مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ الوهّاب بْنُ سُلَيْمَانَ التَّمِيمِيّ (1115 – 1206هـ) (1703م – 1791م) :
মুহাম্মদ ইবন আব্দ আল-ওয়াহাব (ইংরেজী : Muhammad ibn Abd al-Wahhab (আরবি : مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ الوهاب ; ১৭০০ — ২২ জুন ১৭৯২)
– আরবের “উয়াইনা” অঞ্চলে “নজদ” নামক স্থানে বনু সিনান বংশে ওহাবী মতবাদ বা ওহাবীদের প্রতিষ্ঠাতা- “মোহাম্মদ ইবনে “আব্দুল ওহাব নজদী” ১১১১ হিজরী বা ১১১৫ হিজরীতে জন্ম গ্রহন করে। ইসলাম ধর্মের ভিতর সে যে ভ্রান্ত মতবাদ প্রতিষ্ঠা করেছিল , সেটিই ওহাবী আন্দোলন নামে অভিহিত এবং এই মতবাদের সমর্থক বা অনুসারীদের বলা হয় “ওহাবী”। এরা “নজদ শহর” হতে আত্ম প্রকাশ করে মক্কা ও মদিনা শরীফের উপর বিজয়ী হয়েছিলো।
-جلد ثانی۔-شرح وقایة- الْكَاتِب : عُبَيْدالله بْنِ مَسْعُودٍ بْنِ مَحْمُودِ بْنِ أَحْمَدَ الْمَحْبُوبِيُّ الْبُخَارِيّ
১।শরহে বেকায়া شرح الوقاية নামক গ্রন্থের ২য় জিলদের ২৭২পৃঃ ৯ নং হাশিয়ায় উল্লেখ রয়েছেঃ
عَمْدُه الرِّعَايَةِ عَلَى شَرْحِ الْوِقَايَةِ 1-7 ج4 صَلَاحُ مُحَمَّدٍ أَبُو الْحَاجّ ، الدكتور , عَبْدِ الْحَيّ بْنُ مُحَمَّدٍ بْنُ عَبْدِ الحليم/اللكنوي
– وَهَابِي اَي مَنسُوب إِلَيَّ مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدالوَهّاب النَّجْدِيّ
অর্থাৎ ওহাবী বলতে মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওয়াহাব নজদীর ভ্রান্ত আকিদার সাথে সম্পর্কিত লোকদেরকে ওহাবী বলে।
২।নূরুল আনওয়ার نُور الانوار۔ ۔ ___نُور الْأَنْوَار شَرْحِ الْمَنَارِ فِي أُصُولِ الْفِقْهِ مَعَ حَاشِيَةِ اللكنوى قَمَر الْأَقْمَار وَحَاشِيَةٌ السنبلى – ملاجيون الصِّدِّيقِيّ নামক গ্রন্থের ২৪৭ পৃঃ ১৩ নং হাশিয়ায় উল্লেখ রয়েছেقَوْلُه نَحْوَهُم كالوهابي الْمُنْكَر لِلشَّفَاعَة
অর্থাৎ , ওহাবী একটি বাতেল দল , যারা শাফায়াতকে অস্বিকার করে।
৩।আল্লামা সৈয়দ আবিদ শাহ মোজাদ্দেদী (রহ : )_ اصلاح مشائخ—ইসলাহে মাশায়েখ۔ ۔۔۔۔ اصلاح مشائخ–নামক গ্রন্থে ১০-১১ পৃ : লিখেছেন , উপমহাদেশে ওহাবীদের প্রথম নেতা হচ্ছেন তাকবিয়াতুল ঈমান গ্রন্থের লিখক মাও : ইসমাঈল দেহলভী।
৪।তার সম্পর্কে সমকালিন সুন্নি আলেম আল্লামা ফজলে রাসুল বদায়ূনী রহমতুল্লাহি আলাইহিسیف الجبار۔
সাইফুল জাব্বার গ্রন্থের ২নং পৃ: লিখেছেন উপমহাদেশে ওহাবী সেই ব্যক্তি যে মাও : ইসমাঈল দেহলবীর মতবাদ কে হক জানে এবং তার লিখিত গ্রন্থ তাকবিয়াতুল ঈমান কে ছহীহ মানে।
سیف اللہ الْمَسْلُول إمَام مَعْقُول و مَنْقُولٌ معین الْحَقّ حَضَرَت علامہ شاہ فَضْلَ رَسُولِ قادری عثمانی بدایونی قَدَّس سرہ العزیز ،
হযরত শাহ আবুল হাসান যায়েদ ফারুকী (রহ : ) تقویة الایمان তাকবিয়াতুল ঈমানের খন্ডনে ‘ মাও : ইসমাঈল
দেহলভী আউর তাকবিয়াতুল ঈমান ‘ গ্রন্থ লিখেছেন উর্দু ভাষায়। বইটির বাংলা অনুবাদ বের হয়েছে । এর প্রাপ্তিস্তান হচ্ছে মো : আবু বকর। রুহিলা গার্মেণ্টস এ/১ ব্লক, বি মাযার রোড, গাবতলী মিরপুর ঢাকা ১২১৬
৫।হানাফী মাযহাবের সবচেয়ে প্রসিদ্ব এবং অন্যতম গ্রহণযোগ্য ফতোয়ার কিতাব হলো “ফতোয়ায়ে শামী”। এই কিতাবের ৬ষ্ঠ খন্ড ৪১৩ নং পৃষ্ঠায় “বাবুল বুগাতে” ওহাবী ফিৎনা সম্পর্কে বলা হয়েছে।
৬।তাফসীরে সাবী” ৩য় খন্ড ২৮৮ পৃষ্ঠায় রয়েছে
الشَّيْخُ أَحْمَدُ بْنُ مُحَمَّدٍ الصَّاوِيُّ الْمَالِكِيُّ الصَّاوِيّ الْمُتَوَفَّى سُنَّةٌ 1241 هـ أَيْ مُنْذُ أَكْثَرَ مِنْ 170 سنة في حَاشِيَتِهِ عَلَى تَفْسِيرِ الْجَلَالَيْن كِتَاب “حاشية الْعَلَّامَة الصَّاوِيّ عَلَى تَفْسِيرِ الجلالين” . ا
আরো পাবেন “তাফসীরে সাবী” ৩য় খন্ড ২৮৮ পৃষ্ঠা।
حَاشِيَة الصَّاوِيّ عَلَى تَفْسِيرِ الْجَلَالَيْن فسير الْآيَة 8 مِنْ سُورَةِ فَاطِر – الْقُرْآنِ الْكَرِيمِ
قَوْلُه -أَفَمَنْ زُيِّنَ لَهُ سُوءُ عَمَلِهِ فَرَآهُ حَسَنًا ۖ فَإِنَّ اللَّهَ يُضِلُّ مَنْ يَشَاءُ وَيَهْدِي مَنْ يَشَاءُ ۖ فَلَا تَذْهَبْ نَفْسُكَ عَلَيْهِمْ حَسَرَاتٍ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ بِمَا يَصْنَعُونَ . ” هَذِهِ الْآيَةِ نَزَلَتْ فِى الْخَوَارِجِ الَّذِينَ يُحْرَقُون تَأْوِيلِ الْكِتَابِ وَالسُّنَّةِ وَيَسْتَحِلُّون بذالك دِمَاء الْمُؤْمِنِين وَأَمْوَالَهُم كَمَا هُوَ مُشَاهَدٌ الْآن فِى نظائرهم وَهُمْ فِرْقَة فِى أَرْضٍ الْحِجَازِ يُقَالُ لَهُمْ الوهابية يَحْسَبُونَ أَنَّهُمْ عَلَى شَيّ إلَّا أَنَّهُمْ هُمُ الْكَاذِبُونَ اسْتَحْوَذَ عَلَيْهِمْ الشَّيْطَانُ فَأنْساهُمْ ذكرالله أُولَئِكَ حِزْبُ الشَّيْطَانُ إلَّا أَنْ حِزْبَ الشَّيْطَان هُمُ الْخَاسِرُونَ .
সাইফুল জাব্বার’-এ তখনকার সময়ে ওহাবীদের, মক্কা, মদীনা শরীফ এবং এতদঞ্চলের পবিত্র ভূমিগুলোর উপর তাদের তান্ডবের বর্ণনা বিস্তারিতভাবে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অতি দুঃখের বিষয় যে, ইতিহাসের এক পর্যায়ে এসে এ ওহাবীরা গোটা হেজাযভূমিতে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠালাভ করে নেয় এবং রাজকীয় ক্ষমতা ও অর্থ ব্যবহার করে এ ওহাবী আক্বীদা প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টাকে অব্যাহত রাখে। এখনো আরব ও অনারব বিশ্বে তাদের এ অপচেষ্টা চলে আসছে।বাকী রইলো, পাক-ভারত বাংলাদেশ (উপমহাদেশ)-এ এ ওহাবী মতবাদের অনুপ্রবেশ ও শেষ পর্যন্ত আহলে হাদীসের আত্মপ্রকাশ। সৈয়্যদ আহমদ বেরলভী এদেশে ওহাবী মতবাদ আমদানীতে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে বলে ইতিহাস সাক্ষী দেয়। ‘আশ-শায়খ মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহ্হাব’ নামক পুস্তক (কৃত. আহমদ ইবনে হাজর: কাতার : মক্কা মুকাররমায় মুদ্রিত ও বিনামূল্যে প্রচারিত-১৩৯৫হি.), পৃ. ৭৮-৭৯ তে একথা স্পষ্ট ভাষায় লেখা হয়েছে।
,৭।
لدر الْمُخْتَارِ وَحَاشِيَةٌ ابْنُ عَابِدِينَ (رد المحتار) [ابن عابدين]
الْكِتَاب : رَدُّ الْمُحْتَارِ عَلَى الدُّرِّ الْمُخْتَارِ الْمُؤَلِّف : ابْنُ عَابِدِينَ ، مُحَمَّدٌ أَمِينٌ بْنُ عُمَرَ بْنِ عَبْدِ الْعَزِيزِ عَابِدِين الدِّمَشْقِيّ الْحَنَفِيّ (المتوفى : 1252هـ) النَّاشِر : دَار الفكر-بيروت الطَّبْعَة : الثَّانِيَة ، 1412هـ – 1992م عَدَد الْإِجْزَاء : 6 [ترقيم الْكِتَاب مُوَافِقٌ للمطبوع] « الدُّرِّ الْمُخْتَارِ للحصفكي شَرْحِ تَنْوِيرِ الْأَبْصَارِ لِلتُّمُرْتَاشِيّ » بِأَعْلَى الصَّفْحَة يَلِيه – مَفْصُولًا بِفَاصِل – « حَاشِيَةِ ابْنِ عَابِدِينَ » عَلَيْه ، الْمُسَمَّاة « رَدُّ الْمُحْتَارِ »
বিশ্ব বিখ্যাত ফতওয়া গ্রন্থ রচয়িতা আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি তাঁর প্রণীত ‘রদ্দুল মোখতার’ رد المختاررد المحتار على الدر المختار » كتاب الجهاد » باب البغاة–কিতাবের ৩য় খণ্ডে ৪২৭ ও ৪২৮ পৃষ্ঠায় বাবুল বুগাত’-এর প্রারম্ভে বর্ণনা করেন-
رَأْي الْمَذْهَب الْحَنَفِيّ : قَالَ ابْنُ عَابِدِينَ الْحَنَفِيِّ فِي ردّ الْمُحْتَارِ مَا نصّه [9] : “مطلب فِي اتِّبَاعِ ابْنُ عَبْدِ الْوَهَّابِ الْخَوَارِجِ فِي زَمَانِنَا : قَوْلُه : “ويكفرون أَصْحَابِ نَبِيِّنَا صلّى اللَّهُ عَلَيْهِ وسلّم)” عَلِمْت أَنَّ هَذَا غَيْرُ شَرْطٍ فِي مُسَمَّى الْخَوَارِج ، بَلْ هُوَ بَيَانٌ لِمَنْ خَرَجُوا عَلَى سَيِّدِنَا عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُ ، وَإِلَّا فَيَكْفِي فِيهِم اعْتِقَادِهِم كُفْرِ مَنْ خَرَجُوا عَلَيْه ، كَمَا وَقَعَ فِي زَمَانِنَا فِي اتِّبَاعِ مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ الْوَهَّابِ الَّذِينَ خَرَجُوا مِنْ نَجْدٍ وتغلّبوا عَلَى الْحَرَمَيْنِ ، وَكَانُوا يَنْتَحِلُون مَذْهَبُ الْحَنَابِلَةِ ، لَكِنَّهُم اعْتَقَدُوا إِنَّهُمْ هُمُ الْمُسْلِمُون وَأَنَّ مَنْ خَالَفَ اعْتِقَادِهِم مُشْرِكُون ، واستباحوا بِذَلِك قُتِلَ أَهْلُ السنّة قُتِل عُلَمَائِهِم حَتّى كَسَرَ اللَّه شَوْكَتِهِم وَخَرَّب بِلَادِهِم وَظُفْر بِهِم عساكرالمسلمين عَام ثَلَاثٍ وَثَلَاثِينَ وَمِائَتَيْنِ وألف“ . ا . هـ . قَالَ الشَّيْخُ ابْنُ عَابِدِينَ الْحَنَفِيِّ فِي حَاشِيَتِهِ رَدُّ الْمُحْتَارِ ج 4 ص 262 طُبِع دَار الْفِكْر فِيهِم : “مطلب فِي اتِّبَاعِ ابْنُ عَبْدِ الْوَهَّابِ الْخَوَارِجِ فِي زَمَانِنَا : كَمَا وَقَعَ فِي زَمَانِنَا فِي اتِّبَاعِ ابْنُ عَبْدِ الْوَهَّابِ الَّذِينَ خَرَجُوا مِنْ نَجْدٍ وَتَغَلَّبُوا عَلَى الْحَرَمَيْنِ وَكَانُوا يَنْتَحِلُون مَذْهَبُ الْحَنَابِلَةِ لَكِنَّهُم اعْتَقَدُوا إِنَّهُمْ هُمُ الْمُسْلِمُون وَأَنَّ مَنْ خَالَفَ اعْتِقَادِهِم مُشْرِكُون واستباحوا بِذَلِك قُتِلَ أَهْلُ السُّنَّةِ وَقَتْل عُلَمَائِهِم
অর্থ: ‘‘যেমন আমাদের সময়ে সংগঠিত আবদুল ওহাবের অনুসারীদের লোমহর্ষক ঘটনা প্রণিধানযোগ্য। তারা নজদ থেকে বের হয়ে মক্কা মুর্কারামাহ্ ও মদীনা মুনাওয়ারার উপর আধিপত্য বিস্তার করেছিল। নিজেদেরকে তারা হাম্বলী মাযহাবের অনুসারী বলে দাবী করতো। তাদের দৃঢ় বিশ্বাস ছিলো তারাই একমাত্র মুসলমান, তাদের বিরোধীরা সকলেই মুশরিক।এ জন্যে তারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের অনুসারীদের হত্যা করা জায়েয মনে করেছে। এবং এদের অনেক আলেমকে শহীদ করেছে।
قال العلامة الكبير المحقق الامام ابن عابدين فى حاشيته
মহান আলেম, ইমাম ইবনে আবদীন তার পুনর্বিবেচনায় বলেছেন
[كتاب الجهاد] [باب البغاة]____________________________________مطْلَبٌ فِي أَتْبَاعِ عَبْدِ الْوَهَّابِ الْخَوَارِجِ فِي زَمَانِنَا
( قَوْلُهُ : وَيُكَفِّرُونَ أَصْحَابَ نَبِيِّنَا صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ) عَلِمْت أَنَّ هَذَا غَيْرُ شَرْطٍ فِي مُسَمَّى الْخَوَارِجِ ، بَلْ هُوَ بَيَانٌ لِمَنْ خَرَجُوا عَلَى سَيِّدِنَا عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُ ، وَإِلَّا فَيَكْفِي فِيهِمْ اعْتِقَادُهُمْ كُفْرَ مَنْ خَرَجُوا عَلَيْهِ ، كَمَا وَقَعَ فِي زَمَانِنَا فِي أَتْبَاعِ عَبْدِ الْوَهَّابِ الَّذِينَ خَرَجُوا مِنْ نَجْدٍ وَتَغَلَّبُوا عَلَى الْحَرَمَيْنِ وَكَانُوا يَنْتَحِلُونَ مَذْهَبَ الْحَنَابِلَةِ ، لَكِنَّهُمْ اعْتَقَدُوا أَنَّهُمْ هُمْ الْمُسْلِمُونَ وَأَنَّ مَنْ خَالَفَ اعْتِقَادَهُمْ مُشْرِكُونَ ، وَاسْتَبَاحُوا بِذَلِكَ قَتْلَ أَهْلِ السُّنَّةِ وَقَتْلَ عُلَمَائِهِمْ حَتَّى كَسَرَ اللَّهُ تَعَالَى شَوْكَتَهُمْ وَخَرَّبَ بِلَادَهُمْ وَظَفِرَ بِهِمْ عَسَاكِرُ الْمُسْلِمِينَ عَامَ ثَلَاثٍ وَثَلَاثِينَ وَمِائَتَيْنِ وَأَلْفٍ
رَأْي الْمَذْهَبِ الْمَالِكِيِّ :
মালেকী মাজহাবের মতামত :
وَقَالَ الشَّيْخُ أَحْمَدُ الصَّاوِيُّ الْمَالِكِيُّ فِي تَعْلِيقِهِ عَلَى الْجَلَالَيْن مَا نَصُّهُ [10] : “وقيل هَذِهِ الْآيَةِ نَزَلَتْ فِي الْخَوَارِجِ الَّذِينَ يُحَرِّفُون تَأْوِيلِ الْكِتَابِ وَالسُّنَّةِ وَيَسْتَحِلُّون بِذَلِك دِمَاءِ الْمُسْلِمِينَ وَأَمْوَالِهِمْ كَمَا هُوَ مُشَاهَدٌ الْآنَ فِي نظائرهم ، وَهُمْ فِرْقَة بِأَرْضِ الْحِجَازِ يُقَالُ لَهُمْ الوهابية يَحْسَبُونَ أَنَّهُمْ عَلَى شَىْءٍ إِلاَّ أَنَّهُمْ هُمُ الْكَاذِبُونَ ، اسْتَحْوَذَ عَلَيْهِمْ الشَّيْطَانُ فَأنْساهُمْ ذِكْرَ اللَّهِ أُولَئِكَ حِزْبُ الشَّيْطَانُ إلَّا أَنْ حِزْبَ الشَّيْطَان هُمُ الْخَاسِرُونَ ، نَسْأَلُ اللَّهَ الْكَرِيمِ أَنْ يَقْطَعَ دَابِرَهُم ” آه
হযরত আল্লামা শেখ আহমদ ইবনে মুহাম্মদ আসসাবী মালেকী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি
তিনি পবিত্র কোরআনের আয়াত –
أَن الشیطان لکم عَدُوّ فَاتَّخَذَه عَدُوًّا
অর্থাৎ নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের দুশমন। সুতরাং তোমরা তাকে দুশমন হিসেবে গ্রহণ করো। এর ব্যাখ্যায় খারেজীদের দৃষ্টান্ত পেশ করতে গিয়ে বলেন, বর্তমানে যে ফিরকা বা দল হেজাজে আত্মপ্রকাশ করেছে, যাদেরকে ওহাবী বলা হয়। তাদের ধারণা তারাই হকের উপর প্রতিষ্ঠিত। প্রকৃত পক্ষে এরা মিথ্যাবাদী। (তারীখে ওহাবীয়া পৃষ্ঠা ৬৫)
মসজিদে হারামের অন্যতম শিক্ষক আল্লামা সৈয়দ আহমদ ইবনে যি’নী দাহলান শাফেয়ী মক্কী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ১৩০৪ হিজরী) শেখ নজদী সম্পর্কে বলেন, শেখ নজদী বলতেন, হিজরী ষষ্ঠ শতাব্দী থেকে এ পর্যন্ত সবাই শিরকে লিপ্ত। সে মানুষের জন্য দ্বীনকে সংস্কার করেছে। যখন কেউ তার ধর্মে যোগদান করত এ অবস্থায় যে, ঐ ব্যক্তি পূর্বে হজ্ব আদায় করেছে, তখন তাকে বলত-পুনরায় হজ্ব কর; কারণ, প্রথম হজ্ব মুশরিক অবস্থায় আদায় করেছ; “তোমার হজ্ব আদায় হয়নি। বাইরের কেউ তার অনুসারী হলে তাকে বলত মুহাজির, আর এলাকার কেউ তাকে অনুসরণ করলে তাকে বলত আনসার । এতে বুঝা যায় যে,শেখ নজদী নবুওয়্যাতের দাবীদার। কিন্তু স্পষ্ট ভাষায় দাবী করার সাহস পায়নি। যদি সম্ভব হতো তাও দাবী করত। সে তার অনুসারীদের বলত, আমি তোমাদের জন্য নতুন দ্বীন এনেছি। (আদদুরারুস সানীয়া পৃষ্ঠা ৪৬ ও ৪৭, ইস্তাম্বুল; ফিতনাতুল ওহাবীয়া পৃষ্ঠা ৬৭ ইস্তাম্বুল, তুর্কী)।
শেখ নজদী তার ওহাবী আন্দোলনের সুদূর প্রসারী কর্মসূচী সাহাবা কেরামের মাজার শরীফ ভাঙ্গার মধ্য দিয়ে সূচনা করে। এ সম্পর্কে ওসমান ইবনে বশর বলেন, ১৪ হিজরীতে মুসাইলামা কাযযাব নামক ভন্ডনবীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে হযরত যায়েদ ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহ তা’আলা আনহ শহীদ হন। শেখ নজদী সর্ব প্রথম সেই হযরত যায়েদ ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর মাজার শরীফ ভাঙ্গার দৃঢ় ইচ্ছে পোষণ করলো । অতঃপর আমীর ওসমানের সম্মতিক্রমে ছয়শত সৈন্য নিয়ে ‘জাবীলা’ নামক স্থানে যায়েদ ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর মাজার শরীফ আক্রমণ করে স্বহস্তে ভেঙ্গে নিশ্চিহ্ন করে দেয়।
(তারীখে নজদ ও হেজায পৃষ্ঠা-৪২; তারীখে ওহাবীয়া পৃষ্ঠা ৪৯; কিতাবুত তাওহিদ পৃষ্ঠা ১৩)।
অতঃপর শেখ নজদী আরো শক্তিশালী পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজনে ‘দেরঈয়া’ গমন করে তার একান্ত অনুগত শিষ্য ইবনে সুয়াইলামের মাধ্যমে দেরঈয়ার গভর্ণর মুহাম্মদ ইবনে সউদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে তার সার্বিক সহযোগিতা কামনা করে। প্রথমদিকে ইবনে সউদকে সম্মত করতে ব্যর্থ হয়ে তার স্ত্রীর মাধ্যমে অমীর মুহাম্মদ ইবনে সউদকে সম্মত করতে সক্ষম হয়। (তারিখে নজদ ও হেজাজ পৃষ্ঠা
তারীখে নজদ ও হেজায পৃষ্ঠা-৪২; তারীখে ওহাবীয়া পৃষ্ঠা ৪৯; কিতাবুত তাওহিদ পৃষ্ঠা ১৩)
অতঃপর শেখ নজদী আরো শক্তিশালী পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজনে ‘দেরঈয়া’ গমন করে তার একান্ত অনুগত শিষ্য ইবনে সুয়াইলামের মাধ্যমে দেরঈয়ার গভর্ণর মুহাম্মদ ইবনে সউদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে তার সার্বিক সহযোগিতা কামনা করে। প্রথমদিকে ইবনে সউদকে সম্মত করতে ব্যর্থ হয়ে তার স্ত্রীর মাধ্যমে অমীর মুহাম্মদ ইবনে সউদকে সম্মত করতে সক্ষম হয়। (তারিখে নজদ ও হেজাজ পৃষ্ঠা ৪৩)।
শেখ নজদী প্রসংগেঃ
এ অত্যাচারী সম্প্রদায়ের বিধান কি? যাদের প্রথম নেতা মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহাব নজদী (১১১১ হিজরী-১২০৬ হি.),
যে তৎকালীন বাদশাহের সাথে বিদ্রোহ করে মক্কা শরীফের উপর প্রভুত্ব স্থাপন করেছে।
তথাকার আলেম সমাজের উপর চালিয়েছে বেপরওয়া হত্যাযজ্ঞ।
আউলিয়া কেরামের মাজারসমূহকে বানিয়েছে শৌচাগার।
হযরত রাসুলে করীমের (ﷺ) রাওযায়ে আক্বদসকে বৃহত্তম প্রতিমা রূপে আখ্যায়িত করেছে।
আইম্মায়ে মুজতাহিদীন এবং ফুকাহায়ে মুকাল্লিদীনকে (তারা নিজেরা পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং অপরকে পথভ্রষ্ট করেছে) এ বাণীর আওতাভুক্ত করেছে।
নিজের কুপ্রবৃত্তিকে স্থির করেছে সত্য মিথ্যার মাপকাঠি।
বিভিন্ন অলংকারিক বর্ণনা দ্বারা হুজুর পুর নূর (ﷺ) ’র অবমাননা করতো।
এ বদ আকীদার উপর নিজ বংশধর এবং অনুসারীদেরকে লাগিয়ে রাখত।
নিজ অনুগামী ব্যতীত অন্যদেরকে মনে করতো মুশরিক।
দরূদ শরীফ পড়াতে অনেক কষ্টদায়ক শাস্তি পেতে হত । এমনকি এক অন্ধ ব্যক্তি আযানের পর মসজিদের মিনারায় সালাত সালাম পড়ার কারণে তাকে শহীদ করে দিয়েছে।
আর সে বজ্র কণ্ঠে ঘোষণা দিয়েছেঃএকজন পতিতার ঘরে বাদ্য-বাজনা করা মসজিদের মিনারায় দরূদ শরীফ পাঠ করার গুনাহর চেয়ে অধিকতর কম।অর্থাৎ নবী (ﷺ) ’র উপর দরূদ পড়া পতিতার ঘরে বাদ্য-বাজনা করার চেয়েও মারাত্মক গুনাহ। (আদুরারুস্ সানিয়া ফীররদ্দে আলাল ওয়াহাবিয়া পৃঃ নং ৪১)
তাঁর শিষ্যরা বিভিন্ন ভাবে নবী (ﷺ) ’র শানে মানহানিকর উক্তি করতো আর সে তা শুনে আনন্দিত হতো। যেমনিভাবে উল্লেখ করা হয়েছেঃশেখ নজদীর এক অনুসারী বলেছিল আমার এ লাঠি মুহাম্মদ ﷺ এর চেয়ে উত্তম। কেননা তা সাপ ইত্যাদি নিধনে উপকারে আসে, আর মুহাম্মদ (ﷺ) নিশ্চয় মরে গেছেন। তাঁর মধ্যে আদৌ কোন ফায়দা অবশিষ্ট নেই; তিনি শুধুমাত্র একজন দূত। আর তিনি তো চলেই গেছেন। [কৃতঃ আল্লামা ছৈয়্যদ আহমদ ইবনে যিনী দাহলান (রহঃ) : আদুরার সানিয়া ফীররদ্দি আলাল ওয়াহাবিয়্যাহ পৃষ্ঠা নং-৪২]
রাসুলের (ﷺ) শানে কটুক্তি করার মধ্যেই তার বেয়াদবী সীমাবদ্ধ ছিলনা বরং সে মাযহাবের ইমামদের সাথেও প্রতারণা করেছে। বাহ্যিকভাবে সে (শেখ নজদী) হাম্বলী মতাবলম্বী দাবী করলেও প্রকৃতপক্ষে হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রাহমাতুল্লাহি তায়ালা আলায়হির সাথে তার কোন সম্পর্কই ছিলনা। নবুয়ত দাবী করার অভিলাষী ছিল বটে, তবে তা ব্যক্ত করার পূর্বেই মৃত্যু বরণ করতঃ মন্দ কর্মের পরিনাম ভোগ করে। আর নিম্নোক্ত আয়াত শরীফের আওতায় গণ্য হয়ে যায়।
إِنَّ الَّذِينَ يُؤْذُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ لَعَنَهُمُ اللَّهُ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَأَعَدَّ لَهُمْ عَذَابًا مُّهِينًا –
নিশ্চয়ই যারা কষ্ট দেয় আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলকে, তাদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত দুনিয়া ও আখিরাতে।(সুরা আল আহযাব ৫৭)
নবী করিম সাল্লাল্লাহ তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহান শানে ইতিহাসের জঘন্যতম বেয়াদবী
শেখ নজদীর উপস্থিতিতে মদীনা মুনাওয়ারার রওযা শরীফকে লক্ষ্য করে তার জনৈক অনুসারী বলল-
عصای هَذَا خیر مِنْ مُحَمَّدٍ لانتها ینتفع بِهَا قُتِل الحیته و نَحْوِهَا د مُحَمّدٌ قَدْ مَاتَ و لَم یبق فیه أَنْفَع أَصْلًا وَإِنَّمَا هُوَ طارش و قَد مضی-
অর্থাৎ আমার এ লাঠি মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু তা ‘ আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের) চেয়ে উত্তম। কেননা এটা সাপ মারতে বা আরও অনেক কাজে উপকারে আসে। আর মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু তা ‘ আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিশ্চয়ই মরে গেছেন। তার মধ্যে উপকার করার আদৌ কোন ক্ষমতা নেই। তিনি ছিলেন শুধুমাত্র বার্তাবাহক আর তিনি তো চলেও গেছেন। (আদদুরাসসমানীয়া , পৃষ্ঠা ৪২ , আশশেহাবুসসাকিব , পৃষ্ঠা ৪৭ ; মৌং হোসাইন আহমদ মাদানী দেওবন্দী)
হাদীস শরীফের আলোকে
٦٢٧١ – وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ ﷺ -: «اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي شَامِنَا اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي يَمَنِنَا. قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ وَفِي نَجْدِنَا. قَالَ: اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي شَامِنَا اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي يَمَنِنَا. قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ وَفِي نَجْدِنَا، فَأَظُنُّهُ قَالَ فِي الثَّالِثَةِ: هُنَاكَ الزَّلَازِلُ وَالْفِتَنُ وَبِهَا يَطْلُعُ قَرْنُ الشَّيْطَانِ» . رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ
অনুবাদ: হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, প্রিয়নবী ﷺ
(একদিন) এভাবে দু’আ করেছিলেন যে, হে আল্লাহ্! আপনি আমাদের শাম তথা সিরিয়া দেশে বরকত দান করুন, হে আল্লাহ্ আপনি আমাদের ইয়েমেন দেশে বরকত দান করুন (উপস্থিত কিছু) লোক আবেদন করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমাদের নজদের জন্যও। তিনি পুনরায় দু‘আ করতে লাগলেন, হে আল্লাহ্ আমাদের জন্য আমাদের শাম দেশে বরকত দান করুন, হে আল্লাহ্ আমাদের জন্য ইয়েমেন দেশে বরকত দান করুন, (কিছু লোক) পুনরায় আরজ করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমাদের নজদের জন্যও। আমার মনে হয় তিনি তৃতীয়বারে এরশাদ করলেন, সেখান থেকে ভূমি কম্পন, ফিতনা-ফ্যাসাদ এবং শয়তানের শিং (ওহাবীয়তের ফিতনা) বের হবে। [বুখারী শরীফ: কিতাবুল ফিতান, হাদীস নম্বর- ৬৬৮١মিশকাতুল মাসাবিঃ ৫৮২ পৃষ্ঠা
كِتَابِ الْبُخَارِيِّ كِتَاب الِاسْتِسْقَاء -١٠٣٧- كِتَاب الْفَرْض الْخَمْس -٣١٠٤ كِتَاب بَدَأ الْخَلْق ٣٢٧٩-كتاب الْمَنَاقِب ٣٥١١-كتاب الْفِتَن ٧٠٩٤
بَاب قُدُوْمِ الْأَشْعَرِيِّيْنَ وَأَهْلِ الْيَمَنِ
إِسْمَاعِيْلُ قَالَ حَدَّثَنِيْ أَخِيْ عَنْ سُلَيْمَانَ عَنْ ثَوْرِ بْنِ زَيْدٍ عَنْ أَبِي الْغَيْثِ عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ الإِيْمَانُ يَمَانٍ وَالْفِتْنَةُ هَا هُنَا هَا هُنَا يَطْلُعُ قَرْنُ الشَّيْطَانِ.
৪৩৮৯. আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঈমান হল ইয়ামানীদের। আর ফিতনা হল ওখানে, যেখানে উদিত হল শয়তানের শিং। [৩৩০১] (আধুনিক প্রকাশনী ৪০৪০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪০৪৪)صحيح البخاري -كتاب المغازي ٤٣٨٩-
সহীহ আল বুখারী – মাগাজির বই 4389-
حَدَّثَنَا أَبُوْ الْيَمَانِ أَخْبَرَنَا شُعَيْبٌ عَنْ الزُّهْرِيِّ قَالَ حَدَّثَنِيْ سَالِمُ بْنُ عَبْدِ اللهِ أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ وَهُوَ عَلَى الْمِنْبَرِ أَلَا إِنَّ الْفِتْنَةَ هَا هُنَا يُشِيْرُ إِلَى الْمَشْرِقِ مِنْ حَيْثُ يَطْلُعُ قَرْنُ الشَّيْطَانِ
৩৫১১. ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মিম্বরের উপর উপবিষ্ট অবস্থায় পূর্ব দিকে* ইঙ্গিত করে বলতে শুনেছি, সাবধান! ফিত্না ফাসাদের উদ্ভব ঐদিক থেকেই হবে এবং ঐদিক থেকেই শয়তানের শিং উদিত হবে। (৩১০৪) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩২৪৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩২৫৮)صحيح البخاري كتاب المناقب ٣١١١,,সহিহ আল বুখারী, 3111
١٦ – بَابُ الْفِتْنَةُ مِنَ الْمَشْرِقِ مِنْ حَيْثُ يَطْلُعُ قَرْنَا الشَّيْطَانِ
٤٥ – (٢٩٠٥) حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا لَيْثٌ، ح وحَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ رُمْحٍ، أَخْبَرَنَا اللَّيْثُ، عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَهُوَ مُسْتَقْبِلُ الْمَشْرِقِ، يَقُولُ: «أَلَا إِنَّ الْفِتْنَةَ هَاهُنَا، أَلَا إِنَّ الْفِتْنَةَ هَاهُنَا، مِنْ حَيْثُ يَطْلُعُ قَرْنُ الشَّيْطَانِ»
[شرح محمد فؤاد عبد الباقي]
[ ش (من حيث يطلع قرنا الشيطان) انظر الحديث (٥١) في ١/ ٨١]
৭১৮৬-(৪৭/…) হারমালাহ ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ….. ‘আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রা) থেকে বর্ণিত। একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূর্বমুখী হয়ে বললেনঃ ফিতনাহ এদিক থেকে-ফিতনাহ এদিক থেকে-অবশ্যই ফিতনাহ এদিক থেকে-যেখান থেকে শাইতানের (শয়তানের) শিং উদিত হবে। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭০৩০, ইসলামিক সেন্টার ৭০৮৭)
٤٦ – (٢٩٠٥) وَحَدَّثَنِي عُبَيْدُ اللهِ بْنُ عُمَرَ الْقَوَارِيرِيُّ، وَمُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى، ح وَحَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللهِ بْنُ سَعِيدٍ، كُلُّهُمْ عَنْ يَحْيَى الْقَطَّانِ، قَالَ الْقَوَارِيرِيُّ: حَدَّثَنِي يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ، عَنْ عُبَيْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ، حَدَّثَنِي نَافِعٌ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَامَ عِنْدَ بَابِ حَفْصَةَ، فَقَالَ: بِيَدِهِ نَحْوَ الْمَشْرِقِ «الْفِتْنَةُ هَاهُنَا مِنْ حَيْثُ يَطْلُعُ قَرْنُ الشَّيْطَانِ» قَالَهَا مَرَّتَيْنِ أَوْ ثَلَاثًا، وقَالَ عُبَيْدُ اللهِ بْنُ سَعِيدٍ فِي رِوَايَتِهِ: قَامَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عِنْدَ بَابِ عَائِشَةَ
৭১৮৫-(৪৬/…) উবাইদুল্লাহ ইবনু উমার আল কাওয়ারিরী, মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না, উবাইদুল্লাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ….. ইবনু উমার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাফসাহ (রা এর দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় তিনি তার আঙ্গুল দ্বারা পূর্বপ্রান্তের দিকে ইশারা করে বললেন, ফিতনাহ এদিক থেকে-যেদিক থেকে শাইতানের (শয়তানের) শিং উদিত হবে। এ কথাটি তিনি দু’ বা তিনবার বলেছেন।
বর্ণনাকারী উবাইদুল্লাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ) তার বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়িশাহ (রা এর দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭০২৯, ইসলামিক সেন্টার ৭০৮৬)
٤٧ – (٢٩٠٥) وَحَدَّثَنِي حَرْمَلَةُ بْنُ يَحْيَى، أَخْبَرَنَا ابْنُ وَهْبٍ، أَخْبَرَنِي يُونُسُ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ سَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللهِ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ وَهُوَ مُسْتَقْبِلُ الْمَشْرِقِ: «هَا إِنَّ الْفِتْنَةَ هَاهُنَا، هَا إِنَّ الْفِتْنَةَ هَاهُنَا، هَا إِنَّ الْفِتْنَةَ هَاهُنَا، مِنْ حَيْثُ يَطْلُعُ قَرْنُ الشَّيْطَانِ»
৭১৮৪-(৪৫/২৯০৫) কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ, মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ (রহঃ) ….. ইবনু উমর (রা) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূর্বমুখী ছিলেন। এমতাবস্থায় তিনি রসূলুল্লাহ ﷺ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন, ফিতনাহ এদিক থেকে, ফিতনাহ এদিক থেকে-যেখান থেকে শাইতানের (শয়তানের) শিং উদিত হবে। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭০২৮, ইসলামিক সেন্টার ৭০৮৪)
٤٨ – (٢٩٠٥) حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ عِكْرِمَةَ بْنِ عَمَّارٍ، عَنْ سَالِمٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: خَرَجَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ بَيْتِ عَائِشَةَ، فَقَالَ: «رَأْسُ الْكُفْرِ مِنْ هَاهُنَا، مِنْ حَيْثُ يَطْلُعُ قَرْنُ الشَّيْطَانِ» يَعْنِي الْمَشْرِقَ
٤٩ – (٢٩٠٥) وَحَدَّثَنَا ابْنُ نُمَيْرٍ، حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ يَعْنِي ابْنَ سُلَيْمَانَ، أَخْبَرَنَا حَنْظَلَةُ، قَالَ: سَمِعْتُ سَالِمًا، يَقُولُ: سَمِعْتُ ابْنَ عُمَرَ، يَقُولُ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يُشِيرُ بِيَدِهِ نَحْوَ الْمَشْرِقِ، وَيَقُولُ: «هَا إِنَّ الْفِتْنَةَ هَاهُنَا، هَا إِنَّ الْفِتْنَةَ هَاهُنَا» ثَلَاثًا «حَيْثُ يَطْلُعُ قَرْنَا الشَّيْطَانِ»
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ عِكْرِمَةَ بْنِ عَمَّارٍ، عَنْ سَالِمٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مِنْ بَيْتِ عَائِشَةَ فَقَالَ “ رَأْسُ الْكُفْرِ مِنْ هَا هُنَا مِنْ حَيْثُ يَطْلُعُ قَرْنُ الشَّيْطَانِ ” يَعْنِي الْمَشْرِقَ .
মুসলিম শরীফ নং ৭১৮৭-(৪৮/…) আবু বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ্ (রহঃ) ….. ইবনু উমর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়িশাহ (রা) এর ঘর থেকে বের হয়ে বললেনঃ কুফুরীর উৎস এদিক থেকে-যেদিক থেকে শাইতানের (শয়তানের) শিং উদিত হবে। অর্থাৎ- পূর্বদিক থেকে। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭০৩১, ইসলামিক সেন্টার ৭০৮৮)
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ يَكُونُ فِي آخِرِ الزَّمَانِ دَجَّالُونَ كَذَّابُونَ يَأْتُونَكُمْ مِنَ الْأَحَادِيثِ بِمَا لَمْ تَسْمَعُوْه أَنْتُمْ وَلَا ابَاؤُكُمْ فَإِيَّاكُمْ وَإِيَّاهُمْ لَا يُضِلُّونَكُمْ وَلَا يَفْتِنُونَكُمْ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
১৫৪-[১৫] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ﷺ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শেষ যামানায় এমন মিথ্যুক দাজ্জাল লোক হবে, যারা তোমাদের কাছে এমন সব (মনগড়া) হাদীস নিয়ে উপস্থিত হবে যা তোমরা শুনোনি, তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেননি। অতএব সাবধান! তাদের থেকে দূরে থাকবে, যাতে তারা তোমাদেরকে গুমরাহ করতে বা বিপদে ফেলতে না পারে। (মুসলিম শরীফ নং ৪৪
وَعَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: اِقْرَؤُوا الْقُرْاٰنَ بِلُحُونِ الْعَرَبِ وَأَصْوَاتِهَا وَإِيَّاكُمْ وَلُحُونَ أَهْلِ الْعِشْقِ وَلُحُوْنَ أَهْلِ الْكِتَابَيْنِ وَسَيَجِىئُ بَعْدِىْ قوم يرجعُونَ بِالْقُرْاٰنِ ترجع الْغِنَاءِ وَالنَّوْحِ لَا يُجَاوِزُ حَنَاجِرَهُمْ مَفْتُونَهٌ قُلُوبُهُمْ وَقُلُوبُ الَّذِينَ يُعْجِبُهُمْ شَأْنُهُمْ. رَوَاهُ الْبَيْهَقِىُّ فِىْ شُعَبِ الْإِيْمَانِ
২২০৭-[২১] হুযায়ফাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহﷺ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুরআন পড়ো ‘আরবদের স্বর ও সুরে। আর দূরে থাকো আহলে ইশক ও আহলে কিতাবদের পদ্ধতি হতে। আমার পর খুব তাড়াতাড়ি এমন কিছু লোকের আগমন ঘটবে, যারা কুরআন পাঠে গান ও বিলাপের সুর ধরবে। কুরআন মাজীদ তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করে অন্তরের দিকে যাবে না। তাদের অন্তর হবে দুনিয়ার মোহগ্রস্ত। এভাবে তাদের অন্তরও মোহগ্রস্ত হবে যারা তাদের পদ্ধতি ও সুরে কুরআন তিলাওয়াত করবে। (বায়হাক্বী- শু‘আবূল ঈমান)[1]আল মু‘জামুল আওসাত ৭২২৩, শু‘আবূল ঈমান ২৪০৬,
حَدَّثَنِي أَبُو الطَّاهِرِ، أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ وَهْبٍ، أَخْبَرَنِي يُونُسُ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، أَخْبَرَنِي أَبُو سَلَمَةَ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، ح . وَحَدَّثَنِي حَرْمَلَةُ بْنُ يَحْيَى، وَأَحْمَدُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْفِهْرِيُّ، قَالاَ أَخْبَرَنَا ابْنُ وَهْبٍ، أَخْبَرَنِي يُونُسُ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، أَخْبَرَنِي أَبُو سَلَمَةَ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، وَالضَّحَّاكُ الْهَمْدَانِيُّ، أَنَّ أَبَا سَعِيدٍ الْخُدْرِيَّ، قَالَ بَيْنَا نَحْنُ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ يَقْسِمُ قَسْمًا أَتَاهُ ذُو الْخُوَيْصِرَةِ وَهُوَ رَجُلٌ مِنْ بَنِي تَمِيمٍ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ اعْدِلْ . قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ” وَيْلَكَ وَمَنْ يَعْدِلُ إِنْ لَمْ أَعْدِلْ قَدْ خِبْتَ وَخَسِرْتَ إِنْ لَمْ أَعْدِلْ ” . فَقَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ رضى الله عنه يَا رَسُولَ اللَّهِ ائْذَنْ لِي فِيهِ أَضْرِبْ عُنُقَهُ . قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ” دَعْهُ فَإِنَّ لَهُ أَصْحَابًا يَحْقِرُ أَحَدُكُمْ صَلاَتَهُ مَعَ صَلاَتِهِمْ وَصِيَامَهُ مَعَ صِيَامِهِمْ يَقْرَءُونَ الْقُرْآنَ لاَ يُجَاوِزُ تَرَاقِيَهُمْ يَمْرُقُونَ مِنَ الإِسْلاَمِ كَمَا يَمْرُقُ السَّهْمُ مِنَ الرَّمِيَّةِ يُنْظَرُ إِلَى نَصْلِهِ فَلاَ يُوجَدُ فِيهِ شَىْءٌ ثُمَّ يُنْظَرُ إِلَى رِصَافِهِ فَلاَ يُوجَدُ فِيهِ شَىْءٌ ثُمَّ يُنْظَرُ إِلَى نَضِيِّهِ فَلاَ يُوجَدُ فِيهِ شَىْءٌ – وَهُوَ الْقِدْحُ – ثُمَّ يُنْظَرُ إِلَى قُذَذِهِ فَلاَ يُوجَدُ فِيهِ شَىْءٌ سَبَقَ الْفَرْثَ وَالدَّمَ . آيَتُهُمْ رَجُلٌ أَسْوَدُ إِحْدَى عَضُدَيْهِ مِثْلُ ثَدْىِ الْمَرْأَةِ أَوْ مِثْلُ الْبَضْعَةِ تَدَرْدَرُ يَخْرُجُونَ عَلَى حِينِ فُرْقَةٍ مِنَ النَّاسِ ” . قَالَ أَبُو سَعِيدٍ فَأَشْهَدُ أَنِّي سَمِعْتُ هَذَا مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَشْهَدُ أَنَّ عَلِيَّ بْنَ أَبِي طَالِبٍ – رضى الله عنه –
قَاتَلَهُمْ وَأَنَا مَعَهُ فَأَمَرَ بِذَلِكَ الرَّجُلِ فَالْتُمِسَ فَوُجِدَ فَأُتِيَ بِهِ حَتَّى نَظَرْتُ إِلَيْهِ عَلَى نَعْتِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الَّذِي نَعَتَ
মুসলিম শরীফ নং ২৩৪৬–(১৪৮/…) আবূ ত্বহির, হারমালাহ ইবনু ইয়াহইয়া ও আহমাদ ইবনু আবদুর রহমান আল ফিহরী (রহঃ) ….. আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাথেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা রসূলুল্লাহﷺ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে উপস্থিত ছিলাম এবং তিনি কিছু জিনিস বণ্টন করছিলেন। এমন সময় বানী তামীম গোত্রের যুল-খুওয়াই সিরাও নামক এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! ইনসাফ করুন। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হতভাগ্য, তোমার জন্য আফসোস! আমি যদি ইনসাফ না করি, তাহলে কে ইনসাফ করবে? আমি যদি ইনসাফ না করি তাহলে তুমি তো ক্ষতিগ্রস্ত ও বিফল হয়ে যাবে।
অতঃপর উমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রা বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে তার শিরোশ্ছেদ করার অনুমতি দিন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাকে ছেড়ে দাও, কেননা তার এমন কিছু সঙ্গী সাথি রয়েছে যাদের (/নামায) সিয়ামের তুলনায় তোমাদের সলাত (সালাত/নামাজ/নামায) সিয়াম (রোজা/রোযা) নিম্নমানের বলে মনে হয়। তারা কুরআন পাঠ করবে অথচ তা তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তীর যেভাবে শিকার ভেদ করে বেরিয়ে যায়। তারাও সেভাবে ইসলাম থেকে বেরিয়ে যাবে।
অতঃপর সে (ধনুকধারী) তীরের ফলার মূলভাগ পরীক্ষা করে দেখে। এতেও সে কিছুই দেখতে পায় না, তারপর সে তীর পরীক্ষা করে দেখে এতেও সে দেখে না। অবশেষে সে তীরের পালক পরীক্ষা করে দেখে এতেও সে কিছু পায় না, তীর এত দ্রুত গতিতে বেরিয়ে যায় যে, রক্ত বা মলের দাগ এতে লাগতে পারে না। এ সম্প্রদায়কে চেনার উপায় হলো, এদের মধ্যে এমন এক ব্যক্তির আবির্ভাব হবে যার এক বাহুতে মহিলাদের স্তনের ন্যায় একটি অতিরিক্ত মাংসপেশী থাকবে এবং তা থলথল করতে থাকবে। এদের আবির্ভাব এমন সময় হবে যখন মানুষের মধ্যে বিরোধ দেখা দেবে।
আবূ সাঈদ (রা) বলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, এ কথা আমি রসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে শুনেছি এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আলী ইবনু আবূ তলিব (রাযিঃ) তাদের সাথে যখন যুদ্ধ করেছিলেন, আমি স্বয়ং তার সাথে ছিলাম। অতঃপর তিনি উল্লেখিত ব্যক্তিকে খুঁজে বের করে আনার জন্য নির্দেশ দিলেন। তাকে খুঁজে পাওয়া গেল এবং ‘আলীর সামনে উপস্থিত করা হলো। আমি তাকে প্রত্যক্ষ করে দেখলাম তার মধ্যে সব চিহ্ন ও বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান রয়েছে যা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সম্বন্ধে বলেছেন। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২৩২৪, ইসলামীক সেন্টার ২৩২৫)
وَعَنْ عَلِىٍّ قَالَ : سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ يَقُولُ : «سَيَخْرُجُ قَوْمٌ فِى اخِرِ الزَّمَانِ حُدَّاثُ الْأَسْنَانِ سُفَهَاءُ الْأَحْلَامِ يَقُولُونَ مِنْ خَيْرِ قَوْلِ الْبَرِيَّةِ لَا يُجَاوِزُ إِيمَانُهُمْ حَنَاجِرَهُمْ يَمْرُقُوْنَ مِنَ الدِّينِ كَمَا يَمْرُقُ السَّهْمُ مِنَ الرَّمِيَّةِ فَأَيْنَمَا لَقِيتُمُوهُمْ فَاقْتُلُوهُمْ فَإِنَّ فِىْ قَتْلِهِمْ أَجْرًا لِمَنْ قَتَلَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ». مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
মিশকাত শরীফ পৃষ্ঠা নং হাদিস নং৩৫৩৫-[৩] ‘আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেনঃ শীঘ্রই শেষ যুগে এমন কিছু লোকের উদ্ভব ঘটবে যারা হবে তরুণ যুবক এবং নির্বোধ। তারা সমাজে সর্বোত্তম কথা বলবে কিন্তু তাদের ঈমান তাদের গলধঃকরণ হবে না। তারা দীন হতে এমনভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে যেমন তীর ধনুক ভেদ করে বেরিয়ে যায়। অতএব তোমরা তাদেরকে যেখানে পাও হত্যা কর। কেননা তাদেরকে যারাই হত্যা করবে কিয়ামত দিবসে তারাই পুরস্কৃত হবে। ([1] সহীহ : বুখারী ৬৯৩০, মুসলিম ১০৬৬, নাসায়ী ৪১০২, আহমাদ ১০৮৬।
بَابُ قَتْلِ أَهْلِ الرِّدَّةِ وَالسُّعَاةِ بِالْفَسَادِ
وَعَنْ أَبِىْ سَعِيدٍ الْخُدْرِىِّ وَأَنَسِ بْنِ مَالِكٍ عَنْ رَسُوْلِ اللّٰهِ ﷺ قَالَ : «سَيَكُوْنُ فِى امَّتِىْ اِخْتِلَافٌ وَفُرْقَةٌ قَوْمٌ يُحْسِنُوْنَ الْقِيْلَ ويُسْيْئُوْنَ الْفِعْلَ يَقْرَؤُوْنَ الْقُرْاٰنَ لَا يُجَاوِزُ تَرَاقِيَهُمْ يَمْرُقُونَ مِنَ الدِّينِ مُرُوْقَ السَّهمِ فِى الرَّمِيَّةِ لَا يَرْجِعُوْنَ حَتّٰى يَرْتَدَّ السَّهْمُ عَلٰى فُوقِه هُمْ شَرُّ الْخَلْقِ وَالْخَلِيقَةِ طُوْبٰى لِمَنْ قَتَلَهُمْ وَقَتَلُوهُ يَدْعُوْنَ إِلٰى كِتَابِ اللّٰهِ وَلَيْسُوْا منَّا فِىْ شيءٍ مَنْ قَاتَلَهُمْ كَانَ أَوْلٰى بِاللّٰهِ مِنْهُمْ قَالُوا : يَا رَسُوْلَ اللّٰهِ! مَا سِيمَاهُمْ؟ قَالَ : «التَّحْلِيْقُ». رَوَاهُ أَبُوْ دَاودَ
মিশকাত শরীফ পৃষ্ঠা নং হাদিস নং মিশকাত শরীফ ৩৫৪৩-[১১] আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী ও আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তারা উভয়ে বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অতি শীঘ্রই আমার উম্মাতের মধ্যে মতানৈক্য ও দলাদলি সৃষ্টি হবে। তন্মধ্যে একদল এরূপ হবে যে, তারা খুব সদাচরণ করবে কিন্তু তাদের ‘আমল খারাপ হবে। তারা কুরআন মাজীদ পাঠ করবে কিন্তু তা তাদের গলদেশ অতিক্রম করতে পারবে না। অতঃপর তারা দীন থেকে এমনভাবে বের হয়ে যাবে যেভাবে তীর শিকার ভেদ করে বের হয়ে যায়। তারা দীনের দিকে ফিরে আসবে না, যেভাবে নিক্ষিপ্ত তীর ধনুকের দিকে ফিরে আসে না। তারা মানুষ এবং পশু-প্রাণীর মাঝে সবচেয়ে নিকৃষ্টতম। এমতাবস্থায় সুসংবাদ ঐ সকল লোকেদের জন্য যারা তাদেরকে হত্যা করবে (গাজী হবে) এবং তারা যাকে হত্যা করবে (শহীদ হবে)। তারা আল্লাহর কিতাবের দিকে লোকেদেরকে আহবান করবে। অথচ তাদের কোনো কিছুই আমাদের সুন্নাত অনুযায়ী হবে না। অতএব যে ব্যক্তি তাদের সাথে যুদ্ধ করবে সে আল্লাহ তা‘আলার সবচেয়ে প্রিয়ভাজন হবে। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! তাদের পরিচয়-নমুনা কি? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, মাথা মুন্ডানো। [1] সহীহ : আবূ দাঊদ ৪৭৬৫, ইবনু মাজাহ ১৭৫, আহমাদ ১৩৩৮, সহীহ আল জামি‘ ৩৬৬৮।
وَعَنْ شَرِيكِ بْنِ شِهَابٍ قَالَ : كُنْتُ أَتَمَنّٰى أَنْ أَلْقٰى رَجُلًا مِنْ أَصْحَابِ النَّبِىِّ ﷺ أَسْأَلُه عَنِ الْخَوَارِجِ فَلَقِيْتُ أَبَا بَرْزَةَ فِىْ يَوْمِ عِيدٍ فِىْ نَفَرٍ مِنْ أَصْحَابِه فَقُلْتُ لَه : هَلْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ يَذْكُرُ الْخَوَارِجَ؟ قَالَ : نَعَمْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ بِأُذُنَىَّ وَرَأَيْتُه بِعَيْنَيَّ : أَتٰى رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ بِمَالٍ فَقَسَمَه فَأَعْطٰى مَنْ عَنْ يَمِينِه وَمَنْ عَنْ شِمَالِه وَلَمْ يُعْطِ مَنْ وَرَاءَه شَيْئًا. فَقَامَ رَجُلٌ مِنْ وَرَائِه فَقَالَ : يَا مُحَمَّدُ مَا عَدَلْتَ فِى الْقِسْمَةِ رَجُلٌ أَسْوَدُ مَطْمُومُ الشَّعْرِ عَلَيْهِ ثَوْبَانِ أَبْيَضَانِ فَغَضِبَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ غَضَبًا شَدِيدًا وَقَالَ : «وَاللّٰهِ لَا تَجِدُوْنَ بَعْدِىْ رَجُلًا هُوَ أَعْدَلُ مِنِّىْ» ثُمَّ قَالَ : «يَخْرُجُ فِى اٰخِرِ الزَّمانِ قومٌ كأنَّ هٰذَا مِنْهُمْ يَقْرَؤُوْنَ الْقُرْاٰنَ لَا يُجَاوِزُ تَرَاقِيَهُمْ يَمْرُقُوْنَ مِنَ الْإِسْلَامِ كَمَا يَمْرُقُ السَّهْمُ مِنَ الرَّمِيَّةِ سِيمَاهُمُ التَّحْلِيْقُ لَا يَزَالُوْنَ يَخْرُجُوْنَ حَتّٰى يَخْرُجَ اٰخِرُهُمْ مَعَ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ فَإِذَا لَقِيتُمُوهُمْ هُمْ شَرُّ الْخَلْقِ وَالْخَلِيْقَةِ». رَوَاهُ النَّسَائِىِّ
মিশকাত শরীফ পৃষ্ঠা নং হাদিস নং৩৫৫৩-[২১] শরীক ইবনু শিহাব (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি তীব্র আকাঙ্ক্ষা পোষণ করছিলাম যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোনো সাহাবীর সাথে সাক্ষাৎ করে তাঁর নিকট খারিজীদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করব। পরিশেষে এক ঈদের দিন আবূ বারযাহ্ -এর সাথে তাঁর বন্ধুদের উপস্থিতিতে সাক্ষাৎ করলাম। অতঃপর তাঁর নিকট জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে খারিজীদের ব্যাপারে আলোচনা করতে শুনেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি আমার দুই কানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি এবং আমি আমার দুই চোখ দিয়ে দেখেছি। একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট কিছু ধন-সম্পদ আসলে তিনি তা বিলিয়ে দিলেন। যে তাঁর ডানদিকে ছিল তাকে দিলেন এবং তাঁর বামদিকে ছিল তাকেও দিলেন। কিন্তু যে তার পেছনে ছিল তাকে কিছুই দিলেন না।পরিশেষে তাঁর পেছনে বসা লোকেদের মধ্য থেকে একজন দাঁড়িয়ে বলল, হে মুহাম্মাদ! বণ্টনের ক্ষেত্রে তুমি ইনসাফ কায়িম করনি। সে ব্যক্তি কালো বর্ণের ও মাথা ছিল মুন্ডানো এবং তার গায়ে ছিল দু’টি সাদা চাদর। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাগস্বরে বললেন, আল্লাহর কসম! আমার পরে তোমরা আর কাউকে আমার চেয়ে বেশি ন্যায়বান ও ইনসাফকারী পাবে না। আরো বললেন, শেষ যুগে একটি দল বের হবে, মনে হয় যেন এ ব্যক্তি তাদেরই মধ্য থেকে একজন। তারা কুরআন পড়বে, কিন্তু তা তাদের গলধঃকরণ হবে না। তারা ইসলাম থেকে এরূপে বেরিয়ে যাবে যেভাবে নিক্ষিপ্ত তীর শিকার ভেদ করে বের হয়ে যায়। তাদের পরিচয়-নমুনা হলো- তাদের মাথা মুন্ডিত থাকবে। তারা সর্বাবস্থায় আবির্ভূত হতে থাকবে। পরিশেষে তাদের সর্বশেষ দলটি বের হবে মাসীহে দাজ্জাল-এর সাথে। সুতরাং তোমরা যেখানেই তাদেরকে দেখবে হত্যা করে ফেলবে। কেননা, তারা (জীবের মধ্যে) নিকৃষ্টতম সৃষ্টি এবং সবচেয়ে মন্দাকৃতির লোক। (নাসায়ী)[1]৪১০৩
وَعَنْ أَبِىْ غَالِبٍ رَأى أَبُوْ اُمَامَةَ رُؤُوْسًا مَنْصُوْبَةً عَلٰى دَرَجِ دِمَشْقَ فَقَالَ أَبُوْ اُمَامَةَ : «كِلَابُ النَّارِ شَرُّ قَتْلٰى تَحْتَ أَدِيمِ السَّمَاءِ خَيْرُ قَتْلٰى مَنْ قَتَلُوهُ» ثُمَّ قَرَأَ (يَوْمَ تبيَضُّ وُجُوْهٌ وتَسْوَدُّ وُجوْهٌ) [سورة اٰل عمران 3 : 106] اَلْاٰيَةَ قِيلَ لِأَبِىْ اُمَامَةَ : أَنْتَ سَمِعْتَ مِنْ رَسُوْلِ اللّٰهِ ﷺ؟ قَالَ : لَوْ لَمْ أَسْمَعْهُ إِلَّا مَرَّةً أَوْ مَرَّتَيْنِ أوْ ثَلَاثًا حَتّٰى عَدَّ سَبْعًا مَا حَدَّثْتُكُمُوْهُ. رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَقَالَ التِّرْمِذِىُّ : هٰذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ
মিশকাত শরীফ পৃষ্ঠা নং হাদিস নং৩৫৫৪-[২২] আবূ গালিব (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আবূ উমামাহ্ দামেশকের (বর্তমানে সিরিয়ার) মূল ফটকে ঝুলন্ত কিছু মস্তক দেখতে পেলেন। তখন আবূ উমামাহ্ বলেন, এরা (খারিজীরা) হলো জাহান্নামের কুকুর। এই সকল যারা নিহত হয়েছে তারা আকাশমন্ডলীর নিচে সবচেয়ে নিকৃষ্ট এবং নিহত লোকেদের যাদের তারা হত্যা করেছে, তারা সবচেয়ে উৎকৃষ্ট। অতঃপর তিনি এ আয়াত পাঠ করলেন, ‘সেদিন অনেক মুখমণ্ডল উজ্জ্বল হবে এবং অনেক মুখমণ্ডল কুৎসিত হবে।’ আবূ গালিব (রহঃ) উমামাহ্ (রাঃ)-এর নিকট জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি এ কথা রাসূলুল্লাহﷺথেকে শুনেছেন? আবূ উমামাহ্ বললেন, একবার দু’বার কিংবা তিনবার নয়, বরং সাতবার শুনেছি; যদি আমি না শুনতাম তাহলে তোমাদের নিকট বর্ণনা করতাম না। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ; তবে ইমাম তিরমিযী [রহঃ] হাদীসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন)[1][1] হাসান : তিরমিযী ৩০০০, সহীহ আল জামি‘ ৩৩৪৭।
মুসনাদে আহমাদে উল্লেখ আছে,
لما أتى برؤوس الْأَزَارِقَةِ فَنُصِبَتْ عَلٰى دَرَجِ دِمَشْقَ جَاءَ أَبُو أُمَامَةَ فَلَمَّا رَآهُمْ دَمَعَتْ عَيْنَاهُ فَقَالَ كِلَابُ النَّارِ
অর্থাৎ যখন আযারিকাদের মাথাকে নিয়ে আসা হলো এবং দামেশকের সিঁড়িতে দাঁড় করিয়ে রাখা হলো। যখন তাদেরকে আবূ উমামাহ্ দেখলো তখন তার চক্ষুদ্বয় অশ্রু ঝরালো। আর তিনবার বললো, এরা জাহান্নামের কুকুর। বলা হলো, আপনার কি ব্যাপার? আপনার চোখদ্বয় কেন অশ্রু ঝরাচ্ছে। উত্তরে তিনি বললেনঃ তাদের ওপর রহমাত যে, তারা মুসলিম ছিল।
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ الأَزْرَقُ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنِ ابْنِ أَبِي أَوْفَى، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ “ الْخَوَارِجُ كِلاَبُ النَّارِ ” .
ইবনে মাজাহ ৬/১৭৩। ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহﷺ
বলেছেনঃ খারিজীরা হল জাহান্নামের কুকুর।
وَعَنْ سَعْدِ بْنِ أَبِىْ وَقَّاصٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهﷺلَا تُقُومُ السَّاعَةُ حَتّٰى يَخْرُجَ قَوْمٌ يَأْكُلُونَ بِأَلْسِنَتِهِمْ كَمَا تَأْكُلُ الْبَقَرَةُ بِأَلْسِنَتِهَا رَوَاهُ أَحْمَدُ
মিশকাত শরীফ পৃষ্ঠা নং হাদিস নং৪৭৯৯-[১৭] সা‘দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহﷺ বলেছেনঃ কিয়ামত ঐ সময় পর্যন্ত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না এমন একদল লোকের আবির্ভাব হবে, যারা নিজেদের রসনার সাহায্যে এমনভাবে ভক্ষণ করবে, যেভাবে গাভী তার রসনার সাহায্যে ভক্ষণ করে থাকে। (আহমাদ)[1][1] সহীহ : আহমাদ ১৫৯৭, সহীহুল জামি‘ ৩৬৭০, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৪১৯, মুসনাদুল বাযযার ১১৯৩।
وَعَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ يَا مَعْشَرَ الْقُرَّاءِ اسْتَقِيمُوا فَقَدْ سَبَقْتُمْ سَبْقًا بَعِيدًا فَإِنْ أَخَذْتُمْ يَمِينًا وَشِمَالًا لَقَدْ ضَلَلْتُمْ ضَلَالًا بَعِيدًا. رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ
মিশকাত শরীফ পৃষ্ঠা নং হাদিস নং ২৭৪-[৭৭] হুযায়ফাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি (তাবি‘ঈদের উদ্দেশে) বলেন, হে কুরআন-ধারী (‘আলিম) গণ! সোজা সরল পথে চলো। কেননা (প্রথমে দীন গ্রহণ করার দরুন পরবর্তীদের তুলনায়) তোমরা অনেক অগ্রসর হয়েছো। অপরপক্ষে তোমরা যদি (সরল পথ বাদ দিয়ে) ডান ও বামের পথ অবলম্বন কর, তাহলে পথভ্রষ্ট হয়ে সুদূর বিভ্রান্তিতে পতিত হবে। (বুখারী)৭২৮২
حَدَّثَنَا سُوَيْدٌ، أَخْبَرَنَا ابْنُ الْمُبَارَكِ، أَخْبَرَنَا يَحْيَى بْنُ عُبَيْدِ اللَّهِ، قَالَ سَمِعْتُ أَبِي يَقُولُ، سَمِعْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ، يَقُولُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِﷺ
“ يَخْرُجُ فِي آخِرِ الزَّمَانِ رِجَالٌ يَخْتِلُونَ الدُّنْيَا بِالدِّينِ يَلْبَسُونَ لِلنَّاسِ جُلُودَ الضَّأْنِ مِنَ اللِّينِ أَلْسِنَتُهُمْ أَحْلَى مِنَ السُّكَّرِ وَقُلُوبُهُمْ قُلُوبُ الذِّئَابِ يَقُولُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ أَبِي يَغْتَرُّونَ أَمْ عَلَىَّ يَجْتَرِئُونَ فَبِي حَلَفْتُ لأَبْعَثَنَّ عَلَى أُولَئِكَ مِنْهُمْ فِتْنَةً تَدَعُ الْحَلِيمَ مِنْهُمْ حَيْرَانًا ” . وَفِي الْبَابِ عَنِ ابْنِ عُمَرَ .
২৪০৪। আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহﷺ বলেছেনঃ শেষ যামানায় কিছু লোকের উদ্ভব হবে যারা পার্থিব স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে ধর্মকে প্রতারণার হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করবে। তারা জনগণের সামনে ভেড়ার চামড়ার মত কোমল পোশাক পরবে। তাদের মুখের ভাষা হবে চিনির চেয়ে মিষ্টি; কিন্তু তাদের হৃদয় হবে নেকড়ে বাঘের মত হিংস্র। আল্লাহ তা’আলা তাদের বলবেনঃ তোমরা কি আমার বিষয়ে ধোঁকায় পড়ে আছ, নাকি আমার প্রতি ধৃষ্টতা দেখাচ্ছ? আমার শপথ! আমি তাদের উপর তাদের মধ্য হতেই এমন বিপর্যয় আপতিত করব, যা তাদের খুবই সহনশীল ব্যক্তিদের পর্যন্ত হতবুদ্ধি ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে ছাড়বে।
আবূ ঈসা বলেন, এ অনুচ্ছেদে ইবনু উমর (রাঃ) হতেও হাদীস বর্ণিত আছে।
ওয়াহাবীদের কয়েকটি আলামতঃসে বে-দ্বীন ওয়াহাবীদের আলামত সম্পর্কে হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছেঃ
(১) তোমরা তোমাদের নামায, রোযা ও আমলকে তাদের নামাজ, রোযা ও আমলের সামনে তুচ্ছ মনে করবে ।
(২) কোরআন পড়বে, অথচ তা তাদের কণ্ঠনালীর নীচে অবতরণ করবে না অর্থাৎ অন্তরে মােটেই প্রভাব সৃষ্টি করবে না।
(৩) তারা সুন্দর সুন্দর কথা বলবে। ধর্ম থেকে তারা এভাবে বেরিয়ে যাবে যেভাবে ধনুক থেকে তীর বেরিয়ে পড়ে। অতঃপর আর প্রত্যাবর্তন করবে না।
(৪) তাদের অন্য একটি আলামত হল মাথা মুন্ডানো। আকীকা, হজ ও ওমরা ছাড়া অযথা মাথা মুণ্ডানো সুন্নতের পরিপন্থী, এটা সম্প্রদায় বিশেষের আলামত।
(৫) পরনের লুঙ্গি প্রয়োজনের বেশী দৃষ্টি কটুভাবে উঁচু করে পরা।
লাহোর থেকে সূফী আহমদ দ্বীন (আ’লা হযরত (রাঃ) এর খেদমতে) আরজ,
হে মুসলিম মিল্লাতের আলেম সমাজ ও কর্ণধার! আপনাদের জ্ঞানে আমাদেরকে ফয়ূজপ্রাপ্ত করুন।
আল্লাহ রাব্বল আলামীন আপনাদের ফয়ুজাত স্থায়ী করুন।
দুই || মৌলভী ইসমাঈল দেহলভী
সে ওয়াহাবীদের দ্বিতীয় গুরু মৌং ইসমাঈল দেহলভী (১৭৭৯ খ্রীঃ১৮৩১খ্রীঃ) তাদের।
প্রথম ইমামের (মুহাম্মদ বিন আবদুল ওয়াহাব নজদী) লিখিত “কিতাবুত তাওহীদ” এর ভারতীয় সংস্করণ করে তাকবিয়াতুল ঈমান’ নাম দিয়েছে। ঐ ফেরকার নাম দিয়েছে তাওহীদপন্থী ।
আর শেখ নজদীর পদাংক অনুসরণ করে সকল উম্মতে মুহাম্মদী (ﷺ) কে কাফির-মুশরিক হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। নবী (ﷺ) ও নবীগণ আলাইহিমুস সালাম, এমন কি স্বয়ং খোদা তায়ালার শানেও মানহানিকর উক্তি এবং গালমন্দ করতে কুণ্ঠাবোধ করেনি।
নবীগণ আলাইহিমুস সালামকে মেথর, চামার, অকর্মন্য এবং অকেজো লোকদের সাথে তুলনা করেছে।’ (তাকবীয়াতুল ঈমান পৃঃ নং ১০,১১,২৯, কৃত- ইসমাঈল দেহলভী)
আল্লাহ তায়ালার সত্ত্বা এবং গুণাবলীতে দুষনীয় ও অসংহতিপূর্ণ শব্দ প্রয়গকে বৈধ সাব্যস্ত করেছে। আল্লাহ তায়ালা আপন উঁচু মর্যাদা রক্ষার্থে এবং লোক জানাজানির ভয়ে মিথ্যা বলা থেকে বিরত রয়েছে বলে জঘন্য মন্তব্য করেছে।[এক রোযী পৃঃ নং ১৪৪, ১৪৫ কৃত মৌং ইসমাঈল দেহলভী]।
নামাযের মধ্যে নবী (ﷺ) ’র খেয়াল আসা গরু ও গাধার খেয়াল আসার চেয়ে নিকৃষ্টতম। [সিরাতে মুস্তাকীম পৃঃ নং ৯৫, অন্য সংস্করণে পৃঃ নং ৮৬ কৃতঃ মৌং ইসমাঈল দেহলভী]
নবুয়ত দাবীর ভিত্তি স্থাপন করতঃ এ স্তরে অধিষ্ঠিত হয়ে প্রাথমিকভাবে এ মন্তব্য উপস্থাপন করেছে যে, শরীয়তের পুংখানুপুংখ বিধিমালা কতেক মানুষের নিকট নবীগণের মাধ্যম ব্যতীত কলবী নূর দ্বারা সরাসরি পৌঁছে থাকে, এ প্রেক্ষিতে একদিকে ওরা নবীগণের ছাত্র, ডেকে নবীর সমপর্যায়ের। কখনাে শিক্ষক ও বটে।
(সিরাতে মুস্তাকীম পৃঃ নং-৩৯ কত-মৌং ইসমাঈল দেহলভী)
মাহবুবে খোদা ﷺ সম্মান বড়জোর বড় ভাইয়ের মত। (তাকুবীয়াতুল ঈমান পৃঃ নং-৬০ কৃত-মৌং ইসমাঈল দেহলভী।)
ছরকারে দো’আলম ﷺহায়াতুন্নবী নন, মৃত্যু বরণ করতঃ মাটি হয়ে গেছেন। (তাবীয়াতুল ঈমান পৃঃ নং-৬০ কৃত-ঐ)।
নবী ﷺএর কোন কুদরত নেই। তিনি দূর থেকে শুনতে ও পাননা। (তাক্বীয়াতুল ঈমান-পৃঃ নং-২৯, ২৩)
রাসুল ﷺ’র নিকট আল্লাহ প্রদত্ত ইলমে গায়ব আছে বলে মনে করা ও শির্ক। (তাক্বীয়াতুল ঈমান পৃঃ নং-২৭, ২৬, ১০ কৃত- প্রাগুক্ত।)
অধিকাংশ মানুষ মিথ্যা বলার ক্ষমতা রাখে। আল্লাহ যদি বলতে না পারেন, তাহলে মানুষের শক্তি খোদার শক্তির চেয়ে বেড়ে যাবে। (এক রোযী পৃঃ নং-১৮,১৭, মুলতান থেকে মুদ্রিত কৃত- প্রাগুক্ত।)
হযরত محمد ﷺ একটি কথাও গায়ব জানে মনে করা শির্ক। (তাক্বীয়াতুল ঈমান পৃঃনং-২৭)।
শুধুমাত্র মাহবুবে খােদা ﷺএ’র রওজা শরীফের যিয়ারত করার উদ্দেশ্যে সফর করা শির্ক ।( তাকবীয়াতুল ঈমান পৃঃ নং-১০)
রাসুলে পাকের ﷺ) রওজায়ে আত্বহারের সামনে দন্ডায়মান হওয়া শির্ক; সম্মান করার উদ্দেশ্যে হলে। (তাকূবীয়াতুল ঈমান পৃঃ-৪০, ৪১কৃত- ঐ)।
উম্মতের কান্ডারী নবী ﷺকে ইয়া মুহাম্মদু! অথবা ইয়া রাসুলাল্লাহ! আহবান করা শির্ক। (তাকূবীয়াতুল ঈমান পৃঃ-২৩)।
নবীর (ﷺ) সমতুল্য অন্য কেউ জন্ম লাভ করা সম্ভব। (তাকূবীয়াতুল ঈমান পৃষ্ঠা নং- ৩১)।
অবশেষে সে দেহলভী সম্পদের মোহে ও বাদশাহীর নেশায় শিখদের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয় এবং পরাজয়ের আশংকায় পলায়ন করতে গেলে আফগানীদের ক্ষুরধার তরবারীর আঘাতেই সে মৃত্যু মুখে পতিত হয়। এ কাপুরুষোচিত কেলেংকারীতে মৃত্যু বরণকারীকে ও অনেক ভ্রান্ত ঐতিহাসিক শহীদ বলে চালাতে চায়। দুঃখজনক হলেও সত্য যে এদেশে সুন্নী বলে পরিচয়দাতাদের অনেকেও এ তথ্যকে দলীল মনে করে। لَعَنَةُ اللّٰهِ عَلٰی الکَاذِبِينَ (মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহর অভিশম্পাত)।
বার- মৌলভী আশরাফ আলী থানভীঃ
সেই বাতিল ফের্কার মসলকের উপর ১২৮০ হিজরীতে জন্ম লাভ করে মৌলভী আশরাফ আলী থানভী। ওহাবী মতবাদের প্রচার প্রসারে সে জোরে শোরে নেমে পড়ে। সে কুফরী বাক্যালাপে শুধু অভ্যস্ত নয়; বরং শিষ্য প্রশিষ্যকে উৎসাহিত করে যেত। তার একটি প্রমাণ হল-
একদিন তার এক মুরীদ স্বপ্নে কালেমায়ে ত্বায়্যিবা পড়তে গিয়ে বললঃ لاَ اِلٰهَ اِلاَّ اللَّهُ اَشرَف عَلِی رَسُولُ اللَّهِ
আর জাগ্রত হয়ে দরূদ পড়ল এভাবে যে, اللَّهُمَّ صَلِّی عَلٰی سَیِّدِنَا وَنَبِیِّنَا وَمَولٰنَا اَشرَف عَلِی
পরক্ষণে মুরীদ তার ফতওয়া জানতে চাইলে থানভী বলল- এ ঘটনায় তুমি প্রশান্তি লাভ কর যে, তুমি যার কথা উচ্চারণ করেছে সে সুন্নাতানুসারী। থানভী কুফরী বাক্যকে শোধরায়ে না দিয়ে আরো উৎসাহিত করল। অথচ কোন গাইরে নবীকে রাসুলুল্লাহ বলা এবং কারো উপর দরূদ পড়া মারাত্মক অপরাধ। সে নিজকে রাসুলুল্লাহ দাবী করে বসে।(রেসালায়ে আল ইমদাদ পৃঃ ৩৫, ৩৬ কৃত- মৌঃ আশরাফ আলী থানভী)
গায়ব (অদৃশ্য বিষয় জানার ক্ষেত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামকে প্রত্যেক শিশু ও পাগলের সাথে উপমা দিয়েছে।(রেছালায়ে হিফজুল ঈমান পৃঃ নং-৭ কৃত আশরাফ আলী থানভী)
ওহাবী মতবাদ প্রচারে রচিত গ্রন্থ সমূহ
১. তাহযীরুন্নাসঃ মৌং কাশেম নানুতভী, প্রতিষ্ঠাতা, দেউবন্দ মাদ্রাসা, ইউ, পি, ভারত
২. ফতোয়া -এ-রশীদিয়াঃ মৌং রশীদ আহমদ গাংগুহী
৩. বারাহীনে কাতিয়াঃ মৌং খলীল আহমদ আম্বেটভী
৪. হিফযুল ঈমানঃ মৌং আশরাফ আলী থানভী
৫. আল ইফাযাতুল ইয়াওমীয়াঃ মৌং আশরাফ আলী থানভী
৬. তাকবীয়াতুল ঈমানঃ মৌং ইসমাঈল দেহলভী
৭. তাযকীরুল ইখওয়ানঃ মৌং ইসমাঈল দেহলতী
৮. ইযাহুল হকঃ মৌং ইসমাঈল দেহলজী
৯. রেসালা-এ-একরোযীঃ মৌং ইসমাঈল দেহলভী
আকাঈদ পর্বে উপরোল্লেখিত কিতাবগুলোর উদ্ধৃতির আলোকে দেওবন্দী ওহাবীদের ভ্রান্ত আক্বীদাগুলোর উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, এসব কিতাব লিখার পেছনে আসল উদ্দেশ্য কি। তন্মধ্যে মৌং ইসমাঈল দেহলভীর লিখিত তাকবীয়াতুল ঈমান সম্পর্কে স্বয়ং লিখকের মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য। মৌং ইসমাঈল দেহলভী তাকবীয়াতুল ঈমান লেখার পর বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিদের জমায়েত করলেন। তন্মধ্যে সৈয়দ সাহেব, মৌং আবদুল হাই, শাহ ইসহাক, মৌং মুহাম্মদ ইয়াকুব, মৌং ফরিদুদ্দীন মুরাদাবাদী, মোমেন খাঁ, আবদুল্লা খাঁ আলাভী উল্লেখযোগ্য। অতঃপর তাদের সম্মুখে তাকবীয়াতুল ঈমান উপস্থাপন করে বললেন, আমি এ কিতাব লিখেছি এবং আমি জানি যে, এতে কোন কোন স্থানে সামান্য কঠোর ভাষা আরোপিত হয়েছে। আর কোন কোন ক্ষেত্রে বেশ কঠোরতা অবলম্বন করা হয়েছে। যেমন, ঐ সব বিষয় যেগুলো শিরকে খাফী (অস্পষ্ট শিরক) এথলোকে শিরকে জ্বলী (স্পষ্ট শিরক) বলা হয়েছে। এ সব কারণে আমার ভয় হচ্ছে যে, এর প্রকাশনা দ্বারা অবশ্যই (মুসলমানদের মধ্যে) বিশৃংখলা দেখা দেবে। যদি আমি এখানে হিন্দুস্থানে) অবস্থান করতাম তাহলেও আলোচ্য বিষয়গুলো আট-দশ বছরে ধীরে ধীরে বর্ণনা করতাম। কিন্তু এখন আমার হজ্জে গমনের ইচ্ছা। এর প্রকাশনায় বিশৃংখলা দেখা দেবে, কিন্তু আমার বিশ্বাস ঝগড়া বিভেদ হয়ে আপনা আপনি ঠিক হয়ে যাবে। এ হলো আমার ধারণা। যদি আপনারা এটা প্রকাশ করার পক্ষে মত দেন তাহলে প্রকাশ করা হবে, অন্যথায় এটা ছিঁড়ে ফেলা হবে। এতে উপস্থিত একজন বললেন, প্রকাশ তো অবশ্যই হওয়া চাই, কিন্তু কিছু সংশোধন করা উচিত । তখন মৌং আবদুল হাই, শাহ ইসহাক, আবদুল্লাহ খাঁ ও মোমেন খাঁন এ প্রস্তাবের বিরোধীতা করে।বললেন, সংশোধনের প্রয়োজন নেই। অতঃপর পরস্পরের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো যে, “সংশোধনের প্রয়োজন নেই, যেভাবে আছে, সেভাবেই প্রকাশ করা হোক।” অতএব সেভাবেই প্রকাশিত হলো। (হেকায়াতে আউলিয়া পৃষ্ঠা ৮০ ও ৮১ সংকলনে মৌং আশরাফ আলী থানভী ও মৌং কারী মুহাম্মাদ তৈয়ব মুহতামিম দেওবন্দী মাদ্রাসা।)
তাকবীয়াতুল ঈমান যে মুসলমানদের মধ্যে বিশৃংখলা সৃষ্টির লক্ষ্যে লিখা হয়েছে তাতো উপরোক্ত উদ্ধৃতির আলোকেই প্রমাণিত। বাস্তবিকই তা হয়েছে। কারণ এ কিতাব দ্বারা মুসলমানদেরকে মুশরিক বানানোর পথ সুগম হয়েছে। এতে কোরআন, সুন্নাহ, ইজমা, কেয়াস ও উম্মতের ইমাম মুজতাহিদের মতামতের
আলোকে বৈধ ও সাওয়াব জনক অসংখ্য বিষয়কে স্পষ্ট শিরক ও বিদআত হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। কোন বৈধ ও সাওয়াবের কাজকে অবৈধ, শিরক, ও বিদআত বললে মুসলমানদের মধ্যে বিশৃংখলা অবশ্যম্ভাবী। এটাই ভয় করছিলেন স্বয়ং লিখক মৌং ইসমাঈল দেহলভী। এ কারণে সে বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিদের সম্মতিক্রমে কোন প্রকার সংশোধন ছাড়াই উক্ত কিতাব প্রকাশ করেছে। যা মুসলমানদের মধ্যে বিশৃংখলা সৃষ্টির ক্ষেত্রে জঘন্য ভূমিকা পালন করে। তাকবীয়াতুল ঈমানের প্রায় প্রতিটি পৃষ্ঠায় কোরআন-সুন্নাহর আলোকে বিশুদ্ধ প্রমাণিত এমন সব আকীদাকে শিরক ফতোয়া দেয়া হয়েছে। ফলে উক্ত কিতাব প্রকাশিত হবার পর পাক-ভারতের মুসলমানদের মধ্যে বিশৃথলা দেখা দেয়। পক্ষে-বিপক্ষে তর্ক-বিতর্কের অবতারণা হয়। পাক-ভারতে সুন্নী ওলামা কেরাম তাকবীয়াতুল ঈমানের খন্ডনে কলম ধরেন এবং কোরআন-সুন্নাহর সঠিক ব্যাখ্যার আলোকে ওহাবী নেতা মৌং ইসমাইল দেহলভীর দাঁতভাঙ্গা জবাব দেন। উল্লেখ্য যে, তাকবীয়াতৃল ঈমানকে ওহাবী মতবাদের প্রবক্তা মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওহাব নজদীর কিতাবুত তাওহীদ -এর অনুবাদ বললেও অত্যুক্তি হবে না।
★তাকবীয়াতুল ঈমানের খন্ডনে লিখিত কিতাবসমূহের তালিকা
০১. মুঈদুল ঈমানঃ হযরত মাওলানা মাখমুসুল্লাহ, মৌং ইসমাঈল দেহলভীর আত্মীয়।
০২. তাহকীকুল ফতোয়া ফী এবতালিততাগওয়াঃ আল্লামা ফযলে হক খায়রাবাদী, ১৭৫৭ এর আযাদী আন্দোলনের অগ্রদূত (রহ) মৌং ইসমাঈল দেহলভীর সমসাময়িক উভয়ের মধ্যে সমুখ তর্কও হয়েছে
০৩. হুজ্জাতুল আমল ফী এবতালিল হিয়ালঃ হযরত মাওলানা মুহাম্মদ মুসা দেহলভী, মাওলানা মাখমুসুল্লাহর ভাই
০৪. সাইফুল জব্বারঃ হযরত আল্লামা ফযলুর রসুল ওসমানী বাদামুনী, মৌং ইসমাঈল দেহলভীর সমসাময়িক
০৫. তাকদীসুল ওয়াকীল আন তৌহিনির রশীদ ওয়াল খলীলঃ হযরত আল্লামা গোলাম দস্তগীর কসুরী। এতে হারামাঈন শরীফাইন (মকা ও মদীনা শরীফ) এর ওলামা কেরামের অভিমত ও স্বাক্ষর রয়েছে
০৬. আল কাউকাবুশ শাহাবীয়া ফী কুফতীয়াতে আনিল ওহাবীয়াঃ ইমাম আহমদ রেযা ফাযেলে বেরলভী রাহমাতুল্লাহ আলাইহি
০৭. সাললুস সুয়ুফীল হিন্দীয়াঃ ইমাম আহমদ রেযা ফাযেলে বেরলভী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি
০৮. হসামুল হারামাইন আলা মানহারিল কুফরে ওয়াল মায়নঃ ইমাম আহমদ রেযা খান ফায়েলে বেরলভী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি
০৯. আসসুয়ুফুল বারেকা আলা রুউসিল ফাসেকাঃ হযরত আল্লামা আবদুল্লাহ খোরাসানী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি
১০. তানযীহর রহমান আন শায়েবাতিল ফিকরে ওয়ান্নোকসানঃ হযরত আল্লামা আহমদ হাসান কানপুরী খলীফা হযরত খাজা এমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি
১১. আর রুমহুদায়্যানী আলা রাসুল ওয়াওয়াসিশ শায়তানীঃ হযরত আল্লামা মোস্তফা রেযা খাঁ ইবনে ইমাম আহমদ রেযা রাহমাতুল্লাহি আলাইহি
১২. শরহুচ্ছুদুর ফী দাফয়ীশশুরুরঃ হযরত আল্লামা মোখলেসুর রহমান ইসলামাবাদী, চট্টগ্রাম
১৩. মীযানে আদালাত ফী এসবাতে শাফায়াতঃ হযরত আল্লামা মুহাম্মদ সোলতান কাটকী
১৪. হাদীল মুদিল্লীনঃ হযরত আল্লামা করিমুল্লাহ দেহলভী
১৫. এযালাতুশশাকুকঃ হযরত আল্লামা হাকিম ফখরুদ্দীন ইলাহবাদী
১৬. সহীহুল ঈমানঃ হযরত আল্লামা আহমদ হুসাইন
১৭. শরহে তোহফায়ে মুহাম্মদীয়া ফী রদে ফিরকা-এ মুরতাদ্দিয়াঃ হযরত আল্লামা সৈয়দ আশরাফ আলী গুলশানাবাদী
১৮. যুলফাকারে হায়দারীয়া আলা আনাকে ওহাবীয়াঃ হযরত আল্লামা সৈয়দ হায়দার শাহ
১৯. রেসালায়ে তাহকীকে তাওহীদ ও শিরকঃ হযরত আল্লামা হাফেয মুহাম্মদ হাসান পেশোয়ারী
২০. রেসালায়ে হায়াতুন্নবীঃ হযরত আল্লামা শেখ মুহাম্মদ আবেদ সিন্দি
২১. গুলযারে হেদায়াতঃ হযরত আল্লামা মুফতী সিবগাতুল্লাহ, মাদ্রাজ
২২. সালাহুল মোমেনীন ফী কাতয়ীল খারেজীনঃ হযরত আরামা সৈয়দ লুৎফুল হক বাতালতী
২৩. তোহফাতুল মোসলেমীন ফী জানাবে সাইয়্যেদিল মুরসালীনঃ হযরত আল্লামা আবদুল্লাহ সাহারানপুরী
২৪. রসমূল খায়রাতঃ হযরত আল্লামা খলীলুর রহমান হানাফী মোস্তফাবাদী
২৫. সাবীবুন্নাজাহ ইলা তাহসীলিল ফালাহঃ হযরত আল্লামা তোরাব আলী
২৬. সাফিনাতুন্নাজাতঃ হযরত আল্লামা মৌং মুহাম্মদ আসলামী, মাদ্রাজ
২৭. নেযামুল ইসলামঃ হযরত আল্লামা মুহাম্মদ ওজীহ ছাহেব, মুদাররিস মাদ্রাসা-এ-কলকাতা
২৮. তাম্বিহুদোয়াল্লীন ওয়া হেদায়াতুস সালেহীনঃ দিল্লী ও হারামাইন শরীফাইনের ওলামাকেরামের ফতোয়ার সমষ্টি
২৯. এহকাকুল হকঃ হযরত আল্লামা সৈয়দ বদরুদ্দীন হায়দরাবাদী
৩০. খায়রুয্যাদ লেইয়াওমিল মাআদঃ হযরত আল্লামা আবুল আলা মুহাম্মদ খায়রুদ্দীন মদ্রাজী
৩১. আল ইত্তেবাহ লে-দাফয়ীল এশতেবাহঃ হযরত আল্লামা মুয়াল্লিম ইব্রাহীম, খতিব বোম্বাই জামে মসজিদ
৩২. সুবহানুসসুবুহু আন আইবে কিবে মাকবুহঃ ইমাম আহমদ রেয়া বেরেলভী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি
৩৩. দাফউল বোহতানঃ হযরত আল্লামা মুহাম্মদ ইউনুস
৩৪. হেদায়াতুল মোসলেমীন ইলা তারিকীল হক্বে ওয়াল ইয়াকীনঃ হযরত আল্লামা কাযী মূহাম্মদ হুসাইন কুফী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি
৩৫. আফতাবে মুহাম্মদীঃ হযরত আল্লামা ফকীর মুহাম্মদ পাঞ্জাবী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি
৩৬. গুফতাগু-এ-জুমাঃ হযরত আল্লামা কাজী ফযল আহমদ সুন্নী, হানাফী
৩৭. মীযানুল হকঃ হযরত আল্লামা কাযী ফজল আহমদ সুন্নী, হানাফী নকশবন্দী
৩৮. আনওয়ারে আফতাবে সাদাকাতঃ হযরত আল্লামা কাযী ফযল আহমদ, হানাফী নকশবন্দী
৩৯. কুওয়াতুল ঈমানঃ হযরত আল্লামা কারামত আলী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি
৪০. আদদুরাবসানীয়া ফীররফে আলাল ওহাবীয়াঃ হযরত আল্লামা সৈয়দ ইবনে যি’নী দাহলান রাহমাতুল্লাহি আলাইহি
পাক-ভারতসহ মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য দেশের ওলামা কেরাম তাকবীয়াতুল ঈমানের খন্ডনে কলম ধরেছেন এবং চল্লিশটির মত কিতাব লিখেছেন। উক্ত কিতাব সরলপ্রাণ মুসলমানদের ঈমান-আকীদা ধ্বংসে কত বেশী কার্যকরী তা সহজে অনুমেয়। ঈমান বিধ্বংসী মৌং রশীদ আহমদ গাওগুহীর কিতাবটি সম্পর্কে মন্তব্য হলো “তাকবীয়াতুল ঈমান প্রত্যেকের নিকট রাখা, পড়া ও তার। আমল করাই হচ্ছে সত্যিকার ইসলাম এবং সাওয়াবের কাজ। (ফতোয়া রশিদীয়া ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫০)। এমনি করেই-ওহাবী আলেমগণ মুসলমানদের মধ্যে ফাটল সৃষ্টি করে আসছে। সহজ সরল মুসলমান ওহাবী-সুন্নী ভেদাভেদকে উড়িয়ে দেয়। তাদের সমীপে একান্ত অনুরোধ, ওহাবী আীদা ও সুন্নী আকীদাকে পাশাপাশি করে বুঝতে চেষ্টা করুন এবং উপস্থাপিত বিষয়গুলো প্রয়োজনে আরো যাচাই দেখুন। অতঃপর নিজ ঈমান-আকীদা রক্ষায় সচেতন হোন যদি কোন ওহাবী আলেম “ওহাবী আকীদা পর্বে” উপস্থাপিত আকীদাসমূহ মিথ্যা ও বলে উড়িয়ে দিতে চায়, তখন তার সাথে আমাদের পক্ষে চ্যালেঞ্জ গ্রহন করুন এবং উদ্ধৃতিতে উল্লেখিত কিতাবসমূহ নিয়ে “মোনাযারার” (সম্মুখ তর্ক) আহবান করুন। তখন যদি সম্মত হয় ভালো; অন্যথায় তাদের ভ্রান্তিতে নিশ্চিত হোন এবং তাদের বাহ্যিক আকর্ষণীয় চাল-চলনের ধোকা থেকে নিজে বাচুন, অপরকেও বাঁচাতে এগিয়ে আসুন । ইসলামের মূলধারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের। আকীদায় দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন পূর্বক ইসলামী আদর্শে জীবন গড়ায় সচেষ্ট হোন।
(Ali Muhammad Chowdhury)