওয়ার কারণে তিনি তাঁর নামের সাথে “নূরে মুহাম্মদী” শব্দটিই ব্যবহার করতেন সব সময়। তার লিখিত বিখ্যাত গ্রন্থ “কুল্লিয়াতে এমদাদিয়ার ২২২ ও ২২৩ পৃষ্ঠায় (যা মাকতাবায়ে থানবী, দেওবন্দ হতে প্রকাশিত) কাব্যের মাধ্যমে নবীজিকে একাধিক স্থানে নূরে মুহাম্মদী (ﷺ) শব্দ লিখেছেন।
খ. রাসূল (ﷺ) এর সৃষ্টি প্রসঙ্গে মাওলানা রশিদ আহমদ গাঙ্গুহীর দৃষ্টিভঙ্গি।
দেওবন্দী সকল আলেমদের অন্যতম মান্যবড় হলেন রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী। তাবলিগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ইলিয়াস মেওয়াতি সাহেব তার মালফুজাতে বলেন-“তিনি যামানার কুতুব ও মুজাদ্দেদ ছিলেন।” (মালফুজাত-১৪৭)
❏ এবার আমরা অনুসন্ধান করে দেখবো এত বড় দেওবন্দী মুজাদ্দেদ রাসূল (ﷺ)’র সৃষ্টির বিষয়ে কি বলেনঃ
حق تعالی در شان حبیب خود صلی اللہ علیہ وسلم فرمود کہ آمدہ نزد شما از طرف حق تعالی نور وکتاب مبین ومراد از نور ذات پاک حبیب خدا صلی اللہ علیہ وسلم نیز فرمود کہ اے نبی ترا شاہد مبشر و نذیر وداعی الی اللہ وسراج منیر فرستادہ ایم ومنیر روشن کنندہ ونور دہندہ را گویند پس اگر کسے را روشن کردن از انساناں محال بودے آن ذات پاک صلی اللہ علیہ وسلم را ہم ایں امر میسر نیامد کہ آ ذات پاک صلی اللہ علیہ وسلم ہم از جملہ اولاد آدم علیہ السلام اند مگر آں حضرت صلى اللہ علیہ وسلم ذات خود را چناں مطہر فرمود کہ نور خالص گشتند وحق تعالی ان جناب سلامہ علیہ را نور فرمود وبہ تواتر ثابت شد کہ آں حضرت عالی سایہ نہ داشتند ظاہر است کہ بجز نور ہمہ اجسام ظل می دارند۔
“আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর হাবিব (ﷺ) এর শানে ফরমায়েছেন, “তােমাদের কাছে আল্লাহর নিকট হতে এক নূর ও স্পষ্ট কিতাব এসেছে।” ● সুরা মায়েদা আয়াত নং-১৫
“এ আয়াতের নূর দ্বারা হাবিবে খােদা এর পবিত্র সত্তাকে বুঝানাে হয়েছে। আল্লাহ তা’য়ালা আরাে বলেন,
-হে নবী ! আমি তাে আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী, আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহ্বানকারী এবং উজ্জ্বল প্রদীপ (সিরাজে মুনীর) রূপে পাঠিয়েছি। আর মুনীর উজ্জ্বলকারী ও আলােকদাতাকে বলে । সুতরাং মানুষের মধ্যে কাউকে উজ্জ্বল করা যদি অসম্ভব হতাে তাহলে হযরত (ﷺ) এর পবিত্র সত্তার অন্তর্গত কিন্তু তিনি ও তাঁর মােবারক সত্তাকে এমনভাবে পবিত্র করেছেন যে, তিনি নিখুঁত নূরে পরিণত হন এবং আল্লাহ তায়ালা তাকে নূর ফরমায়েছেন। আর সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, রাসূল ও এর ছায়া ছিল না এবং এটাও প্রকাশ্যমান যে, নূর ব্যতীত সমুদয় জড় দেহের ছায়া থাকে।”
● মাওলানা রশিদ আহমদ গাংগুহী : ইমদাদুস সুলুক, পৃ-৮৫, কুতুবখানায়ে এশায়াতুল উলূম, মুহাল্লা মুফতি, সাহারানপুর, ভারত, প্রকাশসাল বিহীন।
গাঙ্গুহী সাহেবের এ বক্তব্যে যা বুঝায় ?
১. কুরআনুল কারীমের সুরা মায়েদার ১৫ নং আয়াত ও তফসীর
قَدْ جَاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُبِينٌ
-“তােমাদের নিকট আল্লাহ হতে এসেছে এক মহান নূর এবং প্রকাশ্য কিতাব।”
এ আয়াতের নূর দ্বারা রাসূল (ﷺ)’র নূরাণী সত্ত্বাকে বুঝানাে হয়েছে । এটি শুধু তার ব্যাখ্যা নয়; বরং পূর্বসূরি সাহাবী, তাবেয়ী, তাবে-তাবেয়ী এ রকমই ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
(১) মুফাসসির কুল ম্রাট, বিশিষ্ট সাহাবী, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) [ওফাত.৬৮হি.] স্বীয় উল্লেখযােগ্য তাফসীর “তানভিরুল মিকীয়াস ফী তাফসীরে ইবনে আব্বাসে” উল্লেখ করেন,
{قَدْ جَآءَكُمْ مِّنَ الله نُورٌ} رَسُول يَعْنِي مُحَمَّدًا {وَكِتَابٌ مُّبِينٌ} بالحلال وَالْحرَام–
“নিশ্চয়ই তােমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে নূর এসেছে এই নূরের মর্মার্থ হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এর নুর এবং প্রকাশ্য কিতাব দ্বারা হালাল ও হারাম কে বুঝানাে হয়েছে।”
● সংকলনে ফিরযাবাদি, তানভিরুল মিকীয়াস ফী তাফসীরে ইবনে আব্বাস : ১/৯০.পৃ. দারূল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, কেনন, প্রকাশ.১৪১৪হি,
(২) বিখ্যাত মুফাসসির ও মুহাদ্দিস যার এ তাফসীর কওমী, আলীয়া সমস্ত মাদ্রাসায় পড়ানাে হয় তিনি হচ্ছেন
ইমাম, জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رضي الله عنه) [ওফাত ৯১১হিজরী.] তিনি এ আয়াতের ব্যখ্যায় বলেন-
{قَدْ جَاءَكُمْ مِنْ اللَّه نُور} هُوَ النَّبِيّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ {وَكِتَاب} قُرْآن
-“নিশ্চয়ই তােমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে নূর এসেছে, সেই নূর হলেন নবী করীম (ﷺ)।”
● ইমাম জালালুদ্দীন সূয়তী : তাফসীরে জালালাইন : ১/১০১ পৃ:
পৃথিবীর বিখ্যাত ৬০টিরও বেশী তাফসীরে এ আয়াত শরীফের অনূরূপ ব্যাখ্যা দিয়েছেন; তা জানতে আপনারা আমার লিখিত প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানাের স্বরূপ উন্মােচন’ ১ম খ-ের ২৯৩-৩০৫ পৃষ্ঠা দেখুন।
(৩) ইমাম আলাউদ্দিন খাযেন (رحمة الله) {ওফাত ৭৪১হি.} বলেন,
قَدْ جاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ يعني محمدا صلى الله عليه وسلم إنما سماه الله نورا لأنه يهتدى به كما يهتدى بالنور في الظلام–
-‘‘নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহ হতে নূর এসেছে আর তা হল মুহাম্মদ (ﷺ) এর নূর নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁকে নূর হিসেবে নামকরণ করেছেন, কারণ তাঁর নূর দ্বারা মানুষ হিদায়াতপ্রাপ্ত হয়। যেমনিভাবে নূর বা আলো দ্বারা অন্ধকারে পথ খুঁজে পাওয়া যায়।’’
(৪) ইমাম কাযী নাসিরুদ্দীন বায়যাভী (رحمة الله) (ওফাত. ৬৮৫হি.) তাঁর তাফসীরে উল্লেখ করেন, قيل يريد بالنور محمد صلّى الله عليه وسلّم.-
-‘‘এটাও বলা হয়েছে যে, আয়াতে নূর মানে হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) কে বুঝানো হয়েছে।’’
(৫) বিখ্যাত উসূলবিদ ইমাম আবুল বারাকাত নাসাফী (رحمة الله) {ওফাত ৭১০হি.} তার তাফসীরে বলেন,
قَدْ جَاءَكُمْ مِّنَ الله نُورٌ ৃ النور محمد عليه السلام لأنه يهتدى به كما سمي سراجا–
-‘‘নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে নূর এসেছে। আর ‘‘নূর’’ হলো মুহাম্মদ মুস্তফা (ﷺ)। কারণ, তাঁর মাধ্যমে পথের দিশা পাওয়া যায়। যেমনিভাবে তাকে সুউজ্জ্বল প্রদীপ নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে।’’
(৬) ইমাম সৈয়দ মাহমুদ আলূসী বাগদাদী (رحمة الله) {ওফাত. ১২৭০ হি.} বলেন-
قَدْ جاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ عظيم وهو نور الانوار والنبى المختار صلى الله عليه وسلم اليه ذهب قتادة والزجاج –
-‘‘নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে মহান নূর এসেছে। আর তিনি হচ্ছেন নূরুল আনোয়ার বা সকল নূরের নূর আল্লাহর মনোনীত নবী মুহাম্মদ (ﷺ)। এটা বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত কাতাদাহ (رحمة الله) ও ইমাম যুজায (رحمة الله) এর অভিমত।’’
(৭) বিশ্ববিখ্যাত মুফাস্সির আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) {ওফাত.১১২৭হি.} এ আয়াতের তাফসীরে বলেন,
وقيل المراد بالأول هو الرسول صلى الله عليه وسلم وبالثاني القرآن ৃ. وسمى الرسول نورا لان أول شىء أظهره الحق بنور قدرته من ظلمة العدم كان نور محمد صلى الله عليه وسلم كما قال (أول ما خلق الله نورى) –
-‘‘নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে নূর এবং সমুজ্জল কিতাব এসেছে । কেউ কেউ বলেছেন প্রথমটা (অর্থাৎ- নূর) মানে রাসূল (ﷺ) আর দ্বিতীয়টা
(অর্থাৎ- কিতাব) মানে হচ্ছে- কোরআন মাজীদ (এরপর বলেছেন) রাসূলকে নূর এজন্যই করা হয়েছে যে, তিনিই সর্বপ্রথম বস্তু, যাকে আল্লাহ তাঁর কুদরতী নূর দ্বারা অস্তিত্বহীনতার আড়াল থেকে প্রকাশ করে দিয়েছেন, সেটা ছিলো হুযুর (ﷺ) এরই নূর, যেমন রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন,‘সর্বপ্রথম আল্লাহ তা‘য়ালা আমার নূরকে সৃষ্টি করেছেন।’
(৮) আল্লামা কাযি সানাউল্লাহ পানিপথী হানাফী (رحمة الله) এ আয়াতের তাফসীরে বলেন,
قَدْ جاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ يعنى محمد صلى الله عليه وسلم–
-‘‘নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ হতে নূর এসেছে অর্থাৎ তা হচ্ছে মুহাম্মদ (ﷺ)।’’
(৯) আল্লামা ইমাম সাভী আল-মালেকী (رحمة الله) উক্ত আয়াতের তাফসীরে বলেন,
قد جاءكم من الله نور وهو النبى صلى الله عليه وسلم اى اسمى نور لانه ينور البصائر ويهديها للارشاد ولانه اصل كل نور حسى ومعنوى –
-‘‘নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে নূর এসেছে। আর সেই নূর হলো নবী করীম (ﷺ)। তাকে নূর এজন্য বলা হয়েছে যে, তিনি অন্তর্দৃষ্টিগুলোকে আলোকিত করেন এবং সেগুলোকে সঠিক পথ প্রদর্শন করেন। তদুপরি, সেটা হচ্ছে ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য ও ভাবগত প্রতিটি নূরের মূল।’’
(১০) বিশ্ববিখ্যাত মুফাস্সির আল্লামা ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী (رحمة الله) (ওফাত.৬০৬হি.) এই আয়াতের তাফসীরে বলেন-
قَالَ تَعَالَى: قَدْ جاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتابٌ مُبِينٌ وَفِيهِ أَقْوَالٌ: الْأَوَّلُ: أَنَّ الْمُرَادَ بِالنُّورِ مُحَمَّدٌ وَبِالْكِتَابِ الْقُرْآنُ،–
-‘‘নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে নূর ও সুস্পষ্ট কিতাব এসেছে। এ বিষয়ে কয়েকটি মতামত রয়েছে, প্রথম মত হল ‘নূর’ দ্বারা উদ্দেশ্য মুহাম্মদ (ﷺ) এবং ‘কিতাব’ দ্বারা উদ্দেশ্য কুরআন মাজীদ।’’
তারপর একটু সামনে অগ্রসর হয়ে এ আয়াতের নূরের ব্যাখ্যায় যারা কুরআন উদ্দেশ্য করতে যান তাদের জবাবে ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী (رحمة الله) বলেন-
– الثَّالِثُ: النُّورُ/ وَالْكِتَابُ هُوَ الْقُرْآنُ، وَهَذَا ضَعِيفٌ لِأَنَّ الْعَطْفَ يُوجِبُ الْمُغَايَرَةَ بَيْنَ الْمَعْطُوفِ وَالْمَعْطُوفِ عَلَيْهِ
-‘‘তৃতীয় মত পোষণ কারীদের অভিমত হল, উক্ত আয়াতের নূর ও কিতাব দ্বারা একক কুরআনই উদ্দেশ্য। আমি বলবো, এই অভিমত দূর্বল। কারণ “আতফ” (ব্যাকরণগত সংযোজন) “মা‘তুফ” (সংযোজিত) ও “মা‘তুফ আলাইহি” (যার সাথে সংযোজন করা হয়েছে) এর মধ্যে ভিন্নতা প্রমাণ করে।’’ অথাৎ, নূর ও কিতাব একই জাতের নয়।
(১১) বিশ্ববিখ্যাত মুফাস্সির ও মুহাদ্দিস ইমাম বগভী (رحمة الله) {ওফাত ৫১০হি.} তাঁর তাফসীরে বলেন,
{قَدْ جَاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ} يعني: محمد صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ،–
-‘‘নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহর হতে নূর এসেছে, উক্ত নূরের মর্মার্থ হলো মুহাম্মদ (ﷺ)।’’
(১২) ইমাম ইবনে জরীর ত্বাবারী (رحمة الله) {ওফাত ৩১০হি.} উক্ত আয়াতের তাফসীরে উল্লেখ করেন-
القول في تأويل قوله عز ذكره: {قَدْ جَاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُبِينٌ }قال أبو جعفر: يقول جل ثناؤه لهؤلاء الذين خاطبهم من أهل الكتاب:”قد جاءكم”، يا أهل التوراة والإنجيل”من الله نور”، يعني بالنور، محمدًا صلى الله عليه وسلم الذي أنار الله به الحقَّ، وأظهر به الإسلام،الخ-
-‘‘আল্লাহ পাকের বাণী নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে নূর এসেছে এবং সুস্পষ্ট কিতাব এসেছে। এর ব্যাখ্যা হচ্ছে মহা প্রশংসাময় আল্লাহ এসব কিতাবী সম্প্রদায়কে সম্বোধন করে ইরশাদ ফরমাচ্ছেন, ওহে তাওরীত ও ইনযীল ধারীরা নিশ্চয়ই আল্লাহর পক্ষ থেকে নূর তোমাদের নিকট এসেছে। আল্লাহ তা‘য়ালা এখানে নূর মানে হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এর কথা বুঝিয়েছেন। যার মাধ্যমে আল্লাহ তা‘য়ালা সত্যকে আলোকিত করেছেন এবং ইসলামকে জাহির (বিকাশিত) করেছেন।’’
(১৩) আল্লামা ইমাম শরবীনী (رحمة الله) উক্ত আয়াতের তাফসীরে উল্লেখ করেন,
قد جاءكم من الله نور هو محمد عليه الصلوة والسلام –
-‘‘নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে নূর এসেছে। নূর হলো হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (ﷺ)।’’
(১৪) আল্লামা ইমাম কাযী আয়াজ আল-মালেকী (رحمة الله) {ওফাত. ৫৪৪হি.} এক পর্যায়ে উক্ত আয়াত সম্পর্কে বলেন-
وَقَدْ سَمَّاهُ اللَّهُ تَعَالَى فِي الْقُرْآنِ فِي غَيْرِ هَذَا الْمَوْضِعِ نُورًا وَسِرَاجًا مُنِيرًا، فَقَالَ تَعَالَى: ্রقَدْ جاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتابٌ مُبِينٌগ্ধ –
-‘‘আল্লাহ তা‘য়ালা কোরআন মাজীদে হুযুর (ﷺ) কে নূর ও সমুজ্জলকারী প্রদীপ নামে আখ্যায়িত করেছেন। সুতরাং এজন্যই ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে নূর এবং সুস্পষ্ট কিতাব এসেছে।’’
(১৫) ইমাম কুরতুবী আল-মালেকী (رحمة الله) {ওফাত.৬৭১হি.} স্বীয় তাফসীরে উল্লেখ করেন,
‘‘কেউ কেউ উক্ত আয়াতের নূর দ্বারা নূরে মুহাম্মদীকে (ﷺ) বুঝিয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন।’
قَدْ جاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ: وَقِيلَ مُحَمَّدٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ، عَنِ الزَّجَّاجِ.
-“তােমাদের নিকট আল্লাহ হতে এসেছে এক নূর, অনেকে বলেছে উক্ত নুর দ্বারা হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)-এর নুর কেই উদ্দেশ্য, যেমনটি তাবে-তাবেয়ী ইমাম যুজায রহ.।”
● কুরতুরী, তাফসীরে আহকামুল কুরআন, ৬/১১৮পৃ., দারুল কুতুব মিসরিয়্যাহ, কাহেরা, মিশর, তৃতীয় প্রকাশ, ১৩৮৪হি, ১৯।
(১৬) উক্ত আয়াত সম্পর্কে বিশ্ববিখ্যাত হাদিস সমালােচক ও তাফসীরকারক ইমাম আবুল ফারাহ আব্দুর রহমান যওজী (رحمة الله) [ওফাত.৫৯৭হি.] বলেন-
قوله تعالى قَدْ جاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نورٌ قال قتادة: يعني بالنور: النبي محمّدا صلّى الله عليه وسلّم.-
-“আল্লাহর বাণী : তােমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে “নূর” এসেছে উক্ত আয়াত সম্পর্কে বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত কাতাদাহ (رحمة الله) বলেন, উক্ত নূরের মর্মার্থ হল নূর নবী মুহাম্মদ (ﷺ)-এর নূরাণী সত্ত্বা।”
● ইমাম যওজী : যা’দুল মাইসরি ফি উলুমুত তাফসীর : ২৬১ পৃ. মাকতুবায়ে ইসলামিয়া বয়রুত।
(১৭) আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন ইসমাঈল নাবহানী (رحمة الله) উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন-
قال الله تعالى (قد جاءكم من الله نور) يعنى محمدا صلى الله عليه وسلم (وكتاب مبين) يعنى القران –
-‘‘উক্ত আয়াতে ‘নূর’ দ্বারা রাসূল (ﷺ) কে আর কিতাবুম মুবীম দ্বারা ‘কুরআন’ বুঝানো হয়েছে।’’
(১৮) ইমাম আবুস সাউদ ইমাদী (رحمة الله) {ওফাত.৯৮২হি.} তার তাফসীরে উল্লেখ করেন,
المرادُ بالأول هو الرسول صلى الله عليه وسلم وبالثاني القرآن –
-‘‘প্রথমটা (নূর) মানে রাসূল (ﷺ)। আর দ্বিতীয়টা প্রকাশ্য কিতাব মানে হচ্ছে কুরআন মাজীদ।’’
(১৯) বিশ্ববিখ্যাত ইমাম আলী বিন আহমদ আল- ওয়াহেদী নিশাপুরী আশ্-শাফেয়ী (رحمة الله) {ওফাত.৪৩৮হি. } উক্ত আয়াতের তাফসীরে বলেন-
{قد جاءكم من الله نور} يعني: النبيَّ {وكتاب مبين} القرآن-
-‘‘তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে “নূর” এসেছে এর মর্মার্থ হল নবী করীম (ﷺ), আর প্রকাশ্য কিতাব দ্বারা উদ্দেশ্য হলো কুরআন।’’
(২০) অপরদিকে ইমাম আব্দুর রহমান বিন মুহাম্মদ মাখলুফ ছা’লাভী (رحمة الله) {ওফাত.৪২৭হি.} উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন-
قَدْ جاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ يعني محمد صلى الله عليه وسلّم وكِتابٌ مُبِينٌ: هو القُرآن،-
-‘‘আল্লাহর বাণী : তোমাদের নিকট মহান আল্লাহ থেকে নূর এসেছে। আর সেই নূর হলেন হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) আর কিতাবুম মুবিন হলো কুরআন।’’
(২১) ইমাম আবি বকর আল-বাকী (رحمة الله) {ওফাত.৮৮৫হি.} উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন এ বর্ণিত হয়েছে-
{قد جاءكم} وعظمه بقوله معبراً بالاسم الأعظم: {من الله} أي الذي له الإحاطة بأوصاف الكمال {نور} أي واضح النورية، وهو محمد صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
-‘‘……উক্ত আয়াতের নূর দ্বারা রাসুল (ﷺ) কে বুঝানো হয়েছে।’’
(২২) ইমাম নিযামুদ্দীন নিশাপুরী (رحمة الله) (ওফাত ৮৫০হি.) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন
قَدْ جاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ محمد
-‘‘তোমাদের নিকট আল্লাহ হতে নূর এসেছে তার দ্বার উদ্দেশ্য হলো রাসুল (ﷺ)।’’
(২৩) ইমাম আবু তালেব আন্দুলুসী কুরতুবী (رحمة الله) [ওফাত ৪৩৭হি. ] এ আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেন-
{قَدْ جَآءَكُمْ مِّنَ الله نُورٌ} وهو محمد صلى الله عليه وسلم.
-‘‘তোমাদের নিকট আল্লাহ হতে নূর হতে এসেছে সেটা হচ্ছে হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এর নূর।’’
(২৪) আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের অন্যতম ইমাম মাতুরিদী (رحمة الله) {ওফাত.৩৩৩হি.} উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন
وقال غيره: النور: هو مُحَمَّد، والكتاب: هو القرآن،
-‘‘অনেকে বলেছেন উক্ত আয়াতের নূর দ্বারা হযরত মুহাম্মাদ (ﷺ) কে উদ্দেশ্য আর কিতাব দ্বারা কুরআন উদ্দেশ্য।’’ অতএব বুঝা গেল যারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকায়েদের ইমামের কথা মানে না পাঠকবৃন্দ! তারাও কী প্রকৃত আহলে সুন্নাতের অনুসারী?
(২৫) ইমাম আবু লাইস সমরকন্দী (رحمة الله) {ওফাত. ৩৭৩ হি.} উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন-
قَدْ جاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ يعني ضياء من الضلالة، وهو محمد صلى الله عليه وسلم
-‘‘তোমাদের নিকট আল্লাহ হতে নুর হতে এসেছে সেটা হচ্ছে হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এর নুর।’’
(২৬) ইমাম আবুল হাসান মাওয়ারিদী (رحمة الله) {ওফাত ৪৫০ হি.} উক্ত আয়াতের তাফসীরে বলেন-
{قَدْ جَآءَكم مِّنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُّبِينٌ} فى النور تأويلان: أحدهما: محمد صلى الله عليه وسلم , وهو قول الزجاج.
-‘‘এ আয়াতের দুটি ব্যাখ্যা রয়েছে প্রথম গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা হলো উক্ত নূর দ্বারা রাসূল (ﷺ) কে বুঝানো হয়েছে। আর এটা তাবেয়ী ইমাম যুজায (رحمة الله) বলেছেন।’’
পৃথিবী বিখ্যাত ৭০টিরও বেশী তাফসীরে এ আয়াত শরীফের অনূরূপ ব্যাখ্যা দিয়েছেন; তা জানতে আপনারা আমার লিখিত ‘‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’’ ১ম খন্ডের ২৯৩-৩০৫ পৃষ্ঠা এবং রাসূল (ﷺ)-এর সৃষ্টি নিয়ে বিভ্রান্তির অবসান’’ গ্রন্থ দেখুন।
২. গাঙ্গুহী সাহেব আরও বুঝিয়েছেন রাসূল (ﷺ) এর দেহ মোবারক নূরের তৈরী ছিল।
৩. নূরের তৈরী ছিলেন বলেই তার দেহের কোন ছায়া ছিল না।
৪. আর তাঁর ছায়া না থাকার কারণও তিনি বর্ণনা করেছেন এই যে, নুর ব্যতীত সকল দেহের ছায়া থাকে। অথচ বর্তমান দেওবন্দী দাবিদাররা এ সব অবিরাম অস্বীকার করেই চলছে। আর আমরা আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের লােকেরা বললেই কাফির হয়ে যাই। সম্মানিত পাঠকমহলের কাছে জিজ্ঞাসা যে, বর্তমান সে সব দেওবন্দীদের দৃষ্টিতে তাদেরও পূর্বসূরীগণ গাঙ্গুহী কী মুসলমান! না কাফের!
খ. রশিদ আহমদ গাঙ্গুহীর সুপ্রসিদ্ধ ফাওয়ার কিতাব ‘ফাতওয়ায়ে রশিদিয়াহ’। দেখুন! সেখানে তিনি রাসূল (ﷺ)’র সৃষ্টির বিষয়ে কী লিখেছেন। একজন প্রশ্ন করেন-
سوال: اول ما خلق الله نورى اور لولاك لما خلقت الافلاك يہ دونوں حديثيں صحيح حديثيں ہیں يا وضعى ؟ كو وضعى بلاتا ہے-
প্রশ্ন : “সর্বপ্রথম আল্লাহ তায়ালা যা সৃষ্টি করেছেন, তা হল আমার নূর এবং আপনাকে সৃষ্টি না করলে আসমানসমূহ এবং যমীন কোন কিছুই সৃষ্টি করতাম না।”
এ মর্মে বর্ণিত হাদিসগুলাে বিশুদ্ধ, নাকি জাল, যায়েদ নামক ব্যক্তি এগুলাে কে জাল বলছে। এ প্রশ্নের উত্তরে গাঙ্গুহী সাহেব বলেন,
جواب: يہ حديثيں كتب صحاح ميں موجود نہيں ہيں – مگر شيخ عبد الحق رحمة الله نے اول ما خلق الله نورى كو نقل كيا ہے اور بتايا ہے كہ اس كى كچہ اصل ہے فقط و الله تعالى اعلم –
-“এ হাদিসগুলাে সিহাহ (ছয়টি বিশুদ্ধ কিতাব) এর মধ্যে নেই কিন্তু, শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) “সর্বপ্রথম রাসূল (ﷺ) এর নুর মােবারক সৃষ্টি করা হয়েছে” উক্ত হাদিসটি বর্ণনা করে বলেছেন যে, এ হাদিসটির ভিত্তি আছে।”
● রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী, ফতােয়ায়ে রশিদিয়া : ১/২৭৮পৃ. মাকতাবায়ে থানবী, সাহারানপুর, ভারত, প্রকাশ, সালবিহীন।
❏ আল্লামা ইমাম আবদুল গণী নাবলুসী (رحمة الله) হযরত জাবের (رضي الله عنه) এর সনদ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে সর্বপ্রথম সৃষ্টি সম্পর্কে বলেন,
قد خلق كل شئ من نوره صلى الله عليه وسلم كما ورد به الحديث الصحيح
-“রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নূর মােবারক থেকে সব কিছু সৃষ্টি । উক্ত বর্ণিত হাদিসটির সনদ সহিহ।”
● ইমাম আব্দুল গনী নাবলুসী, হাদীকাতুল নাদিয়া :২/৩৭৫ পৃ. মাতাতে মাকতবায়ে নূরীয়াহ,ফয়সালাবাদ।
❏ বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা ইমাম যওজী (رحمة الله) স্বীয় “বয়ানুল মিলাদুন্নবী”-তে হাদিসটি এভাবে উল্লেখ করেন,
-“রাসূল (ﷺ) এর বাণী : সর্বপ্রথম আল্লাহ তা’য়ালা আমার নূর মােবারক সৃষ্টি করেছেন, আর আমার নূর হতে কুল কায়িনাত সব কিছু সৃষ্টি করেছেন।”
● আল্লামা ইমাম ইবনে যাওজী : বায়ানুল মিলাদুবী : ২২ পৃ. তুরস্কের ইস্তাম্বুল হতে প্রকাশিত ।
খ. শুধু তাই নয়, এমদাদুস সুলুক কিতাবে রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী আরও লিখেছেন-
حضرت صلی الله علیہ وسلم نے فرمایا ہے کہ حق تعالی نے مجهکو اپنے نور سے پیدا فرمایا اور مؤمنین کو میرے نور سے پیدا۔
-“রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, হক তায়ালা তাঁর নূর হতে আমাকে সৃষ্টি করেছেন, আর সমস্ত মুমিনগণ কে আমার নূর হতে সৃষ্টি করেছেন।”
● মাওলানা রশিদ আহমদ গাংগুহী : ইমদাদুস সুলুক, পৃ-৮৫, কুতুবখানায়ে এ মুফতি, সাহারানপুর, ভারত, প্রকাশ, সালবিহীন।
আমরা যদি কেউ রাসূল (ﷺ) কে আল্লাহর নূর হতে সৃষ্টি বলি তাহলে সকল দেওবন্দীরা ঐকজোট হয়ে আমাদেরকে মুশরিক ফতােয়া দিয়ে থাকে; কিন্তু এখন এ সম্প্রদায়ের কাছে আমার প্রশ্ন হল যে গাঙ্গুহী সাহেব কী হবেন? এ হাদিসটির কোনাে সনদ গাঙ্গুহী সাহেব না দিলেও হাদিসটির সনদ আমরা জানি।
❏ প্রথম হাদিসঃ এটি ইমাম আবু নুঈম ইস্পাহানী (رحمة الله) তার “আমলিয়্যাহ” গ্রন্থে সংকলন করেছেন হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত রাসূল (ﷺ) ইরশাদ ফরমান-
قال أبو نعيم في أماليه ৃ. عن أبي هريرة، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: خلقني الله من نوره، وخلق أبا بكر من نوري، وخلق عمر من نور أبي بكر، وخلق أمتي من نور عمر، وعمر سراج أهل الجنة.
-‘‘আল্লাহ তা‘য়ালা আমাকে তাঁর নূর (ফয়েযের নূর) থেকে সৃষ্টি করেছেন। হযরত আবু বকরকে আমার নূর থেকে সৃষ্টি করেছেন, উমারকে আবু বকরের নূর থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমার উম্মতকে উমরের নূর থেকে সৃষ্টি করেছেন। আর উমর হল জান্নাত বাসীদের প্রদীপ স্বরূপ।’’
❏ দ্বিতীয় হাদিসঃ ইমাম দায়লামী (رحمة الله) (ওফাত: ৫০৯ হিজরী) তিনি গাঙ্গুহী সাহেবের বক্তব্যের সমর্থনে সনদসহ একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন-
إن الله عز وجل خلقني من نوره وخلق أبا بكر من نوري وخلق عمر من نور أبي بكر وخلق المؤمنين كلهم من نور عمر غير النبيين والمرسلين –
-“আল্লাহ আমাকে তাঁর নূর (ফয়েযের নুর) থেকে সৃষ্টি করেছেন, আবু বকরকে আমার নূর থেকে, উমরকে আবু বকরের নূর থেকে এবং নবী রাসূল ব্যতীত মু’মিনগণের সকলকেই উমরের নূর থেকে সৃষ্টি করেছেন।”
● ইমাম দায়লামী : আল-মুসনাদিল ফিরদাউস : ১/১৭১ পৃ.হাদিস নং-৬৪০, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, প্রথম প্রকাশ, ১৪০৬ হিজরী।
❏ তৃতীয় হাদিসঃ ইমাম কুরতুবী (رحمة الله) [ওফাত.৬৭১হি.] উক্ত হাদিসটির তৃতীয় একটি সূত্র বর্ণনা করেছেন-
وَذَكَرَ الثَّعْلَبِيُّ: وَقَالَ أَنَسٌ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: (إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى خَلَقَنِي مِنْ نُورٍ وَخَلَقَ أَبَا بَكْرٍ مِنْ نُورِي وَخَلَقَ عُمَرَ وَعَائِشَةَ مِنْ نُورِ أَبِي بَكْرٍ وَخَلَقَ الْمُؤْمِنِينَ مِنْ أُمَّتِي مِنْ نُورِ عُمَرَ وَخَلَقَ الْمُؤْمِنَاتِ مِنْ أُمَّتِي مِنْ نُورِ عَائِشَةَ
-“ইমাম ছালাভী (رحمة الله) তাঁর তাফসীরে উল্লেখ করেন -হযরত আনাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসুল (ﷺ) তাঁর নূরাণী জবানে ইরশাদ করেন,
“নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা আমাকে তাঁর নূর (ফয়যের নূর) থেকে সৃষ্টি করেছেন, আবু বকর (رضي الله عنه) কে আমার দূর থেকে সৃষ্টি করেছেন, হযরত উমার (رضي الله عنه) ও হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) কে আবু বকরের নূর থেকে সৃষ্টি করেছেন, আর সমস্ত মু’মিনদেরকে উমরের নূর হতে আর সমস্ত মু’মিনা নারীদেরকে হযরত আয়েশা (رضي الله عنه)’র নূর থেকে সৃষ্টি করেছেন।
● ইমাম কুরতুবী : তাফসীরে কুরতুবী : ১২/২৮৬ পৃ.সুরা নুর, আয়াত, ৩৫ এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গ।
হাদিসটির সনদঃ
আমরা গবেষণা করে ইমাম ছালাভী (رحمة الله) [ ওফাত,৪২৭হি.) তার তাফসীরে ছালাভী তে হাদিসটি সনদসহ বর্ণনা করেছেন। সনদটি হলাে→
-“আমাকে আবু উসমান সাঈদ বিন মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ বিন ইবরাহিম (رحمة الله) বর্ণনা করেছেন,
↓
তাকে হাম্মাদ বিন সালমা (رحمة الله)
↓
তাকে তাবেয়ী সাবিত বেনানী (رحمة الله)
↓
তিনি হযরত আনাস বিন মালেক (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন……।”
● ইমাম ছালাভী, তাফসীরে ছালাভী, ৭/১১১পৃ. সুরা নুর, দারুল ইহউমাউত তুরাস আল-আরাবী, বয়রুত, লেবানন।
❏ চতুর্থ হাদিসঃ ইমাম ছালাভী (رحمة الله) (ওফাত.৪২৭হি.) তার ‘তাফসীরে ছালাভীতে’ সনদসহ একটি হাদিসে পাক সংকলন করেছেন এভাবে-
أخبرنا أبو عثمان سعيد بن محمد بن محمد بن إبراهيم العدل قال: حدّثنا أبو الحسين محمد بن منصور الواعظ قال: حدّثنا أبو عمر محمد بن عبد الواحد الزاهد قال: حدّثنا محمد ابن يونس الكديمي قال: حدّثنا عبيد الله بن عائشة قال: حدّثنا حماد بن سلمة عن ثابت عن أنس قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلّم: ্রأنّ الله تعالى خلقني من نوره، وخلق أبا بكر من نوري، وخلق عمر وعائشة من نور أبي بكر!، وخلق المؤمنين من أمّتي من الرجال من نور عمر، وخلق المؤمنات من أمّتي من النساء من نور عائشة
-‘‘আমাকে সংবাদ দিয়েছেন আবু উসমান (رحمة الله)… তিনি তাবেয়ী হযরত সাবেত (رحمة الله) হতে তিনি হযরত আনাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন তিনি বলেন রাসুল (ﷺ) বলেন…।’’
এই তিনটি দুর্বল সনদ ছাড়া আরো সনদ পাওয়া যায়। তাই সামগ্রিকভাবে প্রত্যেকটি সনদ দুর্বল হলেও হাদিসটি ‘হাসান’ বা গ্রহণযোগ্য তাতে কোন সন্দেহ নেই।’’
এ হাদিসগুলোর সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আপনারা আমার লিখিত ‘‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’’ ১ম খন্ডের ৪৫৮-৪৬৪ পৃষ্ঠা পর্যন্ত এবং রাসূল (ﷺ)-এর সৃষ্টি নিয়ে বিভ্রান্তির অবসান’’ গ্রন্থ দেখুন।
তাহলে আমি চলমান দেওবন্দীদেরকে বলবাে যে, তাহলে তােমাদের গাঙ্গুহী সাহেব কে আপনারা কিভাবে মুসলমান করবেন?
২. দেওবন্দীদের মান্যবর আল্লামা আব্দুল হাই লাখনৌভির দৃষ্টিতে দেওবন্দী সকল লিখকগন আরেকজন লেখকের দলিল বেশ মান্য করেন,
তিনি আল্লামা আব্দুল হাই লানৌভী (১৩০৪হি.)। তিনি রাসূল (ﷺ) নুরের সৃষ্টি সে সম্পর্কে তার লিখিত “আসারুল মারআর” ৪২ পৃষ্ঠায় দীর্ঘ আলােচনা করেছেন। খুবই সুন্দর করে ইমাম আবদুর রাজ্জাক (رحمة الله)’র সূত্রে সংকলন এভাবে করেছেন-
هُوَ ظَاهِرُ رِوَايَةِ عَبْدِ الرَّزَّاقِ فِي مُصَنَّفَةٍ عَنْ جَابِرٍ قَالَ: قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي أَخْبِرْنِي عَنْ أَوَلَّ شَيْءٍ خَلَقَهُ اللَّهُ قَبْلَ الأَشْيَاءِ، فَقَالَ: يَا جَابِرُ! إِنَّ اللَّهَ خَلَقَ قَبْلَ الأَشْيَاءِ نُورُ نَبِيِّكَ مِنْ نُورِهِ، فَجَعَلَ ذَلِكَ النُّورِ يَدُورُ بِالْقُدْرَةِ حَيْثُ شَاءَ اللَّهُ، وَلَمْ يَكُنْ فِي ذَلِكَ الْوَقْتِ لَوْحٌ وَلا قَلَمٌ وَلا جَنَّةٌ وَلا نَارٌ وَلا مُلْكٌ وِلا سِمِاءٌ وَلا أَرْضٌ وَلا شَمْسٌ وَلا قَمَرٌ وَلا جِنِّيٌ وَلا إِنْسٌ.
-“এটা প্রকাশ্য বর্ণনা ইমাম আবদুর রায্যাক (رحمة الله) তাঁর ‘মুসান্নাফ’ গ্রন্থে হাদিসটি হযরত যাবের (رضي الله عنه) হতে সংকলন করেছেন যে,
“আমি আরজ করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার মাতা পিতা আপনার প্রতি উৎসর্গ; আমাকে বলুন, আল্লাহ তায়ালা সবকিছুর পূর্বে কি সৃষ্টি করেছেন? হুযুর (ﷺ) ফরমালেন, হে যাবের! নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা সবকিছুর পূর্বে তাঁর নূর হতে তােমার নবীর নূরকে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর ঐ নূর। খােদায়ী কুদরতে যেখানে আল্লাহর ইচ্ছা ভ্রমণ করতে থাকে। তখন লওহ, কলম, জান্নাত, জাহান্নাম, ফেরেশতা, আসমান, যমীন, সূর্য, চন্দ্র, দানব, মানব কিছুই ছিল ……।”
● আব্দুল হাই লাখনৌভি, আছারুল মারফুয়া, ৪২ পৃষ্ঠা, মাকতুবাতুল শারকুল জাদীদ, বাগদাদ, ইরাক, প্রকাশ, যা এখন মাকতুল শামেলাতেও পাওয়া যায়।
❏ তিনি এ হাদিসটি প্রসঙ্গে তাঁর এ গ্রন্থের এক স্থানে লিখেন-
قد ثَبت من رِوَايَة عبد الرَّزَّاق أولية النُّور المحمدي
-‘‘ইমাম আব্দুর রায্যাক (رحمة الله) এর বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হয় নূরে মুহাম্মাদী (ﷺ) সর্বপ্রথম সৃষ্টি।’’
পাঠকবৃন্দ! আপনারা গভীরভাবে লক্ষ্য করুন! যে তিনি রাসূল (ﷺ) কে নূরের সৃষ্টি মনে করেই এ হাদিসটি বিস্তারিত করে সুন্দর করে বর্ণনা করেছেন। আজ দেওবন্দীরা এগুলো গোপন করে কত বড় মুনাফিকের পরিচয় এবং সত্য গোপনকারীর পরিচয় দিচ্ছেন। এ হাদিসটির সনদ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত ‘‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’’ ১ম খন্ডের ৩৪৩-৩৭১ পৃষ্ঠা পর্যন্ত।
❏ তিনি এ গ্রন্থের আরেক স্থানে উল্লেখ করেন-
مَا يَذْكُرُونَهُ فِي ذِكْرِ الْمَوْلِدِ النَّبَوِيّ أَن نور مُحَمَّد خُلِقَ مِنْ نُورِ اللَّهِ بِمَعْنَى أَنَّ ذَاتَهُ الْمُقَدَّسَةَ صَارَتْ مَادَّةً لِذَاتِهِ الْمُنَوَّرَةِ وَأَنَّهُ تَعَالَى أَخَذَ قَبْضَة من نوره فخلق من نُورَهُ،
-‘‘যা নবি পাক (ﷺ)-এর মিলাদের আলোচনা কালে উল্লেখ করেছি যে, নিশ্চয় নূরে মুহাম্মাদী (ﷺ) আল্লাহর নূর হতে সৃষ্টি। এর অর্থ হল নিশ্চয় আল্লাহ তা‘য়ালা তাঁর সৃষ্ট নূরকে নিলেন ও নবি করীম (ﷺ) এর নূরকে সৃষ্টি করলেন।’’
❏ এর ব্যাখ্যায় তিনি নিজেই লিখেন-
قَالَ الزُّرْقَانِيُّ فِي شَرْحِ الْمَوَاهِبِ عِنْدَ شَرْحِ قَوْلِهِ مِنْ نُورِهِ إِضَافَةَ تَشْرِيفٍ
-“ইমাম জুরকানী (رحمة الله) এ হাদিসের তাঁর নূর হতে এর ব্যাখ্যায় বলেন – এটি সম্মানের জন্য আল্লাহর দিকে নবীজি নিজের নূরকে নিসবত করেছেন।”
● আব্দুল হাই লাখনৌভি, আছারুল মা’রফুআ, ৪২ পৃষ্ঠা, প্রাগুক্ত।
❏ তিনি এ বিষয়ে আরও স্পষ্ট করে লিখেন-
أَيْ مِنْ نُورٍ هُوَ ذَاتُهُ لَا بِمَعْنَى إِنَّهَا مَادَةُ خَلْقِ نُورِهِ بَلْ بِمَعْنَى تَعَلُّقِ الإِرَادَةِ بِهِ بِلا وَاسِطَةِ شَيْء فِي وجوده.
-‘‘সেই নূরটি হল জাতি নূর। কিন্তু এর মমার্থ এই নয় যে সেটি আল্লাহর নূরের অংশ বিশেষ; তাই এজন্যই আল্লাহর দিকে নবিজীর নূর কে সম্পর্ক যুক্ত করা হয়েছে যে তাঁর নূরকে কোনরূপ মাধ্যম ব্যতীত আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন।’’
❏ আল্লামা আব্দুল হাই লানৌভী তার এ গ্রন্থে আরও উল্লেখ করেন- “নিশ্চয় নূরে মুহাম্মাদী (ﷺ) কে আল্লাহর নূর হতে সৃষ্টি করা হয়েছে। তবে নবীজি আল্লাহর কেমন নূর সে প্রসঙ্গে তিন ব্যাখ্যাও উল্লেখ করেন এভাবে-
قال الزاني في شرح المواهب عند شرح قوله من ثوره إضافة تشريف
নবীজি নূরের সৃষ্টি প্রমাণে তিনি দীর্ঘ এক পৃষ্ঠা হতেও বেশী আলােকপাত করেছেন। তবে যারা চোখ থেকেও অন্ধ তাদেরকে তাে দেখানাে সম্ভব নয়।
৩. রাসূল (ﷺ)’র সৃষ্টি বিষয়ে মাওলানা আশরাফ আলী থানবীর দৃষ্টিভঙ্গি ও দেওবন্দের ওলামাগণ যাকে হাকিমুল উম্মত উপাধিতে ভূষিত করে থাকেন তিনি হলেন – মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (মৃত.১৩৬২হি.)। মাওলানা আশরাফ আলী থানবী সাহেব এর অন্যতম সিরাত গ্রন্থ “নশরুত্তীব ফি যিকরেন্নাবিয়িল হাবিব”এর ২৫ পৃষ্ঠায় রাসূল (ﷺ) নূরের সৃষ্টি মর্মে একটি অধ্যায় রচনা করেছেন। তিনি এ অধ্যায়ে হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ আনসারী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত ইতিপূর্বের আব্দুল হাই লাখনৌভির বর্ণনায় যে হাদিসটি বর্ণনা করেছি সেটি হুবহু উর্দুতে বর্ণনা করেছেন।
তিনি প্রথমে যে অধ্যায়টি রচনা করেছেন তা হলো-
نور محمدى صلى الله عليه وسلم كے بيان میے
-‘‘নূরে মুহাম্মাদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বর্ণনা।’’
তারপর মাওলানা আশরাফ আলী থানবী সাহেব হযরত জাবের (رضي الله عنه) এর হাদিসটি এভাবে বর্ণনা শুরু করেন-
پہلى روايت: حضرت جابر بن عبد اللہ انصارى رضى الله تعالى عنہ فرما تے هيے: ميں نے رسول الله صلى الله عليه وسلم عرض كيا: ميرے ماں باپ أپ پر قربان ہوں مجہے بتایۓ كہ اللہ تعالى نے تمام چيزں و سے پہلے کس چیز كو پيدا كيا- أپ صلى الله عليه وسلم نے ارشاد فرمایا: جابر ! الله تعالى نے تمام چيزوں سے پہلے تمہارے نبى كے نور كو اپنے نور كے فيض سے پيدا كيا-
-‘‘প্রথম বর্ণনাঃ হযরত যাবের (رضي الله عنه) হতে সংকলন করেছেন যে, তিনি আমি আরজ করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার মাতা পিতা আপনার প্রতি উৎসর্গ। আমাকে বলুন, আল্লাহ তা‘য়ালা সবকিছুর পূর্বে কি সৃষ্টি করেছেন? হুযুর (ﷺ) ফরমালেন, হে যাবের! নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘য়ালা সবকিছুর পূর্বে তাঁর নূরের ফয়য হতে তোমার নবীর নূরকে সৃষ্টি করেছেন….আরও দীর্ঘ বর্ণনা।’’
● আশরাফ আলী থানবী, নশরুত্তীব ফি যিকরেন্নাবিয়্যেল হাবিব, ২৫ পৃষ্ঠা, প্রাগুক্ত।
হযরত যাবের (رضي الله عنه) এর বর্ণিত হাদীসটি বর্ণনা করে তিনি এর ব্যাখ্যায় লিখেন-
اس حديث سے نور محمدى كا حقيقة سب سے پھلے پیدا ہونا ثابت ہوا- كيونكہ جن چیزوں كى بارے ميں احادیث میں پہلے پیدا ہونا آیا ہے ان سب چیزوں کا نور محمدی کے بعد پیدا ہونا اس حدیث سے معلوم ھوتا ہے –
-“এ হাদিস [ইমাম আব্দুর রাযযাক (رحمة الله) কর্তৃক হযরত যাবের বিন অব্দুিল্লাহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত] দ্বারা বাস্তবিক পক্ষে সর্বপ্রথম নূরে মুহাম্মাদী (ﷺ) সৃষ্টি হওয়া প্রমাণিত। কেননা যেসব সৃষ্টির ক্ষেত্রে প্রথম সৃষ্টি বলে হাদীসে বর্ণনায় এসেছে। ওইসব সৃষ্টি নূরে মুহাম্মদী’ থেকে পরে সৃষ্টি হবার বিষয়টি আলােচ্য হাদিস দ্বারা নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত।”
● আশরাফ আলী থানবী, নশরুত্তীব ফি যিকরেন্নাবিয়্যেল হাবিব, ২৫ পৃষ্ঠা, প্রাগুক্ত।
মাওলানা আশরাফ আলী থানবী তার এ গ্রন্থে আরেকটি হাদিস বর্ণনা করেনঃ
پانچویں روایت: حضرت علی رضی الله تعالی عنہ سے روایت ہے کہ نبی صلی الله عليه وسلم نے فرمایا: میں آدم علیہ وسلم کے پیدا ہو نے سے پودہ ہزار سال پہلے اپنے پروردگار کے حضور میں ایک نور رکھاتھا۔
-“হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত নিশ্চয়ই নবী করীম ﷺ ইরশাদ ফরমান, আমি আদম (عليه السلام) সৃষ্টি হওয়ার ১৪ হাজার বছর পূর্বে আমার প্রতিপালকের সমীপে নূর আকারে বিদ্যমান ছিলাম।”
● আশরাফ আলী থানবী, নশীব ফি যিকরেন্নাবিয়েল হাবিব, ২৬ পৃষ্ঠা, প্রাগুক্ত।
❏ এ হাদিসটি থানবী সাহেবই শুধু নয় বরং অনেক বিখ্যাত ইমামগণ বর্ণনা করেছেন। যেমন-
عن علي بن الحسين عن أبيه عن جده أن النبي صلى الله عليه وسلم قال كنت نورا بين يدي ربي قبل خلق آدم بأربعة عشر ألف عام
-‘‘হযরত আলী ইবনে হুসাইন (رضي الله عنه) তিনি তাঁর পিতা থেকে তিনি তাঁর দাদা হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, নিশ্চয় নবী করীম (ﷺ) ইরশাদ ফরমান, আমি আদম (عليه السلام) সৃষ্টি হওয়ার চৌদ্দ হাজার বছর পূর্বে আমার প্রতিপালকের সমীপে নূর হিসেব বিদ্যমান ছিলাম।’’
● ইমাম ইবনে কাত্তান : কিতাবুল আহকাম : ১/১৪২ পৃ.
● ইমাম কুস্তালানী : মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া : ১/৭৪ পৃ. মাকতবায়ে ইসলামিয়্যাহ, বয়রুত,
● ইমাম যুরকানী : শরহুল মাওয়াহেব : ১/৯৫ পৃ. মাকতবায়ে ইসলামিয়্যাহ, বয়রুত,
● ইমাম বুরহানুদ্দিন হালবী : সিরাতে হালবীয়া : ১/৩০ পৃ.
● ইমাম আযলুনী : কাশফুল খাফা। : ১/২৩৭ পৃ. হাদিস : ৮২৬,
● ইমাম আযপূনী : কাশফুল খাফা: ২/১৭০ পৃ.,
● ইমাম শফী উকাড়ভী : যিকরে হাসীন : ৩০ পৃ.,
● ইবনে কাসীর : বেদায়া ওয়ান নেহায়া : ২/৪০২ দারুল ফিকর ইসলামিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন,
● শায়খ ইউসূফ বিন নাবহানী : আনওয়ারে মুহাম্মাদিয়া : ২৮ পৃ,
● ইমাম দিয়ার বকরী : তারীখুল খামীস, ১/৩৫পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।
এ হাদিসটির সমর্থনে আর শক্তিশালী সহিহ সনদে আরেকটি হাদিস বর্ণিত আছে। যেমন-
❏ ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন-
عَنْ سَلْمَانَ قَالَ: سَمِعْتُ حَبِيبِي رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: ্রكُنَّا أَنَا وَعَلِيٌّ نُورًا بَيْنَ يَدَيِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ، قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَ آدَمَ بِأَرْبَعَةَ عَشَرَ أَلْفَ عَامٍ
-“হযরত সালমান ফারসী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন আমি ও মাওলা আলী (رضي الله عنه) হযরত আদম (عليه السلام) সৃষ্টির ১৪ হাজার বছর পূর্বে মহান রবের সমীপে নূর ছিলাম।”
● ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, ফাযায়েলুস সাহাবা, ২/৬৬২পৃ. হাদিস : ১১৩০, মুয়াসসাতুর রিসালা, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ. ১৪০৩হি. সনদটি সহিহ।
বিখ্যাত সিরাতবিদ ও মুহাদ্দিস ইমাম দিয়ারবকরী (ওফাত.৯৬৬হি.) তার সিরাত গ্রন্থে বর্ণনা করেন-
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ : عن النبىّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أنه قال كنت نُورًا بَيْنَ يَدَيِ اللَّهِ تَعَالَى، قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَ آدَمَ بِأَلْفَيْ عَامٍ،
-‘‘হযরত ইবনে আব্বাস () নবী করিম () থেকে বর্ণনা করেন, প্রিয় নবি () বলেছেন, আমি আদম ()-এর সৃষ্টির ১ হাজার বছর পূর্বেও আল্লাহর কাছে নূর হিসেবে ছিলেন।’’
❏ ইমাম আবি উমর আদনী (رحمة الله), ইমাম কাযি আয়াজ (رحمة الله), ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله), ইমাম বুরহানুদ্দীন হালবী (رحمة الله) সহ বিভিন্ন ইমাম এ শব্দে হাদিসটি সংকলন করেন-
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ : أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، كَانَتْ رُوحُهُ نُورًا بَيْنَ يَدَيِ اللَّهِ تَعَالَى، قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَ آدَمَ بِأَلْفَيْ عَامٍ،
-‘‘হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর রুহ মোবারক আল্লাহর কাছে আদম (عليه السلام)-এর সৃষ্টির ১ হাজার বছর পূর্বে নূর ছিলেন।’’
❏ মাওলানা আশরাফ আলী থানবী তার লিখা আরেকটি গ্রন্থে লিখেছেন-
یہ بات مشہوره کہ ہمارے حضور صلی الله عليه وسلم کا سایہ نہے تها اسلئہ کہ ہمارے حضور صلی الله عليه وسلم سرچا نور ہے نور تہے۔
-“এ কথা প্রসিদ্ধ যে, আমাদের হুযুর (ﷺ) এর ছায়া ছিল না। (কারণ) আমাদের হুজুর ﷺ এর আপাদমস্তক নূরানী ছিলেন। হুযুর (ﷺ) এর মধ্যে নামমাত্রও অন্ধকার ছিল না। কেননা ছায়ার জন্য অন্ধকার অপরিহার্য।”
● মাওলানা আশরাফ আলী থানবী : শুকরুন নিমাতির বিযিকরি রাহমানির রাহমাতি, পৃ-৩৯
দেওবন্দের এই হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী সাহেব তার লিখিত অপর আরেকটি গ্রন্থ ‘ছালজুছ সুদুর” এ লিখেন,
-نبی خود نور اور قران ملا نور نہ ہو بیہ ملکی کیون نور على نور
-“হুযুর (ﷺ) নিজেই স্বয়ং নূর এবং কোরআন শরীফ নামক নূরেরও অধিকারী । সুতরাং উভয় মিলে কেন নূরুন আলা নূর অর্থাৎ নূরের উপর নূর হবে না?”
৪. রাসূল (ﷺ)‘র সৃষ্টি বিষয়ে মাওলানা কাসেম নানুতবী‘র দৃষ্টিভঙ্গিঃ
মাওলানা কাসেম নানুতবী হচ্ছেন দেওবন্দী আকাবিরদের অন্যতম। তিনি দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতাও বটে। নানুতবী সাহেবও এক পর্যায়ে এ ফাত্ওয়ার আওতায় এসে আটকা পড়েন। তিনি তার প্রসিদ্ধ ক্বাসা-ইদে ক্বাসেমী’র ৭ পৃষ্ঠায় লিখেন-
کہاں وہ رتبہ کہاں وہ عقل نار سا اپنی
کہاں وہ نور خدا اور کہاں يہ ديدۃ زار
-“কোথায় ওই উঁচু মর্যাদা? কোথায় ওই নিজের অপূর্ব বিবেক? কোথায় ওই খােদার নূর, আর কোথায় সে অশ্রু সজল চোখ?”
● যিয়াউল্লাহ কাদেরী, ওহাবী মাযহাবের হাকীকতে, ৬৪২পৃ.
৫.রাসূল (ﷺ)’র সৃষ্টি বিষয়ে দেওবন্দের মাদরাসার শাইখুল হাদিস মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানী’র দৃষ্টিভঙ্গিঃ
❏ দেওবন্দের অন্যতম শায়খুল হাদিস হুসাইন আহমদ মাদানী সাহেব স্বীয় গ্রন্থ ”আস্শিহাবুস সাকিব এর ৫০ পৃষ্ঠায় লিখেন,
غرضيكہ حقيقت محمد صلى الله عليہ وسلم التحية واسطہ جملہ كمالات عالم عالميان ہے يہ هی معنى لولاك لما خلقت الافلاك اور اول ما خلق الله نورى اور انا نبى الانبياء كے ہیں –
-“মােট কথা হলাে, সমস্ত কায়েনাত বা অলিম হাকীকতে মুহাম্মদী তথা নূরে মুহাম্মদী (ﷺ) থেকে সৃষ্ট। যেমন হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ বলেন, যদি আপনি না হতেন তবে আমি সকল আসমান যমীন কিছুই সৃষ্টি করতাম না। রাসূল (ﷺ) এর বাণী : মহান আল্লাহ তা’য়ালা সর্বপ্রথম আমার নূর মােবারক সৃষ্টি করেছেন এবং আরও বলেন, আমি নবীদেরও নবী।”
● মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানী : শিহাবুস সাকীব : ৫০ পৃ. কুতুবখানায়ে রহিমিয়্যাহ, সাহারানপুর, ভারত,
● মুফতি মাহমদ ইয়ার খান নঈমী : রিসালায়ে নূর : ২২ পৃ. মাতুবায়ে গাউসিয়া, করাচি ।
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! রাসূল (ﷺ) র নূর সম্পর্কে আমরা নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না কী চমৎকার করে বলে দিলেন দেওবন্দের মুহতারাম শায়খুল হাদিস!
৬. রাসূল (ﷺ) ‘র সৃষ্টি বিষয়ে মাওলানা মুফতি শফির দৃষ্টিভঙ্গি মুফতি শফি সাহেব দেওবন্দী (মৃত.১৩৯৬ হিজরী.) আকাবেরদের অন্যতম। তিনি দেওবন্দী আলেমদের মধ্যে একদিকে তিনি মুফাসসির, অপরদিকে ফকিহও ছিলেন। তার লিখিত প্রসিদ্ধ একটি কোরআনের তাফসির রয়েছে, যার নাম তাফসীরে মা’রিফুল কুরআন।
❏ সূরা আন’আমের ১৬৩ নং আয়াতের ব্যখ্যা করতে গিয়ে তিনি এক পর্যায়ে –
اور پہلا مسلمان ہو نے سے اس طرف بهى اشاره ہو سكتا ہے كہ مخلوقات ميں سب سے پہلے رسول كريم صلى الله عليہ وسلم كا نور مبارك پيدا كياگيا ہے اس كے بعد تمام آسمان وزمين اور مخلوقات وجود ميں آے ہيں جيسا كہ ايک حديث میں ارشاد ہے اول ما خلق الله نورى -(روح المعانى)
-“প্রথম মুসলমান বলতে এদিকেও ইঙ্গিত করা হতে পারে যে, সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে সর্বপ্রথম রাসূলে করীম (ﷺ) এর নুর মােবারক সৃষ্টি করা হয়েছে। তারপর সকল আসমান যমিন এবং সকল সৃষ্টি অস্তিত্ব লাভ করে। যেমন একটি হাদীসে ইরশাদ হয়েছে, সর্বপ্রথম আল্লাহ তায়ালা আমার নূর সৃষ্টি করেছেন।(রুহুল মা‘য়ানী)’’
● মফতী শফি : তাফসীরে মা’রিফুল কুরআন : ৩৫১০ পৃ. ইদারাতুন মা’আরিফ, করাচী, পাকিস্তান।
উক্ত তাফসীর বাংলায় অনুবাদ করে সৌদি সরকার ফ্রি দিয়েছিলেন। এ গ্রন্থটি বাংলায় রুপকার করেন মাসিক মদিনার সম্পাদক মাওলানা মহিউদ্দিন খান । বাংলা (বিনামূল্যে দেয়া) মা’রিফুল কোরআনের ৪২৮ পৃষ্ঠায় দেখুন হুবহু এরকম বর্ণনা পাবেন । ইনশাআল্লাহ আমাদের আক্বিদা হলাে নবি পাক (ﷺ) নূরের বাশার ছিলেন। এ প্রসঙ্গে মুফতি শফি তার উক্ত তাফসিরে সুরা আত্-তাগাবুনের ৬ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় শুরুতেই লিখেন- “রসূল (ﷺ) নূর হলেও মানব হতে পারেন। তিনি নূরও এবং মানবও।”
● মুফতি শফি, মা’রিফুল কোরআন, ১৩৭৭পৃ. সৌদি হতে বিনা মূল্যে দেয়া (মাওলানা মহিউদ্দিন খান)
শাহ ইসমাঈল দেহলভী ও শাব্বির আহমদ ওসমানী এর দৃষ্টিভঙ্গিঃ
৭. ভারতীয় উপমহাদেশের ওহাবী মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা শাহ ইসমাঈল দেহলভী সাহেব তার লিখা ‘রেসালায়ে একরােজী পৃষ্ঠা নং ১১ এ হযরত যাবের (رضي الله عنه) এর হাদিসটি বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন।
৮. রাসূল (ﷺ)’র নূর বিষয়ে দেওবন্দী শাইখুল হাদিস মাওলানা শাব্বির আহমদ ওসমানী এর দৃষ্টিভঙ্গিঃ
❏ শাব্বির আহমদ উসমানী তিনি ওলামায়ে দেওবন্দের সুপ্রসিদ্ধ আলেম। তিনি নিজে কুরআনের একটি তাফসীর গ্রন্থও লিখেছেন। তার তাফসিরে সে বলে,
عموما مفسرين وانا اول المسلمين كا مطلب يہ ليتے ہیں كہ اس امت محمد يہ كے اعتبار سے آپ اول المسلمين ليكن جب جامع ترمذى كى حديث “كنت نبيا وآدم بين الروح والجسد” كے موافق آپ اولا الانبياء ہیں تو اول المسلمين ہونے ميں كيا شبہ هو سكتا ہے –
-“সাধারণত মুফাসসিরগণ “আমি সর্বপ্রথম মুসলিম” এর ব্যাখ্যা এভাবেই করে থাকেন যে তিনি উম্মতে মুহাম্মদিয়ার তুলনায় সর্বপ্রথম মুসলিম । কিন্তু জামে তিরমিযীর হাদিস। “আমি তখন নবি ছিলাম, যখন আদম রূহ ও দেহের মাঝামাঝি অবস্থানে ছিলেন।” (অর্থাৎ- তাঁর সৃষ্টি হয়নি) এর আলােকে যেহেতু তিনি সর্বপ্রথম নবী, অতএব, তিনি মৌলিক অর্থে সর্বপ্রথম মুসলিম হওয়াতে কি সন্দেহ থাকতে পারে? (অর্থাৎ তিনি নি:সন্দেহে সর্বপ্রথম মুসলিম)”
● মাওলানা মাহমুদুল হাসান দেওবন্দী : তরজুমানুল কোরআন : পাদটিকা মাওলানা শাব্বির আহমদ।ওসমানী : পাদটিকা ২, পৃ-১৪।
❏ এই তাফসীরে সূরা মায়েদার ১৫ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন-
(قَدْ جَاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُبِينٌ) شايد نورى خود نبى كريم صلى الله عليہ وسلم اوركتاب مبين سے قران كريم مراد-
-“নিশ্চয়ই তােমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে এক নূর এবং প্রকাশ্য কিতাব এসেছে। এখানে এ আয়াতে নূর দ্বারা স্বয়ং হুযুর (ﷺ) কে উদ্দেশ্য এবং কিতাবুম মুবিন দ্বারা পবিত্র কুরআনুল কারিম কে উদ্দেশ্য।”
● ছাব্বির আহমদ উসমানী, তাফসীরে উসমানী, ১/১৪২পৃ. সুরা মায়েদা, ১৫।
৯.রাসূল (ﷺ)’র সৃষ্টি বিষয়ে দেওবন্দের শাইখুল হাদিস মাওলানা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী’র দৃষ্টিভঙ্গি
❏ তিনি হচ্ছেন দেওবন্দী আলেমদের তালিকার শীর্ষস্থানীয় আলেমদের একজন। তিনি বুখারী শরিফ, তিরমিযি শরীফসহ বিভিন্ন হাদিসের কিতাবের শরাহ করেছেন। আমরা এখন অনুসন্ধান করে দেখবো যে তিনি নবিজী (ﷺ) কে নূর বলেছেন কি না। তিরমিযি শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ ‘‘আরফুস্-সাযী শরহে সুনানে তিরমিযি’ গ্রন্থে সর্বপ্রথম সৃষ্টি সম্পর্কে লিখেন-
أن أول المخلوقات نور النبي – صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ -، ذكره القسطلاني في المواهب بطريق الحاكم والترجيح لحديث النور على حديث الباب.
-‘‘নিশ্চয় সর্বপ্রথম সৃষ্টি হল নূরে নাবী (ﷺ) যেটি ইমাম কাসতাল্লানী (رحمة الله) তাঁর মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া গ্রন্থে হাকেমের সূত্রে উল্লেখ করেছেন। আর তিনি সেখানে সবগুলো বর্ণনার মধ্যে (কলম/নূরে মুহাম্মদী/আক্বল সর্বপ্রথম সৃষ্টি বিভিন্ন বর্ণনার মধ্যে) নূরের হাদিসকে প্রাধান্য দিয়েছেন।’’
❏ তিনি তার লিখিত আরেকটি গ্রন্থ ‘‘আক্বীদুল ইসলাম’’ গ্রন্থের ২১৯ পৃষ্ঠায় (মাকতাবায়ে থানবী, দেওবন্দ হতে প্রকাশিত) কাব্যের মাধ্যমে লিখেন-
کاندرآنجا نور حق بود وبند ديگر حجاب
ديد وبشنيد آنچہ جزوى کسں بنشنيد ونديد
-‘‘ওই জায়গায় আল্লাহর নূর ছিলো, আর অন্যরা পর্দাবৃত। তাই দেখেছে ও শুনেছে।
কিন্তু ওই নূর এমনই অনন্য যে, তা সম্পর্কে না কেউ শুনেছে, না তেমনি সুন্দর কেউ দেখেছে।’’
● যিয়াউল্লাহ কাদেরী, ওহাবী মাযহাবের হাকিকত, পৃ.৬৪২পৃ..
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! কাশ্মীরী সাহেব নবীজি (ﷺ) কে আল্লাহর নূর বলে ঘােষনা দিলেন কাব্যের মাধ্যমে; আর আমরা বললেই মুশরিক! আল্লাহ চলমান দেওবন্দীদেরকে সঠিক বুঝ দান করুক। আমিন।
১০. রাসূল (ﷺ)’র সৃষ্টি বিষয়ে মাওলানা কেরামত আলী জৈনপুরী সাহেব এর দৃষ্টিভঙ্গি।
❏ কারামত আলী জৈনপুরী সৈয়দ আহমদ বেরলভী সিলসিলার অন্যতম তিনি খলিফাও ছিলেন।
মাওলানা কারামত আলী জৈনপুরী তার উল্লেখযােগ্য গ্রন্থ “বারাহেনে কাতেয়া ফি মওলিদে খাইরিল বারিয়াহ” এর ৫ পৃষ্ঠায় -হযরত যাবের (ﷺ) এর বর্ণিত হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। যার মূল ইবারত ও অনুবাদ আব্দুল হাই লাখনৌভির-আলােচনায় উল্লেখ করেছি, তাই দ্বিতীয় বার উল্লেখ করে কিতাব দীর্ঘায়িত করতে চাই না। শুধু তাই নয়, তিনি এ বিষয়ে আরও একটি হাদিস বর্ণনা করেন এভাবে-
ولما توفى آدم، كان شيث- عليه الصلاة والسلام- وصيّا على ولده، ثم أوصى شيث ولده بوصية آدم: ألايضع هذا النور إلا فى المطهرات من النساء، ولم تزل هذه الوصية جارية، تنقل من قرن إلى قرن، إلى أن أدى الله النور إلى عبد المطلب وولده عبد الله، وطهر الله سبحانه هذا النسب الشريف من سفاح الجاهلية،
-“হযরত আদম (عليه السلام) যখন ওফাত বরণ করলেন তখন হযরত শীষ (عليه السلام) কে নূরে মুহাম্মাদী (ﷺ) হিফাযতের ওসিয়ত করে যান। অতঃপর শীষ (عليه السلام) এর ওসিয়ত ছিল।
▪ এই সাবধান! এ পবিত্র নূরে মুহাম্মাদী (ﷺ) যেন পবিত্র নারীর মধ্যে রাখা হয়।
▪ হযরত আদম (عليه السلام) এ ওসিয়ত এক যুগ থেকে দ্বিতীয় যুগ, দ্বিতীয় যুগ থেকে তৃতীয় যুগ এভাবে শেষ পর্যন্ত চলে আসছিল। কোন কালে বা কোন সময়ে বন্ধ ছিল না।
▪ অবশেষে মহান আল্লাহ পাক নূরে মুহাম্মাদী (ﷺ) কে খাজা আব্দুল মুত্তালিব ও তাঁর পুত্র খাজা আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) পর্যন্ত পৌঁছে দেন। মহান আল্লাহ পাক তাঁর হাবিবের নূর মােবারক বা নসব শরীফকে জাহিলিয়্যাতের যিনা ও ব্যাভিচার থেকে পবিত্র রেখেছেন।”
এ হাদিসটি শুধু কারামত আলী জৈনপুরীই নয় বরং বিখ্যাত মুহাদ্দিস যিনি সহিহ বুখারি শরিফের শরাহ করেছেন সেই ইমাম শিহাবুদ্দীন কুস্তালানী (رحمة الله) (যার ওফাত হলাে ৯২৩ হিজরীতে) ও তাঁর উল্লেখ্যযােগ্য সিরাত গ্রন্থে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।
[ইমাম কুস্তালানী, মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া, ১/৫৬পৃ. মকতুবাতুত তাওফিকহিয়্যাহ, কাহেরা, মিশর।]
১১.রাসূল (ﷺ) র সৃষ্টি বিষয়ে মাওলানা ইদরিস কান্দলভী’র দৃষ্টিভঙ্গি
❏ দেওবন্দীদের অন্যতম শায়খুল হাদিস ইদরিস কালভী সাহেব “মাকামাত ফি হাদিসিয়্যাহর ” ২৪১ পৃষ্ঠায় আবদুর রায্যাক (رحمة الله) এর সূত্রে হযরত যাবের (رضي الله عنه) এর বর্ণিত নূরের হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।
১২. পাকিস্তানের দেওবন্দী মুহাদ্দিস সরফরায খাঁন সফদর “নূর আওর বাশার” গ্রন্থের ৩২ (উর্দু) পৃষ্ঠায় হযরত যাবের (رضي الله عنه)এর নূরের সৃষ্টির হাদিসটিকে বর্ণনা করে হাদিসের সত্যতা স্বীকার করেছেন।
১৩. রাসূল (ﷺ) নূর হওয়া প্রসঙ্গে দেওবন্দের সুপ্রসিদ্ধ মুফাসির এবং প্রসিদ্ধ মাওলানা আব্দুল মজিদ দরিয়াবাদীর দৃষ্টিভঙ্গি ও তার প্রসিদ্ধ তাফসির গ্রন্থ তাফসীরে মাজিদীতে’ সুরা মায়েদার ১৫ নং আয়াতের তাফসিরে লিখেন-
● “নুরুন এর অর্থ হল মুহাম্মদ (ﷺ) এবং “কিতাবুম মুবিন” এর অর্থ হল ঐ কুরআন, যা নবী করীম (ﷺ) এর প্রতি নাযিল করা হয়েছিল। (ইবনে জারীর)।
● বিখ্যাত মুফাসসির ইমাম যুজায (رحمة الله) বলেন- নূর হল মুহাম্মদ (ﷺ), কিতাবুম মুবিন হল-আল-কুরআন, কেননা তা হুকুম আহকামকে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করে (কুরতুবী)।
● আব্দুল মাজিদ দরিয়াবাদি, তাফসীরে মাজেদী, ২/৫০৯ পৃষ্ঠায় সূরা মায়েদা, আয়াত নং ১৫, হাশিয়া নং ৭” যা ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ঢাকা হতে প্রকাশিত।
১৪.
ক. রাসূল (ﷺ) নূর হওয়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশের দেওবন্দী সুপ্রসিদ্ধ শাইখুল হাদিস আজিজুল হক যিনি অসংখ্য কওমী দেওবন্দী আলেমদের উস্তাদ। তিনি সুপ্রসিদ্ধ কওমী দেওবন্দী পত্রিকা মাসিক আদর্শ নারীর’ ২০১২ ঈসায়ীর জানুয়ারী তথা রবিউল আউয়ালের সংখ্যার “মহানবীর (ﷺ.) অলৌকিক বিলাদাত” শিরােনামের ১০ পৃষ্ঠায় লিখেছেন-
“রাসূলুল্লাহ (ﷺ.)-এর হিদায়াতের নূরে সারাবিশ্ব আলােকিত হবে, তাই তাঁর শুভাগমন লগ্নে এসব নূরের বিকাশ ছিল নবীজী (ﷺ.) নিজেই ঐ নূরের আকর-নূরে মুজাসসাম।”
খ. শুধু তাই নয়, একই পৃষ্ঠায় সুরা মায়েদার ১৫ নং আয়াত উল্লেখ করে তিনি বলেন“আলােচ্য আয়াতে যে নূরের উল্লেখ আছে, সেই নূর হলেন হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (ﷺ)।”বর্তমানে তার নামধারী ছাত্ররা এ মতের বিরুদ্ধে এ আয়াতের মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন। তার বুখারী শরিফের অনুবাদ গ্রন্থের ৫ম খন্ডের ৩ পৃষ্ঠায় (যা হামিদিয়া প্রকাশনী হতে প্রকাশিত হয়েছে) হয়েছে অনূরূপ ব্যাখ্যা করেছেন।
১৫. দেওবন্দী সুপ্রসিদ্ধ শাইখুল হাদিস আল্লামা মুফতি মনসূরুল হক
রাসূল (ﷺ) নূর হওয়া প্রসঙ্গে বর্তমান বাংলাদেশের দেওবন্দী সুপ্রসিদ্ধ শাইখুল হাদিস আল্লামা মুফতি মনসূরুল হক যিনি অসংখ্য কওমী দেওবন্দী আলেমদের উস্তাদ । তিনি সুপ্রসিদ্ধ কওমী দেওবন্দী পত্রিকা মাসিক আদর্শ নারীর’ ২০১২ ঈসায়ীর জানুয়ারী তথা রবিউল আউয়ালের সংখ্যার “রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সারা জাহানের জন্য রহমত” শিরােনামের ৩ পৃষ্ঠায় লিখেছেন-
“এই ভূম-ল, নভােম-ল এবং এতদুভয়ের যাবতীয় বস্তুর সৃষ্টি রাসূলে কারীম (ﷺ)-এর সৃষ্টির বরকতম নূরের উসীলায়। তাঁর নুরে রহমত পরশিত করেই এসব কিছু সৃষ্টি করা হয়েছে। সর্বপ্রথম মহান আল্লাহ মহানবী (ﷺ) এর নূরকে সৃষ্টি করেন। (মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক)
“তারপর সেই নূরকে কেন্দ্র করে অন্যান্য সকল কিছু তথা আসমান-জমিন, চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র, পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা, আলাে-বাতাস, সমস্ত জীন-ইনসান এক কথায় সমগ্র জগতের সৃষ্টি হয়। (ইবনে আসাকির)’
সম্মাণিত পাঠকবৃন্দ! আপনারাই লক্ষ করুন, মনসূরুল হক সাহেব কি সুন্দর করে নবিজির সৃষ্টি বর্ণনা দিলেন। আল্লাহ তার ছাত্রও অনুসারীদেরও হিদায়াত নসিব দান করুক।
১৬. তাফসীর নুরুল কোরআনের সম্মানিত লেখক, মুফতি আমিমুল ইহসান
ক. রাসূল (ﷺ) নূর হওয়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশের দেওবন্দী সুপ্রসিদ্ধ কোরআনুল কারীমের ব্যাখ্যা গ্রন্থ তাফসীর নুরুল কোরআনের সম্মানিত লেখক, মুফতি আমিমুল ইহসান ‘ ইমাম ও খতিব লালবাগ শাহী মসজিদ, সম্পাদক-মাসিক আলবালাগ, তাফসীরকার রেডিও বাংলাদেশ, সদস্য, ইসলামিক ফাউ-েশন বাের্ড অফ গভর্ণরস, চেয়ারম্যান, তাফসীরে তাবারী প্রকল্প সম্পাদনা বাের্ড আল্লামা মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম যিনি অসংখ্য কওমী দেওবন্দী আলেমদের উস্তাদ । তিনি তার তাফসীরে সুরা মায়েদার ১৫ নং আয়াত-
قَدْ جَاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُبِينٌ
-“তােমাদের নিকট আল্লাহ হতে এসেছে নূর এবং সুস্পষ্ট কিতাব।” এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন-
“আলােচ্য আয়াতে নূর’ দ্বারা নূরে মুহাম্মদী (ﷺ) কে বুঝানাে হয়েছে।”
● আমিনুল ইসলাম, তাফসীর নূরুল কোরআন, ৬/১৬৭ পৃষ্ঠা, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ।
খ. তিনি এ আয়াতের অনুরুপ অভিমত পেশ করেন তার লিখা আরেকটি পুস্তকে। যেমন এ আয়াত উল্লেখ করে তিনি বলেন-
“এ আয়াতে “নূর” শব্দ দ্বারা রসূলে করীম (ﷺ) কে উদ্দেশ্য করা হয়েছে, আর কিতাব দ্বারা পবিত্র কোরআনকে বােঝানাে হয়েছে।”
● মওলানা আমিনুল ইসলাম, নূরে নবী (ﷺ), প্রথম খ-,৫ পৃষ্ঠা, আল-বালাগ পাবলিকেশন্স, ঢাকা।
তিনি একই পৃষ্ঠায় লিখেছেন যে-
“মূলতঃ পবিত্র কোরআন যেমন নূর, তেমনি প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামও নূর। “
● মওলানা আমিনুল ইসলাম, নূরে নবী (ﷺ), প্রথম খ-, (ভূমিকার ৫ পৃষ্ঠা) প্রাগুক্ত
❏ মওলানা আমিনুল ইসলাম তার “নূরনবী (ﷺ)” কিতাবে রাসূল (ﷺ) নূরের সৃষ্টি মর্মে নরে মুহাম্মদী (ﷺ)’ নামক একটি অধ্যায় তৈরী করেছেন। তিনি এ অধ্যায়ের শুরুতেই উল্লেখ করলেন-“এমনকি, সমগ্র সৃষ্টি-জগতের মধ্যে সর্ব প্রথম যাঁর সৃষ্টি তিনিই আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম।”
● মওলানা আমিনুল ইসলাম, নূরে নবী (ﷺ), প্রথম খ-, ৫ পৃষ্ঠা, প্রাগুক্ত।
তারপর তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত আলােকপাত শুরু করেন। তিনি যা লিখেছেন তা হলাে“ইমাম আবদুর রাজ্জাক (رحمة الله) তাঁর সনদ সহ হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন,
“আমি আরজ করলাম, ইয়া রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম! আমার পিতা মাতা আপনার প্রতি কোরবান হােক, আমাকে বলুন, আল্লাহ পাক সর্ব প্রথম আল্লাহ পাক কোন বস্তুটি সৃষ্টি করেছেন? প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করলেনঃ হে যাবের ! আল্লাহ পাক সবকিছুর পূর্বে তােমার নবীর নূরকে সৃষ্টি করেছেন……দীর্ঘ হাদিস।”
● মওলানা আমিনুল ইসলাম, নূরে নবী (ﷺ), প্রথম খ-, ৫ পৃষ্ঠা, প্রাগুক্ত,
এ হাদিসটি লিখে তিনি এ হাদিসটির ব্যাখ্যা তুলে ধরেন। এভাবে- “অর্থাৎ নূরে মােহাম্মাদীই হলাে আল্লাহ পাকের সর্ব প্রথম সৃষ্টি, কেননা যে সব জিনেষের ব্যাপারে প্রথম সৃষ্টি হওয়ার বিবরণ পাওয়া যায়, সে সমস্ত সৃষ্টি যে নূরে মুহাম্মাদীর পর, তা এই হাদিস দ্বারা সুস্পষ্ট প্রমাণিত হয়।”
● মওলানা আমিনুল ইসলাম, নূরে নবী (ﷺ), প্রথম খ-, ৫ পৃষ্ঠা, প্রাগুক্ত
১৯. বাংলাদেশের দেওবন্দী আলেম এবং মাসিক আল-মদিনা’ পত্রিকার সম্পাদক মাওলানা মহিউদ্দিন খান এর দৃষ্টিভঙ্গি ও অন্যতম আশেকে রাসূল (ﷺ) আল্লামা মােল্লা আবদুর রহমান জামী (رحمة الله) এর সিরাত গ্রন্থ “শাওয়াহিদুন নবুয়ত” যার বাংলা অনুবাদ করেছেন দেওবন্দী আলেম মাওলানা মহিউদ্দিন খাঁন, মদিনা পাবলিকেশন্স, বাংলা বাজার থেকে। তিনি এ কিতাবটি অনুবাদ করতে গিয়ে এ কিতাবের এর ১৫ পৃষ্ঠায় ভূমিকায় হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে এভাবে –
“আল্লাহ তা’য়ালা সর্বপ্রথম আমার নূর মােবারক সৃষ্টি করেছেন।”
● মাওলানা মহিউদ্দিন খান, শাওয়াহিদুন নবুয়্যতের অনুবাদের ভূমিকা, ৯৫ পৃষ্ঠা, মদিনা পাবলিকেন্স, বাংলাবাজার, ঢাকা।
১৭. বাংলাদেশের দেওবন্দী আলেম এবং মাসিক ‘আল-মদিনা’ প্রত্রিকার সম্পাদক মাওলানা মহিউদ্দিন খান এর দৃষ্টিভঙ্গিঃ
অন্যতম আশেকে রাসূল (ﷺ) আল্লামা মোল্লা আবদুর রহমান জামী (رحمة الله) এর সিরাত গ্রন্থ ‘‘শাওয়াহিদুন নবুয়ত’’ যার বাংলা অনুবাদ করেছেন দেওবন্দী আলেম মাওলানা মহিউদ্দিন খাঁন, মদিনা পাবলিকেশন্স, বাংলা বাজার থেকে। তিনি এ কিতাবটি অনুবাদ করতে গিয়ে এ কিতাবের এর ১৫ পৃষ্ঠায় ভূমিকায় হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে এভাবে-
اول ما خلق الله نورى
-‘‘আল্লাহ তা‘য়ালা সর্বপ্রথম আমার নূর মোবারক সৃষ্টি করেছেন।’’
১৮.দেওবন্দী আলেম মাওলানা আবদুল কাদের দেহলভীর দৃষ্টিভঙ্গি
মাওলানা আবদুল কাদের দেহলভীর রচিত “তাফসীরে মৃদ্ধিহুল কোরআনের” ১/১০৩ পৃষ্ঠায় সুরা মায়েদার ১৫ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেন- “আলােচ্য আয়াতে নুর দ্বারা রাসূল (ﷺ) কে বুঝানাে হয়েছে।”
১৯. দেওবন্দী আলিম মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী
বাংলাদেশের সুপ্রসিদ্ধ দেওবন্দী আলিম মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী যিনি আশরাফ আলী থানবী সাহেবের অন্যতম খলিফা ছিলেন। তিনি নিজেই অনেক গ্রন্থের রচয়িতা ও অনুবাদক। তিনি তার পীর আশরাফ আলী থানবী সাহেবের ‘বেহেশতী জেওর’ সহ বেশ কিছু বই অনুবাদও করেছেন। তার প্রসিদ্ধ হাদিসের কিতাবের অনুবাদ হলাে বুখারী শরীফ। তিনি বুখারী শরিফের অনুবাদের পাশাপাশি তার ব্যাখ্যাও করেছেন। তিনি এ প্রসঙ্গে ৫ম খন্ডতে রাসূল (ﷺ)-এর সিরাতের উপরে আলোচনা করছেন। তিনি রাসূল (ﷺ)-এর সৃষ্টি বিষয়ে একটি পরিচ্ছেদ প্রনয়ন করেছেন; আর আর একটি পরিচ্ছেদের নাম দিয়েছেন “সর্বপ্রথম সৃষ্টি হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)।”
● শামছুল হক ফরিদপুরী, বােখারী শরীফ, (অনুবাদ ও ব্যাখ্যা) ৫/২-৩ পৃষ্ঠা, যা হামিদিয়া লাইব্রেরী লিঃ,ঐ, চক সারকুলার রােড, ঢাকা-১২১১, হতে প্রকাশিত।
❏ তিনি এ পরিচ্ছেদে দীর্ঘ বক্তব্য উল্লেখ করেন এভাবে-
“এই হাকীকতে মুহাম্মদিয়াই হইল নিখিল সৃষ্টিজগতের সর্বপ্রথম সৃষ্টি । লৌহ-কলম, বেহেশত-দোযখ, আসমান-যমীন, চন্দ্র-সূর্য, ফেরেশতা এবং মানব-দানব সব কিছুই ঐ হাকীকতে মুহাম্মদিয়া বা নূরে মুহাম্মদীর পরে সৃষ্টি হইয়াছে। এই তথ্য সুস্পষ্টরূপে বিশিষ্ট ছাহাবী জাবের (رضي الله عنه) বর্ণিত এক হাদীছে। উল্লেখ রহিয়াছে-
عَنْ جَابِرٍ قَالَ: قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي أَخْبِرْنِي عَنْ أَوَلَّ شَيْءٍ خَلَقَهُ اللَّهُ قَبْلَ الأَشْيَاءِ، فَقَالَ: يَا جَابِرُ! إِنَّ اللَّهَ خَلَقَ قَبْلَ الأَشْيَاءِ نُورُ نَبِيِّكَ مِنْ نُورِهِ، فَجَعَلَ ذَلِكَ النُّورِ يَدُورُ بِالْقُدْرَةِ حَيْثُ شَاءَ اللَّهُ، وَلَمْ يَكُنْ فِي ذَلِكَ الْوَقْتِ لَوْحٌ وَلا قَلَمٌ وَلا جَنَّةٌ وَلا نَارٌ وَلا مُلْكٌ وِلا سِمِاءٌ وَلا أَرْضٌ وَلا شَمْسٌ وَلا قَمَرٌ وَلا جِنِّيٌ وَلا إِنْسٌ
অর্থঃ হযরত জাবের (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলিয়াছেন, আমি একদা আরজ করিলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ ﷺ! আমার মাতা-পিতা আপনার চরণে উৎসর্গ হউক; সকল বস্তুর পূর্বে সর্বপ্রথম আল্লাহ তাআলা কোন জিনিসটি সৃষ্টি করিয়াছেন? রসূল (ﷺ) বলিলেন, হে জাবের! আল্লাহ তাআলা সকল বস্তুর পূর্বে সর্বপ্রথম তােমাদের নবীর নূর সৃষ্টি করিয়াছেন (যাহা) আল্লাহর নূর হইতে সৃষ্ট। অতঃপর সেই নূর আল্লাহর কুদরতে আল্লাহ তাআলার নিয়ন্তণাধীনে চলমান ছিল। ঐ সময় লওহ-কলম, বেহেশত-দোযখ, আসমান-যমীন, চন্দ্র-সূর্য, মানব-দানব এবং ফিরেশতা কিছুই ছিল না।”
● শামছুল হক ফরিদপুরী, বােখারী শরীফ, (অনুবাদ ও ব্যাখ্যা) ৫/২-৩ পৃষ্ঠা, হামিদিয়া লাইবেরী লিঃ, ৬৫, চক সারকুলার রােড, ঢাকা-১২১১।
২০.বাংলাদেশের অন্যতম দেওবন্দী আলেম মাওলানা নুরুল ইসলাম ওলীপুরীর দৃষ্টিভঙ্গি
আমরা সকলেই জানি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকায়েদের ইমাম হলেন আবুল হাসান আশআরী (رضي الله عنه)। আর তা স্বীকার করেছেন দেওবন্দী আলেম নুরুল ইসলাম ওলীপুরী তার “মাওয়ায়েজে ওলীপুরী” বইয়ের ১/২২১ পৃষ্ঠা, আনােয়ার লাইব্রেরী, ১১/১ ইসলামি টাওয়ার, বাংলাবাজার, ঢাকা হতে প্রকাশিত।
এখন ওলীপুরীর দৃষ্টিতে যিনি আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের ইমাম তিনি নবিজী (ﷺ)’র সৃষ্টির বিষয়ে কি বলেছেন। আমরা তা অনুসন্ধান করে দেখবাে ।
❏ ইমাম আবুল হাসান আশ’আরী (رضي الله عنه) বলেন-
انه تعالى نور ليس كالانوار وروح النبوية القدسية لمعة من نوره والملائكة اشرار تلك الانوار وقال صلى الله عليه وسلم أول ما خلق الله نورى ومن نورى خلق كل شئ- مطالع المسرات : صـ ٢٦٥جواهر البحار: ٢/٢٢٠
-“আল্লাহ তা’য়ালা নূর কিন্তু অন্যান্য নূরের মতাে নন। এবং নবী করীম (ﷺ) এর রুহ মােবারক তাঁর নূরের জ্যোতি আর ফেরেশতারা হলাে ঐ নূর সমূহের শিখা। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন : আল্লাহ তা’য়ালা সর্ব প্রথম আমার নূরকে সৃষ্টি করেছেন আর আমার নূর হতে প্রত্যেক কিছু সৃষ্টি হয়েছে।”
● আল্লামা ইমাম মাহদী আল ফারসী : মাতালিউল মুসাররাত ফি শরহে দালায়েলুল খায়রাত, ২১,
● আল্লামা শায়খ ইউসুফ নাবহানী : যাওয়াহিরুল বিহার : ২/২২০ পৃ:
২১.এ বিষয়ে দেওবন্দীদের ঐতিহ্যবাহী চরমােনাই দরবারের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ছৈয়দ মুহাম্মদ ইছহাক এর দৃষ্টিভঙ্গিঃ
❏ তিনি নবিজী (ﷺ) এর নূরের সৃষ্টি জেনে একটি হাদিস বর্ণনা করেন এভাবে,
“একদিন আমাদের সকল মােমেন লােকের মাতা হযরত আয়েশা ছিদ্দিকা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা হুজরা মােবারক হইতে হাবীবে আকরাম (ﷺ) যাইতেছেন এমন সময় মা আয়েশা ছিদ্দিকা (رضي الله عنه) মজাক করিয়া তাহাকে যাইতে বাধা দিবার মানসে একখানা রুমালের দুই দিকে দুই হাত ধরিয়া হুজুর (ﷺ) এর ছের মােবারকের উপর দিয়া ফেলিয়া কোমর মােবারক পেচ দিলে । হুজুর (ﷺ) স্বাভাবিক গতিতে চলিয়া গেলেন! বিবি আয়েশা (ﷺ) অবাক হইয়া গেলেন।
مَا هَذَا يَا رَسُول الله؟
“হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) ইহা কি হইল?
তিনি জাওয়াব দিলেন, ওগাে আয়েশা! তােমরা আমার হাকীকত বুঝবে না, আমার শরীর অন্য মানুষের মতাে নয়।”
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! এখানেই শেষ নয়,তিনি একটু সামনে অগ্রসর হয়ে এ কিতাবে আরও লিখেন-
❏ “ছাহেবান! জানিয়া, রাখুন! আমাদের পয়গম্বর ছাহেবের শরীর মােবারকের ছায়া ছিল না।”
২২. এ বিষয়ে ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রামের দেওবন্দী মাদ্রাসা দারুল মা’রিফের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ সুলতান যওক নদভী চাটগামী তার কাব্য গ্রন্থ “জামে যওক” এর ১২ পৃষ্ঠায় । নাতে রাসূল (ﷺ) এর শিরােনামে যা তিনি লিখেছিলেন ১৩৮৬ হিজরীর রবিউল আউয়াল মাসের ১৩ তারিখ। সে কবিতাটির একটি লাইন হলাে-
وہ نور خدا ہے ہمارا نبى
-“তিনি আল্লাহ পাকের নূর তিনি আমাদের নবি।”
২৩. অনুরূপভাবে এ বিষয়ে ঐতিহ্যবাহী দেওবন্দী আলেম আশরাফ আলী থানবীর অন্যতম খলিফা বি-বাড়িয়ার বড় হুযুর মুফতি সিরাজুল ইসলাম এর লিখিত “গাওয়াহেরে সিরাজি” (বাংলা অনুবাদিত) নামক গ্রন্থের ৬৯ পৃষ্ঠায় লিখেছেন-
“হুযুর (ﷺ) হলেন সারা সৃষ্টির কারন বা উসিলা। সর্ব প্রথম নবিজী (ﷺ)-এর নূর মােবারক সৃষ্টি করা হয়েছে। যেমন হুযুর (ﷺ) ইরশাদ করেন-
اول ما خلق الله نورى وكل خلائق من نورى وانا من نور الله
-“আল্লাহ পাক সর্ব প্রথম আমার নূর মােবারক সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আমার নূর হতে সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছে। আমি হলাম আল্লাহর নূর। “
২৪.বাংলাদেশের হেফাজতে ইসলামের আমির যিনি লক্ষ্য লক্ষ্য কওমী আলেমদের উস্তাদ তিনি হচ্ছেন
মাওলানা শাহ আহমদ শফী এ বিষয়ে তার লিখিত কিতাব “হক বাতিলের চিরন্তন দ্বন্দ্ব” এর ৬১ (যা চট্টগ্রামের হাটহাজারী হতে, আর যার প্রকাশক হচ্ছেন মাওলানা মুহাম্মদ আনাস) পৃষ্ঠায় তিনি লিখেন-
“অতএব, আমার আক্বীদা হচ্ছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই সাথে মানুষ ও নূর।”
দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ এ বিষয়ে আহলে হাদিসদের দৃষ্টিভঙ্গিঃ
১.আহলে হাদিসদের ইমাম ইবনে তাইমিয়ার (মৃত.৭২৮হি.) দৃষ্টিতে রাসূল (ﷺ) নূরের সৃষ্টি –
ক) ইবনে তাইমিয়া তার এক কিতাবে লিখেন-
وَأَنَّ الْمَسِيحَ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ أَشْرَقَ نُورُهُ عَلَى الْأَرْضِ! كَمَا أَشْرَقَ قَبْلَهُ نُورُ مُوسَى عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ، وَأَشْرَقَ بَعْدَهُ نُورُ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
‘‘নিশ্চয় ঈসা মাসিহ্ (عليه السلام)-এর নূর জমীনে চমকাচ্ছিল, যেমনটি হযরত মূসা (عليه السلام)-এর নূর চমকাচ্ছিল, পরবর্তীতে নূরে মুহাম্মাদী (ﷺ) চমকিয়েছিল (যা শাম দেশ পর্যন্ত আলোকিত হয়ে গিয়েছিল)
● ইবনে তাইমিয়া, আল-জাওয়াবুল সহিহ লিমান বাদ্দালা দিনুল মসিহ, ৩/৩৭১দারুল আসমাত, সেীদি, দ্বিতীয় প্রকাশ.১৫১৯হি.। (শামিলা)।
দুই. ইবনে তাইমিয়া তার বিখ্যাত ফতোওয়ার কিতাবে হযরত ইরবায ইবনে সারিয়া (رضي الله عنه)-এর সূত্রে উল্লেখ করেন-
وَرُؤْيَا أُمِّي رَأَتْ حِينَ وَلَدَتْنِي أَنَّهُ خَرَجَ مِنْهَا نُورٌ أَضَاءَتْ لَهُ قُصُورُ الشَّامِ
-‘‘আমার বিলাদাতের সময় আমার মা দেখেছিল যে, তাঁর ভিতর থেকে এক বিরাট নূর বের হচ্ছে। এতে শাম দেশের প্রসাদ পর্যন্ত আলোকিত হল।’’
এই হাদিস থেকে বুঝা যায় রাসূল (ﷺ)-এর মায়ের পেট থেকে নবীজি নূর হিসেবেই বের হয়েছেন।
২. আহলে হাদিস ও দেওবন্দীদের শ্রদ্ধাভাজন ও নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি আল্লামা হাফেজ ইবনে কাসির (رحمة الله)-এর দৃষ্টিভঙ্গিঃ
তিনি ইবনে তাইমিয়ার ছাত্র এবং এ দুটি ফিরকার মান্যবড়।
এক. ইবনে কাসিরের সেরা গ্রন্থ হল ‘বেদায়া ওয়ান নিহায়া’। সেখানে তিনি এক স্থানে রাসূল (ﷺ)-এর প্রসংশায় লিখেন-
فَنُورُ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ أَظْهَرَ وَأَكْبَرَ وَأَعْظَمَ مِنْهُمْ كُلِّهِمْ.
-‘‘নূরে মুহাম্মদী (ﷺ) সব কিছুর মধ্যে সুপ্রকাশিত, সবচেয়ে বড় নূর ও অধিক সম্মানিত নূর।’’
দুই. ইমাম ইবনে কাসির (رحمة الله) বলেন, তাবেয়ী খালেদ বিন মা‘দান (رحمة الله) নবী পাক (ﷺ)-এর কতিপয় সাহাবী থেকে শুনেছেন, রাসূল (ﷺ) তার পৃথিবীতে শুভাগণের বর্ণনা দিতে গিয়ে ইরশাদ করেন-
ورأت أمي حين حبلت كَأَنَّهُ خَرَجَ مِنْهَا نُورٌ أَضَاءَتْ لَهُ بُصْرَى مِنْ أَرْضِ الشَّامِ
-‘‘আমার মা দেখেছেন যখন আমাকে গর্ভে বহন করেন যে, তাঁর ভিতর থেকে নূর বের হচ্ছে। এতে সব কিছু আলোকিত হল এবং শাম দেশ পর্যন্ত আলোকিত হল।’’
এ হাদিসের সনদ প্রসঙ্গে ইবনে কাসির লিখেন- إِسْنَادُهُ جَيِّدٌ -‘‘এ হাদিসটির সনদ খবই শক্তিশালী।
৩. আহলে হাসিদের ইমাম ইবনুল কাইয়্যুম (ওফাত.৭৫১হি.) এর দৃষ্টিতে –
❏ সুরা নূরের ৩৫ নং আয়াত-
اللَّهُ نُورُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ مَثَلُ نُورِهِ
-‘‘আল্লাহ হচ্ছেন আসমান ও যমিনের নূর (আলো দানকারী); আর তার নূরের উপমা হল…।’’ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তথাকথিত আহলে হাদিসদের ইমাম ইবনুল কাইয়্যুম (মৃত.৭৫১হি.) বলেন-
أَيْ: مَثَلُ نُورِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ،
“আল্লাহর নূরের উপমা হলাে নূরে মুহাম্মদী (ﷺ)। “
● ইবনুল কাইয়ুম, ইজতিমাউল জুয়ুসুল ইসলামিয়্যাহ, ২/৪৯পৃ. মাতাবাউল ফারযুদাকুল তেযারিয়্যাহ, রিয়াদ, প্রথম প্রকাশ.১৪০৮হি.
এটি শুধু ইবনুল কাইয়্যুমের অভিমত নয় বরং এটি অনেক সাহাবী, তাবেয়ী এবং মুফাস্সিরদের অভিমত।
সূরা নূর ৩৫ নং আয়াতের তফসীর
১. সাহাবী ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) {ওফাত. ৬৮হি.) ব্যাখ্যা করেন-
مثل نوره نور مُحَمَّد صلى الله عَلَيْهِ وَسلم –
‘‘আল্লাহর নূরের উদাহারণ হল নূরে মুহাম্মাদী তথা হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)-এর নূর।’’
২. বিখ্যাত তাবেয়ী মুকাতিল ইবনে সুলায়মান (رحمة الله) (১৫০হি.) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেন-
مَثَلُ نُورِهِ مثل نور محمد- صلى الله عليه وسلم-
-‘‘তাঁর (আল্লাহর) নূরের উদাহারণ হল, হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)।’’
৩. ইমাম আবী হাতেম (رحمة الله) (৩২৭হি.) তার তাফসীরে উল্লেখ করেন-
عَنْ شِمْرٍ، قَالَ: جَاءَ ابْنُ عَبَّاسٍ إِلَى كَعْبِ الْأَحْبَارِ، فَقَالَ لَهُ: حَدِّثْنِي عَنْ قَوْلِ اللَّهِ، عَزَّ وَجَلَّ: {اللَّهُ نُورُ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ} . الْآيَةَ؟ فَقَالَ كَعْبٌ: ্রاللَّهُ نُورُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ، مَثَلُ نُورِهِ؛ مَثَلُ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، كَمِشْكَاةٍগ্ধ
-‘‘হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) কাবুল আহবার (رضي الله عنه) এর কাছে আসলেন ও বললেন, আল্লাহ হচ্ছেন আসমান ও যমিনের নূর এবং তাঁর নূরের উপমা বা উদাহারণ সম্পর্কে আমাকে বর্ণনা করুন। তিনি বললেন তাঁর নূরের উদাহারণ হল মুহাম্মদ (ﷺ) যেমন চেড়াগ।’’
৪. কুরতুবী আন্দলুসী মালেকী (رحمة الله) (ওফাত.৪৩৭হি.) উল্লেখ করেন-
ذكره الدمياطي في تفسيره وهو أن قوله {مَثَلُ نُورِهِ} أي مثل نور محمد عليه السلام
-‘‘ইমাম দিমিয়াতী (رحمة الله) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেছেন যে, আল্লাহর নূরের উপমা হল নূরে মুহাম্মদী (ﷺ)।’’
৫. আহলে সুন্নাহ ওয়া জামাতের আকায়েদের অন্যতম ইমাম আবুল মানসুর মাতুরিদী (ওফাত.৩৩৩হি.) তার তাফসীরে উল্লেখ করেন-
(مَثَلُ نُورِهِ)، يقول: نور مُحَمَّد
-‘‘আল্লাহর নূরের উপমা হচ্ছে নূরে মুহাম্মদ (ﷺ) ।’’
৬. ইমাম তবারী ও ইমাম আবি হাতেম (رحمة الله) বর্ণনা করেন-
عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ، فِي قَوْلِهِ: {مَثَلُ نُورِهِ} [النور: ৩৫] قَالَ: مُحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
-‘‘হযরত সাঈদ ইবনে যুবাইর (رضي الله عنه), ‘‘তার নূরের উদাহারণ হল’’ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)।’’
৭. বিখ্যাত মুফাসসির ইমাম সাম‘আনী (رحمة الله) (৪৮৯হি.) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেছেন-
وَالْقَوْل الثَّالِث: أَنه نور مُحَمَّد، –
‘‘তৃতীয় একটি মত হল আল্লাহর নূরের উপমা হল হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)।’’
৮. ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله) (৯১১হি.) উল্লেখ করেন-
وَأخرج ابْن جرير وَابْن أبي حَاتِم عَن سعيد بن جُبَير {مثل نوره} قَالَ: مُحَمَّد صلى الله عَلَيْهِ وَسلم
-‘‘ইমাম ইবনে জারীর তবারী ও ইমাম আবি হাতিম (رحمة الله) আল্লাহর নূরের উপমা হল রাসূল (ﷺ)।’’
৯. ইমাম বাগভী (رحمة الله) ও ইমাম খাযেন (رحمة الله) উল্লেখ করেন-
وَقَالَ سَعِيدُ بْنُ جُبَيْرٍ وَالضَّحَّاكُ هُوَ مُحَمَّدٌ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
-‘‘ হযরত সাঈদ ইবনে যুবাইর (رضي الله عنه) এবং তাবেয়ী যাহ্হাক (رحمة الله) বলেন, ঐ নূর হলেন হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)।’’
______________
৪. রাসূল (ﷺ) এর সৃষ্টি সম্পর্কে আহলে হাদিসের মান্যবড়দের অন্যতম এবং সালাফীদের ইমাম কাযী শাওকানী (মৃত.১২৫০হি.) এর দৃষ্টিভঙ্গি ও কাযী শাওকানী সাহেব সূরা মায়েদার ১৫ নং আয়াতের তাফসীরে বলেন-
“উক্ত আয়াতের নূর দ্বারা রাসুল (ﷺ) কে বুঝানাে হয়েছে। যেমন ইমাম যুজায (رحمة الله) বলেন, এই নূরের উদ্দেশ্য হল মুহাম্মদ (ﷺ)।
● শাওকানী, তাফসীরে ফাতহুল কুদীর, ২/২৩ পৃষ্ঠা, দারু ইবনে কাসির, দামেস্ক, বয়রুত, লেবানন, প্রথম প্রকাশ.১৪১৪হি,।
❏ কাযি শাওকানী তার এ তাফসীর গ্রন্থে সূরা আন’আমের ১৬৩ নং আয়াতের তাফসীরে লিখেন-
وَقِيلَ: أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ أَجْمَعِينَ، لِأَنَّهُ وَإِنْ كَانَ مُتَأَخِّرًا فِي الرِّسَالَةِ فَهُوَ أَوَّلُهُمْ فِي الْخَلْقِ، وَمِنْهُ قَوْلُهُ تَعَالَى: وَإِذْ أَخَذْنا مِنَ النَّبِيِّينَ مِيثاقَهُمْ وَمِنْكَ وَمِنْ نُوحٍ –
-“হুযুর করীম (ﷺ) সকল মুসলমানের মধ্যে সর্বপ্রথম । কেননা, তিনি রাসূল হিসেবে পরে আবির্ভূত হলেও সৃষ্টির মধ্যে সর্বপ্রথম। আল্লাহ তা’য়ালার উক্তি- স্মরণ করুন! যখন আমি মজবুত ওয়াদা নিয়েছি নবীগণ থেকে, আপনার নিকট থেকে এবং নূহ (عليه السلام) থেকে। এতে ঐ কথাই বিবৃত হয়েছে।”
● শাওকানী, তাফসীরে ফাতহুল কদীর, ২/২৩৬ পৃষ্ঠা, প্রাগুক্ত।
❏ শুধু তাই নয় শাওকানী রাসূল (ﷺ)‘র বিলাদাতের আলোচনা করতে গিয়ে একটি হাদিস আনেন এভাবে-
وَبُشْرَى عِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ، وَرَأَتْ أُمُّ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي مَنَامِهَا أَنَّهُ خَرَجَ مِنْ بَيْنِ رِجْلَيْهَا سِرَاجٌ أَضَاءَتْ لَهُ قُصُورَ الشَّامِ.
-‘‘আমি হলাম হযরত ঈসা ইবনে মারিয়াম (عليه السلام) এর সুসংবাদ; আর মা আমেনা (رضي الله عنه) দেখেছিলেন যে, তাঁর থেকে [নুরে মুহাম্মাদী (ﷺ)] নূর বের হয়েছিল যা শাম দেশের অট্টালিকাগুলো আলোকিত হয়ে গিয়েছে।’’
● শাওকানী, তফসীরে ফাতহুল কাদীর, ৪/৩০৮ পৃষ্ঠা, প্রাগুক্ত”
❏ শুধু তাই নয় -শাওকানী রাসূল (ﷺ) সকল নবিদের সর্ব প্রথম এমনকি বাবা আদমেরও আগে সৃষ্টি বর্ণনা করেন তার তাফসিরে এভাবে-
وَابْنُ أَبِي حَاتِمٍ وَابْنُ مَرْدَوَيْهِ، وَأَبُو نُعَيْمٍ فِي الدَّلَائِلِ وَالدَّيْلَمِيُّ، وَابْنُ عَسَاكِرَ مِنْ طَرِيقِ قَتَادَةَ عَنِ الْحَسَنِ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي قَوْلِهِ: وَإِذْ أَخَذْنا مِنَ النَّبِيِّينَ مِيثاقَهُمْ الْآيَةَ قَالَ: ্রكُنْتُ أَوَّلَ النَّبِيِّينَ فِي الْخَلْقِ وَآخِرَهُمْ فِي الْبَعْثِ-
– ইমাম আবু হাতেম (رحمة الله),- ইবনে মারদুআহ (رحمة الله), – আবু নুয়াইম ইস্পাহানী (رحمة الله) তার দালায়েলুল নবুয়াতে, – ইমাম দায়লামী (رحمة الله) এবং- ইমাম ইবনে আসাকীর (رحمة الله) তাদের স্ব-স্বগ্রন্থেঃ↓ হযরত কাতাদা (رضي الله عنه) থেকে তিনি ↓হযরত হাসান বসরী (رضي الله عنه) থেকে তিনি ↓হযরত আর হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেছেন, ↓তিনি রাসূল (ﷺ) থেকে বর্ণনা দিচ্ছেন –
“সুরা আহযাবের ৭নং আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে তিনি ইরশাদ করেছেন, “আমি সৃষ্টিতে সকল নবিদের প্রথম এবং প্রেরণে সবার শেষে।”
● শাওকানী, তাফসীরে ফাতহুল কুদীর, ৪/৩০৮ পৃষ্ঠা, প্রাগুক্ত।
❏ আহলে হাদিসদের ইমাম শাওকানী তার তাফসীরে সুরা নুরের ৩৫ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লাহর নূরের উপমা প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন-
وَأَخْرَجَ عَبْدُ بْنُ حُمَيْدٍ وَابْنُ جَرِيرٍ وَابْنُ الْمُنْذِرِ وَابْنُ أَبِي حَاتِمٍ وَابْنُ مَرْدَوَيْهِ عن شَمَرِ بْنِ عَطِيَّةَ قَالَ: جَاءَ ابْنُ عَبَّاسٍ إِلَى كَعْبٍ الْأَحْبَارِ، فَقَالَ: حَدِّثْنِي عَنْ قَوْلِ اللَّهِ اللَّهُ نُورُ السَّماواتِ وَالْأَرْضِ مَثَلُ نُورِهِ قَالَ: مَثَلُ نُورِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
– ইমাম আব্দুল হুমাইদ (رحمة الله)- ইবনে জারীর (رحمة الله)- ইবনে মুনযির (رحمة الله)- ইবনে আবি হাতেম (رحمة الله)- ইবনে মারদুআহ (رحمة الله) ↓হযরত শাম্র ইবনে আতিয়্যাহ (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, ↓রঈসুল মুফাসসির হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হযরত কা’ব বিন আহবার (رضي الله عنه) ‘র কাছে যান। অতঃপর আমাদেরকে বলেন মহান আল্লাহর বাণী –
“আল্লাহ হচ্ছেন আসমান আর যমিনের নূর। আর তার নূরের উপমা হচ্ছে…এ আয়াতের ব্যাখ্যায় কাব ইবনে আহবার (رضي الله عنه) বলেন, আল্লাহর নূরের উপমা হচ্ছে নূরে মুহাম্মাদী (ﷺ)।
● শাওকানী, তাফসীরে ফাতহুল কুদীর, ৪/৪৩ পৃষ্ঠা, প্রাগুক্ত
৫. রাসূল (ﷺ) এর সৃষ্টি সম্পর্কে আহলে হাদিসের প্রধান অন্যতম এবং বর্তমান আহলে হাদিসদের ইমাম শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী (মৃত.১৯৯৯.) এর দৃষ্টিভঙ্গিঃ
❏ হাদিস নং ১ :
আহলে হাদিস শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী তার একাধিক গ্রন্থে হাদিসটি সংকলন করেছেন। তার সু প্রসিদ্ধ হাদিসের গ্রন্থ ‘‘সিলসিলাতুল আহাদিসুদ দ্বঈফাহ’’।
❏ সেখানে তিনি ইমাম বায়হাকী (رحمة الله)-এর সংকলিত একটি হাদিসে পাক যেমন-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” لَمَّا خَلَقَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ آدَمَ خَيَّرَ لِآدَمَ بَنِيهِ، فَجَعَلَ يَرَى فَضَائِلَ بَعْضِهِمْ عَلَى بَعْضٍ، قَالَ: فَرَآنِي نُورًا سَاطِعًا فِي أَسْفَلِهِمْ، فَقَالَ: يَا رَبِّ مَنْ هَذَا؟ قَالَ: هَذَا ابْنُكَ أَحْمَدُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هُوَ الْأَوَّلُ وَالْآخَرُ وَهُوَ أَوَّلُ شَافِعٍ ”
-‘‘হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, যখন আল্লাহ তা‘য়ালা হযরত আদম (عليه السلام) কে সৃষ্টি করলেন, তখন তাকে তার সন্তান-সন্ততি দেখালেন। হযরত আদম (عليه السلام) তাদের পারস্পরিক শ্রেষ্ঠত্ব নিরীক্ষা করতে থাকেন। অবশেষে তিনি একটি চমকদার নূর দেখতে পেয়ে জিজ্ঞাসা করলেন : হে পরওয়ারদিগার! এ কার নূর? আল্লাহ তা‘য়ালা বললেন, এ তোমার আওলাদ হবে, তার নাম আসমানে আহমদ। তিনি (সৃষ্টিতে) প্রথম এবং তিনি প্রেরণে (নবীদের) শেষ। তিনি সর্বপ্রথম শাফায়াতকারী।’’
আলবানীর তাহক্বীকঃ আহলে হাদিসদের ইমাম নাসিরুদ্দীন আলবানী (১৯৯৯খৃ.) এ সনদটি প্রসঙ্গে লিখেন-
قلت: وهذا إسناد حسن؛ رجاله كلهم ثقات رجال البخاري؛
-‘‘আমি (আলবানী) বলছি, এই হাদিসের সনদ ‘হাসান’ , ইহার সকল বর্ণনাকারীগণ ইমাম বুখারী (رحمة الله) এর বর্ণনাকারী ন্যায়।’’
আলবানী প্রথমে এ সনদটিতে রাবী ‘মোবারক বিন ফাদ্বালাহ’ এর কারণে যঈফ বলতে চেয়েছেন। আমি বলবো এ হাদিসটি সহিহ এবং এ রাবীর হাদিসও গ্রহণযোগ্য।
হাদিসের সনদ মান বিশ্লেষণঃ
❏ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-
وقال عثمان الدارمي سألت بن معين عن الربيع فقال ليس به بأس
-‘‘উসমান দারেমী (رحمة الله) এ রাবী সম্পর্কে ইবনে মুঈন (رحمة الله) এর কাছে জানতে চান তিনি তার শায়খ রুবীঈ (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেছেন তার হাদিস গ্রহণ করতে কোন অসুবিধা নেই।’’
❏ ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) আরও উল্লেখ করেন-
وقال عمرو بن علي سمعت عفان يقول كان مبارك معتبرا
-‘‘হযরত আমর বিন আলী (رحمة الله) বলেন, আমি শায়খ আফ্ফান (رحمة الله)কে বলতে শুনেছি মোবারকের তিনি হাদিস বর্ণনায় নির্ভরযোগ্য।’’
❏ ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) আরও উল্লেখ করেন-
وذكره بن حبان في الثقات –
‘‘ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله) তাকে সিকাহ রাবীর তালিকায় অন্র্Íভুক্ত করেছেন।’’
❏ ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) আরও উল্লেখ করেন-
وقال العجلي لا بأس به وقال أبو زرعة يدلس كثيرا فإذا قال حدثنا فهو ثقة
-‘‘ইমাম ইজলী (رحمة الله) বলেন, তার হাদিস গ্রহণ করতে কোন অসুবিধা নেই। ইমাম আবু যারওয়া (رحمة الله) বলেন, তিনি অনেক হাদিসে তাদলীস করতেন, তবে তিনি হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রে সিকাহ বা বিশ্বস্ত।’’
❏ ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) আরও উল্লেখ করেন-
وقال بن أبي خيثمة عن بن معين معين ثقة
-‘‘ইমাম ইবনে আবি খায়ছামা (رحمة الله) তিনি ইবনে মাঈন (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন যে, মোবারাক সিকাহ বা বিশ্বস্ত রাবী।’’ তাই প্রমাণিত হল সনদটি সহিহ তাতে কোন সন্দেহ নেই।
লক্ষণীয় একটি বিষয়ঃ বুঝা গেল আদম (عليه السلام) ও আমাদের নবীকে নূর হিসেবেই দেখেছেন। কিন্তু আহলে হাদিস ও দেওবন্দীরা তাঁর সন্তানেরা এর বিপরীত কথা বলে। এই হাদিস দ্বারা স্পষ্ট করে প্রমাণ হয়, রাসূলে করিম (ﷺ) সৃষ্টির প্রথম এবং আদি পিতা হযরত আদম (عليه السلام) সৃষ্টি হওয়ার পূর্বেও তিনি নূর অবস্থায় ছিলেন। অতএব, রাসূলে করিম (ﷺ) আদম (عليه السلام) সৃষ্টির পূর্বেই আল্লাহর নূর দ্বারা সৃষ্টি হয়েছেন। কারণ মাটির তৈরী সর্বপ্রথম মানব হলে হযরত আদম (عليه السلام)। যা সামনে আলোকপাত হবে।
❏ হাদিস নং ২ :
ইমাম বায়হাকী (رحمة الله), ইমাম ইবনে সা‘দ (رحمة الله), ইমাম তাবরানী (رحمة الله) সহ অনেক ইমাম সংকলন করেছেন-
عَنْ لُقْمَانَ بْنِ عَامِرٍ عَنْ أَبِي أُمَامَةَ قَالَ: قِيلَ: يَا رَسُولَ اللهِ , مَا كَانَ بَدْءُ أَمْرِكَ؟ قَالَ: ্রدَعْوَةُ أَبِي إِبْرَاهِيمَ , وَبُشْرَى عِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ، وَرَأَتْ أُمِّي أَنَّهُ خَرَجَ مِنْهَا نُورٌ أَضَاءَتْ مِنْهُ قُصُورُ الشَّامِগ্ধ وَفِي رِوَايَةِ أَبِي دَاوُدَ ্রخَرَجَ مِنِّيগ্ধ
-‘‘হযরত আবু উমামা (رضي الله عنه) বলেন, রাসূল (ﷺ) কে জিজ্ঞাসা করা হল, কিভাবে আপনার শুরু হল? প্রিয় নবি (ﷺ) বলেন, আমি ইবরাহিম (عليه السلام)-এর দোয়া, ঈসা (عليه السلام) -এর সুসংবাদ, নিশ্চয় আমার মা তাঁর ভিতর থেকে নূর বের হতে দেখেন, ঐ নূরের আলোতে শাম দেশের দালানগুলো আলোকিত হয়ে যায়।’’
❏ এ হাদিসটি প্রসঙ্গে আহলে হাদিসদের ইমাম শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী বলেন-
أخرجه ابن سعد بإسناد رجاله ثقات.
-‘‘ইমাম ইবনে সা‘দ (رحمة الله) হাদিসটি সংকলন করেছেন আর সনদের সমস্ত রাবী সিকাহ।’’
❏ আলবানী এ হাদিসটি প্রসঙ্গে অন্য পুস্তকে লিখেন-
(صحيح)…..ابن سعد عن أبى أمامة
-‘‘(সহীহ)…..ইবনে সা‘দ (رحمة الله) বর্ণনা করেছেন, আবু উমামা (رضي الله عنه) থেকে।’’
❏ ইমাম আব্দুর রাউফ মানাভী (رحمة الله) লিখেন-
قال ابن حجر: صححه ابن حبان والحاكم -‘
‘ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী বলেন, ইমাম ইবনে হিব্বান ও ইমাম হাকেম সনদটিকে সহিহ বলেছেন।’’
লক্ষণীয় একটি বিষয়ঃ এই হাদিসে বলা হয়েছে-
خَرَجَ مِنْهَا نُورٌ –
‘‘নিশ্চয় মা আমেনার ভেতর থেকে নূর বের হয়েছে।’’
আর এটি তিনি দেখেছিলেন জাগ্রত অবস্থায় ও চর্ম চোখে। এখানে মাটির কথা বলেননি বরং নূরের কথাই তিনি বলেছেন।
❏ হাদিস নং ৩ :
ইমাম হাকিম নিশাপুরী (رحمة الله) একটি হাদিসে পাক সংকলন করেন-
عَنْ عِرْبَاضِ بْنِ سَارِيَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، صَاحِبِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: ্রإِنِّي عَبْدُ اللَّهِ، وَخَاتَمُ النَّبِيِّينَ، ৃ..، وَأَنَّ أُمَّ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأَتْ حِينَ وَضَعَتْهُ لَهُ نُورًا أَضَاءَتْ لَهَا قُصُورُ الشَّامِ،
-‘‘হযরত ইরবায ইবনে সারিয়াহ (رضي الله عنه) বলেন, আমি রাসূলে পাক (ﷺ) কে বলতে শুনেছি, আমি আল্লাহর বান্দা এবং শেষ নবী। ……….নিশ্চয় আমি যখন পৃথিবীতে শুভাগমন করি তখন আমার মা দেখল তাঁর থেকে নূর বের হচ্ছে, ফলে শাম দেশের বড় অট্টালিকাগুলো আলোকিত হয়ে গেছে।’’
হাদিসটি প্রসঙ্গে আহলে হাদিসদের ইমাম আলবানী বলেনঃ
❏ আলবানী হাদিসটিকে সহিহ বলে মত প্রকাশ করেছেন। ❏ অপরদিকে ইমাম হাকিম নিশাপুরী সনদটিকে সহিহ বলেছেন।
❏ আর ইমাম যাহাবী তার সাথে একমত হয়েছেন।
তাই এ হাদিসেও প্রমাণিত হল রাসূল (ﷺ)-এর মায়ের পেট মোবারক হতে মাটি নয় বরং নূরই বের হতে দেখেছেন।
● আহলে হাদিসদের এ ভূয়া তাহকীককারী আলবানী সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানাের স্বরূপ উন্মোচন” ১ম খন্ডর ৬৩ পৃষ্ঠা থেকে দেখুন।
● এছাড়াও-আলবানী তার অপর আরেকটি গ্রন্থ “আলবানী ফিল আকায়েদ”এর ৩/৮১৬পৃষ্ঠা প্রশ্ন নং ২৮১ এ, ৩/৮১৮ পৃষ্ঠার প্রশ্ন নং.২৮৪ এ সহ এই কিতাবটির মােট ৯ স্থানে এ হাদিসটি সংকলন করেছেন।
৬.আহলে হাদিস সৌদি আরবের আলেমদের সম্মেলিত ফাতওয়ার কিতাব “কুররাতুল আইনী বি ফাতওয়ায়ে উলামাউল হারামাইন” যার ১/৩২৫ পৃষ্ঠায়, যা মাকতাবাতুল তাযরিয়্যাহতুল কোবরা, মিশর হতে প্রকাশিত। যার সংকলন করেছেন, শায়খ হুসাইন বিন ইবরাহিম আল-মাগরীবী আল-মিশরী যার (ওফাত হলাে,১২৯২ হিজরীতে তিনি এ কিতাবটিতে হযরত যাবের (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেছেন।
● সৃষ্টি সম্বলিত এ হাদিসটি বিস্তারিত আলােচনাসহ বর্ণনা করেছেন। এ কিতাবটি এখন মাকতুবাতুল শামেলাতেও পাওয়া যায় ।
৭.আহলে হাদিস শায়খ তৈয়্যব আহমদ হাতিয়্যাহ তিনি, তার “তাফসীরে শায়খ আহমদ হাতিয়্যাহ” এর ৩/৩৯৫ পৃষ্ঠায়, হযরত যাবের (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত রাসূল (ﷺ) নূরের সৃষ্টি সম্বলিত হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।
৮.আহলে হাদিসদের সরদার সানাউল্লাহ অমৃতস্বরী এর দৃষ্টিভঙ্গিঃ
তার লিখিত “তরকে ইসলাম” গ্রন্থের ১৩ পৃষ্ঠায় (অমৃতস্বর হতে প্রকাশিত) রাসূল (ﷺ) কে রাব্বল আলামীনের নূর বলে এভাবে মেনে নিয়েছেন-
-“ওই রাব্বুল আলামীনের নূরের উপর সালাম। তাঁর সব আওলাদ ও দ্বীনের সাহাবীদের উপরও (সালাম)।”
● আল্লামা যিয়াউল্লাহ কাদেরী, ওহাবী মাযহাবের হাকীকত, ৬৪২পৃষ্ঠা।
সানাউল্লাহ অমৃতস্বরী তার প্রসিদ্ধ ফাওয়ার কিতাব “ফাতােয়ায়ে সানাইয়্যাহ্’র ২য় খন্ডের ৪৩৭ পৃষ্ঠায় শেষের ভাগে লিখেছেন-“আমাদের আক্বিদার ব্যাখ্যা হচ্ছে রসূলে খােদা আলাইহিস্সালাম খােদার সৃষ্ট নূর।”
৯. আহলে হাদিসদের সরদার ক্বাযী সুলায়মান মানসুরপূরীর দৃষ্টিতে রাসূল (ﷺ) এর সৃষ্টি
❏ এ আহলে হাদিস আলেম তার লিখিত সাইয়্যেদুল বশর’ এর ৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-
شان محمدی سے اند ہے ہیں اہل ظلمت وه نور حق ہے جس سے دار الاسلام چمکا
-“হুযুর মুহাম্মদ মােস্তফা ﷺ-এর শানমান সম্পর্কে অন্ধকারাচ্ছন্ন লােকেরাই অন্ধ হয়ে আছে। বস্তুতঃ তিনি হলেন আল্লাহর নূর, যা দ্বারা বেহেস্ত পর্যন্ত চমকিত হয়েছে।”
বাতিলপন্থীদের কয়েকটি খােড়া যুক্তির নিষ্পত্তি :
১.চলমান দেওবন্দীদের সপক্ষে ধোঁকা আর জাল হাদিসই প্রধান পুজি ? চলমান এ দুটি ভয়ংকর বাতিল মতবাদ তাদের দাবি নবীজি (ﷺ) আমাদের মত মাটির মানুষ । নাউযুবিল্লাহ ; কিন্তু তাদের সপক্ষে একটি সুস্পষ্ট দলিল নেই যে মহান রব বলেছেন অথবা নবীজি সাহাবিদের বলেছেন যে আমাকে মাটি দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে।
ধোঁকা নং.১ : এ বিষয়ে তারা বলে থাকেন যে মহান আল্লাহ রাসূলের জবানে ইরশাদ করিয়েছেন-
قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ
-“হে আমার হাবিব! আপনি বলুন আমি তােমাদের ন্যায় (আকৃতিতে) মানুষ।”(সুরা কাহাফ-১১০)
তাই বুঝতে পারলাম যে রাসূল (ﷺ) বাশার বা মানুষ ছিলেন; আর এবার আমরা দেখবাে বাশারকে কি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। মহান রব তায়ালা ইরশাদ করেন-
إِنِّي خَالِقٌ بَشَرًا مِنْ طِينٍ
-“আমি বাশার কে (আদমকে) বানিয়েছি কাদা মাটি থেকে।”(সুরা ছােয়াদ-৭১)
ধোঁকার দাঁতভাঙ্গা জবাবঃ
১.প্রথমত, সুরা কাহফের যে আয়াতটি তারা দলিল দেয়। শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) তার মাদারেজুন নবুয়তের ২য় খন্ডে (ই.ফা, বা) এই আয়াতেকে কারীমাকে মুতাশাবেহাত এর অন্তর্ভুক্ত বলেছেন। এ আয়াতের আরও অংশ রয়েছে সেটুকু তারা বলতে চায়না। যেমন-
“আমার কাছে ওহী আসে তােমাদের কাছে আসে না), আর ইলাহ একজনই।” (কাহাফ-১০)
তাই বুঝতে পারলাম স্পষ্ট হয়ে গেলাে তার কাছে ওহী আসে আমরা তার মতাে নয় বলেই আমাদের কাছে ওহী আসে না।
২. দ্বিতীয়ত, সূরা কাহাফের ঐ আয়াতে মহান রব রাসূল (ﷺ) কে বিনয়তা শিক্ষা দেয়ার জন্য এরুপ বলার আদেশ করেছিলেন। কারণ একমাত্র আল্লাহ পাকই রাসূল (ﷺ) এর শিক্ষক। যেমনঃ
❏ ইমাম বাগভী (رحمة الله), ইমাম জাওযী (رحمة الله), ইমাম খাযেন (رحمة الله) তাদের তাফসীরে উল্লেখ করেন-
قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ: عَلَّمَ اللَّهُ رَسُولَهُ التَّوَاضُعَ لِئَلَّا يَزْهُوَ عَلَى خَلْقِهِ، فأمره أن يُقِرَّ على نفسه بأنه آدمي كغيره، إِلا أنه أُكرم بالوحي.
-‘‘হে হাবিব! আপনি বলুন আমি তোমাদের ন্যায় মানুষ। সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, আল্লাহ তা‘য়ালা স্বীয় রাসূল (ﷺ) কে বিনয়-নম্রতা শিক্ষা দিয়েছেন, যাতে তিনি সৃষ্টির উপর বড়াই না করেন। অতঃপর তিনি তাঁকে নির্দেশ দিয়েছেন একথা স্বীকার করতে যে, তিনি অপরাপর মানুষের মতই।’’
সুতরাং রাসূল (ﷺ) ‘আমি তোমাদের মত মানুষ’ বলার মূল কারণ হল ‘বিনয়-নম্রতা’ প্রকাশ।
❏ ইমাম বাগভী (رحمة الله) সহ বিখ্যাত ইমামগণ বর্ণনা করেন-
قَالَ الْحَسَنُ: عَلَّمَهُ اللَّهُ التَّوَاضُعَ )قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ(
-‘‘বিখ্যাত সাহাবী হযরত হাসান (رضي الله عنه) বলেন, ‘আমি তোমাদের মত মানুষ’ এই কথা দ্বারা রাসূল (ﷺ) কে বিনয়-নম্রতা শিক্ষা দেয়া হয়েছে।’’
❏ তাই ইমাম আলূসী বাগদাদী (رحمة الله) লিখেন-
المعنى ما نحن من الملائكة بل نحن بشر مثلكم في الصورة
-‘‘এ অর্থ হল : আমরা (নবীরা) ফেরেস্তা নয়, বরং সূরতে আকৃতিতে তোমাদের মত মানুষ।’’
❏ বিখ্যাত তাফসিরকারক ইমাম আবু সাউদ ইমাদী (ওফাত. ৯৮২হি.) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন-
بل نحن بشرٌ مثلُكم في الصورة
-‘‘বরং আমরা সূরতে তোমাদের মত বাশার বা মানুষ।’’ বুঝা গেল নবীরা আকৃতিতে আমাদের মত; প্রকৃতপক্ষে আমাদের মত নয়।
৩.তৃতীয়ত, আমার কথা হলাে যে একমাত্র আদি পিতা বাবা আদম (عليه السلام) ছাড়া কেউই মাটির সৃষ্টি নন। কুরআনের একাধিক স্থানে বাশারকে মাটি থেকে সৃষ্টি কথা উল্লেখ আছে;
এগুলাে মূলত আদম (عليه السلام) কেই উদ্দেশ্য। যেমন তারা সুরা ছােয়াদের ৭১ নং যে আয়াতটি দলিল হিসেবে দিয়ে থাকেন-
إِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي خَالِقٌ بَشَرًا مِنْ طِينٍ – فَإِذَا سَوَّيْتُهُ وَنَفَخْتُ فِيهِ مِنْ رُوحِي فَقَعُوا لَهُ سَاجِدِينَ – فَسَجَدَ الْمَلَائِكَةُ كُلُّهُمْ أَجْمَعُونَ- إِلَّا إِبْلِيسَ اسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ الْكَافِرِينَ
-‘‘যখন আপনার রব ফেরেশতাদেরকে বলেছিল আমি মাটির তৈরী বাশার মানুষ সৃষ্টি করবো। আর যখন আকৃতি দেওয়া শেষ হবে অতঃপর ইহার মধ্যে রুহ প্রবেশ করানো হবে। তখন তোমরা তাঁর প্রতি সেজদায় পতিত হবে। অতঃপর ইবলিশ ব্যতীত সকল ফিরেশতাগণ তাঁর প্রতি সিজদায় পতিত হল…..।’’ (সূরা সোয়াদ, আয়াত, ৭১-৭৪)
❏ তার ব্যাখ্যায় রঈসুল মুফাস্সির সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস [ওফাত.৬৮হি.]বলেন-
}إِنِّي خَالِقٌ بَشَراً مِّن طِينٍ} يَعْنِي آدم
“যখন রব ফিরেশতাদেরকে বললেন আমি বাশার কে মাটি থেকে সৃষ্টি করবাে, উক্ত সাহাবী বলেন এখানে বাশার কে মাটি দিয়ে বলতে আদি পিতা আদম (عليه السلام) কে বুঝানাে হয়েছে।”
● তাফসীরে ইবনে আব্বাস, ১/৩৮৪পৃ
❏ তাফসীরে জালালাইন যেটি কওমী মাদরাসায়ও পড়ানো হয় সেখানে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় রয়েছে-
}إنِّي خَالِق بَشَرًا مِنْ طِين} هُوَ آدَم
-‘‘আমি বাশার কে তথা আদম (عليه السلام) মাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছি।’’
তাই একমাত্র বাবা আদম (عليه السلام) ছাড়া আর কেহই মাটির তৈরী নয়; এমনকি তার স্ত্রীও নয়।
❏ মহান রব তায়ালা ইরশাদ করেন-
وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ مِنَ الْمَاءِ بَشَرًا
-‘‘তিনি (আল্লাহ) বাশার তথা মানুষকে পানি (নুতফা) হতে সৃষ্টি করেছেন।’’
সমস্ত মানুষ কী মাটির তৈরী ?
সকল মুফাসসির সাহাবী, তাবেয়ী ও সকল গ্রহনযােগ্য তাফসিরকারক অনুরূপ ব্যাখ্যা দিয়েছেন।যেমনঃ
● তাবেয়ী সুলায়মান ইবনে মুকাতিল (ওফাত, ১৫০হি.) এর তাফসেির সুলায়মান ইবনে মুকাতিল, ৩/৬৫৩পৃ.
● ইমাম বাগভী, মা’লিমুত তানযিল,৪/৭৭পৃ.
● ইমাম সুয়ূতি, তাফসীরে জালালাইন, ১/৬০৪পৃ,
● তাফসীরে তবারী, ২১/২৩৮পৃ.
● ইমাম সমরকন্দী, তফসীরে সমরকন্দী, ৩/১৭৩পৃ.
● ইমাম আন্দুলুসী কুরতুবী আল-মালেকী। ওফাত, ৪৩৭হি ও তাঁর হিদায়া ইলা বুলুগুল নিহায়া, এর ১০/৬২৯৫পৃ.
● তাফসীরে কাবীর, ২/৪২৭পৃ.
● তাফসীল খাযেন, ৪/৪৮পৃ.
● সামআনী, তাফসীরে সামআনী, ৫’৪৫৪,
তাই আদম (عليه السلام)-এর শানে নাযিল কৃত আয়াত এনে রাসূল (ﷺ)-এর দিকে ব্যবহার করা কোরআন সুন্নাহের অপব্যাখ্যা ছাড়া কিছুই নয়।
পবিত্র কুরআনে ১১ স্থানেরও অধিক যায়গায় রয়েছে যে মহান রব বলেন আমি মানুষকে নুতফা (পিতা-মাতার বীর্য) থেকে সৃষ্টি করেছি; তাহলে এ আয়াতগুলাে কি মিথ্যা?যেমনঃ
❏ মহান রব তা’য়ালা আমাদের উদ্দেশ্যে বলেন-
قلنظر الإنسان مم خلق – خلق من ماء افق – يخرج من بين الصلب والرائب
-“সুতরাং মানুষের ভেবে দেখা উচিত কোন বস্তু হতে সে সৃজিত হয়েছে। তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে সবেগে বের হয়ে আসা পানি (নুতফা/বীর্য) থেকে।তা বের হয় মেরুদন্ড ও বক্ষ পাজঁরের মাঝ থেকে।”
● সুরা তারেক-৫-৭
❏ মহান রব অনত্র ইরশাদ করেন-
“যিনি যা কিছু সৃষ্টি করেছেন, উত্তমরূপে সৃষ্টি করেছেন এবং – মানব জাতির সৃষ্টির সূচনা মাটি থেকে করেছেন। – অতঃপর তার বংশ সৃষ্টি করেন এক, তুচ্ছ পানির নির্যাস – থেকে।” ● সুরা সাজদাহ্,৭-৮
এ আয়াতে স্পষ্ট হয়ে গেলাে মানব সৃষ্টির শুরু তথা আদম (عليه السلام) কেই একমাত্র মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। মহান রব অন্যত্র আদমের পরে আমাদেরকে কিভাবে সৃষ্টি করেছেন –
❏ সে প্রসঙ্গে ইরশাদ করছেন–“তারপর আমি নুতফাকে রক্ত-পিন্ডে পরিণত করেছি; – অতঃপর ঐ রক্তপিন্ডকে মাংস পিন্ডে পরিণত করেছি; – অতঃপর মাংসপিন্ড-কে অস্থিতে পরিণত করেছি; – অতঃপর উক্ত অস্থিগুলাের উপর মাংস পরিয়েছি; – তারপর সেটাকে অন্য আকৃতিতে গড়ে তুলেছি।”● সুরা মু’মিনূন, আয়াত-১৪
অনূরূপ ● সুরা হাজ্জে ৫ নং আয়াতেও দেখুন।
তবে নুতফা ৪০ দিন থাকার পর সেটা আলাক বা রক্তপিন্ড হয় আর তার থেকেই মানুষ সৃষ্টির মূল হয় সে দিকে ইঙ্গিত করে বলেন-
❏ “আমি মানুষকে আলাক্ব (নুতফার পরের স্তর) হতে সৃষ্টি করেছি। “
● সুরা আলাক, আয়াত-২
মানুষকে নুতফা (বীর্য) থেকে সৃষ্টি মর্মে কুরআনে অনেক স্থানে বর্ণিত আছে।
● সুরা নাহল, আয়াত নং-৪,
● সুরা কাহাফ, ৩৭,
● সুরা হাজ্জ আয়াত নং-৫,
● সুরা ফাতির আয়াত নং ১১,
● সুরা ইয়াসিন আয়াত নং-৭৭,
● সুরা গাফির, আয়াত.৬৭,
● সুরা নাজম আয়াত নং-৪৬,
● সুরা দাহর, আয়াত, ২,
● সুরা আবাসা, আয়াত নং ১৭-১৯
মানব সৃষ্টিতত্ত্বঃ
কোরআন সুন্নাহে গবেষণা করে সমস্ত মানুষ পাঁচভাগে সৃষ্টি প্রমাণ পাওয়া যায়।
মানুষ কয়ভাবে সৃষ্টি –
১. আদি পিতা আদম (عليه السلام) কে সরাসরি মাটি থেকে।
● সুরা সােয়াদ, ৭১, ● সুরা বাক্বারা, ● সুরা আরাফ,
২. মা হাওয়া (عليه السلام) কে তাঁর স্বামী তথা আদম (عليه السلام)-এর পাজর থেকে।
● সহিহ বুখারী ও মুসলিম।
এ বিষয়ে আমি বিস্তারিত আমার লিখিত প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানাের স্বরূপ উন্মোচন” গ্রন্থের ১ম খন্ড ২৪৬-২৪৭পৃষ্ঠা দেখুন ।
❏ সূরা নিসায় আল্লাহ ইঙ্গিত করেছেন-
وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا
“তাঁর থেকে তার সঙ্গীনীকে বানানো হয়েছে।” (সুরা নিসা, আয়াত, ১)
তার কি থেকে বানানো হয়েছে তা কোরআনে স্পষ্ট নেই।
তাই সহিহ বুখারী ও মুসলিমে আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করা হয়েছে হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত,
রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন-
فَإِنَّ المَرْأَةَ خُلِقَتْ مِنْ ضِلَعٍ، –
‘‘নিশ্চয় আদম (عليه السلام)-এর স্ত্রী হযরত হাওয়া (عليه السلام) কে তাঁর পাজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে।’’
৩. ঈসা (عليه السلام) কে শুধু মাত্র রূহ থেকে।
● সুরা মারিয়াম -১৭-১৯।
৪. আমাদেরকে মা-বাবার নুতফা বা বীর্য থেকে। (পূর্বে আলোচিত হয়েছে)
আমরা সাধারণ মানুষদেরকে মা-বাবার নুতফা বা বীর্য থেকে। এ বিষয়ে কোরআনের মোট ১১টি স্থানে মহান রব ইরশাদ করেছেন। তাকে কেউ হেয় করলে কাফির হয়ে যাবেন। যেমনঃ দেখুন-
🕋 সূরা ফোরকান, আয়াত, ৫৪,
🕋 সূরা ত্বারেক, ৫,
🕋 সূরা দাহর, ২,
🕋 সূরা মুরছালাত, ২০-২১,
🕋 সূরা সাজদা, আয়াত, ৭-৮,
🕋 সূরা ইয়াছিন, ৭৭,
🕋 সূরা নাজাম, ৪৫-৪৬,
🕋 সূরা আবাসা, ১৮-১৯,
🕋 সূরা আলাক্ব, ২,
🕋 সূরা নাহল, ৪,
🕋 সূরা কিয়ামা, আয়াত, ৩৬-৩৮,
এ মোট ১১ স্থানে কোরআনে রয়েছে মানুষ নুতফার বা মা-বাবার বীর্যের তৈরী। আর আমাদের দেশের কাটমোল্লারা কোরআনের বিরুদ্ধে ফাতওয়া দিচ্ছেন।
৫. আমাদের রাসূল (ﷺ) কে আল্লাহর নূর থেকে।
● সুরা মায়েদা আয়াত নং ১৫, সূরা নূর ৩৫, সূরা আহযাব ৪৫
রাসূল (ﷺ)-এর সৃষ্টি আগে না আদম (عليه السلام)?
অনেকেই বলে থাকেন আদম (عليه السلام) যেহেতু প্রথম সৃষ্টি মানুষ সেহেতু রাসূল (ﷺ) তারপরে আগমন করেছেন তাই তিনিও তাঁর সন্তান হিসেবে মাটির তৈরী। এ ধারণাটি চরম মিথ্যা।
❏ ইমাম ইবনে সা‘দ (رحمة الله) {ওফাত. ২০৭হি.} একটি হাদিস সংকলন করেন-
أَخْبَرَنَا عَبْدُ الْوَهَّابِ بْنُ عَطَاءٍ عَنْ سَعِيدُ بْنُ أَبِي عَرُوبَةَ عَنْ قَتَادَةَ قَالَ: وَأَخْبَرَنَا عُمَرُ بْنُ عَاصِمٍ الْكِلابِيُّ. أَخْبَرَنَا أَبُو هِلالٍ عَنْ قَتَادَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ. صلى الله عليه وسلم : كُنْتُ أَوَّلَ النَّاسِ فِي الْخَلْقِ وَآخِرَهُمْ فِي الْبَعْثِ
-‘‘হযরত কাতাদা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, আমাদেরকে জানানো হয়েছে, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এরূপ বলেছেন, সৃষ্টির মধ্যে আমিই প্রথম মানুষ এবং প্রেরিত হয়েছি সবার শেষে।’’
❏ সুন্নী, ওহাবী, আহলে হাদিস সর্বজনের গ্রহণযোগ্য ইমাম এবং ইবনে তাইমিয়ার ছাত্র আল্লামা হাফেজ ইবনে কাসির (رحمة الله) {ওফাত. ৭৭৪হি.} একটি হাদিস সংকলন করে লিখেন-
وَهَذَا أَثْبَتُ وَأَصَحُّ –
‘‘এই সনদটি প্রমাণিত ও অধিক সহীহ।’’
তাই আদম (عليه السلام)-এরই পূর্বেই রাসূল (ﷺ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে।
রাসূল (ﷺ) নূরের সৃষ্টি মর্মে এ গ্রন্থে, প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানাের স্বরূপ উন্মোচন” গ্রন্থের ১ম খন্ড ২৯৩–৩৮৭ পৃষ্ঠা এবং প্রকাশের পথে -রাসূল (ﷺ)-এর সৃষ্টি নিয়ে বিভ্রান্তির অবসান’ দেখুন ।
দেওবন্দী ও আহলে হাদিসদের পক্ষে শুধু ধোঁকা আর জাল হাদিসই প্রধান দলিল:
এ বিষয়ে তাদের কোন একটিও সহিহ হাদিস নেই যেখানে রাসূল (ﷺ) বলে গেছেন আমি মাটির তৈরী মানুষ। তবে তারা নিম্নের জাল হাদিসটি বলে থাকেন। খতিবে বাগদাদী (رحمة الله) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন-
وَإِنِّي وَأَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ خُلِقْنَا مِنْ تُرْبَةٍ وَاحِدَةٍ وَفِيهَا نُدْفَنُ
-‘‘আমি, হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) ও হযরত ওমর (رضي الله عنه) এমন এক মাটি থেকে সৃষ্টি যাতে আমাদের দাফন করা হবে।’’ এ হাদিসটি জাল।
❏ খতিবে বাগদাদী হাদিসটি বর্ণনা করেই বলেছেন হাদিসটি গরীব।
আকায়েদ শাস্ত্রে এ ধরনের হাদিস দ্বারা কখনই দলিল দেয়া যাবে না।
❏ ইমাম জাওযী (ওফাত. ৫৯৭হি.) হাদিসটিকে জাল বলে আখ্যায়িত করেছেন।
❏ আল্লামা তাহের পাটনী ও ইমাম সুয়ূতি হাদিসটি অত্যন্ত দুর্বল বা জাল বলে উল্লেখ করেছেন।
❏ আহলে হাদিসদের তথাকথিত ইমাম নাসিরুদ্দীন আলবানী (১৯৯৯খৃ.) পর্যন্ত হাদিসটি বাতিল বা জাল বলে আখ্যায়িত করেছে।
❏ দেওবন্দী তাফসিরকারক মুফতি শফি তার মা‘রিফুল কোরআনের ৮৫৬ পৃষ্ঠায় (যা সৌদি আরব হতে বিনা মূলে দেয়া হত) ইমাম জাওযী (رحمة الله)-এর সূত্রে সনদটিকে জাল বলে আখ্যায়িত করেছেন। হাদিসের মধ্যে এই হাদিসই হল তাদের প্রধান পুঁজি।
দেওবন্দী ও আহলে হাদিসদের প্রতি আমার আকুল আবেদনঃ
তাই দেওবন্দী ও আহলে হাদিস ভাইদেরকে বলবো জাল হাদিসের প্রতি আক্বিদা ছেড়ে সহীহ হাদিসের দিকে ফিরে আসুন এবং আমাদেরকে কাফির বলতে গিয়ে নিজেদের আকাবীরদের (গুরুদের) কাফের বলা হতে বিরত থাকুন। আল্লাহ তাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন।..
___________সমাপ্ত_____