বাতিল দল-উপদল সমূহের তালিকা
বিশুদ্ধ হাদিসের বর্ণনানুসারে উম্মাতের বিজ্ঞ ইমাম ও আলেমগণ মুসলমানদের মধ্যে আবির্ভূত ভ্রান্ত দলগুলোর তালিকা কেউ সংখ্যাকারে আবার কেউ নাম সহকারে প্রকাশ করেছেন। হাদিসের কিতাবে ‘বাতিল ফিরকাসমূহ’ শীৰ্ষক অধ্যায়ে বিশুদ্ধ হাদিস বর্ণিত হয়েছে, খারেজীদের অনুসারীদলের আবির্ভাব অব্যাহত থাকবে এবং তাদের সর্বশেষ দলের আত্মপ্রকাশ ঘটবে কানা দাজ্জালের সাথে। এতে অত্যন্ত স্পষ্টভাবে প্রতিয়মান হয় যে, বাতিল ফিরকার আবির্ভাব অব্যাহত থাকবে কেয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত। অপরদিকে ‘হাদিসের আলোকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত’ অধ্যায় কেয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত একটি দল হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে’ বলেও বর্ণিত হয়েছে। বাস্তব অবস্থা, পাঁচশত হিজরীর মধ্যেই ভ্রান্ত দলের সংখ্যা বাহাত্তর অতিক্রম করেছে। এর পরবর্তী সময় আরো অনেক বাতিল দল উপদলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। এমতাবস্থায় কোন বাতিল ফিরকা নিজের ভ্রান্তি ও গোমরাহী ধামাচাপা দেয়ার মানসে একথা বলা, ‘হাদিসে বর্ণিত ‘বাহাত্তর ফিরকা’ তালিকা নির্ভরযোগ্য কিতাবাদিতে বিবৃত রয়েছে। সেখানে ওহাবী, তাবলিগী, কাদিয়ানী, বাহায়ী ও মওদুদীর নাম তো নেই, সুতরাং এসব দল ভ্রান্ত নয়’ সম্পূর্ণরূপে মনগড়া বাস্তবতা বিরোধী ও হাদিসের পরিপন্থী। হাদিস বিশারদগণ ও বিজ্ঞ ইমামগণ বাতিল সম্প্রদায় কিছু মূল দল চিহ্নিত করেছেন।
ইমাম আবুল ফারাজ আবদুর রহমান ইবনে যৌযী বাগদাদী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, বেদআতী ফিরকার মূলদল ছয়টি,
(১) হারুরীয়া বা খারেজী,
(২) ক্বদরীয়া,
(৩)জাহামীয়া,
(৪)মুরজিয়া,
(৫) রাফেযীয়া,
(৬)জাবারীয়া।
আবার এগুলোর প্রত্যেকটি বার শাখায় বিভক্ত।
★খারেজীর উপদলসমূহ-
(১) আযরাকীরা,
(২) আবাযীয়া,
(৩) সালাবীয়া,
(৪)হাযেমীয়া,
(৫) খালাফীয়া,
(৬) কু’ যীয়া,
(৭) কানযীয়া,
(৮) শামরাখীয়া,
(৯)আখনাসীয়া,
(১০) মাহকামীয়া,
(১১) মু’তাযিলা (এটা বহু আলোচিত মু’তাযিলা নয়, যার প্রতিষ্ঠাতা ওয়াসিল ইবনে আতা) ও
(১২) সাইমুনীয়া।
★ক্বদরীয়া ফিরকার উপদলসমূহ-
(১) আহমারীয়া,
(২) সানাবীয়া,
(৩) মু’তাযিলা
(কিন্তু, হযরত মোল্লা আলী কারী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি মু’তাযিলাকে মূল দল হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং তাদের উপদলের সংখ্যা বিশ বলে উল্লেখ করেন; (মিরকাত শরহে মিশকাত ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২০৪),
(৪) কায়সানীয়া,
(৫)শয়তানীয়া,
(৬) শরীকীয়া,
(৭) ওয়াহাসীয়া,
(৮) রাবাভীয়া,
(৯) বাতবীয়া বা বাযীয়া ,
(১০) নাফেলীয়া,
(১১) কাসেতীয়া ও
(১২) নেযামীয়া।
★ জাহামীয়া ফিরকার উপদলসমূহ হচ্ছে-
(১) মুয়াত্তেলা,
(২) মুরাইসীয়া,
(৩)মুলতাযিকা
(৪) ওয়ারেদীয়া,
(৫) যানাদিকা,
(৬) হারাকীয়া,
(৭) মাখলুকীয়া
(৮)ফানফীয়া,
(৯) আ’রীয়া বা গায়রীয়া,
(১০) ওয়াকেফীয়া,
(১১) কবরীয়া ও
(১২)নাযিয়া।
★মুরজিয়া ফিরকার উপদলসমূহ-
(১) তারেকীয়া
(২) সালেবীয়া
(৩) রা’জীয়া
(৪)শাকীয়া,
(৫) বায়হাসীয়া,
৬) আসলীয়া,
(৭) মুসতাশনীয়া,
(৮) মুশাব্বেহা (মোল্লা আলী কারী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এ ফিরকাটিকে মূল ফিরকা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন- মিরক্বাত ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২০৪),
(৯) হাশবীয়া,
(১০)যাহেরীয়া,
(১১) বেদঈয়া ও
(১২) মনকুসিয়া।
★রাফেযীয়া ফিরকার উপদল-
(১) আলাভীয়া,
(২) আমারীয়া,
(৩) শিয়া (মোল্লা আলী কারী এ দশটিকেও মূলদল হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং এর উপদলের সংখ্যা বাইশটি বলে বর্ণনা দিয়েছেন),
(৪) ইসহাকীয়া,
(৫) নাদু’সীয়া,
(৬) ইমামীয়া,
(৭) যায়দীয়া,
(৮) আব্বাসীয়া,
(৯) মুতানাসিখা,
(১০) রাযঈয়া,
(১১) লায়েনীয়া ও
(১২) মুতারাব্বেসা।
★জাবরীয়া ফিরকার উপদল সমূহ-
(১) মুফতারীয়া,
(২) আফ আলীয়া,
(৩) মাফরুগীয়া,
(৪) নাজ্জারীয়া (এটাকেও মোল্লা আলী কারী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি।মূলদল হিসেবে উল্লেখ করেছেন),
(৫) মুবানীয়া,
(৬) কাসাবিয়া,
(৭)সাবেকিয়া,
(৮) হীয়া,
(৯) খাওফীয়া,
(১০) যিকরীয়া,
(১১) হাসানীয়া ও
(১২) মা’ঈয়া (তালবীস-এ- ইবলিস পৃষ্ঠা;২২-২৯)।
অতঃপর ইমাম ইবনে যৌযী ‘বাতেনীয়া’ নামে আরেক ফিরকা ও তার ভ্রান্তআক্বীদা ও উপদলসমূহ উল্লেখ করেছেন-
(১) ইসমাঈলিয়া,
(২) সাবঙ্গয়া,
(৩) বাবকীয়া,
(৪) মুহামেরা,
(৫) কারামাতা,
(৬) খাররাসীয়া এবং
(৭) তাগলিবীয়া।
এভাবে তিনি বিচ্ছিন্য আরো কিছু ভ্রান্তদলের নাম ও তাদের ভ্রান্ত ধারণাসমূহের কথা উল্লেখ করেছেন। এতেও প্রমাণিত হয় যে, হাদিসে বর্ণিত বাহাত্তর সংখ্যাটি আধিক্যার্থে ব্যবহৃত। তিনি উপরোল্লেখিত দল-উপদলসমূহের ভ্ৰান্ত ও কুফরী আক্বীদাসমূহ ও সেগুলোর প্রতিষ্ঠাতাদের নামসহ বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন ‘তালবীস-এ-ইবলিস’ নামক গ্রন্থে।
মুসলমানদের মধ্যে অতীতে সৃষ্ট দলগুলো সম্পর্কে এখানে সংক্ষিপ্তাকারে আলোচনা করা হলো। সরলপ্রাণ মুসলমানদের সতর্ক করা হলো। এগুলোর অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। এখানে ঐসব ভ্রান্ত দলসমূহের বিস্তারিত আলোচনা প্রয়োজন, যেগুলো বর্তমান মুসলিম বিশ্বে নিজের ভ্রান্তির কুৎসিৎ চেহারার উপর ইসলামের মুখোশ পরে সরলপ্রাণ মুসলমানদেরকে প্রতিনিয়ত ধোকা দিয়ে ঈমান-আকীদা ধ্বংস করে চলছে। বর্তমানে মুসলিম বিশ্বে যেসব বাতিল ফিরকার অস্তিত্ব বিদ্যমান সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- শিয়া, কাদিয়ানী,
ওহাবী-দেওবন্দি, তাবলিগী ও মওদুদী বা জামাতে ইসলামী । এসব দল আজ মুসলিম বিশ্বের কোথাও রাজনৈতিকভাবে, কোথাও ধর্মীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত। মুসলমানদের ঐক্য ও সংহতি বিনষ্ট করার সফল কৌশল হিসেবে অমুসলিম শক্তিগুলো মুসলমানদের মধ্যে স্থায়ী দলাদলি সৃষ্টিকেই চিহ্নিত করেছে এবং এ পর্যন্ত নেপথ্যে থেকে দলাদলি সৃষ্টি করিয়ে আসছে। ফলে, আজ বিশ্ব মুসলিমের ঈমানী ভ্রাতৃত্ব ক্রমেই হ্রাস পেয়ে শুধুমাত্র মৌখিক অবস্থানে উপনীত হয়েছে। যা আছে তাও স্বার্থ ভিত্তিক পরাশক্তির হাতের পুতুল হয়ে চলেছে। এর পেছনের কারণগুলো খতিয়ে দেখলে মুসলমানদের মধ্যকার আকীদাগত বিভেদই মূল কারণ হিসেবে সুস্পষ্ট হবে। মুসলিম দেশগুলোর ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পৃথক পৃথক আক্বীদা ও বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়ে পরস্পর বিরোধী আক্বীদা-বিশ্বাসের শিক্ষা দিয়ে মুসলিম মিল্লাতের মধ্যকার বিভেদ প্রসারিত করে চলেছে। অপরদিকে এর প্রভাব পড়ছে সাধারণ মুসলমানদের উপর। ফলে, সাধারণ মুসলমানগণও আক্বীদাগত দিক থেকে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানে বিভক্ত হয়ে আছে।বিশ্বের অপরাপর মুসলিম দেশগুলোর কথা বাদ দিলেও পাক-ভারত উপমহাদেশের মুসলমানদের বেলায় এ বাস্তবতাকে অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। মুসলমানদের এধরণের পরস্পর বিরোধী আক্বীদা-বিশ্বাস পর্যালোচনা করলে কারো মনে এ প্রশ্নের উদ্ভব হতে পারে যে, আসলে কি ইসলামের কোন সঠিক রূপরেখা, আক্বীদা ও বিশ্বাস নেই?