উম্মত
➖➖
আলোচ্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, “আমার উম্মত তিয়াত্তর দলে বিভক্ত হয়ে পড়বে। এতে ‘উম্মত’ দ্বারা কাদের বুঝানো হয়েছে তার ব্যাখ্যায় হাদিস বিশারদগণ বলেন, উম্মত দুপ্রকার ।
(১) উম্মতে দাওয়াত’ অর্থাৎ যাদের প্রতি ইসলামের দাওয়াত রয়েছে; কিন্তু তারা তা গ্রহণ করেনি। যেমন ইয়াহুদা-নাসারা, কাফির-মুশরিক ইত্যাদি।
(2) ‘উম্মতে ইজাবাত’ অর্থাৎ যারা ইসলামের দাওয়াত কবুল করে মুসলমান হয়েছে। আলোচ্য হাদিসে দ্বিতীয় প্রকার উম্মতকেই বুঝানো হয়েছে। (মিরকাত শরহে মিশকাত)। মুসলমানদের মধ্যে তিয়াত্তর দলের আবির্ভাব ঘটবে, তন্মধ্যে একটি মাত্র দল ব্যতিরেকে অন্যসব দলই জাহান্নামী হবে। আর নাজাতপ্রাপ্ত সে দলটির নাম “আহলে সুন্নাত ওয়াল ।
জামাআত। আলোচ্য হাদিসে ‘বনী ইসরাঈল বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছিল। অংশটিই প্রমাণ করে যে, উম্মত দ্বারা ‘উম্মতে ইজাবাত’ বা মুসলমানদের কথা বুঝানো হয়েছে।মুসলিম মিল্লাতের কিছু আধুনিক শিক্ষিত ব্যক্তিকে এতদবিষয়ে অজ্ঞতাবশতঃ অথবা কোন না কোন বাতিল ফিরকার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণ নিজেদের ভ্রান্তিকে গোপন করার উদ্দেশ্যে প্রায়শঃ বলতে শুনা যায়, আল্লাহ এক, রাসুল (সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এক কোরআন এক, কেবলা এক, আবার মুসলমানদের মধ্যে এতো দলাদলি কেন? কেউ সুন্নী, কেউ ওহাবী কেউ তাবলিগী, কেউ মওদুদী, কেউ শিয়া আবার কেউ কাদিয়ানী, এ সব কি! সবাই মুসলমান। এগুলো আলেমদের হালুয়া রুটির সংস্থানের তদবীর মাত্র। এ ক্ষেত্রে তারা ঢালাওভাবে আলেমদেরকে দায়ী করে। এটা চরম অন্যায়। কারণ, এটা হালুয়া রুটি সংস্থানের ফন্দি’ বলে উড়িয়ে দেয়ার মতো বিষয় নয়, যেহেতু খোদ আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহ তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লামই একথা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, সেহেতু এর পেছনে নীরেট সত্যতা ও বাস্তবতা রয়েছে বলে সকল মুসলমানদেরই আন্তরিক ভাবে বিশ্বাস করতে হবে। বাস্তবেও ঐ নির্ভুল ভবিষ্যদ্বাণীর সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। কোন না কোন ভাবেই ইসলামের নামে, ইসলামের মূল রূপরেখার ধারক সুন্নী জামাআত ছাড়াও বহুবিধ দল-উপদলের সৃষ্টি হয়েছে। সুতরাং এ বাস্তব সত্যকে মেনে নিয়েই এর বিচার বিশ্লেষণ করাই হবে ন্যায়পরায়ন বুদ্ধিমানের কাজ। অতএব, ইসলামের নামে আত্মপ্রকাশ খারেজী কিংবা শিয়া সম্প্রদায় থেকে আরম্ভ করে বর্তমানকার তাবলিগী, কাদিয়ানী ও মওদুদী মতবাদী সম্প্রদায় পর্যন্ত যেসব দল উপদলের সৃষ্টি হয়েছে সেই দলগুলো সৃষ্টিকারী কারা তাদেরকে নিজেদের জ্ঞানেই চিহ্নিত করতে হবে। আরো চিহ্নিত করতে হবে তাদের উদ্দেশ্যকে । বস্তুতঃ যারা ‘সুন্নী মতাদর্শ (হাদীস শরীফ অনুযায়ী) থেকে বিদ্যুৎ হয়ে ইসলামের নামে নতুন নতুন দল-উপদলের সৃষ্টি করেছে, তাদের কেউ কেউ যদি আলেমও হয়ে থাকে তাহলে ধরে নিতে হবে-তারা হয়ত আসলে ‘আলেম’ নামের উপযোগী নয়, নতুবা ‘আলেমে সূ’ বা মন্দতর আলেম’। হাদিস শরীফে আল্লাহর প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, মন্দ লোকদের মধ্যে আলেম সর্বাপেক্ষা মন্দ হবে। কাজেই, তাদের দ্বারা সৃষ্ট দলাদলির উদ্দেশ্য হালুয়া রুটি। সংস্থানের’ চাইতেও মন্দ কিছু হওয়াও স্বাভাবিক। উদাহরণ স্বরপ, আবদুল্লাহ ইবনে সাবা (শিয়া মতবাদের প্রবর্তক) আলেম হলেও সে ছিলো মুনাফিক, আসলে ইহদী। এদিকে কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের নেতা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী, তাবলিগী জমাতের প্রবর্তক মৌং ইলিয়াস মাওয়াতিন, মওদুদী মতবাদীদের নেতা তথাকথিত মাওলানা মওদুদী প্রমূখের অবস্থাদি সম্পর্কেও খবর নিন। তখনও একই ধরণের ফলাফল বেরিয়ে আসবে।
অতএব, এক্ষেত্রে ঢালাওভাবে আলেমদেরকে দায়ী করে কিংবা ‘হালুয়া রুটি গরম করার’ তথাকথিত উদ্দেশ্যে এবং অপবাদ দিয়ে এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে এড়িয়ে যাবার উপায় নেই। বরং হুযুর পাক সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঐ ভবিষ্যদ্বাণীর তাৎপর্যকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলইহি ওয়াসাল্লামের অদৃশ্য জ্ঞানের নির্ভুল বাস্তবতাকে সামনে রেখেই ইসলামের একমাত্র সঠিক রূপরেখা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত-এর সুশীতল ও নিরাপদ শামিয়ানা তলেই নিষ্ঠাপূর্ণভাবে নিজের অবস্থান গড়ে নেয়ার যে বিকল্প নেই তা-যথাযথভাবে অনুধাবন করতে হবে। এটাই হলো সাহাবা কেরামের আদর্শ । কারণ, তাঁরা হুযুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যদ্বাণী শ্ৰবণ করে এ বিশ্বাস নিয়ে চুপ চাপ বসে থাকেননি যে, আমরা তো স্বয়ং রাসুলে করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথেই আছি। আমাদের আর।কি ভয়; বরং তাঁরা জানতে চাইলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম! ‘নাজাত প্রাপ্ত দল কোনটি’। অন্যথায় নামায, রোযা, হজ্জ যাকাত সহ ইসলামী বিধি বিধান পালন করেও আকীদাগত অ্যাপত্তির কারণে জাহান্নামী হতে হবে। সাহাবা কেরামের প্রশ্নের উত্তরে হযুর পাক সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “আমি এবং আমার সাহাবীদের তরীকা ।” এর ব্যাখ্যায় হাদিস বিশারদগণ বলেন, এতে সন্দেহের অবকাশ নেই যে, ঐ নাজাতপ্রাপ্ত দল হলো ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত’। (মিরকাত শরহে মিশকাত ১ম খও পৃষ্ঠা ২০৪)।
অতএব, সন্দেহাতীতভাবে বলা যায় যে, ইসলামের একমাত্র সঠিক রূপরেখা হল ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত । এ সত্যটি যখন সর্ব সাধারণের নিকট দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে গেছে, তখন শয়তান তার অনুসারীদেরকে নিজেদের ভ্রান্তি গোপন করে সরলপ্রাণ মুসলমানদেরকে ধোকায় ফেলার লক্ষ্যে এ কৌশল শিক্ষা দিল যে, তারা যেন নিজেদেরকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের অনুসারী বলে দাবী করে। পাক-ভারত উপমহাদেশে শয়তানের এ পরিকল্পনা ইদানিং পরিলক্ষিত হচ্ছে। এমতাবস্থায় যাদের উপর আল্লাহ তা’আলা ও তাঁর প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের মেহেরবাণী হবে, যথাযথ ভাবে ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের’ আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে।
অতঃপর উল্লেখিত হাদিস শরীফগুলোতে নাজাতপ্রাপ্ত দলের বেলায় নিম্নবর্ণিত নামগুলো বর্ণিত হয়েছে, সাবিলুল্লাহ (আল্লার পথ), ‘আল-জামাআত(নির্দিষ্ট দল), তায়েফাতুন'(ছোট একটি দল), ‘আস সাওয়াদুল আযম’ (বড় জামাআত), সুন্নাতী’ (আমি রাসুল সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের তরীকা) ইত্যাদি। এ ক্ষেত্রে শাব্দিক পার্থক্য থাকলেও এর মর্মার্থ এক ও অভিন্ন। এর দ্বারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতকেই বুঝানো হয়েছে, এটাই মুহাদ্দেসীন কেরামের চূড়ান্ত অভিমত।
এখানে পাঠকের মনে একটি প্রশ্নের অবতারণা হওয়া অত্যন্ত স্বাভাবিক যে, একটি হাদিসে “তায়েফাতুন”(ছোট দল) অপর একটি হাদিসে আস সাওয়াদুল। আযম’ (বড় দল) বর্ণিত হয়েছে। দুই বিপরীত অর্থবোধক পদের মর্ম এক ও অভিন্ন কিভাবে হবে। এর উত্তর এভাবে দেয়া যায়-*প্রথমতঃ ‘তায়েফাতুন’ বা ছোট দল বলতে উম্মতের ফকিহগণ ও মুজতাহিদগণকে বুঝানো হয়েছে। যাদের সংখ্যা সাধারণ উম্মতের সংখ্যার তুলনায় অনেক কম; কিন্তু তাদের অনুসারী অনেক । যারা হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করে, উমতে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহ তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভ্রান্তি থেকে রক্ষা করেছেন তারাই হলেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের পথ প্রদর্শক সুতরাং তাদেরকেই হকের উপর প্রতিষ্ঠিত বলে ঘোষণা দিয়েছেন হুযুর করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আর বড় দল বলতে কোন নির্দিষ্ট কালের বা নির্দিষ্ট এলাকার বড় দল নয়; বরং ইসলামের অভ্যূদ্বয় থেকে অদ্যাবধি মুসলিম বিশ্বের অধিকাংশ মুসলমান যে আকীদা ও বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত ঐ দলের নাম আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত। সুতরাং কোন নির্দিষ্ট এলাকায় এক ব্যক্তি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের অনুসারী আর বাকী।সবাই ভ্রান্ত দলের অনুসারী হলে সে ক্ষেত্রে অধিকাংশ ‘সাওয়াদে আযম’ বা বড়দল বলে বিবেচিত হবে না, বরং ঐ একজনই বড় দল হিসেবে বিবেচিত হবেন। কারণ, তার সম্পর্ক সাহাবা কেরাম, তাবেয়ীন, তবই তাবেয়ীন, ফোকাহা, মুহাদ্দেসীন ও সকল আউলিয়া কেরামের সাথে। পবিত্র কোরআনুল করীমে হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম একা একজনকেই উখড(জাতি) হিসেবে অবহিত করা হয়েছে। আর এটা হল সত্যতার ভিত্তিতে। অর্থাৎ হকের উপর প্রতিষ্ঠিত একজনই একদল (মিরজাতুল মানাজিহ শরহে শিকাতুল মাসাবিহ, ১ম খন্ড)
➖➖➖
পবিত্র হাদিসের আলোকে বাতিল ফিরকা
➖➖➖
হুযুর পুরনুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র বাণীসমূহে উম্মতের যাবতীয় বিষয়ের বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। হালাল-হারাম, করণীয় ও বৰ্জনীয় সবকিছু উম্মতের নিকট স্পষ্টভাবে বর্ণনা করে গেছেন। সুন্নাহ যথাযথ অনুসরণের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশ দান করেছেন। তিনি আপন উম্মতকে ঈমানের পর নামায, রোযা ইত্যাদি পূণ্য কাজের প্রতি যত্নবান হবার কার্যত শিক্ষাদান করেছেন। এর পাশাপাশি তিনি উমতের মধ্যে নানা ভ্রান্ত দলের আবির্ভাব সম্পর্কে কখনো সংক্ষেপে আবার কখনো বিস্তারিতভাবে বর্ণনা দিয়েছেন, যাতে সরলপ্রাণ মুসলমান কখনো তাদের বাহ্যিক চাল-চলন, আচার-আচরণ, সুন্দর সুন্দর কথায় প্রতারিত না হয়। এমনকি তাদের স্বযত্নে নামায-রোযা ও সুললিত কণ্ঠের তেলাওয়াতে কোরআন শুনেও তাদের ভ্রান্তির বেড়াজালে আটকে না পড়ে, তজ্জন্য হুশিয়ার করে দিয়েছেন। নিম্নে সরলপ্রাণ মুসলমানদের জ্ঞাতার্থে ঐসব হাদিস শরীফ পেশ করা হলো। উল্লেখ্য যে, হাদিস শরীফে কয়েকটি বাতিল ফিরকার নাম সহ বর্ণিত হয়েছে। যথা-খারেজী,কদরীয়া, মুরজিয়া ও জাহমীয়া। এটা হুযুর সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলাইহি
ওয়াসাল্লামের “ইলুমে গায়েব’ বা অদৃশ্য জ্ঞানের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বিশুদ্ধ হাদিগ্রন্থগুলোতে ঐসব ফিরকার বর্ণনায় পৃথক পৃথক অধ্যায় রয়েছে সিহাহ সিত্তা ছয়টি বিশুদ্ধ হাদিসের কিতাব । যথা, বোখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, নাসায়ী শরীফ, আবুদাউদ শরীফ, তিরমিযি শরীফ ও ইবনে মাজা শরীফে অন্যান্য বাতিল ফিরকার চেয়ে ‘খারেজীদের সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা বিদ্যমান। কারণ, এ দলটি মুসলমানদের মধ্যে বাতিল দলসমূহের সর্বপ্রথম দল। পরবর্তী সকল বাতিল ফিরকার মধ্যে তাদের কিছু কিছু আক্বীদা ও চরিত্র বিদ্যমান। যুগে যুগে ভিন্ন ভিন্ন
নামে বিভিন্ন ফিরকার আত্মপ্রকাশ ঘটলেও মৌলিক ক্ষেত্রে খারেজীদের সাথে তাদের সাদৃশ্য রয়েছে। তাই খারেজীদের সম্পর্কেই সর্ব প্রথম আলোচনা করছি। পবিত্র কোরআনের পর ইসলামী জগতের সর্বাধিক বিশুদ্ধ কিতাব বোখারী। শরীফের দ্বিতীয় খণ্ডে ইমাম বোখারী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি নিম্নোক্ত শিরোনামে একটা অধ্যায় পেশ করেন।
باب قتال الخوارجوالملحدين
অর্থাৎ খারেজী ও মুলহীদীনদের (বাতিল আক্ৰীদা পোষণকারী) হত্যা করার বিধান সম্বলিত অধ্যায়। অতঃপর তিনি উক্ত অধ্যায়ে একটি হাদিসে ‘মওকুফ’ (১) বর্ণনা করেন-
وكان ابن عمر يراهم شرارخلق الله وقال انطلقوا إلى آيات نزلت فى الكفار فجعلو ها على المومنين-
অর্থাৎ প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহ তা’আলা আনহুম খারেজীদেরকে আল্লাহর সৃষ্টিতে সবচেয়ে নিকৃষ্ট মনে করতেন। অতঃপর তিনি তার কারণ হিসেবে বলেন, নিশ্চয়ই তারা (খারেজীগণ) ঐ সব আয়াতের প্রতি মনোনিবেশ করেছে যেগুলো কাফিরদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে।অতঃপর ঐসব আয়াতকে ঈমানদারদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেছেন। (বোখারী শরীফ, পৃষ্ঠা ১০২৪)
আলোচ্য হাদিসে হযরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা খারেজীদের গোমরাহীর মূল কারণ হিসেবে যে বিষয়টিকে চিহ্নিত করেছেন তা কুফর, শিরক ও কবীরা গুনাহর মতো বাহ্যতঃ মনে না হলেও এটাই ভ্ৰষ্টতার মূল বিষয়।কারণ, এতে পবিত্র কোরআনের জঘন্যতম বিকৃতি ও মনগড়া ব্যাখ্যারই শামীল।এটা এমন একটি জঘন্য বিষয় যা আজ পর্যন্ত প্রায় প্রত্যেক বাতিল ফিরকার মধ্যে পাওয়া গেছে এবং বর্তমানেও পরিলক্ষিত হয়। প্রায় প্রত্যেক বাতিল ফিরকা নিজেদের ভ্ৰান্তি প্রচারে পবিত্র কোরআন ও হাদিস শরীফের কৃত্রিম আশ্রয় গ্রহণ করে এবং মনগড়া ব্যাখ্যার মাধ্যমে সরলপ্রাণ মুসলমানদেরকে গোমরাহ করে থাকে।
অতএব, হযুর পুরনুর সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম খারেজী সম্প্রদায় সম্পর্কে যেসব ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন সেগুলো মনযোগ সহকারে পড়ন এবং সত্য সন্ধানে সচেষ্ট হোন।
*একঃ হযরত সু’ যাঈদ ইবনে গাফাল রাদিয়াল্লাহ তা’আলা আনহু বলেন, হযরত মাওলা আলী রাদিয়াল্লাহ তা’আলা আনহ বলেন, যখন আমি তোমাদের নিকট রাসুলে করিম সাল্লাল্লাহ তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে কোন হাদিস বর্ণনা করব আল্লাহর শপথ তখন আমি তাকে মিথ্যা প্ৰতিপন্ন করার চেয়ে আসমান থেকে নিচে পড়ে যাওয়াকে অনেক বেশী পছন্দ করি। আর যখন আমার ও তোমাদের মধ্যকার কোন বিষয় বর্ণনা করব তখন কৌশল হিসেবে ইশারা।ইঙ্গিতের আশ্রয় নিতে পারি। কারণ, যুদ্ধ এক ধরণের ধোঁকা স্বরাপ। আর নিশ্চয়ই আমি হুযুর করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, অদূর ভবিষ্যতে শেষ যুগে এমন একটি সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটবে যারা ।
যুবক শ্ৰেণীভুক্ত হবে এবং বিবেকবৃদ্ধি শূন্য হবে। তারা সবচেয়ে উত্তম কথা বলবে অর্থাৎ কোরআনের কথা বলবে। এ উক্তি তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা দ্বীন থেকে এমনিভাবে বেরিয়ে যাবে, যেভাবে তীর শিকারী থেকে দ্রুত বেরিয়ে যায়। তোমরা যেখানেই তাদের সাক্ষাত পাও, তাদেরকে হত্যা কর। কারণ, যে ব্যক্তি তাদেরকে হত্যা করবে তার জন্য নিশ্চয়ই কেয়ামত দিবসে বড় সওয়াব রয়েছে। (বোখারী শরীফ ২য় খণ্ড পৃষ্ঠা ১০২৪) ।
১) যে হাদিসের বর্ণনা সূত্র সাহাবা পর্যন্ত গিয়ে শেষ হয়, তাকে হাদিস শাত্রের পরিভাষার- ‘হাদিসে মওকুফ’ বলে। (এই ধরণের হাদিস বিশেষভাবে গ্রহণযোগ্য।)
*দুইঃ হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহ তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি হযুর করিম সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তোমাদের মধ্যে এমন এক সম্প্রদায়ের আত্মপ্রকাশ ঘটবে নামাযের তুলনায় তোমরা তোমাদের নামাযকে নগণ্য মনে করবে । অনুরূপভাবে তোমাদের রোযাকে তাদের রোযার তুলনায় এবং তোমাদের আমলকে তাদের আমলের মোকাবিলায় নগণ্য মনে করবে। তারা কোরআন পাঠ তাকরবে,তা তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা দ্বীন থেকে এভাবে বেরিয়ে যাবে, যেভাবে তীর শিকার কৃত প্রাণী থেকে বেরিয়ে যায়। (বোখারী শরীফ ২য় , পৃষ্ঠা ৭৫৬)।
*তিনঃ হযরত আবু সাঈদ খুদরী ও হযরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা হতে বর্ণিত, হুযুর করিম সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, অদূর ভবিষ্যতে আমার উম্মতের মধ্যে মতানৈক্য ও ফিরকা সৃষ্টি হবে। এমন এক সম্প্রদায় বের হবে যারা সুন্দর ও ভাল কথা বলবে। আর কাজ করবে মন্দ। তারা কোরআন পাঠ করবে- তা তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা দ্বীন অর্থাৎ ইসলাম থেকে এমনিভাবে বেরিয়ে যাবে,যেভাবে তীর শিকারী থেকে বেরিয়ে যায়। তারা দ্বীনের দিকে প্রত্যাবর্তন করবে না, অথচ তীর ফিরে আসা সম্ভব। তারা সৃষ্টির সবচেয়ে নিকৃষ্ট। ঐ ব্যক্তির জন্য সুসংবাদ যে তাদের সাথে যুদ্ধ করবে এবং যুদ্ধে তাদের দ্বারা শাহাদাত বরণ। করবে। তারা মানুষকে আল্লাহর কিতাব (কোরআন)-এর প্রতি দাওয়াত দেবে, অথচ তারা আমার কোন আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত নয়। যে ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে লড়বে সে অপরাপর উম্মতের তুলনায় আল্লাহ তা’আলার অনেক নিকটতম হবে। সাহাবা কেরাম বললেন, হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি
ওয়াসাল্লাম! তাদের চিহ্ন কি? হুযুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন, অধিক মাথা মুণ্ডানো। (আবু দাউদ শরীফ, পৃষ্ঠা ৬৫৫ পৃষ্ঠা ৩০৮) ।
*চারঃ হযরত ওরাইক ইবনে শিহাব হতে বণিত, তিনি বলেন, আমি আশা পোষণ করছিলাম যেন সাথে আমার নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবা কেরামের কারো সাথে সাক্ষাৎ লাভ হয় যাতে আমি তার নিকট খারেজী সম্প্রদায় সম্পর্কে জানতে পারি। অতঃপর হযরত আবু বারদা
আসলামী রাদিয়াল্লাহ তা’আলা আনহুর সাথে তার সঙ্গীসহ ঈদের দিন আমার।সাথে সাক্ষাৎ হলো। তখন আমি তাকে উদ্দেশ্য করে বললাম, আপনি হুযুর করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট খারেজীদের সম্পর্কে আলোচনা করতে শুনেছেন? তিনি উত্তরে বললেন, হ্যা আমি রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে আমার দু’কানে শুনেছি এবং তাঁকে
আমার দু’চক্ষে দেখেছি। হুযুর করিম সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট কিছু জিনিসপত্র নিয়ে আসা হলো। অতঃপর তিনি তা বন্টন করলেন। তার ডানে-বামে উপবিষ্টদের দান করলেন এবং তার পেছনে অবস্থানকারীদের কিছুই
দিলেন না। তখন তার পেছন থেকে একব্যক্তি দাড়িয়ে বলল, “হে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আপনি বন্টনের ক্ষেত্রে ন্যায় পরায়নতা অবলম্বন করেননি’। “ঐ ব্যক্তির মাথা মুণ্ডানো এবং তার পরনে এক জোড়া সাদা কাপড় ছিল।” এটা রাসুলে করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুনে খুব অসন্তুষ্ট হলেন এবং বললেন “আল্লাহর শপথ! তোমরা আমার পর এমন কোন ব্যক্তি পাবে না যে আমার চেয়ে অধিক ন্যায় পরায়ণ হবে।” অতঃপর হুযুর করিম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, “শেষ যুগে এমন এক সম্প্রদায় বের হবে এ ব্যক্তি যেন তাদের একজন। তারা কোরআন পাঠ করবে, তা তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না।তারা দ্বীন থেকে এমনভাবে বেরিয়ে যাবে, যেমন তীর শিকারী থেকে বেরিয়ে যায়। তাদের চিহ্ন হলো-অধিক মাত্রায় মাথা মুণ্ডানো। এরা সর্বদা বের হতে থাকবে। আর তাদের সর্বশেষ দল বের হবে কানা দাজ্জালের সাথে। যখন তাদের সাথে তোমাদের সাক্ষাৎ হয়, তখন মনে করো এরাই সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট। (নাসায়ী শরীফ, মিশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা ৩০৮ ও ৩০৯)।
পাঁচঃ হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহ তা’আলা আনহ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা হযুর পুরনুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট ছিলাম তিনি গনিমতের মালপত্র বন্টন করছিলেন। তখন হুযুর সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বনী তামীম গোত্রের আল খোয়াইসারা নামক একব্যক্তি আসল। অতঃপর সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইনসাফ করুন। তখন হযুর পুরনুর সাল্লাল্লাহ তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ধ্বংস হোক তোমার! কে ইনসাফ করবে? যদি আমি ইনসাফ না করি। তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হতে যদি আমি ইনসাফ না করতাম। তখন হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহ তাআলা আনহু বললেন, (হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আমাকে অনুমতি দিন, আমি তার শিরচ্ছেদ করে ফেলব। অতঃপর হুযুর আকদাস সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নিশ্চয়ই তার এমন অনেক অনুসারী আছে, তোমাদের মধ্যে অনেকে আপন নামাযকে তাদের নামাযের তুলনায় হীন মনে করবে, অনুরূপ নিজের রোযাকে তার রোযার তুলনায় সামান্য মনে করবে। তারা কোরআন তেলাওয়াত করবে আর তা তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা দ্বীন হতে।এমনিভাবে বেরিয়ে যাবে যেমন তীর শিকারী থেকে বেরিয়ে যায়। তীরের লোহা,পাটি ও পালক সমূহের দিকে দেখা গেলে তাতে কিছুই পাওয়া যাবে না। অথচ তীর ময়লা ও রক্ত অতিক্রম করে বেরিয়ে গেছে। (অর্থাৎ শিকারী প্রাণীর।দেহভেদ করে এতো দ্রুত বেরিয়ে গেছে যে, ময়লা বা রক্ত তীরের গায়ে লাগার সময় হয়নি। অনুরূপ ভাবে এরাও দ্বীন হতে এমনিভাবে বেরিয়ে যাবে যে, দ্বীনের কোন আদৰ্শই তাদের মধ্যে বিদ্যমান থাকবে না)। তাদের নিদর্শন হলো (তাদের মধ্যে) একজন কালো ব্যক্তি, তার একটি বাহু মহিলাদের স্তনের মতো অথবা নরম মাংসের টুকরোর মতো খুলতে থাকবে। তারা (ঐ ব্যক্তির নেতৃত্বাধীন ও অনুসারীগণ) মানুষের উত্তম দলের উপর আক্রমণ করবে। (অর্থাৎ হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু ও তাঁর অনুসারীর উপর)। হযরত আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু বলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই আমি এ হাদিস হুযুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি। আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হযরত আলী ইবনে আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন আমিও তাঁর সাথে ছিলাম। হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু ঐ ব্যক্তিকে খুঁজে বের করার নির্দেশ দিলেন। তখন তাকে খুঁজে বের করে নিয়ে আসা হলো। তার মধ্যে হযুর সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক বর্ণিত বৈশিষ্ট্যাবলী দেখলাম। (বোখারী শরীফ)।
অপর বর্ণনায় আছে, গৰ্ভচোখ, উচু কপাল, ঘনদাড়ি, মাংসপূর্ণ গাল, মাথা মুণ্ডানো একব্যক্তি এসে বলল, হে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহকে ভয় করো। তখন হুযুর করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কে আল্লাহর আনুগত্য করবে? যদি আমি তার অবাধ্য হই। আল্লাহ তাআলা আমাকে পৃথিবীবাসীর জন্য আমানতদার করে প্রেরণ করেছেন, আর তোমরা আমাকে আমীন মেনে নিতে পারছনা। তখন একজন সাহাবী হুযুর সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট ঐ ব্যক্তিকে হত্যা করার অনুমতি প্রার্থনা করলে হুযুর সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বাধা দিলেন। আর যখন ঐ ব্যক্তি প্রত্যাবর্তন করল তখন হুযুর পুরনুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, নিশ্চয়ই এ ব্যক্তি থেকেই এমন সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটবে যারা কোরআন পড়বে কিন্তু তা তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা ইসলাম থেকে এমনিভাবে বের হয়ে যাবে যেমন তীর শিকারকৃত প্রাণী থেকে বেরিয়ে যায়। তারা মুসলমানদেরকে হত্যা করবে, মূর্তি পূঁজারীদেরকে ছেড়ে দেবে। আমি যদি তাদেরকে পাই, তাহলে নিশ্চয়ই আ’দ গোত্রের মতো ধ্বংস করে দেব।
(বোখারী শরীফ, মুসলীম শরীফ ও মিশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা ৫৩৪-৫৩৫)।
*ছয়ঃ হযরত জাবের ইবনে আবদিল্লাহ রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিইররানা (মকা শরীফ ও তায়েফ এর মধ্যবর্তী) নামক স্থানে রূপার টুকরো ও গণিমতের মাল (যুদ্ধলব্ধমাল) বন্টন করছিলেন, তখন তিনি হযরত বেলাল রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর কোলে (মাথা মোবারক রেখে) অবস্থান করছিলেন। তখন এক ব্যক্তি (যুল খোয়াইসারা তামীমী) বলল, “হে । মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইনসাফ করুন। কারণ আপনি (বন্টনের ক্ষেত্রে) ইনসাফ করেননি। তখন হুযুর করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার ধাংস হোক। আমার পরে কে ইনসাফ করবে? যদি আমি ইনসাফ না করি। তখন হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমাকে অনুমতি দিন আমি মুনাফিকের শিরচ্ছেদ করে দিই। অতঃপর হুযুর করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম (হত্যার অনুমতি না দিয়ে) বললেন, নিশ্চয়ই তার অনেক অনুসারী হবে যারা কোরআন করিম পড়বে যা তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবেনা। তারা দ্বীন থেকে এমনিভাবে বেরিয়ে যাবে যেমন তীর শিকারকৃত প্রাণী থেকে বেরিয়ে যায়। (ইবনে মাজা শরীফ, পৃষ্ঠা ১৬)।
*সাতঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আবি আওফা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুযুর পুরনুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, খারেজীগণ জাহান্নামের কুকুরদল। (ইবনে মাজা শরীফ, পৃষ্ঠা ১৬)।
*আটঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নিশ্চয়ই হুযুর আকরাম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, এমন এক দলের আবির্ভাব ঘটবে যারা কোরআন পড়বে আর তা তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। যখন এদের একদলের আত্মপ্রকাশ হবে, (একসময়) ধ্বংস হয়ে যাবে। হযরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা এ আনহুমা বলেন, আমি হুযুর সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লামকে “যখন তাদের একদল বের হবে, ধ্বংস হয়ে যাবে, অবশেষে তাদের উপস্থিতি দাজালের আবির্ভাব হবে” বিশবারের বেশী বলতে শুনেছি । (ইবনে মাজা শরীফ, পৃষ্ঠা ১৬)
*নয়ঃ হযরত জাবের ইবনে আবদিল্লাহ রাদিয়াল্লাহ তাআলা আনহ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুযুর করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুনাইন থেকে ফেরার পথে জিইররানা নামক স্থানে পৌছলে তার নিকট একব্যক্তি আসল। ঐ সময় হযরত বেলাল রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর কাপড়ে কিছু রূপা ছিল। আর রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাতের মুঠোতে করে লোকজনকে দান করছিলেন। তখন আগন্তুক ব্যক্তিটি বলল, হে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! ইনসাফ’ করুন। তখন হুযুর পাক সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার ধ্বংস হোক, আমি যদি ইনসাফ না করি কে ইনসাফ করবে? আমি যদি ইনসাফ না করি তাহলে নিশ্চয়ই আমি ক্ষতিগ্রস্ত হব। অতঃপর হযরত ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহ তা’আলা আনহু বললেন, হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে অনুমতি দিন, আমি এ মুনাফিককে হত্যা করব। হুযুর আকরাম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মা’আযাল্লাহ (আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি অর্থাৎ না) কারণ, মানুষ বলবে-আমি আমার সঙ্গীদের হত্যা
করেছি। নিশ্চয়ই এ ব্যক্তি এবং তার অনুসারীগণ কোরআন তেলাওয়াত করবে, যা তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা দ্বীন থেকে এমনিভাবে বেরিয়ে যাবে, যেমন শিকারকৃত প্রাণী থেকে তীর বেরিয়ে যায়। (মুসলিম শরীফ ১ম খণ্ড,
পৃষ্ঠা ৩৪০)।
*দশঃ মুসলিম শরীফের অপর বর্ণনায় রয়েছে, এ ব্যক্তির (যুল খোয়াইসারা তামীমী) অনুসারী এমন একদল বের হবে যারা সুন্দর কণ্ঠে (তাজবীদের নিয়মানুসারে) কোরআন তেলাওয়াত করবে। হযরত ওমারা ইবনে কাকা বলেন, আমি ধারণা করছি যে, হুযুর করিম সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি আমি তাদেরকে (খারেজীদেরকে) পাই, তাহলে সামুদ গোত্রের মত হত্যা করব। (মুসলিম শরীফ ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৪১)।