কিতাবঃ দরূদে মোস্তফা (ﷺ)(দরূদ পাঠের উপকারিতা ও ফযিলত) [মুহাম্মদ হোসাইন আহমেদ আলকাদেরী]

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

কিতাবঃ দরূদে মোস্তফা (ﷺ)

(দরূদ পাঠের উপকারিতা ও ফযিলত)

মুহাম্মদ হোসাইন আহমেদ আলকাদেরী

খাদেম: সিরাজনগর দরবার শরীফ

মোবাইল: ০১৭১০ ৪৩৩৩২০

Text Ready : 

মাসুম বিল্লাহ সানি

ফাতিমাতুজ জোহরা শাকিলা

সহযোগিতায়

মুহাম্মদ রহমদ আলী

ইতালী প্রবাসী

প্রকাশকাল

নভেম্বর ২০১৮ ইং

সফর ১৪৪০ হিজরী, আশ্বিন ১৪২৪ বাংলা।

প্রকাশনায়

জাগরণ ইন্টারন্যাশনাল এন্ড প্রিন্টার্স

১৫৫,আন্জুমান মার্কেট, আন্দরকিল্লা চট্টগ্রাম

মোবাইল ০১৮১৯-৮৬৩৫৭৬

বর্ণ বিন্যাস

কম্পিউটার গ্যালারী

রানীগঞ্জ বাজার, জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জ

মোবাইল ০১৭১১-৩৯৫৬৭৯/০১৭২৫-২৭৬৯৮৫

সর্বস্বত্ত্ব

লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত

হাদিয়া

ষাট (৬০) টাকা মাত্র।

পীরে তরিকত আলহাজ্ব হযরত মাওলানা শেখ সিরাজুল ইসলাম আল কাদরী (মা: জি: আ:) এর- 

স্নেহের ছাত্র মুহাম্মদ হোসাইন আহমদ আলকাদরীর রচিত দরূদে মোস্তফা সাল্লালাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বইখানা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখেছি। যা বর্তমান সময়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন।

আমি মনেকরি, পাঠকমহল এ ধর্মপ্রাণ মুসলমান ভাই-বোনদের কাছে অতি প্রিয় হিসেবে বইটি স্থান পাবে।

শেখ সিরাজুল ইসলাম আলকাদরী

পিতা-মাতা, শ্বশুর-শ্বাশুড়ি ও আল্লামা সাহেব ক্বিবলা সিরাজ নগরী (মা: জি: আ:) এর দীর্ঘ হায়াৎ কামনায়।

সকল উম্মতে মোহাম্মদী মুর্দেগানদের নাযাতের উসিলায় উৎসর্গিত।

লেখক পরিচিতি

নাম : মুহাম্মদ হোসাইন আহমেদ আল-কাদ্বরী

পিতা : মুহাম্মদ আরজ আলী 

মাতা : মোছা: নেহারুন বিবি 

জন্ম : ২৭ ফেব্রুয়ারী ১৯৯৫ ইংরেজী ২৬ রমাদ্বান ১৪১৫ হিজরী, 

       ১৫ ফাল্গুন ১৪০১ বাংলা রোজ- সোমবার। 

জন্মস্থান/ স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম : রসুলপুর, পো: রাণীগঞ্জ বাজার, ইউপি পাইল গাঁও, উপজেলা: জগন্নাথপুর, জেলা : সুনামগঞ্জ। 

প্রাথমিক শিক্ষা : মহল্লার মক্তবে ভর্তি হয়ে সেখানে পবিত্র কোরআন ও ধর্মীয় বিষয়ে শিক্ষা লাভ করেন। পাশাপাশি পার্শবর্তী গ্রাম : সোনাতুলা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। 

মাদ্রাসা শিক্ষা : হযরত শাহ চান্দ শাহকালু ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা থেকে ২০১২ সালে দাখিল। বুরাইয়া কামিল মাদ্রাসা থেকে ২০১৪ ইং সনে আলিম পাশ করেন। বর্তমানে সিরাজনগর গাউছিয়া জালালিয়া মমতাজিয়া সুন্নীয়া ফাযিল মাদ্রাসা, ফাইনাল বর্ষের পরিক্ষার্থী। 

ক্বিরাতের উচ্ছতর সনদ : ২০১২ সালে দারুল কিরাত মজিদিয়া ফুলতলী ট্রাষ্টের অধীনে কেরাতের সনদ এবং ২০১৪ সনে গাউছিয়া দারুল কিরাত সিরাজনগর কমপে­ক্সের অধীনে কেরাতের সর্বোচ্চ সনদ অর্জন করেন। 

কর্মজীবন : দেওকলস মাইজগ্রাম দাখিল মাদ্রাসায় ২০১৪ ইংরেজী এবং শিবপাশা গাউছিয়া সুন্নীয়া দাখিল মাদ্রাসায় ২০১৬ ইংরেজী সনে পর্যায়ক্রমে সহকারী শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে রসুলপুর হাজী নোয়াব আলী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকের দায়িত্বে কর্মরত আছেন।  

খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন : দেওবাড়ীয়া বকসি বাড়ী জামে মসজিদে ২০১৫ সাল। শিবপাশা গাউছুল আযম জামে মসজিদে ২০১৬ সাল এবং ছালামীটিলা নূরে মদীনা জামে মসজিদে ২০১৭ ইংরেজী সনে খতিবের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে কদমতলা মদিনা জামে মসজিদে খতিবের দায়িত্ব পালন করছেন।  

সাংগঠনিক পরিচিতি : সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ইসলামী যুব সেনা, সুনামগঞ্জ জেলা। মহা-পরিচালক, রসুলপুর গাউছিয়া ইসলামী যুব সংঘ। 

রচনাবলী : উক্ত কিতাব লেখকের প্রথম কিতাব। শিঘ্রই প্রকাশের পথে ইসলামী শরিয়তের পাঁচ উসুল এর বর্ণনা ও তাবলীগ জামাতের ছয় উসুল এর বর্ণনা ও তুলনামূলক পার্থক্য সংবলিত “পাঁচ উসুল বনাম ছয় উসুল”। 

প্রতিষ্ঠা : গত ১২/১২/১২ইং সনে হোসাইনিয়া কুতুবখানা প্রতিষ্ঠা করেন। উক্ত কুতুবখানায় বাংলা, আরবী, উর্দূ সহ অসংখ্য আইনী কিতাবাদি মওজুদ রেখেছেন।  

পরিকল্পনা : কোরআন, সুন্নাহ, ইজমা, কিয়াসের, ভিত্তিতে শানে রেসালাত, সুন্নীয়ত, তরিকত, আকিদা সহ বিভিন্ন ধর্মীয় বই রচনা করা। সমাজের মাঝে ইসলামী মূল্যবোধ তৈরির পাশাপাশি রাসূলের শান মান মানুষের কাছে বর্ণনা করে হক ও বাতিলের পার্থক্য তুলে ধরা। সুন্নী মাদ্রাসা, মক্তব, প্রতিষ্ঠা করা। সুন্নীয়তের দাওয়াত সঠিক ভাবে মানুষের কাছে পৌছিয়ে দেওয়া। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে লেখক আল্লাহর মেহেরবানীতে প্রিয় নবী (ﷺ) এর নেক নজরে সংশি­ষ্ঠ সকলের সহযোগীতা ও দোয়া কামনা করেছেন। লিখকের অতীত খেদমত ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা যেন নূর নবীজী (ﷺ) এর ওয়াসিলায় আল্লাহ তায়ালা কবুল করেন। আমীন। 

প্রকাশক    

ভূমিকা

আসসালাতু ওয়াসসালামু আ’লাইকা ইয়া রাসুলাল্লাহ 

আসসালাতু ওয়াসসালামু আ’লাইকা ইয়া হাবীবাল্লাহ 

আসসালাতু ওয়াসসালামু আ’লাইকা ইয়া শাফিয়াল মুজনীবিন। আসসালাতু ওয়াসসালামু আ’লাইকা ইয়া রাহমাতালি­ল আ’লামীন।

হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে হযরত ঈসা (আঃ) পর্যন্ত আমাদের কী শ্রেষ্ঠ নবী শাফায়াতের কান্ডারী নুরুন আ’লানূর নবী হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এর উপর দরূদ শরীফ পাঠ করেছেন। (তখনও আমাদের নবীজী দুনিয়াতে আগমন করেন নাই।) আমাদের আক্কা (ﷺ) এর উপর দরূদ স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা ও তার ফেরেশতা কুল পাঠ করেন। তার প্রমান কোরআনুল কারিমের সুরা আহযাবের ৫৬ নং আয়াতে প্রমান করে। (সুবহানাল্লাহ্) শুধু এখানেই শেষ নয় আল্লাহ তায়ালা ঈমানদার বান্দাদেরকে ও উত্তম ভাবে দরূদ শরীফ পাঠের আদেশ দিয়েছেন। 

সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীন, আইয়্যামে মুজতাহিদীন চার মাজহাবের চার ইমাম, চার তরিকার পীর মাশায়েখ বুযুর্গানে দ্বীন, মুফাসসির, মুহাদ্দিস, মুফতি, মুজাদ্দীদে যামানগণ সকলেই হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এর উপর দরূদ শরীফ পড়েছেন এবং তারা তাদের শিখিত বিভিন্ন কিতাবাদির মাধ্যমে দরূদ শরীফের ফযিলত ও বরকত বর্ণনা করেছেন।

বর্তমান ফেতনা ফাসাদের যুগে অনেক নামধারী আলেম বাহির হয়েছে তারা আমার নবীর শানে বেআদবী করছে সাধারণ মুসলমানের মনেও সন্দেহ সৃষ্টি করে দিয়েছে। এই সংকটময় মুহুর্তে যখন বেআদবে রাসুলরা মাথা নাড়া দেওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত ঠিক তখনই বাংলাদেশের সংখ্য সুন্নী আলেমগণ এর প্রতিবাদের ঝড় তুলে তাদেরকে প্রতিহত করার চেষ্টা করেছেন। ইতিমধ্যে অনেকেই সফল হয়েছেন। 

প্রিয় পাঠক এই সুবাদে আমি অধমকে নূর নবীজী (ﷺ) এর দরূদ শরীফের উপর একখানা পান্ডুলিপি তৈরি করার জন্য বন্ধু মহল, সহপাঠি মহল সহ অসংখ্য শুভাকাঙ্খীরা বার বার অনুরোধ জানালে হাজার ব্যস্থতা ও পড়ালেখার পাশাপশি উক্ত গ্রন্থখানা সংকলন করতে বাধ্য হই। (যদিও পৃথিবীর সমস্থ গাছ পালাকে কলম আর সমস্থ সাগর মহাসাগর সহ সমস্থ পানিকে কালি বানাই তবুও আমার নবীর শান ও তার দরূদ শরীফের ফযীলত লিখে শেষ হবে না।) তবুও কলম ধরি কিয়ামতের ভয়াবহ নিদানে শাফায়াতের আশায়। 

গ্রন্থ খানা পান্ডুলিপি আকারে প্রস্তুত করায় যারা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছেন। তারা হলেন, পীরে তরিকত আল্লামা শেখ সিরাজুল ইসলাম আল-কাদরী (মা:জি:আ:) পীরে তরিকত আল্লামা মুফতি ড. শেখ শিব্বির আহমদ আল-কাদ্বরী (মা:জি:আ:) পীরে তরিকত হযরত মাওলানা শেখ জাব্বির আহমদ আল হোসাইন আল-কাদ্বরী, শ্রদ্ধেয় চাচা আলহাজ্ব হাফেজ আব্দুন নূর সাহেব (তালুপাট) হযরত মাওলানা নূর মুহাম্মদ বুরহান (সুনামগঞ্জী), হযরত মাওলানা নুরুল ইসলাম, ধোপাটিলা, পতনঊষার (দুবাই প্রবাসী), মাওলানা আব্দুর রহমান (রসূলপুরী) সহ আলো অনেকেই। আমি উনাদের নেক হায়াত কামনা করছি। বিশেষ করে আবুল খায়ের ইবনে মাহতাবুল হক সাহেবের প্রচেষ্টায় এই কিতাবখানা প্রকাশ করতে পেরেছি। আল্লাহ উনার নেক হায়াত দান করুন ও উনার আর্থিক ব্যয়কে কবুল করুন। আমীন। 

পাঠক মহলের কাছে আকুল নিবেদন উক্ত গ্রন্থখানা পাঠ কালে মুদ্রনজনিত ভূল ধরা পড়লে অবশ্যই অবহিত করবেন। ইনশাআল্লাহ্ পরবর্তী সংস্করনে সংশোধন করা হবে।

                 লেখক 

 মুহাম্মদ হোসাইন আহমেদ আলকাদেরী

প্রথম অধ্যায়

আল্লাহ তায়ালার দরূদ পাঠ 

ان الله وملا ئكته يصلون على لنبي يا ايها الذين امنوْ اصلو عليه وسلم تسليما 

সরল অনুবাদ : নিশ্চয়ই আল্লাহ ও ফেরেশতাগণ নবী (ﷺ) এর উপর দরূদ পাঠ করেন। হে মুমিনগণ! তোমরা তার উপর দরূদ পড় ও উত্তম ভাবে সালাম পেশ কর। (সূরা আহযাব-৫৬) 

উপরোক্ত আয়াত দ্বারা বুঝা যায়, স্বয়ং আল্লাহ তায়লা তার হাবিবের উপর সর্বদা দরূদ পড়েন। ফেরেশতাগণও সর্বদা দরূদ পাঠ করেন। (সুবাহানাল্লাহ) 

আয়াতখানাকে পর্যালোচনা করলে দেখা যায় ان الله وملا ئكته বাক্যটি جملة اسمية বা নামবাচক বাক্য যা আরবী গ্রামার অনুযায়ী এটি সর্বদা ও স্থায়ী অর্থে ব্যবহৃত হয়। যার ভাবার্থ আল্লাহ তায়ালা সর্বদা ফেরেস্তাদের নিয়ে রাসূল (ﷺ) এর উপর দরূদ পাঠ করেন। 

উক্ত আয়াত দ্বারা আরো প্রমানীত হয়, এই পৃথিবীতে মাত্র একটি কাজ যা স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা নিজে করেন, ফেরেশতাগন করেন সমস্ত আম্বিয়া আ’লাইহিমুস সালামগণ করেন, সমস্ত বান্দাহগণ করেন সেটা হলো আল্লাহ তায়ালার প্রিয় হাবিব ও রাসূল হযরত মুহাম্মদ মোস্থফা (ﷺ)’র উপর দরূদ পাঠ। সুবাহানাল্লাহ। মোট কথা উপরোক্ত আয়াত দ্বারা দুটি দিক পাওয়া যায়। 

১। সর্ব প্রকার সন্দেহ থেকে একথা মুক্ত যে, আল্লাহ তায়ালা ও ফেরেশতাগণ হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (ﷺ) এর উপর সর্বদা দরূদ শরীফ পেশ করেন। 

২। ঈমানদারদেরকে হুকুম দিচ্ছেন তোমরাও নবী করিম

(ﷺ)  এর উপর দরূদ শরীফ ও সালাম পেশ কর। 

            (মাওয়ায়ে  রেজবিয়্যাহ- ২য় খন্ড- ২০৭) 

সর্বদা দরূদ পাঠ 

পবিত্র কালামে পাকে আল্লাহ তায়ালা নিজেই বলছেন,

ان الله وملا ئكته يصلّون على النبى  এখানে جملة اسمية ব্যবহার করা হয়েছে, যা স্থায়ীত্ব বা استمرار বুঝায়। অতএব এখানে অর্থ হবে নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা ও ফেরেশতাগণ হাবীবে খোদা (ﷺ) এর উপর অতীতে দরূদ পড়েছেন, বর্তমানে পড়ছেন ও ভবিষ্যতে পড়তে থাকিবেন। (সুবহানাল্লাহ) আল্লাহ আযযাও- য়াজাল্লাহ তার প্রিয় হাবীবকে কত ভালবাসের তার কতটুকু মহব্বত করেন তা কিয়ামত পর্যন্ত বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। যেহেতু আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয় হাবিবের উপর সর্বদা (অতীতে, বর্তমানে, ভবিষ্যতে) ফেরেশতাগণকে নিয়ে দরূদ সালাম পড়ছেন ও পড়তে থাকবেন, সেহেতু আল্লাহ তায়ালার আদেশ অনুযায়ী আমরাও নবীকূল সম্রাট সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লামের উপর পাক পবিত্র অবস্থায় সর্বদা দরূদে পাঠে নিজেকে মশগুল রাখা। এতে ইহকালে ফায়দা ও পরকালের মুক্তির পথ খোলে যাবে। 

বান্দার প্রতি দরূদ পাঠের আদেশ

ياايها الذين امنوأ صلّو عليه وسلم تسليما –

হে ঈমানদারগণ তোমরাও তার উপর দরূদ 

পড়ও উত্তম ভাবে সালাম পেশ কর, (সূরা আহযাব-৫৬) 

এই আয়াতংশে আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন শুধু মাত্র ঈমানদার বান্দাদের বলেছেন। কোন ইহুদী, নাসারা, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, ইত্যাদি সহ অন্যান্য লোককে বলেন নাই। 

শুধূমাত্র তাদেরকে বলেছেন, যারা আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদ, রাসূল (ﷺ) এর রেসালাতের পূর্ণ বিশ্বাসী ও তাকওয়া অর্জনকারী ।  আর তারাই প্রকৃত মুমীন। 

সুতরাং উপরোক্ত আয়াতাংশ দ্বারা আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয় বান্দাদের আদেশ করছেন। তোমরা আমার হাবিবের উপর উত্তম রূপে দরূদ ও সালাম পেশ কর। যেহেতু আল্লাহ তায়ালার আদেশ পালন না করলে গোনাহগার হবে। রাসূলের শাফায়াত হতে বঞ্চিত হবে এতে কোন সন্দেহ নেই। সেহেতু আমাদের উচিৎ সর্বদা দরূদ শরীফ পাঠ করা।  

দরূদ পাঠে রাসূল (ﷺ) এর আদেশ

رغم انف رجل ذكرت عنده فلم يصل على

অর্থাৎ: ঐ ব্যক্তির নাম ধুলায় মলিন হোক, যার নিকট আমার নাম উচ্চারণ করা হয়, আর সেই ব্যক্তি আমার উপর দরূদ পাঠ করে না। (মেশকাত-৮৬) 

অন্য বর্ণনায় হযরত আবু যর গিফারী (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন হে লোকেরা! আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে কৃপণ কে বলব না? সাহাবায়ে কিরামগণ আরজ করলেন ইয়া রাসূলাল্লাহ! (ﷺ) বলুন, হুজুর (ﷺ) ইরশাদ করলেন, من ذكرة عنده فلم يصل على  যার সামনে আমার নাম ধরা হবে আর সে আমার উপর দরূদ পড়ল না। (কাশফুল গোম্মাহ- সূত্র মাওয়াইজে রেজভিয়্যাহ- ২য়/২১০পৃষ্টা) 

হাদীসদ্বয়ের আলোকে বুঝা যাচ্ছে, পৃথিবীর সব চাইতে বড় কৃপন বা বখীল হলো যার সামনে মাহবুব (ﷺ) এর নাম মোবারক উচ্চারণ করা হলো অথচ সাথে সাথে তারা দরূদ পাঠ করল না। 

দরূদ পাঠ কারীর উপর আল্লাহ ও ফেরেশতাদের সালাত

من صلى على النبى صلى الله عليه وسلم واحدة صلى الله عليه وملا ئكته سبعين صلاة –

অর্থাৎ: আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) এর বর্ণনায়, যে ব্যক্তি হুযুর (ﷺ) এর উপর একবার দরূদ পাঠ করবে, আল্লাহ আযযাওয়াজাল্লা ও তার ফেরেশতাগণ তার উপর সত্তর বার সালাত পাঠ করবেন। (মিশকাত শরীফ ৮৭) 

উপরোক্ত হাদীস শরীফে বলা হচ্ছে, আল্লাহর হাবীব হুযুরপুর নূর (ﷺ) এর উপর একবার দরূদ শরীফ পাঠ করলে, আল্লাহ তায়ালা ও তার ফেরেশতাগণ ঐ ব্যক্তির প্রতি সত্তর বার সালাত পাঠ করবেন। (সুবহানাল্লাহ) এখানে বান্দার প্রতি সালাত পাঠের ব্যাখ্যায় আল্লাহর বেলায় হবে, রহমত নেয়ামত আর ফেরেশতাগনের বেলায় হবে ঐ বান্দার জন্য মাগফিরাত কামনা। 

দরূদ পাঠ আল্লাহর নৈকট্য লাভের উচিলা

মেশকাত শরীফের ৮৬ পৃষ্টায় হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে একখানা হাদীস শরীফ বর্ণনা করেছেন হুযুরপাক (ﷺ) ইরশাদ করেন- 

اولى الناس بي يوم القيامة الكثرهم على صلى لا

কিয়ামত দিবসে আমার সবচেয়ে নিকটে হবে ঐ সব ব্যাক্তি যারা আমার উপর বেশী বেশী দরূদ শরীফ পাঠ করেছে। উক্ত হাদীস শরীফ থেকে আমরা দৃড়ভাবে বুঝতে পারি নির্ধারিত, ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত ও আবশ্যকীয় ইবাদত সম্পাদনের পাশাপাশি দরূদ শরীফ পাঠে রাসূল (ﷺ) এর দীদার বা নৈকট্য লাভ করা সম্ভব। আর হুযুর (ﷺ) এর নৈকট্য লাভ করলেই, আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভ করতে সম্ভবপর হবে। কেননা আল্লাহ তায়ালা সকল জান্নাতী বান্দাদেরকে নিজ দিদার দিয়ে ধন্য করবেন। (সুবহানাল্লাহ) অথচ আফসোস! এখনও আমরা অনেকেই দরূদ শরীফ পাঠ থেকে গাফেল রয়েছি। 

দরূদ পাঠে শাফায়াত নসীব হবে 

◼ হযরত আবু বকর ইবনে আসেম (ওফাত ২৮৭হি:) (রহঃ) কিতাবুস সালাত আ’লান নাবিয়্যিন এর ৬১ পৃষ্টায় একখানা হাদীস শরীফ সংকলন করেছেন। 

◼ হযরত আবু দারদা (রাঃ) হতে বর্ণীত তিনি বলেন, হুযুর (ﷺ) এর নূরানী ফরমান হচ্ছে- 

من صلى على حين يصبح عشرا وحين يمس عشر اأد ركته شفاعتي يوم القيامة

অর্থাৎ, যে ব্যাক্তি আমার উপর সকালে দশবার বিকালে দশবার দরূদ পাঠ করে সে কিয়ামত দিবসে আমার শাফায়াত পাবে। (বার মাসের আমল ও ফযীলত- ১৭২) 

◼ কাজী আবু ইসহাক (ওফাত ২৮২ হি:) (রহঃ) ফযলুস সালাত আ’লান নাবিয়্যি এর ৫০ পৃষ্টায় উলে­খ করেন- 

من صلى على اوسأل لى الوسيلة حقت عليه شفاعتى يوم القيامة  অর্থাৎ যে ব্যাক্তি আমার উপর দরূদ পাঠ করবে অথবা আমাকে উচিলা বানাবে কিয়ামতের দিন তার উপর আমার শাফায়াত আবশ্যক হবে। উক্ত হাদীসে তিনটি দিক পাওয়া যায়। 

প্রথমত : দরূদ পাঠের গুরুত্ব ও তার তাগিদ সম্পর্কিত। 

দ্বিতীয়ত : উচিলা বানানোর ব্যাপারে। আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভের প্রধান মাধ্যমই হচ্ছে হুজুর (ﷺ) এর উচিলা। তার উচিলা ছাড়া সরাসরি আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা সম্ভব নয়। 

তৃতীয়ত : রাসূল (ﷺ) এর উচিলা ধরতে হলে চাই তার উপর অধিক পরিমাণে দরূদ পাঠ। 

দরূদ পাঠে চেহারা উজ্জল হয়

হযরত সুফিয়ান সাওরী (রহ:) একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বর্ণনা করেন, তিনি বলেন আমি একবার হজ্বের সময় কাবা শরীফ তাওয়াফ করছিলাম। তখন দেখতে পেলাম এক ব্যাক্তি প্রতি কদমে কদমে শুধু দরূদ শরীফ পাঠ করছে। আমি এর কারণ জিজ্ঞাসা করিলে সে বলল, আমার পিতা সহ হজ্জ্বের সফরে ছিলাম এমন সময় আমার পিতা অসুস্থ হয়ে মৃত্যু মুখে পতিত হলেন আর তার চেহারা শুকরের চেহারার ন্যায় হয়ে যায়। আমি এ দৃশ্য অবলোকন করে অত্যান্ত চিন্তিত হয়ে ছিলাম। তখন আমি কাপড় দিয়ে চেহারা ঢেকে দিলাম। কিছুক্ষণের ভিতরে অপূর্ব চেহারা বিশিষ্ট এক ব্যক্তি আগমন করেন এবং আমার পিতার চেহারা থেকে কাপড় সরিয়ে নিয়ে স্ব-হস্তে তা মুছে দেন। এতে আমার পিতার চেহারা উজ্জল হয়ে যায়। আমি তার পরিচয় জানতে পারলাম যে, তিনি আমার প্রিয় নবী শাফিউল মুজনাবিন হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)। তিনি বলেন, তোমার পিতার অনেক ত্রুটি ছিল। কিন্তু সে আমার প্রতি বেশী বেশী করে দরূদ শরীফ পাঠ করতো। এই দরূদ শরীফের বদৌলতে তার চেহারা পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া হল। [পথ ও পাথেয়-১ম খন্ড] 

দরূদ পাঠকারীর মর্যাদা বৃদ্ধি 

من صلى على واحدة صلى الله  عليه عشر صلوة وحطت عنه عشر خطيات ورفعت له عشر درجات – 

অর্থাৎ, হযরত আনাস (রাঃ) এর বর্ণনায়, রাসূলে করীম (ﷺ) এর নূরানী ফরমান হল যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পাঠ করবে, আল্লাহ তায়ালা তার উপর দশটি রহমত নাযিল করবেন। দশটি গুণাহ মাফ করবেন, দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি করা হবে। [মেশকাত শরীফ-৮৭ পৃষ্টা] সুবাহানাল্লাহ প্রিয় পাঠক পাঠিকা ইসলামী ভাই ও বোনেরা একবার চিন্তা করুন দরূদে মোস্তফার এত ফযিলত থাকার পরও আমরা এর থেকে অনেক গাফেল হয়ে আছি। আফসোস! একবারও কি আমাদের অন্তরে হাবীবে খোদা (ﷺ) এর মোহাব্বাত আসেনা? অথচ আমাদেরকে আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন তার হাবিবের উচিলায় দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। 

দরূদ পাঠে দশগুণ সাওয়াব

হযরত আবু তালহা (রা.) এর বর্ণনায়-

ان رسول الله صلى الله عليه وسلم جاء ذات يوم والبشر فى وجهه فقال انه جاء نى جبريل فقال ان ربك يقول امايرضيك يامحمد ان لايصلي عليك واحد من امتك الا صليت عليه عشر ولايصلم عليك احد من امتك الاسلمت عليه عشر –

অর্থাৎ একদিন রাসূল (ﷺ) আমাদের নিকট তাশরীফ আনলেন তখন তার চেহারা মোবারকে আনন্দের ভাব পরিলক্ষিত হয়েছিল। অতপর বললেন, আমার কাছে জীবরাঈল (আঃ) এসেছিলেন। আর বললেন, হে মুহাম্মদ (ﷺ) আপনার প্রভু বলেছেন আপনি কি খুশি হবেন না? আপনার কোন উম্মত আপনার উপর একবার দরূদ পাঠ করলে আমি তার উপর দশবার রহমত নাযিল করব। আপনার কোন উম্মত আপনার উপর একবার সালাম পেশ করলে আমি তার উপর

দশবার শান্তি বর্ষণ করবো। [নাসাঈ-দারেমী] যোগ সূত্র মেশকাত শরীফ ৮৬] 

দরূদ পাঠে আশি বছরের গুনাহ্ মাফ 

দারে কুতনী ও ইবনে শাহীন হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, হুযুর (ﷺ) ইরশাদ করেন- 

الصلواة على نور على الصراط فمن صلى على يوم الجمعة ثمانين مرة غفرت له ذنوب ثمانين  سنة –

অর্থাৎ আমার উপরে প্রেরিত দরূদ পুলসিরাতে নুর হবে। যে ব্যক্তি জুমুয়ার দিন আমার উপরে আশি বার দরূদ পাঠ করবে। তার আশি বছরের গোনাহ্ মাফ করে দেওয়া হবে। [জাওয়াহেরুল বিহার ৪র্থ- ১৬৩]    

প্রিয় প্রিয় ইসলামী ভাইয়ের একটু লক্ষ করে দেখুন আশিবার দরূদ শরীফ পাঠের ফলে যদি আশি বছরের সগিরা গোনাহ্ মাফ হয়ে যায়, তাহলে আমরা কত হতভাগা দৈনিক আমরা একবারও দরূদ শরীফ পাঠ করি না। আমরা বাঁচব কত দিন তা আমাদের জানা নেই। তাই যদি এখন থেকে বাকী সময়টার কিছু সময় দরূদ শরীফ পাঠের জন্য বেচে নিলে আমাদের দুনিয়াতেও কোন কষ্ট নেই । আখেরাতেও কোন কষ্ট নেই।

দরূদ পাঠকারী আযাব থেকে মুক্তি পাবে 

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নূরানী ফরমান-

ان الله تعالى ينظر الى من يصلى على ومن نظر الله تعالى اليه لايعد به ابدا-

অর্থাৎ, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা দয়ার দৃষ্টি দান করেন। ঐ ব্যক্তির উপর যে আমার উপর দরূদ পাঠ করে। আর যার প্রতি আল্লাহর দয়ার দৃষ্টি পড়বে, আল্লাহ তায়ালা তাকে কখনো আযাব দিবেন না। 

[আফযালুস সালাত পৃষ্টা: ৪১] সুবাহানাল্লাহ। এই হাদীস শরীফে দুইটি দিক লক্ষ করা যায়। 

প্রথমত, আল্লাহ তায়ালা দয়ার দৃষ্টি দান করেন। এই দয়ার দৃষ্টি কতটুকু তা বলা অসম্ভব। তবে এতটুকু বলা যায় বান্দার সারাজীবনের মকবুল ইবাদতের চাইতে কোটি কোটি গুণ উত্তম। 

দ্বিতীয়ত : যে বান্দার প্রতি আল্লাহ তায়ালা রহমতের দৃষ্টি দিবেন তাকে কখনও আযাব দিবেন না। কারণ যার প্রতি আল্লাহ তায়ালা একবার রহমতের দৃষ্টি দিবেন, সে কখনও হাবিবে খোদা (ﷺ) এর দরূদ ছাড়তে পারে না। এতে আরো প্রমাণীত হয় যে, আল্লাহর মকবুল বান্দাগণ কখনও নবীয়ে দুজাহান রাহমাতুলি­ল আ’লামীনের দরূদ ছাড়েন নাই। 

উহুদ পরিমান সওয়াব

হুযুর (ﷺ) এর নূরানী ফরমান হচ্ছে। যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ শরীফ পাঠ করবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে এক কিরাত পরিমাণ সওয়াব দিবেন আর এক কিরাত হচ্ছে উহুদ পর্বতের সমান। (আল কাউলুল বাদী) 

সকল রোগের ঔষধ হলো দরূদ

পার্থিব জীবনে আমাদের অনেক সুখ, দু:খ, বালা, মুসিবত কেটে উঠতে হয়। আর এই সুখ, দু:খ, আনন্দ, বেদনা, নিয়েই আমাদের জীবনের পাথেয়। আর এই সামান্য দু:খ আনন্দ, বেদনা, রুগ বালাই দূর করার জন্য দরূদ শরীফের কোন তুলনা নেই। আর এই দরূদ শরীফ আমাদের সকল উদ্দেশ্য পূরণ করে দেয়। যেমন হাদীস শরীফে বলা হচ্ছে- 

عن ابى بن كعب قال قلت بارسول الله انى اكثر الصلوة عليك فكم اجعل لك من صوتى فقال ماشئت قلت الربع قال ماشئت فان زدت فهو خير لك قلت النصف قال ماشئت فان زدت فهو خيرلك قلت الثلثين قال ماشئت قان زدت فهوخير لك قلت اجعل لك صلوتى كلها قال اذا يكفر فمك ويكفر لك ذنبك– 

অর্থাৎ, হযরত উবাই বিন কাব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লামকে বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ আমি আপনার উপর বেশী বেশী দরূদ পড়ে থাকি। আমি কত সময় আপনার জন্য দরূদ পড়ব? উত্তরে নবী (ﷺ) বললেন, যা ইচ্ছা! আমি বললাম এক চতুর্থাংশ। তিনি বললেন, যা ইচ্ছা পড়। যত বেশী পড়বে তোমার জন্য ভালো হবে। তিনি বলেন, অর্ধাংশ সময় নবী (ﷺ) বললেন, যা ইচ্ছা পড় বেশী পড়তে পারলে তোমার জন্য ভালো হবে। আমি বললাম, দুই তৃতীয়াংশ? তিনি বললেন, আরো বেশী পারলে ভাল হবে। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! (ﷺ) আমার সমস্ত সময়টুকু আপনার দরূদ পাঠে কাঠিয়ে দেব। মহানবী (ﷺ) বললেন, তাহলে তোমার ব্যথা দূর হবে এবং তোমার পাপ মোছন হবে। (মেশকাত শরীফ-৮৬) 

রিযিক বৃদ্ধি ও অভাব দূর 

দালায়েলুল খাইরাতে আল্লামা আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ বিন সোলাইমান যাযুলী (রহঃ) একখানা হাদীস শরীফ বর্ণনা করেন, 

وقال صلى عليه وسلم من عسرت عليه حاجة فليكثر با الصلوة على قانها تكشف الهموم والغموم والكروب وتكثر الارزاق وتقضى الحوأئج –

অথাৎ : রাসূলে আকরাম (ﷺ) ইরশাদ করেন, যে ব্যাক্তি বিপদগ্রস্থ হয়ে কঠিন সমস্যায় উপনীত হবে। সে যেন আমার প্রতি অধিক পরিমাণ দরূদ শরীফ পাঠ করতে থাকে। কেননা দরূদ শরীফ সকল প্রকার দু:খ বেদনার বিষন্নতা এবং কঠিন বিপদাপদ দূরীভূত করে এবং রিযিক বৃদ্ধি করে। এমনকি সকল প্রকার অভাব অনটন মিটিয়ে দেয়। (দোলায়েলুল খাইরাত) সুবহানাল্লাহ। এই হাদীস শরীফ থেকে এটা পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে হুরযুরপুর নূর (ﷺ)ের উপর অধিক পরিমাণে দরূদ সালাম পাঠ করলে সকল বিপদাপদ ও অভাব অনটন দূর এবং রিযিকবৃদ্ধি সহ অনেক উপকারে আসে। সুতরাং উম্মতে মুহাম্মদী (ﷺ) এর উপর আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে নাজাতের ফায়সালা সহ সকল সমস্যার সমাধান ঘোষণা করে দিয়েছেন দরূদ পাঠের মাধ্যম। 

ফুলসিরাতের আলোক স্বরূপ 

হদীস শরীফে এসেছে। হুযুর (ﷺ) ইরশাদ করেছেন। আমার উপর অধিক পরিমাণে দরূদ পাঠ করাই হল কিয়ামত দিবসে পুলসিরাতের অন্ধকারে নুর বা আলোক স্বরূপ। (ফাযাইলে দরূদ ও ওযীফা)

দরূদ শরীফ নূর হবে 

হাদীস শরীফে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন-

زينو مجالسكم باالصلواة علىفأن صلا تكم على نورلكم يوم القيامة –

অর্থাৎ- তোমরা তোমাদের সমাবেশকে আমার দরূদ পাঠ করার মাধ্যমে সৌন্দর্য্যমন্ডিত করো। নি:সন্দেহে আমার উপর দরূদ পাঠ করা কিয়ামতের দিনে তোমাদের জন্য নূর হবে। (সুবাহানাল্লাহ) অন্য হাদীসে হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণীত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, তোমরা আমার উপর দরূদ শরীফ পাঠ কারীদের জন্য পুলসিরাতে নূর থাকবে- لم يكن من اهل النار সে দোযখবাসী হবে না। (দালায়েলুল খাইরাত) সুবাহানাল্লাহ- সুপ্রীয় ইসলামী পাঠক/ পাঠিকা একটু চিন্তা করুন দরূদ শরীফ পাঠের মাধ্যমে শুধু দুনিয়া নয় আখেরাতেও আমাদের কাজে আসবে। নূর হিসেবে আমাদের কাজে আসবে। আমরা এত দেরী করি কেন? প্রতিজ্ঞা করি আজ থেকে দরূদ ছাড়ব না। 

দরূদ পাঠ গোনাহের কাফফারা

দরূদে মোস্তফা পাঠ করলে অন্তরের মরিচা দূর হয় এবং গোনাহের কাফফারা আদায় হয়। যেমন: হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণীত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন

صلو على فان الصلواة على عفارة لكم وزكاة  

অর্থাৎ, তোমরা আমার উপর দরূদ পাঠ কর। কেননা, আমার উপর দরূদ পাঠ করলে তোমাদের জন্য গুণাহের কাফফারা এবং (অভ্যন্তরীন) পবিত্রতা অর্জন হবে। (আল কাউলুল বদী-১০৩) 

উম্মতের দরূদ স্বয়ং নিজে শুনেন 

হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে। কোন এক সাহাবী রাসূলুল্লাহ! (ﷺ) এর পবিত্র দরবারে আরজ করলেন। হে আল্লাহর রাসূল ঐ সব ব্যক্তির দরূদ শরীফ সম্বন্ধে বলুন যারা আপনার কাছ থেকে অনুপস্থিত বা দূরে অবস্থান করে। অর্থাৎ আপনার পবিত্র জীবদ্ধশায় আপনার প্রতি দরূদ প্রেরণ করবে এবং ভবিষ্যতে ওফাত শরীফের পরও দরূদ প্রেরণ করবে। আপনার নিকট এ দু-দলের কী অবস্থা হবে? তদুওরে প্রিয় নবী (ﷺ) বললেন, 

اسمع صلوت اهل محبتى واعرفهم وتعرض على صلو غيرهم عرضا 

অর্থাৎ আমার প্রতি মুহাব্বাত ও ভালবাসা সম্পন্নদের দরূদ শরীফ কোন প্রকার মাধ্যম ছাড়াই আমি স্বয়ং শ্রবণ করি এবং তাদেরকে আমি চিনি। এছাড়া অন্যান্যদের দরূদ ফিরিশতাদের মাধ্যমে আমার নিকট পেশ করা হয়। [দালায়েলুল খাইরাত] 

মধু তিক্ত থেকে মিষ্টি হয় 

আল্লামা রুমী (রহঃ) মসনবী শরীফে উলে­খ করেন, একদা নবীকুল সম্রাট হুযুর (ﷺ) মৌমাছিদেরকে বলেন, তোমরা প্রত্যেক প্রকারের ফুল থেকে রস আহরণ কর, এতে কিছু মিষ্টি কিছু তিক্ত এবং কিছু টক ও রয়েছে এতদসত্বেও সমুদয় রস কীভাবে মিষ্টি হয়ে মধুতে পরিণত হয়? মৌমাছিরা আরজ করল, হে সমগ্র সৃষ্টির পথ প্রদর্শক! আমরা ফুল হতে রস আহরন করে ঘড়ে প্রত্যাবর্তন করা অবধি আপনার প্রতি দরূদ শরীফ পাঠ করে থাকি। এর ফলে সমুদয় রস সুমিষ্ট মধু হয়ে যায়। (শানে হাবিবুর রহমান)

মাটিগুলো মুক্তায় পরিণত 

একদা এক ব্যক্তি অভিশপ্ত আবু জেহেল থেকে কিছু ভিক্ষা চাইল, আবু জেহেল ঠাট্রা বিদ্রুপ করে ঐ ব্যক্তিকে বললো শেরে খোদা আলীর নিকট যাও। তিনি একজন অর্থশালী ব্যক্তি। অবশ্যই তোমাকে  কিছু না কিছু দান করবেন। অতএব সে হযরত আলীর মহান দরবারে উপস্থিত হয়ে কিছু সাহায্য প্রার্থনা করলো। অথচ প্রকৃত অবস্থা এ ছিল ওই সময় হযরত আলী (রা.) এর নিকট প্রার্থনা কারীকে দেওয়ার মত কিছুই ছিল না। সুবাহানাল্লাহ, আমাদের প্রিয় নবী (ﷺ) এর আহলে বাইতের কতটুকু ক্ষমতা। শাহে বেলায়াতের সম্রাট হযরত আলী (রাঃ) বললেন হে ভিক্ষুক তোমার হাত আমার দিকে প্রসারিত করো। সে হাত প্রসারিত করলে, হযরত আলী (রা.) তিনবার দরূদ শরীফ পাঠ করে বললেন, এ মাটিকে মুষ্টিতে শক্ত করে ধরো এবং আবু জেহেলের সামনে গিয়ে খুলবে। ওদিকে আবু জেহেল এ ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে হাসি ও বিদ্রুপ করছিলো। ভিক্ষুক আবু জেহেলের নিকট আসলে সে বললো মুষ্টি খোল। ভিক্ষুক মুষ্টি খুলে দেখলো ওই মাটিগুলো তার হাতে মনি মুক্তায় পরিণত হয়ে আছে। আবু জেহেল ও মক্কার কাফেররা এ অবস্থা দেখে হতভম্ভ হয়ে গেল এবং বিদ্রুপ কারীদের মুখ থুবড়ে পড়লো। (সুবহানাল্লাহ) প্রিয় পাঠক-পঠিকা দরূদের দ্বারা যদি মাটি মুক্তায় পরিণত হতে পারে !তাহলে কেন আমরা আজ দরূদ শরীফ না পড়ে গাফেল হয়ে আছি। আমরা কি পারিনা নবীজির দরূদ শরীফ পড়ে নিজেকে মদীনাওয়ালার রঙ্গে রঙ্গীন করতে? অবশ্যই দরূদ পড়লে স্বয়ং মদীনাওয়ালার দিদার নসীব হবে। 

মসজিদে প্রবেশ করতেও দরূদ 

হযরত সাহল (রা.) বলেন, আমি নবীজী (ﷺ) কে সালাম করার জন্য আসলাম। তখন হাসান ইবনে আলী (রা.) নবীজী (ﷺ) এর পাশের ঘরে রাত্রের খাবার গ্রহণ করছিলেন। তিনি আমাকে ডাকলেন। আমি সাড়া দিলাম। তিনি বললেন, আসুন যাতে আমার সাথে নৈশ্যভোজে অংশ নিতে পারেন। আমি বললাম, জি না আমার প্রয়োজন নেই। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন তাহলে কেন দাড়িয়ে আছেন? আমি বললাম- وقفت اسلم على النيى صلى الله عليه وسلم 

অর্থাৎ, আমি নবী করীম (ﷺ) কে সালাম করার জন্য দাড়িয়ে অপেক্ষা করছি। তিনি বললেন- اذا دخلت المسجد فسلم عليه  যখন তুমি মসজিদে প্রবেশ করবে, তখন তাকে সালাম করবে। এই হাদিস দ্বারা প্রমান পাওয়া যায় যে, মসজিদে প্রবেশ কালেও রাসূল (ﷺ) কে সালাম প্রদান করা জরুরি। শুধু এখানেই সমাপ্ত নয় অন্য হাদীসে বলা হচ্ছে,

 عن على بن ابى طلب (رض) قال اذامرتم با المسجد فصلوا على النبى صلى الله عليه وسلم (فضل الصلواة على النبي)

অর্থাৎ, হযরত আলী ইবনে আবি তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণীত, তিনি বলেন, যখন তোমরা মসজিদের পাশ দিয়ে যাবে। তখন নবীজী (ﷺ) এর উপর দরূদ শরীফ পাঠ করবে। 

        (ইমাম আবু ইসহাক কর্তৃক, ফাদ্বলুস সালাত- পৃষ্টা: ৭৯) 

 মুসা (আঃ) এর উম্মতের নাযাত 

ইমাম সাখাবী বর্ণনা করেন, হযরত মুসা (আঃ) এর সময়কালে একজন ব্যাক্তি বড়ই ফাসেক ছিল। বনী ইসরাইলের লোকেরা তার উপর বড়ই অসন্তুষ্ট ছিল। তার মৃৃত্যু হলে লোকেরা তাকে কাপন দাপন ব্যতিত একটি আবর্জনার স্তুপে নিক্ষেপ করে দিল। তার নামাজের যানাযাও কেউ পড়ে নি। আল্লাহ তায়ালা হযরত মুসা (আঃ) কে ওহীর মাধ্যমে জানিয়ে দিলেন যে, হে মুসা! অমুক আবর্জনার স্থানে একজন মৃত ব্যক্তির লাশ কাপন দাফন ব্যতিত পড়ে আছে। সেখানে গিয়ে তাকে গোসল দিয়ে কাপন পড়িয়ে জানাযা পড়ে সম্মানের সহিত দাফন কর। কেননা আমি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। মুসা (আঃ) ও তার অবস্থা জানতেন। তিনি বললেন হে আল্লাহ! তার গুণাহ্ কী কারণে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। তার কোন আমলটি মাগফিরাতের কারণ হল? আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে বলা হল- হে মুসা তার মাগফিরাতের কারণ হল, একদিন সে তাওরাত পাঠ করার সময় আমার শেষ নবীর নাম মোবারক দেখে সে দরূদ পাঠ করেছে। একারনেই আমি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। (আফযালুস সালাত পৃ: ৪১। বার মাসের আমল ও ফযীলত-পৃ: ১৬৮)

হযরত মুসা (আঃ) এর ঘটনা 

একদা আল্লাহ তায়ালা হযরত মুসা আ’লাইহিস সালাম এর প্রতি ওহী অবতীর্ণ করলেন, তুমি কি ইচ্ছে কর তোমার জিহ্বার সাথে তোমার কথার যে সম্পর্ক, আমি তার থেকেও তোমার অধিক নিকটবর্তী এবং বিপদ-আপদে তোমার ও তোমার অন্তরের সাথে তোমার আত্মা ও তোমার শরীরের সাথে এবং তোমার দৃষ্টি ও তোমার চোখের সাথে যে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে, তার চেয়েও অধিক নিকটবর্তী হই? উত্তরে মুসা (আঃ) বললেন- হঁ্যা। তখন আল্লাহ তায়ালা বললেন, তুমি আমার প্রিয় হাবীব মুহাম্মদ মোস্তফা (ﷺ) এর প্রতি অসংখ্য দরূদ শরীফ প্রেরণ করো, যাতে তুমি এ সৌভাগ্য ও নৈকট্য অর্জন করতে পার। (সুবাহানাল্লাহ্), (গাউছিয়া তরবীয়তী নেসাব- ৫১১পৃ:) 

দরূদ পাঠকারীর তিন দিন পর্যন্ত গোনাহ্ লেখা হয় না 

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من صلى عليه صلاة واحدة امر الله حافظيه ان لا – يكتبا عليه – ذنبا ثلاثة ايّام –

অর্থাৎ : রাসূলে খোদা (ﷺ) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আমার উপর মাত্র একবার দরূদ শরীফ পাঠ করবে। আল্লাহ তায়ালা তার কেরামান কাতেবীন ফেরেশতাদ্বয়কে কে তার উপর তিনদিন পর্যন্ত কোন গুনাহ্ না লেখার নির্দেশ দেন।     (জিকরে এলাহি- ৯৮)  

সত্তর হাজার ডানা বিশিষ্ট পাখি সৃজন

দালায়েলুল খাইরাতের প্রণেতা মুহাম্মদ ইবনে সুলাইমান জাযুলী (র) দরূদ শরীফের ফযিলত বর্ণনা করতে গিয়ে নবী করিম (ﷺ) এর একটি হাদিস বর্ণনা করেন। নবী করী (ﷺ) ইরশাদ করেন- আল্লাহর প্রতিটি বান্দা আমার উপর দরূদ শরীফ পাঠ করার সাথে সাথে দরূদ শরীফটি অতি দ্রুত বেগে পূর্ব পশ্চিম স্থল, ও জলভাগে বের হয়ে পড়বে। এমন কোন জায়গা থাকবে না, যেখানে দরূদ শরীফ পৌছাবে না, এবং সাথে সাথে এ কথা বলে ভ্রমণ করবে যে আমি হলাম অমুকের সন্তান অমুকের দরূদ শরীফ, যা সারা সৃষ্টির শ্রেষ্ট হযরত (ﷺ) এর উপর দরূদ শরীফ পঠিত। অত:পর সৃষ্টি জগতের সবাই প্রিয় নবীর উপর দরূদ শরীফ পাঠ করবেন। আর আল্লাহ তায়ালা এ দরূদ শরীফ হতে সত্তর হাজার ডানা বিশিষ্ট একটি পাখি সৃজন করবেন। আর সত্তর হাজারের প্রতিটি ডানায় থাকবে সত্তর হাজার পালক। আর সত্তর হাজারের প্রতি পালকে থাকবে সত্তর হাজার মাথা প্রতিটি সত্তর হাজার মাথায় থাকবে সত্তর হাজার চেহারা। আর প্রতিটি সত্তর হাজার চেহারায় থাকবে সত্তর হাজার মুখমন্ডল। আর সত্তর হাজার মুখমন্ডলের প্রতিটিতে থাকবে সত্তর হাজার জিহ্বা, আর প্রতিটি সত্তর হাজার জিহ্বা দ্বারা আল্লাহর তাসবীহ তথা প্রশংসা করতে থাকবে। এ প্রশংসায় ছাওয়াবসমূহ দরূদ শরীফ পাঠকারীর আমলনামায় লিখা হবে।     (জিকরে এলাহী ১০০-১০১পৃষ্টা)

স্বয়ং বেহেস্তই আকৃষ্ট হয়

রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন- 

ان الجنة تشتاق الى خمسة نفرتالى القرأن وحافظ للسل ن ومطعم الجيعان ومكس العريات ومن صلى على حبيب الرحمن 

অর্থাৎ, পাঁচ প্রকার মানুষের প্রতি স্বয়ং বেহেশতই আকৃষ্ট হয়ে আছে : 

১। কোরআন শরীফ তেলাওয়াকারী 

২। নিজের জিহ্বাকে অনর্থক কথাবার্তা থেকে রক্ষাকারী। 

৩। ক্ষুধার্থকে অন্নদানকারী।

৪। বস্ত্রহীনকে বস্ত্রদান এবং 

৫। আল্লাহর প্রিয় হাবিবের প্রতি দরূদ পাঠকারী। সুবাহানাল্লাহ দরূদ 

     পাঠকারীর কত বড় মর্যাদা।             (জিকরে এলাহি- ৯৮)  

বিকৃত চেহারা চাঁদের মত উজ্বল

হযরত শায়খ শিবলী (রহ:) বলেন, বায়তুল্লাহ্ শরীফ যিয়ারতের সময় আমি একবার এক যুবকের সাক্ষাত পাই। সে বায়তুল্লাহ শরীফ তাওয়াফ করছিল। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, প্রতিটি ক্ষেত্রে নির্ধারিত দোয়া না পড়ে সর্বত্রই সে দরূদ শরীফ পাঠ করছিল। শিবলী (রহ:) বলেন, তুমি কি দরূদ শরীফ ছাড়া অন্য কোনো দোয়া পারতে পার না? তুমি সর্বত্রই দরূদ শরীফ পাঠ করছো কেন? যুবকটি বলল, আমি অনেক দোয়া মুখস্ত পারি। কিন্তু দরূদ শরীফের যে উপকার আমি নিজে লাভ করেছি অন্য কোন দোয়ায় তা পাইনি। তাই সর্বত্র দরূদ শরীফ পাঠ করছি। 

হযরত শিবলী (রহ:) বললেন, ঘটনাটি কী আমাকে খোলে বল। অনেক বছর আগের কথা। আমি আর আমার বাবা হজ্বে আসছিলাম। বাগদাদে পৌছার পর আমার বাবা ভীষণভাবে জ্বরাক্রান্ত হলেন এবং কয়েকদিন পর মারা গেলেন। কিন্তু মৃত্যুর পর তার মুখের আকৃতি শুকরের মত হয়ে গেল। আমি এ অবস্থা দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পরলাম। তার মুখের উপর একটি কাপড় টেনে দিলাম। কাউকে এ অবস্থা বলতেও পারছিলাম না। আবার একা একা দাফন করতেও পারছিলাম না। প্রচন্ড কষ্ট, চিন্তা ও দূর্ভাবনায় আমি উপুর হয়ে পড়েছিলাম। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি বলতেও পারব না। আমি ঘুমের মধ্যে দেখি কি অসাধারণ সুন্দর এক পবিত্র মানুষের আগমণ। রূপময় সেই উজ্জলকান্তি পবিত্র আমার বাবার কাছে এলেন। মুখ থেকে কাপড় সড়িয়ে তার মুখে হাত বুলিয়ে দিলেন। আর এমনিতেই আমার বাবার চেহারা চাঁদের মত উঁজ্বল হয়ে উঠল। তারপর তিনি যখন চলে যেতে উদ্যত হলেন আমি তাকি জড়িয়ে ধরে তার পরিচয় জানতে চাইলাম। বড়ই বিপদে আপনি আমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। তখন তিনি ইরশাদ করলেন, তিনি আমি পাপীদের আশ্রয়, অপরাধীদের সুপারিশকারী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (ﷺ)। এই কথা শুনেই আমি পবিত্র কদমে লুটিয়ে পড়লাম। কদমবুছি করলাম। তারপর আরয করলাম হে রাসূল (ﷺ) আমার বাবার মৃত্যুর সংবাদ আপনি কিভাবে পেলেন? আমি তো এই সংবাদ এখনো কাউকে দেইনি। ইরশাদ করলেন, তোমার বাবা প্রতি রাতে আমার প্রতি তিনশতবার দরূদ শরীফ পাঠ করত। আজ রাতে যখন তার দরূদ আমার কাছে পৌছায়নি, তখন আমি সেই ফেরেশতাকে জিজ্ঞেস করলাম যে, আমার কাছে তোমার বাবার দরূদ শরীফ প্রতিদিন পৌঁছাত। তখন ফেরেশতা আমাকে বলল, সে তো আজ মারা গেছে এবং তার অবস্থা এই। একথা শুণে আমার খুবই দু:খ হলো। তাই চলে এলাম। অত:পর হুযুর (ﷺ) চলে গেলেন। তারপর আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। ফজরের নামাজ পড়লাম। দেখলাম সত্যিই আমার বাবার চেহারা চাঁদের মত উজ্জল হয়েগেছে। আরও দেখলাম লোক দলে দলে চারদিক থেকে ছুটে আসছে। যেন শহরে সব মানুষ ঢলে পড়েছে আমাদের দিকে। আমি ভেবে হয়রান হলাম। এদেরকে কে সংবাদ দিল। আমি অবশেষে তাদেরকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনারা আমার বাবার মৃত্যু এবং যানাজার সংবাদ কীভাবে পেলেন? তারা বলল, আমরা আকাশ থেকে একটি গায়েবী আওয়াজ শোনলাম। যেই ব্যক্তি স্বীয় পাপ মাফ করতে চায়, সে যেন অমুক মহল্লার অমুক স্থানে একজন লোক মারা গেছে, তার যানাজায় গিয়ে শরীক হয়। 

অত:পর যুবক বলল- দরূদ শরীফের মহান এই মর্ম ও মর্যাদা আমি নিজের চোখে প্রত্যক্ষ করেছি। একারণেই আমি অন্যসব দোয়া ছেড়ে এখন সর্বদা দরূদ শরীফই পাঠ করছি। একথা শোনার পর শায়খ শিবলী (রহ:) বললেন- তুমি বাবার এই খুটিটি আরও শক্ত করে ধর এবং কখনও ছেড়ে দিও না। (জিকরে এলাহি-পৃ: ১০৪) 

একটি বালিকার ঘটনা 

দালায়েলুল খাইরাত প্রনেতা হযরত মুহাম্মদ ইবনে সুলাইমান জাযুলী (রহ:) একদিন ভ্রমণ করতে গিয়ে ফাস নাম শহরে উপস্থিত হলেন। সেখানে ভ্রমণে জোহরের সময় হল, তিনি পানি পাচ্ছিলেন না। অনেক্ষণ পানি তালাশ করার পর একটি কূপ দৃষ্টিগোচর হল, কিন্তু পানি উঠানোর জন্য কোন মাধ্যম তথা বালতি বা অন্য কোন পাত্র পেলেন না। উক্ত কিতাবের গ্রন্থকার পানির আশায় ঐ কূপের চারপাশে অসহায়ভাবে প্রদক্ষিণ করতে লাগলেন। কিন্তু এর কোন সমাধান না পেয়ে গভীর চিন্তায় নিমগ্ন হলেন। এই ঘটনা এক জায়গা হতে আট বা নয় বছরের এক বালিকা প্রত্যক্ষ করেছেন। 

অল্পক্ষণপর বালিকা লেখক হযরত সুলায়মান জাযুলি (রহ:) এর কাছে এসে বললেন যে, আপনার এই চিন্তার কারণ কী? অনুগ্রহ করে আমাকে কি বলবেন? তদুত্তরে তিনি বললেন যে, আমি জোহরের নামাজ আদায় করতে চাই। অথচ অযুর পানি পাওয়ার কোন মাধ্যম বা লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি না। আপনার সম্ভব হলে সাহায্য করুন। উত্তরে বালিকা বললেন আপনি একজন জগৎখ্যাত ওলী। অথচ এ সামান্য কাজও সমাধান করতে পারছেন না। এ বলে বালিকাটি এসে কূপের মধ্যে থু-থু নিক্ষেপ করলেন। সাথে সাথে পানি ফুসলিয়ে উঠে। কূপের উপর দিয়ে প্রবাহিত হল। 

ফলে উপস্থিত সবাই অযু করে নামাজ আদায় করলেন। নামাজ থেকে অবসর হয়ে লেখক ঐ বালিকার ঘরে গিয়ে ডেকে জানতে চাইলেন যে, আপনার ঐ সত্তার কসম যে সত্তা আপনাকে সৃষ্টি করেছেন এবং ইসলামের সঠিক পথ প্রদর্শন করেছেন। তোমাকে আল্লাহ সমস্ত নবী-রাসূল বিশেষত আমার নবীয়ে পাক (ﷺ) এর দোহাই দিয়ে বলছি যে কুপ থেকে পানি উঠানো এটা কীভাবে সম্ভব হলো? 

বালিকা বললেন, জনাব আপনি যদি আমাকে এতবড় শপথের কথা না বলতেন, তাহলে আমি অবশ্যই বলতাম না। ইহা মূলত বিশেষ একটি দরূদ শরীফ পাঠ করার কারণে পেয়েছি। যে দরূদ শরীফ খানা আমি সর্বদা পাঠ করে আসছি। 

শেখ মুহাম্মদ সুলায়মান (রহ:) বললেন যে, আমি উক্ত দরূদশরীফ বালিকা থেকে মুখস্ত করলাম এবং উহাকে মানুষের মধ্যে প্রচার করার অনুমতি নিলাম। অত:পর দৃঢ় ইচ্ছা ব্যক্ত করলাম যে আমি দরূদ শরীফ সংক্রান্ত কিতাব রচনা করব। তাই দালায়েলুল খাইরাত কিতাবখানা রচনা করলাম। 

কিয়ামত দিবসে জাহান্নাম থেকে মুক্তি 

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يؤمربرحل الي النار فاقول ردوه الى الميزان فاضع له شيئا كالا نملة معى فى ميزان انه وهو الصلاة على فترجع ميزانه وينادى سعدفلان –

অথার্ৎ : রাসূলে করীম (ﷺ) ইরশাদ করেন- কিয়ামত দিবসে এক ব্যক্তিকে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে। তখন আমি বলব, তাকে মিজানের দিকে নিয়ে যাও। আমি মিজানের মধ্যে তার জন্য আমার আঙ্গুলের ন্যায় একটি জিনিস রাখব। তা হল আমার উপর পঠিত তার দরূদ শরীফ। অত:পর তার মিজানটি ভারি হয়ে যাবে। এবং তার সম্পর্কে অদৃশ্য হতে বলা হবে, অমুক ব্যক্তি সফলকাম হয়েছে। [অর্থাৎ যে ব্যক্তি দরূদশরীফ পাঠ করেছে সে ব্যাক্তিটি সফলকাম হয়েছে] (জিকরে এলাহি- ১০০)। 

দরূদ পাঠে মোহর আদায় 

হযরত আদম (আঃ) একাকিত্ব দূরীভূত হওয়ার জন্য আরয করতেন যে, যদি আমার কোন সঙ্গী হতো, তাহলে তার সাহচর্যে কালাতিপাত করতে পারতাম। আল্লাহ তায়ালার দয়া হল, ঘুমন্ত অবস্থায় তার বাম পাজর থেকে হযরত হাওয়া (আঃ) কে সৃষ্টি করলেন। তিনি খুবই সুন্দরী ছিলেন এবং সৃষ্টি হওয়া মাত্র শারিরীক গঠন পরিপূর্ণ হয়ে গেল। হযরত আদম (আঃ) যখন ঘুম থেকে জাগ্রত হলেন, তখন দেখেন যে তার পাশে একজন সুশ্রী মহিলা বিদ্যমান। জিজ্ঞাসা করলেন তুমি কে? আল্লাহর পক্ষ থেকে উত্তর আসল ইনি আমার বান্দীনি নাম তার হাওয়া, তোমার একাকিত্ব দূর করার জন্য আমি তাকে সৃষ্টি করেছি। আদম (আঃ) তাকে স্পর্ষ করতে চাইলেন। আদেশ আসল হে আদম! তাকে স্পর্ষ করবে না, যতক্ষন পর্যন্ত তার “মহর” আদায় না করবে। আদম (আঃ) আরয করলেন, এর মহর কি? হুকুম আসল তার মহর হল তুমি মুহাম্মদ (ﷺ) এর উপর এবং তার পরিবার পরিজনের উপর দশ বার দরূদ শরীফ প্রেরণ কর। আদম (আঃ) আরয করলেন, মুহাম্মদ কে? এরশাদ হল, তিনি হলেন তোমার আওলাদ শেষ যমানার নবী। যদি আমি তাকে সৃষ্টি না করতাম তবে তোমাকেও সৃষ্টি করতাম না। অত:পর হযরত আদম (আঃ) দশবার দরূদ শরীফ পাঠ করে মুহাম্মদ (ﷺ) ও তাঁর পরিবারের উপর প্রেরণ করবেন আর ফেরেশতারা স্বাক্ষী হলেন ফলে হযরত আদম (আঃ) ও হাওয়া এর বিবাহ সম্পাদিত হয়। (হাশিয়ায়ে দালায়েলুল খাইরাত-২০৩) 

              (সূত্র : বার মাসের আমল ও ফযীলত-১৮১) 

দরূদ পাঠে অন্তর নিফাক মুক্ত হয় 

মাজালিসে মাক্কীয়া নামক গ্রন্থে আবুল মোজাফফর মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ খৈয়াম সমরকন্দী (র) বলেন, একদিন আমি পথ হারিয়ে গেলে হঠাৎ একজন লোক দেখলাম। লোকটি আমাকে তার সাথে চলতে বললে আমি তার সাথে চললাম। আমার মনে হল যে, তিনি সম্ভবত হযরত খিজির (আঃ) হবেন, যিনি হারিয়ে যাওয়া পথিককে রাস্তা দেখান এবং মনজিলে মকসুদ পর্যন্ত পেঁৗছিয়ে দেন। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনার নাম কী? উত্তরে তিনি বললেন আমার নাম খিজির ইবনে ইসা আবুল আব্বাস। আমি তার সাথে আরেকজনকে দেখতে পাই। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম আপনার নাম কী? উত্তরে তিনি বললেন, ইলিয়াস ইবনে শাম। এরপর উভয়কে সম্ভোধন করে বললাম, আল্লাহ তায়ালা আপনাদের উপর রহমত নাযিল করুন। আপনারা কি মুহাম্মদ (ﷺ) কে দেখেছেন? তারা বললেন হ্যা দেখেছি। আমি আরয করলাম আপনারা আমাকে ঐ সব কথা শুনান যা আপনারা রাসুলুল্লাহ (ﷺ) থেকে শুনেছেন। যাতে আমি অন্যদেরকে বর্ননা করতে পারি । তারা বললেন আমরা রাসূল (ﷺ) কে ইরশাদ করতে শুনেছি, 

من صلى على طهر الله قلبه من النفاق كمايطهر الثوب الماء

অর্থাৎ- যে ব্যক্তি আমার উপর দরূদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার অন্তরকে নিফাক থেকে এমন ভাবে পবিত্র করবেন, যেভাবে পানি কাপড়কে পবিত্র করে। 

(জযবুল কুলুব উর্দূ পৃ: ২৬৭) (তথ্য সূত্র : বার মাসের আমল ও ফযীলত- ১৭৩)

তাওয়াফ অবস্থায় দরূদ পাঠের ঘটনা 

হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে হযরত সুফিয়ান (রহঃ) বর্ণনা করেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) একদিন বাইতুল্লাহ তাওয়াফে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি এক ব্যক্তিকে দেখলেন যে, সে তাওয়াফ অবস্থায় প্রতি কদমে দরূদ শরীফ পাঠ করছে। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, তুমি তাওয়াফ অবস্থায় তাসবীহ তাহলীল ও দোয়ায়ে মাছুরা বাদ দিয়ে শুধু দরূদ শরীফ কেন পড়ছ? এ ব্যপারে কি তোমার কাছে কোন দলিল প্রমাণ আছে। সে বলল আল্লাহ আপনার উপর রহম করুন। আগে বলুন আপনি কে? আমি বললাম, আমি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস। লোকটি বলল, যদি আপনি বিশেষ কোন ব্যক্তি না হতেন তাহলে আমি আমার অবস্থার কথা বলতাম না বরং গোপনে রাখতাম। অতপর সে বলল, একদিন আমি আমার পিতাকে নিয়ে হজ্জ্বে গমন করি। পথিমধ্যে এক জায়গায় অবস্থান করলাম। সেখানে আমার পিতা অসুস্থ হয়ে পড়েন। আমি আপ্রাণ চেষ্টা করলাম তাঁর খেদমত করতে ও তাকে বাঁচাতে। কিন্তু তাকদীর তদবীরের উপর অগ্রগামী হল। তিনি ইন্তেকাল করলেন আর তার চেহারা কালো বর্ণের হয়ে গেল। অন্য এক বর্ণনায় গাধার ন্যায় হয়ে গেল। আমি পিতার চেহারা চাদর দিয়ে ঢেকে দিলাম এবং এই চিন্তায় আমার তন্দ্রা এসে গেল। স্বপ্নে দেখলাম অত্যান্ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন সুন্দর চেহারা বিশিষ্ট শুভ্র পোশাক পরিধান কৃত এবং সুগন্ধিযুক্ত এক ব্যক্তি ধীরগতিতে আমার পিতার নিকট আগমন করলেন। তিনি আমার পিতার চেহারা থেকে চাদর তুলে স্বীয় হাত বাড়িয়ে পিতার চেহারায় মালিশ করেন। ফলে আমার পিতার চেহারা উজ্জল ও শুভ্র হয়ে গেল। এরপর তিনি চলে যেতে লাগলেন। আমি দৌড়ে গিয়ে তার আচল ধরে বললাম, জনাব! হে আল্লাহর মকবুল বান্দাহ! আপনি কে? এই অজানা অচেনা জনপদে আমার পিতার সাহায্য করার জন্য আল্লাহ আপনাকে পাঠিয়েছেন। তিনি বললেন তুমি কি আমাকে চিনতে পারনি? আমি মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ। যার উপর কোরআন নাযিল হয়েছিল। নি:সন্দেহে তোমার পিতা সারা জীবন নিজের উপর (গোনাহের দ্বারা) যুলুম করেছে এবং আল্লাহর নাফরমানীতে রত ছিল তবে আমার উপর বেশী করে দরূদ পাঠ করত। মৃত্যুর পর যখন আযাবে লিপ্ত হল তখন আমার নিকট ফরিয়াদ করেছে। তাই আমি সাহায্যের জন্য এসেছি। যে আমার উপর দরূদ পাঠ করে আমি অবশ্যই তাকে সাহায্য করি। অত:পর আমার স্বপ্ন ভেঙ্গে গেল। আমি চোখ খোলে দেখি আমার পিতার চেহারা চাদের চেয়ে বেশী আলোকিত ও নূরানী হয়ে গেল। 

(আফযালুস সালাত- ৫৬ পৃ: নুজহাতুল মাজলিস-৮৯ পৃ: জযবুল কুলুব ফার্সী-২৫৩) (তথ্য সূত্র- বার মাসের আমল ও ফযীলত ১৭২-৭৩ পৃ:) 

দরূদ শরীফ পাঠ হজ্জ্ব ও জিহাদ থেকে উত্তম 

হযরত আলী (রাঃ) থেকে বর্ণীত রাসূল (ﷺ) এরশাদ করেন যে ব্যক্তি ইসলাম নির্দেশিত হজ্জ্ব করার পর একটি ইসলামি জিহাদ করে তা চারশত হজ্বের সমান সাওয়াব পাবে। তার এই বানী শোনার পর যাদের হজ্ব ও জিহাদের সামর্থ ছিলনা। তাদের অন্তর ভেঙ্গে পড়ল। আল্লাহ তায়ালা তাদের সম্পর্কে নবী করিম (ﷺ) এর নিকট ওহী প্রেরণ করেন। যে ব্যক্তি আপনার উপর দরূদ পাঠ করবে, সে চারশত জিহাদের সাওয়াব পাবে। আর প্রত্যেক জিহাদ চারশত হজ্বের সমান হবে। (জযবুল কুলুব উর্দূ- ২৬৭ পৃ:) 

আশ্চর্য একটি সত্য স্বপ্ন

হযরত আব্দুর রহমান ইবনে সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণীত, একদিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বাইরে তাশরীফ আনলেন এবং এরশাদ করলেন আমি গতরাতে একটি আশ্চর্য জনক স্বপ্ন দেখেছি। আমার এক উম্মত পুলসিরাত দিয়ে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে পার হওয়ার চেষ্টা করছে। এসময় দরূদ শরীফ (যা সে আমার উপর পাঠ করত) এসে তার হাত ধরে তাকে সোজা করে নিরাপদে পুলসিরাত পার করে দিল। (হাশিয়ায়ে দালায়েলুল খাইরাত- ৯১ পৃ:) 

আল্লাহ তায়ালা একজন ফেরেশতা সৃষ্টি করেছেন যার নাম আযরাঈল। কিয়ামতের দিন সেই ফেরেশতা স্বীয় পালক পুলসিরাতে বিছিয়ে আহ্বান করবেন। যে ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর উপর দরূদ প্রেরণ করছে সে যেন আমার পালকে পা রেখে নিরাপদে পুলসিরাত পার হয়ে যায়। (হাশিয়ায়ে দালায়েলুল খাইরাত- ৯৪) তথ্য সূত্র : বার মাসের আমল ও ফযিলত- ১৮১-৮২ পৃ:) 

দরূদ শরীফ পাঠে রোগ মুক্তি লাভ 

জনৈক মুত্তাকী নেক্কার পরহেজগার ব্যক্তি পেশাব আটকে যাওয়া রোগে আক্রান্ত হয়। যার কারনে সীমাহীন কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। একরাত্রে স্বপ্নে আরেফবিল্লাহ শাহাবুদ্দীন ইবনে আরসালান (রহঃ) এর সাথে সাক্ষাত হয়। সে তার কাছে বেদনাদায়ক রোগের কথা উলে­খ করলে, তিনি বলেন, আমি তোমাকে একটা দরূদ শিখিয়ে দিচ্ছি ,তুমি তা পড়তে থাক। এটি পরিক্ষিত যে এর পাঠের দ্বারা দ্রুত রোগ মুক্ত হওয়া যায়। লোকটি ঘুম থেকে জাগ্রত হলে স্বপ্ন মনে পড়ল এবং দরূদশরীফটিও স্মরণ হল। সে ঐ দরূদ শরীফ পাঠ আরম্ব করে দিল। আল্লাহ তায়ালা দরূদ শরীফের বরকতে দ্রুত আরোগ্য দান করেন। (নুযহাতুল মাজলিস-৯২ সূত্র বার মাসের আমল ও ফযীলত- ১৮২)।

জান্নাতের পথ ভুলে যাবে 

আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এর উপর দরূদ না পড়লে জান্নাতের রাস্তা ভূলে যাবে। যেমন রাসুলুল্লাহ (ﷺ) নিজেই বলেন,

من ذكرت عنده فلم سصلى على اخطأ طريق الجنه –

অর্থাৎ, যার সামনে আমার পবিত্র নাম উচ্চারন করা হবে, অথচ সেই ব্যক্তি আমার উপর দরূদ পড়লোনা, তাহলে সে জান্নাতের রাস্তা ভুলে যাবে। (শিফা- তথ্য সূত্র, মাওয়াইজে রেজভিয়্যাহ) প্রিয় ইসলামী ভাই ও বোনেরা! একটু চিন্তা করে দেখুন হুজুর (ﷺ) এর নাম মোবারক উচ্চারনের ফলে যদি দরূদ শরীফ পাঠ না করা হয়, তাহলে জান্নাতের পথ ভূলে যাবে। এতে কি প্রতিয়মান হয়না যে, আমরা জান্নাতের পথ ভূলতে রাজি কিনা? আল্লাহ আযযাওয়াজাল্লা আমাদেরকে বোঝার তৌফিক দান করুন। আমিন। 

দরূদ না পড়ার দূর্ভাগ্য

নূরনবী (ﷺ) ইরশাদ করেন, সে ব্যক্তি ধ্বংস হবে, সেই ব্যক্তি কিয়ামতের দিনে আমার যিয়ারত হতে বঞ্চিত থাকবে। হযরত আয়শা সিদ্দিকা (রাঃ) আরয করলেন ইয়া রাসূলাল্লাহ্ সে ব্যক্তির কয়েকটি আ’লামত বা নিশানা বলে দিন। হাশরের দিন কোন ব্যক্তি আপনার জিয়ারত হতে মাহরূম হবে। তিনি (রাসূলুল্লাহ দ:) বললেন, কৃপন ব্যক্তি। হযরত আয়শা (রাঃ) আরয করলেন ইয়া রাসুলাল্লাহ আপনি কোন বখিলের কথা বলেছেন? উত্তরে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, এমন বখীল যার সামনে আমার নাম উচ্চারণ করার পর আমার উপর দরূদ শরীফ পড়ে না। সেই কৃপনের ব্যাপারে বলছি। (মাওয়াইজে রেজভিয়্যাহ- ২য় খন্ড- ২১১ পৃ:)

দরূদ শরীফ বর্জনকারী বড়ই কৃপন

◼ মেশকাত শরীফের ৮৭নং পৃষ্টায় হযরত আলী (রাঃ) হতে বর্ণীত এক খানা হাদীস শরীফে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন- 

البخيل الذى من ذكرت عنده فلم يصل على 

অর্থাৎ, সবচেয়ে বড় কৃপন ব্যক্তি হল, যার সামনে আমার নাম উলে­খ করা হয়েছে, অথচ আমার উপর সে দরূদ পাঠ করে না।

◼ অন্য এক বর্ণনায় হযরত আবু যার গিফারী (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (ﷺ)ইরশাদ করেন- 

ان البخيل الناس من ذكرت عند فلم يصلى على –

অর্থাৎ, নিশ্চয়ই সবচেয়ে বড় কৃপন ব্যক্তি হল, যার সামনে আমার নাম উলে­খ করা হয়েছে, অথচ আমার উপর সে দরূদ পাঠ করে না।

(ফযলুস সালাত আ’লান নাবিয়্যীন- ৩৭, সূত্র- বার মাসের আমল ও ফযীলত) 

ছালাম ব্যতিত দরূদ পাঠ মাকরূহ

ইমাম শারফুদ্দিন আল হুসাইন ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ আত-তিবী আ’লাইহির রহমতشرح الطبي على مشكاة المصابيح – নামক কিতাবের ৬৫ পৃষ্টায় উলে­খ করেন-

ويكره الاقتط رعلى الصلاة دون اسلام وبالعكس 

এর ভাবার্থ হল- আল্লামা আত তিবী বলেন, সালাম ব্যতিরেকে শুধুমাত্র দরূদ শরীফ পাঠ করা এবং দরূদ ব্যতিরেকে শুধুমাত্র সালাম পাঠ করা মাকরূহ। (সূত্র- আনওয়ারে মদীনা)। 

কিন্তু যদিও এই মাকরূহ এর ব্যাপারে কোন কোন আলেম নিরবতা পালন করেছেন। (জজবুল কুলুব) 

দরূদ ব্যতিত দোয়া ঝুলানো থাকে 

ইমাম তিরমিজি বর্ননা করেন।-

عن عمر بن الخطاب رضى الله عنه- قال ان الدعاء موقوف بين السماء والارض لايصعد منه شيئ حتي تصلي على نبيك-

অর্থাৎ, হযরত ওমর ইবনুল খাওাব (রাঃ) থেকে বণর্ীত, তিনি বলেন, নিশ্চয় দোয়া যমীন ও আসমানের মাঝখানে লটকানো থাকে। আসমানের উপর কোন আমল আরোহন করে না, যতক্ষন স্বীয় নবীর উপর দরূদ শরীফ না পড়ে। 

দরূদ শরীফ পাঠের আদব সমূহ 

আশেকে রাসুল (ﷺ) হযরত ইমাম মুহাম্মদ ইবনে সুলাইমান (রহ.) কর্তৃক প্রণীত দালায়েলুল খাইরাত নামক গ্রন্থের সূচনায় দরূদ পাঠের কিছু নিয়ম কানুন ও আদব লিখেছেন তা নিয়ে কিছু আলোকপাত করলে উপকার হবে বলে মনে করছি।

১। পাঠক মহল এর জন্য প্রয়োজন হল নিজেকে আত্মার সর্ব প্রকার রুগ্ন থেকে পুত: পবিত্র রাখা। যেমন অহংকার হিংসা বিদ্বেশ ইত্যাদি থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা। তারপর অযু করে পরিষ্কার কাপড় পরিধান করে সুগন্ধি লাগিয়ে দরূদ পাঠ করা। কেননা অযুবিহীন দরূদ পাঠ করা আদব বা শিষ্টাচার বিরোধী। যদিও বা শরীয়তে তা যায়েজ আছে।

২। জায়নামাজে কেবলামুখী হয়ে বসে বিনয়ী অন্তরে দরূদ শরীফ পড়বেন।

৩। নিজ অন্তরকে সমুদয় দুনীয়াবী কল্পনা থেকে মুক্ত ও পবিত্র রেখে একাগ্রচিত্তে পাঠ করতে হবে।

৪। রিয়া বা  লোক দেখানোর জন্য দরূদ শরীফ পাঠ করবে না।

৫। যেমনিভাবে মুখে দরূদ শরীফ পাঠ করবে তেমনিভাবে অন্তরকেও একাগ্রতা চাই। অন্যথায় দরূদ পাঠে কোন ফল হবে না।

৬। দরূদ শরীফ পাঠকালীন সময়ে এই ধারণা পোষণ করতে হবে যে আমার এই দরূদ শরীফ হুযুরে পাক (ﷺ) এর দরবারে ফিরিশতা কর্তৃক পৌছানো হচ্ছে বা তিনি নিজেই তা শুনছেন।

৭। নিজ অন্তরকে ক্ষীন করে রোদন উন্মুখ অন্তরে দরূদ শরীফ পাঠ করতে হবে।

৮। অন্তরের সম্পর্কটা আল্লাহর সাথে হবে?

৯। দরূদ শরীফ পাঠ করার সময় যেন কারো সাথে কথা না হয়।

১০। যে সমস্ত জায়াগায় অপবিত্র ও দুর্গন্ধময় সে সমস্ত জায়াগায় দরূদ শরীফ পাঠ করা অনুচিত।

১১। হাসি ঠাট্টাকালে দরূদ পাঠ করা কুফুরীর আশংকা বিদ্যমান।

১২। গুণাহের কাজের সময় দরূদ শরীফ একবারেই পড়বে না।

১৩। যেখানে হাসি ও আনন্দ উল্লাস, তামাশা, নাচ-গান হয় সেখানে দরূদ শরীফ পাঠ করা যাবে না।

 আশাকরি নবী প্রেমিক আশেকগণ এ নিয়ম কানুন মেনে দরূদ শরীফ পাঠে সচেতনতা অবলম্বন করবেন।{ যিকরে এলাহী]

যে সমস্ত স্থানে বা অবস্থায় দরূদ পড়া নিষিদ্ধ 

১। সহবাসের সময় দরূদ শরীফ পাঠ করা মাকরূহ।

২। প্রস্রব পায়খানার সময় দরূদ শরীফ পাঠ করা মাকরূহ।

৩। ব্যবসার মাল বহুল প্রচারের জন্য দরূদ শরীফ পাঠ করা মাকরূহ।

৪। হাচি দেওয়ার সময় দরূদ শরীফ পাঠ করা মাকরূহ।

৫। জবেহ করার সময় দরূদ শরীফ পাঠ করা মাকরূহ।

৬। তোষামোদের সময় দরূদ শরীফ পাঠ করা মাকরূহ।

৭। দুনীয়াবি কোন স্বার্থের জন্য (যেথায় দরূদ শরীফ পড়া উদ্দেশ্য নয় বরং দুনিয়াবী কোন উদ্দেশ্য থাকে) সেখানে দরূদ শরীফ পাঠ করা মাকরূহ।

দ্বিতীয় অধ্যায়

বরকতময় দরূদ শরীফ সমূহ 

দরূদে তাজ

اَللّهُمَّ صَلِّ عَلى سَيِّدِنَا وَمَوْلاَنَا مُحَمَّدٍ صَاحِبِ التَّاجِ وَالْمِعْرَاجِ وَالْبُرَاقِ وَالْعَلَمِ- دَافِعِ الْبَلاَءِ وَالْوَبَاءِ وَالْقَحْطِ وَالْمُرَاض وَالْاَلَم- اِسْمُهُ مَكْتُوْبٌ مَّرْفُوْعٌ مَّشْفُوْعٌ مَّنْقُوْشٌ فِى الَّلوْحِ وَالْقَلَم- سَيِدِ الْعَرَبِ وَالْعَجَمِ- جِسْمُهُ مَقْدُسٌ مُّعَطُّرٌ مُّطَهرَ مُّنَوَّرٌ فِى الْبِيْتِ وَالْحَرَمِ- شَمْسِ الضُّحى بَدْرِالدُّجى صَدْرِالْعُلى نُوْرِ الْهَدى كَهْفِ الْوَرى مِصْبَاحِ الظُّلَمِ- جَمِيْلِ الشِّيَعٍ- شَفِيْعِ الْاُمَعِ- صَاحِبِ الْجُوْدِ وَالْكَرَمِ- وَاللهُ عَاصِمُهُ وَجِبْرِيْلُ خَادِمُهُ وَالْبُرَاقُ مَرْكَبَهُ وَالْمِعْرَاجُ سَفَرُهُ وَسِدْرة الْمُنْتَهَي مَقَامُهُ وَقَابَ قَوْسَيْنِ مَطْلُوْبُهُ وَالْمَطْلُوْبُ مَقْصُوْدُهُ وَالْمَقْصُوْدُ مَوْجُوْدُه سَيِدِ الْمُرْسَلِيْنَ خَاتِمِ النَّبِيِّنَ شَفِيْع الْمُذْ نِبِيْنَ اَنِيْسِ الْغَرِيْبِيْنَ رَحْمَةَ لِّلْعَلَمِيْنَ رَاحَةِ الْعَا شِقِيْنَ مُرَادِ الْمُشْنَاقِيْنَ شَمْسِ الَعَارِفِيْنَ سِرَاجِ السَّالِكِيْنَ مِصْبَاحِ الْمُقَرَّبِيْنَ مُحِبِّ الْفُقَرَاءِ وَالْغُرَابَاءِ وَالْمَسَاكِيْنَ سَيِّدِ الثَّقَلَيْنِ نَبِيِّى الْحَرَمَيْنِ اَمَامِ الْقِبْلَتَيْنِ وَسِيْلَتِنَا فِىْ الدَّارَيْنَ صَحِبِ قَابَ قَوْسَيْنِ مَحْبُوبِ رَبِّ الْمَشْرِقِيْنِ وَالْمَغْرِبَيْنِ جَدِّ الْحَسَنِ وَالْحُسَيْنِ مَوْلاَنَا وَمْلَى الثَّقَلَيْنِ اَبِى الْقَاسِعِ مُحَمَّدُبْنُ عَبْدِ اللهِ نُوْرِمِّنْ نُوْرِاللهِ- يَا اَيُّهَ الْمُشْتَاقُوْنَ بِنُوْرِ جَمَالِه صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوْ تَسْلِيْمًا- 

▪ বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ছালি­ আ’লা ছায়্যিদিনা ওয়া মাওলানা মুহাম্মাদিন ছোয়াহিবিত তাজি ওয়াল মিরাজি ওয়াল বুরাকি ওয়াল আ’লাম। দাফিঈল বালাই ওয়াল ওয়াবাই ওয়াল কাহতি ওয়াল মুরাদিল ওয়াল আ’লাম। ইছমুহু মাকতুবুম মারফুউম মাশফুউম মানকুছুন ফিল লাওহি ওয়াল কলম। ছায়্যিদিল আরাবি ওয়াল আজম। জিছমুহু মাকদুছুম মুআওারুম মুতাতাহহারুম মুনাওয়ারুন ফিল বাইতি ওয়াল হারাম। শামছি দ্বোহা বদরিদ্দোজা সাদরিল উলা নুরিল হুদা কাহফিল ওয়ারা মিসবাহিজ্জোলাম জামি লিশ শিয়াম- শাফিঈল উমাম। সাহিবিল জুদ ওয়াল কারামি। ওয়াল্লাহু আছিমুহু ওয়াজিবরীল খাদিমুহু ওয়াল বুরাকু মারকাবুহ ওয়াল মিরাজু ছাফারুহু ওয়া ছিদারাতুল মুনতাহা মাকামুহু ওয়াকাবা কাওছাইনি ওয়াল মাতলুবুহু মাকছুদুহু ওয়াল মাকছুদু মাওজুদুহু ছায়্যিদিল মুরছালীনা খাতিমিন নাবিয়্যিন শাফিইল মুজনিবিনা আনিছিল গারিবীনা রাহমাতালি­ল আ’লামীনা রাহাতিল আশিকিনা ফুরাদিল মুশতাকিনা শামছিল আরিফিনা ছিরাজিছ ছালিকীনা মিছাবাহিল মুকাররাবিনা মুহিব্বিল ফুকারাই ওয়াল গুরাবাই ওয়াল মাছাকিনা ছায়্যিদিছ ছাকালাইনি নাবিয়্যিল হারামাইনি ইমামিল কিবলাতাইনি ওয়াছিলাতিনা ফিদ দারাঈনি সাহিবি কাবা কাওছাইনি মাহবুবি রাব্বিল মাশরিকাইনি ওয়াল মাগরিবাইনি জাদ্দিল হাসানি ওয়াল হুসাইনি মাওলানা ওয়া মাওলাস সাকালাইনি আবিল কাছিম মুহাম্মদ ইবনি আব্দুল্লাহ নুরিম মিন নুরিল্লাহ ইয়া আইয়্যুহাল মুশতাকুনা বিনুরী জামালিহী সাল্লু আ’লাইহি ওয়া সালি­মু তাছলিমা।

▪ ফযীলত : দরূদে তাজ একটি সু-প্রসিদ্ধ দরূদ শরীফ। আউলিয়ায়ে কেরামগণ বিভিন্ন কিতাবে এর বহু উপকারিতা ও ফযিলত বর্ণনা করেছেন।

১। যে ব্যক্তি মধ্যরাতের পর অযু করে দরূদে তাজ ৪০ বার পাঠ করবে খোদার মর্জিতে তার যে কোন নেক মকছুদ পূর্ণ হবে।

২। যাদুটুনা, জিনের আছর শয়তানের কুমন্ত্রনা ও বসন্তরোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য উক্ত দরূদ শরীফ ১১ বার পাঠ করে পানিতে ফুঁক দিলে ইনশাআল্লাহ উপকার পাবে। [আল অজিফাতুল কারীমা]

৩। যে ব্যক্তি প্রতিদিন ফজরের নামাজের পর ৭ বার আসর ও এশার নামাজের পর ৩ বার নিয়মিত পাঠ করবে। তার অন্তরনুর উদ্ভাসিত হবে।

৪। অভাবের কারণে ইজ্জত হুরমত নষ্ট হওয়ার উপক্রম দেখা দিলে উক্ত দরূদ শরীফ প্রত্যেক নামাজের পর ৭ বার এবং এশার নামাজের পর ১০০ বার নিয়মিত পাঠ করতে হবে। আল্লাহর ফযল ও করমে রুজি রোজগারে খয়র ও বরকত হবে এবং অভাবমুক্ত হবে।

৫। যে ব্যক্তি এ দরূদশরীফ নিয়মিত পাঠ করবে তার কবর নূরে আলোকিত হবে এবং পুলসিরাত পলকে পার হবে। (আমালুল মুসলিমীন)

যে কোন সমস্যা সমাধানের দরূদ 

قَلَّتْ حِيْلَتِى اَنْتَ وَسِيْلَةِ اَدْرِكْنِيْ تَارَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

▪ বাংলা উচ্চারণ : কাল্লাত হিলাতি আনতা ওয়াছি লাতি আদারিকনী ইয়া রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহ আ’লাইহি ওয়া সাল্লামা।

▪ ফযীলত : যে কোন সমস্যা সমাধানের জন্য উঠা-বসায় এবং চলা ফেরায় অযু অথবা অযুছাড়া পড়লে বৃথা যাবে না।

বিশ সেকেন্ডে বিশ হাজার নেকী 

لاَ اِلَهَ اِلّاَ اللهُ مُحَمَّدُ رَّسُوْلُ اللهِ-

▪ বাংলা উচ্চারণ : লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলাল্লাহ (ﷺ)

▪ ফযীলত : যে ব্যক্তি প্রত্যেক নামাজের পর দশবার এই কালেমা শরীফ পাঠ করবে তার আমল নামায় বিশ হাজার নেকী লেখা হবে। এবং মৃত্যুর পর পরই তাকে বেহেস্তে প্রবেশ করানো হবে। [ফায়যানে সুন্নাত]

গুনাহ মাফের দরূদ 

لاَ اِلَهَ اِلاَّ اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ وَالْحَمْدُ لِلهِ وَسُبْحَنَ اللهِ وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ اِلاَّ بِااللهِ-

▪ বাংলা উচ্চারণ : লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ওয়াল্লাহু আকবার ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়া সুবহানাল্লাহি ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ।

▪ ফযীলত : যে ব্যক্তি উপরোক্ত অযিফাখানা পড়বে তার সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। যদি সমুদ্রের ফেনার সমপরিমাণ গুনাহ হয়। [মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল]

উভয় জাহানের নেয়ামত হাসিলের দরূদ 

الَّلهُمَّ صَلِّ وَسَلِّمْ وَبَارِكْ عَلى سَيِّدٍ وَّعَلى اَلِهِ عَدَدَ اِنْعَامِ اللهِ وَاَفْضَاله-

▪ বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ছালি­ ওয়াছলি­ম ওয়াবারিক আ’লা ছায়্যিদিনা মুহাম্মাদিও ওয়া আলিহি আদাদা ইনআমিল্লাহি ওয়া আফদ্বালিহী।

▪ ফযীলত : এই দরূদ শরীফ পড়লে উভয় জাহানের অগণিত নেয়ামত অর্জিত হবে।

দরূদে শিফা 

اَلَّلهُمَّ صَلِّ عَلى سَيِّدِنَا وَمَوْ لانَا مُحَمَّدٍ طِبِّ الْقُلُوْبِ وَدَوَائِهَا وَعَافِيَةِ الْاَبْدَ انِ وَشِفَائِهَا وَنُوْرِالْاَبْصَارِ وَضَيَائِهِ مَ وَعَلى اَلِهِ وَصَحْبِهِ وَسَلَّمْ-

▪ বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ছালি­ আ’লা ছায়্যিদিনা ওয়া মাওলানা মুহাম্মাদিন তিব্বিল কুলুবি ওয়াদাওয়াইহা ওয়া আফিয়াতিল আবদানি ওয়াশিফাইহা ওয়ানুরিল আবছারি ওয়াদিয়াইহা মা ওয়াআ’লা আলিহি ওয়াছাহবিহী ওয়াছালি­ম।

▪ ফযীলত : এই দরূদ শরীফ যে কোন জটিল ও কঠিন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় হবে।

 দরূদে শাফায়াত 

اَلَّلهُمَّ صَلِّ عَلى مَحَمَّدٍ وَاَنْزَلَهُ الْمَقْعَدَ اَلْمُقَرَّبَ عِنْدَكَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ-

▪ বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ছালি­ আ’লা মুহাম্মাদিন ওয়া আনজালাহুল মাকআদাল মুকাররাবা ইনদাকা ইয়ামাল কিয়ামাতি।

▪ ফযীলত : প্রিয় নবী হুযুরপুর নুর (ﷺ) ফরমান যে ব্যক্তি এ দরূদ শরীফখানা পাঠ করবে তার জন্য আমার সুপারিশ ওয়াজিব হয়ে যাবে। [আত্তারগীব ওয়াত্তারগীব, পৃষ্ঠা ৫০৪]

চৌদ্দ হাজার দরূদ শরীফ পড়ার সমান সওয়াব 

اَلَلهُمَّ صَلِّ وَسَلِّمْ وَبَارِك عَلى سَيِدِنَا مُحَمَّدٍ وَّعَلى اَلِهِ عَدَدَ كَمَالِ اللهِ وَكَمَايَلِيْقُ بِكَمَالِهِ-

▪ বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ছালি­ ওয়াছালি­ম ওয়াবারিক আ’লা ছায়্যিদিনা মুহাম্মাদিও ওয়াআ’লা আলিজি আদাদা কামালিল্লাহি ওয়াকামা ইয়ালিকু বিকামালিহি।

▪ ফযীলত : এই দরূদ শরীফখানা শুধু একবার পড়লে চৌদ্দ হাজার দরূদ শরীফ পড়ার সাওয়াব পাবে। [আফযালুসসালাত]

আশি বছরের গোনাহ মাফ 

اَلَّلهُمَّ صَلِّ عَلى سَيِدِنَا مَحَمَّدٍنِ النَّبِيِّ الْاُمِّيِ وَعَلى الِهِ وَسَلِّمْ-

▪ বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ছাল্লি আ’লা ছায়্যিদিনা মুহাম্মাদিনিন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়ালা আলিহি ওয়াছালি­ম।

▪ ফযীলত : সাহল বিন আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণীত প্রিয় নবী (ﷺ) ইরশাদ করেন- যে ব্যক্তি জুমুআর দিন আসরের নামাজের পর ৮০ বার এই দরূদ শরীফ পড়বে আল্লাহ তায়ালা তার ৮০ বছরের গোনাহ মাফ করে দিবেন। [আল কাউলুল বদী]

দরূদে ছায়াদাত 

اَلَّلهُمَّ صَلِّ عَلى سَيِّدِنَا وَمَوْلَنَا مُحَمَّدٌ عَدَدَ مَافِىْ عِلْمِ اللهِ صَلوةً دَائِمَةً بِدَوَامِ مُلْكِ اللهِ-

▪ বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ছালি­ আ’লা ছায়্যিদিন ওয়ামাওলানা মুহাম্মাদুন আদাদা মা ফি ইলমিল্লাহি সালাতান দাইমাতাম বিদাওয়ামি মুলকিল্লাহ।

▪ ফযীলত : শায়খুদ দালায়েল সৈয়দ আলী বিন ইউসুফ মাদানী (রহঃ) হযরত জালালুীন সুয়ুতী (রাঃ) হইতে বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি এই দরূদ শরীফ একবার পড়বে সে ছয় লক্ষ মর্তবা দরূদ শরীফ পাঠ করার সওয়াব পাবে। এজন্য এই দরূদ শরীফকে ছেলাক দরূদ শরীফও বলা হয় থাকে। 

দরূদে কামালিয়া 👉

اَلَّلهُمَّ صَلِّ وَسَلِّمْ وَبَارِك عَلى سَيَِدِنَا مُحَمَّدٍ وَّعَلى الِهِ كَمَا لاَ نِهَايَةَ لِكَمَالِكَ وَعَدَدَ كَمَالِهِ-

▪ বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ছালি­ ওয়া ছালি­ম ওয়াবারিক আ’লা ছায়্যিদিনা মুহাম্মাদিও ওয়াআ’লা আলিহী কামা লা নিহায়াতা লিকামালিকা ওয়াআদাদা কামালিহী। 

▪ ফযীলত : দরূদ কামালিয়ার ফযীলত সম্পর্কে কোন কোন আউলিয়ায়ে কেরাম বলেছেন- এ দরূদ শরীফের ফযীলত ৭০ হাজার দরূদ শরীফের সমান। কেহ কেহ বলেছেন একলক্ষ দরূদ শরীফের ফযীলতের সমান। 

ইমামুল হাদীস আব্দুল্লাহ বিন সালাম বছরী মক্ষী বলেন এ দরূদ শরীফ হযরত খিজির (আঃ) এর দিকে সম্পর্কিত। 

তা নিয়মিত পাঠ করলে স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পায়। উক্ত দরূদ শরীফখানা মাগরীব ও এশার মধবর্তী সময়ে নির্দিষ্ট সংখ্যা ছাড়া পাঠ করা ভাল। (আফযালুস সালাত) 

হুযুর (ﷺ) কে স্বপ্নে দেখার দরূদ

اَلَّلهُمَّ صَلِّ عَلى روح مُحَمَّدٍ فِىْ الْاَرْوَاحِ وَصَلِّ عَلى جَسَدِ مُحَمَّدٍ فِىْ الَاَجْسَادِ وَصَلِّ عَلى قَبْرُ مُحَمَّدٍ فِىْ الْقُبُوْرِ- اَلَّهُمَّ اَبْلِغَ رُوْحَ مُحَمَّدِ مِنِّى تَحِيَّةً وَسَلاَمًا-

বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ছালি­ আ’লা রুহি মুহাম্মাদিন ফিল আরওয়াহি ওয়াছালি­ আ’লা জাছাদি মুহাম্মাদিন ফিল আজছাদি ওয়াছালি­ আ’লা কাবরী মুহাম্মাদিন ফিল কুবুরি-আল্লাহুম্মা আবলিগ রুহা মুহাম্মাদি মিন্নি তাহিয়্যাতাও ওয়া ছালামান। 

ফযীলত : মাতালিউল মুসিররাত কিতাব আছে, হুযুর (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি উক্ত দরূদ শরীফখানা পাঠ করবে অবশ্যই আমার সাথে স্বপ্নে তার সাক্ষাত হবে। 

হিসাব নিকাশ ও আজাব মুক্তি 

اَلَّلهُمَّ صَلِّ عَلى مُحَمَّدٍ كُلَّمَاذَ كَرَهُ الذّّاكِرُوْنَ وَصَلِّ عَلى مُحَمَّدٍ كُلَّمَا غَفَلَ عَنْ ذِكْرِهِ الْغَا فِلُوْنَ-

▪ বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ছালি­ আ’লা মুহাম্মাদিন কুল্লামা জাকারাহুজ জাকিরুনা ওয়া ছালি­ আ’লা মুহাম্মাদিন কুল্লামা গাফালা আন জিকরিহীল গাফিলুনা।

▪ ফযীলত : হযরত ইমাম শাফেয়ী (রাঃ) এই দরূদ শরীফ পড়তেন। ইহার বরকতে হিসাব নিকাশ ও আজাব থেকে নাযাত পাওয়ার উসিলা হয়।

[সাদাআতুদ দারাইন পৃ: ২৯]

ধন-সম্পদ বৃদ্ধির দরূদ :

اَلَّلهُمَّ صَلِّ عَلى سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ عِبْدِكَ وَرَسُوْلِكَ وَعَلى الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَالْمُسْلِمِيْنَ وَالْمُسْلِمَات-

বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ছালি­আ’লা ছায়্যিদিনা মুহাম্মাদিন আবদিকা ওয়া রাসুলিকা ওয়ালাল মু’মিনিনা ওয়াল মু’মিনাতি ওয়াল মুছলিমীনা ওয়াল মুছলিমাত।

ফযীলত : ছাহেবে রুহুল বয়ন ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি এই দরূদ শরীফ পড়তে থাকবে তার ধন-সম্পদ দিন-রাত বৃদ্ধি হতে থাকবে।

 দরূদে গাউছিয়া :

اَلَّلهُمَّ صَلِّ عَلى سَيِّدِنَا وَمَوْلاَنَا مُحَمَّدٍ مَعْدَنِ الْجُوْدِ وَالْكَرَكِ وَاله وَبَارِكْ وَسَلِّم-

বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ছালি­আ’লা ছায়্যিদিনা ওয়ামাওলানা মুহাম্মাদিন মা’দানিল জুদি ওয়াল কারামি ওয়াআলিহি ওয়াবারিক ওয়াছালি­ম।

ফযীলত : এই দরূদ শরীফ কমপক্ষে একবার পাঠ করলে ৭টি নেয়ামত পাবেন। যেমন- জিবীকার বরকত হবে, সমস্ত কাজ সহজ হবে।

মৃত্যুকালে কালেমা নসীব হবে, প্রাণবায়ু সহজে বের হবে, কবর প্রশস্ত হবে, কারো মুখাপেক্ষি থাকবে না। আল্লাহর সৃষ্টি তাকে ভালবাসবে।

ঈমানের সহীত মৃত্যু নসীব হবে :

اَلَّلهُمَّ صَلِّ عَلى سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ مُّنْطَلِقِ عِنَانِ جَوَادِ الْاِيْمَانِ فِىْ مَيْدَانِ الْاِحْسَانِ مُرْسِلاً مُّرْشِدً اِلى رِيَاحِ الْكَرَمِ فِىْ رَوْضِ الْجِنَانِ وَعَلى ال مُحَمَّدٍ وَسَلَّمْ-

▪ বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ছালি­আ’লা ছায়্যিদিনা মুহাম্মাদিন মুনতালিকি ইনানি জাওয়াদিল ইমানি ফি মাইদানিল ইহছানি মুরছিলাম মুরশিদান ইলা রিয়াহিল কারামি ফি রাওদ্বিল জিনান্নি ওয়ালা আলি মুহাম্মদিও ওয়াছালি­ম।

▪ ফযীলত : এই দরূদ শরীফ পাঠ করলে ঈমানের সহিত মৃত্যু নসীব হবে। [জিকরে এলাহি]

বৃষ্টির সময় পড়ার দরূদ :

اَلَّلهُمَّ صَلِّ وَسَلِّمْ على سَيِّدِنَا وَمَوْلاَنَا مُحَمَّدٍ وَّ عَلى اَله سَيِّدِنَا وَمَوْلاَنَا مُحَمَّدٍ بِعَدَدَ قَطْرَاتِ الْاَمْطَارِ-

▪ বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ছালি­ ওয়া ছালি­ম আ’লা ছায়্যিদিনা ওয়া মাওলানা মুহাম্মাদিও ওয়ালা আলিহি ছায়্যিদিনা ওয়া মাওলানা মুহাম্মাদিন বিআদাদি কাতরাতিল আমতারি।

▪ ফযীলত : এই দরূদ শরীফ বৃষ্টি আসার পর পড়লে যতগুলো বৃষ্টির ফোঁটা মাটিতে পড়বে ততগুলো সাওয়াব পাওয়া যাবে।

অন্তরকে আলোকিত করার দরূদ :

اَلَّلهُمَّ صَلِّ عَلى سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ نُّوْرِ الْاَنْوَارِسَرِّ الْاِسْرَارِ وَسَيِّدِ الْاَبْرَارِ-

▪ বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ছালি­ আ’লা ছায়্যিদিনা মুহাম্মাদিন নুরিল আনওয়ারি ছাররিল ইছরারি ওয়াছায়্যিদিল আবরারি।

▪ ফযীলত : এই দরূদ শরীফ পাঠ করলে নিজ ক্বলবে নূর পয়দা হবে।

পেরেশানী থেকে মুক্ত থাকার দরূদ :

اَلَّلهُمَّ صَلِّ وَسَلِّمْ عَلى سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ قَدْ ضَاقَتْ حِيْلَتِىْ يَارَسُولَ اللهِ-

▪ বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ছালি­ ওয়াছালি­ম আ’লা ছায়্যিদিনা মুহাম্মাদিন কাদ দ্বাকাত হিলাতি আদরিকনি ইয়া রাসুলাল্লাহি।

▪ ফযীলত : সায়্যিদ ইবনে আবেদীন ফরমান আমি একটি বড় ফিতনাই আজিমে পড়লাম। যেটি দামেস্ক শহরে সংগঠিত হয়েছে তখনও আমি উক্ত দরূদশরীফটি ২০০ বারও পড়িনি এক ব্যক্তি সংবাদ দিল যে ফেতনা শেষ হয়ে গেছে।

হুযুর (ﷺ) এর নৈকঠ্য লাভের দরূদ :

اَلَّلهُمَّ صَلِّ عَلى مُحَمَّدٍ كمَاتُحِبُّ وَتَرْض لَهُ

▪ বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ছালি­ আ’লা মুহাম্মাদিন কামা তুহিব্বু ওয়াতারদা লাহু।

▪ ফযীলত : একদিন এক ব্যক্তি ছরকারে মদীনার নিকটে আসলে তিনি তাকে সিদ্দিক এবং নিজের মধ্যখানে বসালেন। তখন উপস্থিত সাহাবারে কেরামগণ প্রশ্ন করলেন কেন উনাকে এত নিকটে বসালেন? হুযুর (ﷺ) ফরমালেন সে এই দরূদ শরীফ নিয়মিত পড়ে। (সাআদাতুদ দারাইন-৮৩, আল কাউলুল বদী ৪৭)

দুনিয়া ও আখিরাতে নিরাপদ থাকার দরূদ :

اَلَّلهُمَّ صَلِّ عَلى سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَّالهِ وَصَحْبِه وَسلِّمْ بِعَدَدَ مَافِىْ جَمِيْعِ الْقَرْانِ حَرْفًا حَرْفًا وَبِعَدَدَ كُلِّ حَرْفِ اَلْفَا اَلْفَا-

বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ছালি­ আ’লা ছায়্যিদিনা মুহাম্মাদিনও ওয়া আলিহি ওয়া ছহবিবী ওয়াছালি­ম বিআদা মা ফি জামিঈল কুরআনি হারফান হারফান ওয়া বি’আদিদি কুলি­ হারফিল আলফা আলফা।

ফযীলত : যে ব্যক্তি কোরআন তিলাওয়াতের পর এই দরূদ শরীফ পাঠ করবে তিনি দুনিয়া ও আখিরাতে নিরাপদ ও শান্তিতে থাকবে।

এক হাজার দিনে নেকী সমূহ :

جَزَى اللهُ عَنَّا (سَيِّدِنَا وَمَوْلَنَا) مُحَمَّدٍ (صَلِّ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلِّمَ) مَا هُمَ اَهْلُهُ-

▪ বাংলা উচ্চারণ : জাযাল্লাহু আন্না (ছায়্যিদিনা ওয়ামাওলানা) মুহাম্মাদিন (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লামা) মা হওয়া আহলুহু।

▪ ফযীলত : এই দরূদ শরীফ পাঠকারীর জন্য ৭০ জন ফিরিশতা এক হাজার দিন পর্যন্ত নেকীসমূহ লিখতে থাকে।

সারা দিন দরূদ শরীফ পড়ার সাওয়াব :

اَلَّلهُمَّ صَلِّ عَلى سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ فِىْ اَوَّلِ كَلاَمِنَا الَّلهُمَّ صَلِّ عَلى سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ فِىْ اَوْسَطِ كَلاَمِنَا اَلَّلهُمَّ صَلِّ عَلى سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ فِىْ اَخِرِ كَلاَمِنًا-

▪ বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ছাল্লি আ’লা ছায়্যিদিনা মুহাম্মাদিন ফি আওয়ালি কালামিনা। আল্লাহুম্মা ছালি­ আ’লা ছায়্যিদিনা মুহাম্মাদিন ফি কুলি­ আওছাতিন কালামিনা, আল্লাহুম্মা ছালি­আ’লা ছায়্যিদিনা মুহাম্মাদিন ফি আখিরি কালামিনা।

▪ ফযীলত : যে ব্যক্তি এই দরূদ শরীফ দিনে তিনবার এবং রাতে তিনবার পড়বে সে যেন দিন রাত দরূদ শরীফ পড়ল।

দরূদে মাহী :

اَلَّلهُمَّ صَلِّ عَلى مُحَمَّدٍ خَيْرِ الْخَلاَئقِ اَفَضُلُ البَشَرِ شَفِيْعُ الاُمَّةِ يَوْمِ الْحَشَرِ وَالنَّشْرِ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ بِعَدَدَ كُلِّ مَعْلُوْمِ لّكَ وَصَلِّ عَلَ جَمِيْع الْاِنْبِيَاءِ وَالْمُر سَلِيْنَا والْمَلئكَةِ المُقَرَّبين وَعَلَى عِبادَ اللهِ الصَّالِحيْن – وَاَرْحَمْنَا مَعَهُم بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّا حِمِنَ – 

▪ বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ছালি­ আ’লা মুহাম্মাদিন খাইরুল খালাইকি আফযালুল বাশারি শাফিউল উম্মাতি ইয়াওমিল হাশরি ওয়ান্নাশরী ছায়্যিদিনা মুহাম্মাদিন বি’আদিদি কুলি­ মা’লুমিল লাখা ওয়া ছাল­ী আ’লা জামীঈল আম্বিয়াই ওয়াল মুরছালীনা ওয়াল মালাইকাতিল মুকাররাবিনা ওয়ালা ইবাদাল্লাহিছ ছালিহীনা ওয়া আরহামনা মায়াহুম বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমীনা।

ফযীলত

১। বর্ণীত আছে নবীয়ে পাক (ﷺ) এর সময়ে একজন কামেল ব্যক্তি হামেশা এই দরূদ শরীফটি কোন এক নদীর তীরে বসে পাঠ করতেন। সে নদীতে ছিল অতিশয় রুগ্ন একটি মাছ। অত্যান্ত মহব্বতের সাথে উক্ত দরূদ শরীফ পাঠ শুনতে শুনতে সে মাছটির রোগ সরিয়া তাজা হয়ে যায়। ঘটনাচক্রে একদিন উক্ত মাছটি কোন এক ইহুদীর জালে ধরা পড়ল। ইহুদী জেলের স্ত্রী মাছটিকে কাটতে শুরু করল কিন্তু কাটতে সমর্থ হল না। তাতে বিরক্ত হয়ে জিবীত মাছটিই সে ফুটন্ত তেলের মধ্যে ছেড়ে দিল। কিন্তু কী আশ্চর্য মাছটি ফুটন্ত তেলের মাঝে সাতার কাটতে আরম্ভ করল এবং উক্ত দরূদ শরীফ পাঠ করতে আরম্ভ করল। ইহুদী এ আশ্চর্য ঘটনা দেখে মাছ সহ নবীজীর খেদমতে হাজির হয়ে সব ঘটনা খুলে বলল। মহানবীর দোয়ায় মাছটি জবান খুলে গেল এবং সকল ঘটনা হুযুর (ﷺ) এর নিকট বলতে লাগল। ইহা শুনে উপস্থিত বহুসংখ্যক ইহুদী মুসলমান হয়ে গেল।

২। প্রত্যহ ফজর নামাজের পরে এই দরূদ শরীফ অন্তত ২ বার নিয়মিত পাঠ করলে, আল্লাহর ইচ্ছায় তার স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে। কখনও কঠিন রোগে পড়বে না।

তদবীর : কেউ কঠিন রোগে আক্রান্ত হলে ঐ দরূদ শরীফ ২১ দিনে ১২৫০০০ (এক লক্ষ পঁচিশ হাজার) বার পাঠ করে খতম করলে ধীরে ধীরে খতমের মুদ্দতের ভিতরেই রোগ সেরে যাবে।

নদীর তীরে বসে পাঠ করতে পারলে সত্বর ফল পাওয়ার সম্ভাবনা বেশী। (ইহা পলিক্ষীত তদবীর)

দরূদে তুনাজ্জিনা :

اَلَّلهُمَّ صَلِّ عَلى مُحَمَّدٍ  سَيِّدِنَا صَلَوَةً تُنَجِّينَا بِهَامِن جَمِيْعِ الْاَهُوَالِ وَالاَفَاتِ وَتَفْضِي لنابها جَمِيْعَ  الْحَاجَاتِ وَتَطَهِّرُنَا بِهَا مِنْ جَمِيْعِ السَّيَّئَاتِ وَتَرْفَعْنَابِهَا عِنْدَكَ عَلى الدَّرَجَاتِ وَتُبَلِغْنَا بِهَا اَقَصى الْغَايَاتِ مِنْ جَمِيْعِ الْخَيْرَاتِ فِىْ الْحَيَوةِ وَبَعْدَ الْمَمَاتِ اِنَّكَ عَلى كُلِّ شيْئٍ قَدِيْرٍ- 

▪ বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ছালি­ আ’লা ছায়্যিদিনা মুহাম্মাদিন ছালাতান তুনাজ্জিনা বিহা মিন জামিইল আহওয়ালি ওয়াল আফাতি ওয়াতাফদিলানা বিহা জামিই আল হাজাতি ওয়াতুতাহহিরুনা বিহা মিন জামিইছ ছায়্যিআতি ওয়াতারফানা বিহা ইনদাকা আ’লাদ দারাজাতি ওয়াতুবালি­গনা বিহা আক্বছাল গায়াতি মিন জামিঈল খাইরাতি ফিল হাইয়াতি ওয়া বাদাল মামাতি ইন্নাকা আ’লা কুলি­ শাইন কাদিরিন।

▪ ফযীলত : দালায়েলুল খাইরাত গ্রন্থের শরাহ “মানাহিজুল হাছানাত নামক কিতাবে রয়েছে। ইবনে ফাকেহানী স্বরচিত ফজরে মুনির কিতাবে উলে­খ করেছেন যে, শায়খ সালেহ মুসা  নামী একজন দৃষ্টিহীন বুজুর্গ ব্যক্তি ছিলেন। তিনি আমার নিকট একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন। একদিন একটি জাহাজ ডুবে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। এ জাহাজে আমি নিজেই ছিলাম। তন্দ্রাবস্থায় অমি হঠাৎ দেখলাম হুযুর পুর নুর (ﷺ) আমাকে এ দরূদ শরীফ শিক্ষা দিলেন এবং আমাকে নির্দেশ দিলেন, জাহাজে অবস্থানকারী ব্যক্তিগণ যেন এক হাজার মর্তবা এ দরূদশরীফ পাঠ করে নেয়। মাত্র তিনশত মরতবা এ দরূদশরীফ পাঠ করতে না করতেই জাহাজটি খোদার মর্জিতে বিপদ থেকে মুক্তি পেল। [আমালে রেযা]

দরূদে নারী :

اَلَّلهُمَّ صَلِّ صَلاَةً كَامِلَةً وَسَلِّمْ سَلاَمًا تَامًّا عَلى سَيِّدِنَا وَمَوْلَنَا مَحَمَّدِنِ الْذِىْ تَنْحَلُّ بِهِ الْعُقْدُ وَتَنْفَرِجُ بِهِ الْكَرْبُ وَتَقْضِىْ بِهِ الْحَوَ ائِجُ وَتَنَالُ بِهِ الرَّغَائِبُ وَحُسْنُ الْخَوَاتِمِ- وَيَسْتَسْقَى الْغَمَامُ بِوَجْهِهِ الْكَرِيْمِ وَعَلى الِهِ وَاَصْحَابِهِ فِىْ كُلِّ لَمْحَةِ ونَفْسٍ بِعَدَدَ كُلِّ مَعْلُوْمِ لَّكَ يَا اللهُ يَا اللهُ- 

▪ বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ছাল্লি ছালাতান কামিলাতান ওয়া ছালি­ম ছালামান তাম্মান আ’লা ছায়্যিদিনা ওয়ামাওলানা মুহাম্মাদিনিল্লাজি তানহাল্লু বিহিল উক্বদু ওয়াতানফিরজু বিহিল কারবু ওয়াতাকদি বিহিল হাওয়াইজু ওয়াতানালু বিহির রাগাইবু ওয়া হুছনুল খাওয়াতিথি ওয়া ইয়াছতাছফাল গামামু বি ওয়াজাহিহিল কারিমি ওয়া আ’লা আলিহি ওয়া আছহাবিহী ফি কুলি­ লামহাতিন ওয়া নাফছিন বি’আদিদি কুলি­ মা’লুমিল লাকা ইয়া আল্লাহু ইয়া আল্লাহু।

▪ ফযীলত : মুশকিলাত বা কঠিন সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এ দরূদ শরীফ এর আমল পরিক্ষীত। কোন জায়েজ (বৈধ) মকছুদ পূর্ণ হওয়ার জন্য একাধারে এশার নামাজের পর ২১ দিন পর্যন্ত একশতবার করে পাঠ করলে ইনশাআল্লাহ নেক মকছুদ পূর্ণ হবে।

এগার হাজার বার দরূদ পড়ার সাওয়াব :

اَلَّلهُمَّ صَلِّ عَلى سَيِّدِنَا مَحَمَّدٍ وَعَلى الِهِ صَلوةً اَنْتَ لَهَا اَهْلٌ وَّهُوَ لَهَا اَهْلٌ- 

▪ বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ছাল্লি আ’লা ছায়্যিদিনা মুহাম্মাদিন ওয়ালা আলিহি ছালাতান আনতা লাহা আহলু ও ওয়া আহওয়ালাহা আহলুন।

▪ ফযীলত : হযরত জালালুদ্দীন ছুয়ুতী (রা.) বলেন, এই দরূদ শরীফ একবার পড়লে এগারো হাজার বার পড়ার সাওয়াব লাভ হয়।

রোগ মুক্তির দরূদ শরীফ :

اَلَّلهُمَّ صَلِّ وَسَلِّمْ عَلى رُوْحِ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ فِىْ الْاَرْوَاحِ وَصَلِّ وَسَلَّمْ عَلى قَلْبِ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ فِى الْقُلُوْبِ وَصَلِّ وَسَلِّمْ عَلى جَسَدٍ سَيِّدِنَا مَحَمَّدٍ فِى الْاَجْسَادِ وَصَلِّ وَسَلِّمْ عَلى قَبْرِ سَيِّدِنَا مَحَمَّدٍ فَىْ الْقُبُوْرِ-

▪ বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ছালি­ ওয়া ছালি­ম আ’লা রুহি ছায়্যিদিনা মুহাম্মাদিন ফিল আওয়াহি ওয়া ছালি­ ওয়াছালি­ম আ’লা কালবি ছায়্যিদিনা মুহাম্মাদিন ফিল কুলুবি ওয়া ছালি­ ওয়াছালি­ম আ’লা জাছাদি ছায়্যিদিনা মুহাম্মাদিন ফিল আজছাদি ওয়াছালি­ ওয়া ছালি­ম আ’লা কাবরি ছায়্যিদিনা মুহাম্মাদিন ফিল কুবুরী।

▪ ফযীলত : উক্ত কিতাবে ৩৩ নং পৃষ্টায় দ্রষ্টব্য।

বিরতীহীন সাওয়াব লিখা হয় :

جَزَاءَ اللهُ عَنَّا مُحَمَّدًا مَاهُوَ اَهْلُهُ-

▪ বাংলা উচ্চারণ : জাজাআল্লাহু আন্না মুহাম্মাদান মা হুয়া আহলুহু।

▪ ফযীলত : নবী করিম (ﷺ) ফরমান, যে ব্যক্তি ১ বার উক্ত দোয়া পাঠ করবে ৭০ জন ফেরেশতা ১০০ দিন পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে উহার সাওয়াব লিখতে থাকবে। [তাবরানী]

দরূদে জুমুআহ :

صَلِّى اللهُ عَلى النَّبِيِّى الْاُمِّيِّى وَالِهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صلَوةً وَّسَلَ مًا عَلَيْكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ-

▪ বাংলা উচ্চারণ : ছাল্লাল্লাহু আ’লান নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়া আলিহি ছাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া ছাল্লামা ছালাতাও ওয়া ছালামান আ’লাইকা ইয়া রাসুলাল্লাহি।

▪ ফযীলত : এই দরূদ শরীফ প্রত্যেক নামাজের পর বিশেষত: জুমুআর নামাজের পর মদিনা মনোওয়ারার দিকে মুখ করে একশতবার পাঠ করলে অগণিত ফযিলত অর্জন হবে।

এক লক্ষ দরূদ শরীফ পড়ার সাওয়াব :

اَلَّلهُمَّ صَلِّ عَلى سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍنِ الْنُوْرِ الذَّاتِىْ السَّارْىْ فِىْ جَمِيْعِ الْاَثَارِ وَالْاَسْمَاءِ وَالصِّفَاتِ وَعَلى الِهِ وَصَحِبِهِ وَسَلِّمْ- 

▪ বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ছালি­ আ’লা ছায়্যিদিনা মুহাম্মাদিনি নুরিজ জানিছ ছারি ফি জামিইল আছারী ওয়াল আছমাই ওয়াস সিফাতি ওয়ালা আলিহি ওয়া ছাহবিহী ওয়া ছালি­ম।

▪ ফযীলত : এ দরূদ শরীফ একবার পড়লে এক লক্ষ দরূদ শরীফ পড়ার সাওয়াব পাবে। ৫০০ বার পড়লে যে কোন হাজত পূর্ণ হবে।

তৃতীয় অধ্যায়

মিলাদ শরীফ ও তার কিয়াম 

প্রথমে মিলাদ মাহফিলে উপস্থিত সকলে ওযু করে পূর্ণ পবিত্রতা ও ভক্তি সহকারে ভালবাসা অন্তরে নিয়ে আদব সহকারে মনকে মদীনার দিকে ধাবিত করে বসবে। অত:পর অন্তরে ধ্যান করবে। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ ও প্রিয় হাবীব উম্মতের কান্ডারী নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (ﷺ) স্বয়ং নিজেই উম্মতের দরূদ সালাম শুনছেন ও জবাব দিচ্ছেন। অত:পর ১) কোরআন মাজীদ হতে যথাসম্ভব তেলাওয়াত করবে। ২) হুজুর (ﷺ) এর মোবারক গুনাবলি ও ঘটনাবলী যথাসম্ভব আলোচনা করবে। ৩) তারপর মিলাদ শরীফের নিযম অনুযায়ী (মিলাদ) শুরু করবে। 

১। মিলাদ শরীফ পাঠ করার নিয়ম : 

ইন্নাল্লাহা ওয়ামালাইকাতাহু ইউছাল্লুনা আ’লান নাবীয়্যা ইয়া আইয়্যুহাল্লাজীনা আমানু ছাল্লু আ’লাইহি ওয়া ছালি­মু তাছলিমা। আল্লাহুম্মা ছালি­ আ’লা ছায়্যিাদিনা মাওলানা মুহাম্মদ, 

ওয়ালা আলি ছায়্যিদিনা মাওলানা মুহাম্মদ,

 নুর নবীজি নূর হইয়া আসলেন মানব ছুরতে, 

 তাইতো তাহার হয়না ছায়া চাঁদ সুরুজের আলোতে। 

 নবীর জন্য যাহার ছিল ভাই এজগতে কান্দেনা, 

 রোজ হাশরে কঠিন দিনে নবীজীর দেখা পাবে না। 

 জান নিরে আশিক তোমরা আমার নবীজী কেমন আপনা,

 উম্মতের মায়ায় যিনি আজো কান্দেন মদীনা। 

 পেমাগুনে জলে মরি ওহে প্রভু রাব্বানা। 

আমি যাহার প্রেমের প্রাগল তিনি সোনার মদীনা

 আসমান সুন্দর যমীন সুন্দর আরো সুন্দর তরকা,

 তাহার চাইতে অধিক সুন্দর নূর নবীজী মোস্তফা। 

 আমরা সবাই গোনাহগার গো নবীজী আপনায় চিনলাম না,

 সেই কারনে রোজ হাশরে আমাদেরকে ভূলবেন না। 

 মক্কা ও মদীনাবাসী তারা কত ভাগ্যবান

 নূর নবীজীর নুর দেখিল যারা হইলেন মুসলমান 

 আবু জেহেল কাফের হইয়া দেখল মোদের নবীকে 

 উম্মত হইয়া দেখলাম না তাই দু:খ রইল মনেতে

 অজ্ঞতারই অন্ধকারে ছিল যখন এই ধরা 

 আসলেন তখন নিয়ে কোরআন নূর নবীজী মোস্তফা 

 বেলা যখন শেষ হইবে পারের তরী পাবে না 

 সময় থাকতে মুর্শিদি ধরে পথ করে নাও সাধনা

২। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (যিকির) 

 বহুদূরে মদীনা আমরা কেমনে যাব জানি না 

    দয়া কর দয়াল আল্লাহ পুরাও মনের বাসনা 

 শাদ্দাদ জান্নাত বানাইল মনের মত সাজাইল 

    একটি কদম রাখার আগে আযরাঈলও আসিল। 

 আমার মনের বেদনা রাসূল ছাড়া বুঝে না 

    কেমনে যাইব আমি ঐ যে সোনার মদীনা 

 খেল মুমিন প্রেম খেলা মরার আগে মরন ভালা 

    জীবীত প্রানে মরতে পারলে গুছিবে মনের জালা 

 আছিয়া বলেন আল্লাহ তায়ালা ফেরাউন দিল কত জালা 

    আল্লাহ বলেন ও জীব্রাইল খোলে দাও জান্নাতের থালা 

 তাহাজ্জুদ নামাজ ছাইড় না, বেশী নিদ্রা যাইও না 

    আল্লাহর নামটি জপরে মন ভূইলা তুমি যাইও না 

 রাসূল আমার জানের জান, রাসূল আমার প্রাণের প্রাণ 

        আল্লাহ নিজে দরূদ পড়েন আছে কোরআনে প্রমাণ 

৩। আল্লাহ, আল্লাহ, আল­হু লা ইলাহা ইল্লাহু (যিকির) 

    আল্লাহ পাকের প্রিয় হাবীব মুহাম্মদ রাসূল 

        হলেন তিনি সবার আদি সৃষ্টি কুলের মূল। নবীজী… 

    কুরাইশ বংশ সেরা বংশ উচ্ছ তাহার শান 

        তাহার মাঝে সেরা আবার হাশেমী খান্দান। নবীজী…  

    সেই খান্দানে জন্ম নিলেন মুহাম্মদ রাসূল 

        বংশগুনে কেহ নাই যে তাহার সমতুল। নবীজী…   

    আপনার তরে পয়দা হল তামামও জাহান 

        কে আছে আর আপনার মত এ বিশ্ব মাজারে। নবীজী… 

    মত্তরে তোফান আসবে যখন নবীগো আমার 

        দেখা দিয়া বাছাইও ঈমান আমরার। নবীজী… 

    কাউছারের মালিক আপনি নবীদের সর্দার 

        রোজ হাশরে পিলাইয়েন হাউজে কাউছার। নবীজী… 

    মেরাজেতে গেলেন নবী বোরাকে সাওয়ার 

        বিনা পর্দায় প্রেমালাপন মাবুদের দিদার। নবীজী… 

    রাহমাতালি­ল আ’লামীন নবী মেরাজেতে যান 

        সত্তর হাজার ফেরেশতার দল সালাম জানায়। নবীজী… 

    গোনাহগারের গোনাহ ঝড়ে দরূদে আপনার 

        দয়া করে দেখাও ওগো চেহরায়ে আনোয়ার। নবীজী… 

    রাহমাতালি­ল আ’লামীন নবী রহমতের ভান্ডার 

        আপন হাতে পিলাইও হাইজে কাউছার। নবীজী… 

    নুরুন আল নূর নবী রহমতের ভান্ডার 

        কিয়ামতে হবেন তিনি উম্মতের কান্ডার। নবীজী… 

    আসমান যমীন চন্দ্র সূর্য্য যাহার উচিলায় 

        আসুন সবাই দাড়াইয়া সালাম জানাই। নবীজী… 

অত:পর সবাই দাড়িয়ে নবীজীকে সালাম জানাবেন। অথবা আরবী তাওয়াল্লুদ শরীফ পাঠ করে দাড়াবেন। 

ولماتم من حمله صلى الله عليه وسلم شهران على مشهور الاقوال المروية- توفى بالمدينة المنورة ابوه عبد الله- وكان قد اجتاز بأخواله بني عدي من الطائفة النجارية – ومكث فيهم شمر سقيما يعانون سقمه وشكواه – والماتم من حمله صلى الله عليه وسلم على الرخع ثسغة أشهر قمريُّة-وان للزمان ان ينجلى عنه صداه حضر امه ليلة مو لده الشريف اسيى ومريع فى نسوة من الحظيرة القد سية – فاخدها المخاض قوضعته صلى الله عليه وسلم نور ايتلالأسناه- 

সবাই দাড়িয়ে নবীজীকে সালাম জানাবেন।

    ইয়া নাবী সালাম আ’লাইকা- ইয়া রাসুল সালাম আ’লাইকা-         ইয়া হাবীব সালাম আ’লাইকা- সালাওয়াতুল্লাহ্ আ’লাইকা। 

    নাইয়ারে বুরুজে রিসালাত গাওহারে দরজে নবুয়্যাত 

        মোজায়ে বাহরে হাকিকত শাফীয়ে রোজে কিয়ামাত 

    বখতকা ছমকে ছিতারা হাজেরী কাহো ইশারা 

        দেখকর রওজা পিয়ারা ফের কাছে খাদেম তোমহারা 

    বাহরে ইছ ইয়ামে ছফীনা আ গোজা মুশকিল হ্যায় জিনা 

        পরহে নেকা কারিনা হো আতা শাহে মদীনা 

    তুমি যে নূরের রবি নিখীল এ ধ্যানের ছবি 

        তুমি না এলে দুনিয়ায় আধারে ভূবিত সবি 

    আমাদের মনের বেদনা বুঝাইলে কেহ বুঝে না 

        শুনাইলে কেহ শুনে না হো শাহে মদীনা। 

    আমাদের মনের বাসনা আমরা কি মদীনায় যাব না? 

        কোন পথে হব রওয়ানা বলে দেনগো শাহে মদীনা 

    আমরা যে পাপি সকলে মিলিত মিলাদ মাহফিলে 

        কিয়ামে ডাকি কাতরে আশা যে পাব মরনে 

    জিব্রাইল ডাকেন বারে বার খোলেদাও আসমানের দোয়ার 

        এসেছেন নবীদের ছাড়দার লইতে মাওলার দিদার

    নবীজীর পিতা আব্দুল্লাহ নবীজীর মাতা আমিনা 

        নবীজীর দুধমা হালিমা নবীজীর রওজা মদীনা। 

    তুমি যে আক্কা ও মাওলা, তোমারই নামে বেহালা 

        ছাড়িলাম অকুলে একেলা গাহিয়া তোমার গীতিমালা

    প্রকাশের আদি ও অন্তে তারই নাম আসমানী গ্রন্থে 

        নবীউল আম্বিয়া হয়ে সৃষ্টিতে রহমতে তরী 

    পিপাসায় কাতর মোরা দেখিতে নুরী চেহারা 

        বিচ্ছেদের হইব সব হারা এধরায় না পাইলে সাড়া। 

অত:পর কিয়াম অবস্থায় পড়বে 

    মোস্তফা জানে রহমত পে লাখো সালাম 

        শময়ে বজমে হেদায়াত পে লাখো সালাম 

    শবে আছরা কি দুলহা পে দায়েম দরূদ 

         নওশায়ে বজমে জান্নাত পে লাখো সালাম 

    সৈয়দা, জাহেরা, তৈয়্যবা, তাহেরা, জাওজায়ে আলী মুর্তাদা 

ইয়ানে খাতুনে জান্নাত পে লাখো সালাম । 

    গাউছে আযম ইমামত তুকা ওয়ান নুকা 

        জালওয়ায়ে শানে কুদরত পে লাখো সালাম 

    খাজায়ে খাজেগান খাজা গারীবে নেওয়াজ 

        উছ মঈনুদ্দীন মিল্লাতপে লাখো সালাম 

    ডালদি কলব সে আজমতে মোস্তফা 

        হেকমত আ’লা হযরত পে লাখো সালাম 

    জিন কি হর হর আদা সুন্নাতে মোস্তফা 

        এইছি পীরে তরিকত পে লাখো সালাম 

অ:তপর দাড়িয়ে দাড়িয়ে পড়বে…..

আছছালাম আয় ছবজে গম্বোদ কে মকীন 

আছ ছালাম আয় রাহমাতালি­ল আ’লামীন 

ইয়া এলাহি ছদকায়ে আলে রাসূল 

ইয়ে ছালামী আশেকানা হো কবুল 

আয় খোদাকি লাভলে পেয়ারে রাছুল 

ইয়ে ছালামী আজেজানা হো কবুল 

অত:পর দাড়ানো অবস্থায় সবাই মিলে পড়বে ……

মদিনে কে চান্দ হাজারো সালাম 

মদিনে কে চান্দ লাখো সালাম 

মদিনে কে চান্দ করুর সালাম 

মদিনে কে চান্দ বেহদ সালাম

বালাগাল উলাবি কামালিহী কাশাফাদতু জাবি জামালিহী হাসনাতু জামিউ খিছোয়ালিহী সাল্লু আ’লাইহি ওয়া আলিহী 

 [সবাই বসে যাবেন এবং অন্যান্য দরূদ শরীফ পাঠ ও তাসবীহ ইসতেগফার ও মোনাজাত করে মিলাদ সমাপ্ত করবেন। অত:পর তৌফিক অনুযায়ী তাবারুকের ব্যবস্থা করিবেন। ]    

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment