আমার এক শ্রদ্ধেয় ভাইয়ের কাঁকড়া ও অক্টোপাস (সী-ফুড) খাওয়া সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবঃ
হানাফী মাযহাবের বুনিয়াদী উসুলঃ
☛মাছ ব্যতীত অন্য কোন জলজ প্রানী খাওয়া জায়েয নয়।
উদাহরণস্বরূপ- কাঁকড়া, কচ্ছপ, ব্যাঙ, অক্টোপাস ইত্যাদি।
১) আবু বকর আলাউদ্দিন সামারকান্দীর (৫৪০হি) ‘তুহফাতুল ফুকাহা’ কিতাবে আছে-
أما الَّذِي لَا يعِيش إِلَّا فِي المَاء فكله محرم الْأكل إِلَّا السّمك
যা কিছু পানিতে বাস করে তার মধ্যে মাছ ব্যাতীত অন্য সকল কিছু খাওয়া হারাম।
[তুহফাতুল ফুকাহা, ৩/৬৩]
২) হানাফী মাযহাবের আরেক নির্ভরযোগ্য প্রামাণ্য কিতাব ‘বাদায়েউস সানায়ে’ যার লেখক ইমাম কাসানী (৫৮৭হি)। তিনিও একইভাবে লিখেন-
فَجَمِيعُ مَا فِي الْبَحْرِ مِنْ الْحَيَوَانِ مُحَرَّمُ الْأَكْلِ إلَّا السَّمَكَ
ঐ সকল প্রানী যা সমুদ্রে বাস করে সকলই হারাম; শুধু মাছ ব্যতীত।
[বাদায়েউস সানায়ে, ৫/৩৫]
৩) হানাফী মাযহাবের আরেকটি প্রামাণ্যগ্রন্থ যা মাদ্রাসাসমূহে পাঠ্য তা হলো ‘আল হিদায়া’। লিখেছেন বুরহানুদ্দীন মারগিনানী (৫৯৩হি)। এই কিতাবের শিকার অধ্যায়ে তিনি লিখেন-
ولا يؤكل من حيوان الماء إلا السمك
মাছ ব্যতীত অন্য যেকোন জলজ প্রানী খাওয়া জায়েয নয়।
[আল হিদায়া, ৪/৩৫৩]
৪-৭) ঠিক একই কথা বলা হয়েছে আল ইখতিয়ার ফি তা’লিলিল মুখতার, তিবইয়ানুল হাকাইক, জাওয়াহিরাতুন নাইয়ারাহ, মুখতাসারুল কুদুরী কিতাবে।
৮) হানাফী মাযহাবের আরেক গ্রহণযোগ্য কিতাব- তিবইয়ানুল হাকাইক শরহে কানযুদ দাকাইক, লেখক- ইমাম যায়লায়ী হানাফী (৭৪৩হি)। এই কিতাবে উল্লেখ করেন-
لَا يَجُوزُ بَيْعُ شَيْءٍ فِي الْبَحْرِ مِنْ الضَّفَادِعِ وَالسَّرَطَانِ وَالسَّلَاحِفِ وَغَيْرِ ذَلِكَ إلَّا السَّمَكَ
সমুদ্রের মধ্যে মাছ ব্যাতীত ব্যাঙ, কাঁকড়া, কচ্ছপ ইত্যাদি বিক্রি করা বৈধ নয়।
[তিবইয়ানুল হাকাইক শরহে কানযুদ দাকাইক, ৪/৪৯]
৯) হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ গ্রন্থ দুররে মুখতার-এ আছে-
وَلَا يَحِلُّ حَيَوَانٌ مَائِيٌّ إلَّا السَّمَكُ
জলজ কোন প্রানীই হালাল নয় শুধু মাছ ব্যাতীত।
[রাদ্দুল মুহতার,৬/৩০৬]
১০) পরবর্তী যুগের হানাফী কিতাবসমূহের মধ্যে আল-লুবাব ফি শরহিল কিতাব অন্যতম। ঐ কিতাবে আছে-
(ولا يؤكل من حيوان الماء إلا السمك) لقوله تعالى {ويحرم عليهم الخبائث} وما سوى السمك خبيث
মাছ ব্যাতীত অন্য কোন জলজ প্রানী খাওয়া জায়েয নয়। কেননা আল্লাহ তায়ালা কুরআনে কারীমে বলেন- {তাদের ওপর আল্লাহ হারাম করেছেন অপবিত্রকে}। আর মাছ ব্যতীত সবই খবীছ বা অপবিত্র।
[আল-লুবাব ফি শরহিল কিতাব, ৩/২৩১]
১১) হানাফী মাযহাবের মূল উৎস গ্রন্থগুলোর একটি হল মাবসূত লিল সারাখসী (৪৩৮হি)। এই কিতাবের ভাষ্য-
وَالْحَيَوَانَاتُ نَوْعَانِ: نَوْعٌ مِنْهَا مَا لَا دَمَ لَهُ، فَلَا يَحِلُّ تَنَاوُلُ شَيْءٍ مِنْهَا إلَّا السَّمَكَ، وَالْجَرَادَ
প্রানী ২ প্রকারের। প্রথম- যার মধ্যে রক্ত নেই। সেগুলোর (রক্তহীণদের) মধ্যে মাছ ও টিড্ডি ব্যতীত অন্য কিছু খাওয়া জায়েয নেই।
[মাসবসুত লি সারাখসী, ১১/২২০]
☛কিছু গুরুত্বপূর্ণ উসূলঃ
****************
ক) যারা উভচর প্রাণী তাদের খাওয়া জায়েয নয়। যেমন ব্যাঙ, কাঁকড়া।
খ) যারা জলজ তাদের মধ্যে মাছ ছাড়া সবই হারাম। যেমনঃ অক্টোপাস।
গ) রক্তহীণ প্রানীদের মধ্যে শুধু মাছ ও টিড্ডি ছাড়া সব হারাম।
☛প্রসঙ্গ কাকড়াঃ
****************
ইমাম কামালুদ্দীন দামেরী তার জগতপ্রসিদ্ধ কিতাব হায়াতুল হায়ওয়ান কিতাবে লেখেন-
يحرم أكله لاستخباثه كالصدف قال الرافعي: ولما فيه من الضرر
কাকড়া খাওয়া জায়েয নেই। কারণ এটা ঝিনুকের মতই নাপাক। রাফেয়ীর মতে- কাকড়া খাওয়া ঠিক নয় কারণ তা ক্ষতিকর।
[হায়াতুল হায়ওয়ান, ২/২৭]
কাকড়াঃ উভচড় রক্তহীন মাছ ব্যাতীত অন্য কিছু।
সকল উসূলি দৃষ্টিকোণ থেকেই কাকড়া খাওয়া জায়েয নয়।
☛নোটঃ সমুদ্রের অন্যান্য প্রানীগুলো খাওয়া জায়েয সম্পর্কে ইমাম শাফেয়ী আর কিছু কিছু প্রানী খাওয়া সম্পর্কে ইমাম আহমদ ও ইমাম মালেকের মত রয়েছে।
**এই লেখাটি শুধু তাদের জন্য যারা হানাফী মাযহাব ফলো করেন। অন্য মাযহাব বা আহলে হাদীসদের জন্য নয়।
মা’আস সালাম-
☛মুহাম্মাদ হাসিব হাসেমী (গুফিরা লাহু)