কিতাবঃ আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত কারা?

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

মূল: আল্লামা আবুল হামেদ মুহাম্মদ জিয়াউল্লাহ কাদেরী আশরাফী (رحمة الله)

সূচিপত্র:

মূল লিখকের অবতরনিকা/

অনুবাদকের কথা/

প্রকাশকের কথা/

বিষয় নং: ইমকানে কিযবে বারী তায়ালা/

বিষয় নং: আল্লাহ তায়ালার গায়বের ইলম স্বত্ত্বাগত/

বিষয় নং: নবী পাক (ﷺ) নূরের তৈরী/

বিষয় নং: অতুলনীয় বাশার/

নূরানী চেহরা মোবারক/

থুথু মুবারক/

কূপের মধ্যে থুথু মুবারক দেয়ার ফলে/

মিশক আম্বরের ন্যায় সুগন্ধি বের হওয়া/

ঘাম মুবারক/

রক্ত মুবারক/

বিষয় নং: হাশরের ময়দানে শাফায়াত বা সুপারিশ/

বিষয় নং: আবদুল মুস্তফা এবং গোলামে নবী নাম রাখা/

বিষয় নং: ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ) বলে ডাকা/

আবু উবাইদাহ বিন জাররাহ (رضي الله عنه)’ মুজাহিদ দল ইয়া মুহাম্মদ (ﷺ) বলে ডাকা/

মদীনা শরীফের জনগণ কর্তৃক ইয়া মুহাম্মদ (ﷺ) ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলে শ্লোগান দেয়া/

বিষয় নং০৮: দূর এবং নিকট হতে শুনা/

বিষয় নং: আল্লাহর ওলীদেরকে ডাকা/

বিষয় নং১০: উপকারকারী/

বিষয় নং১১: উসিলা/

বিষয় নং১২: সৃষ্টি জগতের শিক্ষক রাসূলে কারিম (ﷺ)/

বিষয় নং১৩: হুযুর (ﷺ) কে আল্লাহ তায়ালা ইলম শিক্ষা দিয়েছেন/

বিষয় নং১৪: মৃতদের শ্রবণ শক্তি/

বিষয় নং১৫: নামাযের পর উচ্চস্বরে যিকির করা/

বিষয় নং১৬: জানাযার নামাযের পর দোয়া করা/

সায়্যিদুনা জাফর বিন আবি তালিব (رضي الله عنه)’ জানাযার পর দোয়া/

হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه)-এর বর্ণনা/

হাত তুলে দোয়া করা/

জানাযার পর রাসূলে আকরাম (ﷺ)-এর দোয়া করা/

বিষয় নং১৭: হাত পা চুম্বন করা/

হুযুর পুর নূর (ﷺ)’ সম্মানার্থে সায়িদ্যাতুননিসা ফাতেমা (رضي الله عنه)’ আমল/

বিষয় নং১৮: হাত পা চুম্বন করা সিজদা নয়/

বিষয় নং১৯: মীলাদ শরীফের মাহফিল/

বিষয় নং২০: দিবস নির্ধারণ করা/

বিষয় নং২১: আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে জবেহ/

বিষয় নং২২: খতম শরীফ/

বিষয় নং২৩: ইয়া শায়খ আবদুল কাদের জিলানী শাইআন লিল্লাহ বলা/

বিষয় নং২৪: আযানের পূর্বাপর দরুদ শরীফ পড়া/

বিষয় নং২৫: আঙ্গুল চুম্বন করার প্রমাণ/

বিষয় নং২৬: হায়াতুন্নবী (ﷺ)/

বিষয় নং২৭: রাহমাতুললিল আলামীন (ﷺ)/

বিষয় নং২৮: হাজেরনাযের/

বিষয় নং২৯: আতায়ী অদৃশ্য জ্ঞান/

বিষয় নং৩০: হুযুর (ﷺ)’ দুনিয়াআখেরাতের জ্ঞান/

প্রমাণপঞ্জী/

অনুবাদকের কথা

সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য। দরূদ ও সালাম রাসূলে পাক (ﷺ) এর কদমে। মহান আল্লাহর মনোনীত ধর্ম ইসলাম শান্তির ধর্ম। মানব মুক্তির একমাত্র ধর্ম ইসলামের সঠিক রূপরেখা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত। এই সঠিক রূপরেখা থেকে বক্রতার বেড়াজালে মিশানো একদল পথভ্রষ্ট চক্র ইসলামের সূচনা থেকেই ছিল অপতৎপর। বিশেষত সরলপ্রাণ সুন্নি মুসলামানদেরকে বক্রপথে আনয়নের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ভ্রান্ত এই দলটি।

যুগে যুগে কুচক্রী মহলের মিথ্যার এই দেয়াল ভেঙেছেন সঠিক পথের দিশাপ্রাপ্ত অনেক মর্দে মুজাহিদ। কখনো লেখনি, কখনো বক্তব্য আবার কখনো বা সম্মুখ মোনাজারার মাধ্যমে। সংগ্রামী এসব প্রাণপুরুষদের অন্যতম ‘আল্লামা জিয়াউল্লাহ কাদেরী আশরাফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি। “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত কোঁন হ্যাঁয়” অর্থাৎ আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত কারা? তাঁর উর্দূ কিতাব। এই কিতাবের মাধ্যমে লেখক তাঁর শাণিত তরবারী দিয়ে বাতিলের সেই কল্পিত অমীমাংসীত বিষয়গুলোকে মীমাংসার চেষ্টা করেছেন। তিনি এ গ্রন্থে কোরআন সুন্নাহর এবং আকায়েদের কিতাবের আলোকে সারা পৃথিবী জোড়ে ভয়ংকর দুটি ফিতনা দেওবন্দী ও আহলে হাদিসগণ যে একমাত্র সঠিক দল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের অনুসারী নয় তা তুলে ধরেছেন।

মূল কিতাবটি উর্দূ ভাষায় রচিত বলে তা বাংলা ভাষায় অনূদিত হওয়ার চাহিদা ছিল অনেক। তরুণ লেখক ও গবেষক মাওলানা মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বাহাদুর অনুবাদের সেই গুরুদায়িত্ব আমি অধমের উপর অর্পিত করেছেন। বাহাদুর ভাই এ গ্রন্থের সম্পাদনার এবং তাখরীজের দায়িত্ব নেয়ায় অসম্ভব সুন্দর হয়েছে বলে আমি আশাবাদি। মাঝে মাঝে তিনি হাশীয়ায় যুগের চাহিদায় অতি প্রয়োজনীয় তথ্যও সংযোজন করেছেন যা পাঠকদের জন্য নেয়ামত স্বরূপ।

এ শাস্ত্রে আমি অতি কচি। এরপরেও মহান আল্লাহর উপর ভরসা এবং তাঁর প্রিয় হাবীব (ﷺ) এর উসিলা নিয়ে শুরু করলাম কাজটি। জ্ঞানের দৈন্যতা আর ভাষা জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার দরুণ ভুল হওয়া অস্বাভাবিক নয়। পাঠক মহলের ভুল ভ্রান্তি শোধরানো এবং সুপরামর্শই হবে আগামী দিনের পাথেয়। এটিই প্রত্যাশা। সকলের দোয়া কামনায়-

                অধম অনুবাদক হাফেয মুহাম্মদ আতিকুর রহমান

প্রকাশকের কথা

মহান আল্লাহ তা’য়ালার দরবারে শুকরিয়া ও সিজদা আদায়ের পর দরুদ ও সালামের অগণীত নাযরানা পেশ করছি মানবতার মুক্তির একমাত্র দূত হুযূর নাবি কারিম (ﷺ)’র বরকতময় চরণযুগলে।

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! সর্বপ্রথম ঈমান-আক্বিদা বিষয়ক জ্ঞান শিক্ষা করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরযে আইন। অত:পর দ্বীনের অন্যান্য জরুরী জ্ঞান শিক্ষা করা ফরয। মানুষ কতিপয় বিশ্বাসকে অন্তরে ধারণকেই আক্বিদা বলে। ইসলামে ৭৩ টি দল হবে আর তাদের মধ্যে একটি দলই কেবল নাজাত প্রাপ্ত। যেমন নবীয়ে পাক সাহেবে লাওলাক হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এর ফরমান-

وَإِنَّ بني إسرائيل تَفَرَّقَتْ عَلَى ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِينَ مِلَّةً، وَتَفْتَرِقُ أُمَّتِي عَلَى ثَلاَثٍ وَسَبْعِينَ مِلَّةً، كُلُّهُمْ فِي النَّارِ إِلاَّ مِلَّةً وَاحِدَةً، قَالُوا: وَمَنْ هِيَ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ: مَا أَنَا عَلَيْهِ وَأَصْحَابِي.

-‘‘নিশ্চয় বনী ইসরাঈল বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছে এবং আমার উম্মত তিয়াত্তার দলে বিভক্ত হবে। তাদের সকলেই জাহান্নামে যাবে তবে একটি দল ব্যতীত। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হল, তারা কারা? রাসূল (ﷺ) উত্তর দিলেন, আমি এবং আমার সাহাবার আদর্শের ওপর যারা প্রতিষ্ঠিত থাকবে।’’ ➥1

  • ১. খতিব তিবরিযি, মিশকাতুল মাসাবিহ, ১/৬১পৃ. কিতাবুল ই‘তিসাম বিস্-সুন্নাহ, হাদিস নং.১৬১, তিরমিযি, আস্-সুনান, ৫/২৬পৃ. হাদিস, ২৬৪১, আহলে হাদিস আলবানী সুনানে তিরমিযির তাহক্বীকে হাদিসটি ‘হাসান’ বলেছেন, তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ১৩/৩০পৃ. হাদিস, ৬২, ১৪/৫২পৃ. হাদিস, ১৪৬৪৬, মাকতুবাতু ইবনে তাইমিয়া, কাহেরা, মিশর, প্রকাশ.১৪১৫ হি., ইমাম বায়হাকি, ই‘তিক্বাদ, ১/২৩৩ পৃ., ইমাম বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ১/২১৩ পৃ. হা/১০৪

নবী পাক (ﷺ)‘র এই আলোকময় বর্ণনা সম্পর্কে প্রত্যেক মুসলমানদের জেনে রাখা প্রয়োজন। যাতে করে, সাহাবায়ে কিরামদের আক্বিদা-বিশ্বাস ও মুহাব্বতের অবিকল অনুকরণ করতে পারে। 

এ হাদিসের ব্যাখ্যায় আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী (رحمة الله) বলেন-

فَلَا شَكَّ وَلَا رَيْبَ أَنَّهُمْ هُمْ أَهْلُ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ

-‘‘এতে কোন সন্দেহ নেই যে, নাজাতপ্রাপ্ত দলটিই হলো আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত।’’ ➥2

  • ২.মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ১/ ২৫৯পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, প্রথম প্রকাশ. ১৪২২হি.।  

এ হাদিসের ব্যাখ্যায় শুধু তিনিই নন পৃথিবীর বিখ্যাত অসংখ্য ইমাম মণিষীগণ এবং এমনকি দেওবন্দী ও আহলে হাদিসদের বড় বড় ইমামগণও বলেছেন যে একমাত্র নাজাতপ্রাপ্ত দলটিই হলো আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত। ➥3

  • ৩. এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত ‘আকায়েদে আহলে সুন্নাহ’ গ্রন্থটি দেখনু।  

শুধু তাই নয় আল্লাহ তা‘য়ালা পবিত্র কোরআনের সূরা আলে-ইমরানের  ১০৬ নং আয়াতে বলেছেন-

يَوْمَ تَبْيَضُّ وُجُوهٌ وَتَسْوَدُّ وُجُوهٌ

-‘‘সেদিন (কিয়ামতের দিন) কোন কোন মুখ উজ্জ্বল হবে, আর কোন কোন মুখ হবে কালো।’’ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী (رحمة الله) (ওফাত.৯১১হি.) আরও বর্ণনা করেন-

وَأخرج الْخَطِيب فِي رُوَاة مَالك والديلمي عَن ابْن عمر عَن النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم فِي قَوْله تَعَالَى {يَوْم تبيض وُجُوه وَتسود وُجُوه} قَالَ: تبيض وُجُوه أهل السّنة وَتسود وُجُوه أهل الْبدع

-‘‘ইমাম খতিবে বাগদাদি (رحمة الله) তাঁর তারিখে বাগদাদে, ইমাম মালেক, ইমাম দায়লামী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে এ আয়াতের ব্যাখ্যা স্বরূপ বর্ণনা করেন যে, কিয়ামতের দিন যাদের মুখ উজ্জ্বল হবে তারাই হলো আহলে সুন্নাহ (জামাত)। আর আহলে বিদআতী বা দ্বীন থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মুখ কালো হবে।’➥4’  

  • ৪. ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী, তাফসীরে দুররুল মানসূর, ২/২৯১পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, তাহের পাটনী, তাযকিরাতুল মাওদ্বুআত, ১/৮৪পৃ.

সারা পৃথিবীর ভয়ংকর দুটি ফিতনা দেওবন্দী ও আহলে হাদিসগণ নিজেদেরকে একমাত্র সঠিক দল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের অনুসারী বলে দাবী করে চলছে প্রতিনিয়ত। 

প্রখ্যাত আলেমেদ্বীন আল্লামা যিয়াউল্লাহ কাদেরী (رحمة الله)’র দরজাত বুলন্দির লক্ষে বিনম্র চিত্তে মাওলায়ে কায়িনাতের মহান দরবারে পাকে দোয়া করছি। যিনি অত্যন্ত চিন্তা-গবেষণার মাধ্যমে “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত কোঁন হ্যাঁয়” অর্থাৎ আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত কারা? নামক উর্দু কিতাবটি রচনার মাধ্যমে কোরআন সুন্নাহর এবং আকায়েদের কিতাবের আলোকে এ দুটি দল নাজাত প্রাপ্ত দলের অনুসারী নয় তা তুলে ধরেছেন।

প্রিয়পাঠক! মুসলিম মিল্লাতের জন্য সর্বযুগে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ইসলামের সঠিক আকিদা। আকিদা ছাড়া কোনো ইবাদাত আল্লাহর কাছে কবুল হওয়ার আশা করা যায়না। তাই যুগ যুগ ধরে মুনাফিক-কাফিরদের সাথে পূণ্যবান মানুষগুলোর দ্বন্দ্ব একমাত্র আকিদা নিয়ে। ওসব বে-ইমান কাফিররা জানে যে, মুসলমানদের আকিদা যদি নষ্ট করে দিতে পারে, তাহলে তারা সব দিকে সফল। তাই এ মুনাফিকদের চিহিৃত করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি, কেননা সত্যকে জেনে বুঝে গোপন করাও অপরাধ।

ইমাম কুশাইরী (رحمة الله) তাঁর বিখ্যাত কিতাবে লিখেছিলেন-

سمعت الأستاذ أبا عَلِيّ الدقاق يَقُول: من سكت عَنِ الحق فَهُوَ شَيْطَان أخرس

-‘‘আমি আমার শায়খ বিখ্যাত আরিফ ইমাম আবু আলী দাক্কাক (رحمة الله) কে বলতে শুনেছি, যে ইচ্ছাকৃত সত্য গোপন করে সে হল বোবা শয়তান।’’ ➥5

  • ৫. ইমাম কুশাইরী, রিসালায়ে কুশাইরী, ১/২৪৫ পৃ., ইমাম নববী, শরহে সহীহ মুসলিম, ২/২০ পৃ., ইমাম নববী, কিতাবুল আযকার, ১/৫৩৪ পৃ. 

অসংখ্য কিতাবের সম্মানিত রচয়িতা ও পাকিস্তান, শিয়ালকোটের অধিবাসী বিজ্ঞ-আলিম আল্লামা কাদেরীর অনেক কিতাব ইতিমধ্যে বিভিন্নজনে বাংলা অনুবাদ করেছেন; তৎমধ্যে ‘ওহাবি মাযহাব কি হাকিকাত’ অন্যতম। তাঁর ‘আকাইদে সাহাবাহ’ নামক কিতাবটি ইতোপূর্বে সাকলাইন প্রকাশন থেকে ইতোপূর্বে প্রকাশিত হয়েছে।

আমার ¯স্নেহের ভাই মাওলানা হাফেয মুহাম্মদ আতিকুর রহমান কে কিতাবটি অনুবাদ করার জন্য অনুরোধ করি এবং সে শত ব্যস্ততার মধ্য দিয়েও এটির পান্ডুলিপি তৈরী করে আমাকে দেন। 

গ্রন্থাকারে রূপদেয়ার পর বইজুড়ে অনুপম নজর দিয়ে আমাকে চিরদিনের জন্য কৃতজ্ঞতার পাশে আবদ্ধ করে রেখেছেন বন্ধুবর মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল করিম। 

আমি একজন প্রকাশক ও সম্পাদকের ভূমিকায় কিতাবটি নিপূণতার লক্ষে বহু-চেষ্টা করেছি। অজানা বশত: গ্রন্থের কোনো জায়গায় যদি উল্লেখযোগ্য ত্রুটি-বিচ্যুতি ধরা পড়ে তবে আমাকে সরাসরি অথবা ইমেইলে জানাবেন। আপনার জন্যে দোয়া করবো। পরবর্তী প্রকাশের সময় বিশুদ্ধ করে দেবো। ইনশাআল্লাহ! 

প্রিয় পাঠক! আশা করি, নাতিদীর্ঘ এই (অনূদিত) পুস্তকটি পরোপুরি পড়ে বিবেকের আদালতে মুখোমুখি হবেন। এতে আপনি বুঝতে পারবেন কে সঠিক দলের অনুসারী আর কে গোমরাহ দলের।

আরজগুজার

মাওলানা মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বাহাদুর

প্রকাশক, সাকলাইন প্রকাশন।

গ্রন্থ রচনার কারণ

الْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِى كَفَى وَسَلَامٌ عَلٰى خَيْرِ الْوَرٰى عِبَادِه الَّذِيْنَ اصْطَفٰى خُصُوْصًا عَلٰى سَيِّدِ الْوَرٰى شَمْسِ الضُّحٰى بَدْرِ الدُّجٰى صَدْرِ الْعُلٰى نُوْرِ الْهُدىٰ كَهْفِ الوَرٰى دَافِعِ الْبَلَاءِ وَالْوَبَاءِ مَنْبَعِ الْجُوْدِ وَالْعَطَاءِ عَالِمِ الْاَرْضِ وَالسَّمَاءِ خَاتِمِ الْاَنْبِيَاءِ الَّذِى كَانَ نَبِيًّا وَاٰدَمُ بَيْنَ الْطِّيْنِ وَالْمَاءِ وَعَلٰى اٰلِه وَاصْحَابِه وَاَزْوَاجِه وَبَنَتِه وَذُرَّيَتِه وَاَوْلِيَاءِ اُمَّتِه ذَوِىْ الدَّرَجَاتِ وَالْعُلٰى

اَمَّا بَعْدُ

فَاعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطٰانِ الرَّجِيْمِ ۞ بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ ۞ اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ ۞ صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّيْن

সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য যাঁর প্রশংসা যথার্থ এবং সালাম বর্ষিত হোক সর্বশ্রেষ্ঠ বান্দার উপর যাদেরকে তিনি নির্বাচিত করেছেন। বিশেষ করে সৃষ্টি জগতের সর্দার, দ্বিপ্রহরের সূর্য, পূর্ণিমার চাঁদ, সর্বোচ্চদের মহান, হেদায়তের নূর, সৃষ্টির আশ্রয়স্থল, বিপদ ও মহামারী দূরভীতকারী, দান ও বদন্যতার উৎস আসমান জমিন তথা সমস্ত সৃষ্টির জ্ঞানময়ী, খাতেমুল আম্বিয়া তথা সর্বশেষ নবী, যিনি তখনও নবী ছিলেন যখন আদম (عليه السلام) পানি ও মাটির মাঝে ছিলেন তাঁর উপর এবং আহল, তাঁর সমস্ত সাহাবী, তাঁর পবিত্র বিবিগণ, তাঁর সম্মানিত কন্যাগণ, তাঁর বংশধর এবং তাঁর উম্মতের অলিগণের উপর যাঁরা মহান মান মর্যাদার অধিকারী এরপর অভিশপ্ত শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় কামনা করছি। আল্লাহর নামেই শুরু করছি যিনি পরম দয়ালু, করুণাময়।

“আমাদেরকে সোজা পথে পরিচালিত রাখুন, তাঁদেরই পথে, যাঁদের উপর তুমি অনুগ্রহ করেছো, তাদের পথে নয় যাদের উপর গযব নিপতিত হয়েছে এবং পথভ্রষ্টদের পথেও নয়।” (সূরা ফাতেহা)

মহান আল্লাহর শোকর, যে পৃথিবীর বাদশা, সৃষ্টির গর্ব, জগৎ সৃষ্টির কারণ, বরকতের উৎস, সৃষ্টির মূল, জগতের প্রাণ, পৃথিবীর জান, সৃষ্টির প্রারম্ভ, জগত সৃষ্টির কারণ, জগতের মীরে মজলিস সাল্লাল্লাহু, ৬ষ্ঠ দিকের মুখতার, হুযুরে পুন্নূর, নুরুন আলো নূর হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (তাঁর উপর সর্বোত্তম দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক)’র উম্মত হিসেবে সৃষ্টি করেছেন।

এরপর মহান আল্লাহর অনুগ্রহ যে, তিনি ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অন্তর্ভূক্ত করেছেন। মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা তিনি রাসূলে কারিম আলাইহি ওয়াসাল্লামের উসিলায় এই মতাদর্শের উপরই ইসতাকামত রাখেন। আমিন।

বর্তমানে পৃথিবীতে অনেকগুলো ফিরকা রয়েছে। যারা দিন-রাত নিজেদের প্রচার-প্রসারের চেষ্টায় রয়েছে। এদের মধ্যে দেওবন্দী এবং লা-মাযহাবী গুরুদের ষড়যন্ত্র এবং তাদের ভ্রান্ত অনুসারীদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

একসময় দেওবন্দি গুরুরা লা-মাযহাবীদের দেখাও সহ্য করত না। বরং তাদেরকে নিজেদের মসজিদে নামাযও পড়তে দিত না।

দেওবন্দীদের গুরু মৌলবী কাসেম নানুতুবী, মৌলবী রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী, মৌলবী আশরাফ আলী থানবী, মৌলবী খায়র মুহাম্মদ জান্দারী, মৌলবী হাবিবুর রহমান লাদইয়ানবী প্রমূখদের লেখাই এর প্রমাণ।

এদিকে লা-মাযহাবীরা মাযহাবীদের উপর শিরিকের ফাতওয়া জারি করতেছিল। মিয়া নযীর হোসাইন দেহলভী, নবাব সিদ্দিক হাসান ভূ-পালী, মৌলবী আব্দুল আযিয রহিমাবাদী, মৌলবী আবদুল্লাহ রহিমাবাদী, মৌলবী আবদুল্লাহ গাজীপুরী, মৌলবী সানাউল্লাহ অমৃতসরী, হাফেজ আব্দুল্লাহ রুপটী প্রমূখদের লেখা এর স্বাক্ষী।

কিন্তু কিছু বছর ধরে দেওবন্দী এবং লা-মাযহাবী আহলে হাদীস গুরুরা রাওয়ালপিন্ডি শহরে দেওবন্দী গুরু মৌলবী গোলাম খাঁর একটি মাহফিলে একটি মাযহাবী সংগঠন “ছেওয়াদে আযম আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম’আত” গঠন করে। এবং বিভিন্ন স্থানে এই সংগঠনের অধীনে মাহফিলের সিলসিলাও শুরু হয়েছে। এই সংগঠনের প্রধান দেওবন্দী এবং সিকুরুঙ্কি হাফেজ আবদুল কাদের রুপিটি লা-মাযহাবী।

মূলত এদের এই সংগঠনটি কেবল “আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত” এর বিপরীত। তারা সাদাসিদে মুসলমানদেরকে তাদের জালে পেচানোর জন্য তাদের এই সংগঠনের নাম ‘ছেওয়াদে আযম আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত’ রেখেছে।

লা-মাযহাবী হযরতদের নিকট যদি প্রশ্ন করা হয় আপনারা নিজেরা নিজেদেরকে হানাফী বলে, সায়্যিদুনা হযরত ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله)’র অনুসরণ করেন, আপনাদের নিকট বিশুদ্ধ আক্বীদার মুসলমান কী “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামআত”? উত্তরে না সূচক জবাব আসবে। এই নতুন সংগঠনের ‘ছেওয়াদে আযম আহলে সুন্নাত ওয়াল জামআত’ হাফেজ আবদুল কাদের রূপটিকে জিজ্ঞাসা করুন, রুপটি সাহেব স্বীয় রিসালা “তানজিমে আহলে হাদীস” এর মধ্যে নিজের ফতোওয়া প্রচার করেছে।

দেওবন্দী গুরু (যারা নিজেদেরকে মুকাল্লিদ এবং হানাফী বলে থাকে) কাছে কেই যদি জিজ্ঞাসা করে, “মুকাল্লিদকে বিশুদ্ধ আক্বীদাধারী মুসলমান হিসেবে অমান্যকারীরা আপনাদের নিকট আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত হবে? এর উত্তরেও ‘না’ সূচক জবাব আসবে।

সুতরাং তারা উভয়ে মিলে, “ছাওয়াদে আযম আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত” সংগঠন তৈরি করা এবং এর অধীনে মজলিশ করা মূলত এই প্রকৃত অবস্থারই বহি:প্রকাশ। যে সাদাসিদে মুসলমানদেরকে এসব মৌলবীরা নিজেদের নকল জালে পেচানোর চেষ্টা করবে। এটি সরাসরি বদমাশি এবং ধোঁকাবাজী। প্রকৃতপক্ষে তাদের কেউই আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত নয়।

প্রলেপ এবং উপাধি ধারণ করলেই কোন কাজ হবে না। প্রশ্রাবের বোতলের মধ্যে কেউ যদি গোলাপের প্রলেপ লাগিয়ে মার্কেটে নিয়ে আসে তবে তা গোলাপের রস বা আতর হবে না, বরং প্রশ্রবই থেকে যাবে।

আমরা মুর্শিদ, আমার মখদুম, সায়্যিদি, সানাফি মুরব্বি, শায়খে তরিকত, আলেমে শরীয়ত মাখযুনে ইলম ও হিকমত, মুহসিনে আহলে সুন্নাত, হযরত কিবলা আলমে পীর খাজা শফী সাহেব কাদেরী (رحمة الله), সাজ্জাদানশীন দরবারে গওহর বারে গাউছিয়া ডুডা শরীফ, গুজরাট জিলা। এসব দেওবন্দ এবং লা-মাযহাবী ওহাবী গুরুদের এই ষড়যন্ত্রকে লক্ষ্য করে আদেশ করেন, এমন একটি কিতাব রচনা কর, যেখানে কুরআন সুন্নাহর আলোকে দেওবন্দী ও লা-মাযহাবীদের ভ্রান্ত আকিদা প্রকাশ করা হবে এবং প্রমাণ করা হবে যে, দেওবন্দী ও লা-মাযহাবী ওহাবীরা “আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত নয়”।

আমার হুযূর কিবলা (رحمة الله)’র সারা জীবনই পবিত্র শরীয়তের পাবন্দি এবং সঠিক পন্থা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের প্রচার, প্রকাশে অতিবাহিত হয়েছে। যেখানেই পবিত্র শরীফতের দুশমনি এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের পরিপন্থী কোন শব্দ শুনা যেত, হযরত লিখনী এবং বক্তৃতার মাধ্যমে এর দরজা বন্ধ করনে চেষ্টা চালিয়েছেন। অধম মহান আল্লাহর পবিত্র নাম এবং সারওয়ারে আলম, নূরে মুজাস্সাম (ﷺ) এর আশ্রয়ের দরবারে সাহায্য প্রার্থনা পূর্বক, গাউছুল আলামীন গাউছুল আযম শাহিনশানে আউলিয়া সায়্যিদিনা আবু মুহাম্মদ আবদুল কাদের জিলানী আল হাসানী ওয়াল হোসাইনী  (رضي الله عنه)’র আদেশ পালন করার চেষ্টা শুরু করলাম।

আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ তা‘য়ালা জাল্লাজালালুহু, রাসূলে মাকবুল (ﷺ) এর ফযলে করমে এবং গাউছে পাক (رضي الله عنه)’র তাসাররুফ এবং হুযুর কিবলায়ে আলম (رحمة الله)’র নযরে করমে এই কিতাব তাঁর হাতেই রয়েছে।

অদমের হাত থেকে কিতাবের দৃঢ়তা ও গাম্ভীর্যতা এমনিতেই ছুটে পড়েনি। এর প্রতিটি আক্বিদাই পবিত্র কুরআন ও হাদিসের আলোকে উল্লেখযোগ্য কিতাবের হাওলা সহকারে পেশ করা হয়েছে।

গোড়ামী এবং সংকীর্ণতা বাদ দিয়ে এই কিতাব অধ্যায়নকারী প্রত্যেক মুসলমান অবশ্যই বিচার করবেন যে, দেওবন্দী এবং লা-মাযহাবী ওয়াহাবীরা নিজেদেরকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত বলা ধোঁকা এবং বোকামী বৈ কিছুই নয়।

দেওবন্দী এবং লা-মাযহাবীদের যে আক্বিদাগুলো আনা হয়েছে, এগুলো তাদের স্বীকৃত গুরুদের কিতাবেই রয়েছে। তাদের ভ্রান্ত আকিদাগুলো এবং কিতাবের নাম কেউ যদি বিস্তারিত দেখতে চায়, তবে অধমের আরেকটি কিতাব ‘ওয়াহাবী মাযহাবের হাক্বীকত’ এবং ‘আক্বাইদে ওয়াহাবীয়া’ অধ্যায়ন করার পরামর্শ রইল।

এই কিতাবের মধ্যে বর্ণিত কিতাবগুলোর হাওয়ালা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে বর্ণনা করা হয়েছে। যদি কারো কাছে উক্ত কিতাবগুলোর হওয়ালা প্রয়োজন পড়ে তবে তা ফটোকপি করা হবে। আর এর ব্যয় পাঠকই বহন করবে।

আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা, যেন স্বীয় হাবীব নবী করিম রাউফুর রহিম (ﷺ) এর মহত্ত্বে উসিলায় পৃথিবীর সমস্ত মুসলমানকে মযহাবী এবং সঠিক পথ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের উপর কায়েম থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন

ফকীর,

আল্লামা আবুল হামেদ জিয়াউল্লাহ কাদেরী আশরাফী গুফিরালাহু

খতীব, সরকারে জামে মসজিদ আল্লামা আব্দুল হাকীম (رحمة الله)।

তাহসীল বাজার, শিয়াটকোট, পাকিস্তান।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment