কিতাবঃ পর্দা সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর: পর্দার মাসআলা

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

কৃতজ্ঞতায়ঃ দাওয়াতে ইসলামী

মহিলা এর শাব্দিক অর্থ 

প্রশ্ন:- عورت (তথা মহিলা) এর শাব্দিক অর্থ কি?

উত্তর:- عورت (তথা মহিলা) শব্দের শাব্দিক অর্থ হলো; “গোপন করার বস্তু”। আল্লাহ্ তাআলার মাহবুব, হুযুর পুরনূ রাসূলুল্লাহ্ صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: عورت ( তথা মহিলা), “মহিলা’ই” (অর্থাৎ গোপন করার বস্তু)। যখন সে বের হয় তখন তাকে শয়তান উঁকিমেরে দেখে।” (অর্থাৎ তাকে দেখা শয়তানের কাজ) (সুনানে তিরমিযী, ২য় খন্ড, ৩৯২ পৃষ্ঠা, হাদীস: ১১৭৬)

আজকালও কি পর্দা করা আবশ্যক?

প্রশ্ন:- এই যুগেও কি পর্দা করা আবশ্যক?

উত্তর:- জ্বী, হ্যাঁ! কিছু বিষয় যদি দৃষ্টির সামনে রাখা হয় তবে اِنْ شَاءَ الله عَزَّوَجَلّ পর্দার মাসয়ালা বুঝার ক্ষেত্রে সহজ হবে। ২২ পারা সূরা আহযাব এর ৩৩ নং আয়াতে পর্দার হুকুম দিতে গিয়ে আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন:

وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَىٰ

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: এবং নিজেদের ঘরগুলোতে অবস্থান করো এবং বেপর্দা থেকো না যেমন পূর্ববর্তী জাহেলী যুগের পর্দাহীনতা; (পারা: ২২, সূরা: আহযাব, আয়াত: ৩৩)

খলিফায়ে আ’লা হযরত, সদরুল আফাযিল হযরত আল্লামা মাওলানা সায়্যিদ মুহাম্মদ নঈম উদ্দীন মুরাদাবাদী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ এই আয়াতের টীকায় বলেন: পূর্বের অন্ধকার যুগ (জাহেলীয়্যতের যুগ)দ্বারা উদ্দেশ্য ইসলামের পূর্বের যুগ। সেই যুগে মহিলারা বেপর্দা বের হতো। নিজের সৌন্দর্য্যতা ও রূপ মাধুর্যকে (অর্থাৎ শরীরের সাজসজ্জা ও সৌন্দর্যতা যেমন; বুকের উত্তান ইত্যাদি) প্রকাশ করতো। যেন পর-পুরুষেরা তা দেখে। এমন পোশাক পরিধান করতো যার দ্বারা শরীর পুরোপুরি আবৃত হতো না। (খাযায়িনুল ইরফান, ৬৭৩ পৃষ্ঠা)

আফসোস! অন্ধকার যুগের সেই পর্দাহীনতা ও নির্লজ্জতা বর্তমান যুগেও দেখা যাচ্ছে, নিঃসন্দেহে যেমনি ভাবে সেই যুগে পর্দা আবশ্যক ছিলো, তেমনি ভাবে বর্তমানেও আবশ্যক।

অন্ধকার (জাহেলী) যুগের সময়সীমা কতটুকু?

প্রখ্যাত মুফাস্‌সীর, হাকীমুল উম্মত হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: আহ! যদি উপরোক্ত আয়াত দ্বারা বর্তমান যুগের মুসলমান মহিলারা শিক্ষাগ্রহণ করতো। এই মহিলারা সেই উম্মাহাতুল মু’মিনীনদের চেয়ে উর্ধ্বে নয়। “রুহুল বয়ানে”র প্রণেতা رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: হযরত সায়্যিদুনা আদম عَلٰی نَبِیِّنَاوَعَلَیْہِ الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام সায়্যিদুনা নুহ عَلٰی نَبِیِّنَاوَعَلَیْہِ الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام এর তুফানের মধ্যবর্তী যুগকে প্রথম অন্ধকার যুগ (জাহেলী যুগ) বলা হয়, যার সময়সীমা বারশত বাহাত্তর (১২৭২) বছর ছিলো। আর ঈসা عَلٰی نَبِیِّنَاوَعَلَیْہِ الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام ও হুযুর صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর মধ্যবর্তী যুগকে দ্বিতীয় অন্ধকার যুগ বলা হয়। যার সময়সীমা প্রায় ছয়শত (৬০০) বছর ছিলো। (নূরুল ইরফান, ৬৭৩ পৃষ্ঠা, রুহুল বয়ান, ৭ম খন্ড, ১৭০ পৃষ্ঠা) 

وَاللهُ ورسوله اَعْلَمُ عَزَّوَجَلّ و صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم

পর্দাহীনতা ও নির্লজ্জতার শাস্তি

প্রশ্ন:- বেপর্দার শাস্তি কি?

উত্তর:- মহিলাদের বেপর্দা হওয়া আল্লাহ্ তাআলার গযবের মাধ্যম এবং ধ্বংসের কারণ। এই প্রশ্নের উত্তরে ১৮ পারার সূরা নূরের ৩১নং আয়াতের এই অংশটুকুর তাফসীর লক্ষ্য করুন। যেমনিভাবে আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন:

وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِن زِينَتِهِنَّ

.কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: এবং যেন মাটির উপর সজোরে পদক্ষেপ না করে, যাতে জানা যায় গোপন সাজসজ্জা; (পারা: ১৮, সূরা: নুর, আয়াত: ৩১)

পর্দার বিধান

বর্ণিত আয়াতে মোবারাকার ব্যাখ্যায় মুফাস্‌সীরে কোরআন মুহাম্মদ নঈম উদ্দীন মুরাদাবাদী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: অর্থাৎ মহিলারা ঘরের মধ্যে চলাফেরা করার সময়ও এতটুকু আস্তে পা ফেলবে যেন তাদের অলংকারের আওয়াজ শুনা না যায়। মাসয়ালা: এজন্যই মহিলাদের উচিত তারা যেন শব্দ সৃষ্টিকারী নূপুর পরিধান না করে। হাদীস শরীফে বর্ণিত রয়েছে: “আল্লাহ্ তাআলা সেই সম্প্রদায়ের দোয়া কবুল করেন না, যে সম্প্রদায়ের মহিলারা নূপুর পরিধান করে থাকে।” (তাফসীরাতে আহমদীয়া, ৫৬৫ পৃষ্ঠা) এ থেকে বুঝে নেয়া উচিত যে, যখন অলংকারের শব্দ দোয়া কবুল হওয়াকে বাধাগ্রস্থ করে, তবে বিশেষ করে মহিলারা নিজের আওয়াজকে (শরীয়াতের বিনা অনুমতিতে অন্য পুরুষ পর্যন্ত পৌঁছানো) এবং তাদের বেপর্দা হওয়া, কিরূপ আল্লাহ্ তাআলা গযবের কারণ হবে। পর্দার ব্যাপারে বেপরোয়া হওয়া ধ্বংসের কারণ। (খাযায়িনুল ইরফান, ৫৬৬ পৃষ্ঠা)

নূপুর দ্বারা কোন অলংকার উদ্দেশ্য?

প্রশ্ন:- হাদীসে পাকে যে শব্দসৃষ্টিকারী নূপুর পরিধানে বারণ করা হয়েছে তা দ্বারা কোন অলংকার উদ্দেশ্য?

উত্তর:- এর দ্বারা পায়ের ঘুঙ্গুর উদ্দেশ্য, এমন অলংকার পরিধানকারীনিদের ব্যাপারে একটি হাদীসে পাকে ইরশাদ হয়েছে: “আল্লাহ্ তাআলা শব্দসৃষ্টিকারী নুপুরের আওয়াজকে এমনিভাবে অপছন্দ করেন যেমনিভাবে গানের আওয়াজকে অপছন্দ করেন এবং যে মহিলা এমন অলংকার পরিধান করবে তার হাশর তেমনই হবে যেমনটি বাদ্যযন্ত্র বাদকদের হবে। যে মহিলা শব্দসৃষ্টিকারী নূপুর পরিধান করে তার উপর অভিশাপ অবতীর্ণ হয়।” (কানযুল উম্মাল, ১৬তম খন্ড, ১৬৪ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৪৫০৬৩)

প্রতিটি নূপুরের সাথে শয়তান থাকে

হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ্ বিন যুবাইর رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ বলেন: আমাদের ঘরের (এক) দাসী হযরত যুবাইর رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর মেয়েকে নিয়ে হযরত ওমর رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর নিকট গেলো, এমতাবস্থায় তার পায়ে নুপুর ছিলো। হযরত সায়্যিদুনা ওমর ফারুক رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ সেটাকে কেঁটে দিলেন এবং বললেন: “আমি হুযুর صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর নিকট শুনেছি যে, প্রতিটি নুপুরের সাথে শয়তান থাকে।” (সুনানে আবু দাউদ, ৪র্থ খন্ড, ১২৪ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৪২৩০)

নূপুর বিশিষ্ট ঘরে ফিরিশতা আগমন করে না

হযরত সায়্যিদাতুনা বুনানা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا বলেন: আমি উম্মুল মু’মিনীন হযরত সায়্যিদাতুনা আয়েশা সিদ্দীকা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا এর নিকট উপস্থিত ছিলাম, তখন তাঁর কাছে একটি শিশু কন্যাকে আনা হলো, যার পায়ে নুপুর ছিলো, যেটা আওয়াজ করছিল। (তা দেখে) তিনি رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا বললেন: তাকে কখনও আমার নিকট আনবেনা। কিন্তু যদি তার নুপুর ভেঙ্গে ফেলা হয় (তবে আনবে)। আমি صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم কে ইরশাদ করতে শুনেছি: “যে ঘরে নুপুর থাকে সেই ঘরে ফিরিশতা আগমন করে না।” (সুনানে আবু দাউদ, ৪র্থ খন্ড, ১২৫ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৪২৩১)

এই অধ্যায়ের হাদীসে মোবারাকার টীকায় প্রখ্যাত মুফাস্‌সীর, হাকীমুল উম্মত হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: اَجْرَاسْ শব্দটি جَرْس এর বহুবচন। যার অর্থ হলো: নুপুর এবং তার ন্যায় শব্দ সৃষ্টিকারী বস্তু। উটের গলায় ঝুমুর এবং বাজ পাখির পায়ের চামড়াকেও আজরাস বলা হয়। হিন্দুস্থানেও পূর্ববর্তী মহিলাদের মধ্যে নুপুরের প্রচলন ছিলো। হাদীসে আয়েশায় رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا যেই নুপুর ভেঙ্গে ফেলার বর্ণনা রয়েছে, তার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মুফতী সাহেব رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: এমন ভাবে ভেঙ্গে দিবে যে, তার ভিতরের কংকর বের করে দিবে অথবা তার নুপুরকে আলাদা করে দিবে অথবা সেই নুপুরটা স্বয়ং ভেঙ্গে ফেলবে। মোটকথা হলো, তাতে যেন শব্দ না হয়। (মিরআতুল মানাজিহ, ৬ষ্ঠ খন্ড, ১৩৬ পৃষ্ঠা)

অলংকারের শব্দের হুকুম

প্রশ্ন:- মহিলাদের জন্য কী শব্দ সৃষ্টিকারী অলংকার পরিধান করা একেবারে নিষিদ্ধ?

উত্তর:- না, এমন তো কখনও হতে পারে না। আমার আক্বা আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত মাওলানা শাহ্ ইমাম আহমদ রযা খাঁন رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ “ফতোওয়ায়ে রযবীয়া” ২২তম খন্ডের ১২৭ ও ১২৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন: “বরং মহিলাদের সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও একেবারে অলংকার বিহীন থাকা মাকরূহ। কেননা, এতে পুরুষদের সাথে সাদৃশ্য পাওয়া যায়।” তিনি আরো বলেন: হাদীসে পাকে বর্ণিত রয়েছে: হুযুর صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم হযরত মাওলা আলী رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ কে ইরশাদ করলেন: يَا عَلِيُّ مُرْنِسَاءَكَ لَايُصَلِّيْنَ عُطُلًا অর্থাৎ; হে আলী! নিজ পরিবারের মহিলাদেরকে হুকুম দাও যে, (তারা যেন) অলংকার বিহীন নামায আদায় না করে।” (আল মু’জামুল আওসাত লিত তাবারানী, ৪র্থ খন্ড, ২৬২ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৫৯২৯)

উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا মহিলাদের জন্য অলংকার বিহীন নামায পড়াকে মাকরূহ (অপছন্দনীয়) মনে করতেন আর বলতেন: “যদি কিছুও না পাও তবে একটি রশি গলায় বেধেঁ নাও।” (আস্‌সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, ২য় খন্ড, ৩৩২ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৩২৬৭) 

আ’লা হযরত رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ শব্দ সৃষ্টিকারী অলংকার ব্যবহার করা সম্পর্কে বলেন: “শব্দ সৃষ্টিকারী অলংকার মহিলার জন্যসেই অবস্থায় পরিধান করা জায়েয, যখন তাকে না-মাহরাম যেমন; চাচাতো, খালাতো, মামাতো, ফুফাতো ভাই, ভাসুর, দেবর, বোনের স্বামীর সামনে আসতে না হয়। আর না তার অলংকারের শব্দ না-মাহরাম পর্যন্ত পৌঁছে।” আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন:

وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ 

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: আর আপন সাজসজ্জাকে যেন প্রকাশ না করে, কিন্তু নিজেদের স্বামীর নিকট; (পারা: ১৮, সূরা: নূর, আয়াত: ৩১)

আল্লাহ্ তাআলা আরো ইরশাদ করেন:

وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِن زِينَتِهِنَّ 

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: আর যেন মাটির উপর সজোরে পদক্ষেপ না করে যাতে জানা যায় তাদের গোপন সাজসজ্জা। (পারা: ১৮, সূরা: নূর, আয়াত: ৩১)

নোট: এই আয়াতে করীমা যেমনিভাবে না-মাহরাম পর্যন্ত অলংকারের শব্দ পৌঁছাতে নিষেধ করছে, অনূরূপভাবে যখন শব্দ না পৌঁছে তখন তা পরিধান করা মহিলাদের জন্য জায়েয সাব্যস্ত করছে। কেননা, এই আয়াতে মোবারাকায় জোরে জোরে পা রাখতে বারণ করা হয়েছে, পরিধান করতে বারণ করা হয়নি। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ২২তম খন্ড, ১২৭-১২৮ পৃষ্ঠা, সংকলিত)

স্বামীর জন্য মহিলাদের অলংকার পরিধান করা

প্রশ্ন:- স্বামীর সন্তুষ্টির জন্য মহিলাদের অলংকার পরিধান করা কেমন?

উত্তর:- সাওয়াবের কাজ। আমার আক্বা আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত মাওলানা শাহ্ ইমাম আহমদ রযা খাঁন رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: “স্বামীর জন্য মহিলাদের অলংকার পরিধান করা, সাজসজ্জা করা মহান প্রতিদানের মাধ্যম ও তার জন্য নফল নামায আদায় করা থেকেও উত্তম। কতিপয় নেক্কার বিবিগণ (এমনও ছিলেন) নিজে এবং তার স্বামী উভয়েই আউলিয়ায়ে কিরামের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত ছিলেন। প্রতি রাতে ইশারের নামাযের পর পুরোপুরি নব বধুর মতো সেজে নিজের স্বামীর নিকট আসতেন। যদি তাকে নিজের দিকে আগ্রহী মনে হতো তবে স্বামীর নিকট উপস্থিত থাকতেন। নতুবা অলংকার খুলে জায়নামায বিছিয়ে নামাযে লিপ্ত হয়ে যেতেন। আর নব বধুকে সাজানো তো অনেক পুরোনো সুন্নাত এবং অনেক হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত। বরং যুবতি মেয়েদেরকে ভাল পোশাক ও অলংকার দ্বারা সজ্জিত রাখা যেন তাদের বিয়ের প্রস্তাব আসে, এটাও সুন্নাত।” (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ২২তম খন্ড, ১২৬ পৃষ্ঠা)

কিন্তু স্মরণ রাখবেন! সাজ-সজ্জা যেন ঘরের চার দেয়ালের মধ্যে এবং তাও শুধুমাত্র মাহরামদের সামনে হয়। যুবতী মেয়েদের সাজিয়ে পর-পুরুষের সামনে বেপর্দা অবস্থায় নিয়ে ঘুরে বেড়ানো হারাম এবং জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার মতো কাজ।

প্রিয় নবী ﷺ এর দীদার নসীব হয়ে গেলো

ইসলামী বোনেরা! শরয়ী পর্দা করাতে দৃঢ়তা পাওয়ার জন্য তবলীগে কোরআন ও সুন্নাতের বিশ্বব্যাপী অরাজনৈতিক সংগঠন দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশের সাথে সর্বদা সম্পৃক্ত থাকুন। দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাজও করতে থাকুন এবং দা’ওয়াতে ইসলামীর সুন্নাত প্রশিক্ষণের মাদানী কাফেলায় ইসলামী বোনেরা মুসাফির হওয়ার সৌভাগ্যও অর্জন করতে থাকুন।* যদি কেউ জিজ্ঞাসা করে, মাদানী কাফেলায় কি পাওয়া যায়? তবে আমি বলব: মাদানী কাফেলায় কি পাওয়া যায় না! এই মাদানী বাহারটি লক্ষ্য করুন এবং নবীর প্রেমে মুখরিত অন্তরের অনুধাবন মাদানী বাহারের পরিশেষে প্রদত্ত কবিতার লাইনে سُبْحٰنَ اللهِ عَزَّوَجَل বলে সত্যায়নের মোহর লাগিয়ে নিন। হায়দারাবাদ সিন্ধু প্রদেশের একজন ইসলামী বোনের বর্ণনা কিছুটা এরকম: আমাদের এলাকার দা’ওয়াতে ইসলামীর ইসলামী বোনদের একটি মাদানী কাফেলা আগমন করলো। দ্বিতীয় দিন নেকীর দাওয়াতের মাদানী দাওরার পর অনুষ্ঠিত সুন্নাতে ভরা বয়ানে আমারও অংশগ্রহণ করার সৌভাগ্য অর্জিত হলো। বয়ান শেষে যখন সালাত ও সালামের এই কবিতার লাইনগুলো পড়া হলো;

“হে শাহানশাহে মদীনা আস্‌সালাতু ওয়াস্‌সালাম” তখন আমি জাগ্রত চোখে দেখলাম যে, রহমতে আলম صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ফুলের মালা পরিধান করে সেখানে আগমণ করলেন। আমার আক্বা, উভয় জাহানের দাতা صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم কে দেখে আমি নিজেকে সামলাতে পারলাম না, আমার চোখ দিয়ে অশ্রুধারা প্রবাহিত হতে লাগলো। অতঃপর সেই ঈমান তাজাকারী দৃশ্য আমার চোখের সামনে থেকে অদৃশ্য হয়ে গেলো, আর তখনই ইজতিমাও সমাপ্ত হয়ে গেলো।

————-

*ইসলামী বোনদের মাদানী কাফেলা প্রত্যেক মুসাফির ইসলামী বোনের সাথে তার সন্তানের বাবা অথবা নির্ভরযোগ্য মুহরিম পুরুষ থাকা আবশ্যক। এ ছাড়া যিম্মাদারদের জন্য নিজের ইচ্ছায় মাদানী কাফেলায় সফর করানোর অনুমতি নেই। যেমন- ইসলামী বোনদের মাদানী কাফেলার জন্য ইসলামী বোনদের মজলিশ বরায়ে মুলক (দেশ পর্যায়ের ইসলামী বোনদের যিম্মাদারের) অনুমতি আবশ্যক।

————-

মিল গেয়ে ওহ তো ফির কমি কেয়া হে,

দোনো আলম কো পা লিয়া হামনে।

صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد

সতর এর মাসআলাঃ সতর কাকে বলে?

প্রশ্ন:- সতরে আওরাত (সতর ঢাকা) কাকে বলে?

উত্তর:- সতরের শাব্দিক অর্থ হচ্ছে; গোপন করা বা ঢেকে রাখা। যে অঙ্গ সমূহকে ঢেকে রাখা আবশ্যক, সেগুলোকে “আওরাত” বলা হয়। আর সমষ্টিগত ভাবে ঢেকে রাখার এই কর্মকে “সতরে আওরাত” (অর্থাৎ গোপনীয় অঙ্গ সমূহকে ঢেকে রাখা) বলা হয়।আমাদের সমাজে এই বিশেষ অঙ্গ সমূহকে সতর বলা হয়। যেগুলোকে ঢেকে রাখা আবশ্যক।

দা’ওয়াতে ইসলামীর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত ১২৫০ পৃষ্ঠা সম্বলিত কিতাব “বাহারে শরীয়াত”এর ১ম খন্ডের ৪৭৯ পৃষ্ঠায় সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরিকা মুফতী মুহাম্মদ আমজাদ আলী আযমী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: “সতরে আওরাত (অর্থাৎ সতর গোপন করা) প্রতিটি অবস্থায় ওয়াজিব। চাই সে নামাযে থাকুক বা না থাকুক। একা হোক বা সবার সামনে থাকুক। কোন সঠিক কারণ ব্যতিত একাকীত্বেও সতর খোলা বৈধ নয় এবং লোকদের সামনে হোক অথবা নামাযের মধ্যে (প্রতিটি অবস্থায়) সতর ঢেকে রাখা সর্বসম্মতিক্রমে ফরয।” (বাহারে শরীয়াত, ১ম অংশ, ৩য় অংশ, ৪৭৯ পৃষ্ঠা)

صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد

সতর সম্পর্কিত বিধানের দু’টি প্রকারভেদ রয়েছে:

(১) নামাযের মধ্যে নারী ও পুরুষের জন্য সতরের বিধান।

(২) নামাযের বাইরে সতরের বিধান। অর্থাৎ কে কার শরীরের কতটুকু অংশ দেখতে পারবে। প্রথম প্রকারের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা প্রশ্নোত্তর আকারে লক্ষ্য করুন।

পুরুষের সতর কতটুকু থেকে কতটুকু?

প্রশ্ন:- পুরুষের শরীরের কোন অংশটি সতর এবং নামাযে তার জন্য সতরের বিধান কী?

উত্তর:- সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরিকা হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ আমজাদ আলী আযমী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: “পুরুষের জন্য নাভীর নিচ থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত সতরে আওরাত অর্থাৎ ততটুকু অংশ ঢেকে রাখা ফরয। নাভী সতরে অন্তর্ভূক্ত নয় কিন্তু হাঁটু সতরে অন্তর্ভূক্ত। বর্তমান যুগে অধিকাংশ লোক এমন রয়েছে যে, লুঙ্গি অথবা পায়জামা এভাবে পরিধান করে যে, নাভীর নিচের কিছু অংশ খোলা থাকে আর যদি জামা বা পাঞ্জাবী ইত্যাদি দ্বারা (সেই অংশটি) এভাবে ঢেকে নেয় যে, চামড়ার রং প্রকাশিত না হয়, তবে তা ঠিক আছে। আর এরূপ না হলে হারাম, আর নামাযের মধ্যে একচতুর্থাংশ পরিমাণ খোলা থাকলে নামাযই হবেনা এবং অনেক মূর্খ এমনও রয়েছে যে, লোকদের সামনে হাঁটু বরং রান পর্যন্তও খোলা রাখে এটাও হারাম এবং যদি এরূপ অভ্যাস হয়ে যায়, তবে ফাসিক (প্রকাশ্যে গুনাহকারী) বলে গন্য হবে।” ((বাহারে শরীয়াত, ১ম অংশ, ৩য় অংশ, ৪৮১ পৃষ্ঠা)

হাজী সাহেবগণ ও জাঙ্গিয়া পরিধানকারী

ইহরাম পরিধানকারী কিছু হাজীও এরূপ অসাবধানতা অবলম্বন করে আর তাদের সতরের কিছু অংশ যেমন; নাভীর নিচের কিছু অংশ এবং হাঁটু বরং রানের কিছু অংশ সবার সামনে প্রকাশ পেয়ে থাকে। তাদের তাওবা করা এবং ভবিষ্যতে সাবধানতা অবলম্বন করা আবশ্যক। এছাড়া জাঙ্গিয়া (KNICKERS) পরিধান করে পুরো হাঁটু এবং রানের কিছু অংশ খোলা রেখে ঘুরে বেড়ানো ব্যক্তিদেরও শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত, এবং তা থেকে তাওবা-ও করা উচিত। না নিজে গুনাহগার হবে, না অন্যকে কুদৃষ্টির দাওয়াত দিবে। যদি কেউ জাঙ্গিয়া পরিধান করে থাকে তবে অপর মুসলমানের জন্য আবশ্যক যে, তার খোলা হাঁটু এবং রান দেখা থেকে যেন নিজেকে বিরত রাখে।

মহিলার সতর

প্রশ্ন:- মহিলাদের সতরের ব্যাপারেও অবগত করুন আর এটাও বলে দিন যে, তাদের জন্য নামাযের মধ্যে কি কি ঢেকে রাখা আবশ্যক?

উত্তর:- মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত “বাহারে শরীয়াত” ১ম খন্ডের ৩য় অংশের ৪৮১ পৃষ্ঠায় বর্ণিত রয়েছে: “স্বাধীন মহিলা (দাস-দাসীদের যুগ শেষ হয়ে গেছে, বর্তমানে সকল মহিলাই স্বাধীন) ও দূর্লভ হিজড়ার (অর্থাৎ যাদের মধ্যে নারী ও পুরুষ উভয়ের নিদর্শন পাওয়া যায় এবং এটা প্রমাণিত হয় না যে, পুরুষ নাকি মহিলা) জন্য সারা শরীরই লুকোনোর স্থান। মুখমন্ডল এবং হাতের তালু ও পায়ের তালু ব্যতিত, মাথার ঝুলন্ত চুল ও গর্দান এবং কব্জিও সতর (অর্থাৎ লুকোনোর বস্তু) এবং এগুলোকে ঢেকে রাখাও ফরয। কতিপয় ওলামায়ে কিরাম হাতের পিষ্টদেশ এবং পায়ের তালুকে সতর (অর্থাৎ লুকোনোর বস্তু) এর মধ্যে গন্য করেননি। যদি মহিলারা এতই পাতলা ওড়না পরিধান করে, যা দ্বারা চুলের রং প্রকাশ পায়, এমন ওড়না পরিধান করে নামায আদায় করলে নামায হবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত তার উপর এমন কোন বস্তু না থাকে যা দ্বারা চুল ইত্যাদির রং ঢেকে যায়।” (“বাহারে শরীয়াত” ১ম খন্ডের ৩য় অংশের ৪৮৪ পৃষ্ঠা)

নামাযের মধ্যে যদি সামান্য সতর খোলা থাকে তবে…?

প্রশ্ন:- যদি নামাযের মধ্যে সামান্য সতর খোলা থাকে তবে কি নামায হয়ে যাবে?

উত্তর:- সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরিকা, হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ আমজাদ আলী আযমী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: “প্রকাশ্য যে, যে অঙ্গগুলোর সতর (ঢেকে রাখা) ফরয। যদি কোন অঙ্গের এক-চতুর্থাংশ হতে কম খুলে যায়, তবে নামায হয়ে যাবে। আর যদি এক-চতুর্থাংশ অঙ্গ খুলে যায় এবং তৎক্ষণাৎ ঢেকে নেয়, তবুও নামায হয়ে যাবে। আর যদি এক রুকন পরিমাণ (অর্থাৎ তিনবার سُبْحٰنَ اللهِ বলার সম পরিমাণ সময়) খোলা থাকে অথবা ইচ্ছাকৃত ভাবে খোলে রাখে, যদিওবা তৎক্ষণাৎ ঢেকে নেয়ও, তবে নামায ভঙ্গ হয়ে যাবে। যদি কয়েকটি অঙ্গের অল্প অল্প খোলা থাকে যে, প্রত্যেকটি অনাবৃত অংশ সেই অঙ্গের এক-চতুর্থাংশের কম হয় অথচ সবগুলোর সমষ্টি সেই অনাবৃত অঙ্গ সমূহের মধ্যে যা সবচেয়ে ছোট, তার চতুর্থাংশের সমান হয়, তবে নামায হবে না। যেমন; মহিলাদের কানের এক-নবমাংশ এবং পায়ের গোড়ালীর এক-নবমাংশ অনাবৃত (খোলা) থাকে, তবে সমষ্টিগত ভাবে উভয় অঙ্গ (যা অনাবৃত রয়েছে) কানের চতুর্থাংশের সমপরিমাণ হয়। তাই নামায ভঙ্গ হয়ে যাবে।” (বাহারে শরীয়াত, ১ম অংশ, ৪৮১-৪৮২ পৃষ্ঠা)

আমি নামায আদায় করতাম না

ইসলামী বোনেরা! দা’ওয়াতে ইসলামীর বরকতের কথা কী বলব! এই সুন্নাতে ভরা মাদানী পরিবেশ লক্ষ লক্ষ বেনামাযীকে নামাযী বানিয়ে দিয়েছে। এমনই একটি মাদানী বাহার লক্ষ্য করুন। পাঞ্জাব এর এক ইসলামী বোনের বর্ণনার সারাংশ হলো: আমার ঘরের পরিবেশ তো এমনিতে ইসলামী ছিলো। আমার আব্বাজান মসজিদের মুয়াজ্জিন আর বড় বোন ও বড় ভাই দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। কিন্তু আমার মনমানসিকতা দুনিয়াবী স্বাদে মত্ত ছিলো এবং নফস গুনাহের কাজে আসক্ত ছিলো। নামায কাযা করা আমার অভ্যাস ছিলো। একদিন কিছু ইসলামী বোন আমাদের ঘরে দা’ওয়াতে ইসলামীর সুন্নাতে ভরা ইজতিমার দাওয়াত দেয়ার জন্য আগমন করলেন। তাদের ভালবাসাপূর্ণ আচরণের ধরণ আমার অন্তরকে মোমের মতো গলিয়ে দিলো আর আমি ইজতিমায় অংশগ্রহণ করার নিয়্যত করে নিলাম। যখন সেখানে গেলাম তখন একজন দা’ওয়াতে ইসলামীর মুবাল্লিগাকে “বেনামাযীর শাস্তি” এই বিষয় সম্পর্কিত হৃদয় কাঁপানো বয়ান করলেন। যা শুনে আমি কেঁপে উঠলাম এবং সত্য অন্তরে নিয়্যত করে নিলাম যে, اِنْ شَاءَ الله عَزَّوَجَلّ আজকের পর থেকে আমার আর কোন নামায কাযা হবে না। অতঃপর যখন রবিউন নূর শরীফের বসন্তের বাহার আসলো তখন আমি ইসলামী বোনদের ইজতিমায়ে মিলাদে অংশগ্রহণ করলাম সেখানে একজন ইসলামী বোন “টিভির ধ্বংসলীলা”* সম্পর্কে বয়ান করলেন। সেই বয়ান শুনে আমার শরীরের লোম খাঁড়া হয়ে গেলো এবং আমার চোখ থেকে অশ্রু প্রবাহিত হতে লাগল। সেই দিন থেকে আজ পর্যন্ত আমি দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে নিজের সংশোধনের চেষ্টায় রত আছি।

আপ খোদ তাশরীফ লায়ে আপনে বেকস কি তরফ,

আহ জব নিকলী তরপ কর বেকসু মজবুর কী।

আপ কে কদমু মে গিরকর মওত কি ইয়া মুস্তফা!

আরযু কব আয়েগী বারি বেকসু মজবুর কী।

————-

*আমীরে আহলে সুন্নাত دَامَتْ بَرَكَاتُهُمُ العَالِيَه এর আওয়াজে ওডিও ক্যাসেট এবং ভি.সি.ডি আর এ বয়ানের রিসালা মাকতাবাতুল মদীনা থেকে হাদিয়া সহকারে সংগ্রহ করুন।

———-

অন্তর খুশি করার ফযীলত

ইসলামী বোনেরা! اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ عَزَّوَجَلّ ঘরে ঘরে গিয়ে নেকীর দাওয়াত দেয়ার সত্যিই অনেক বরকত রয়েছে। হতে পারে আপনার সামান্যতম প্রচেষ্টা কারো ভাগ্য পরিবর্তন করে দিবে এবং সে আখিরাতের মঙ্গলজনক কাজে লিপ্ত হয়ে যায় এবং আপনার তরীও পার হয়ে যাবে। একটু ভাবুন তো! আপনার নেকীর দাওয়াত শুনে যে ইসলামী বোন মাদানী পরিবেশের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে যাবে তার কতটুকু শান্তি অনুভব হবে এবং তার অন্তর কতটুকু খুশি হবে।

سُبْحٰنَ اللهِ عَزَّوَجَل মুসলমানের অন্তর খুশি করা অনেক বড় সাওয়াবের কাজ। যেমনিভাবে- তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবূয়ত, মাহবুবে রব্বুল ইয্যত, হুযুর صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি কোন মু’মিন বান্দার অন্তর খুশি করে, আল্লাহ্ তাআলা সেই খুশি দ্বারা একজন ফিরিশতা সৃষ্টি করেন, সেই ফিরিশতা আল্লাহ্ তাআলার ইবাদত এবং তাওহীদ বর্ণনা করে থাকে। যখন সেই বান্দা কবরে চলে যাবে তখন সেই ফিরিশতা তার কাছে এসে জিজ্ঞাসা করবে: তুমি কী আমাকে চিনতে পেরেছো? তখন সে বলবে: তুমি কে? উত্তরে ফিরিশতা বলবে: তুমি যে অমুক মুসলমানের অন্তর খুশি করেছিলে আমি সেই খুশির আকৃতি। এখন আমি তোমার একাকীত্বের সাথী হবো এবং তোমাকে (মুনকার-নকীরের) প্রশ্নের উত্তর প্রদানে অটল রাখবো এবং কিয়ামতের দিন তোমার নিকট আসবো এবং তোমার জন্য আল্লাহ্ তাআলার দরবারে সুপারিশ করবো আর তোমাকে জান্নাতে তোমার ঠিকানা দেখিয়ে দিবো।” (আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব, ৩য় খন্ড, ২৬৬ পৃষ্ঠা, হাদীস: ২৩)

তাজ ও তখত হুকুমত মত দে, কছরতে মালও দৌলত মাত দে।

আপনি খুশি কা দে দে মুছদাহ্, ইয়া আল্লাহ্! মেরী ঝুলি ভর দে।

صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد 

দ্বিতীয় প্রকার সতরের ৪টি অংশ

এখন সতরের দ্বিতীয় প্রকার (অর্থাৎ নামাযের বাইরে সতর) এর বিস্তারিত বর্ণনা প্রশ্নোত্তর উপস্থাপন করা হলো। এই বিধানের ৪টি প্রকারভেদ রয়েছে:

(১) পুরুষের জন্য পুরুষের সতর,

(২) মহিলাদের জন্য মহিলাদের সতর,

(৩) মহিলাদের জন্য পর-পুরুষের সতর,

(৪) পুরুষের জন্য মহিলার সতর।

(১) পুরুষের জন্য পুরুষের সতর

প্রশ্ন:- পুরুষের সতর কতটুকু থেকে কতটুকু?

উত্তর:- পুরুষের সতর নাভীর ঠিক নিচ থেকে শুরু করে হাঁটু সহ নিচ পর্যন্ত। নাভী সতরের অন্তর্ভূক্ত নয়। সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরিকা, হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ আমজাদ আলী আযমী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: “এক পুরুষ অপর পুরুষের প্রত্যেক সেই অঙ্গসমূহ দেখতে পারবে, যে অঙ্গগুলো ঢেকে রাখা ফরয নয় আর নাভীর ঠিক নিচ থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত দেখতে পারবে না। কেননা, এ অঙ্গ সমূহ ঢেকে রাখা ফরয। যেই অঙ্গগুলোকে ঢেকে রাখা আবশ্যক তাকে “আওরাত” বলে। যদি কোন পুরুষের হাঁটু অনাবৃত দেখে, তবে তাকে বারণ করবে আর যদি রান অনাবৃত (খোলা) দেখে তবে কঠোরভাবে বারণ করবে। আর যদি লজ্জাস্থান অনাবৃত দেখে তবে শাস্তি প্রদান করা হবে।” (বাহারে শরীয়াত, ১৬তম অংশ, ৮৫ পৃষ্ঠা)

স্মরণ রাখবেন! শাস্তি দেয়া সাধারণ মানুষের কাজ নয় বরং বিচারকের কাজ। প্রয়োজন বশতঃ বাবা সন্তানকে, শিক্ষক ছাত্রকে, পীর মুরিদকে কঠোরতা প্রদর্শন করতে পারবে এবং শাস্তিও দিতে পারবে। যেমনিভাবে “বাহারে শরীয়াত” ১ম খন্ডের ৪৮২ নং পৃষ্ঠায় বর্ণিত রয়েছে: “যদি নাপাক অঙ্গ (অর্থাৎ সামনেও পিছনের বিশেষ অংশ) অনাবৃত থাকে, তবে যে প্রহার করার ক্ষমতা রাখে, যেমন; বাবা, বিচারক সে প্রহার করবে।

ছোট বাচ্চার সতর

প্রশ্ন: দুধ পানকারী বাচ্চাদেরও কি হাঁটু এবং রান ইত্যাদি ঢেকে রাখা আবশ্যক?

উত্তর:- জ্বী, না। দুধ পানকারী বাচ্চা যদি সম্পূর্ণ ভাবে উলঙ্গ থাকে তবুও তার দিকে দৃষ্টি দেয়াতে কোন সমস্যা নেই। দা’ওয়াতে ইসলামীর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত ৩১২ পৃষ্ঠা সম্বলিত কিতাব “বাহারে শরীয়াত” ১৬তম অংশের ৮৫নং পৃষ্ঠায় সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরিকা, হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ আমজাদ আলী আযমী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: “অতি ছোট বাচ্চার জন্য ‘আওরাত’ (সতর) নেই অর্থাৎ তার শরীরের কোন অংশকেই ঢেকে রাখা ফরয নয়। তারপরও যখন সামান্য বড় হয়ে যায় তখন তার সামনে ও পিছনের জায়গা ঢেকে রাখা আবশ্যক। অতঃপর যখন আরও বড় হয়ে যাবে অর্থাৎ দশ বছর থেকে বড় হয়ে যাবে তখন তার জন্য বালিগের ন্যায় হুকুম হবে।” (বাহারে শরীয়াত, ১৬তম অংশ, ৮৫ পৃষ্ঠা)

অতি ছোট বাচ্চার রান স্পর্শ করা কেমন?

প্রশ্ন:- অতি ছোট বাচ্চার রান স্পর্শ করা কেমন?

উত্তর:- স্পর্শ করতে পারবে। হ্যাঁ, যদি দেখাতে বা স্পর্শ করাতে যৌন উত্তেজনা সৃষ্টি হয় তবে এক দিনের বাচ্চাকেও দেখতে ও স্পর্শ করতে পারবেনা। আজকাল খুবই নাজুক অবস্থা। আল্লাহর পানাহ! দুই অথবা তিন বছরের ছোট মেয়েদের সাথেও কুকর্ম করার খবর শুনা যায়।

সুশ্রী বালককে দেখার হুকুম

প্রশ্ন:- সুশ্রী বালককে দেখা জায়েয কি না?

উত্তর:- সুশ্রী বালকদের দেখা জায়েযও আবার নাজায়েযও। এর বিস্তারিত বর্ণনা করতে গিয়ে সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরিকা, হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ আমজাদ আলী আযমী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: “ছেলে যখন ‘মুরাহিক’ (অর্থাৎ দশ বছরের বয়সের পর বালিগের নিকটবর্তী) হয়ে যায় এবং সে যদি অতি সুন্দর আকৃতির না হয় তবে পুরুষের দিকে দৃষ্টি দেয়ার যে হুকুম তার প্রতি দৃষ্টি দেয়ারও সেই একই হুকুম। আর যদি খুবই সুদর্শণ হয় তবে মহিলার দিকে দৃষ্টি দেয়ার যে হুকুম তার দিকে দৃষ্টি দেয়ারও একই হুকুম। অর্থাৎ যৌন উত্তেজনা সহকারে তার দিকে দৃষ্টি দেয়া হারাম। আর যদি যৌন উত্তেজনা না আসে তবে তার দিকে দৃষ্টি দেয়া যাবে, ও তার সাথে একাকী অবস্থানও করা জায়েয। যৌন উত্তেজনা না আসা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, তার এ বিশ্বাস থাকে যে, দৃষ্টি দেয়ার দ্বারা যৌন উত্তেজনা আসবে না। আর যদি এ আশংকা থাকে, তবে কখনও দৃষ্টি দিবে না। চুম্বন করার ইচ্ছাও যৌন উত্তেজনার মধ্যে অন্তর্ভূক্ত।” (বাহারে শরীয়াত, ১৬তম অংশ, ৮৫ পৃষ্ঠা)

(বিস্তারিত জানার জন্য মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত রিসালা “লুত সম্প্রদায়ের ধ্বংসলীলা” অধ্যয়ন করুন)

(২) মহিলাদের জন্য মহিলাদের সতর

প্রশ্ন:- মহিলারা কি মহিলাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গ দেখতে পারবে?

উত্তর:- জ্বী, না। মহিলাদের জন্য মহিলার নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত দেখার অনুমতি নেই। যেমনিভাবে সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরিকা হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ আমজাদ আলী আযমী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: মহিলাদের জন্য মহিলাদেরকে দেখার সেই হুকুম, যা পুরুষের জন্য পুরুষের দিকে দেখার হুকুম। অর্থাৎ নাভীর নিচ থেকে হাঁটু পর্যন্ত দেখতে পারবেনা। অন্যান্য অঙ্গ সমূহ দেখতে পারবে। কিন্তু শর্ত হচ্ছে, যৌন উত্তেজনার আশংকা যেন না হয়। নেক্কার মহিলাদের উচিত যে, নিজেকে যেন পাপীষ্টা (অর্থাৎ যেনাকারীনী ও অশ্লীল) নারীদের দৃষ্টিপাত থেকে বাঁচিয়ে রাখে। অর্থাৎ তার সামনে ওড়না ইত্যাদি যেন না খুলে। কেননা, সে তাকে দেখে পুরুষদের সামনে তার আকৃতি ও অবস্থা সম্পর্কে বর্ণনা করবে। (বাহারে শরীয়াত, ১৬তম অংশ, ৮৬ পৃষ্ঠা)

(৩) মহিলাদের জন্য পর পুরুষকে দেখা

প্রশ্ন:- মহিলারা কি পর পুরুষকে দেখতে পারবে?

উত্তর:- না দেখাতেই মঙ্গল রয়েছে। অবশ্য দেখার বৈধ অবস্থাও রয়েছে। কিন্তু দেখার পূর্বে নিজের অন্তরের অবস্থার প্রতি খুব ভালভাবে ভেবে নিন। কেননা, এই দেখা যেন গুনাহের অতল গহবরে নিক্ষেপ না করে। ফোকাহায়ে কিরামগণ رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِمْ বৈধ অবস্থাদি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন: “মহিলাদের জন্য পর-পুরুষের দিকে দেখার সেই হুকুম, যা পুরুষ পুরুষের দিকে দেখার হুকুম আর এটা তখনই হবে যখন মহিলার দৃঢ় বিশ্বাস থাকে যে, তার দিকে দেখার দ্বারা যৌন উত্তেজনা সৃষ্টি হবে না। আর যদি এর আশংকা থাকে তবে কখনও দৃষ্টি দেবেন না।” (বাহারে শরীয়াত, ১৬তম অংশ, ৮৬ পৃষ্ঠা। আলমগিরী, ৫ম খন্ড, ৩২৭ পৃষ্ঠা)

কাফির ধাত্রী দ্বারা প্রসব করানো

প্রশ্ন:- এমন দেশ যেখানে কাফিরদের আধিক্যতা রয়েছে, সেখানে কাফির ধাত্রী দ্বারা প্রসব করাতে পারবে কিনা?

উত্তর:- করাতে পারবে না। যে মুসলমান এমন দেশে বসবাস করে তার পূর্ব থেকেই এমন হাসপাতাল খুঁজে রাখা উচিত, যেখানে মহিলা ডাক্তার, সেবিকা এবং মুসলমান ধাত্রী পাওয়া যায়। যদি বিশেষ প্রয়োজন হয় এবং মুসলমান ধাত্রীও পাওয়া সম্ভব না হয় এবং এছাড়া অন্য কোন উপায়ও না থাকে তবে অপারগ অবস্থায় কাফির ধাত্রী দ্বারা এ কাজ করিয়ে নিবে। সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরিকা হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ আমজাদ আলী আযমী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْه বলেন: “মুসলমান নারীদের জন্য এটা বৈধ নয় যে, সে কাফির নারীদের সামনে সতর খুলবে (মুসলমান নারীদের জন্য কাফির নারীদের সাথে সেই রকম পর্দার হুকুম রয়েছে, যেই রকম পর্দার হুকুম পর-পুরুষের সাথে রয়েছে, কাফির নারীদের সামনে মুসলমান নারীদের শরীরের সেই সমস্ত অঙ্গ সতর যা একজন পর-পুরুষের জন্য সতর) যে সমস্ত ঘরে কাফির নারীরা আসা-যাওয়া করে এবং ঘরের মহিলাগণ তাদের সামনে সেভাবে সতরের অঙ্গ সমূহ খুলে রাখে, যেভাবে মুসলমান নারীদের সামনে থাকে। তাদের এরূপ করা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। অধিকাংশ স্থানে ধাত্রীরা কাফির হয়ে থাকে এবং তারা বাচ্চা প্রসব করার কাজ সম্পন্ন করে থাকে। যদি মুসলমান ধাত্রী পাওয়া যায়, তবে কাফির ধাত্রী দ্বারা কখনও এ কাজ করাবেন না। কেননা, কাফিরদের সামনে সেই অঙ্গগুলো খোলার অনুমতি নেই।” (বাহারে শরীয়াত, ১৬তম অংশ, ৮৬ পৃষ্ঠা। আলমগিরী, ৫ম খন্ড, ৩২৭ পৃষ্ঠা)

(৪) পুরুষের জন্য মহিলার সতর

বর্তমান যুগে এর তিনটি অবস্থা

(ক) পুরুষের জন্য তার স্ত্রীকে দেখা,

(খ) পুরুষের জন্য তার মাহারিমকে দেখা,

(গ) পুরুষের জন্য পর নারীকে দেখা।

(ক) পুরুষের জন্য তার স্ত্রীকে দেখা

প্রশ্ন:- এমন কোন বিশেষ অঙ্গ কি রয়েছে যার দিকে স্বামী-স্ত্রীর দৃষ্টিপাত করা নিষিদ্ধ?

উত্তর:- না। শরীরের এমন কোন বিশেষ অঙ্গ নেই। সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরিকা হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ আমজাদ আলী আযমী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: “(স্বামী তার) স্ত্রীর পায়ের গোড়ালি থেকে চুলের অগ্রভাগ পর্যন্ত প্রতিটি অঙ্গের দিকে দৃষ্টিপাত করতে পারবে। উত্তেজনা হোক বা না হোক উভয় অবস্থায় দৃষ্টিপাত করতে পারবে। এমনিভাবে এ দু’প্রকারের মহিলাগণ (অর্থাৎ স্ত্রী এবং দাসী। তবে এখন দাসীর প্রচলন নেই) তাদের পুরুষের অঙ্গ সমূহের দিকে দৃষ্টিপাত করতে পারবে। তবে উত্তম এটাই যে عورت (উভয়েরই একে অপরের) বিশেষ স্থানে যেন দৃষ্টিপাত না করে। কেননা, এর দ্বারা স্মরণশক্তি হ্রাস পায় এবং দৃষ্টিতে দূর্বলতা সৃষ্টি হয়।” (বাহারে শরীয়াত, ১৬তম অংশ, ৮৬ পৃষ্ঠা, ৮৭ পৃষ্ঠা)

(খ) পুরুষের জন্য তার মাহারিমকে দেখা

প্রশ্ন:- পুরুষ তার মাহারিম, যেমন; মা, বোনের কোন কোন অঙ্গের প্রতি দৃষ্টিপাত করতে পারবে?

উত্তর:- মাহরামের শরীরের কিছু অঙ্গের প্রতি দৃষ্টিপাত করতে পারবে এবং কিছু অঙ্গের প্রতি দৃষ্টিপাত করতে পারবেনা। এর বিস্তারিত বর্ণনা করতে গিয়ে সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরিকা হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ আমজাদ আলী আযমী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: “যে সকল মহিলা তার মাহরামের অন্তর্ভূক্ত, তাদের মাথা, বুক, পায়ের গোড়ালী, উভয় বাহু, কব্জি, ঘাড় এবং পায়ের দিকে দৃষ্টিপাত করতে পারবে। যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের দু’জনের মধ্যে কারো যৌন উত্তেজনা (কামভাব) সৃষ্টি না হয়। মাহরামের পিঠ, পেট এবং রানের দিকে দৃষ্টিপাত করা নাজায়িয। এমনিভাবে পার্শ্ব ও হাঁটুর দিকেও দৃষ্টিপাত করা নাজায়িয। (এই হুকুম ঐ সময় পর্যন্ত যতক্ষণ এই অঙ্গসমূহে কোন কাপড় থাকবে না, আর যদি এই অঙ্গগুলো কোন মোটা কাপড় দ্বারা আবৃত থাকে তবে দেখাতে কোন সমস্যা নেই।) কান, ঘাঁড়, কাঁধ এবং চেহারার দিকে দৃষ্টিপাত করা জায়িয। মাহরাম দ্বারা ঐ মহিলাদের বুঝানো হয়, যাদের সাথে সব সময়ের জন্য বিবাহ হারাম।

আর এই হারাম হওয়াটা বংশগত কারণেই হোক বা অন্য কোন কারণে হোক। যেমন; দুধের সম্পর্ক বা শশুড়ালয়ের সম্পর্ক। যদি যেনা করার কারণে সম্পর্ক হারাম হয়, যেমন; (যেনাকারীনীর) মা, নানি, মায়ের নানি এভাবে উপরে যতটুকু যায় এবং (যেনাকারীনীর) কন্যা, নাতনী, কন্যার নাতনী এভাবে যত নিচে যায়, এসবের দিকেও (যেনাকারীর জন্য) দৃষ্টিপাত করার একই হুকুম।” ((বাহারে শরীয়াত, ১৬তম অংশ, ৮৭-৮৮ পৃষ্ঠা)

পুরুষের জন্য মায়ের পা টেপা

প্রশ্ন:- ইসলামী ভাইয়েরা যদি নিজের মায়ের হাত, পা চুম্বন করা বা টিপতে চায়, তবে কি এর অনুমতি আছে? নাকি নাই?

উত্তর:- দু’জনের মধ্যে কারোরই যৌন উত্তেজনা সৃষ্টি না হলে অবশ্যই অনুমতি রয়েছে, বরং ইসলামী ভাইদের জন্য এতে দু’জাহানের সৌভাগ্য বিদ্যমান। বর্ণিত আছে: “যে নিজের মায়ের পা চুম্বন করলো, তবে যেন সে জান্নাতের চৌকাটে চুম্বন করলো।” (দুররে মুখতার, ৯ম খন্ড, ৬০৬ পৃষ্ঠা) সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরিকা হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ আমজাদ আলী আযমীرَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: “মাহারিমের যে অঙ্গগুলোর দিকে দৃষ্টিপাত করতে পারবে, সেই অঙ্গগুলো স্পর্শও করতে পারবে। তবে দু’জনের মধ্যে কারো যেন যৌন উত্তেজনার আশংকা না থাকে, পুরুষ তার মায়ের পা টিপে দিতে পারবে, কিন্তু মায়ের রান (থাই) তখনই টিপতে পারবে যখন তা কাপড়ে আবৃত থাকবে, অর্থাৎ টিপতে পারবে তবে কাপড়ের উপর এবং সরাসরি স্পর্শ করা জায়িয নাই।” (বাহারে শরীয়াত, ১৬তম অংশ, ৮৮ পৃষ্ঠা)

(গ) পুরুষদের জন্য (স্বাধীন) পর নারীদের দেখা

প্রশ্ন:- পুরুষ পর-নারীর চেহারা দেখতে পারবে কি না?

উত্তর:- দেখবে না। অবশ্য প্রয়োজনে কিছু বাধ্য-বাধকতা সহ দেখতে পারবে। এর কয়েকটি পদ্ধতি বর্ণনা করা হচ্ছে; সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরিকা হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ আমজাদ আলী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: “পর-নারীর দিকে দেখার হুকুম হলো, প্রয়োজন বশতঃ তার চেহারা ও হাতের তালুর দিকে দেখা জায়েয। কেননা; এর প্রয়োজনে হয়ে থাকে, কখনও তার পক্ষে অথবা বিপক্ষে সাক্ষ্য দিতে হয় অথবা মীমাংসা করতে হয় যদি তখন তাকে না দেখে, তবে কিভাবে সাক্ষ্য দিবে যে, সে এমন করেছে। তার দিকে দেখারও এই শর্ত, যেন যৌন উত্তেজনার আশংকা না থাকে। আর এভাবেও প্রয়োজন হয় যে (আজকাল অলিগলি, বাজারে) অসংখ্য মহিলারা ঘরের বাইরে আসা-যাওয়া করে, তাই তাদের দিকে দৃষ্টিপাত করা থেকে বিরত থাকা কঠিন। কতিপয় উলামায়ে কিরামগণ رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِمْ পায়ের দিকে দৃষ্টিপাত করাকেও বৈধ বলেছেন।” (বাহারে শরীয়াত, ১৬তম অংশ, ৮৯ পৃষ্ঠা) মুফতি সাহেব আরো বলেন: “পর নারীর চেহারার দিকে দৃষ্টি দেয়া যদিও জায়েয, যখন যৌন উত্তেজনার আশংকা না থাকে। কিন্তু বর্তমান যুগ হচ্ছে ফিতনার যুগ। এই যুগে এমন লোক কোথায় পাবো যেমন লোক পূর্বের যুগে ছিলো। তাই এই যুগে মহিলাদের চেহারার দিকে দৃষ্টিপাত করাতে বারণ করা হবে। কিন্তু সাক্ষ্যদাতা ও বিচারকের জন্য প্রয়োজন বশতঃ তাদের দিকে দৃষ্টিপাত করা জায়েয।” (বাহারে শরীয়াত, ১৬তম অংশ, ৮৯-৯০ পৃষ্ঠা)

চেহারা দেখার অনুমতি সাপেক্ষ্যে কান ও ঘাঁড়ের দিকে দেখার মাসয়ালা

প্রশ্ন:- কান এবং ঘাঁড়েও কি চেহারার অন্তর্ভূক্ত, যে অবস্থায় পর-নারীর চেহারার দিকে দেখার অনুমতি রয়েছে, সে অবস্থায় কি কান ও ঘাঁড়ের দিকেও দৃষ্টি দিতে পারবে?

উত্তর:- “কান, ঘাঁড়, গলা চেহারার অন্তর্ভূক্ত নয়। এই অঙ্গগুলোর দিকে পর-পুরুষের দৃষ্টিপাত করা গুনাহ।” (বাহারে শরীয়াত, ১ম অংশ, ৪৮৩ পৃষ্ঠা)

বেপর্দা (বেহায়াপনা) থেকে তাওবা 

ইসলামী বোনেরা! আমলের প্রেরণা বৃদ্ধির জন্য মাদানী পরিবেশ জরুরী। নতুবা যদিওবা সাময়িক প্রেরণা সৃষ্টি হয়ও তবে সৎসঙ্গ না পাওয়ার কারণে স্থায়িত্ব অর্জিত হয়না। নিজের মাদানী মনমানসিকতা তৈরী করার জন্য তবলীগে কোরআন ও সুন্নাতের বিশ্বব্যাপী অরাজনৈতিক সংগঠন দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশের সাথে সম্পৃক্ত থাকুন। سُبْحٰنَ اللهِ عَزَّوَجَل দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশ, সুন্নাতে ভরা ইজতিমা সমূহ এবং মাদানী কাফেলার কি অপরূপ বাহার ও বরকত রয়েছে। দা’ওয়াতে ইসলামীর সুন্নাতে ভরা মাদানী পরিবেশে সম্পৃক্ত থাকার বরকতে অসংখ্য ইসলামী বোনের শরয়ী পর্দা করার সৌভাগ্য অর্জিত হয়েছে। এমনই একটি মাদানী বাহার শুনুন: পাঞ্জাবের একজন ইসলামী বোনের লিখিত বর্ণনার সারাংশ হচ্ছে: আমি দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার পূর্বে টিভিতে সিনেমা-নাটক দেখায় অভ্যস্থ ছিলাম। বাজার ইত্যাদিতে যাওয়ার জন্য বেপর্দা হয়েই বের হয়ে যেতাম। নামাযও আদায় করতাম না। এমনি ভাবে আমার সকাল-সন্ধ্যা উদাসীনতা ও গুনাহে অতিবাহিত হতো। একদা কেউ আমাকে মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত সুন্নাতে ভরা বয়ানের ক্যাসেট দিল। তা শুনার পর اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ عَزَّوَجَلّ আমি অলসতার নিদ্রা হতে জেগে উঠলাম। সেই বয়ানের বরকতে আমার খোদাভীরুতা নসীব হলো। নবী প্রেমের প্রেরণা জাগল এবং আমি নামাযী হয়ে গেলাম। আমি আমার সমস্ত গুনাহ বিশেষ করে বেপর্দার গুনাহ থেকে তাওবা করে নিলাম। اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ عَزَّوَجَلّ মাদানী বোরকা আমার পোশাকের অবিচ্ছেদ্দ্য অংশ হয়ে গেলো। সেই লাগামহীন মুখ, যা পূর্বে গান গুনগুন করাতে রত ছিলো, এখন اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ عَزَّوَجَلّ সে মুখে নাতে মুস্তফা صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم শুনাতে রত আছে। বর্ণনা লিখা অবস্থায় আমি দা’ওয়াতে ইসলামীর যেলী মুশাওয়ারাতের খাদিমা (নিগরান) হিসেবে সুন্নাতের খিদমত করার সৌভাগ্য অর্জন করছি।

কাটি হে গাফলাতোঁ মে যিন্দেগানী, না জানে হাশর মে কেয়া ফয়সালা হো।

ইলাহী! হোঁ বহুত কমজোর বন্দি, না দুনিয়া মে না উকবা মে সাজা হো।

صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد

ইসলামী বোনেরা! আপনারা দেখলেন তো! মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত সুন্নাতে ভরা বয়ানের ক্যাসেট শুনা ও শুনানো কতটুকু উপকারী।

اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ عَزَّوَجَلّ অসংখ্য ইসলামী ভাই ও ইসলামী বোন প্রতি দিন কমপক্ষে একটি সুন্নাতে ভরা বয়ান শুনার সৌভাগ্য অর্জন করে, আর যার সামর্থ্য রয়েছে সে বন্টনও করে। আপনিও প্রতি মাসে অথবা কমপক্ষে প্রত্যেক বছর রবিউন নূর শরীফে “রিসালা বন্টন” করার নিয়্যত করে নিন এবং সামর্থানুযায়ী এ বিশেষ দিনে সুন্নাতে ভরা ক্যাসেট এবং রিসালা ইত্যাদি বন্টন করুন। কেননা, এটাও সদকা আর আল্লাহর রাস্তায় সদকা ও খয়রাতের ফযীলতের কথা কি বলব! নবী করীম, রউফুর রহীম, হুযুর صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “মুসলমানদের সদকা করা, বয়স বৃদ্ধির কারণ এবং মন্দ মৃত্যুকে দূর করে এবং আল্লাহ্ তাআলা এটির (সদকায়) কারণে অহংকার ও গর্ব দূর করে দেন।” (আল মুজামুল কবির লিত তাবারানী, ১৭তম খন্ড, ২২ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৩১)

রহে হক মে সভি দৌলত লোটা দোঁ, খোদা! এয়্যসা মুঝে জযবা আতা হোঁ।

صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد

পর্দা সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর: বর-কনে একে অন্যকে দেখা

যাকে বিয়ে করবে তাকে দেখা

প্রশ্ন:- শুনেছি যেই মেয়েকে বিয়ে করবে তাকে নাকি পুরুষ দেখতে পারবে?

উত্তর:- আপনি ঠিকই শুনেছেন। উভয়েই একে অপরকে দেখতে পারবে। সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরিকা হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ আমজাদ আলী আযমী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: “(পুরুষ ও মহিলা একে অপরকে দেখার অনুমতি সমৃদ্ধ) আরও একটি ধরণ রয়েছে, আর তা হলো যদি ছেলে সেই মেয়েকে বিয়ে করার ইচ্ছা পোষণ করে, তবে এই নিয়্যতে সে ঐ মেয়েকে দেখতে পারবে। কেননা, হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে: “যার সাথে বিয়ে করবে, তাকে দেখে নাও। কেননা, এটা ভালবাসা দৃঢ়তার মাধ্যম।” (সুনানে তিরমিযী, ২য় খন্ড, ৩৪৬ পৃষ্ঠা, হাদীস: ১০৮৯)

তেমনিভাবে মহিলাও সেই পুরুষকে দেখতে পারবে, যে তার নিকট বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছে। যদিওবা যৌন উত্তেজনার আশংকা থাকে, কিন্তু দেখার মধ্যে উভয়ের এই নিয়্যতই থাকা উচিত যে, হাদীস শরীফের উপর আমল করছি।”  (বাহারে শরীয়াত, ১৬তম অংশ, ৯০ পৃষ্ঠা)

যদি দেখা সম্ভব না হয় তবে কি করা উচিৎ

প্রশ্ন:- যদি ছেলে মেয়ে একে অপরকে দেখা সম্ভব না হয়, তবে অন্য কোন পদ্ধতি রয়েছে কি?:

উত্তর:- এর পদ্ধতি বর্ণনা করতে গিয়ে সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরিকা হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ আমজাদ আলী আযমী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: “যেই মেয়েকে বিয়ে করতে ইচ্ছুক, যদি তাকে দেখা সম্ভব না হয়, যেমনিভাবে বর্তমান যুগে প্রচলিত রয়েছে যে, যদি কেউ বিয়ের প্রস্তাব দেয়, তবে কোনভাবেই ছেলেকে মেয়ের চেহারা দেখতে দেয় না (অর্থাৎ এমতাবস্থায় ছেলের সাথে এতোটা মজবুত পর্দা করা হয়, যা পর-পুরুষের সাথেও করা হয় না) এই অবস্থায় সেই ব্যক্তির উচিত যে, যেন অন্য কোন মহিলাকে পাঠিয়ে কনেকে দেখিয়ে নেয়া এবং সে এসে মেয়ের সম্পূর্ণ অবয়ব ও দৈহিক কাঠামো ইত্যাদি বর্ণনা করবে, যেন বরের কাছে তার দৈহিক অবস্থা ও আকৃতির ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা হয়ে যায়।” (বাহারে শরীয়াত, ১৬তম অংশ, ৯০ পৃষ্ঠা)

পুরুষের নিকট মহিলার চিকিৎসা করানো

প্রশ্ন:- পুরুষ ডাক্তার, মহিলা রোগীকে দেখতে ও স্পর্শ করতে পারবে কি না?

উত্তর:- যদি মহিলা ডাক্তার পাওয়া না যায় তবে অপারগ অবস্থায় অনুমতি রয়েছে। এ ব্যাপারে সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরিকা হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ আমজাদ আলী আযমী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: “পর নারীর দিকে দেখার প্রয়োজনীয় একটি অবস্থার মধ্যে এটাও যে, যদি মহিলা অসুস্থ হয়, তখন তার চিকিৎসার জন্য কতিপয় অঙ্গ সমূহের দিকে দেখার প্রয়োজন হয় বরং তাকে স্পর্শও করতে হয়। যেমন; নাড়ী পরীক্ষা করার জন্য হাত স্পর্শ করতে হয়, অথবা পেট ফুলে গেলে তখন চাপ দিয়ে দেখতে হয়, কিংবা কোন স্থানে ফোঁড়া হলে তা দেখতে হয়, বরং অনেক সময় চাপও দিতে হয়। এমতাবস্থায় রোগাক্রান্ত স্থানের দিকে দৃষ্টিপাত করা অথবা বর্ণিত প্রয়োজনানুসারে সেই স্থানকে স্পর্শ করাও জায়েয। এটা তখনই হবে যখন মহিলা ডাক্তার পাওয়া না যায়। তবে এরূপ করা উচিত যে, মহিলাদের চিকিৎসা শিখানো, যেন এমন অবস্থায় তারা কাজ করতে পারে। কেননা, তার দেখার দ্বারা এতোটা ক্ষতি হবে না, যা পুরুষের দেখা দ্বারা হবে। অধিকাংশ জায়গায় ধাত্রী থাকে যারা পেটের ফুলা দেখতে পারে, যেখানে ধাত্রী পাওয়া যায় সেখানে পুরুষের প্রয়োজন হয় না। চিকিৎসার প্রয়োজনে দেখার সময়ও এ সাবধানতা অবলম্বন করা অবশ্যক যে, শরীরের শুধুমাত্র ততটুকু অংশই খুলবে যতটুকু দেখার প্রয়োজন রয়েছে। অবশিষ্ট শরীরের অঙ্গ সমূহ ভালভাবে ঢেকে নিবে, যেন সেগুলোর প্রতি দৃষ্টি না পড়ে।” (বাহারে শরীয়াত, ১৬তম অংশ, ৯০-৯১ পৃষ্ঠা) যদি দেখার দ্বারা কাজ সমাধান হয়ে যায় তবে স্পর্শ করার শরয়ী অনুমতি নেই। স্মরণ রাখবেন! স্পর্শ করা দেখার চেয়েও কঠিনতর বিষয়।

কোমরের ব্যথা ও মাদানী কাফেলা

ইসলামী বোনেরা! দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাফেলা সমূহে যেমনিভাবে আখিরাতের সাওয়াব অর্জিত হয়, অনূরূপভাবে কখনও কখনও শারীরিক অসুস্থতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। মাদানী কাফেলার এমনই একজন মুসাফির ইসলামী বোনের মাদানী বাহার শুনুন: বাবুল মদীনা করাচীর একজন ইসলামী বোনের (বয়স প্রায় ৪৫ বছর) বর্ণনার সারাংশ: অধিকাংশ সময় আমি কোমরের ব্যথায় ভুগতাম, এমনকি আমি মাটিতে বসতে পারতাম না। যখন আমি ইসলামী বোনদের মাদানী কাফেলায় সফর করলাম, তখন আমার ব্যথা হওয়া তো দূরের কথা, সেটার অনুভবও হলো না। اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ عَزَّوَجَلّ আমি তিন দিনের মাদানী কাফেলার রুটিন অনুযায়ী কাটালাম। ফরয নামায ব্যতিত তাহাজ্জুদ, ইশরাক ও চাশতের নফল সমূহ আদায় করারও সৌভাগ্য অর্জিত হলো। মাদানী কাফেলার বরকত দেখে আমি নিয়্যত করে নিলাম যে, اِنْ شَاءَ الله عَزَّوَجَلّ আমার বড় মেয়েকেও মাদানী কাফেলায় সফর করাব।

আপ কো দরদে সর হো ইয়া হো দরদে কমর,   চলিয়ে হিম্মত করে কাফেলে মে চলো।

ফাইদাহ আখিরাত কে বানানে মে হে,   সারি বেহনে কহেঁ কাফেলে মে চলো।

صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد 

ইসলামী বোনেরা! মাদানী কাফেলার বরকতের কথা কি বলব! কোমরের ব্যথা এবং দুনিয়াবী কষ্ট তো অতি সামান্য বিষয়, আল্লাহ্ তাআলা চাইলে মাদানী কাফেলার বরকতে কবর ও আখিরাতের মুসীবতও দূর হয়ে যাবে। মাদানী কাফেলায় ইলমে দ্বীন অর্জিত হয়, ইবাদত করা হয় এবং প্রচুর পরিমাণে নেকী অর্জন করার সুযোগ হয়। اِنْ شَاءَ الله عَزَّوَجَلّ নেক কাজের প্রতিদানে চিরস্থায়ী ও চিরসুখী জান্নাত এবং অগণিত নেয়ামত অর্জিত হবে। আল্লাহ্ তাআলা আমাদের সবাইকে জান্নাতুল ফেরদৌসে প্রিয় নবী صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর প্রতিবেশীত্ব নসীব করুন। আমীন! জান্নাতের নেয়ামত ও মর্যাদা সম্পর্কিত একটি বর্ণনা শুনুন: তাজেদারে রিসালাত, নবীয়ে রহমত, শফীয়ে উম্মত, হুযুর صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “জান্নাতের এক চাবুক পরিমাণ জায়গা, দুনিয়া ও তার সকল বস্তু অপেক্ষা উত্তম।” (বুখারী, ২য় খন্ড, ৩৯২ পৃষ্ঠা, হাদীস ৩২৫০) প্রখ্যাত মুফাস্‌সীর, হাকীমুল উম্মত হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: “চাবুক দ্বারা উদ্দেশ্য জান্নাতের সামান্যতম জায়গা। বাস্তবেই জান্নাতের নেয়ামত চিরস্থায়ী। এই দুনিয়া ধ্বংসশীল এবং এর নেয়ামতও দুঃখ কষ্টে পরিপূর্ণ, আর জান্নাতের নেয়ামত খাঁটি, দুনিয়ার নেয়ামত তুচ্ছ, জান্নাতের নেয়ামত মর্যাদপূর্ণ, এজন্য সেখানকার (জান্নাতের সামান্যতম) স্থানের সাথে দুনিয়ার কোন তুলনাই চলে না।” (মিরআতুল মানাযিহ, ৭ম খন্ড, ৪৪৭ পৃষ্ঠা)

মহিলাদের কাপড়ের দিকে পুরুষের দৃষ্টি দেয়া

প্রশ্ন:- যদি কোন মহিলা মোটা কাপড়ের বোরকা দ্বারা তার সমস্ত শরীর ঢেকে নেয় তবে কি তার দিকে দৃষ্টিপাত করতে পারবে?

উত্তর:- তার দিকে দৃষ্টিপাত করাতে সমস্যা নেই। আর যদি সেই কাপড়ের উপর দৃষ্টিপাত করাতে যৌন উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, তবে দৃষ্টিপাত করতে পারবে না। কেননা, যখন যৌন উত্তেজনা সহকারে দৃষ্টিপাত করবে তখন অবশ্যই গুনাহগার হবে। এই মাসয়ালার বিস্তারিত “বাহারে শরীয়াতে”র মধ্যে কিছুটা এভাবে রয়েছে: “যদি কোন মহিলা এতো মোটা কাপড় পরিধান করে যে, শরীরের রং ইত্যাদি প্রকাশ পায় না, তবে এমতাবস্থায় তার দিকে দৃষ্টিপাত করা জায়েয। কেননা, এই দেখা মহিলাকে দেখার অন্তর্ভূক্ত নয়, বরং তার কাপড়কেই দেখা হলো। এটা তখনই হবে যখন তার কাপড় আটোসাঁটো (ছিপছিপে) না হয়। আর যদি আটোসাঁটো কাপড় পরিধান করে যাতে দেহের আকৃতি প্রকাশ পায় যেমন; আটোসাঁটো পায়জামা পরিধান করার দ্বারা যদি পায়ের গোড়ালি ও রানের (থাইয়ের) পুরোপুরি আকৃতি দেখা যায়, তবে তার দিকে দৃষ্টিপাত করা নাজায়েয। এমনিভাবে কিছু মহিলা অনেক পাতলা কাপড় পরিধান করে, যেমন; মসলিন জাতীয় অথবা জালি কিংবা মখমলের পাতলা ওড়না, যা দ্বারা চুল বা চুলের কালো রং বা ঘাঁড় অথবা কান দেখা যায়। আর অনেক মহিলারা এক প্রকার পাতলা কাপড় বা জালির কাপড় পরিধান করে যাদ্বারা পেট ও পিঠ স্পষ্টভাবে দেখা যায়। এমতাবস্থায়ও তাদের দিকে দৃষ্টিপাত করা হারাম, আর সেই মহিলার জন্য এরকম কাপড় পরিধান করাও নাজায়েয।” (বাহারে শরীয়াত, ১৬তম অংশ, ৯১ পৃষ্ঠা) (সতরের মাসয়ালার বিস্তারিত জানার জন্য মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত “বাহারে শরীয়াত” ১ম খন্ডের, ৩য় অংশের, ৪৭৮-৪৮৬ পৃষ্ঠা এবং ১৬তম অংশের ৮৫ -৯১ পৃষ্ঠা অধ্যয়ন করুন)

আঁচলের সুঁতা

প্রশ্ন:- উৎসাহের জন্য কোন ওলীয়া এর শরয়ী পর্দার ব্যাপারে ঘটনা শুনিয়ে দিন।

উত্তর:- শরয়ী পর্দাকারীনীদের কত অপরূপ শান! যেমনিভাবে; ‘আখবারুল আখইয়ার’ নামক কিতাবে বর্ণিত রয়েছে: “একদা মারাত্মক দুর্ভিক্ষ দেখা দিলো। লোকেরা অনেক দোয়া করা সত্বেও বৃষ্টি হচ্ছিলো না। হযরত সায়্যিদুনা বাবা নিজাম উদ্দিন আউলিয়া رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ তার আম্মাজানের কাপড়ের একটি সুঁতা হাতে নিয়ে আবেদন করলেন: ‘হে আল্লাহ্! এটা সেই মহিলার আঁচলের সুঁতা! যেই মহিলার উপর কখনও কোন পুরুষের দৃষ্টি পড়েনি। হে আমার মাওলা! এই সুঁতার ওসীলায় রহমতের বৃষ্টি বর্ষণ করো।’ তখনও দোয়া শেষ হয়নি ওদিকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে গেলো এবং রিমঝিম রিমঝিম বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো।” (আখবারুল আখইয়ার, ২৯৪ পৃষ্ঠা)

আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁদের সদকায় আমাদের ক্ষমা হোক। 

 اٰمِين بِجا  هِ  النَّبِىِّ الْاَمين صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم 

ইয়েহি মায়েঁ হে জিনকি গোদ মে ইসলাম পালতা থা,

হায়া সে উন কি ইনসান নূর কে সাঁচে মে ঢলতা থা।

سُبْحٰنَ اللهِ عَزَّوَجَل! বুযুর্গদের শরীরের সাথে সম্পর্কিত পোশাকের সুঁতার যখন এতো মর্যাদা যে, হাতে রাখার কারণে সেটার বরকত ও ওসীলায় দোয়া কবুল হয়ে যায়। তবে স্বয়ং তাঁদের মর্যাদাপূর্ণ দেহের বরকতের কি অবস্থা হবে!

صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد

ঘরের বাইরে বের হওয়ার সাবধানতা

প্রশ্ন:- ঘর থেকে বের হওয়ার সময় ইসলামী বোনদের কোন কোন বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা উচিত?

উত্তর:- শরীয়াতের অনুমতিতে ঘর থেকে বের হওয়ার সময় ইসলামী বোনেরা অনাকর্ষণীয় কাপড়ের ঢিলেঢালা মাদানী বোরকা পরিধান করে, হাতে ও পায়ে মৌজা পরিধান করবে। কিন্তু হাত ও পায়ের মৌজার কাপড় যেন এতো পাতলা না হয়, যার দ্বারা চামড়ার রং প্রকাশ পায়। আর যেসমস্ত জায়গায় পর-পুরুষের দৃষ্টি পড়ার সম্ভাবনা থাকে, সেখানে ঘোমটা (নেকাব) উঠাবে না, যেমন; নিজের অথবা অপরের ঘরের সিঁড়ি এবং গলি মহল্লা ইত্যাদি। নিচের দিক থেকেও এভাবে বোরকা উঠাবেন না যাতে রঙিন পোশাকের উপর পর-পুরুষের দৃষ্টি পড়ে। মনে রাখবেন! মহিলাদের মাথা থেকে পায়ের গোড়ালির নিচ পর্যন্ত শরীরের কোন অংশ যেমন; মাথার চুল অথবা বাহু, কব্জি, গলা কিংবা পেট বা পায়ের গোড়ালি ইত্যাদি পর-পুরুষের (অর্থাৎ যার সাথে বিবাহ সবসময়ের জন্য হারাম নয়) সামনে শরীয়াতের বিনা অনুমতিতে যেন প্রকাশ না হয় বরং যদি পোশাক পাতলা হয়, যার দ্বারা দেহের রং প্রকাশ পায় অথবা এরূপ আটোসাঁটো হয় যার দ্বারা অঙ্গের আকৃতি প্রকাশ পায় কিংবা ওড়না এতো পাতলা হয়, যার দ্বারা চুলের কালো রং প্রকাশ পায়, তবে এটাও বেপর্দা হওয়া।

আমার আক্বা আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, ওলীয়ে নেয়ামত, আযীমুল বারাকাত, আযীমুল মারতাবাত, পরওয়ানায়ে শময়ে রিসালাত, মুজাদ্দীদে দ্বীন ও মিল্লাত, হামিয়ে সুন্নাত, মাহিয়ে বিদআত, আলীমে শরীয়াত, পীরে তরিকত, বাইছে খাইর ও বারাকাত, হযরত আল্লামা মাওলানা আলহাজ্ব আল হাফিয আল ক্বারী শাহ্ ইমাম আহমদ রযা খাঁন رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: “যে পোশাকের বানানোর পদ্ধতি ও পরিধানের পদ্ধতি বর্তমানে মহিলাদের মধ্যে প্রচলিত রয়েছে, এমন পাতলা কাপড় যার দ্বারা শরীরের রং প্রকাশ পায় অথবা মাথার চুল বা গলা বা বাহু অথবা পেট কিংবা পায়ের গোড়ালীর কোন অংশ অনাবৃত থাকে, তবে তা মাহরাম ব্যতিত (যাদের সাথে বিয়ে সব সময়ের জন্য হারাম) অন্য যে কারো সামনে অকাট্য হারাম।” (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া অসংকলিত, ১০ম খন্ড, ১৯৬ পৃষ্ঠা। ফতোওয়ায়ে রযবীয়া সংকলিত, ২২তম খন্ড, ২১৭ পৃষ্ঠা)

কাদের সাথে পর্দা করতে হবে?

মহিলাদের জন্য কার কার সাথে পর্দা রয়েছে?

প্রশ্ন:- মহিলাদের জন্য কোন কোন পুরুষের সাথে পর্দা রয়েছে, আর কোন পুরুষের সাথে পর্দা নেই?

উত্তর:- মহিলাদের জন্য প্রত্যেক অচেনা বালিগ পুরুষের সাথে পর্দা রয়েছে। অচেনা বলতে; যে মাহরামের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত নয়। মাহরাম দ্বারা সে পুরুষগণ উদ্দেশ্য, যাদের সাথে সব সময়ের জন্য বিয়ে হারাম। চাই সে হারাম বংশগত হোক বা অন্য কোন কারণে হোক। যেমন; দুধের সম্পর্ক অথবা শশুড়ালী সম্পর্ক হোক।

মাহারিমের প্রকারভেদ

প্রশ্ন:- মাহরামের মধ্যে কোন কোন লোক অন্তর্ভূক্ত?

উত্তর:- মাহরামের মধ্যে তিন প্রকারের লোক অন্তর্ভূক্ত:

(১) বংশের কারণে যাদের সাথে সবসময়ের জন্য বিয়ে হারাম।

(২) দুধের সম্পর্কের কারণে যাদের সাথে বিয়ে হারাম।

(৩) ‘মুসাহারাত’ অর্থাৎ শশুড়ালী সম্পর্কের কারণে যাদের সাথে বিয়ে হারাম। যেমন; শশুড়ের জন্য তার পুত্রবধু অথবা শাশুড়ীর জন্য তার মেয়ের জামাই। ‘মুসাহারাত’কে এভাবে বুঝে নেয়া যায়, মেয়ে যেই ছেলের সাথে বিয়ে করে, সেই ছেলের উসুল (মূল) ও ফুরু (শাখা)। উসুল দ্বারা উদ্দেশ্য পিতা, দাদা, পিতার দাদা এভাবে উপরস্থ পর্যন্ত, আর ফুরু দ্বারা উদ্দেশ্য সন্তানের সন্তান এভাবে নিম্ন পর্যায় পর্যন্ত) তার জন্য সব সময়ের জন্য হারাম হয়ে যায়। অনূরূপভাবে স্বামীর জন্য তার স্ত্রীর উসুল (মূল) ও ফুরুর (শাখার) সাথেও বিয়ে সব সময়ের জন্য হারাম। এছাড়া যিনা এবং যিনার দিকে আহ্বানকারী কর্ম (যেমন; উত্তেজনা সহকারে শরীরকে আবরণ ব্যতিত স্পর্শ করা বা চুম্বন করার) মাধ্যমেও পুরুষ ও মহিলার জন্যও এই বিধান কার্যকর হবে। অর্থাৎ ‘মুসাহারাতে’র হারাম কর্মের বিধান কার্যকর হবে। বংশগত মাহরাম ব্যতিত উভয় প্রকারের মাহরামের সাথে পর্দা ওয়াজিব নয় এবং নিষেধাজ্ঞা নেই। বিশেষ করে যখন মেয়ে যুবতী হয়ে যায় বা ফিতনার আশংকা থাকে তবে পর্দা করবে। 

দুধের সম্পর্কের লোকদের থেকে পর্দা করা উচিৎ

আমার আক্বা আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, মুজাদ্দীদে দ্বীন ও মিল্লাত, মাওলানা শাহ্ ইমাম আহমদ রযা খাঁন رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: “যার সাথে সবসময়ের জন্য বিয়ে হারাম তার সাথে কখনও বিয়ে হালাল হতে পারে না। কিন্তু হারাম হওয়ার কারণ (অর্থাৎ বিয়ে হারাম হওয়ার কারণে) রক্তের সম্পর্ক নয় বরং দুধের সম্পর্ক যেমন; দুধের সম্পর্কের বাবা, দাদা, নানা, ভাই, ভাতিজা, ভাগ্নে, চাচা, মামা, ছেলে, নাতি, নাতনি অথবা শশুড়ালী সম্পর্ক যেমন; শশুড়, শাশুড়ী, মেয়ের জামাই, পুত্রবধু তাদের সবার সাথেও পর্দা ওয়াজিব নয়, অর্থাৎ তার সাথে পর্দা করা না করা উভয়টি জায়েয। আর কিশোরী অবস্থায় বা ফিতনার আশংকা থাকাবস্থায় পর্দা করাই উত্তম। বিশেষ করে দুধের সম্পর্কের সাথে। কেননা, লোকদের নজরে তাদের মর্যাদা অনেক কম হয়ে থাকে।” (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ২২তম খন্ড, ২৩৫ পৃষ্ঠা)

বংশীয় মাহরামের মধ্যে কে কে অন্তর্ভূক্ত?

প্রশ্ন:- বংশীয় মাহরামের মধ্যে কোন কোন ব্যক্তি অন্তর্ভূক্ত?

উত্তর:- বংশীয় মাহরামের মধ্যে চার প্রকারের লোক অন্তর্ভূক্ত;

(১) আপন সন্তানাদী (অর্থাৎ ছেলে মেয়ে) এবং নিজের ছেলের ছেলে (অর্থাৎ নাতি-নাতনি) এমনিভাবে নিম্নপর্যায় পর্যন্ত,

(২) নিজের মা-বাবা এবং নিজের মা-বাবার পিতা-মাতা (অর্থাৎ দাদা-দাদী, নানা-নানি) উঁচ্চ পর্যায় পর্যন্ত, 

(৩) নিজের মা-বাবার সন্তানাদি (অর্থাৎ ভাই-বোন চাই তারা আপন ভাই-বোন হোক বা সৎ ভাই-বোন অর্থাৎ বৈপিত্রিয় অথবা বৈমাত্রিয় ভাই-বোন) এবং এমনিভাবে মা-বাবার সন্তানের সন্তানাদী (অর্থাৎ ভাতিজা-ভাতিজী, ভাগ্নে-ভাগ্নী তার আপন ভাই বোনের হোক বা সৎ ভাই বোনের) এভাবে নিম্ন পর্যায় পর্যন্ত। 

(৪) আপন দাদা-দাদী, নানানানীর সন্তানাদী (অর্থাৎ চাচা, ফুফী, মামা, খালা এই সম্পর্ক আপন হোক বা সৎ) তবে চাচা, ফুফী, মামা, খালার সন্তানেরা মাহরাম নয়।” (অপ্রকাশিত ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ১১তম খন্ড, ৪৬৪ পৃষ্ঠা)

বিঃ দ্রঃ- বর্ণনাকৃত বংশ বহির্ভূত মাহরামের মধ্যে পুরুষ মহিলাদের জন্য এবং মহিলারা পুরুষের জন্য হারাম।

কতিপয় শশুড় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে থাকে

প্রশ্ন:- শশুড়ের সাথে বউয়ের কি পর্দা রয়েছে?

উত্তর:- শশুড়ালী সম্পর্কের কারণে পর্দা নাই। তবে পর্দা করলে সমস্যা নাই। বরং যৌবনাবস্থায় বা ফিতনার সম্ভাবনা থাকলে অর্থাৎ বর্তমান যুগে পর্দা করাই উত্তম। কেননা, অবস্থা বড়ই শোচনীয়, শশুড় ও বউয়ের “বিভিন্ন” সমস্যার কথা আজকাল শুনা যায়। যা সাধারণত একতরফা ভাবে অর্থাৎ শশুড়ের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। অনেক সময় শশুড় একা সুযোগ পেয়ে বউয়ের গায়ে হাত দেয়ার চেষ্টা করে। এজন্য বর্তমান যুগে বউয়েরও শশুড়ের সামনে বেপরোয়া থাকা উচিত নয়। বিশেষকরে বউদের জন্য ঐ শশুড় সবচেয়ে বেশি বিপদজনক হতে পারে, যারা তার স্ত্রীর (শাশুড়ীর) সঙ্গ হতে দূরে বা বঞ্চিত। (দয়া করে! বাহারে শরীয়াত ৭ম অধ্যায় থেকে মাহরামের বর্ণনার অংশটি পাঠ করুন।)

দেবর ভাবীর পর্দা

প্রশ্ন:- ইসলামী বোনের জন্য কি তার দেবর, ভাসুর, বোনের স্বামী, খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো ভাই, ফুফা এবং খালুর সাথেও পর্দা রয়েছে?

উত্তর:- জ্বী, হ্যাঁ! বরং এদের সাথে তো পর্দা বিষয়ে সাবধানতা আরও বেশি হওয়া উচিত। কেননা, পরিচিত থাকার কারণে পরস্পর সংকোচভাব কমে যায়, আর একারণেই অচেনা লোকদের তুলনায় অনেক গুন বেশি ফিতনার আশংকা থাকে। কিন্তু আফসোস! আজকাল তাদের সাথে পর্দা করার মনমানসিকতা একেবারেই নেই, যদি কোন মদীনার দিওয়ানি (মহিলা) পর্দা করার চেষ্টা করেও তবে তাকে বিভিন্ন ভাবে কষ্ট দেয়া হয়। কিন্তু সাহস হারানো উচিত নয়, কষ্টসাধ্য হলেও যদি সে সৌভাগ্যবান ইসলামী বোন শরয়ী পর্দা করার মধ্যে সফল হয়ে যায়। আর যখন সে দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে তখন হতে পারে প্রিয় মুস্তফা صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم! এর শাহ্জাদী সায়্যিদাতুন নিসা, ফাতেমাতুয যাহরা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا তাকে শান ও শওকত সহকারে সংবর্ধনা জানাবেন, তাকে নিজের গলায় জড়িয়ে নিবেন এবং তাকে আমাদের প্রিয় আক্বা صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم! এর দরবারে পৌঁছিয়ে দিবেন।

কিউ করে বযমে শবস্থানে জিঁনা কি খোয়াহিশ,

জলওয়া য়ে ইয়ার জু শমএ শবে তনহায়ী হো। (যওকে নাত)

দেবর, ভাসুর, বোনের স্বামী, খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো ভাই, ফুফা এবং খালুর সাথে পর্দার তাগিদ দিতে গিয়ে আমার আক্বা আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, মুজাদ্দীদে দ্বীন ও মিল্লাত, মাওলানা শাহ্ ইমাম আহমদ রযা খাঁন رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: “ভাসুর, দেবর, বোনের স্বামী, ফুফা, খালু, চাচাতো, মামাতো, ফুফাতো, খালাতো ভাই এ সমস্ত লোক মহিলাদের জন্য পর-পুরুষ বরং তাদের দ্বারা ক্ষতি অন্যান্য পুরুষের তুলনায় অধিক হয়ে থাকে। কেননা, বাহিরের লোক ঘরে প্রবেশ করতে দ্বিধাবোধ করে কিন্তু বর্ণিত আত্মিয়রা পরস্পর পূর্ব পরিচিত হওয়ার কারণে নির্ভয় থাকে। মহিলাগণ অপরিচিত লোকদের সাথে খুব তাড়াতাড়ি সংকোচ কাটিয়ে উঠতে পারে না, কিন্তু বর্ণিত পুরুষদের সাথে সংকোচ ভাব আগে থেকেই কেটে যায়। এজন্য যখন রাসূলুল্লাহ্ صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم! পর নারীদের সামনে যেতে বারণ করেছেন, তখন এক সাহাবী আরয করলেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ্ صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم! ভাসুর, দেবরের জন্য কি হুকুম? ইরশাদ করলেন: ভাসুর, দেবর তো মৃত্যুর সমতুল্য।” (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ২২তম খন্ড, ২১৭ পৃষ্ঠা)

শশুড় বাড়ীতে কিভাবে পর্দা করবে?

প্রশ্ন:- শশুড় বাড়ীতে দেবর, ভাসুর ইত্যাদির সাথে কিভাবে পর্দা করা যায়? সারাদিন পর্দার মধ্যে থাকা খুব কঠিন, পরিবারের কাজ কর্ম করার সময় কিভাবে চেহারাকে গোপন করা যায়?

উত্তর:- ঘরে থাকাবস্থায়ও বিশেষ করে দেবর ও ভাসুর ইত্যাদির ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। “সহীহ বুখারী” শরীফে হযরত সায়্যিদুনা উকবা বিন আমের رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বর্ণিত; রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, রাসুলে আকরাম, হুযুর صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم! ইরশাদ করেন: “মহিলাদের নিকট যাওয়া থেকে বিরত থাকো।” এক ব্যক্তি আরয করল: ইয়া রাসূলাল্লাহ্ صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم! দেবরের ব্যাপারে কি হুকুম। ইরশাদ করলেন: “দেবর মৃত্যুর সমতুল্য।” (বুখারী, ৩য় খন্ড, ৪৭২ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৫২৩২)

দেবরের জন্য নিজের ভাবীর সামনে যাওয়া যেন মৃত্যুর সম্মুখীন হওয়া। কেননা, এই পর্যায়ে ফিতনার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। মুফতীয়ে আযম পাকিস্তান হযরত ওয়াকারে মিল্লাত মাওলানা ওয়াকার উদ্দিন رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: “না-মাহরাম আত্মীয়ের সাথে চেহারা, হাতের তালু, কব্জি, পা এবং গোড়ালি ব্যতিত বাকী সব অঙ্গ পর্দা করা আবশ্যক। সৌন্দর্যতা ও সাজ-সজ্জাও যেন তাদের সামনে প্রকাশ করা না হয়।” (ওয়াকারুল ফতোয়া, ৩য় খন্ড, ১৫১ পৃষ্ঠা)

বর্ণিত আছে; “যে ব্যক্তি যৌন উত্তেজনা সহকারে কোন পরনারীর সৌন্দর্য ও মাধুর্যতার দিকে দেখবে, কিয়ামতের দিন তার চোখে আগুনের গলিত শিশা ঢেলে দেয়া হবে।” (হিদায়া, ৪র্থ খন্ড, ৩৬৮ পৃষ্ঠা)

নিঃসন্দেহে ভাবীও পর-নারীর অন্তর্ভূক্ত। যে দেবর বা ভাসুর নিজের ভাবীকে ইচ্ছাকৃত ভাবে যৌন উত্তেজনা সহকারে দেখে, নিঃসংকোচ ভাবে মেলামেশা করে, হাসি-ঠাট্টা করে, তারা যেন আপন প্রতিপালকের কঠিন শাস্তিকে ভয় করে, দেরী না করে সত্যিকার তাওবা করে নেয়। ভাবী যদি দেবরকে ছোট ভাই আর ভাসুরকে বড় ভাই বলে, তবুও তা দ্বারা বেপর্দা এবং নিঃসংকোচতা জায়েয হবে না, বরং এমন কথাবার্তার ধরণও দূরত্বকে দূর করে নৈকট্য বাড়িয়ে দেয় এবং দেবর ও ভাবী কুদৃষ্টি, নিঃসংকোচতা, হাসি-ঠাট্টা ইত্যাদি গুনাহের সাগরে আরও অধিক পরিমাণে ডুবিয়ে দেয়। অথচ ভাসুর ও দেবর এবং ভাবী পরস্পরের মধ্যে কথাবার্তা বলাতেও একাধারে ভয়ের ঘন্টা বাজাতে থাকে। আল্লাহ্ তাআলার দয়ায় আমার কথা সবার অন্তরে গেঁথে যাক। দেবর ও ভাসুর এবং ভাবী ইত্যাদি সাবধান হোন। কেননা, হাদীস শরীফের ইরশাদ হয়েছে:  اَلْعَيْنَانِ تَزْنِيَان” ” অর্থাৎ চোখও যিনা করে।” (মুসনদে ইমাম আহমদ, ৩য় খন্ড, ৩০৫ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৮৮৫২)

যাই হোক যদি একই পরিবারে থাকাবস্থায় মহিলাদের জন্য কাছের না-মাহরাম আত্মীয়ের সাথে পর্দা করা কঠিন হয়, তবে চেহারা খোলার অনুমতি তো রয়েছে। কিন্তু কাপড় যেন এতো পাতলা না হয়, যার দ্বারা শরীর অথবা মাথার চুল ইত্যাদির রং প্রকাশ পায় অথবা এমন আটোসাঁটো না হয় যাতে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, শরীরের আকৃতি, গঠন এবং বুকের উত্থান ইত্যাদি প্রকাশ পায়। 

পর্দানশীন মহিলার জন্য কঠিন পরীক্ষা

প্রশ্ন:- আজকাল পর্দানশীন মহিলাকে “হুযুরনী” বলে ঘরে হাসি-ঠাট্টা করা হয়ে থাকে। কখনো মহিলাদের কোন অনুষ্ঠানে মাদানী বোরকা পরিহিতা ইসলামী বোন যদি চলে যায়, তবে কেউ কেউ বলে থাকে; আরে! এটা কি পরিদান করেছো? খুলে ফেল এটা। আবার কেউ বলে; হয়েছে! আমরা জানি যে তুমি অনেক পর্দানশীন হয়েছো, এখন ছাড়তো এসব পর্দা-টর্দা। কেউ বলে; দুনিয়া উন্নতি করছে আর তুমি সেই পুরোনো ভাব ধরে রেখেছো ইত্যাদি। এরকম মনে কষ্ট দানকারী কথা দ্বারা শরয়ী পর্দানশীন মহিলার মন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। এ অবস্থায় তার কি করা উচিত?

উত্তর:- আসলেই এটা খুবই নাজুক সময়। শরয়ী পর্দানশীন ইসলামী বোন অনেক কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে, কিন্তু সাহস না হারানো উচিত। হাসি-ঠাট্টা অথবা আপত্তিকারীদের সাথে তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হওয়া বা রাগান্বিত হয়ে ঝগড়া করা মারাত্মক ক্ষতিকর যে, এরূপ ব্যবহারে সমস্যা সমাধান হওয়ার পরিবর্তে অধিক বিগড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমতাবস্থায় এটা মনে করে মনকে শান্তনা দেয়া উচিত যে, যতক্ষণ পর্যন্ত প্রিয় আক্বা, মাদানী মুস্তফা صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم নবুয়তের প্রকাশ করেননি ততক্ষণ পর্যন্ত পথহারা কাফিরগণ তাঁকে সম্মানের দৃষ্টিতে দেখতো এবং তাঁকে আমিন এবং সাদিক উপাধী দ্বারা স্মরণ করতো। হুযুর صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ! যখন প্রকাশ্যে ইসলামের ঘোষণা দেয়া শুরু করলেন, তখনই কাফির ও মুশরিকরা বিভিন্ন ভাবে কষ্ট, হাসি-ঠাট্টা এবং গালিগালাজ করতে লাগলো, শুধু এতটুকু নয় বরং প্রাণ নাশের চেষ্টায়ও লিপ্ত হয়ে যায়। কিন্তু কুরবান হয়ে যান! হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ! এর উপর, তিনি কখনো সাহস হারাননি, সব সময় ধৈর্য সহকারেই কাজ করেছেন। এখন ইসলামী বোনেরা ধৈর্য ধারণ করে একটু চিন্তা করুন যে যতক্ষণ পর্যন্ত আমি ফ্যাশনকারীনী বেপর্দা নারী ছিলাম আমাকে কেউ হাসি-ঠাট্টা করতো না। আর যখনই আমি শরয়ী পর্দা করা শুরু করলাম, তখনই আমাকে কষ্ট দেয়া শুরু করলো। আল্লাহ্ তাআলার কৃতজ্ঞতা যে, আমার দ্বারা অত্যাচারের উপর ধৈর্য ধারণ করার সুন্নাত আদায় হচ্ছে। মাদানী আরয হলো যে, যেমনই আঘাত আসুক ধৈর্যহারা হবেন না, আর শরয়ী অনুমতি ছাড়া মুখে কিছু বলবেন না। হাদীসে কুদসীতে বর্ণিত রয়েছে; আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন: “হে আদম সন্তান! যদি তুমি প্রথম আঘাতে ধৈর্য ধারণ করো আর সাওয়াবের প্রত্যাশী হও, তবে আমি তোমার জন্য জান্নাত ছাড়া কোন প্রতিদানে সন্তুষ্ট নই।” (সুনানে ইবনে মাজাহ্, ২য় খন্ড, ২৬৬ পৃষ্ঠা, হাদীস: ১৫৯৭)

আছিয়া رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا এর বেদনাদায়ক পরীক্ষা

প্রশ্ন:- যেই ইসলামী বোনকে শরয়ী পর্দা ও সুন্নাতের উপর আমল ইত্যাদির কারণে সমাজে তুচ্ছ মনে করা হয় এবং বংশের লোকেরাও তাকে নিপীড়ন করে, সেই ইসলামী বোনের উৎসাহের জন্য কোন বেদনাদায়ক কাহিনী বর্ণনা করুন।

উত্তর:- যেই ইসলামী বোনকে পর্দা করার কারণে পরিবার ও বংশের পক্ষ থেকে কষ্ট দেয়া হয়, তার জন্য হযরত সায়্যিদাতুনা আছিয়া رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا এর ঘটনায় যথেষ্ট শিক্ষা রয়েছে। যেমনিভাবে, হযরত সায়্যিদাতুনা আছিয়া رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا ফিরআউনের স্ত্রী ছিলেন। যাদুকরদের পরাজিত হওয়া এবং ঈমান গ্রহণ করাতে তিনিও হযরত সায়্যিদুনা মুসা কলিমুল্লাহ্ لٰی نَبِیِّنَاوَعَلَیْہِ الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام এর প্রতি ঈমান আনয়ন করেন। যখন ফিরআউন এ ব্যাপারে জেনে গেলো তখন সে তাঁকে বিভিন্ন ধরণের শাস্তি দেয়া শুরু করলো। কোন ভাবে যেন তিনি رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا ঈমান থেকে বিচ্যুত হন, কিন্তু তিনি নিজের ঈমানের উপর অটল রইলেন। অবশেষে ফিরআউন তাঁকে প্রচন্ড রোদে কাঁঠের চৌকির উপর শোয়াইয়ে উভয় হাত ও পায়ে লোহার পেরেক ঢুকিয়ে দিলো। অত্যাচারের মাত্রা এতই ভয়াবহ ছিলো যে, পবিত্র বুকের উপর আটা পেষার চাক্কি রেখে দিলো যেন নড়তে না পারে। এই কঠিনতর ও অসাধ্য কষ্টের পরও তার অবিচলতা একটুও এদিক সেদিক হয়নি। অসহ্য হয়ে আপন ক্ষমাশীল প্রতিপালকের দরবারে আরয করলেন: 

رَبِّ ابْنِ لِي عِندَكَ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ وَنَجِّنِي مِن فِرْعَوْنَ وَعَمَلِهِ وَنَجِّنِي مِنَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: হে আমার প্রতিপালক! আমার জন্য তোমার নিকট জান্নাতে ঘর তৈরী করো এবং আমাকে ফিরআউন ও তার কর্ম থেকে মুক্তি দাও আর আমাকে যালিম লোকদের থেকে মুক্তি দান করো। (পারা: ২৮, সূরা: তাহরীম, আয়াত: ১১)

প্রখ্যাত মুফাস্‌সীর, হাকীমুল উম্মত হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খান رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: আল্লাহ্ তাআলা তাঁর অর্থাৎ হযরত সায়্যিদাতুনা আছিয়ার رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا উপর ফিরিশতা নিযুক্ত করে দেন, যারা তাঁর উপর ছায়া প্রদান করলেন এবং তার জান্নাতী ঘর তাঁকে দেখিয়ে দিলেন। যার কারণে তিনি সমস্ত কষ্টকে ভুলে গেলেন। কতিপয় বর্ণনায় এসেছে যে, তাঁকে স্ব-শরীরে আসমানে উঠানো হয়। হযরত সায়্যিদাতুনা আছিয়া رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا জান্নাতে আমাদের প্রিয় নবী صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর বিবাহ বন্ধনে থাকবেন। (নূরুল ইরফান, ৮৯৬ পৃষ্ঠা)

আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁর সদকায় আমাদের (বিনা হিসেবে) ক্ষমা হোক।

اٰمِين بِجا  هِ  النَّبِىِّ الْاَمين صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم 

মরহুমা আম্মাজান মাদানী কাজ করার অনুমতি নিয়ে দিলেন

ইসলামী বোনেরা! বিপদাপদে ধৈর্য ধারণকারীদের উপর আজও আল্লাহ্ তাআলার দয়ার বহিঃপ্রকাশ হয়ে থাকে। এক ইসলামী বোনের লিখিত বর্ণনা নিজের মতো বর্ণনা করার চেষ্টা করছি; কোট আত্তারী (কোটরী, বাবুল ইসলাম সিন্ধু) এর এক ইসলামী বোনের বর্ণনা যে; اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ عَزَّوَجَلّ আমি দা’ওয়াতে ইসলামীকে ভালবাসি, তাই আমি একান্তভাবে দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাজ করতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু আমার সন্তানের বাবা অনুমতি দিতেন না। তারপরও আমি শরীয়াতের গন্ডির মধ্যে নিজের সামর্থানুযায়ী মাদানী কাজ করতাম। আমার সৌভাগ্য যে, ১৪৩০ হিজরীর পবিত্র সফর মাসে আমাদের এলাকার একটি ঘরে দা’ওয়াতে ইসলামীর ইসলামী বোনদের মাদানী কাফেলা আগমন করে। রুটিন অনুযায়ী দ্বিতীয় দিন অনুষ্ঠিতব্য তরবিয়্যতি ইজতিমায় আমারও অংশগ্রহণ করার সৌভাগ্য অর্জিত হলো। আমি সেখানে এই দোয়া করলাম যে, “হে আল্লাহ্! এই মাদানী কাফেলার বরকতে যেন আমার সন্তানের বাবা আমাকে দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাজ করার অনুমতি দিয়ে দেন।” 

اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ عَزَّوَجَلّ সেই রাতেই আমার সন্তানের বাবা স্বপ্নে আমার মরহুমা আম্মাজান (অর্থাৎ তার শাশুড়ী যিনি তাকে সন্তানের দৃষ্টিতে দেখতেন) এর যিয়ারত হলো। মরহুমা বললেন: “তুমি আমার মেয়েকে দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাজ করতে দিচ্ছনা কেন? তাকে তা করার অনুমতি দিয়ে দাও।” আমার সন্তানের বাবা আমাকে এই স্বপ্নের কথা শুনিয়ে খুশি মনে দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাজ করার অনুমতি দিয়ে দিলেন। এমনিভাবে ইসলামী বোনদের মাদানী কাফেলার বরকতে আমার মনের আশা পূরণ হলো।

কাফিলে মে যরা মাঙ্গো আ’কর দোয়া পাওগে নেমতে কাফিলে মেঁ চলো।

হোগা লুত্বফে খোদা আও বেহনো দোয়া মিলকে সারে করে কাফিলে মেঁ চলো।

صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد 

মাদানী কাজের উৎসাহ মারহাবা

ইসলামী বোনেরা! আপনারা দেখলেন তো! মাদানী কাফেলারও কিরূপ চমৎকার বাহার। اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ عَزَّوَجَلّ সেখানে দোয়া কবুল হয় মাদানী কাজের মাধ্যমে নেকীর দাওয়াত প্রসার করার উৎসাহ মারহাবা। কেননা, এতে সাওয়াবই সাওয়াব রয়েছে। এ ব্যাপারে ৪টি হাদীস শরীফ উপস্থাপন করছি;

প্রিয় মুস্তফা এর ৪টি বাণী

(১) “নেকীর পথ প্রদর্শনকারী নেক কর্মসম্পাদনকারীর ন্যায়।” (তিরমিযী, ৪র্থ খন্ড, ৩০৫ পৃষ্ঠা, হাদীস: ২৬৭৯)

(২) “যদি আল্লাহ্ তাআলা তোমাদের মাধ্যমে কোন ব্যক্তিকে হিদায়ত দান করেন, তবে তা তোমাদের জন্য তোমাদের নিকট লাল উট থাকার চেয়েও উত্তম।” (মুসলিম, ১৩১১ পৃষ্ঠা, হাদীস: ২৪০৬)

(৩) “নিশ্চয় আল্লাহ্ তাআলা, তাঁর ফিরিশতা, আসমান ও জমিনের সৃষ্ট জীব এমনকি পিঁপড়া তার গর্তের মধ্যে এবং মাছ সমূহ পানির মধ্যে লোকদেরকে নেকীর কাজ শিক্ষা দানকারীর উপর দরূদ প্রেরণ করে।” (তিরমিযী, ৪র্থ খন্ড, ৩১৪ পৃষ্ঠা, হাদীস: ২৬৯৪) 

প্রখ্যাত মুফাস্‌সীর, হাকীমুল উম্মত মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: “আল্লাহ্ তাআলার দরূদ দ্বারা তাঁর বিশেষ রহমত ও সৃষ্ট জীবের দরূদ দ্বারা বিশেষ রহমতের দোয়া উদ্দেশ্য।” (মিরআতুল মানাজিহ্, ১ম খন্ড, ২০০ পৃষ্ঠা)

(৪) “উত্তম সদকা হলো, মুসলমান ব্যক্তি জ্ঞান অর্জন করবে আর তা অপর মুসলমান ভাইকে শিক্ষা দেবে।” (সুনানে ইবনে মাযাহ, ১ম খন্ড, ১৫৮ পৃষ্ঠা, হাদীস: ২৪৩)

ঘরের মধ্যে পর্দার মন-মানসিকতা কিভাবে হবে?

প্রশ্ন:- ঘরের মধ্যে পর্দার মন-মানসিকতা কিভাবে বানানো যায়?

উত্তর:- “ফযয়ানে সুন্নাত” এবং এই কিতাব “পর্দা সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর” থেকে ঘর দরস চালু করে, মাকতাবাতুল মদীনা থেকে প্রকাশিত সুন্নাতে ভরা বয়ানের ক্যাসেট শুনিয়ে, ইনফিরাদী কৌশিশের মাধ্যমে ঘরের পুরুষদেরকে দা’ওয়াতে ইসলামীর সুন্নাত প্রশিক্ষণের মাদানী কাফেলার মুসাফির বানিয়ে ঘরে মাদানী পরিবেশ তৈরী করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখুন। এর জন্য একাগ্রতার সাথে দোয়াও করতে থাকুন। নিজেকে এবং পরিবারের লোকদেরকে গুনাহ থেকে বাঁচানোর ব্যাকুলতা তৈরী করুন এবং তার জন্য প্রচেষ্টাও অব্যাহত রাখুন। কিন্তু নম্রতা, নম্রতা এবং নম্রতাকে আবশ্যক করে নিন। শরীয়াতের বিনা অনুমতিতে কঠোরতা করা তো দুরের কথা তা কল্পনাও করবেন না। কেননা, সাধারণত যে কাজ নম্রতা সহকারে হয় তা কঠোরতা দ্বারা হয় না।

হে ফালাহ ও কামরানি নরমি ও আসানি মেঁ,

হার বানা কাম বিগাড় জাতা হে নাদানি মেঁ।

যাই হোক! নিজের পরিবার পরিজনকে সংশোধনের জন্য প্রত্যেক সম্ভাব্য ব্যবস্থা করা উচিত। ২৮ পারার সূরা তাহরিম এর ৬নং আয়াতে করীমায় আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ 

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: হে ঈমানদারগণ! নিজেদেরকে ও নিজেদের পরিবার বর্গকে ওই আগুন থেকে রক্ষা করো যার ইন্ধন হচ্ছে মানুষ ও পাথর। (পারা: ২৮, সূরা: তাহরীম, আয়াত: ৬)

অধিনস্থের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে?

স্মরণ রাখবেন! স্বামী তার স্ত্রীর, পিতা তার সন্তানের এবং প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের অধিনস্থদের জন্য এক প্রকারের শাসক। আর প্রত্যেক শাসকের নিকট তার অধিনস্থদের ব্যাপারে কিয়ামতের দিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। কেননা, রাসূলে আকরাম, নূরে মুজাস্সাম, নবীয়ে মুকাররম صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ! ইরশাদ করেন: “তোমরা সবাই নিজের সংশ্লিষ্টদের নেতা ও শাসক, আর শাসকের নিকট কিয়ামতের দিন তার প্রজাদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে।” (সহীহ বুখারী, ১ম খন্ড, ৩০৯ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৮৯৩)

ছোট ভাইয়ের ইনফিরাদী কৌশিশ

ইসলামী বোনেরা! নিজেকে ধ্বংস থেকে বাঁচানো এবং ক্ষমা পাওয়ার একটি উত্তম মাধ্যম হলো; তবলীগে কোরআন ও সুন্নাতের বিশ্বব্যাপী অরাজনৈতিক সংগঠন দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশ, কখনও কখনও একজন লোকের দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশের সাথে সম্পৃক্ত হওয়া, সম্পূর্ণ পরিবারের সংশোধনের মাধ্যম হয়ে যায়। এরকম অসংখ্য বাহার রয়েছে, একটি বাহার লক্ষ্য করুন; যেমন- বাবুল মদীনার (করাচীর) একজন ইসলামী বোনের বর্ণনা কিছুটা এরকম যে, আমাদের পরিবার অনেক মডার্ণ ছিলো। পরিবারের লোকেরা গান-বাজনা এবং সিনেমা-নাটকের সৌখিন ছিলো। আল্লাহ্ তাআলার দয়া কিছুটা এভাবে হলো; আমার ছোট ভাইকে একজন ইসলামী ভাই ইনফিরাদী কৌশিশ করলো। তাতে সে দা’ওয়াতে ইসলামীর সাপ্তাহিক সুন্নাতে ভরা ইজতিমায় অংশগ্রহণ করার সৌভাগ্য অর্জন করলো।

اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ عَزَّوَجَلّ ইজতিমায় নিয়মিত যাওয়ার কারণে ভাইয়ের আচরণের মধ্যে মাদানী পরিবর্তন এসে গেলো, সে নিয়মিতভাবে নামাযী হয়ে গেলো, সুন্নাতের উপর আমল করার চেষ্টা এবং পরিবারের সদস্যদেরকে সংশোধনের ধ্যানে মগ্ন থাকতো। সে দা’ওয়াতে ইসলামীর বরকত সমূহ আমাদেরকে বলতো এবং ইসলামী বোনদের সুন্নাতে ভরা ইজতিমায় অংশগ্রহণ করার জন্য উৎসাহ প্রদান করতো। তার ইনফিরাদী কৌশিশ পরিশেষে সফল হলো এবং আমি ইসলামী বোনদের ইজতিমায় অংশগ্রহণ করার সৌভাগ্য অর্জন করলাম। সেখানের পরিবেশের রূহানিয়্যত এবং সুন্নাতে ভরা বয়ান আমার মধ্যে আশ্চার্যজনক অবস্থা জাগিয়ে দিলো। দোয়া চলাকলীন সময়ে আমি অঝোর নয়নে কান্না করে নিজের গুনাহ থেকে তাওবা করলাম এবং দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশকে কখনও ত্যাগ না করার পরিপূর্ণ ওয়াদা করে নিলাম। اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ عَزَّوَجَلّ ইসলামী বোনদের সুন্নাতে ভরা ইজতিমায় নিয়মিত অংশগ্রহণ করার কারণে খোদাভীরুতা ও নবী প্রেম বৃদ্ধি করার প্রেরণা নসীব হলো। দা’ওয়াতে ইসলামীর সদকায় আমাদের পরিবারের বিপথগামী পরিবেশ মাদানী পরিবেশে পরিবর্তন হয়ে গেলো। পরিবারের লোকদের ঐক্যমতে ঘর থেকে টিভি বের করে দেয়া হয়েছে। কেননা, এটা থাকাবস্থায় সিনেমা-নাটক থেকে বাঁচা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য বিষয়। বর্তমানে আমাদের ঘরে সিনেমা-নাটক এবং গান-বাজনা নয় বরং তাজেদারে মদীনা صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর নাতের ধ্বনি ধ্বনিত হয়।

না মরনা ইয়াদ আতা হে, না জীনা ইয়াদ আতা হে,

মুহাম্মদ ইয়াদ আতে হেঁ, মদীনা ইয়াদ আতা হে।

صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد 

ইসলামী বোনেরা! সাহস না হারিয়ে বেশি বেশি ইনফিরাদী কৌশিশ করতে থাকুন, اِنْ شَاءَ الله عَزَّوَجَلّ নিষ্ফল হবেন না। এই অবস্থায় যদি কোন কষ্ট হয় তবে ধৈর্যশীলতার সুযোগ হাত ছাড়া হতে দিবেন না। কেননা, আগত বিপদ اِنْ شَاءَ الله عَزَّوَجَلّ অনেক বড় কল্যাণের আগাম বার্তা হিসেবে প্রমাণীত হবে। হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরাইরা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বর্ণিত; প্রিয় আক্বা, উভয় জগতের দাতা, মক্কী মাদানী মুস্তফা صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “আল্লাহ্ তাআলা যার সাথে কল্যাণের ইচ্ছাপোষণ করেন, তবে তাকে মুসীবতে লিপ্ত করে দেন।” (সহীহ বুখারী, ৪র্থ খন্ড, ৪ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৫৬৪৫)

صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد

দাইয়্যুস কে এবং পালিত সন্তানের সাথে পর্দার বিধান

দাইয়্যুসের সংজ্ঞা

প্রশ্ন:- দাইয্যুস কাকে বলে?

উত্তর:- যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও নিজের স্ত্রী ও মাহরিমদেরকে বেপর্দা হওয়া থেকে বারণ করে না, সেই “দাইয়্যুস”। প্রিয় নবী, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ! ইরশাদ করেন: “তিন ব্যক্তি কখনও জান্নাতে প্রবেশ করবে না; দাইয়্যুস এবং পুরুষ সূলভ আকৃতি ধারণকারী মহিলা আর মদ্য পানে অভ্যস্থ ব্যক্তি।” (মাজমাউয যাওয়ায়িদ, ৪র্থ খন্ড, ৫৯৯ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৭৭২২) পুরুষের ন্যায় চুল কর্তনকারী এবং পুরুষ সূলভ পোশাক পরিধানকারীরা বর্ণিত হাদীসে পাক থেকে শিক্ষা গ্রহণ করুন। ছোট মেয়েদেরকে ছেলেদের মতো চুল কাটানো এবং তাদেরকে ছেলে সূলভ কাপড় এবং ক্যাপ ইত্যাদি পরিধান করানো ব্যক্তিরাও সতর্কতা অবলম্বন করুন, যেন ছোট মেয়েরা এই সময় থেকেই নিজেকে পুরুষ থেকে আলাদা মনে করে আর বুদ্ধি হওয়ার পর এবং বালিগা (প্রাপ্ত বয়স্কা) হওয়ার পর যেন নিজের অভ্যাস ও চালচলনকে শরীয়াতানুযায়ী পরিচালিত করতে কষ্টের সম্মুখীন হতে না হয়। হাদীসে পাকে এটা বলা হয়েছে যে: “কখনও জান্নাতে প্রবেশ করবে না” তা দ্বারা দীর্ঘদিন যাবত জান্নাতে প্রবেশ হওয়া থেকে বঞ্চিত থাকাই উদ্দেশ্য। কেননা, যে মুসলমান নিজের গুনাহের কারণে مَعَاذَ الله عَزَّوَجَل ( (আল্লাহর পানাহ!) জাহান্নামে যাবে, সে অবশেষে জান্নাতে অবশ্যই প্রবেশ করবে। কিন্তু এটা স্মরণ রাখবেন! এক মুহুর্তের কোটি ভাগের এক ভাগও জাহান্নামের আগুন সহ্য করা যাবে না। তাই আমাদেরকে প্রত্যেক গুনাহ থেকে বাঁচার জন্য সদা সর্বদা চেষ্টা ও জান্নাতুল ফিরদাউসে বিনা হিসাবে প্রবেশের দোয়া করা উচিত। দাইয্যুসের ব্যাপারে হযরত আল্লামা আলাউদ্দিন হাসকাফী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: “দাইয়্যুস সেই ব্যক্তি, যে নিজের স্ত্রী অথবা অন্য কোন মাহারিমের প্রতি যথাযথ শরয়ী বিধান প্রয়োগ না।” (দুররে মুখতার, ৬ষ্ট খন্ড, ১১৩ পৃষ্ঠা) জানা গেলো, সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও নিজের স্ত্রী, মা, বোন এবং যুবতি মেয়ে ইত্যাদিকে অলি-গলিতে, বাজার সমূহে, শপিং সেন্টারগুলোতে এবং পার্ক সমূহে বেপর্দা ভাবে ঘুরে বেড়াতে, অপরিচিত প্রতিবেশীদের, নামাহরাম আত্মীয়দের, না-মাহরাম চাকর, পাহারাদার এবং ড্রাইভারের সাথে সংকোচহীন এবং বেপর্দা হওয়া থেকে বাধা প্রদান করে না, তারাই দাইয়্যুস। আর তারা জান্নাত থেকে বঞ্চিত এবং জাহান্নামের ভাগীদার।

আমার আক্বা আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, মুজাদ্দীদে দ্বীন ও মিল্লাত, মাওলানা শাহ্ ইমাম আহমদ রযা খাঁন رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: “দাইয়্যুস ব্যক্তি খুবই মারাত্মক পর্যায়ের ফাসিক এবং প্রকাশ্য ফাসিকের (ফাসিকে মুলিন) পিছনে নামায আদায় করা মাকরূহে তাহরিমী। তাকে ইমাম বানানো বৈধ নয় এবং তার পিছনে নামায আদায় করা গুনাহ এবং আদায় করলে পুনরায় আদায় করা ওয়াজিব।” (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া সংকলিত, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৫৮৩ পৃষ্ঠা)

বেপর্দা কাল জু আয়েঁ নযর চান্দ বিবিয়াঁ

আকবর জমিঁ মে গেয়রতে কওমী সে গাড় গেয়া।

পুছা উন ছে আপকা পর্দা ওহ কেয়া হুয়া?

কেহনে লাগে “ওহ আকল পে মরদোঁ কি পড় গেয়া।”

যদি মহিলারা অবাধ্য হয় তবে…?

প্রশ্ন:- যদি পুরুষের আপ্রাণ চেষ্টার পরও মহিলারা বেপর্দা হওয়া থেকে বিরত না হয়, তবেও কি সে দাইয়্যুস হবে?

উত্তর:- যদি পুরুষ বা অভিভাবক নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী নিষেধ করে এবং বেপর্দা থেকে বিরত রাখার শরয়ী বিধানাবলী পূর্ণ করে, এবং এতদসত্ত্বেও সে না মানে, তবে এমতাবস্থায় তার উপর না কোন অপবাদ দেয়া হবে আর না সে দাইয়্যুস বলে গন্য হবে। সুতরাং যতটুকু সম্ভব বেপর্দা ইত্যাদি বিষয় থেকে মহিলাদেরকে বারণ করা উচিত। কিন্তু তা অতিসাবধানতার সাথে, এমন যেন না হয় যে, আপনি আপনার স্ত্রী, মা, বোনের উপর এমন ভাবে কঠোরতা করে বসলেন, যে কারণে ঘরের সব শান্তি নিঃশেষ হয়ে যায়। 

দাইয়্যুস কে এবং পালিত সন্তানের সাথে পর্দার বিধান

পাতানো (মুখে ডাকা) ভাই-বোনের সাথেও কি পর্দা রয়েছে?

প্রশ্ন:- পাতানো (মুখে ডাকা) বাবা অথবা ভাই এবং সন্তান ইত্যাদির সাথেও কি ইসলামী বোনদের পর্দা রয়েছে?

উত্তর:- জ্বী, হ্যাঁ! তাদের সাথেও পর্দা রয়েছে। কেননা, কাউকে বাবা, ভাই অথবা সন্তান বানিয়ে নেয়াতে সে সত্যিকার বাবা, ভাই বা সন্তান হয়ে যায় না। তাদের সাথে তো বিবাহও জায়েয। আমাদের সমাজে পাতানো সম্পর্কের প্রচলন অহরহ রয়েছে। কোন পুরুষ কাউকে “মা” বানিয়ে বসে আছে, কোন মেয়ে কাউকে “ভাই” বানিয়ে বসে আছে, তো কোন “মহিলা” কাউকে “সন্তান” বানিয়ে বসে আছে, কেউ কোন যুবতি মেয়ের পাতানো “চাচা”। অপরদিকে কেউ পাতানো “বাবা” আর তারপর নিঃসংকোচে বেপর্দা হওয়া এবং মিশ্র দাওয়াতে গুনাহ ও পাপের সেই বন্যা বয়ে যায়। (আল্লাহ্ তাআলা আমাদেরকে হিফাযত করুক!) বিপরীত লিঙ্গের সাথে পাতানো সম্পর্ক স্থাপনকারী এবং কারীনিদের আল্লাহ্ তাআলাকে ভয় করা উচিত। নিশ্চয় শয়তান কাউকে জানিয়ে আক্রমণ করে না। হাদীসে পাকে এসেছে; “দুনিয়া এবং মহিলাদের (সংস্পর্শ) থেকে বেঁচে থাকো। কেননা, বনি ইসরাঈলে সর্ব প্রথম ফিতনা মহিলাদের কারণে হয়েছিলো।” (সহীহ মুসলিম, ১৪৬৫ পৃষ্ঠা, হাদীস: ২৭৪২)

পালক সন্তানের হুকুম

প্রশ্ন:- কারো বাচ্চাকে কোলে নেয়া যাবে কি না?

উত্তর:- নিতে পারবে, কিন্তু যদি সে না মাহরাম হয়, তবে যখন থেকে মহিলাদের সম্পর্কে বুঝতে শুরু করবে, তখন তার সাথে পর্দা করতে হবে। ফুকাহায়ে কিরাম رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِمْ বলেন: “মুরহিক (এমন যুবক যারা বালিগ হওয়ার নিকটবর্তী) এর বয়স হলো ১২ বছর।” (রদ্দুল মুহতার, ৪র্থ খন্ড, ১১৮ পৃষ্ঠা)

শিশু কন্যাকে কোলে নেয়া কেমন?

প্রশ্ন:- কারো শিশু কন্যাকে কোলে নেয়া কেমন? যদি তাকে মেয়ে বানিয়ে নেয়া হয় তবে কি যুবতি হওয়ার পর মুখে ডাকা পিতার সাথে পর্দা করার মাসয়ালা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে?

উত্তর:- যদি শিশু কন্যাকে নিতেই হয় তবে সহজতা এর মধ্যেই যে, মাহারামা অর্থাৎ আপন ভাতিজী অথবা ভাগ্নিকে নিন, যেন দুধের সম্পর্ক স্থাপন না হলেও বালিগা হওয়ার পর একত্রে থাকতে পারেন, কিন্তু বালিগা হওয়ার পর পরিবারের না-মাহরাম যেমন; আপন চাচা, মামা যারা তাকে লালিত পালিত করেছে, তাদের বালিগ সন্তানের সাথে (যখন সেখানে দুধভাই না হয়) পর্দা করা ওয়াজিব হয়ে যাবে। যদি পালিত মেয়ে না-মাহরাম হয় তবে বালিগা হওয়া বরং বালিগার নিকটবর্তী হলেও তাকে পালনকারী না-মাহরাম পিতা নিজের সাথে রাখবেন না। যেমনিভাবে; আমার আক্বা আ’লা হযরত رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ “ফতোওয়ায়ে রযবীয়া” এর ১৩তম খন্ডের ৪১২ পৃষ্ঠায় বলেন: “মেয়ে বালিগা বা বালিগার নিকটবর্তী হলে, যতক্ষণ পর্যন্ত বিয়ে না হয় তাকে অবশ্যই তার পিতার নিকট থাকা উচিত, এমনকি ৯ বছরের পর আপন মা থেকে মেয়েকে নিয়ে নিবে এবং সে তার পিতার নিকট থাকবে। কিন্তু অপরিচিত কারো নিকট থাকবে না (অর্থাৎ যাদের সাথে সবসময়ের জন্য বিয়ে হারাম নয়) তার নিকট থাকা কোন ভাবেই বৈধ হতে পারে না। শুধু মেয়ে বানিয়ে নেয়াতে মেয়ে হয়ে যায় না।” ফুকাহায়ে কিরাম رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِمْ বলেন: “মুশথাত (এমন যুবতী যারা বালিগা হওয়ার নিকটবর্তী) এর বয়স হলো কমপক্ষে ৯ বছর।” (রদ্দুল মুহতার, ৪র্থ খন্ড, ১১৮ পৃষ্ঠা)

পালিত পুত্রের সাথে পর্দা জায়েয হওয়ার পদ্ধতি

প্রশ্ন:- শৈশবকাল থেকে পালিত পুত্র যখন বুঝতে শুরু করে তখন তার সাথে পর্দা করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে যায়। এমন কোন পদ্ধতি বলে দিন যেন পালিত পুত্রের সাথে যুবক হওয়ার পরও পর্দা ওয়াজিব না হয়?

উত্তর:- তার পদ্ধতি হলো, যে ছেলে বা মেয়েকে পালক নিবেন তার সাথে দুধের সম্পর্ক গড়ে নিন। কিন্তু দুধের সম্পর্ক গড়তে এ বিষয়ে খুবই মনোযোগ রাখা আবশ্যক যে, যদি কন্যা সন্তানকে পালক নিতে হয় তবে স্বামীর পক্ষ থেকে যেন সম্পর্ক স্থাপন করা হয়। যেমন; স্বামীর বোন অথবা ভাতিজী বা ভাগ্নি যেন সেই মেয়েকে দুধ পান করিয়ে দেয় এবং যদি ছেলে সন্তানকে পালক নিতে হয় তবে স্ত্রী তার সাথে নিজের পক্ষ থেকে দুধের সম্পর্ক সৃষ্টি করবে যেমন; স্ত্রী নিজে অথবা তার বোন বা মেয়ে কিংবা বোনের মেয়ে বা ভাইয়ের মেয়ে যেন সেই সন্তানকে নিজের দুধ পান করিয়ে দেয়। এভাবে উভয় পদ্ধতিতে স্ত্রী এবং স্বামী দু’জনেরই পর্দার সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। স্মরণ রাখবেন! যখনই দুধের সম্পর্ক সৃষ্টি করবেন, তখন বাচ্চাকে হিজরী সনের হিসাবে দুই বছরের মধ্যে পান করাবেন। এর পর দুধ পান করানো নাজায়েয। বরং মায়ের জন্য তার আপন সন্তানকেও দুই বছরের পর দুধ পান করানো নাজায়েয। কিন্তু যদি আড়াই বছরের ভিতরেও কোন বাচ্চা দুধ পান করে নেয়, তবুও দুধের সম্পর্ক স্থাপন হয়ে যাবে।

ছেলে কখন বালিগ হয়?

প্রশ্ন:- ছেলে কখন বালিগ হয়?

উত্তর:- হিজরী সনের হিসাব অনুযায়ী ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সের মধ্যে যখনই (সহবাস ও হস্ত মৈথুন ইত্যাদির মাধ্যমে) বীর্যপাত হলে অথবা স্বপ্নদোষ হলে কিংবা তার সাথে সহবাসের কারণে মহিলা গর্ভবতী হয়ে গেলে। তৎক্ষনাৎ সে বালিগ হয়ে গেলো এবং তার উপর গোসল ফরয হয়ে গেলো। যদি এসব কিছু না হয় তবে হিজরী সন অনুযায়ী ১৫ বছর পূর্ণ হতেই বালিগ হয়ে যাবে। (দুররে মুখতার, ৯ম খন্ড, ২৫৯ পৃষ্ঠা, সংকলিত)

মেয়ে কখন বালিগা হয়?

প্রশ্ন:- মেয়ে কখন বালিগা হয়?

উত্তর:- হিজরী সনের হিসাব অনুযায়ী ৯ থেকে ১৫ বছর বয়সের মধ্যে যদি স্বপ্নদোষ হয় বা ঋতুস্রাব চলে আসে অথবা গর্ভবতী হয়ে যায়, তবে সে বালিগা হয়ে যাবে। তা না হলে হিজরী সন অনুযায়ী ১৫ বছর পূর্ণ হতেই বালিগা হয়ে যাবে। (দুররে মুখতার, ৯ম খন্ড, ২৫৯ পৃষ্ঠা, সংকলিত)

কত বছরের ছেলের সাথে পর্দা করতে হবে?

প্রশ্ন:- কত বছরের ছেলের সাথে পর্দা করতে হবে?

উত্তর:- ১৮ পারায় সূরা নূর এর ৩১নং আয়াতে রয়েছে:

أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَىٰ عَوْرَاتِ النِّسَاءِ ۖ

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: অথবা ওই সব বালক (এর নিকট) যারা নারীদের গোপনাঙ্গ সম্বন্ধে অবগত নয়। (পারা: ১৮, সূরা: নূর, আয়াত: ৩১)

এই আয়াতে করীমার টীকায় প্রখ্যাত মুফাস্‌সীর হাকীমুল উম্মত হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: “অর্থাৎ সেই ছোট বাচ্চা যে এখনও বালিগ হওয়ার নিকবর্তী হয়নি (তার সাথে পর্দা নেই) জানা গেলো, মুরাহিক (এমন বালক যারা বালিগের নিকটবর্তী) ছেলের সাথে পর্দা রয়েছে।” (নূরুল ইরফান, ৫৬৪ পৃষ্ঠা) ফুকাহায়ে কিরামগণ رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِمْ বলেন: “মুশথাত (এমন যুবতী যারা বালিগা হওয়ার নিকটবর্তী) এর সর্ব নিম্ন বয়স হলো ৯ বছর এবং মুরাহিক (এমন বালক যারা বালিগ হওয়ার নিকটবর্তী) এর ১২ বছর।” (রদ্দুল মুহতার ৪র্থ খন্ড, ১১৮ পৃষ্ঠা) আমার আক্বা আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, মুজাদ্দীদে দ্বীন ও মিল্লাত, মাওলানা শাহ্ ইমাম আহমদ রযা খাঁন رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: “৯ বছরের কম মেয়েদের পর্দা আবশ্যক নয়। আর যখন ১৫ বছর হয়ে যাবে তখন সকল না-মাহারিমের সাথে পর্দা ওয়াজিব এবং ৯ থেকে ১৫ বছরের মধ্যবর্তী সময়ে যদি বালিগার আলামত প্রকাশ পায় তখন পর্দা ওয়াজিব। আর যদি প্রকাশ না পায় তবে মুস্তাহাব, বিশেষ করে ১২ বছরের পর অনেক কঠোরভাবে জোর দেয়া হয়েছে। কেননা, এ সময়টা বালিগা হওয়ার নিকটবর্তী ও উত্তেজনা পূর্ণ হওয়ার (অর্থাৎ ১২ বছর বয়সের মেয়ের বালিগা হওয়ার এবং যৌন উত্তেজনা পূর্ণ হওয়ার) সময়।” (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ২৩তম খন্ড, ৬৩৯ পৃষ্ঠা)

বিধর্মী মহিলার সাথে পর্দা

প্রশ্ন:- ইসলামী বোনদেরকে কি বিধর্মী মহিলা থেকে পর্দা করতে হবে?

উত্তর:- জ্বী, হ্যাঁ! বিধর্মী মহিলার সাথেও সেভাবে পর্দা করতে হবে যেভাবে পর-পুরুষের সাথে পর্দা করবে। বিধর্মী মহিলার সাথে পর্দার বিস্তারিত বিবরণ হলো, ইসলামী বোনদের বিধর্মী মহিলাদের সাথে সেই ভাবে পর্দা করতে হবে, যেভাবে একজন পর-পুরুষের সাথে পর্দা রয়েছে অর্থাৎ সঠিক মতানুযায়ী মহিলার জন্য চেহারা এবং হাতের তালুদ্বয় আর গোড়ালির নিচের পা’কে প্রকাশ্য সৌন্দর্য্য ধরা হয় বাকী সম্পূর্ণ দেহকে পর-পুরুষ থেকে গোপন রাখা আবশ্যক এবং বর্তমান যুগের উলামাদের মতে: “পর পুরুষ থেকে এই তিনটি অঙ্গও লুকানো উচিত।” মহিলাদের জন্য পর-পুরুষের সাথে পর্দার আহকাম ১৮ পারা সূরা নূর এর ৩১ নং আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে। এই আয়াতে মোবারাকায় মুসলমান মহিলাদের কাফের মহিলাদের সাথে পর্দা করার বিধানও বর্ণিত হয়েছে যে, مَا ظَهَرَ مِنْهَا ۖ ব্যতিত অর্থাৎ যতটুকু নিজে নিজে প্রকাশ পায়। কেননা, একজন মুসলমান মহিলার পুরো শরীর যেভাবে পর-পুরুষের জন্য গোপন রাখার জিনিস, তেমনি ভাবে বিধর্মী মহিলার জন্য গোপন রাখার জিনিস। যেমন; ব্যতিক্রম স্থান সমূহে أَوْ نِسَائِهِنَّ (অর্থাৎ বা নিজের দ্বীনের মহিলাগন) থেকে প্রকাশ হয়, যেমনিভাবে, আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন:

وَقُل لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا ۖ وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّ ۖ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَىٰ عَوْرَاتِ النِّسَاءِ ۖ وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِن زِينَتِهِنَّ ۚ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ (৩১)

আমার আক্বা আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, ওলীয়ে নেমত, আযীমুল বারাকাত, আযীমুল মারতাবাত, পরওয়ানায়ে শময়ে রিসালাত, মুজাদ্দীদে দ্বীন ও মিল্লাত, হামিয়ে সুন্নাত, মাহিয়ে বিদআত, আলীমে শরীয়াত, পীরে তরিকত, বাইছে খাইর ও বারাকাত, হযরত আল্লামা মাওলানা আলহাজ্ব আল হাফিয আল কারী শাহ্ ইমাম আহমদ রযা খান رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ এর বিশ্ব বিখ্যাত কোরআনের অনুবাদগ্রন্থ “কানযুল ঈমান”এ এর অনুবাদ এভাবে করেন: 

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: “এবং মসুলমান নারীদেরকে নির্দেশ দিন যেন তারা নিজেদের দৃষ্টিগুলোকে কিছুটা নিচু রাখে এবং নিজেদের সতীত্বকে হিফাযত করে আর নিজেদের সাজ-সজ্জাকে প্রদর্শন না করে, কিন্তু যতটুকু স্বাভাবিক ভাবেই প্রকাশ পায় এবং উড়না যেন আপন গ্রীবা ও বক্ষদেশের উপর ঝুলানো থাকে আর আপন সাজ-সজ্জাকে যেন প্রকাশ না করে, কিন্তু নিজেদের স্বামীর নিকট অথবা আপন পিতা অথবা স্বামীর পিতা, অথবা আপন পুত্রগণ অথবা স্বামীর পুত্রগণ, অথবা আপন ভাই, অথবা আপন ভ্রাতুষ্পুত্রগণ অথবা আপন ভাগিনাগণ অথবা স্বধর্মীয় নারীগণ অথবা নিজেদের হাতের মালিকানাধীন দাসীগণ অথবা যৌন কামনাহীন চাকর অথবা ওই সব বালক (এর নিকট) যারা নারীদের গোপাঙ্গ সম্বন্ধে অবগত নয়; এবং যেন মাটির উপর সজোরে পদক্ষেপণ না করে, যাতে জানা যায় তাদের গোপন সাজ-সজ্জা এবং আল্লাহর দিকে তাওবা করো, হে মুসলমানগণ, তোমরা সকলেই! এ আশায় যে, তোমরা সফলতা অর্জন করবে।”(পারা: ১৮, সূরা: নূর, আয়াত: ৩১)

হযরত সদরুল আফাযীল সায়্যিদুনা মাওলানা মুহাম্মদ নঈম উদ্দিন মুরাদাবাদী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ খাযাঈনুল ইরফানে আয়াতের এই অংশ أَوْ نِسَائِهِنَّ (অর্থাৎ বা নিজের দ্বীনের মহিলাগন) এর টীকায় বলেন: “আমীরুল মু’মিনীন হযরত সায়্যিদুনা ওমর ফারুকে আযম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ হযরত সায়্যিদুনা আবু উবায়দা বিন র্জারাহ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ কে চিঠি লিখেন: কাফের আহলে কিতাবের মহিলাদেরকে মুসলমান মহিলাদের সাথে গোসলখানায় প্রবেশ করা থেকে বারণ করুন।” এ থেকে জানা গেলো, মুসলমান মহিলাদের জন্য বিধর্মী মহিলার সামনে নিজের দেহ প্রকাশ করা জায়েয নেই।

আ’লা হযরত رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ এর ফতোওয়া 

আমার আক্বা আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, মুজাদ্দীদে দ্বীন ও মিল্লাত, মাওলানা শাহ্ ইমাম আহমদ রযা খাঁন رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: “শরীয়াতের হুকুম হলো, বিধর্মী মহিলার সাথে মুসলমান মহিলার এমনিভাবে পর্দা ওয়াজিব যেভাবে পর-পুরুষের সাথে। অর্থাৎ মাথার চুলের কোন অংশ অথবা বাহুদ্বয় অথবা হাতের কব্জি কিংবা গলা থেকে পায়ের গোড়ালির নিচ পর্যন্ত শরীরের কোন অংশ মুসলমান মহিলার জন্য বিধর্মী মহিলার সামনে প্রকাশ করা জায়েয নেই।” (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ২৩তম খন্ড, ৬৯২ পৃষ্ঠা)

পাপিষ্ঠা মহিলা থেকে পর্দা

প্রশ্ন:- পাপিষ্ঠা মহিলার থেকেও কি পর্দা করা আবশ্যক?

উত্তর:- না, কবিরা গুনাহকারী ও বারংবার সগিরা গুনাহকারী যেমন; বেনামাযী, পিতা-মাতাকে কষ্ট দানকারী, গীবতকারী, চুগলখোরকে পাপিষ্ঠা বলা হয়। পক্ষান্তরে যেনাকারীনী, দুশ্চরিত্রা এবং অশ্লীল মহিলাদের পাপিষ্ঠার পাশাপাশি ফাজিরা (দুশ্চরিত্রা)ও বলা হয়। পাপিষ্ঠার সাথে পর্দা নেই, কিন্তু ফাজিরার (দুশ্চরিত্রবান মহিলা)থেকে সাবধানতা বশতঃ পর্দা করার বিধান রয়েছে। তার সংস্পর্শ থেকে বেঁচে থাকা অত্যন্ত জরুরী। কেননা, মন্দ সংস্পর্শ মন্দ প্রতিদান দেয়। ফাজিরা মহিলার সাথে মেলামেশার ব্যাপারে শরীয়াতের বিধান বর্ণনা করতে গিয়ে আমার আ’লা হযরত رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: “জ্বী, হ্যাঁ! তাদের সাথে পর্দা করার বিধান সাবধানতা বশতঃ, কিন্তু এই সাবধানতা আবশ্যক। যখন দেখবে যে, এবার কোন মন্দ প্রভাব পড়ার আশংকা রয়েছে, তৎক্ষণাৎ তার সঙ্গ ছেড়ে দিন এবং তার সঙ্গকে আগুন মনে করুন। আসল কথা হলো, মন্দ প্রভাব পড়ার সময় তেমন বুঝা যায় না, কিন্তু যখন পড়ে যায় তখন সাবধানতার মনমানসিকতা তৈরী করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। সুতরাং নিরাপত্তাই হলো; ফাজিরা (দুশ্চরিত্রা মহিলা) থেকে দূরে থাকা।” (আল্লাহ্ তাআলার সাহায্যক্রমে সামর্থ্য অর্জিত হয়।) (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ২২তম খন্ড, ২০৪ পৃষ্ঠা)

মাওলানা জালালুদ্দিন রুমি رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ মছনবী শরীফে বলেন: 

তা তুওয়ানী দূর শাওয়ায ইয়ারে বদ, ইয়ারে বদ বদতর বুওয়াদ আয মারে বদ।

মারে বদ তানহা হামেঁ বারজাঁ যান্দ, ইয়ারে বদ বরজানে ও বর ঈমান যান্দ।

অর্থাৎ যতটুকু সম্ভব মন্দ বন্ধু থেকে দূরে থাকো। কেননা, খারাপ সাথী বিষাক্ত সাপের চেয়েও অধিক ভয়ঙ্কর ও ক্ষতিকর। এজন্য যে, ভয়ঙ্কর সাপ তো শুধু প্রাণ অর্থাৎ শরীরকে কষ্ট অথবা ক্ষতিগ্রস্থ করে। কিন্তু খারাপ সাথী প্রাণ এবং ঈমান উভয়টি নষ্ট করে দেয়। (গুলদাস্তায়ে মছনবী, ৯৪ পৃষ্ঠা)

আমার জীবনের লক্ষ্য

ইসলামী বোনেরা! খারাপ সংস্পর্শের মধ্যে শুধু ধ্বংস আর ধ্বংস, আর সৎ সংস্পর্শ নেক লোকদের সাথে ভালবাসা ও সম্পর্ক গড়াতে সবদিকেই নিরাপত্তা রয়েছে। দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশের কথা কি বলব! আখিরাতের ধ্বংসের পথের পথিক কত ইসলামী বোনকে জান্নাতের পথের পথিক বানিয়ে দিয়েছে। এমনই একটি মাদানী বাহার শুনুন: বাবুল মদীনা করাচীর একজন ইসলামী বোনের বর্ণনা কিছুটা এরকম;

আমি দুনিয়ার রং-তামাশায় মগ্ন হয়ে আখিরাতের পরীক্ষা সম্পর্কে উদাসীন হয়ে জীবন অতিবাহিত করছিলাম। একদিন দা’ওয়াতে ইসলামীর সুবাসিত মাদানী পরিবেশের সাথে সম্পৃক্ত একজন ইসলামী বোন আমাকে ইনফিরাদী কৌশিশ করে আন্তর্জাতিক মারকায ফয়যানে মদীনার নিচ তলায় অনুষ্ঠিতব্য ইসলামী বোনদের সুন্নাতে ভরা ইজতিমায় অংশগ্রহণ করার দাওয়াত দিলো, তার স্নেহময়তার ফলে আমার সুন্নাতে ভরা ইজতিমায় অংশগ্রহণ করার সৌভাগ্য অর্জন হলো। সেখানে মাদানী ইনআমাত সম্পর্কিত বয়ান চলছিল। আমি গভীর মনযোগ সহকারে বয়ান শুনতে লাগলাম। বয়ানটি অনেক হৃদয়কাড়া ছিলো। আমার উপর তার প্রভাব বিস্তার করলো, আর আমার শরীরের প্রতিটি লোম খোদাভীরুতায় কেঁপে উঠল। বয়ানের শেষে আমি নিয়্যত করে নিলাম যে, اِنْ شَاءَ الله عَزَّوَجَلّ ভবিষ্যতে সারা জীবন মাদানী ইনআমাতের উপর আমল করেই কাটাব। অতঃপর মাদানী ইনআমাতের উপর আমল করার বরকতে মাদানী বোরকা পরিধান করাও নসীব হলো। এখন আমি আমার জীবনকে এই মাদানী উদ্দেশ্যের প্রেক্ষিতে কাটানোর ওয়াদা করে নিয়েছি যে; “আমাকে নিজের এবং সারা দুনিয়ার মানুষের সংশোধনের চেষ্টা করতে হবে اِنْ شَاءَ الله عَزَّوَجَلّ নিজের সংশোধনের জন্য মাদানী ইনআমাতের উপর আমল এবং সারা দুনিয়ার মানুষের সংশোধনের জন্য ঘরের মাহরাম পুরুষদেরকে মাদানী কাফেলায় সফর করাতে হবে।

দে জযবা “মাদানী ইনআমাত” কা তু, করম বেহরে শাহে করব ও বালা হো।

করম হো দা’ওয়াতে ইসলামী পর ইয়ে, শরীক ইসমে হার এক ছোটা বড়া হো।

صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد 

৮৮৩টি ইজতিমা

ইসলামী বোনেরা! এখনতো আপনারা সেই দিনের মাদানী বাহার শ্রবণ করলেন, যখন দা’ওয়াতে ইসলামীর আন্তর্জাতিক মাদানী মারকাযে ইসলামী বোনদের সাপ্তাহিক সুন্নাতে ভরা ইজতিমা অনুষ্ঠিত হতো। আর এখন মাদানী মারকায প্রতি রবিবার দুপুর আড়াইটায় অনুষ্ঠিতব্য এই এক ইজতিমাকে বর্ণনা লিখাকালীন সময়ে প্রায় ৩৭ স্থানে বন্টন করে দিয়েছে। যেভাবে খাতামুল মুরসালীন, শফীউল মুযনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর যত আশিকা বৃদ্ধি পেতে থাকবে اِنْ شَاءَ الله عَزَّوَجَلّ বন্টনের ধারাবাহিকতাও তত বাড়তে থাকবে। অন্যান্য স্থান ব্যতিত اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ عَزَّوَجَلّ প্রত্যেক বুধবার দুপুর বেলায় বাবুল মদীনা করাচীতে যেলী পর্যায়েও এ বর্ণনা লিখাকালীন সময়ে প্রায় ৮৮৩টি স্থানে সাপ্তাহিক সুন্নাতে ভরা ইজতিমা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।

মাদানী ইনআমাত কার জন্য কতটি?

এই ফিতনা ফ্যাসাদের যুগে সহজভাবে নেকী করার ও গুনাহ থেকে বাঁচার নিয়মাবলী সম্বলিত শরীয়াত ও তরিকতের সমন্বিত সমষ্টি “মাদানী ইনআমাত” প্রশ্নাবলী আকারে উপস্থাপন করা হয়েছে। ইসলামী ভাইদের জন্য ৭২টি, ইসলামী বোনদের জন্য ৬৩টি, ছাত্রদের জন্য ৯২টি, ছাত্রীদের জন্য ৮৩টি, মাদানী মুন্না ও মুন্নিদের জন্য 

৪০টি এমনকি বিশেষ ইসলামী ভাইদের (অর্থাৎ বোবা, বধির) জন্য ২৭টি মাদানী ইনআমাত। অসংখ্য ইসলামী ভাই ও ইসলামী বোন এবং ছাত্র মাদানী ইনআমাত অনুযায়ী আমল করে প্রতিদিন শোয়ার পূর্বে ফিক্‌রে মদীনা করার দ্বারা (অর্থাৎ নিজের আমলের হিসাব করে) মাদানী ইনআমাতের পকেট সাইজের রিসালায় দেয়া খালি ঘর পূরণ করে। এই মাদানী ইনআমাতগুলোকে আন্তরিকতার সাথে আপন করার পর নেককার হওয়ার এবং গুনাহ থেকে বাঁচার পথে বাধা বিপত্তি আল্লাহ্ তাআলার দয়ায় অধিকাংশ দূর হয়ে যায়। আর এর বরকতে اِنْ شَاءَ الله عَزَّوَجَلّ সুন্নাতের অনুসরণ, গুনাহের প্রতি ঘৃণা এবং ঈমান হিফাযতের মনমানসিকতা সৃষ্টি হয়। সবার উচিৎ যে, সৎ চরিত্রের অধিকারী মুসলমান হওয়ার জন্য মাকতাবাতুল মদীনার যেকোন শাখা থেকে মাদানী ইনআমাতের রিসালা সংগ্রহ করা এবং প্রতিদিন ফিক্‌রে মদীনা (অর্থাৎ নিজের আমলের হিসাব) করার মাধ্যমে এতে দেয়া খালি ঘরগুলো পূরণ করা। আর প্রত্যেক মাদানী মাসের প্রথম তারিখে নিজ এলাকার যিম্মাদারের নিকট জমা করার অভ্যাস গড়ে তোলা।

ওলী আপনা বানা তু উস কো রব্বে লাম ইয়াযাল,

মাদানী ইনআমাত পর করতা রহে জু ভি আমল।

صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد 

মাদানী ইনআমাতের উপর আমলকারীদের জন্য মহান সুসংবাদ

মাদানী ইনআমাতের রিসালা পূরণকারীরা যে কিরূপ সৌভাগ্যবান তার অনুমান এই মাদানী বাহার থেকে করুন। হায়দারাবাদ (বাবুল ইসলাম সিন্ধু প্রদেশ) এর এক ইসলামী ভাইয়ের কিছুটা এরকম শপথকৃত বর্ণনা: ১৪২৬ হিজরীর রজবুল মুরাজ্জব মাসের একরাতে আমার প্রিয় নবী, হুযুর صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর যিয়ারতের সৌভাগ্য অর্জন হয়। ঠোঁট মোবারক নড়তে লাগল এবং রহমতের ফুল ঝড়তে লাগল, আর প্রিয় বাক্যগুলো কিছুটা এরূপ উচ্চারিত হলো: “যে এই মাসে প্রতিদিন মাদানী ইনআমাত অনুযায়ী ফিক্‌রে মদীনা করবে আল্লাহ্ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দিবেন।” 

“মাদানী ইনআমাত” কি ভি মারহাবা কিয়া বাত হে,

কুরবে হক কে তালিবুঁ কে ওয়াসেতে সওগাত হে।

صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment