কিতাবঃ ইমাম আহমদ রযা (রহঃ)’র জীবনী

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

আমার আক্বা আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, ওলীয়ে নেয়ামত, আযিমুল বারকাত, আযিমুল মারতাবাত, পারওয়ানায়ে শময়ে রিসালাত, মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত, হামিয়ে সুন্নাত, মাহিয়ে বিদ্আত, আলিমে শরীয়াত, পীরে তরীকত, বায়িছে খাইর ও বরকত, হযরত আল্লামা মাওলানা আল হাজ্ব, আল হাফিজ, আল ক্বারী, শাহ্ ইমাম আহমদ রযা খান ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ১০ ই শাওয়াল ১২৭২ হিজরী, ১৪ই জুন ১৮৫৬ ইং রোজ শনিবার যোহরের সময় বেরেলী শহরের যাচুলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জন্ম বৎসরের হিসাবে তাঁর ঐতিহাসিক নাম ‘আল মুখতার’ (১২৭২ হিঃ) (হায়াতে আ’লা হযরত, ১ম খন্ড, ৫৮ পৃষ্ঠা, মাকতাবাতুল মদীনা, বাবুল মদীনা, করাচী)

আমার আক্বা আ’লা হযরত ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ নিজের জন্ম সাল ২৮ পারার সূরাতুল মুজাদালার ২২ নং আয়াত থেকে বের করেন। এই আয়াতে করীমার ‘ইলমে আবজাদ’ মোতাবেক সংখ্যা ১২৭২ আর হিজরী সাল মোতাবেক এটাই তাঁর জন্ম সাল। যেমন: মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত “মলফুজাতে আ’লা হযরত” এর ৪১০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে: জন্মের তারিখ সমূহের আলোচনা ছিল এবং এর উপর (সায়্যিদী আ’লা হযরত বলেন: আল্লাহ তাআলার জন্য সকল প্রশংসা আমার জন্ম তারিখ এই আয়াতে করীমায় বিদ্যমান:

ﺃُﻭﻟَٰﺌِﻚَ ﻛَﺘَﺐَ ﻓِﻲ ﻗُﻠُﻮﺑِﻬِﻢُ ﺍﻟْﺈِﻳﻤَﺎﻥَ ﻭَﺃَﻳَّﺪَﻫُﻢ ﺑِﺮُﻭﺡٍ ﻣِّﻨْﻪُ আয়াত:

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ- “ এরা ঐসব লোক যাদের অন্তরগুলোতে আল্লাহ ঈমান অংকিত করে দিয়েছেন এবং তাঁর নিকট থেকে রূহ দ্বারা তাঁদের সাহায্য করেছেন ।”

তাঁর নাম মোবারক ছিল মুহাম্মদ। কিন্তু তাঁর পিতামহ তাঁকে আহমদ রযা বলে ডাকতেন বিধায় তিনি ঐ নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেন।

সাধারণত প্রত্যেক যুগের বাচ্চাদের অবস্থা আজকাল বাচ্চাদের অবস্থার মত যে, সাত আট বৎসর পর্যন্ত তাদের কোন কথার হুশ থাকেনা এবং তারা কোন বিষয়ের চুড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছতে পারে না। তবে আলা হযরত ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ এর শৈশবকাল খুবই গুরুত্ব বহনকারী ছিল। শৈশবকাল এবং কম বয়সের বুদ্ধিমত্তা ও স্মরণশক্তির অবস্থা এরকম ছিল যে, মাত্র সাড়ে ৪ বছরের ছোট্ট বয়সে কুরআন শরীফ সম্পূর্ণ নাযেরা পড়ার নেয়ামত লাভে ধন্য হন, ৬ বছর বয়সে রবিউল আওয়ালের পবিত্র মাসে মিম্বরে আরোহণ করে মিলাদুন্নবী ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ বিষয়বস্তুর উপর এক বড় ইজতিমাতে চমৎকার বয়ান করে ওলামায়ে কেরাম এবং মাশায়েখে ইজামদের প্রশংসা এবং বাহবাহ অর্জন করেন। এই বয়সে তিনি বাগদাদ শরীফের ব্যাপারে দিক নির্ধারণ করে নেন, আর সারা জীবন হুযুর গাওসে আযম ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ (অর্থাৎ গাওসে আযমের মোবারক শহরের) দিকে কখনো পাদ্বয়কে প্রসারিত করেননি। নামাযের প্রতি তাঁর খুবই ভালবাসা ছিল। এমনকি পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামাআত সহকারে তাকবিরে উলাকে সংরক্ষণ করে মসজিদে গিয়ে আদায় করতেন। যখনই কোন মহিলা সামনে পড়ে যেত তবে তৎক্ষণাৎদৃষ্টিকে নত করে মাথা ঝুঁকিয়ে নিতেন। যেন সুন্নাতে মুস্তফা ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ এর প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল, যেটার বহিঃপ্রকাশ করতে গিয়ে হুযুর পুরনূর ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ এর মহান খেদমতে এভাবে সালাম পেশ করেন:

“নিচি আখো কি শরম ও হায়া পর দরূদ

উঁচি বিনি কি রিফআত পে লাখো সালাম।”

আ’লা হযরত ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ছোটবেলায় এমন তাকওয়া অর্জন করেছিলেন যে, চলার সময় পাদ্বয়ের আওয়াজও শুনা যেতনা। সাত বছর বয়স থেকেই রমজানুল মোবারক মাসের রোযা রাখা শুরু করেন। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ৩০তম খন্ড, ১৬ পৃষ্ঠা)

জনাব সায়্যিদ আইয়ুব আলী শাহ সাহেব ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ বর্ণনা করেন: শৈশব কালে তিনি ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ কে পবিত্র কুরআন শিক্ষা দেয়ার জন্য জনৈক মাওলানা সাহেব তার ঘরে আসতেন। একদিনের বর্ণনা: মাওলানা সাহেব পবিত্র কুরআনের কোন আয়াতে করীমার কোন এক শব্দের হরকত তাঁকে বারবার বলার পরও তাঁর ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ মুখ থেকে তা বের করতে পারলেন না, বরং তাঁর মুখ মোবারক থেকে মাওলানা সাহেব যেরূপ বলেছিলেন তার বিপরীতই বের হল। মাওলানা সাহেব শব্দটিতে ‘যবর’ উচ্চারণ করলেন কিন্তু। আ’লা হযরত ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ তাতে “যের” উচ্চারণ করলেন। এ অবস্থা দেখে আ’লা হযরতের ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ পিতামহ হযরত মাওলানা রযা আলী খান সাহেব ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ তাঁকে (আ’লা হযরত) ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ তাঁর নিকট ডাকলেন এবং কুরআন শরীফ আনার জন্য বললেন। তিনি কুরআন শরীফ খুলে দেখলেন যে, উক্ত শব্দে কোন লিখক ভুলে যেরের স্থানে যবর লিখে দিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে আ’লা হযরতের পবিত্র জবানে যা উচ্চারিত হয়েছিল, তাই সঠিক ছিল। তাঁর পিতামহ তাঁকে (আ’লা হযরতকে) জিজ্ঞাসা করলেন: “বৎস! মাওলানা সাহেব তোমাকে যেরূপ বলেছিলেন তুমি সেরূপ বলনি কেন? আরজ করলেন: “আমি মাওলানা সাহেবের মত উচ্চারণ করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু আমি আমার জবানকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি।” আ’লা হযরত ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ নিজেই বলেছেন যে: আমার উস্তাদ যার থেকে আমি ইবতেদায়ী কিতাব সমূহ পড়তাম। যখন আমাকে সবক পড়ানো হত। আমি এক দু’বার দেখে কিতাব বন্ধ করে দিতাম। যখন সবক শুনতেন তখন অক্ষরে অক্ষরে শব্দে শব্দে শুনিয়ে দিতাম। প্রতিদিন এই অবস্থা দেখে তিনি খুবই আশ্চর্য হতেন। তিনি একদিন আমাকে বললেন: “প্রিয় বৎস আহমদ! তুমি বল, তুমি কি মানুষ না জ্বিন? আমার পড়াতে দেরী হয় কিন্তু তোমার মুখস্থ করতে দেরী হয় না!” তিনি ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ বললেন: “আল্লাহর তাআলার জন্য সকল প্রশংসা, আমি মানুষ। তবে আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ লাভে ধন্য হয়েছি।” (হায়াতে আ’লা হযরত, ১ম খন্ড, ৬৮ পৃষ্ঠা, মাকতাবাতুল মদীনা, বাবুল মদীনা, করাচী)

আল্লাহ তা‘আলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁর সদকায় আমাদের বিনা হিসাবে মাগফিরাত হোক।

ﺍٰﻣِﻴﻦ ﺑِﺠﺎ ﻩِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰِّ ﺍﻟْﺎَﻣﻴﻦ ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ

ﺻَﻠُّﻮﺍ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﺤَﺒِﻴﺐ ! ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﻋَﻠﻰ ﻣُﺤَﻤَّﺪ

আমার আক্বা আ’লা হযরত ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ এর বয়স যখন মাত্র তের বৎসর দশ মাস চারদিন হয়েছিল, তখন তিনি তাঁর পিতা বিখ্যাত তর্কশাস্ত্রবিদ মাওলানা নকী আলী খান ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ এর নিকট দুনিয়ার যাবতীয় প্রচলিত জ্ঞানের শিক্ষা সম্পন্ন করে তাঁর নিকট থেকে শিক্ষা সমাপনী সনদ গ্রহণ করেন। যেদিন সনদ গ্রহণ করেন, সে দিনই তিনি একটি প্রশ্নের জবাবে ফতোয়া লিখে জীবনে প্রথম ফতোয়া দানের কৃতিত্ব অর্জন করেন। তাঁর লিখিত ফতোয়াটি সঠিক ও নির্ভূল দেখে তাঁর পিতা তাঁকে মসনাদে ইফতা তথা ফতোয়া দানের আসনে সমাসীন করান এবং তাঁকে ফতোয়া দানের ক্ষমতা অর্পন করেন। অতঃপর তিনি তাঁর ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ শেষ জীবন পর্যন্ত ফতোয়া দিতে থাকেন। (হায়াতে আলা হযরত, ১ম খন্ড, ২৭৯ পৃষ্ঠা, মাকতাবাতুল মদীনা, বাবুল মদীনা, করাচী) আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হোক, আর তাঁর সদকায় আমাদের বিনা হিসাবে ক্ষমা হোক।

ﺍٰﻣِﻴﻦ ﺑِﺠﺎ ﻩِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰِّ ﺍﻟْﺎَﻣﻴﻦ ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ

ﺻَﻠُّﻮﺍ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﺤَﺒِﻴﺐ ! ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﻋَﻠﻰ ﻣُﺤَﻤَّﺪ

আল্লাহ তাআলা তাঁকে অসামান্য জ্ঞানের অধিকারী করেছিলেন। তিনি ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ

কমবেশি পঞ্চাটির বিষয়ে কলমধারণ করেছেন এবং অনেক নামীদামী কিতাব রচনা করেছেন। প্রত্যেক শাস্ত্রে তাঁর ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ প্রচুর পারদর্শিতা ছিল। সময় নির্ণয় বিদ্যায় তিনি এতই পারদর্শিতা অর্জন করেছিলেন যে, দিনের বেলায় সূর্য এবং রাত্রি বেলায় নক্ষত্র দেখে তিনি নির্ভূলভাবে সময় নিরূপণ করতে পারতেন। এতে কখনও এক মিনিটেরও কমবেশী হত না। গণিত শাস্ত্রে তিনি অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী ছিলেন।

কথিত আছে যে, আলিগড় বিশ্ব বিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ডক্টর জিয়া উদ্দিন, যিনি গণিত শাস্ত্রে বিদেশী ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন এবং স্বর্ণ পদকও লাভ করেছিলেন। একদা কোন এক গাণিতিক সমস্যার সমাধানের জন্য আ’লা হযরত ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ এর দরবারে হাজির হন। আ’লা হযরত ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ তাঁকে বললেন: “আপনার প্রশ্নটা বলুন।” তিনি বললেন: “প্রশ্নটা এতই জটিল যে, এ অবস্থায় সহজভাবে তা বলা যাবে না।” আ’লা হযরত ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ তখন বললেন: “তাহলে বিস্তারিতভাবেই বলুন।” ভাইস চ্যান্সেলর সাহেব আ’লা হযরত ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ কে প্রশ্নটা বিস্তারিত বললেন। প্রশ্নটা শুনে আ’লা হযরত ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ

সাথে সাথেই তার সন্তোষ জনক উত্তর দিয়ে দিলেন। তাঁর উত্তর শুনে ভাইস চ্যান্সেলর সাহেব কিছুক্ষণ অবাক হয়ে রইলেন। তারপর তাঁকে বললেন: “হযরত! আমি এ প্রশ্নের সমাধানের জন্য জার্মান যেতে ইচ্ছা করেছিলাম, কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্ম বিভাগের অধ্যাপক মাওলানা সায়্যিদ সুলায়মান আশরাফ সাহেব আমাকে সমস্যাটার সমাধানের জন্য প্রথমে আপনার নিকট আসতে বলায় আমি এখানে আসলাম। আপনার উত্তর শুনে মনে হচ্ছে, আপনি সমস্যাটার সমাধান যেন বইতে নিজ চোখে দেখতে পাচ্ছেন।” আ’লা হযরতের এমন একটি জটিল প্রশ্নের জবাবে ডক্টর সাহেব আনন্দিত হয়ে গেলেন। আলাপ শেষে তিনি তাঁর নিকট থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। তাঁর জ্ঞানের গভীরতা ও ব্যক্তিত্বে তিনি এতই মুগ্ধ হয়ে গেলেন যে, মুখে দাড়ি রেখে দিলেন এবং নামায রোযার অনুসারী হয়ে যান। (হায়াতে আ’লা হযরত, ১ম খন্ড, ২২৩, ২২৯ পৃষ্ঠা, মাকতাবাতুল মদীনা, বাবুল মদীনা, করাচী)

আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হোক আর তাঁর সদকায় আমাদের বিনা হিসাবে ক্ষমা হোক।

ﺍٰﻣِﻴﻦ ﺑِﺠﺎ ﻩِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰِّ ﺍﻟْﺎَﻣﻴﻦ ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ

গণিত শাস্ত্র ছাড়াও আমার আক্বা আ’লা হযরত

ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ তাকছীর বিদ্যা, জ্যোতি বিদ্যা ও জুফার বিদ্যা ইত্যাদিতেও অনেক জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন।

ﺻَﻠُّﻮﺍ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﺤَﺒِﻴﺐ ! ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﻋَﻠﻰ ﻣُﺤَﻤَّﺪ

হযরত আবু হামিদ সায়্যিদ মুহাম্মদ মুহাদ্দিস কচুচবী ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ বর্ণনা করেন: যখন দারুল ইফ্তায় কাজ করার ধারাবাহিকতায় আমি বেরেলী শরীফে অবস্থান করছিলাম। তখন রাতদিন এমন ঘটনাবলী সামনে আসত যে, আ’লা হযরত ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ এর হাজির জবাব প্রদানে লোকেরা অবাক হয়ে যেত। ঐ সব হাজির জবাব সমূহের মধ্যে অবাক করার মত ঘটনাবলী বিখ্যাত হাজির জবাব ছিল। যার উদাহরণ শুনা যায় না। যেমন: প্রশ্ন আসল, দারুল ইফতায় কর্মরত ইসলামী ভাইয়েরা পড়ল, আর তাদের এমন মনে হল যে, নতুন ধরণের ঘটনা সামনে এসেছে এবং উত্তর জুয্ইয়া আকৃতিতে মিলবেনা। ফোকাহায়ে কেরামদের সাধারণ নিয়মাবলী থেকে তার সমাধান বের করতে হবে। (অর্থাৎ ফোকাহায়ে কেরামদের বর্ণিত নিয়মাবলী থেকে মাসআলা বের করতে হবে।

আ’লা হযরত ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ এর খিদমতে হাজির হয়ে আরজ করল: নতুন নতুন অদ্ভুত ধরণের প্রশ্নাবলী আসছে! এখন আমরা কোন পদ্ধতি অবলম্বণ করব? তিনি ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ বলেন: এটা তো অনেক পুরাতন প্রশ্ন! ইবনে হুমাম “ফাতহুল ক্বদিরের” অমুক পৃষ্ঠায়, ইবনে আবেদীন “রদ্দুল মুহতারের” অমুক খন্ডে এবং অমুক পৃষ্ঠায় লিখেছেন। “ফতোওয়ায়ে হিন্দিয়ায়” “খাইরিয়াতে” এই ইবারত পরিস্কারভাবে বিদ্যমান আছে। আর যখনই কিতাব সমূহ খুলে দেখা হল, তখন পৃষ্ঠা, লাইন এবং বর্ণিত ইবারতে এক নুকতাতেও পার্থক্য ছিল না। এই খোদা প্রদত্ত অসাধারণ মেধা ও প্রতিভা, পারদর্শীতা ওলামায়ে কেরামদের সর্বদা হতবাক করত। (হায়াতে আ’লা হযরত, ১ম খন্ড, ২১০ পৃষ্ঠা)

আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হোক, আর তাঁর সদকায় আমাদের বিনা হিসাবে মাগফিরাত হোক।

ﺍٰﻣِﻴﻦ ﺑِﺠﺎ ﻩِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰِّ ﺍﻟْﺎَﻣﻴﻦ ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ

“কিছ্ তরেহ ইত্নে ইলম কে দরয়া বাহা দিয়ে

উলামায়ে হক্ব কি আকল তো হায়রান হে আজ ভি।”

ﺻَﻠُّﻮﺍ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﺤَﺒِﻴﺐ ! ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﻋَﻠﻰ ﻣُﺤَﻤَّﺪ

হযরত সায়্যিদ আইয়ুব আলী সাহিব ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ বর্ণনা করেন: “একদিন আ’লা হযরত ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ

বলেন: “আমার সম্পর্কে কিছু অনবহিত লোক আমার নামের আগে হাফেজ লিখে থাকেন, অথচ আমি পবিত্র কুরআনের হাফেজ নই।” সায়্যিদ আইয়ুব আলী সাহেব ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ আরও বর্ণনা করেন, “যেদিন আ’লা হযরত ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ এ কথা বলেছেন, সেদিন থেকে তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ মুখস্থ করা শুরু করে দেন এবং ইশার নামাযের জন্য অযু করার পর থেকে জামাআত শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি কুরআন শরীফ মুখস্থ করার জন্য সময় নির্ধারণ করে নেন। এভাবে তিনি দৈনিক এক পারা করে মাত্র ত্রিশ দিনে ত্রিশ পারা কুরআন শরীফ হিফজ করা শেষ করেন। এক জায়গায় তিনি

ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ বলেন যে, আমি কুরআন শরীফ ধারাবাহিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে মুখস্থ করি আর তা এজন্য যে, ঐসব আল্লাহর বান্দার কথা (যারা আমার নামের আগে হাফেজ লিখে দেয়) যেন ভূল প্রমাণিত না হয়। (হায়াতে আ’লা হযরত, ১ম খন্ড, ২০৮ পৃষ্ঠা, মাকতাবাতুল মদীনা, বাবুল মদীনা, করাচী)

আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হোক, আর তাঁর সদকায় আমাদের বিনা হিসাবে মাগফিরাত হোক।

ﺍٰﻣِﻴﻦ ﺑِﺠﺎ ﻩِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰِّ ﺍﻟْﺎَﻣﻴﻦ ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ

ﺻَﻠُّﻮﺍ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﺤَﺒِﻴﺐ ! ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﻋَﻠﻰ ﻣُﺤَﻤَّﺪ

আমার আক্বা আ’লা হযরত ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ এর আপাদমস্তক রাসূল প্রেমের বাস্তব নমুনা ছিল। রাসূল ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ এর প্রশংসায় লিখিত তাঁর বিখ্যাত কাব্য গ্রন্থ “হাদায়েকে বখশিশ শরীফ” প্রিয় নবী, হুযুর করীম ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ এর প্রতি তাঁর অগাধ ভালবাসার সাক্ষ্য বহন করে। তাঁর ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ কলমের নিব নয় বরং অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে নির্গত উক্ত কাব্য গ্রন্থের প্রতিটি চরণ আক্বা ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ এর প্রতি তাঁর নজিরবিহীন ভালবাসার প্রমাণ দেয়। তিনি ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ কখনও দুনিয়ার রাজা বাদশাহ, আমীর ওমরাহ ও সম্রাটের সম্মানে বা প্রশংসায় কোন কবিতা রচনা করেন নি। কেননা তিনি রাসূল ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ এর আনুগত্য ও দাসত্বকে মনে প্রাণে কবুল করে নিয়েছিলেন। এতে উচ্চ পর্যায়ে পৌছেছিলেন। তিনি তাঁর এক কবিতায় রাসূল ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ এর প্রতি তাঁর আনুগত্য ও দাসত্বকে এভাবে বর্ণনা করেছেন:

উনহে জানা উনহে মানা ন রাখা গাইর ছে কাম,

লিল্লাহিল হামদ মে দুনিয়া ছে মুসলমান গেয়া।

একদা “নানপারা” (জিলা বেহরাইচ, ইউপি, হিন্দ) প্রশাসনের নবাবের প্রশংসা ও গুন কীর্তনে তৎকালীন কবি সাহিত্যিকগণ অনেক কবিতা রচনা করে। কিছু লোক এসে আ’লা হযরত ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ কেও নবাবের প্রশংসায় কোন কবিতা লিখার জন্য আবেদন জানায় যে, হযরত! আপনিও নবাব সাহেবের প্রশংসায় কোন কবিতা লিখে দিন। তিনি ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ তাদের এ আবেদনের জবাবে একটি না’ত শরীফ লিখেন, যার প্রথম চরণ (মাত্লা*) নিম্নরূপ-

ওহ কামালে হুসনে হুযুর হে কে গুমানে নকছে জাহা নেহী,

য়েহী ফুল খার ছে দূর হে য়েহী শামআ হে কে ধোঁয়া নেহী।

কঠিন শব্দাবলীর অর্থ: কামাল= পরিপূর্ণ হওয়া, নকছ= অপূর্ণতা, ত্রুটি, খার= কাটা

কালামে রযার ব্যাখ্যা: আমার আক্বা ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর সৌন্দর্য পরিপূর্ণতার স্তর পর্যন্ত পৌছেছে। অর্থাৎ প্রত্যেক দিক থেকে পরিপূর্ণ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ। এতে কোন ত্রুটি হওয়া তো দূরের কথা, ত্রুটির কল্পনাও করা যায় না। প্রত্যেক ফুলের ডালে কাটা থাকে কিন্তু আমেনার বাগানের এটি একটিই সুবাসিত ফুল হুযুর ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এমন যে, যেটা কাঁটা থেকে পবিত্র। প্রত্যেক মোমবাতি এটা ত্রুটি যে, সেটা ধোয়া বের করে তবে তিনি বাজমে রিসালাতের এমন আলোকিত প্রদীপ যে, ধোঁয়া সমূহ অর্থাৎ প্রত্যেক প্রকারের দোষত্রুটি থেকে পবিত্র।

——————–

*গজল বা কসিদার শুরুর শের যাতে উভয় মিসরার/পংক্তির মধ্যে মিল রয়েছে, তাকে মাত্লা বলা হয়।

————————–

অতঃপর কবিতার শেষ চরণে (মাক্তায়*) তিনি অতি সূক্ষ্মভাবে “নানপারা” প্রশাসনের নবাবের সমালোচনা করেন। চরণটি নিম্নরূপ:

করো মদহে আহলে দুওয়াল রযা পড়ে ইস বালা মে মেরী বালা,

মে গদা হো আপনে করীম কা মেরা দ্বীন পারায়ে না নেহী।

কঠিন শব্দাবলীর অর্থ: মদ্হা= প্রশংসা, দুওয়াল= সম্পদ জমা করা, পারায়ে না= রুটির টুকরা।

কালামে রযার ব্যাখ্যা: তিনি এ চরণে বুঝাতে চেয়েছেন, আমি রাজা বাদশাহ, আমীর ওমরাহদের প্রশংসা কেন করব! আমিতো উভয় জাহানের সুলতান, রহমাতুল্লিল আলামিন ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর দরবারের ভিখারী। আমার ধর্ম পারায়ে নান নয়। উর্দূতে ‘নান’ শব্দের অর্থ রুটি এবং ‘পারা’ শব্দের অর্থ টুকরা। অর্থাৎ আমার ধর্ম রুটির টুকরা নয় যে, সে জন্য সম্পদশালীদের তোষামোদ করতে থাকব।

——————–

*কালামের শেষের শের যাতে কবির কবিত্বমূলক নাম থাকে, তাকে মাকতা বলা হয়।

————————–

ﺻَﻠُّﻮﺍ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﺤَﺒِﻴﺐ ! ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﻋَﻠﻰ ﻣُﺤَﻤَّﺪ

আমার আক্বা আ’লা হযরত ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ যখন দ্বিতীয়বার হজ্ব পালন করতে মদীনা শরীফ গিয়েছিলেন, তখন মদীনা শরীফে তিনি ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ রাসূল ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ এর দীদার লাভের আশায় দীর্ঘক্ষণ যাবৎ রাসূল ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ এর রওজা মোবারকের সামনে সালাত ও সালাম পাঠ করতে থাকেন। কিন্তু প্রথম রাতে রাসূল ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ এর দীদার লাভের সৌভাগ্য ছিল না। তাই তিনি সেখানে বসে রাসূলে আকরাম ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ এর শানে প্রশংসামূলক গজল লিখেছিলেন; যার প্রথম চরণে তিনি রাসূল ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ এর দীদার লাভের আকাঙ্খা করেছিলেন। চরণটি নিম্নরূপ:

ওহ ছুয়ে লালা যার পিরতে হে,

তেরে দিন এ বাহার পিরতে হে।

কালামে রযার ব্যাখ্যা: হে (বাহার) বসন্ত আন্দোলিত হও! এজন্য যে, তোমার বসন্তের উপর বসন্ত আগমণ কারী। ঐ দেখ! মদীনার তাজেদার ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ লালা যারের দিকে অর্থাৎ বাগানের দিকে তাশরীফ আনছেন!

কবিতার শেষ চরণে নিজের বিনয় ও নম্রতা এবং অসহায়ত্বের চিত্র এভাবে তুলে ধরেন:

কুয়ী কিউ পুছে তেরী বাত রযা,

তুজ ছে শায়দা হাজার পিরতে হে।

(এ চরণের ২য় লাইনে আ’লা হযরত ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ বিনয় প্রকাশ করে নিজের জন্য কুকুর শব্দ ব্যবহার করেছেন। কিন্তু লিখক আ’লা হযরত ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ এর প্রতি সম্মান প্রদর্শনার্থে কুকুরের জায়গায় শায়দা বা ‘আশিক’ লিখে দিয়েছেন।)

কালামে রযার ব্যাখ্যা: এই শেষ চরণে নবী প্রেমিক ছরকারে আ’লা হযরত চরম বিনয় প্রকাশ করতে গিয়ে নিজেকে নিজে বলতে লাগলেন: হে আহমদ রযা! তুমি কে! আর তোমার বাস্তবতায় বা কি! তোমার মত তো হাজার হাজার মদীনার কুকুর গলী সমূহে এদিক সেদিক ঘুরাফেরা করছে।

এ গজল আরজ করার পর তিনি ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ এর দীদার লাভের অপেক্ষায় আদবের সাথে বসে রইলেন। হঠাৎ তাঁর ভাগ্য প্রসশ্ত হয়ে গেল। জাগ্রত অবস্থায় নিজ চোখে রাসূল ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ এর দীদার লাভের সৌভাগ্য তাঁর নসীব হয়ে গেল।

আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হোক, আর তাঁর সদকায় আমাদের বিনা হিসাবে ক্ষমা হোক।

ﺍٰﻣِﻴﻦ ﺑِﺠﺎ ﻩِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰِّ ﺍﻟْﺎَﻣﻴﻦ ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ

ﺳُﺒْﺤٰﻦَ ﺍﻟﻠﻪِ ﻋَﺰَّﻭَﺟَﻞ ! সে মহান চোখগুলোর জন্য আমাদের জীবন উৎসর্গ, যে দুই চোখ জাগ্রত অবস্থায় রাসূল ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ এর দীদার লাভে ধন্য হয়েছিল। কেনই বা ধন্য হবে না? তাঁর ভিতর তো নবী করীম, রউফুর রহীম ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর ভালবাসায় পরিপূর্ণ ছিল। তিনি নবী প্রেমে এতই নিবেদিত প্রাণ ছিলেন, যা দুনিয়ার ইতিহাসে খুবই বিরল। এজন্যই তো তিনি ‘ফানা ফির রাসূল’ এর উচ্চস্থানে সমাসীন ছিলেন। তিনি যে রাসূল ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর ভালবাসায় নিবেদিত প্রাণ ছিলেন, রাসূলে আকরাম ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর শানে লিখিত কবিতাই তার বাস্তব প্রমাণ।

ﺻَﻠُّﻮﺍ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﺤَﺒِﻴﺐ ! ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﻋَﻠﻰ ﻣُﺤَﻤَّﺪ

আমার আক্বা আ’লা হযরত ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ বলতেন: “কেউ যদি আমার কলিজাকে দুই টুকরো করে দেয়, তাহলে এক টুকরোতে ﻻ ﺍﻟﻪ ﺍﻻ ﺍﻟﻠﻪ এবং অপর টুকরোতে ﻣﺤﻤﺪ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ লিখিত পাবেন।” (সাওয়ানেহে ইমাম আহমদ রযা, ৯৬ পৃষ্ঠা, মাকতাবায়ে নূরীয়া রযবীয়া, সক্কর)

তাজেদারে আহলে সুন্নাত, শাহজাদায়ে আ’লা হযরত, মুফতিয়ে আজম মাওলানা মুস্তফা রযা খান ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ তাঁর রচিত ‘সামানে বখশিশে’ উল্লেখ করেছেন যে:

খোদা এক পর হো তো এক পর মুহাম্মদ,

আগর কলব আপনা দু পারা করো মে।

সমসাময়িক আলিমদের মতে, তিনি বাস্তবিকই একজন ‘ফানা ফির রাসূল’ তথা রাসূল ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর ভালবাসায় উৎসর্গীত ছিলেন। তিনি অধিকাংশ সময়ই রাসূল ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর বিচ্ছেদ বেদনায় কাতর থাকতেন এবং কান্না করতেন। রাসূল ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর শানে পেশাদার বেয়াদবদের বেয়াদবীমূলক লিখা দেখলে তাঁর দু’চোখ থেকে অশ্রুধারা প্রবাহিত হত। সাথে সাথে তিনি দাঁতভাঙ্গা জাওয়াবের মাধ্যমে প্রিয় নবী, হুযুর ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর শানে বেয়াদবদের লিখাকে দৃঢ়ভাবে খন্ডন করতেন। তাঁর সমুচিত জবাবে বেয়াদবরা রাগের আগুনে দগ্ধ হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে বেয়াদবীপূর্ণ ও ধৃষ্টতাপূর্ণ উক্তি করতে থাকত এবং তাঁর বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ লিখা লিখত। তিনি ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ অধিকাংশ সময়ই এর উপর গর্ব করতেন যে, আল্লাহ তাআলা আমাকে এ যুগে রহমাতুল্লিল আলামীন ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর মান সম্মান রক্ষার জন্য ঢাল স্বরূপ প্রেরণ করেছেন। আমি সে ঢাল এভাবেই প্রয়োগ করতাম যে, আমি বেয়াদবদের লিখার সমুচিত জবাব দিতাম এবং রাসূল ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর শানে তাদের বেয়াদবীপূর্ণ উক্তিগুলো দৃঢ়ভাবে খন্ডন করতাম, যাতে এর জবাবে বেয়াদবরা রাগান্বিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে লেখালেখী ও সমালোচনায় ব্যস্ত হয়ে যায় আর তারা ঐ সময় পর্যন্ত রাসূল ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর শানে বেয়াদবী ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ থেকে বেঁচে থাকবে। তিনি তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘হাদায়েকে বখশিশ শরীফে বর্ণনা করেছেন:

করো তেরে নাম পে জা ফিদা না বস এক জা দু জাহা ফিদা,

দু জাহা ছে ভি নেহী জি ভরা করোঁ কিয়া করোড়ো জাহা নেহী।

তিনি গরীব ও নিঃস্বদের কখনও খালি হাতে ফেরত দিতেন না। সর্বদা তিনি গরীব ও অভাবীদেরকে সহযোগীতা করতেন এবং তাদেরকে অকাতরে দান করতেন। এমনকি তিনি তাঁর জীবনের শেষ মুহূর্তেও তাঁর বন্ধু বান্ধব এবং আত্মীয় স্বজনকে ওসিয়ত করেন যে, “অভাবীদের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখবে, গরীবদের সন্তুষ্টির জন্য তাদেরকে নিজের ঘর থেকে উন্নত ও সুস্বাদু খাবার খাওয়াবে, কোন ফকীরকে কখনও কটু কথা বলবে না এবং তাদেরকে কখনও ধমক দিবে না।” তিনি অধিকাংশ সময়ই লিখনীর কাজে নিয়োজিত থাকতেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের সময় মসজিদে হাজির হতেন। সর্বদা তিনি জামাআতের সাথে নামায আদায় করেন। তিনি

ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ খুবই স্বল্প আহার করতেন।

আমার আক্বা আ’লা হযরত ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ মিলাদ শরীফের মাহফিলে জিকরে বিলাদত শরীফের সময় শুধুমাত্র সালাত ও সালাম পড়ার জন্য দাঁড়াতেন বাকী শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আদব সহকারে দু’জানু হয়ে বসে থাকতেন। এভাবে ওয়াজ করতেন। চার, পাঁচ ঘন্টা দু’জানু হয়েই মিম্বর শরীফেই বসা থাকতেন। (সাওয়ানেহে ইমাম আহমদ রযা, ১১৯ পৃষ্ঠা। হায়াতে আ’লা হযরত, ১ম খন্ড, ৯৮ পৃষ্ঠা)

হায়! আমরা আ’লা হযরতের গোলামদেরও যদি কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা ও শুনার সময় এমনকি ইজতিমায়ে জিকর ও না’ত, সুন্নাতে ভরা ইজতিমা সমূহ, মাদানী মুযাকারা সমূহ, দরস ও মাদানী হালকা সমূহ ইত্যাদিতে আদব সহকারে দু’জানু হয়ে বসার সৌভাগ্য নছীব হত!

তিনি ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ঘুমানোর সময় হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলকে শাহাদাত আঙ্গুলের সাথে মিলিয়ে ঘুমাতেন, যাতে আঙ্গুল দ্বারা ‘আল্লাহ’ শব্দ গঠিত হয়। তিনি ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ কখনও পা প্রসারিত করে ঘুমাননি বরং ডান কাত হয়ে শুয়ে উভয় হাতকে যুক্ত করে মাথার নিচে রাখতেন আর পা মোবারক গুলোকে জড়ো করে ঘুমাতেন, যাতে ঘুমানোর সময় তাঁর শরীর দ্বারা ‘মুহাম্মদ’ শব্দ গঠিত হয়। (হায়াতে আ’লা হযরত, ১ম খন্ড, ৯৯ পৃষ্ঠা, মাকতাবাতুল মদীনা, বাবুল মদীনা, করাচী) এ রকমই ছিল আল্লাহকে তালাশকারী ও মক্কী মাদানী আক্বা ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর প্রকৃত প্রেমিকদের চালচলনের ধরণ।

নামে খোদা হে হাত মে নামে নবী হে জাত মে

মোহরে গুলামি হে পড়ী, লিখে হুয়ী হে নামে দু।

ﺻَﻠُّﻮﺍ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﺤَﺒِﻴﺐ ! ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﻋَﻠﻰ ﻣُﺤَﻤَّﺪ

জনাব সায়্যিদ আইয়ুব আলী শাহ্ সাহেব ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ বলেন: একদা আমার আক্বা আ’লা হযরত ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ রেলযোগে ‘ফিলিবেত’ থেকে বেরেলী যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে নওয়াবগঞ্জ স্টেশনে শুধু দুই মিনিটের জন্য ট্রেন থামে। তখন মাগরিবের সময় হয়ে গিয়েছিল। তিনি ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ট্রেন থামতেই তাকবীর ইকামত দিয়ে ট্রেনের মধ্যেই নিয়্যত বেঁধে নিলেন। প্রায় পাঁচজন লোক ইকতিদা করেন, তাদের মধ্যে আমিও ছিলাম কিন্তু এখনও জামাআতে অংশ নিতে পারিনি, আমার দৃষ্টি অমুসলিম গার্ডের উপর পড়ল, যে ফ্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে সবুজ পতাকা নাড়াচ্ছিল। আমি জানালা থেকে উকি মেরে দেখলাম যে, লাইন পরিস্কার ছিল আর ট্রেনও যেতে চাচ্ছে, কিন্তু ট্রেন চলতে সক্ষম হচ্ছিল না, আর হুযুর আ’লা হযরত পরিপূর্ণ শান্তভাবে কোন অস্থিরতা ছাড়া তিন রাকাত ফরয নামায আদায় করলেন এবং যখনই ডানদিকে সালাম ফিরালেন ট্রেন চলতে লাগল। মুকতাদিদের মুখ থেকে এমিনিতেই ﺳُﺒْﺤٰﻦَ ﺍﻟﻠﻪِ ! ﺳُﺒْﺤٰﻦَ ﺍﻟﻠﻪِ ! উচ্চারিত হতে লাগল।

এই কারামাতে গভীরভাবে চিন্তা ভাবনা করার মত কথা এটাই ছিল যে, যদি জামাআত ফ্লাটফর্মের উপর দাঁড়াত তবে এটা বলা যেত যে, গার্ড একজন বুজুর্গ হাস্তীকে দেখে ট্রেন দাঁড় করিয়ে রেখেছে, আর তা এ রকম ছিলনা বরং নামায ট্রেনের ভিতরেই আদায় করছিলেন। এই সামান্য সময়ে গার্ডের কিভাবে জানা থাকতে পারে যে, এক আল্লাহ তাআলার প্রিয় বান্দা ট্রেনের ভিতর ফরয নামায আদায় করছেন। (হায়াতে আ’লা হযরত, ৩য় খন্ড, ১৮৯-১৯০ পৃষ্ঠা)

আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হোক, আর তাঁর সদকায় আমাদের বিনা হিসাবে ক্ষমা হোক।

ﺍٰﻣِﻴﻦ ﺑِﺠﺎ ﻩِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰِّ ﺍﻟْﺎَﻣﻴﻦ ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ

ওহ কেহ উছ্ দরকা হুয়া খলকে খোদা উছ্ কি হুয়ী,

ওহ কেহ উছ দরছে ফিরা আল্লাহ উছ্ ছে ফির গেয়া।

(হাদায়িকে বখশিশ শরীফ)

কালামে রযার ব্যাখ্যা: যে কেউ ছরকারে নামদার, মদীনার তাজেদার, নবী করীম ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর অনুগত ও বাধ্যগত হল পরওয়ারদিগারের সমস্ত মাখলুক তার অনুগত হয়ে যায়, আর যে কেউ হুযুর পুরনূর ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর দরবার থেকে দূরে সরে গেল, সে ক্ষমাশীল আল্লাহ তাআলার দরবার থেকেও দূরে সরে গেল।

ﺻَﻠُّﻮﺍ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﺤَﺒِﻴﺐ ! ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﻋَﻠﻰ ﻣُﺤَﻤَّﺪ

আমার আক্বা আলা হযরত ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ বিভিন্ন বিষয়ে প্রায় এক হাজারেরও বেশী কিতাব রচনা করেছেন। তিনি ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ হিজরী ১২৮৬ থেকে ১৩৪০ হিজরী পর্যন্ত লাখো ফতোয়া দিয়েছেন।

কিন্তু আফসোস! তাঁর লিখিত সমস্ত ফতোয়া গ্রন্থাকারে এখনো ছাপা হয়নি। আর যেগুলো গ্রন্থাকারে ছাপা হয়েছে, তার নামকরণ করা হয়েছে: “ ﺍﻟْﻌَﻄَﺎﻳَﺎ ﺍﻟﻨَّﺒَﻮِﻳَّﻪ ﻓِﻰ ﺍﻟﻔَﺘَﻮَﻯ ﺍﻟﺮَّﺿَﻮِﻳَّﻪ ” তাঁর লিখিত ফতোওয়ায়ে রযবীয়া (নতুন সংস্করণ) ৩০ খন্ড, যার সর্বমোট পৃষ্ঠা ২১৬৫৬, সর্বমোট প্রশ্ন উত্তর ৬৮৪৭ টি এবং সর্বমোট রিসালা হল ২০৬টি। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া নতুন সংস্করণ, ৩০ খন্ড, ১০ পৃষ্ঠা, রেযা ফাউন্ডেশন, মারকাযুল আউলিয়া, লাহোর) তিনি তাঁর লিখিত প্রতিটি ফতোয়াকে কুরআন হাদীসের অগণিত দলিল দ্বারা প্রমাণ করেছেন। কুরআন, হাদীস, ফিকাহ, মানতিক ও ইলমে কালাম ইত্যাদিতে তিনি যে অসীম জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন, তা তাঁর ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ লিখিত ফতোয়া পড়লে সহজেই অনুধাবন করা যায়। তাঁর ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ সাতটি রিসালার নাম উল্লেখ করা হল:

(১) “ ﺳُﺒْﺤٰﻦ ﺍﻟﺴُّﺒُّﻮﺡ ﻋَﻦ ﻋَﻴﺐِ ﻛِﺬﺏِِ ﻣَﻘْﺒُﻮﺡ ” যারা সত্য আল্লাহ তাআলার বিরুদ্ধে মিথ্যা বলার অপবাদ দিয়েছে তাদের এ কথা খন্ডন করে তিনি এ রিসালাটি লিখেছেন। যা বিরুদ্ধবাদীদের নিঃশ্বাস বন্ধ করে দিয়েছে এবং লিখনী শক্তির হাড় চুরমার করে দিয়েছে।

(২) ﻣَﻘَﺎﻣِﻊ ﺍﻟﺤَﺪِﻳْﺪ (৩) ﺍﻻَﻣْﻦُ ﻭَﺍﻟﻌُﻠﻰ (৪) ﺗَﺠَﻠِّﻰ ﺍﻟﻴَﻘِﻴْﻦ (৫) ﺍﻟْﻜَﻮْﻛَﺒَﺔُ ﺍﻟﺸَّﻬَﺎ ﺑِﻴﻪ (৬) ﺳِﻞِّ ﺍﻟﺴُّﻴُﻮﻑ ﺍﻟﻬِﻨﺪِﻳﻪ (৭) ﺣَﻴَﺎﺕ ﺍﻟﻤَﻮَﺍﺕ

ইলম কা চশমা হুয়া হে মওজ যান তেহরীর মে

জব কলম তু নে উঠায়া আয় ইমাম আহমদ রযা।

(ওয়াসায়িলে বখশিশ, ৫৩৬ পৃষ্ঠা)

ﺻَﻠُّﻮﺍ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﺤَﺒِﻴﺐ ! ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﻋَﻠﻰ ﻣُﺤَﻤَّﺪ

আমার আক্বা আ’লা হযরত ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ পবিত্র কুরআন শরীফের যে অনুবাদ করেছেন, তা বর্তমানে উর্দূ ভাষায় অনুদিত কুরআন শরীফের সকল অনুবাদের মধ্যে শীর্ষস্থান দখল করে আছে। তাঁর উর্দূ ভাষায় অনুদিত কুরআন শরীফের নাম ‘কানযুল ঈমান’। তাঁর বিশিষ্ট খলিফা, সদরুল আফাযিল মাওলানা সায়্যিদ মুহাম্মদ নঈম উদ্দীন মুরাদাবাদী ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ‘খাযায়েনুল ইরফান’ নামে এবং প্রসিদ্ধ মুফাসসির হাকীমুল উম্মত হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খান ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ

‘নূরুল ইরফান’ নামে প্রান্ত টিকা লিখেছেন।

আ’লা হযরত ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ তাঁর ইন্তিকালের চার মাস বাইশদিন পূর্বে তাঁর ইন্তিকালের সংবাদ দিয়ে পবিত্র কুরআনের ২৯ পারার সূরা দাহরের ১৫নং আয়াত থেকে তাঁর ইন্তিকালের বছর বের করেন। সে

আয়াতটির ইলমে আবজদ অনুসারে সংখ্যা হয় ১৩৪০। আর এটাই হিজরী সাল মোতাবেক ইন্তিকালের সাল এই আয়াতটি হল:

ﻭَﻳُﻄَﺎﻑُ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢ ﺑِﺂﻧِﻴَﺔٍ ﻣِّﻦ ﻓِﻀَّﺔٍ ﻭَﺃَﻛْﻮَﺍﺏٍ

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: এবং তাদের সামনে রূপার পাত্র সমূহ ও পান পত্রাদি পরিবেশনের জন্য ঘুরানো ফিরানো হবে । (সূরা-আদ দাহর, পারা-২৯, আয়াত-১৫)

(সাওয়ানেহে ইমাম আহমদ রযা, ৩৮৪ পৃষ্ঠা)

*২৫ শে সফর ১৩৪০ হিজরী মোতাবেক ২৮শে অক্টোবর ১৯২১ ইং রোজ জুমাবার ভারতীয় সময় বেলা ২টা ৩৮ মিনিটে (আর পাকিস্তানের সময় ২টা ৮ মিনিট) ঠিক জুমার আযানের সময়, ইমামে আহলে সুন্নাত, শাহ্ ইমাম আহমদ রযা খান ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ এ নশ্বর জগত ত্যাগ করে মহান আল্লাহ তাআলার সান্নিধ্য লাভে ধন্য হন। ﺍِﻧَّﺎ ﻟِﻠّٰﻪِ ﻭَﺍِﻧَّﺎ ﺍِﻟَﻴْﻪِ ﺭَﺍﺟِﻌُﻮْﻥ তাঁর নূরানী মাজার শরীফ বর্তমানে (মদীনাতুল মুরশিদ) বেরেলী শরীফে অবস্থিত। যা এখনও পর্যন্ত তাঁর ভক্ত অনুরক্তদের জেয়ারত গাহ ও সমাগমে পরিণত হয়ে আছে। আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হোক, আর তাঁর সদকায় আমাদের বিনা হিসাবে ক্ষমা হোক।

ﺍٰﻣِﻴﻦ ﺑِﺠﺎ ﻩِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰِّ ﺍﻟْﺎَﻣﻴﻦ ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ

তুম কিয়া গেয়ে কেহ রওনকে মাহফিল চলী গেয়ী

শের ও আদব কি জুলফ পেরেশান হে আজ ভি।

ﺻَﻠُّﻮﺍ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﺤَﺒِﻴﺐ ! ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﻋَﻠﻰ ﻣُﺤَﻤَّﺪ

২৫ শে সফর ১৩৪০ হিজরী বায়তুল মুকাদ্দাসে একজন সিরীয় বুজুর্গ স্বপ্নে নিজেকে রাসূলুল্লাহ ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর দরবারে উপস্থিত দেখতে পেলেন। তিনি সমস্ত সাহাবায়ে কিরামদেরকেও ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻬُﻢْ রাসূল

ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর দরবারে উপস্থিত দেখতে পেলেন। মজলিশে কারও কোন সাড়া শব্দ নেই, সকলেই নিরব নিস্তব্ধ ছিল। মনে হল সবাই যেন কারো আগমণের অপেক্ষায় আছেন। সিরীয় বুজুর্গ বিনীতভাবে হুযুর ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর দরবারে আরয করলেন, “হে আল্লাহর রাসূল ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ ! আপনার জন্য আমার পিতা-মাতা উৎসর্গিত হোক। আমাকে একটু বলুন: “কার অপেক্ষা করা হচ্ছে?” আল্লাহর নবী, রাসূলে আরবী ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ ইরশাদ করলেন: “আমরা আহমদ রযার জন্য অপেক্ষা করছি।”

সিরীয় বুজুর্গ আরজ করলেন: “হুজুর! আহমদ রযা কে?” রাসূল ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ ইরশাদ করলেন: “তিনি হলেন হিন্দুস্থানের বেরেলীর অধিবাসী।” ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর সে সিরীয় বুজুর্গ মাওলানা আহমদ রযার ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ খোঁজে হিন্দুস্থানের দিকে রওয়ানা হয়ে গেলেন। যখন তিনি বেরেলী শরীফ পৌঁছলেন, তখন তিনি জানতে পারলেন, সেদিনই (অর্থাৎ ২৫ শে সফর, ১৩৪০ হিজরী) সেই সত্যিকার নবী প্রেমিক এ পৃথিবী ত্যাগ করে পরপারের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছেন। এটি ছিল ঐ দিন, যেদিন তিনি স্বপ্নে রাসূল ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ কে ইরশাদ করতে শুনেছেন: “আমরা আহমদ রযার অপেক্ষায় আছি।” (সাওয়ানেহে ইমাম আহমদ রযা, ৩৯১ পৃষ্ঠা) আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হোক, আর তাঁর সদকায় আমাদের বিনা হিসাবে ক্ষমা হোক।

ﺍٰﻣِﻴﻦ ﺑِﺠﺎ ﻩِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰِّ ﺍﻟْﺎَﻣﻴﻦ ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ

ইয়া ইলাহী! জব রযা খাওয়াবে গিরা ছে ছর উঠায়ে

দৌলতে বেদার ইশ্কে মুস্তফা কা সাথ হো।

(হাদায়িকে বখশিশ শরীফ)

ﺍٰﻣِﻴﻦ ﺑِﺠﺎ ﻩِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰِّ ﺍﻟْﺎَﻣﻴﻦ ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ

ﺻَﻠُّﻮﺍ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﺤَﺒِﻴﺐ ! ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﻋَﻠﻰ ﻣُﺤَﻤَّﺪ

——–

লিখাটি আমীরে আহলে সুন্নাত হযরত মাওলানা ইলয়াস আত্তার কাদেরী রযভী কর্তৃক লিখিত ২৬ পৃষ্ঠা সম্বলিত “ ইমাম আহমদ রযার জীবনী “ নামক রিসালার ৩-২৩ নং পৃষ্ঠা হতে সংগৃহীত।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment