কিতাবঃ ইসলামের মূলধারাঃ (পর্ব ২) আল-কুরআন ও হাদিসের আলোকে সুন্নী জামাআত

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

পবিত্র কোরানুল করীমের আলোকে সুন্নী জামাআত
➖➖➖

اهدنا الصراط المستقیم-صراط الذین انعمت علیهم –

অর্থাং (হে আল্লাহ) “আমাদেরকে সোজা পথে চালাও; তাঁদেরই পথে, যাদের  উপর তুমি ইহসান করেছ।”

আলোচ্য আয়াতে “সিরাতুল মুস্তাকীম” বা সোজা পথ দ্বারা ইসলাম, কোরআন, হুযুর করিম সাল্লাল্লাহু  তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুপম চরিত্র, হুযুর করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের বংশধর ও তাঁর সাহাবা কেরামকে বুঝানো হয়েছে। অতএব বুঝা যায়, ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতই সিরাতে মুস্তাকীম’। কারণ এ দল ইসলামের যাবতীয় বিধান, পবিত্র কোরআন-সুন্নাহ, আহলে বাইত, সাহাবা কেরাম সবাইকে যথাযথভাবে মানে। আলোচ্য আয়াতের ব্যাখ্যা অপর আয়াতে অতি স্পষ্টভাবে করা হয়েছে-

ومن يطع الله والرسول فأولئك مع الذين أنعم الله عليهم من النبيين والصديقين والشهداء والصالحين وحسن أولئك رفيقا\” [النساء: 69]

অর্থাৎ “যারা আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্য করবে তারা ঐসব ব্যক্তির সাথে থাকবেন যাঁদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন। (তাঁরা হলেন) নবীগণ সিদ্দিকীন, শহীদান ও সালেহীন। তাঁরা অতি উত্তম সঙ্গী।”( সুরা নিসা-৬৯-আল-কোরআন )।

আলোচ্য আয়াতে মহান আল্লাহ ‘সিরাতে মুস্তাকীম’-এর সুস্পষ্টভাষায় ব্যাখ্যা দান করেছেন যে, এ চার শ্রেণীর প্রিয় বান্দাদের পথের নাম সিরাতে মুস্তাকীম। কারণ, তাঁরাই হলেন আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ প্রাপ্ত। সুতরাং যে দলের আক্বীদা ও আমল উল্লেখিত চার শ্রেণীর মতো হবে তারাই হবে সিরাতে মুস্তাকীম’-এর উপর প্রতিষ্ঠিত। অতএব, নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতই সিরাতে মুস্তাকীম। এ দলই উল্লেখিত চার শ্রেণীর প্রকৃত অনুসারী। আর যতো ‘বাতিল ফিরকা’ বা ভ্রান্ত দল-উপদল রয়েছে তারা উল্লেখিত চার শ্রেণীর কোন না কোনটার মহান মর্যাদায় আঘাত হেনেছে অত্যন্ত সুকৌশলে। সুতারাং তারা বাহ্যিক চাল চলনে বা মৌখিকভাবে তাদের অনুসারী দাবী করলেও নিঃসন্দেহে তারা বন্ধুরপী শত্রু।

উল্লেখ্য যে, কোন ব্যক্তি অনুগত ও অনুসরণীয় হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবার জন্য তার খোদা প্রদত্ত মর্যাদা অটুট থাকতে হবে এবং অনুসারীদের নিকট অতীব সম্মানিত বলে বিবেচিত হতে হবে। অন্যথায় অনুগত হবে না ও অনুসরণীয় বলে বিবেচিত হবে না।

(১)সিরাতে মুস্তাকীম ‘বলতে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আাতকে বুঝায়। কারণ এটা চরম ও নরমের মধ্যবর্তী পথ।

ﻭَﺍﻋْﺘَﺼِﻤُﻮﺍ ﺑِﺤَﺒْﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺟَﻤِﻴﻌًﺎ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻔَﺮَّﻗُﻮﺍ ﻭَﺍﺫْﻛُﺮُﻭﺍ ﻧِﻌْﻤَﺔَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﺇِﺫْ ﻛُﻨْﺘُﻢْ ﺃَﻋْﺪَﺍﺀً ﻓَﺄَﻟَّﻒَ ﺑَﻴْﻦَ ﻗُﻠُﻮﺑِﻜُﻢْ ﻓَﺄَﺻْﺒَﺤْﺘُﻢْ ﺑِﻨِﻌْﻤَﺘِﻪِ ﺇِﺧْﻮَﺍﻧًﺎ ﻭَﻛُﻨْﺘُﻢْ ﻋَﻠَﻰ ﺷَﻔَﺎ ﺣُﻔْﺮَﺓٍ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ﻓَﺄَﻧْﻘَﺬَﻛُﻢْ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﻛَﺬَﻟِﻚَ ﻳُﺒَﻴِّﻦُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟَﻜُﻢْ ﺁَﻳَﺎﺗِﻪِ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢْ ﺗَﻬْﺘَﺪُﻭﻥَ ‏( 103 )

অর্থাৎ-“তোমরা সবাই আল্লাহর রশ্মিকে দৃঢ়ভাবে ধর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়োনা। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর। তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে এবং তিনি তোমাদের হৃদয়ে দয়ার সঞ্চার করেন, ফলে তাঁর অনুগ্রহে তোমরা পরস্পর ভাই ভাই হয়ে গেলে। তোমরা অগ্নিকুণ্ডের প্রান্তে ছিলে, আল্লাহই তোমাদেরকে সেখান থেকে উদ্ধার করেছেন। এভাবে আল্লাহ তোমাদের কাছে নিজের নিদর্শন তুলে ধরেন, যেন তোমরা সুপথ পাও।”(সুরা আল ইমরান -১০৩)

আলোচ্য আয়াতে উল্লেখিত حبل الله বা ‘আল্লাহর রজ্জু’ এর ব্যাখ্যায় তাফসীরকারকগণ বিভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। কেউ বলেন, আল্লাহর রজ্জ দ্বারা পবিত্র কোরআনকে বুঝানো হয়েছে।

মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে যে, কোরআন আল্লাহর রজ্জু, যে তার অনুসরণ করেছে সে হিদায়তের উপর প্রতিষ্ঠিত। আর যে কোরআন – এর অনুসরণ ছেড়েছে সে ভ্রষ্টতার উপর প্রতিষ্ঠিত। প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহ তা’আলা আনহু বলেন, ‘আল্লাহর রজ্জু’ বলতে আল-জামাআতকে বুঝানো হয়েছে। তিনি আবার বলেন, “ঐ জামা’আতকে অবশ্যই অবলম্বন করো, এটা ‘আল্লাহর রজ্জু’ যাকে শক্তভাবে আকড়ে ধরার নির্দেশ দেয়া হয়েছে”। (খাযাইনুল ইরফান)। কেউ বলেন, ‘আল্লাহর রজ্জু’ বলতে দ্বীন ইসলামকে বুঝানো হয়েছে। (জালালাইন শরীফ ও তাফসীরে হোসাইনী। ولاتفرقو বলে আল্লাহ তা’আলা ঈমানদারগণকে ইয়াহুদী, নাসারার মত বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত হতে নিষেধ করেছেন। এতদসত্ত্বেও মুসলমানগণ অসংখ্য দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় ‘আল্লাহর রজ্জু’ হিসেবে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতই হবে যথার্থ । এটাই হলো ইসলামের মূলধারা একমাত্র সঠিক রূপরেখা। পবিত্র হাদিসের আলোকে যারা এ দলের বাইরে থাকবে তারা নিঃসন্দেহে গোমরাহ ও পথভ্রষ্ট। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত ব্যতীত প্রত্যেক ভ্রান্ত দলই কোরআনের অপব্যাখ্যার আশ্রয় নিয়েছে। সুতরাং তারা কোরআনুল করিমের সঠিক অনুসারী হতে পারে না। অনুরূপভাবে প্রত্যেক বাতিল ফিরকা দ্বীন ইসলামের নামে নিজেদের ভ্রান্ত ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। অতএব, তারা দীন ইসলামের সঠিক অনুসারীও নয়। একমাত্র আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতই আল্লাহু, তাঁর প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবা
কেরামের নির্দেশিত পন্থায় পবিত্র কোরআন ও দ্বীন ইসলামের দিকনির্দেশনা দিয়ে আসছে। ইমাম বুসিরী রাহমাতুল্লাহি আলাইহির মতে ‘আল্লাহর রজ্জু’ বলতে হুযুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র সত্ত্বাকে বুঝানো হয়েছে। তিনি “কাসীদা-এ-বোরদায়” বলেন-

دعا الى الله فالمستمسكون به -مستمسكون بحبل غير منفصم

অর্থাৎ তিনি (হুযুর করিম সাল্লাল্লাহ তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহ’র দিকে আহবান করেছেন। অতঃপর তার মহান আদর্শকে মজবুদভাবে ধারণকারীগণ এমন এক রজ্জুকে শক্তভাবে আকড়ে ধরেছে যা ছিন্ন হবার নয়। এখানে ইমাম বুসিরী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ইংগিত করেছেন যে, ‘আল্লাহর রজ্জু’ বলতে হযুর করিম সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের
মহান সত্ত্বাকেই বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ যারা তাঁর মহান মর্যাদার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে তাঁর অনুপম আদর্শকে আকড়ে ধরবে তারা কখনো সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হবে না। তাদের সম্পর্কে প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে মহান আল্লাহর সাথে অটুট থাকবে। একমাত্র আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতই মহানবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের আল্লাহ প্রদত্ত মর্যাদার প্রতি অকৃত্রিমভাবে যত্নবান ও তাঁর আদর্শের যথার্থ অনুসারী। পক্ষান্তরে – বাতিল ফিরকা বাহ্যিক চাল – চলনে নিজেদেরকে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসারী বলে তাদের লিখনী ও বক্তৃতা বিবৃতিতে মহানবী সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুউচ্চ মর্যাদাকে ক্ষুন্ন করছে চরমভাবে। সুতরাং তারা রাসুলে করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের অকৃত্রিম অনুসারী নয়, বরং তাদের বাহ্যিক চাল-চলন সরলপ্রাণ মুসলমানদেরকে ধোঁকায় ফেলার কুট কৌশল মাত্র।

ومن يسابق الله من بعد ما تبين لم الهدى ويتبع غير سبيل المؤ منين نزله ما تولى ونجله جهنم سا ءت مصيرا

অর্থাৎ “যে ব্যক্তি নবী করিম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরোধীতা করবে তার নিকট সত্য পথ উদ্ভাসিত হবার পর এবং মুসলমানদের পথ ছেড়ে অন্যপথ অনুসরণ করবে আমি তাকে তার অবস্থার উপর ছেড়ে দেব। এবং তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবো। আর তা কতইনা নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল।” (সূরা নিসা-১৫৫)

আলোচ্য আয়াতে ‘সাবিলুল মোমেনীন’ বলতে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতকে বুঝানো হয়েছে। কারণ সাহাবা কেরাম, তাবেয়ী, তবই তাবেয়ীন, আইম্মায়ে মুজতাহেদীন, মুজাদ্দেদীন, মুফাসসেরীন, মুহাদ্দেসীন, ফোকাহা, আউলিয়া কেরাম এবং বিশ্বের অধিকাংশ মুসলমানই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতেরই অনুসারী। যারা এদলের বাইরে অন্য পথ ও মতে চলবে তারা জাহান্নামী। (খাযাঈনুল ইরফান ও তাফসীরে হোসাইনী)

ان هذا صراط مستقيما لا تبعده ولا اتبعوا السبل فغفر قوا بكم عن سبيله- ذلكم ولكم به لعلكم تتقون-

অর্থাৎ “নিশ্চয়ই এটা আমার সরলসোজা পথ, তোমরা এ পথে চলো, অন্য পথসমূহে চলো না। কেননা তোমাদেরকে তাঁর (আল্লাহ) পথ থেকে পৃথক করে ফেলবে। এটা তোমাদের প্রতি আল্লাহর নির্দেশ যাতে তোমরা খোদাভীরু হতে পার।” (সুরা আনআম- ১৫৪)।

আলোচ্য আয়াতে মহান আল্লাহ ঈমানদারগণকে ‘সিরাতে মুস্তাকীম’ – এর অনুসরণ করার নির্দেশদানের পাশাপাশি প্রান্ত ধর্ম ও দলগুলোর অনুসরণ করতে নিষেধও করেছেন। কারণ, ঐ সব পথে চললে ‘সিরাতে মুস্তাকীম ‘ হতে দূরে সরে পড়বে।

আলোচ্য আয়াতে “অন্য পথসমূহ অনুসরণ করো না” বলতে কোন পথগুলোকে বুঝানো হয়েছে এ সম্পর্কে তাফসীরকারকগণ বলেন, সবুল’ (পথসমূহ) দ্বারা। ইয়াহদীয়াত, নাসরানীয়াত (খৃষ্টবাদ) ও কুপ্রবৃত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত পথ-মত সমূহকে বুঝানো হয়েছে (বায়যাভী শরীফ)। শয়তানের প্ররোচনায় প্ররোচিত  হয়ে মুসলিম মিল্লাতকে খণ্ডবিখও করার মানসে যে সব ফিরকার আবির্ভাব ঘটেছে তা কু-প্ৰবৃত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। সুতরাং আলোচ্য আয়াতে সিরাতুল মুস্তাকীম’-এর যথার্থ ব্যাখ্যা হবে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত এবং ‘সুবুল’ (বলতে পথসমূহ) ইয়াহুদীয়াত ও নাসরানীয়াতের এবং মুসলমানদের মধ্যে সৃষ্ট বাতিল ফিরকাসমূহ। কারণ অদ্যাবধি আবির্ভূত সকল বাতিল ফিরকার পেছনে হয়তো ইয়াহুদীয়াতের হাত রয়েছে অথবা নাসরানীয়াতের। ইসলামের প্রাথমিক যুগগুলোতে যাদের মাধ্যমে দলাদলি সূচনা হলো তাদের মধ্যে ইবনে সাবা অন্যতম। সে মূলতঃ ইয়াহুদী ছিল। মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির অশুভ উদ্দদেশ্যে সে ইসলাম গ্রহণ করেছিল একথা ঐতিহাসিক সত্য। আলোচ্য আয়াতসমূহে সিরাতে মুস্তাকীম, ‘হাবলুল্লাহ’ ও ‘সাবলুল’ ‘মো’মেনীন’ দ্বারা আহলে সুন্নাত ওয়াল।জামাআতকে বুঝানো হয়েছে। এ ব্যাখ্যায় কেউ কেউ আপত্তি উথাপন করার সুযোগ খুঁজে বলে ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত নামটাতো তাবেয়ীনের যুগে প্রকাশ পেয়েছে। আর কোরআনুল করীমতো আরো অনেক আগে নাযিল হয়েছে। সুতরাং এটা অপব্যাখ্যা বা মনগড়া। এর উত্তর দু’ভাবে দেয়া যায়।

★প্রথমতঃ পবিত্র কোরআন মহা প্রজ্ঞাময় আল্লাহর বাণী। এতে অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ, ইহকাল, পরকাল সবকিছুর প্রয়োজনীয় তথ্যাবলী বিদ্যমান। দ্বীন-ইসলামের মুখোশ পরে ইসলাম ও মুসলমানদেরকে ‘সিরাতে মুস্তাকীম’ থেকে পদচ্যুত করার লক্ষ্যে বাতিল দল-উপদলের আবির্ভাব হয়েছে; এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পবিত্র কোরআন কোন বক্তব্য রাখবে না, তা হতে পারে না । এসব আয়াতে মহান আল্লাহু মূলতঃ প্ৰকৃত মুসলমানদেরকে ইসলামের মূল ধারায় প্রতিষ্ঠিত থাকার প্রতিই দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। আর সে মূলধারাকে পবিত্র কোরআনে সিরাতে মুস্তাকীম ‘‘হাবলুল্লাহ’ আবার কোন আয়াতে ‘সাবিলুল মোমেনীন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

★দ্বিতীয়তঃ আল্লাহ্ তাআলার একমাত্র মনোনীত দ্বীন “আল-ইসলাম’। সর্বশেষ নবী হুযুর করিম সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের আবির্ভাবের মাধ্যমে এর পরিপূর্ণতা ঘটে। অতঃপর ইসলাম বিরোধী অপশক্তি ইসলামের মূলধারা থেকে মুসলমানদেরকে বিচ্যুত করার মানসে ইসলামের নামেই যখন মুসলমানদের মধ্যে কোরআন-সুন্নাহ বিরোধী আকীদা-বিশ্বাস ও ধ্যান-ধারণার অনুপ্রবেশ ঘটায়, তখন সরলপ্রাণ মুসলমানদের ঈমান-আক্বীদা রক্ষার প্রয়োজনে ইসলামের মূলধারার পৃথক নাম করণের প্রয়োজনীয়তা প্রকটভাবে দেখা দেয়। আর তা “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত’ নামে অদ্যাবধি পরিচিতি ও স্বীকৃতি লাভ করে আসছে। সুতরাং আলোচ্য আয়াতসমূহে সিরাতে মুস্তাকীম’ হাবলুল্লাহ’ ও ‘সাবলুল মোমেনীন’এর মর্মার্থ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতা গ্রহণ করা মনগড়া নয়, বরং আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুস্পষ্ট মহান বাণীরই প্রকৃত ব্যাখ্যা।
তাবেয়ীনের সোনালী যুগ থেকে বাতিল দলসমূহের মোকাবেলায় মূলধারার নাম ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত’ ধারাবাহিকভাবে পরিচিতি ও ব্যাপক স্বীকৃতি লাভ করেছে দেখে বর্তমানে বাতিল ফিরকা ওহাবী মওদুদীপন্থীগণ নিজেদেরকে মুখে ও কলমে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের অনুসারী বলে দাবী করছে। তাদের এ দাবী যে ধোকাবাজী, প্রহসন ও ভিত্তিহীন তা ক্রমান্বয়ে প্রমাণ সহকারে উপস্থাপন করা হবে ইনশাআল্লাহ্ তা’আলা।
➖➖➖
পবিত্র হাদিস শরীফের আলোকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত
➖➖➖
• একঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলে করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘আমার উম্মতের মধ্যে হুবহু ঐ পরিস্থিতির আগমন ঘটবে যেভাবে বনী ইসরাঈলের উপর ঘটেছিল; দুই জুতোর সমতার মতোই। এমনকি যদি তাদের মধ্যে কেউ প্রকাশ্যে আপন মায়ের সাথে যিনা করে থাকে, তাহলে আমার উম্মতের মধ্যেও এমন ব্যক্তির সৃষ্টি হবে, যে তা করবে। নিশ্চয়ই বনী ইসরাঈল বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছিল আর আমার উম্মত তিয়াত্তর দলে বিভক্ত হয়ে পড়বে। এর একটি দল ছাড়া অন্যান্য সবই জাহান্নামী। সাহাবা কেরাম আরয করলেন, ঐ একটি দল কারা? হুযুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন, যার উপর আমি এবং আমার সাহাবীগণ রয়েছে। (তিরমীযী শরীফ ও মিশকাত শরীফ)

• দুইঃ হযরত মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু তাআলা৷ আনহু হতে বর্ণিত, একদা নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম দণ্ডায়মান হয়ে বললেন, সাবধান হয়ে যাও! তোমাদের পূর্বে আহলে কিতাব (ইহুদী ও নাসারা) বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। আর এ উম্মত অবিলম্বে ভিয়াত্তর দলে বিভক্ত হয়ে পড়বে।তন্মধ্যে বাহাত্তর দল জাহান্নামী আর এক দল জান্নাতী। এটা হলো আ’লা জামাআত। (আবুদাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ ও তালবস-এ- ইবলিস)

• তিনঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে রাদিয়াল্লাহু হতে মাসউদ তা’আলা আনহু বর্ণিত,তিনি বলেন, রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু তা আলা আলাইহি ওয়াসালাম আমাদের সামনে একটি রেখা অংকন করলেন। অতঃপর বললেন এটা আল্লাহর রাস্তা। অতঃপর ঐ সরল রেখার ডানে-বামে আরো অনেক রেখা অংকন করলেন এবং বললেন, এ হলো কতগুলো রাস্তা এর প্রত্যেকটিতে একটি করে শয়তান রয়েছে, সে ঐ পথে আহবান করছে। অতঃপর হযুর পাক সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম করলেন-

ان هذا صراط مستقيما فاتبعوه

অর্থাৎ “এটা আমার সহজ-সরল পথ। তোমরা এ পথে চলো” (মুসনাদে ইমাম আহমদ, নাসায়ী শরীফ, দারমী শরীফ ও মিশকাত শরীফ)

• চারঃ হযরত ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহমা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আল্লাহ তা’আলা আমার উম্মতকে ভ্রষ্টতার উপর একমত হতে দেবেন না। আল্লাহর রহমতের হাত ‘জামা’আতের’ উপর। যে ব্যক্তি জামাআত থেকে পৃথক হবে সে পৃথকভাবে জাহান্নামে যাবে। (তিরমিযী শরীফ ও মিশকাত শরীফ)

• পাঁচঃ হযরত ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা হতে বর্ণিত, রাসূলে মাকবুল সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, “বড় দলের অনুসরণ কর। কারণ, যে (বড়দল থেকে) পৃথক থাকবে, সে পৃথকভাবে জাহান্নামে যাবে।” (ইবনে মাজা শরীফ ও মিশকাত শরীফ)

• ছয়ঃ হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত, রাসুলে মাকবুল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, “হে আমার প্রিয় বৎস! যদি তুমি এ অবস্থায় সকাল-সন্ধ্যা যাপন করতে পার যে, তোমার অন্তরে কারো প্রতি কোন বিদ্বেষ থাকবে না তবে তাই করো। অতঃপর বললেন,“হে প্রিয় সন্তান! এটা আমার তরীকা। আর যে আমার তরীকাকে ভালবাসে সে আমাকেই ভালবাসে। আর যে আমাকে ভালবাসবে সে জান্নাতে আমার সাথে থাকবে।” (তিরমীযী শরীফ ও মিশকাত শরীফ)

• সাতঃ হযরত আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত, হুযুর করিম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি ফিতনা-ফাসাদের যুগে আমার তরীকাকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরবে, তার জন্য একশত শহীদের সওয়াব রয়েছে। (মিশকাত শরীফ)

• আটঃ হযরত মু’আয ইবনে জবল রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত, হযুর পাক সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয় শয়তান মানুষের জন্য বাঘ। সে অবস্থানকারী জন্য বাঘ। ছাগলের বেলায় বাঘের ন্যায়। সে পৃথক অবস্থানকারী  দূরবর্তী ও পাশে অবস্থানকারী ছাগলকে ছিনিয়ে নেয়। তোমরা ঘাঁটিসমূহ থেকে দূরে থাকো এবং মুসলমানদের দল অবলম্বন করো।”  (মুসনাদে ইমাম, মিশকাত শরীফ)

• নয়ঃ হযরত আবুযর গিফারী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি জামাআত’ থেকে এক বিঘাত পরিমাণ দূরে সরল, সে তার ঘাঢ় থেকে ইসলামের রশি খুলে ফেলল।” (মুসনাদে ইমাম আহমদ, আবু দাউদ শরীফ ও মিশকাত শরীফ)

• দশমঃ হযরত এরবায ইবনে সারীরা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহ হতে বর্ণিত,হুযুর আকরাম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, “যে আমার পরে জীবিত থাকবে, সে অনেক মতভেদ দেখবে। তখন তোমরা আমার এবং হেদায়াত প্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদীনের তরীকাকে শক্তভাবে ধারণ করে। ওটাকে দাঁত দিয়ে মজবুতভাবে আকড়ে ধরো। (আবু দাউদ শরীফ, ইবনে মাজা শরীফ, তিরমীযি শরীফ, মুসনাদে ইমাম আহমদ ও মিশকাত শরীফ)

• এগারঃ হযরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু জাবিয়া নামক স্থানে মুসলমানদেরকে সম্বোধন করে বললেন, যেভাবে আমি তোমাদের মধ্যে দণ্ডায়মান, তেমনিভাবে রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মধ্যে দণ্ডায়মান অবস্থায় ভাষণ দিয়েছেন যে, “তোমাদের যে ব্যক্তি জান্নাতে মধ্যবর্তীস্থান পছন্দ সে যেন সুন্নাত ও জামা’আতকে অবলম্বন করে। কারণ, শয়তান একব্যক্তির সাথে। আর সে দু’জন থেকে অনেক দূরে ।”(তাহাবী শরীফ, তাবরানী ও তালবিসে ইবলিস)। আলোচ্য হাদিসটি ইমাম তিরমিযী আবদুল্লাহ ইবনে ওমরের সনদে বর্ণনা করেছেন, তাতে এ অংশটুকু অতিরিক্ত বর্ণিত আছে, ‘হে উপস্থিত লোকজন জামা’আতের সাথে থাকা তোমাদের উপর ফরয হুশিয়ার! বিচ্ছিন্ন হওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা কর। ইমাম তিরমীযী এ হাদিসটি “হাসান” বলে মন্তব্য করেছেন। (তালবিস-এ- ইবলিস)

• বারঃ হযরত আরফাজা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, “জামা’আতের উপর আল্লাহর (রহমতের) হাত। যে জামা’আতের বিরোধী হবে, শয়তান তার সাথে থাকবে।” (তালবিস-এ-ইবলিস)

• তেরঃ হযরত মুগীরা ইবনে শোবা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত হুযুর করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, “সর্বদা আমার উম্মতের একটি দল বিজয়ী থাকবে কিয়ামত পর্যন্ত।” (বোখারী শরীফ ২য় খন্ড)
➖➖➖
আলোচ্য হাদিস শরিফগুলোর ব্যাখা
➖➖➖
বর্তমান মুসলিম বিশ্বে বিদ্যমান বাতিল ফিরকা তথা- ওহাবী, তাবলিগী, শিয়া, কাদিয়ানী ও মওদুদী মতাবলম্বীগণ সরলপ্রাণ মুসলমানদেরকে ধোকা দেয়ার লক্ষ্যে বলে বেড়ায় যে, হাদিসে বর্ণিত বাহাত্তর জাহান্নামী দল অনেক আগেই অতীত হয়ে গেছে। কারণ, ব্যাখ্যা গ্রন্থে তার একটা তালিকা পেশ করা হয়েছে। “মিরকাত শরহে মিশকাত’ কৃতঃ মোল্লা আলী ক্লারী হানাফী ও ‘তালবিস-এ-ইবলিস’ কৃতঃ ইমাম ইবনে যাওযী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি দুটিতে বাহাত্তর বাতিল ফিরকার ফিরিস্তি প্রদান করেছেন। সুতরাং ওহাবী, তাবলিগী ও মওদুদী ইত্যাদি জাহান্নামী দলের আওতাভুক্ত নয়।

★এর জবাব

প্রথমতঃ হাদিসে খারেজীদের বেলায় হুযুর সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, এদের শেষাংশ দাজ্জালের সাথে মিলিত হবে। (মিশকাত শরীফ)। সুতরাং প্রমাণিত হলো, ভ্রান্ত দল প্রত্যেক যুগেই থাকবে।

দ্বিতীয়তঃ হাদিস বিশারদগণ আরবী পরিভাষার আলোকে বলেছেন, আলোচ্য হাদিসে বাহাত্তর সংখ্যাটি নির্দিষ্ট সংখ্যা বুঝানোর জন্য ব্যবহৃত নয়, বরং আধিক্য’ বুঝানোর জন্য ব্যবহৃত।  অর্থাৎ আমার উম্মতে অসংখ্য বাতিল জাহান্নামী দলের আবির্ভাব হবে। এটাই হাদিসের সারমর্ম। (মিরকাত শরহে মিশকাত)

তৃতীয়তঃ তাদের উপরোক্ত উক্তিটা নিজেদের ভ্রান্তিকে চেপে রাখার অপপ্রয়াস মাত্র। কারণ, হাদিসের অৰ্থ যদি এই হয় যে, বাতিল দল মাত্র বাহাত্তরটিই হবে, এর অধিক হবে না, তাহলে এ অর্থটিই গ্রহণ করতে হবে যে, বাহাত্তর’ সংখ্যাটি যখন পূর্ণ হয়ে গেছে আর কোন ভয় নেই। যতই ভ্রান্তি আর গোমরাহী হোক না। কেন তা জাহান্নামী দলের অন্তর্ভুক্ত হবে না। অতএব, এ ধ্যান-ধারণা সম্পূর্ণ অমূলক এবং চরম গোমরাহী। কোন দল বা সম্প্রদায় পথভ্রষ্ট ও জাহান্নামী বলে বিবেচিত হওয়া কোন সময় সীমা বা সংখ্যার উপর নির্ভর করে না, বরং তার আকীদা-বিশ্বাস, উক্তি ও কর্ম কোরআন-সুন্নাহ ও সালফে সালেহীনের মতানুযায়ী হওয়া না হওয়ার উপর নির্ভরশীল। অন্যথায় কাদিয়ানী সম্প্রদায়কেও জাহান্নামী বলা যাবে না। কারণ, এ দলের আত্মপ্রকাশ তো আপত্তিকারীদের বাহাত্তর সংখ্যা পূর্ণ হবার অনেক পরে ঘটেছে।

চতুর্থতঃ হাদিসে উল্লেখিত “বাহাত্তর ফিরকা দ্বারা মূল দলগুলোকে বুঝানো হয়েছে। অতঃপর এদের ভ্রান্ত মূলনীতিমালার সব মূল দলের শাখা-প্রশাখার আবির্ভাব ঘটতে থাকবে। মিরকাত শরহে মিশকাত, তালবিস-এ- ইবলিস ও কিতাবুল মিলাল ইত্যাদি কিতাবে উল্লেখিত অগণিত বাতিল ফিরকার তালিকা তার উজ্জ্বল প্রমাণ।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment