কিতাবঃ নারায়ে রেসালাতের বৈধতা [মূলঃ আলা হযরত রহ.]

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

কিতাবঃ নারায়ে রেসালাতের বৈধতা 

(আনােয়ারুল ইনতিবাহু ফি হল্লে নিদায়ে ইয়া রাসুলাল্লাহ (ﷺ)-এর বাংলা রূপ) 

মূলঃ আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান বেরলভী (রহঃ) 

অনুবাদঃ আবু সাঈদ মুহাম্মদ ইউসুফ জিলানী। 

প্রকাশকঃ মােহাম্মদ সরােয়ার হােসাইন আজীজ 

Text Ready: Sirajum Munir Tanvir 

বাড়ী নং – ১ ডি, রােড নং – ২, সেক্টর – ৩, উত্তরা, ঢাকা। 

প্রকাশকালঃ সেপ্টেম্বর ‘৯৬ইং, জুমাদিউল আউয়াল ১৪১৭ হিঃ 

কম্পিউটার কম্পােজ ও আল-আরব কম্পিউটার এন্ড প্রিন্টার্স 

আন্দরকিল্লা, চট্টগ্রাম। 

প্রচ্ছদঃ এট্যাচু এ্যাড়, আন্দরকিল্লা, চট্টগ্রাম। 

(সত্ব সংরক্ষিত) 

শুভেচ্ছা মূল্যঃ আট টাকা মাত্র। 

উৎসর্গঃ 

প্রম শ্রদ্ধেয়ী নানীজানের আত্মার মাগফিরাত কামনায় নিবেদিত। যার আদর-সােহাগ, স্নেহ-ভালােবাসা হৃদয়ের মণিকোঠায় চির ভাস্বর।

অনুবাদকের কথাঃ 

আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান বেরলভী (رحمة الله) শুধুমাত্র ভারতবর্ষে নয়, বরং বিশ্বের সর্বত্রে যিনি ব্যাপকভাবে আলাে চিত ব্যক্তিত্ব। তাঁরই লিখিত “আনােয়ারুল ইনতিবাহ্ ফি হল্লে নেদায়ে ইয়া রাসুলাল্লাহ (ﷺ)” পুস্তিকাটি অনুবাদের সৌভাগ্য হওয়ায় মহান আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। রাসুলে সৈয়দে আলম হুজুর নবীয়ে আকরম (ﷺ) কে ইয়া’ সম্বােধন সূচক শব্দ দ্বারা আহবান করা, তাঁর থেকে নিজ হাজত ও অভাব পূরণের প্রার্থনা করা, তাঁর কাছে শাফায়াত প্রার্থনা ইত্যাদি শরীয়তে কতটুকু বৈধ এবং এতে উপকারিতাও লাভ কি অত্র পুস্তিকায় এর বৈধতা এবং যারা নারায়ে রেসালাত ইয়া রাসুলাল্লাহ (ﷺ) বলাকে ভ্রান্ত, অবৈধ এবং শিরক বলে বক্তব্য করেন, তাদের ঐ উদ্ধতপূর্ণ বক্তব্য খন্ডন করা হয়েছে। পবিত্র হাদীস,সাহাবী, তাবেয়ী, তবে তাবেয়ীন, এবং শীর্ষ স্থানীয় ওলামায়ে কিরাম অসংখ্য ফিকহ গ্রন্থের উদ্ধৃতি উপস্থাপন করে তিনি তাথ্যিক এবং যৌক্তিকভাবে ভ্রান্ত মতবাদীদের মূর্খতা ও বােকা সূলভ মনগড় বক্তব্য খন্ডন করেন। আমাদের দেশের নারায়ে রেসালাত’ নিয়ে যে তুলকাম কান্ড ঘটতে যাচ্ছে এবং সত্যপন্থী মুসলমানদের মুশরিক বানানাের যে ষড়যন্ত্র চলছে, পুস্তিকাটি পাঠ করে এ ধরনের ভ্রান্তি নিরসন হবে বলে আমি আশা রাখি এবং এ উদ্দেশ্যেই এ পুস্তিকা অনুদিত। 

প্রথম প্রকাশনায় মুদ্রন জনিত কিছু বিভ্রাট থেকে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। তাই সম্মানিত আলিম এবং পাঠক-পাঠিকাদের এ ধরনের কিছু অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হলে আমাদের জানিয়ে ধন্য করবেন। এ প্রকাশনায় সবচেয়ে যার বেশী অবদান এবং যার আর্থিক, শারিরিক, কায়িক ও মানসিক পরিশ্রমে বইখানি প্রকাশিত, শ্রদ্ধেয় বড় ভাই, জনাব মুহাম্মদ সরওয়ার হােসাইন (আজিজ) (আল্লাহ তাঁকে যথাযােগ্য বিনিময় প্রদান করুন।) এ ছাড়া যারা আমাকে বিভিন্নভাবে সাহায্য-সহযােগিতা প্রদান করেছেন তাঁদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মােবারকবাদ। আল্লাহ পাক আমাদের রাসুলে পাক (ﷺ), তাঁর বংশধর এবং সাহাবায়ে কেরামের মতাদর্শমতে চলার তৌফিক দান করুন। বেহুরমতে সৈয়দুল মুরসালীন। আমীন। 

বিনীত, আবু সাঈদ মুহাম্মদ ইউসুফ জিলানী 

এক নজরে ইমাম আহমদ রেযা (رحمة الله)

জন্মঃ (বেরলী শরীফ) ১৪ই জুন, ১৮৫৬ ইং, ১০ই সাওয়াল ১২৭২ হিজরী। 

কুরআন করীম পাঠ শেষঃ ১৮৬০ ইং, ১২৭৬ হিজরী (মাত্র ৪ বছর বয়সে)। 

প্রথম বক্তৃতাঃ ১৮৬২ ইং, ১২ই রবিউল আওয়াল, ১২৭৮ হিজরী, (৬ বছর বয়সে)। 

সর্বপ্রথম পুস্তক রচনাঃ শরহে হিদায়াতুন্নাহু আরবী (আরবী ব্যাকরণ) ১৮৬৪ ইং, ১২৮০ হিজরী, (৮ বছর বয়সে)। 

সবচেয়ে জটিলতর কিতাব মুসাল্লেমুস সবুতের ব্যাখ্যাগ্রন্থ রচনা ১৮৬৬ ইং, ১২৮৬ হিজরী। 

দস্তারে ফজীলত (শেষবর্ষ সনদ লাভ)ঃ ১৮৬৯ ইং, ১২৮৬ হিজরী। 

ফতােয়া প্রদানের গুরুভারঃ ১৮৬৯ ইং, ১২৮৬ হিজরী। দাম্পত্য জীবনের সূচনাঃ ১৮৭৪ ইং, ১২৯১ হিজরী। প্রথম সাহেবজাদার জন্মঃ ১৮৭৫ ইং, ১২৯২ হিজরী, রবিউল আওয়াল। 

প্রথম হজ্জব্রত পালনঃ ১৮৭৬ ইং, ১২৯৬ হিজরী। জিয়াউদ্দিন আহমদের উপাধি (মক্কায়)ঃ ১৮৭৬ ইং, ১২৯৬ হিজরী। 

খেলাফত লাভঃ ১৮৭৭ ইং, জুমাদিউল আওয়াল, ১২৯৪ হিজরী। 

প্রথম ফার্সী গ্রন্থ রচনাঃ ১২৯৯ হিজরী, ১৮৮১ ইং। 

দ্বিতীয় সাহেবজাদার জন্ম (মুফতী আযম হিন্দ)ঃ ১৮৯২ ইং, ২২ জিলহজ্জ, ১৩১০ হিজরী। 

নদওয়াতুল ওলামা বিরােধী সম্মেলনে অংশগ্রহণঃ ১৯০০ ইং, ১৩১৮ হিজরী। 

রাসুলে খােদা (ﷺ)-এর পিতামাতার মুসলমান হওয়া বিষয়ক গ্রন্থ রচনা ১৩১৫ হিজরী। 

ওলামা হিন্দের পক্ষ হতে মুজাদ্দিদ উপাধি লাভঃ ১৯০০ ইং, ১৩১৮ হিজরী। 

কুরআন করীমের বিশুদ্ধতম অনুবাদ প্রকাশঃ ১৩৩০ হিজরী, ১৯১১ ইং। 

আল মু’তামিদুল মুসতানাদ রচনাঃ ১৯০২ ইং, ১৩২০ হিজরী।

 ফতােয়া-ই রেভিয়া ১২ খন্ডে সমাপ্ত প্রতি খন্ড ১০০০ পৃঃ ব্যাপী জাহাজী সাইজে শ্রেষ্ঠতম ফতােয়া সংকলন ১৯০৪ ইং, ১৩২২ হিজরী। 

প্রিয়নবী (ﷺ)-এর ‘ইলমে গায়র’ সম্পর্কিত বিশ্ব আলােড়ন সৃষ্টিকারী গ্রন্থ ‘আদদৈালাতুল মক্কীয়াহ (অনুবাদক কর্তৃক তা বাংলায় প্রকাশিত হয়েছে) রচনা ১৩২৩ হিজরী ১৯০৫ ইং। 

দ্বিতীয়বার হজ্জব্রত পালনঃ ১৯০৫ ইংরেজী, জিলকদ ১৩২৩ হিজরী।

 হুসসামুল হারামাঈন রচনাঃ ১৩২৪ হিজরী, ১৯০৬ ইং। 

ছােট সাহেবজাদার জন্মঃ ১৩২৫ হিজরী, ১৯০৭ ইং।

 ভাওয়ালপুর সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতির রায়ের বিশ্লেষণধর্মী জবাব ১৩৩১ হিজরী, ১৯১৩ইং। 

রাজনীতি বিষয়ক আলােড়ন সৃষ্টিকারী গ্রন্থ রচনা ১৯১২ ইং। 

কানফুর মসজিদ চত্বরে বৃটিশ প্রশাসনের সাথে চুক্তি সম্পাদনকারীদের সমালােচনা মূলক গ্রন্থ রচনা ১৩৩১ হিজরী, ১৯১৩ ইং। 

তাজিমী সিজদা হারাম সম্পর্কিত গ্রন্থ রচনাঃ ১৯১৮ ইং, ১৩৩৭ হিজরী। 

গ্রীক ও বস্তুবাদী দর্শনের খন্ডন ১৩৩৮ হিজরী। দ্বিজাতি তত্বের উপর কলমধারণ ১৩৩৯হিঃ, ১৯২১ ইং। 

ওফাতঃ ২৮শে অক্টেবর ১৯২১ ইং, ২৫শে সফর ১৩৪০ হিজরী। উল্লেখ্য যে, ইমাম আহমদ রেযা খান বেরলভী (رحمة الله)-এর বয়স ইংরেজী হিসেব মতে ৬৫ বছর, আর হিজরী সন মতে ৬৮ বছর হয়। 

সংগ্রহ করুনঃ

উপমহাদেশের শ্রেষ্টতম কলমের সিপাহসালার, আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান বেরলভী (رحمة الله)-এর বিশ্ব আলােড়ন সৃষ্টিকারী গ্রন্থ সুদূর মক্কা শরীফে তীব্র রােদ্রের উপর দাঁড়িয়ে মাত্র ৮ ঘন্টায় লিখিত “আদ দৌলাতুল মক্কীয়াহ বিল মাদ্দাতিল গায়বিয়াহ আবু সাঈদ মুহাম্মদ ইউসুফ জিলানী কর্তৃক বাংলায় অনুদিত ও এ. এম. জামেউল আখতার চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত হয়ে বের হয়েছে। আপনার নিকটস্থ লাইব্রেরীতে খোঁজ করুন। 

ফতােয়ার আবেদন

মহামান্য ও সম্মানিত ওলামায়ে দ্বীনের এ মাসয়ালা সম্পর্কে অভিমত কি যে, জায়েদ নামক এক ব্যক্তি যিনি একত্ববাদে বিশ্বাসী, মুসলমান, আল্লাহ ও রাসুলকে ভালভাবে চিনেন ও জানেন। নামাজের পর অন্যান্য সময়ে রাসুলে পাক (ﷺ) কে (ইয়া) আহবান সূচক শব্দ দ্বারা সাহায্য প্রার্থনা করেন এবং 

اشل الشاقة يا  الصلوة الشم عليك يارسول الله 

(হে আল্লাহর রাসুল! আপনার উপর দরুদ ও সালাম, হে আল্লাহর রাসুল, আমি আপনার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করছি) ইত্যাদি বলে থাকেন। এটা বলা বৈধ কিনা? কোন ব্যক্তি যদি তাকে ঐ বাক্য বলার কারণে কাফের ও মুশরিক বলে, তাহলে তার হুকুম কি? কিতাবের দলীল সহকারে বর্ণনা করুন। 

বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহীম 

الحمد لله وكفى والصلوة والسلام على حبيبه المصطفى 

وأله وأصحابه أولى الدق والشقاء . 

জবাবঃ উপরােক্ত বাক্যাবলী অবশ্যই বৈধ। যার বৈধতার ব্যাপারে নির্বোধ, মুখ অথবা পথভ্রষ্ট ও পথভ্রষ্টকারী ব্যতিত কেউ মুখ খুলবেনা। তাদের জন্যই এ মাসয়ালা সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনার প্রয়াস। 

শিফাউস সিকাম কৃতঃ ইমাম তত্ত্বীউদ্দীন আবুল হাসান আলী সুবকী (رحمة الله) মাওয়াহেবে লাদুনিয়া কৃতঃ ইমাম আহমদ কুস্তলানী (رحمة الله) বুখারী শরীফ ভাষ্যকার, শরহে মাওয়াহিব কৃতঃ আল্লামা জুরক্বানী (رحمة الله), মুতালিউল মুসাররাত কৃতঃ আল্লামা ফারেসী (رحمة الله), মিরকাত শরহে মিশকাত কৃতঃ মােল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله), লুমআত, আশয়াতুল লুমআত, মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থাবলী, জযবুল কুলুব ইলা দিয়ারিল মাহবুব ও মাদারেজুন্নবুয়ত ইত্যাদির গ্রন্থকার শেখ মােহাক্কেক আবদুল হক মােহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله),আফজালুল কুরা শরহে ইমামুল কুরা ইমাম ইবনে হাজর মক্কী (رحمة الله) ইত্যাদি আকায়েদ ও কালাম শাস্ত্রের ইমাম, আলিম ও মুজতাহিদদের গ্রন্থাদি ফিরিয়ে নিন।কেননা, এগুলােতে এর বৈধতা সম্পর্কে বর্ণনা রয়েছে) অথবা অধমের পুস্তিকা “আল ইহলাল বিষয়যিল আওলিয়ায়ে বাদাল বেসাল” পাঠ করুন। | এ নগণ্য বান্দা এখানে সংক্ষিপ্তভাবে প্রয়ােজনীয় কতেক বর্ণনা উদ্ধৃত করছি। 

নিম্নোক্ত হাদিসটি বিশুদ্ধ বলে অভিমত প্রকাশ করে ইমাম নসায়ী, ইমাম তিরমিজী, ইবনে মাজা, হাকেম, বায়হাক্বী, ইমামুল আয়িম্মাহ্ ইবনে খুযায়মাহ্ ও আবুল কাসেম এবং তাবরানী হযরত উসমান (رحمة الله)-এর সুত্রে বর্ণনা করেন। আর তিরমিজী, হাসনে গরীবে সহীহ, তাবরানী ও বায়হাকী সহীহ এবং হাকেম বুখারী ও মুসলিমের শর্তে সহীহ (বিশুদ্ধ) বলেছেন। আর ইমাম আবদুল আজীম মুনজেরী প্রমুখ অনুসন্ধানী ইমামগন এর বিশুদ্ধতা নির্ভরযােগ্য বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। যাতে হুজুরে সৈয়দে আলম (ﷺ) একজন অন্ধকে দোয়া শিক্ষা ও দিয়েছেন যে, এ দোয়া নামাজের পরে পাঠ করবে-

اللهم ان اسئلك واتوه إليك بنبيك محمد نبي الرحمة 

يا محمد إني أتوجه بك الى ربى في حاجتي هذه ليقضي لي 

اللهم فقعه ف – 

অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি। আর আপনার রহস্যপূর্ণ নবী হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)-এর উসিলায় ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি হুজুরের উসিলায় আপনার দিকেই মনােনিবেশ করছি। স্বীয় রবের দিকে এ প্রয়ােজনে (হাজত) মনােনিবেশ করছি যে, আমার প্রয়ােজন এবং অভাব পুরণ হােক। হে আল্লাহ! তাঁর শাফায়াত আমার পক্ষে কবুল করুন। 

হাদিস

প্রথমঃ-

ইমাম তাবরানীর মু’জাম গ্রন্থে এভাবেই রয়েছে-

اين رجلا كان يختلف الى ثمان بن عفان رضى الله تعالی عنه في حاجته له وگان عثمان لا يلتفت إليه ولا ينظر في حاجه فلقى عثمان بن حنيني رضى الله تعالی عنه فشكي ذلك إليه فقال له عثمان بن حنیف رضى الله تعالی عنه إئت الميضاة فتوضاء ثم ائت المسجد فصلي فيه ركعتين ثم قال- “اللهم اى اشتالك واتوه اليك بنبينا محمد صلي الله تعالي عليه وسلم نبي الرحمة يا محمد اني اتوجه بك الي ربي

ليقضى حاجتي وتذكر حاجتك مع مماثطلق الرجل صنع ما قال له ثم اتي باب ثمان بن عفان رضي الله عنه فجاء اليواب حتي أخذه بيده فادخله عثمان بن عفان رضی الله تعالى عنه فاجلسه معه على الثقة وقال ل  ما حاجتك فذكر حاجته فقضاها ثم قال ماذكرت حاجتك حتى كانت هذه الساقة وقال ماكان لك من حاجة فأتنا ثم أن الرجل خرج من عنده فلقى عثمان بن حنيف رضى الله تعالی عنه فقال له جزاك الله خيرا ماكان ينظر في حاجتي ولا يلتفت إلى حتى كلمته في تقال عثمان بن حنيف رضى الله تعالى عنة والله ماكلمته ولكن شهدت رسول الله صلی الله تعالى عليه وسلم وأتاه رجل ضريرفشكا اليه هاب بصره فقال له النبي صلى الله تعالى عليه وسم ائت الميضاة فتوضئا مع ركعتين ثم ادع بهذه الدعوات فقال عثمان بن حنيف رضى الله تعالى عنه فوالله مافرقنا وطال بنا الحديث حتی دخل علينا الرجل كانه لم يكن به ضر قط.. 

অর্থাৎ, একজন অভাবগ্রস্ত নিজ অভাব ও প্রয়ােজন দূরিভূত হওয়ার জন্য আমীরুল মুমেনীন হযরত ওসমান ইবনে আফফান (رضي الله عنه)-এর খেদমতে আসা যাওয়া করতেন। আমীরুল মুমেনীন না তার দিকে দৃষ্টিপাত করতেন, না তাঁর হাজতের দিকে দেখতেন। তিনি হযরত ওসমানের নিকট এর অভিযােগ উত্থাপন করেন। তিনি বললেন, ওযু করে মসজিদে দু’রাকাত নামাজ পড়াে; অতঃপর এভাবে দোয়া প্রার্থনা করাে -“হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট প্রার্থনা করছি। এবং আমাদের নবী মুহাম্মদ (ﷺ)-এর উসিলায় আপনার দিকে মনােনিবেশ করছি। ইয়া রাসুলাল্লাহ্ (ﷺ) আমি হুজুরের প্রার্থনায় স্বীয় রবের দিকে মনােনিবেশ করছি যে, আমার অভাব পুরন করুন। আর নিজ হাজত বর্ননা পূর্বক পুনরায় আমার কাছে আসবে, আমিও তােমার সাথে গমন করবাে। হাজত প্রার্থী (তিনিও সাহাবী অথবা কতকের মতে শীর্ষস্থানীয় তাবেয়ী ছিলেন) এভাবেই করেন,অতঃপর খলিফার দ্বারে উপস্থিত হন। দারােয়ান আসলেন এবং হাত ধরে আমীরুল মুমেনীনের সম্মুখে নিয়ে গেলেন। আমীরুল মুমেনীন (رضي الله عنه) তাঁকে নিজের সাথে স্বীয় মসনদে বসালেন এবং উদ্দেশ্য জিজ্ঞেস করলেন। তিনি নিজ উদ্দেশ্য আরজ করলেন। অতঃপর তিনি তা পুরণ করলেন এবং ইরশাদ করলেন-এতদিন পরেই তুমি নিজের উদ্দেশ্য ব্যক্ত করেছে। অতঃপর বললেন, তােমার যেই অভাবই হউক না কেন, আমার নিকট চলে আসবে। ঐ ব্যক্তি সেখান থেকে বের হয়ে হযরত উসমান ইবনে হুনাইফ-এর সাথে সাক্ষাৎ করলেন এবং বললেন, আল্লাহ তায়ালা আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুক। আমীরুল মুমেনীন আমার দিকে এবং আমার অভাবের দিকে এতদিন দৃষ্টিপাত করেননি, এমনকি শেষ পর্যন্ত আপনি তাঁর নিকট আমার জন্য সুপারিশ করেছেন। হযরত উসমান ইবনে হুনাইফ (رضي الله عنه) বললেন, আল্লাহর শপথ! আমি তােমার সম্পর্কে আমীরুল মুমেনীনকে কোন কিছু বলিনি। কিন্তু ব্যাপার হলাে এ যে, আমি সৈয়দে আলম হুজুর পুরনুর (ﷺ) কে দেখেছি, তাঁর নিকট একজন অন্ধ উপস্থিত হলেন এবং তার অন্ধত্বের অভিযােগ করলেন। হুজুর (ﷺ) এভাবেই ইরশাদ করলেন যে, ওযু করে দু’রাকাত নামাজ আদায় করাে অতঃপর এ দোয়া করাে। আল্লাহর শপথ! আমরা এখনও উঠতেই পারেনি। সে কথা বলতে বলতে আমাদের নিকট এসে গেলাে।যেমন সে কখনাে অন্ধ ছিলাে না। | 

ইমাম তাবরানী অতঃপর ইমাম মানজুরী (رحمة الله) বলেন -হাদীসটি বিশুদ্ধ।

হাদিস

দ্বিতীয়- 

ইমাম বুখারী (رحمة الله) কিতাব “আল-আদাবুল মুফরাদাত”, ইমাম ইবনে বিশকওয়াল বর্ণনা করেন-

 ان بر عمر رضي الله تعالي عنهما خدرت رجله فقيل له اذكر احب الناس اليك فصاح يا محمداه فانتشرت.. 

 অর্থাৎ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (رحمة الله)-এর উভয় পা অবশ হয়ে গেলাে, কেউ জিজ্ঞেস করলেন, তাঁকে স্বরণ করুন, যিনি আপনার সবচেয়ে প্রিয় মাহবুব। হযরত ইবনে ওমর (رحمة الله)সমুস্বরে আহবান করলেন ‘ইয়া মুহাম্মদাহ’ (হে মুহাম্মদ (ﷺ)) সাথে সাথে তাঁর পা খুলে গেলাে। 

ইমাম নববী (رحمة الله) মুসলিম শরীফ ভাষ্যকার ‘কিতাবুল আযকারে’, অনুরূপ হাদীস হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন-“তাঁর পায়ে কাঁটাবিদ্ধ হলাে, তিনি ইয়া মুহাম্মদাহ্ বললে তা ভালাে হয়ে গেলাে। এ কার্য এ দু’মহান সাহাবী ছাড়া আরাে অনেকের থেকে বর্ণিত হয়েছে। মদীনাবাসীদের মধ্যে প্রাচীন কাল থেকেই “ يا محمداه” (ইয়া মুহাম্মাদাহ) বলার প্রচলন চলে আসছিলাে। 

আল্লামা শিহাবুদ্দীন খাফাজী মিসরী (رحمة الله) নসীসুর রিয়াদ শরহে শিফা কৃতঃ ইমাম কাজী আয়াজ-এ বলেন- 

هذا مما تعاهده اهل المدينة.. 

 অর্থাৎ মদীনাবাসীরা (তাঁদের এ প্রাচীন) প্রচলন নবায়ন করলেন। | হযরত বেলাল ইবনে হারিছ মুনী (رحمة الله) থেকে ‘আমুর রুমাদাহ’ দুর্ভিক্ষে যা হযরত ফারুকে আযম (رحمة الله) -এর খেলাফতের পর ১৮ হিজরীতে সংঘটিত হয়েছিলাে। তাঁর সম্প্রদায় বনু মুনিয়া আবেদন করেন, মরে যাচ্ছি, কেউ ছাগল জবেহ করুন। বললেন, ছাগলের মধ্যে কিছু নেই, তাঁরা স্বীকার করলেন। পরবর্তীতে জবেহ করলেন। খাল (চামড়া) পরিশােধন করা হলে লাল হাডিড বের হলাে। এটা দেখে হযরত বেলাল (رحمة الله) প্রার্থনা করেন, ‘ইয়া মুহাম্মদাহ’। অতঃপর হযরত হুজুর আকদাস (ﷺ) স্বপ্নে তশরীফ এনে সু-সংবাদ প্রদান করেন। এ ঘটনা কামিল’ গ্রন্থে বর্ণনা করা হয়েছে। 

ইমাম, মুজতাহিদ, ফকীহ্ আবদুর রহমান হুজালী কুফী মাসউদী, যিনি হযরত ইবনে মাসউদের প্রপৌত্র এবং শীর্ষস্থানীয় তবে-তাবেয়ীন ও মােজতাহিদের অন্যতম ছিলেন। মাথার উপর টুপী রাখতেন যাতে লিখা ছিলাে-

محمد يا منصور

 (মুহাম্মদ ইয়া মানসুরু’), আর প্রকাশ থাকে যে, 

القلم احد للسائلين

(আল কালামু আহাদুল লিসানাইন) ..

হায়শম ইবনে জমীল ইনতাকী যিনি নির্ভরযােগ্য মুহাদ্দিস ওলামাদের অন্যতম। তিনি যুগের ইমাম সম্পর্কে বলেন-

ورأيته وعلى رأسه قلنسوة أطول من ذراع مكتوب فيها محمد یا منصور ذكره في تهذيب التهذيب وغيره 

অর্থাৎ আমি তাকে এ অবস্থায় দেখেছি যে, তাঁর মাথার উপর এক গজ পরিমাণ টুপী ছিলাে। যাতে মুহাম্মদ ইয়া মানসুরু’ লিপিবদ্ধ ছিলাে। যা ‘তাহযীবুত তাহযীব ইত্যাদিতে উল্লেখ করেন। |

ফতোয়া-

 ইমাম শায়খুল ইসলাম শিহাবুদ্দীন রামলী আনসারীর ফতােয়ায়’ রয়েছে-

 سئل عما يقع من العامة من قولهم ثد الشدائد يافلان ونحو ذلك من الإستقائ بايد نبياء والمرسلين والإلحين وهل للمشائخ امائة بعد موتهم أم لا فأجاب بما له آ الاستغاثة بالأنبياء والمرسلين  والعلماء الصالحين جائزة للانبياء والمرسلين والأولياء والصالحين اغاثة بعد موتهم.. 

 অর্থাৎ তার থেকে ফতােয়া তলব করা হলাে যে, সর্ব সাধারণ লােকেরা কঠোর বিপদের মুহুর্তে নবী, রাসুল, ওলী ও সৎলোেকদের থেকে প্রার্থনা করেন আর “ইয়া রাসুলাল্লাহইয়া আলী;‘ইয়া শেখ আবদুল কাদের জিলানী এবং এ ধরণের বাক্য বলে থাকেন। এটা বৈধ কিনা? আর ওলীগণের ইনতিকালের পরও তাদের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করেন। এটা কি বৈধ? তিনি জবাব দিলেন যে, নিশ্চয়ই নবী, ওলী, রাসুল ও ওলামাদের থেকে সাহায্য প্রার্থনা করা বৈধ এবং তাঁরা ইনতিকালের পরও সাহায্য করে থাকেন। 

আল্লামা খায়রুদ্দীন রমলী ‘দুররে মােখতার’ গ্রন্থকারের উস্তাদ ফতােয়ায়ে খায়রিয়ায় বলেন-

قولهم ياشيخ عبد القادر ندا فما الموجب لحرمته 

(লােকেরা বলে থাকেন যে, “ইয়া শেখ আব্দুল কাদের’,এটা একটা আহবান। অতঃপর এর অবৈধতার কারণ কি?) 

সৈয়দী জামাল ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে ওমর মককী (رحمة الله) স্বীয় ফতােয়ায়’ বলেন-

سئلت عمن يقولون في حال الشدائد يا رسول الله ويا على اشيخ عبد القادر مثلا هل جا ئز شرعا آم لا أحيت نعم الإشتقائه بالأولياء ونداء هم والتوسل بهم آمر مشروع وشي مرغوب لا ينكره الأمكابر ومعاند وقد حرم بركة الولياء الكرام

 অর্থাৎ আমাকে জিজ্ঞেস করা হলাে ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে আপনার অভিমত কি যে বিপদের সময় ইয়া রাসুলাল্লাহ’ ‘ইয়া আলী’ এবং ইয়া শেখ আবদুল কাদের ইত্যাদি বলে থাকে। শরীয়তের দৃষ্টিতে এগুলাে বৈধ কিনা? আমি জবাব দিলাম হাঁ! আওলিয়ায়ে কিরাম থেকে সাহায্য প্রার্থনা করা, তাঁদের আহবান করা এবং তাঁদের সাথে অন্যের জন্য প্রার্থনা করা, শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ ও পছন্দনীয়। যা অস্বীকার করা যায় না কিন্তু গোঁয়ার ও অবাধ্যরা। নিশ্চয়ই তারা আওলিয়ায়ে কেরামের বরকত থেকে বঞ্চিত। 

ইমাম ইবনে জুজী ‘উয়ুনুল হিকায়াত’ গ্রন্থে তিনজন মহান ওলীর ঐতিহাসিক ঘটনা পরস্পর সনদ সহকারে রেওয়ায়েত করেন। তিনি বলেন, তাঁরা তিন ভাই শামের ‘দেলাওয়ার’ নামক স্থানে সওয়ার ছিলাে। তাঁরা সর্বক্ষণ আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করতেন। 

فاسر هم الروم مرة فقال لهم الملك اني اجعل فيكم الملك وازوجكم بناتي وتدخلون في نصرانية فابوا قالوا يا محمداه

অর্থাৎ একদা রােমের খৃষ্টানরা তাদের বন্দী করে নিয়ে যায়। বাদশাহ তাঁদের বললেন, আমি তােমাদের রাজত্ব প্রদান করবাে এবং আমার মেয়েদের তােমাদের নিকট বিবাহ প্রদান করবাে, তােমরা খৃষ্টান হয়ে যাও। তারা অস্বীকার করেন এবং আহবান করেন ‘ইয়া মুহাম্মাদাহ’। বাদশাহ তৈল গরম করে দু’জনকে তাতে নিক্ষেপ করেন। তৃতীয় ব্যক্তিকে আল্লাহ তায়ালা একটি কারণ সৃষ্টি করে বাঁচালেন। ঐ দু’জন ছয়মাস পর একদল ফেরেস্তা সহকারে জাগ্রতাবস্থায় তাঁর নিকট আসেন আর বলেন, আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তােমার বিবাহানুষ্ঠানে অংশ গ্রহণের জন্য প্রেরণ করেন। তিনি তাদের থেকে অবস্থা জিজ্ঞেস করেন, তারা বলেন 

ماکائث الا العظة التي رأيت حتى خرجنا في 

الفردوس – 

(ঐটা একটা তৈলের কুন্ড ছিলাে যা তুমি দেখেছিলে। এরপর আমরা জান্নাতুল ফেরদাউসে চলে গেলাম ) 

ইমাম ইবনে জুজী (رحمة الله) বলেন – 

كانوا مشهورين بذالك معروفين بالشام في الزمن الأول 

(এ মহাত্মারা পূর্ববর্তী (সলফে সালেহীনের) পূণ্যবান লােকদের যুগে সিরিয়ায় প্রসিদ্ধ। ছিলাে আর তাঁদের এ ঘটনাও সাপী প্রসিদ্ধ ছিলাে।)। 

অতঃপর বলেন, কবিগণ তাঁদের প্রশংসায় (কৃাসীদা) কবিতা লিখেছেন। যার একটি পংক্তি – 

يغطى الضيقين بفضل صدق * نجاة في الحيات وفى الممات 

অর্থাৎ অতিসত্তর আল্লাহ তায়ালা সত্যিকার ঈমানদারদেরকে তাঁদের সত্যের বরকত দ্বারা ইহজগত ও পরজগতে মুক্তি প্রদান করেন। এটা বিস্ময়কর, সুক্ষ্ম এবং রহস্যে পরিপূর্ণ ঘটনা। দীর্ঘ হওয়ার আশংকায় সংক্ষেপ করেছি। 

শরহুস সুদুর(ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ুতী রহঃ)-

পরিপূর্ণ ঘটনা ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতির (رحمة الله) শরহুস সুদুরে রয়েছে। বিস্তারিত ঘটনা জানতে হলে ‘শরহুস সুদুর’ পাঠ করুন। এখানে উদ্দেশ্য শুধু এটুকু যে, বিপদের সময় “ইয়া রাসুলাল্লাহ্” তথা নারায়ে রেসালতের বৈধতার প্রমান করা। যদি তা শিরক হয়, তাহলে মুশরিকের ক্ষমা ও শাহাদাত নসীব হলাে কিভাবে এবং জান্নাতুল ফেরদাউসে স্থান লাভ করার মর্মার্থ কি? আর তাঁদের বিবাহে ফেরেস্তা প্রেরণ কতটুকু যুক্তিসঙ্গত? আর এ ইমামগণও কিভাবে তা গ্রহনযােগ্য এবং তাঁদের শাহাদাত ও বেলায়তের স্বীকৃতি প্রদান করলেন? আর ঐ মহাত্মারা স্বয়ংও সলফে সালেহীনের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন। কেননা, এ ঘটনা তারতম-এর আবাদের পূর্বেকার ছিলাে। 

كما ذكر في الرواية نفسها

(যেমন মূল রেওয়ায়েতে উল্লেখ রয়েছে আর তারতােমে একটি নগর রয়েছে অর্থাৎ দারুস সালামের সীমান্ত নগর, যা খলীফা হারুনুর রশীদ আবাদ করেছেন। যেমন ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতি (رحمة الله) তারীখুল খােলাফায় বর্ননা করেছেন। বাদশাহ্ হারুনুর রশীদের যুগ তাবেয়ীন ও তবেতাবেয়ীনের যুগ ছিলাে। সুতরাং এ শহীদদ্বয় তাবেয়ী ছিলেন না বলে ধরে নিলেও কমপক্ষেতাে তবেতাবেয়ীন অবশ্যই ছিলেন। আল্লাহ তায়ালাই পথ-প্রদর্শনকারী। 

টীকা:- ১. ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতি (رحمة الله) “শরহুস সুদুরে পূর্ণাঙ্গ ঘটনাটি এভাবেই ব্যক্ত করেন। সম্মানিত পাঠক পাঠিকার সুবিধার্তে আমি নিম্নে তা উল্লেখ করছি। সিরিয়ায় তিন সহােদর ভাই উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন, প্রবল সাহসী যােদ্ধা, বাহাদুর এবং মুজাহিদ ছিলাে। রােম সৈনিকরা তাঁদের গ্রেফতার করে নিলাে। রােম সম্রাট ভ্রাতৃত্রয়ের যৌবন এবং সৌন্দর্য দর্শনে প্রভাবিত হয়ে বললাে, তােমরা যদি খৃষ্টান হয়ে যাও, তাহলে আমি নিজ শাহজাদীদের সাথে তােমাদের বিবাহ করিয়ে দিবাে এবং তােমাদের রাজত্বও প্রদান করবাে। ভ্রতত্রয় বাদশাহর এ প্রস্তাব সবিনয়ে প্রত্যাখান করেন। তাদের আচরণে ক্রুদ্ধ হয়ে বাদশাহ তিনটি পাত্রে চর্বি ও সরিষার তৈল পাক করার নির্দেশ দেন। তিনদিন পর্যন্ত তৈলের পাত্র খােলা ছিলাে, আর ঐ। পাত্রগুলাে দৈনিক তাদের দেখানাে হতাে এবং বলা হতাে, হয়তঃ তােমরা খৃষ্টান হয়ে যাও, নয়তাে তােমাদের এ পাকানাে তৈলে দগ্ধ করা হবে। কিন্তু তাঁরা মজবুত, সুদৃঢ় ও পাহাড়সম। ঈমানের উপর স্থির থাকেন। ঐ জালেমরা প্রথমে বড় ভাইকে আগুনে নিক্ষেপ করেন, অতঃপর মেঝ ভাইকে। ভ্রাতৃদ্বয় يا محمداه (ইয়া মুহাম্মাদাহ) নারা ও আহবান করে আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং শাহাদাতের মহান গৌরব অর্জন করেন। ছােট ভাইকে যখন পাত্রের নিকটে নেয়া হলাে, বাদশাহর এক রাজকর্মকর্তার তাঁর প্রতি করুণা হলাে। তিনি বললেন, হে সম্রাট! একে চল্লিশ দিনের জন্য অবকাশ প্রদান করুন। আমি তাকে যে কোন প্রকারে খৃষ্টান বানিয়ে ফেলবাে। রাজ কর্মচারী ঐ মুজাহিদকে নিজ গৃহে নিয়ে যান এবং নিজের যৌবনা ও অতিসুন্দরী মেয়েকে তাঁর পাশে রেখে দেন। যেন ঐ সুন্দরী মেয়ের প্রতি মুগ্ধ হয়ে মুজাহিদ খৃষ্টান হয়ে যায়। কিন্তু এ মুত্তাকী, পরহেজগার এবং আবেদ মুজাহিদ সারারাত্র নফল নামাজ ও ইবাদতে অতিবাহিত করেন, আর সারা দিন রােযায় কেটে দেন। রাজকর্মচারীর মেয়ে মুজাহিদের তাকওয়া ও ইবাদতে এমনভাবে মুগ্ধ হলাে যে, সে নিজেই তাঁর প্রেমে পড়ে গেলাে এবং কলেমা পাঠ করে মুসলমান হয়ে গেলাে। আর রাত্রে দু’টি ঘােড়া নিয়ে মুজাহিদকে বললাে, চলাে আমরা উভয় এ নগর ত্যাগ করে চলে যাই এবং তথায় আমরা বিবাহ করে এক সাথে থাকবাে। এরপর তাঁরা সেখান থেকে এভাবেই বেরিয়ে গেলেন যে, সারারাত্র তাঁরা সফর করতেন আর দিনে লুকিয়ে থাকতেন। শেষ পর্যন্ত তাঁরা একরাত্রে চলে যাচ্ছেন এমতাবস্থায় কতেক ঘােড়ার আওয়াজ তাঁদের কর্ণে প্রবেশ করলাে। মুজাহিদ সামনে এগেিয় দেখেন যে, এরা তাঁর ঐ দু’ভাই যাদের পাকানাে তৈলে নিক্ষিপ্ত করা হয়েছিলাে এবং তাঁদের সাথে কতেক ঘােড়ার দৌড়ের আওয়াজ আসছিলাে। মুজাহিদ আরাে নিকটে গিয়ে দেখেন তাঁরা হলেন তাঁর ঐ দু’ভাই যাদের আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছিলাে। আর তাঁদের সাথে ঘােড়ায় আরােহীরা ফিরিস্তাদের একটি দল ছিলাে। মুজাহিদ তাঁর ঐ দু’ভাইকে সালাম করেন এবং তাঁদের অবস্থা সম্পর্কে খােজ-খবর নেন। তাঁরা উভয় বলতে লাগলেন, আমাদের অবস্থা এ যে, আমরা তৈলে ডুব মেরেছি এরপর জান্নাতে পৌঁছে গেছি। এখন আমরা আল্লাহর নির্দেশে এখানে এসেছি যেন এ পবিত্র ও নেক মেয়ের বিবাহে শরীক হতে পারি। এরপর এ উভয় ভাই ফেরেস্তাদের সাথে তাঁদের বিবাহে শরীক হন অতঃপর রওয়ানা হয়ে যান। আর এ বর-কন্যা নিরাপত্তার সাথে সিরিয়ায় (নিজ বাড়ীতে) পৌঁছে যান। (অনুবাদক)। 

গাউসুল অাযম হযরত অাব্দুল কাদের জিলানি (রহ:)এর বাণী:-

হুজুর সৈয়দুনা গাউসে আজম (رحمة الله) বলেন 

من استغاث بى فى كربة كشفت عنه ومن نادی باسمى   

فى شدة فرجت عنه ومن توسل بي الي الله تعالي في حاجته قضيت له ومن صلى ركعتين يصلي على رسول الله صلى الله عليه وسلمابعد السلام ويسلم عليه ثم يخطؤا الي جهة العراق إحدى عشرة خطوة يذكر فيها اسمی ويذكر  في حاجته فانها تقضی ۔ 

অর্থাৎ যে ব্যক্তি কোন কষ্টের সময় আমার নিকট প্রার্থনা করবে, তার সে কষ্ট দূরিভূত হয়ে যাবে। আর যে কেউ কোন কঠিন বিপদের সময় আমার নাম নিয়ে আহবান করবে, তাহলে সে বিপদ দূর হবে, আর যে ব্যক্তি কোন হাজত ও প্রয়ােজন পুরােনার্থে আল্লাহর পক্ষ থেকে আমার নিকট প্রার্থনা করবে এবং সে প্রয়ােজন সমাধার জন্য আরাে দু’রাকাত নামাজ আদায় করবে, প্রত্যেক রাকাতে সুরা ফাতেহার পর সুরা ইখলাস এগারবার করে পাঠ করে, অতঃপর সালাম ফিরানাের পর রাসুলে করীম (ﷺ) -এর উপর দরুদ শরীফ প্রেরণ করে, অতঃপর ইরাকের দিকে এগার কদম গমন করে এবং সে সময় আমার নাম স্বরণ করে এবং নিজ প্রয়ােজন স্মরণ করে, তার সে প্রয়ােজন পুরণ হয়। | উম্মতের শীর্ষস্থানীয় ওলামা কিরাম ও আওলিয়াইজাম যেমন ইমাম আবুল হাসন নুরুদ্দীন আলী ইবনে জরীর শাহমী সানতুফী, ইমাম আবদুল্লাহ্ ইবনে আসআদ ইয়াফেয়ী মককী, আল্লামা আলী ক্বারী মককী মিরক্বাত শরহে মিশকাত গ্রন্থকার, আল্লামা আবুল মায়ালী মুহাম্মদ সালমা কাদেরী এবং শেখ মােহাকে আবদুল হক মােহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) প্রমুখের স্বীয় গ্রন্থসমূহ যথাক্রমে বাহজাতুল আসরার, খুলাসাতুল মাফাখির, নুজহাতুল খাতির ওয়াল ফাতির, তােহফায়ে কাদেরী এবং জুবদাতুল আসার ইত্যাদিতে উপরােক্ত বক্তব্য হযরত সৈয়দুনা গাউসে আজম (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন। | ‘বাহজাতুল আসরার’ প্রণেতা ইমাম আবুল হাসন নুরুদ্দীন আলী (رحمة الله) শীর্ষস্থানীয় ওলামা, কিরাতের ইমাম ও আকাবিরে আউলিয়া এবং তরীকৃতের সম্মানিত ব্যক্তিত্বদের অন্যতম ছিলেন। হুজুর গাউসুস সাল্কালাঈন ও তাঁর মধ্যকার শুধুমাত্র দু’টি মধ্যস্থতাই রয়েছে। ইমাম আজল হযরত আবু সালিহ (رحمة الله) থেকে ফয়েজ হাসিল করেছেন। তিনি স্বীয় সম্মানিত পিতা আবু বকর তাজুদ্দীন আবদুর রাজ্জাক (আল্লাহ তায়ালা তাঁর কবরকে নুরে রহমত দ্বারা পরিপূর্ণ করুক) থেকে, তিনি তাঁর সম্মানিত পিতা হুজুর পুরনুর সৈয়দুস সাদাত গাউসে আজম (رحمة الله) থেকে শেখ মােহাক্কেক যুবদাতুল আসার’ গ্রন্থে বর্ণনা করেন— “বাহজাতুল আসরার একটি মহান ও প্রসিদ্ধ কিতাব এর রচিয়তা 

ওলামায়ে কিরাত -এর প্রসিদ্ধ ও শীর্ষস্থানীয় ইমাম, তাঁর জীবন চরিত (রেজাল শাস্ত্রীয় গ্রন্থসমূহে লিপিবদ্ধ রয়েছে। ইমাম শামসুদ্দীন যাহাবী (رحمة الله) ইলমে হাদীস ও রিজাল শাস্ত্রে যাঁর সুখ্যাতি ও গুরুত্বপূর্ণ স্থান রয়েছে। তিনিও তাঁর দরস লাভে গৌরবান্বিত হয়েছেন এবং তাঁর কিতাব ‘তাবাতুল মােকৃাররেয়ীন’-এ তাঁর প্রসংশা ও গুণাগুণ বর্ণনা করেন। | ইমামে মুহাদ্দিস, মুহাম্মদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে জরী “হিসনে হাসীন” গ্রন্থকার তাঁর ছাত্রদের মধ্যে গণ্য। তিনি এ নির্ভরযােগ্য কিতাব ‘বাহজাতুল আসরার’ শরীফ তাঁর শেখ থেকে পড়েন এবং এর সনদ ও অনুমতি লাভ করেন। এসব উক্তির বিস্তারিত বিবরণ এবং এ নামাজ মােবারকের শরয়ী দৃষ্টিভঙ্গি, প্রমাণাদি, উক্তি ও কর্মসমূহ সম্মানিত ও নির্ভরযােগ্য ওলামা কিরাম থেকে প্রমাণিত রয়েছে। এ নগণ্য বান্দার (আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করুক) লিখিত ‘আনহারুল আনােয়ার মান য়াম্মে সালাতুল আসরার’ (১৩০৫ হিজরী সনে লিখিত) গ্রন্থে এ সম্পর্কিত বর্ণনা রয়েছে- 

فعليك ما فيها ما يشفي الصدور ويكشف العمى والحمد لله رب العالمين.. 

(অতএব, তা সংগ্রহ করুন, তাতে দেখতে পাবেন আত্মার শান্তি এবং অন্ধদের স্বরূপ, সমগ্র জাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্যই সকল প্রশংসা।) 

ইমাম আরিফ বিল্লাহ্ সৈয়দী আবদুল ওহাব শেরানী (رحمة الله) নির্ভরযােগ্য ও প্রসিদ্ধ “লাওয়াকিয়ুল আওয়ার ফি তাবাতিল আখইয়ার” গ্রন্থে বলেন- “সৈয়দী মুহাম্মদ গামরী (رحمة الله)-এর একজন মুরীদ বাজারে তশরীফ নিচ্ছিলেন। তাঁর সওয়ারীর পদস্খলন ঘটলাে, তিনি সমুস্বরে আহবান করলেন, “ইয়া সৈয়দ মুহাম্মদ ইয়া গামরী।” 

“এ দিকে ইবনে ওমর হাকিম সাঈদকে সুলতান হাকীকের নির্দেশে শ্ৰী ঘরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলাে। ইবনে ওমর ফকীরের আহবান শুনেন, বলেন, সৈয়দী মুহাম্মদ ইনি কে? বলেন, তিনি হলেন আমার শেখ। আমি গুনাহগারও বলছি-

ياسيدي محمد يا غمر الاحظني

(ইয়া সৈয়দ মুহাম্মদ ইয়া গামরী আল আহজনী) অর্থাৎ, হে আমার সরদার, হে মুহাম্মদ গামরী আমাকে সাহায্য করুন। তাঁর এটাই বলার ছিলাে যে, হযরত মুহাম্মদ গামরী (رحمة الله) আপনি তাশরীফ আনুন এবং সাহায্য করুন। বাদশাহ ও তার সৈন্যদের ভীতির সঞ্চার হলাে, বাধ্য হয়ে উপহার দিয়ে তাঁকে রুখসাত’ (মুক্তি) দিলেন”। 

উক্ত কিতাবে আরাে উল্লেখ আছে – “সৈয়দ শামসুদ্দীন মুহাম্মদ হানফী (رحمة الله) নিজ গৃহে একাকীভাবে ওযু করছিলেন, অকস্মাৎ একটি খড়ম (কাষ্ঠ নির্মিত পাদুকা) আকাশে নিক্ষেপ করেন যা অদৃশ্য হয়ে গেলাে অথচ গৃহে তা আকাশে যাওয়ার কোন রাস্তা ছিলাে না। আর অন্য পাদুকাটি তাঁর খাদেমকে দান করেন এবং বলেন, “এটা তােমার নিকট রেখে দাও যতক্ষণ না অপরটি এসে যায়। কিছু দিন পর সিরিয়া থেকে এক ব্যক্তি তাঁর মুরীদ সহকারে ঐ পাদুকা নিয়ে হুজুরের সম্মুখে উপস্থিত হন এবং বলেন, আল্লাহ তায়ালা আপনাকে উত্তম প্রতিদান প্রদান করুন, যখন চোর আমার বক্ষের উপর আমাকে হত্যা করতে বসেছিলাে, সে সময় আমি অন্তরে অন্তরে বলেছি “ইয়া সৈয়দী মুহাম্মদ ইয়া হানফী।” সে মুহুর্তে এ পাদুকা গায়ব থেকে এসে তার বক্ষের উপর এসে লাগলাে। সে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে গেলাে। আপনার বরকতে আল্লাহ তায়ালা আমাকে মুক্তি প্রদান করেন।” 

 উক্ত গ্রন্থে আরাে উল্লেখ আছে- “উপরােক্ত প্রশংসিত ঐ ওলীর বিবি ভীষণ রােগে মূত্যের সাথে পাঞ্জা লড়ছে। তিনি এ ভাবে আহবান করেন-

ياسيدي احمد يا بدوي خاطرك معي

(ইয়া সৈয়দ আহমদ ইয়া বাদভী খাতিরুকা মায়ী) অর্থাৎ হে আমার সরদার, হে আহমদ বাদভী (رحمة الله) আপনার কৃপা দৃষ্টি আমার দিকে নিক্ষেপ করুন)। | একদিন তিনি সৈয়দী আহমদ কবীর বাদভী (رحمة الله) কে স্বপ্নে দেখেন, তিনি বলেন, আর কতকাল আমাকে আহবান করবে এবং আমার সাহায্য প্রার্থনা করবে, তুমিতাে একজন মহান বুজর্গের (স্বীয় স্বামীর) তত্ত্বাবধানে রয়েছে। আর যে কোন মহান অলীর তত্ববধানে থাকে আমি তার আহবানের জবাব প্রদান করিনা। বরং তুমি এভাবেই বলাে, ইয়া সৈয়দ মুহাম্মদ ইয়া হানফী’। যদি এভাবে বলতে থাকো, আল্লাহ তায়ালা তােমাকে ক্ষমা ও সাহায্য করবেন। তিনি (ঐ বিবি) এভাবেই বললেন। সকালে হতেই তিনি সুস্থ হয়ে উঠেন, যেন তার কোন রে গই হয়নি।” 

উক্ত কিতাবে আরাে আছে-“হযরত মামদুহ” (মুহাম্মদ গামরী (র)) তাঁর মৃত্য শয্যায় বলেছিলেন, 

من كانت له حاجة فليات التي قبري ويطلب حاجته 

اقضها له فان ما بيني وبينكم غير ذراع من تراب و رجل يجحبه عن أصحابه ذراع من تراب فليس برجل 

অর্থাৎ, যার কোন কিছুর প্রয়ােজন হয় সে আমার কবরে উপস্থিত হয়ে নিজ প্রয়ােজন (পূরণের জন্য প্রার্থনা করবে। আমি তা পুরণ করে দিবাে। কেননা, আমি ও তােমাদের মধ্যখানে মাটির কোন পর্দা নেই। আর যে ব্যক্তির এতটুকু সাধারণ মাটি তার সঙ্গীদের জন্য পর্দা হয়ে দাড়ায় সে পুরুষই নয়। 

অনুরূপভাবে হযরত মুহাম্মদ ইবনে আহমদ ফারগল (رحمة الله)-এর জীবন চরিত্রেই লিখা রয়েছে 

كان رضي الله تعالى عنه يقول أنا من المتصرفين في قبورهم فمن كانت له حاجة قليات الى قبالة وجهی 

ويذكرها إلى أفضها له – 

অর্থাৎ, তিনি বলে থাকতেন আমি সে সকল ব্যক্তিদের মধ্যে গণ্য, যারা স্বীয় কবরে থেকেও সাহায্য করতে পারেন। কারাে কোন কিছুর প্রয়ােজন হলে আমার নিকট আমার মুখের সামনে উপস্থিত হয়ে আমার কাছ থেকে নিজ প্রয়ােজন পুরণার্থে আহবান করাে, আমি তা পূরণ করে দিবাে। 

উক্ত কিতাবে আরাে উল্লেখ আছে-“বর্ণিত আছে, একদা হযরত সৈয়দী মুদায়ন ইবনে আহমদ শামুলী (رحمة الله) ওযু করার সময় একটি পাদুকা প্রাচ্যের দিকে নিক্ষেপ করেন। এক বছর পর এক ব্যক্তি উপস্থিত হলাে, তার নিকট ঐ পাদুকটি ছিলাে। তিনি তার অবস্থার বর্ণনা এভাবেই দেন যে, এক লম্পট তার মেয়ের শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেছিলাে। ঐ সময় মেয়ের কাছে তার পিতার পীরের নাম স্বরণ ছিলাে না, তাই সে এভাবেই আহবান করলাে-“ইয়া শেখু আবী লা হিজনী’ অর্থাৎ হে আমার পিতার পীর ও মুরশিদ আমাকে রক্ষা করুন। এ আহবান করার সাথে সাথেই এ পাদুকা এসে পড়লাে, মেয়ে ঐ লম্পটের হাত থেকে নিস্কৃতি পেলাে। ঐ পাদুকা তাঁর বংশধরদের নিকট এখনও বিদ্যমান রয়েছে।” | উক্ত কিতাবে সৈয়দী মুসা ইবনে ইমরান (رحمة الله)-এর বর্ণনায় লিপিবদ্ধ 

 كان إذا ناداه مريدة اجابة من مسيرة سنة واكثر 

তাঁর মুরীদ যখনই যেখান থেকে আহবান করতেন, জবাব দিতেন। যদিও এক বছরের কিংবা তার চেয়ে অধিক দীর্ঘ পথও হয়ে থাকে। 

আখবারুল আখইয়ার(হযরত আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী রহঃ)-

হযরত শেখ মােহাক্কেক আবদুল হক মােহাদ্দেস দেহলভী (رحمة الله) “আখবারুল আখইয়ার” গ্রন্থে হযরত সৈয়দে আজল শেখ বাহাউল হক ওয়াদ্দীন ইবনে ইব্রাহীম আতাউল্লাহ, আনসারী, কাদেরী, সাততারী, হােসাইনীর’ বর্ণনায় তার পুস্তিকা শারিয়া থেকে উদ্ধৃত করে বলেন- 

ذکر کشف ارواح ياأحمد يامحمد درودوطريق است . يك طريق أنست و یا احمد را در راست بگوید و یا محمد در چپابگويد – ودر دل ضرب کند یارسول الله طريق ست دوم آنست که با احمد را در راست بگوید و چپا يا محمد و در دل هم کند یا مصطفے ودیگر ذكر يا أحمد يامحمد – يا علی یا حت يا حسين يا فاطمة شش طرفی ذکر کند کشف جميع ارواح شود و دیگر اسمائے ملائکه مقرب هميں دارند يا جبرئيل يا ميكائيل يا اسرافیل یا عزرائیل چهار ضربی دیگر ذكرهم شيخ يعني بگويد ياشيخ ياشيخ هزار بار بگويد که حرف ندارا ازدل بکشد طرف راستاهر دو لفظ شيخ را در دل ضرب کند – 

অর্থাৎ কশফে আরওয়াহ (আত্মাসমূহের কাশফ) ‘ইয়া আহমাদু ‘ইয়া মুহাম্মাদু’-এর জিকিরের দুটি পদ্ধতি রয়েছে। 

একটি পদ্ধতি এ যে, ‘ইয়া আহমাদু’ (ﷺ) ডানদিকে বলবে আর ‘ইয়া মুহাম্মদু’ (ﷺ) বামদিকে বলবে ।। অন্তরে ইয়া রাসুলাল্লাহ (ﷺ)-এর জোর প্রদান করবে। 

দ্বিতীয় পদ্ধতি হলাে, ইয়া আহমাদু’ (ﷺ) ডান দিকে আর ‘ইয়া মুহাম্মদু’ (ﷺ) বামদিকে বলবে এবং অন্তরে ‘ইয়া মুস্তফা (ﷺ), বলবে। 

দ্বিতীয় জিকির হলাে ‘ইয়া আহমাদু’, ইয়া মুহাম্মদু’, ‘ইয়া আলীয়ু, ইয়া হাসানু’, ইয়া হােসাইনু’ এবং ‘ইয়া ফাতেমা’-এর জিকির ছয় দিকে করবে,সমস্ত আত্মার কাশ হয়ে যাবে। 

আর অন্যান্য নৈকট্যবান ফেরেস্তাদের নামও খুবই প্রভাব ফেলে। ইয়া জিব্রাঈলু’, ‘ইয়া মীকাঈলু’, ‘ইয়া ইসরাফীলু এবং “ইয়া আজরাঈলু’ চারটির উপর জোর দিবে। শেখের জিকিরও করবে অর্থাৎ ‘ইয়া শেখু’ ‘ইয়া শেখু’ একহাজার বার এভাবেই আদায় করবে যে, হরফে নিদা’ (আহবান সূচক শব্দ) অন্তর থেকে টেনে আনবে। ইয়া শেখ’ ইয়া শেখ’ শব্দদ্বয়কে জোর দিয়ে পড়বে। 

হযরত সৈয়দী নুরুদ্দীন আবদুর রহমান জামী (رحمة الله) “নাফহাতুল ইনস” গ্রন্থে, হযরত মৌলভী মানবী’-এর বর্ণনায় লিখেছেন যে, মাওলানা রুহুল্লাহ রুহাহু ইনতিকালের নিকটবর্তী সময়ে বলেন 

قریب انتقال ارشاد فرمایا ۔ ازرفتن من غمناك مشويد که نور منصور رحمة الله بعد از صدو پنجاه سال برروح شیخ فرید الدین عطار رحمة الله تعالی تجلی کرده مرشداو شد اور فرمایا 

در حاليكه باشيد مرا یاد کنید تامن شمار احمد باشم در هر لباسی که باشم به او فرمایا در عالم مارا دو تعلق ست یکے بابدن و یکے به شما وچوں بعنایت حق سبحانه و تعالی مجرم شوم و عالم تفريد وتجريد روئے نماید اں تعلق نیز از آن شما خواهد بود – 

অর্থাৎ, আমার মূত্যুর কারণে বিষন্ন ও দুঃখিত হয়ােনা। কেননা, নুরে মানসুর (رحمة الله) একশত পঞ্চাশ বছর পর শেখ ফরীদুদ্দীন আত্তার (رحمة الله)-এর রুহের উপর উজজ্বল্য (তাজাল্লী) প্রদান করেছেন এবং বলেছেন, তােমরা যে অবস্থায় আমাকে। আহবান করােনা কেন, আমি তােমাদের জন্য যে কোন বেশে উপস্থিত হয়ে যাবাে এবং এটাও বলেছেন যে, আমাদের জগতে দু’ধরণের সম্পর্ক রয়েছে। একটি শরীরের সাথে, আপরটি তােমাদের সাথে । আর আল্লাহর অনুগ্রহে যখন গুনাহগার হবাে আর আলমে তাফরীদ ও আলমে তাজরীদে (উপসনা ও নির্জন জগত) আগমন হবে, সে সম্পর্কও তােমাদের সাথে হবে। 

শাহ ওয়ালি উল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী(রহ:)এর অভিমত:-

শাহ ওয়ালী মােহাদ্দেস দেহলভী (رحمة الله) “আতইয়াবুন নিয়াম ফি মাদহে সৈয়দিল আরবে ওয়াল আজম” গ্রন্থে বলেন- 

وصلى عليك الله يا خير خلقه ويا خير ماهول ويا خير واهب ويا خير من يرجی لكشف رزية ومن جوده قد قاق جود السحائب وانت بخير من هجوم مصيبة إذا أنشبث في القلب شر المخاطب . 

আর স্বয়ং এর ব্যাখ্যা ও অনুবাদ করতে গিয়ে বলেন-

فصل یازدهم در ابتهال بجناب آنحضرت صلی الله تعالیے عليه وسلم رحمت فرستد برتو خدایتالے ای بهترین خلق خدا وندی بهترین کسیكه امید داشته باشد ای بهترین عطا کنند وای بهترین کسیکه امید داشته باشد از وازالئه مصیبت وای بهترین کسیکه سخاوت اوزیاده است ازياران ابرهااگواهی میدهم که تو پناه دهنده منی از هجوم کردن مصيبتے وقتیکه بخلاند دردل بدترين چنگار با اه ماخصا. 

অর্থাৎ, রাসুল সৈয়দে আলম (ﷺ)-এর পবিত্র মহান দরবারে বিনীতভাবে প্রার্থনা করছি যে, হে আল্লাহর সৃষ্টিজগতের সর্বোত্তম ও সর্বোৎকৃষ্ট মহান সত্তা। আপনার উপর আল্লাহ তায়ালার করুণা নাজিল হােক। হে বিশ্বজগতের সবচেয়ে সম্মানিত ও পরিপূর্ণ সত্তা! যে ব্যক্তি আপনার থেকে কোন বস্তুর আশা পােষণ করে, আপনি তা তাকে প্রদান করেন। হে সৃষ্টির সর্বোচ্ছ মর্যাদার অধিকারী সত্তা, যে ব্যক্তি (মুসিবতের সময়) আপনার থেকে নেজাত ও মুক্তির আশা করে, আপনি তাঁর মুসিবতসমূহ দূরিভূত করেন। হে মাখলুকের সর্বেকৃষ্ট সত্তা, যে আপনার নিকট বদান্যতার প্রার্থনা করে তাহলে বদান্যতার মেঘ সাক্ষ্য প্রদান করে। আপনি-মুসিবতের জনকোলাহল থেকে মুক্তি প্রদান করেন যখন নিকৃষ্ট লােকেরা হৃদয়ে মুসিবতের কাঁটা বিদ্ধ হয়। 

উক্ত কিতাবের সূচনায় রয়েছে :

ذكر بعض حوادث زمان که درآن حوادث لابدست از استمراد بروح آنحضرت صلی الله تعالى عليه وسلم … 

অর্থাৎ কতেক এমন যুগের দুর্ঘটনাবলী, যা তাতে অবশ্যই সংঘটিত হবে। এমন আকস্মিক দুর্ঘটনাসমূহ রাসুলে সৈয়দে আলম (ﷺ)-এর রুহানী সাহায্য দ্বারা দূরিভূত হয়ে যায়। 

এ কিতাবের প্রথম পরিচ্ছেদে উল্লেখ আছে – 

بنظرنمی اید مرا. مگر آنحضرت صلی الله تعالى عليه 

وسلم که جاءے دست زدن اندوهگین ست – در هر شد نے .

শাহ্ সাহেব (رحمة الله) “মাদহিয়ায়ে হামজায়া” গ্রন্থে উল্লেখ করেন – 

ينايي ضارعا بخضوع قلب * وذل وابتهال والتجاء 

رسول الله ياخيرالبرايا * نوالك ابتغى يوم القضايا 

                اذا ما حل خطب مدلهم * فانت الحصن من كل البلاء

اليك توجهی وبك استنادي * وقيك مطامعي وبك ارتجائي 

স্বয়ং এর ব্যখ্যা ও অনুবাদ এভাবে করেন – 

فصل ششم در مخاطبه جناب عالی عليه افضل الصلوة, واكمل التحيات والتسلیمات نداکند زار وخوادشده بشکستگی دل واظهار بيقدری خود به اخلاص در مناجات وبه پناه گرفتن باین طریق که اے رسول خدا اے بهترين مخلوقات عطائے ترا می خوام روز فیصل کردن وقتيكه فرود آید وکار عظیم در غایت تاریکی پس توئی پناه ازهر بلا بسويئر تست رو آوردن من به تست پناه گرفتن من و در تست اميد داشتن من او ملحضا. 

অর্থ্যাৎ-অনুনয়-বিনয়, নতি-বশ্যতা,দোয়া-প্রার্থনা,বিলাপ-কাতরতা,

আন্তরিকতা-অন্তরঙ্গতা এবং বিনয়-নম্রতা সহকারে হুজুর আলায়হি আফযালুস সালাত ওয়া আকমাতুত তাহিয়াত ওয়াত তাসলীমাত-কে আহবান করবে যে, হে আল্লাহর প্রিয় রাসুল (ﷺ), হে সর্বোৎকৃষ্ট-সর্বোত্তম সৃষ্টি, আমরা কিয়ামত দিবসে আপনার দান ও প্রাচুর্য প্রার্থনা করছি, যখন কঠোর ও শক্ত দুঃখ-দুর্দশা, বিপদ-আপদ এবং দুর্ঘটনা আমাদের চেষ্টন করবে, আপনার আশ্রয়েই থাকবাে। আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি এবং আপনার নিকটই নির্ভরতার আশ রাখছি।

শাহ্ সাহেব (رحمة الله) “ইনতিবাহ ফি সালাসিলে আওলিয়িল্লাহু” গ্রন্থে কাযায়ে হাজত (প্রয়ােজন পূরুণার্থে) একটি খতমের তরতীব এভাবেই বর্ণনা 

اول دو رکعت نفل بعد از ان يكصدو یازده بار ورود بعد ازان يكصد ویازدهبار کلمه تمجيد ويکصدویازده بار شيئا الله عبد القار جيلانی . 

অর্থাৎ, প্রথমে দু’রাকাত নফল নামাজ আদায় করবে, এরপর একশত এগারবার দরুদ শরীফ, অতঃপর একশত এগারবার কলেমা তামজীদ এবং একশত এগারবার শাঈয়ান লিল্লাহ্ আবদুল কাদের জীলানী’ পাঠ করবে। 

এ ‘ইনতিবাহ’ গ্রন্থ থেকে প্রমাণিত হয় যে, শাহ সাহেব (رحمة الله) এবং তাঁর শেখ ও উস্তাদ মাওলানা আবু তাহের মদনী, যার খেদমতে দীর্ঘদিন যাবত হাদীস পড়েছেন এবং তাঁর শেখ, উস্তাদ ও পিতা মাওলানা ইব্রাহীম কিরদী, তাঁর উস্তাদ মাওলানা কাশশাসী, তাঁর উস্তাদ মাওলানা আহমদ সানভী আর তাঁর উস্তাদুল উস্তাদ মাওলানা আহমদ খলী (رحمة الله) এ চারজনও শাহ্ সাহেবের আধিকাংশ হাদীসের পরম্পরায় অন্তর্ভূক্ত। আর শাহ্ সাহেব (رحمة الله)-এর পীর ও মুরশিদ শেখ মুহাম্মদ সাঈদ লাহুরী যাকে উল্লেখিত ‘ইনতিবাহ’ গ্রন্থে-নির্ভরযােগ্য ও সিল্কাহ্ বলে উল্লেখ করেন এবং সম্মানিত মাশায়েখে তরীকত-এর মধ্যে গণ্য করেছেন এবং এ পীরও তাঁর মুরশিদ শেখ মুহাম্মদ আশরাফ লাহুরী (رحمة الله), তাঁর শেখ মাওলানা আব্দুল মুলক, তাঁর মুরশিদ বায়েজীদ সানী এবং শেখ মানাবীর পীর হযরত সৈয়দ সিবগাতুল্লাহ বারুজী এবং তাঁদের উভয়ের পীর ও মুরশিদ মাওলানা ওয়াজীহুদ্দীন আলভী (رحمة الله) হিদায়া ও শরহে বেকায়া ভাষ্যকার, তাঁর শেখ হযরত শাহ্ মুহাম্মদ গিয়াস গাওয়ালিয়ারী (رحمة الله) এ সব শীর্ষস্থানীয় ওলামা কিয়াম ‘নাদে আলীর’সনদ গ্রহণ করতেন, আর স্বীয় শীর্ষদের অনুমতি দিতেন এবং ‘ইয়া আলীয়, “ইয়া আলীয়ু’-এর ওজীফা করতেন। 

নাদে আলী নিম্নরূপঃ 

بسم الله الرحمن الرجيم ناد علیا مظهرالعجائب تجده فؤا لك في التوائب يتجلى بنوتك يا رسول الله 

بولايتك يا علي ياعلي ياعلي . 

ولله الجهة السامية এর বিস্তারিত বিবরণ দেখতে হলে অধমের রিসালাহ্ যথাক্রমে ‘আনােয়ারুল আনােয়ার’ ও ‘হায়াতুল মাওয়াত ফি বয়ানে সিমায়ে আমওয়াত’ দেখুন! 

শাহ আব্দুল আজিজ (রহঃ) এর অভিমতঃ- 

 শাহ্ আবদুল আজীজ (رحمة الله) বুস্তানুল মােহাদ্দেসীন’ গ্রন্থে শীর্ষস্থানীয় ও সম্মানিত আলিম, ইমামুল ওলামা, নিজামুল আউলিয়া হযরত সৈয়দ আহমদ রাজুক মাগরবী (رحمة الله) (উস্তাদ ইমাম শামসুদ্দীন লিকানী ও ইমাম শিহাবুদ্দীন কুস্তুলানী সহীহ বুখারী ভাষ্যকার)-এর খুবই প্রশংসা লিপিবদ্ধ করেছেন। তিনি বলেন, তিনি সাত আবদাল ও সুফী-মাহাক্কেকীনে কিরামের অন্তর্ভূক্ত, শরীয়ত ও তরীকৃতের জামে, উচ্ছ মর্যাদার বাতেনী জ্ঞান সম্পন্ন, তাঁর লিখিত গ্রন্থাবলী জাহেরী জ্ঞানেও অধিক উপকারী। শীর্ষস্থানীয় ওলামা কিরাম গৌরব করতেন যে, আমরা এমন মহান, সম্মানিত আলিম ও আরিফ-এর শীর্ষ । এমনও পর্যন্ত লিখেছেন- 

بالجمله مردے جلیل القدريست که مرتبه کمال او فوق 

الذكرست… 

অর্থাৎ সারাংশ হলাে, তারা এমন জলীলুল কদর ব্যক্তিত্ব যে, তাদের উচ্চ মর্যদার পরিপূর্ণতা বর্ণনার বাইরে। এ মহান ব্যক্তিত্বের পবিত্র বাণী থেকে দুটি ছন্দ বর্ণনা করছি। তিনি বলেন- 

انا لمريدي جامع لتشتاته * اذا ما سطا جور الزمان بنكبته.. 

– অর্থাৎ, আমি স্বীয় মুরীদের বিষন্ন ও দুঃখ-দুর্দশাসমূহের (মুহুর্তে) মনের শান্তি এনে দিতে পারি যখন কালের দুর্ভোগ-দুর্দশা ও অত্যাচার দুর্ভাগ্যক্রমে এর উপর অতিক্রম করে। 

وان كنت في ضيق وكرب ووحشة : فتا بيارزي أي بسرعة 

অর্থাৎ, আর যদি তুমি কোন দুঃখ-কষ্ট এবং বিপদে পড়াে, তাহলে ‘ইয়া রাযুক’ বলে আহবান করাে। আমি অতিসত্তর সাহায্য নিয়ে চলে আসবাে।। 

বিজ্ঞ আলিমদের অভিমত-

আল্লামা জিয়াদী, অতঃপর আল্লামা আজহুরী (অনেক গ্রন্থ রচিয়তা হিসেবে সু-প্রসিদ্ধ আল্লামা দাউদী ভাষ্যকার শরহে নাহজ, অতঃপর আল্লামা শামী (رحمة الله) ‘রাদুল মােহতার হাশিয়ায়ে দুররুল মােখতার’ গ্রন্থকার, হারানাে বস্তু ফিরে পাওয়ার জন্য এ আমলের কথা উল্লেখ করেন-“উঁচু স্থানে গিয়ে ‘সৈয়দী আহমদ ইবনে আলওয়ান ইয়ামেনী (رحمة الله)-এর জন্য ফাতেহা পড়বে। অতঃপর তাঁকে আহবান করবে ইয়া সৈয়দ আহমদ ইয়া ইবনা আলওয়ান’।” 

প্রসিদ্ধ ও সর্বজন স্বীকৃত কিতাব শামী থেকে অধম তাঁর পাদটীকার বক্তব্য হায়াতুল মিরাত’ নামক পুস্তিকার পরিশিষ্টে বর্ণনা করেছি। 

পরিসমাপ্তি

* মােট কথা, নারায়ে রিসালতের বৈধতা সম্পর্কে সাহাবায়ে কিরাম থেকে এ পর্যন্ত এমন অধিক সংখ্যক ওলামা ও আওলিয়া কিরাম বর্ণনা করেছেন, যাদের বক্তব্যসমূহ এ অধম (আহমদ রেযা) এক স্বল্প সময়ে একত্রিত করেছি। এখন মুশরিক ফতােয়া প্রদানকারীদের থেকে পরিস্কারভাবে জিজ্ঞেস করা হবে যে, হযরত ওসমান ইবনে হােনাইফ, আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (رحمة الله) প্রমুখ সাহাবায়ে কিরাম থেকে আরম্ভ করে শাহ ওয়ালী উল্লাহ, শাহ আবদুল আজীজ সাহেব এবং তাদের উস্তাদ ও মাশায়েখ (رحمة الله) পর্যন্ত সবাইকে কাফের বলাে কিনা? যদি অস্বীকার করাে তাহলে আলহামদু লিল্লাহ্ মুক্তি ও হেদায়ত পেয়েছে এবং সত্য উদ্ভসিত হয়ে উঠেছে। আর (যদি বােকা, নির্লজ্জ ও যাদু গ্রস্থ ব্যক্তির ন্যায়) তাদের উপর কুফরের ফতােয়া জারী করাে, তাহলে তােমাদের এতটুকুই বলা যায় যে, আল্লাহ্ তায়ালা তােমাদের হিদায়ত করুক (হে স্বপ্নে বিভাের ব্যক্তিরা) একটু চোখ খুলে দেখাে যে, কাকে বলেছে, কি বলেছাে! ইন্না লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলায়হি রাজেউন। 

| আর আন্তরিকভাবে জেনে রেখাে যে, যে মাযহাবের ভিত্তিতে সাহাবাকিরাম থেকে এখনকার পর্যন্ত সকল আকাবির ও উম্মতের শীর্ষপর্যায়ের সম্মনিত, মহামান্য ব্যক্তিদের মায়াজাল্লাহ (আল্লাহর আশ্রয়) কাফির-মুশরিক হিসেবে বিবেচিত হয়েছে, সে মাযহাব আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের কেমন শত্রু হিসেবে বিবেচ্য হবে? | বিশুদ্ধ হাদীসে বর্ণনা এসেছে, “যে ব্যক্তি কোন মুসলমানকে কাফির বলবে, সে নিজেই কাফির। আর অনেক ইমামও শর্তহীনভাবে এ ফতােয়া প্রদান করেছেন। যার বিস্তারিত বিবরণ আমি অধমের ‘আনাহ ইয়ুল আবীদ আনিস সালাতে দুররায়ে ই’দ্দীদ তাক্বলীদ’ নামক পুস্তিকায় বর্ণনা করেছি। আমরা যদিও সাবধানতা বশতঃ তাদের কুফরী ফতােয়া দিচ্ছিনা, তবুও এতটুকু কথাতে সকলই একমত এবং এ ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই যে, একদল ইমামগণের মতানুসারে এ মহাত্নগণ ইয়া রাসুলাল্লাহ,’ ‘ইয়া আলী, ‘ইয়া হােসাইন’, ‘ইয়া গাউসুস সাকালাইন’ উক্তিকারী মুসলমানদের কাফের ও মুশরিক বললে তারা নিজেরাই কাফির ও মুশরিক। সুতরাং তাদের জন্য নতুন সত্ত্বে কলমা পড়ে মুসলমান হওয়া আবশ্যক এবং নিজ স্ত্রীদের সাথে নতুনভাবে বিবাহ পড়া জরুরী। দুররে মুখতারে’ উল্লেখ আছে – 

مافيه خلاف يؤمر بالاستغفار والتوبة وتجديد النكاح. 

অর্থাৎঃ যাতে মতবিরােধ হয় তাতে ইস্তিগফার, তাওবা ও নতুন বিবাহের হুকুম দেয়া হয়। 

উপকারিতা-

 হুজুর সৈয়দে আলম (ﷺ) কে উৎকৃষ্ট দলীলের ভিত্তিতে আহবান করবাে, তাশাহুদ (আত্তাহিয়্যাতু) যা প্রত্যেক নামাজ পড়ুয়া ব্যক্তি নামাজের দ্বিতীয় রাকাতে পড়ে থাকেন এবং স্থীয় নবীয়ে করীম আলায়হি অফজালুস সালাতে ওয়াত তাসলিমের সমীপে নিবেদন করেন-

السلام عليك ايها النبي ورحمة الله وبركا ته

ও (সালাম আপনার উপস্থিতির উপর হে নবী(ﷺ) এবং আপনার উপর আল্লাহর রহমত, করুণা ও বরকত (অবতীর্ণ হােক)। 

যদি (নিদা) আহবান করা মােয়াজাল্লাহ্ (আল্লাহর আশ্রয়) শিরক হয়, তাহলে এটাতাে আজব ধরণের শিরক যা স্বয়ং নামাজের ভিতরেই শরীক ও অন্তর্ভুক্ত। ওয়ালা হাউলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আজীম। এ বােকামী ও মুখ ধারণা একেবারেই ভ্রান্ত যে, ‘আত্তাহিয়্যাতু’ হুজুর সৈয়দে আলম (ﷺ) পবিত্র যুগ থেকে ঐ একই নিয়মেই চলে আসছে। এর উদ্দেশ্য ঐ শব্দসমূহ আদায় করা। না নবীয়ে করীম (ﷺ)-এর আহবান পবিত্র শরীয়ত নামাজে কোন জিকর এমন রেখেছে যাতে শুধুমাত্র মুখ থেকে শব্দটি বের করবে আর এর দ্বারা অর্থ উদ্দেশ্য হবে না। এমনি কখনাে হতে পারে না। এমনটি এখানে উদ্দেশ্যও নয়। বরং এখানে রাসুলে পাক (ﷺ)-এর নিদা (আহবান) মর্মার্থ সহকারেই অকাট্যভাবে আবশ্যক। 

‘আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াসসালা ওয়াতু ওয়াত তায়্যেবাতি’ দ্বারা আল্লাহ তায়ালার হামদই উদ্দেশ্য করছে আর ‘আস সালামু আলায়কা আয়ুহান নাবীয়া ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু’ বাক্যে এ উদ্দেশ্য ও ইচ্ছে করতে হবে যে, এ সময় স্বীয় রাসুলে করীম (ﷺ) কে সালাম করছেন এবং হুজুরের নিকট স্বইচ্ছায় নিবেদন করছেন, সালাম, হে নবী (ﷺ) ! আপনার উপস্থিতির উপর। আর আল্লাহর রহমত এবং তার বরকতসমূহ আপনার প্রতি অবতীর্ণ হােক। 

“ফতােয়ায়ে আলমগীরীতে” শরহে কুদরী থেকে বর্ণিত রয়েছে 

لابد ان يقصد بالفاظ التشهد معانيها التي وضعت لها من عنده كما قد يحي الله تعالى ويسلم على البي صلى الله تعالى عليه وسلم وعلى نفسه وعلي أولياء الله تعالى. 

তাশাহ হুদ’-এর শব্দসমূহের মধ্যে মর্মার্থ সহকারে ইচ্ছে করাই আবশ্যক। যেভাবে আল্লাহ্ তায়ালা নবীয়ে করীমের (ﷺ) পবিত্র জাত এবং আল্লাহর ওলীদের উপর তাহিয়্যাহ্ ও সালাম অবতীর্ণ করেন। 

“তানবীরুল আবসার” এবং এর ব্যাখ্যাগ্রন্থ “দুররে মােখতারে” উল্লেখ আছে-

ويقصد بالفاظ التشهد، معانيها مراد له على وجه (الإنشاء) كانه يحي الله تعلى ويسلم علي نبيه وعلى نفسه 

وعلى أوليائه (لا الاخبار)، عن ذالك ذكره في المجتبى. 

অর্থাৎঃ তাশাহুহুদ’-এর শব্দাবলীতে এর মর্মার্থই উদ্দেশ্য হতে হবে। আর তা ইনশা (আদেশ সূচক)-এর ভিত্তিতে, (খবরের ভিত্তিতে নয়). যেমনি ভাবে আল্লাহ তায়ালা রাসুলে করীম (ﷺ)-এর পবিত্র জাত এবং আউলিয়া কিরামদের উপর অভিবাদন ও সালাম নাজিল করেন। এটাই মুজতাবাতে উল্লেখ রয়েছে। 

আল্লামা হাসন শরীফ লালী “মারাক্বীউল ফালাহ শরহে নুরুল ইজাহ” গ্রন্থে বলেন- 

يقصد معانيه مرادة له على انه ينشائها تحية وسلاما منه م

| অর্থাৎ এ সমার্থবােধক অর্থে এভাবেই ইচ্ছে করবে যে, নবীয়ে করীম (ﷺ)-এর এ পবিত্র জাতের উপর অভিনন্দন ও সালামের নির্দেশ সূচক হয়। 

অনুরূপ অনেক ওলামা কিরাম বর্ণনা করেছেন। এর উপর কতেক নির্বোধ ও নির্লজ্জ আস্বীকারকারীরা এ আপত্তি আবিষ্কার করে বসেছে যে, সালাত ও সালাম প্রেরণ করার জন্য ফিরিস্তা নির্ধারিত থাকে। সুতরাং তাতে আহবান জায়েজ, আর অন্যান্য সময় জায়েজ নেই। অথচ এটা কঠোরতম বিস্বাদ মুখতা। এ ছাড়াও আরাে যতগুলাে আপত্তি এর উপর উত্তাপিত হয়, এ সব অতিচালাকেরা এটুকুও তলিয়ে দেখেনি যে, শুধু মাত্র দরুদ সালাম কেন বরং উম্মতের সকল আমল, কর্ম দৈনিক দু’বার সরকারে আরশ ওকার হুজুর সৈয়দুল আবরার (ﷺ)-এর পবিত্রতম দরবারে পেশ করা হয়। অনেক হাদীসে বর্ণিত আছে যে, শর্তহীনভাবে ভাল ও মন্দ আমলসমূহ হুজুর (ﷺ)-এর দরবারে পেশ করা হয়। অনুরূপ সকল আম্বিয়া কিরাম, পিতা-মাতা, নিকটাত্মীয়, প্রিয় ব্যক্তিদের আমলও পেশ হয়। অধম ‘সালতানাতুল মােস্তফা ফি কুল্লে মালাকুতে কুল্লিল ওয়ারা’ পুস্তিাকায় ঐ সব হাদীস সমূহ একত্রিত করেছি। 

এখানে এটুকুই যথেষ্ট যে, ইমাম আজল, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মােবারক, হযরত সাঈদ ইবনে মুসায়্যাব-এর সূত্রে বর্ণনা করেন

ليس ممن يوم إلا وتعرض على النبي صلى الله تعالى عليه وسلم اعمال امته غداة وعشيا فيعرجهم بسيماهم وأعمالهم 

অর্থাৎ ৪ এমন কোন দিন অতিবাহিত হয় না, যে দিন উম্মতের আমলসমূহ প্রত্যেক সকাল-সন্ধায় রাসুলে সৈয়দে আলম (ﷺ)-এর পবিত্রতম দরবারে পেশ করা হয় না। সুতরাং হুজুর (ﷺ) স্বীয় উম্মতদের পরিচয় লাভ এরই নিদর্শন এবং তাদের আমলসমূহের কারণেই। 

صلى الله تعالى عليه وسلم وعلى اله وصحبه وشرف 

وكرم فقير غفر الله تعالى بتوفيق الله عز وجل. 

এ মাসয়ালায় একটি বিরাট ও বিস্তারিত গ্রন্থ লিখতে পারতাম কিন্তু গ্রন্থকারের জন্য এটাই যথার্থ মূল্য নিরূপনকারী এবং আল্লাহ হেদায়ত দান করলে একটি অক্ষরই যথেষ্ট। 

اكفنا شر المضلين يا كافي وصل علي سيدنا ومولانا محمدن الشافي و اله وصحبه حماة الديني الصافي أمين – والحمد لله رب العالين – 

আবদুল মােস্তফা আহমদ রেজা খান। মুহাম্মদী, সুন্নী, হানফী,কাদেরী। ১৩০১ হিজরীতে লিখিত। 

এটা লিখেছি, অধম বান্দাহ আহমদ রেজা বেরলভী…রাসুলে সৈয়দে আলম হুজুর নবীয়্যল উম্মী (ﷺ) থেকে ক্ষমাপ্রার্থী। 

সমাপ্ত 

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment