এনফিল্ড রাইফেল। গরু-শূকরের চর্বি। একটি বিপ্লব। এবং একটি শিক্ষা।

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

ব্রিটিশ শাসন। ১৯০ বছর দীর্ঘ। দুটি অধ্যায়ে বিভক্ত। প্রথমত, ১৭৫৭ থেকে ১৮৫৭। প্রথম একশ বছর। একে ‘কোম্পানী শাসন’ বলে। দ্বিতীয়ত, ১৮৫৭ থেকে ১৯৪৭। এ অংশ হচ্ছে ‘রাণীর শাসন’।

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। ঢুকেছিল পলাশী দিয়ে। গিলেছে পুরো ভারত। বড় আজব কোম্পানি। করত ব্যবসা। ছিল নিজস্ব সেনাবাহিনী। নিজস্ব দেশ-উপনিবেশ। নিজের আইন। ইতিহাসে তারাই এমন একমাত্র কোম্পানি হয়ত। প্রথম শতাব্দী এরাই শুষেছে। সেটাই ‘কোম্পানি শাসন’। ‘রাণীর শাসন’ পরে বলছি।

১৮৫৭ সাল। আড়াইশ বছর আগে। একটি নতুন বন্দুক এলো। নাম এনফিল্ড রাইফেল। প্রযুক্তি তখন অটোম্যাটিক ছিল না। আঙুল চাপলেই গুলি বেরোতো না। কার্তুজ ঢালো, ভেতরে ঠ্যালো। ফায়ার করো। এভাবে প্রত্যেকবার। এক কার্তুজে এক গুলি।

কার্তুজ একটি প্যাকেট। আজকের পাঁচ টাকার চকলেটের প্যাকেটের মত। যাতে বারুদ ও গুলি দুটোই থাকত। দাঁতে টেনে ছিঁড়তে হত। এরপর বন্দুকে ঢেলে ফায়ার।

চার্বি দাহ্য বস্তু। মানে আগুন ধরে। বারুদে পরিমাণ মত মিশালে খুব ভালো কাজে দেয়। এছাড়া গুলি মসৃণ করতেও চর্বি লাগত। এতে কার্তুজের খরচ কমে। অনেক কমে। এজন্য ব্যবহার হত গরু ও শূকরের চর্বি। বাজারে খুব সস্তা ছিল সেগুলো। কিন্তু কোম্পানি খুব গোপন রেখেছিল বিষয়টি।

সে সময়ে ব্রিটিশসেনা ছিল তিন লাখ চল্লিশ হাজার। পুরো ভারতে। এর তিন লাখই ছিল ভারতীয় সৈন্য। মুসলিম-হিন্দু দুটাই ছিল। তাদের সিপাহী বলা হত।

একদিন ধর্মের কল বাতাসে নড়ল। চর্বির খবরটা ছড়িয়ে পরে দাবানলের মত। ফুঁসে ওঠে ভারতীয় সৈন্যরা। অবাধ্য হয় কোম্পানির। কারণ, মুসলিমরা শূকর ছোঁয় না। সনাতনী বা হিন্দুরা গরু খায় না। গড়ে ওঠে বিপ্লব। একে ‘সিপাহী বিপ্লব’ বলে ব্রিটিশরা। আমরা বলি ‘প্রথম স্বাধীনতা আন্দোলন’।

বিভিন্ন রাজশক্তিরা যোগ দেয় এ বিপ্লবে। বিশেষত মারাঠারা ও রাণী লাক্সমি বাই উল্লেখযোগ্য। লাক্সমি বাই ‘ঝাঁসি কি রাণী’ নামে পরিচিত। মুঘলদের শেষ সম্রাট ছিলেন বাহাদুর শাহ দ্বিতীয়। বিপ্লবের সময় তিনি বৃদ্ধ ছিলেন। তাঁকে কেন্দ্র করেই বিপ্লব পূর্ণতা পায়। মানে তাঁকে বিপ্লবের নেতা মানা হত।

যুদ্ধ চলে বছর খানেক। প্রায় নাস্তানাবুদ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। বিপ্লব বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে। কিন্তু বিজয় আর আসে নি। কেন জানেন? ‘কেন’ একটি বিশাল প্রশ্ন। এর উত্তরই আমাদের জন্য শিক্ষা।

বিপ্লবের নেতা ছিল বাহাদুর শাহ। বিপত্তি ঘটে এখানেই। যুদ্ধ প্রায় জয় জয় অবস্থা। এসময়ে বেঁকে বসে রাজশক্তিগুলো। মারাঠা ও অন্যান্যরা। তারা বাহাদুর শাহের কর্তৃত্ব মানছিল না। উল্লেখ্য যে, ইতিহাসে মারাঠা ও মুঘল দ্বন্দ তুমুলে ছিল সবসময়।

এ দ্বন্দে ঝিমিয়ে আসে বিপ্লব। কেন্দ্রীয় শক্তিহীন হয়ে যায়। আর সে সুযোগটি নেয় রাণী ভিক্টোরিয়া। তিনি কোম্পানি শাসনের অবসান ঘটান। এবং ক্ষমতা নিজ হাতে নেন। ভারত কড়াই থেকে চুলায় পরে যায়। ফলে যা হবার হল। প্রায় পাওয়া স্বাধীনতা পালাল। দিগন্তের মরিচিকার মত। রাণীর এ ক্ষমতা গ্রহণকে ‘রাণী শাসন’ বলে।

এই যে কেন্দ্রহীন আন্দোলন। এটাই প্রায় সমস্ত বিপ্লব অবসানের মূল কারণ। ভারতে তাই হয়েছে। মুসলিমদেরও তাই হচ্ছে। ইতিহাস সেটাই বলে।

আজকে ফিলিস্তিন, সিরিয়া, ইয়ামেন, ইরাক, আফগানে একই ঘটনা। মুসলিমদের কেন্দ্রীয় কেউ নেই। সিপাহী বিপ্লবের মত। বিপ্লব হলেও বিজয় নেই।

একসময় উসমানীরা (Ottoman) ছিল। নিপীড়িত হয় নি আমরা। গোত্রবাদ থেকে আসে সৌদ্দারা। ১৯২১ সালে। এরপর থেকেই অত্যাচার শুরু। যাদের জন্ম গোত্রবাদ দিয়ে; তারা বিশ্ব-মুসলিম, উম্মাহ কি বুঝবে! এরা নিজেদের রাজভোগই শুধু বুঝে। এজন্য ইয়ামেন জ্বালায়। লাখ শিশু না খাইয়ে মারে।

বাংলাদেশেও একই অবস্থা। এই যে সুন্নিদের এত অনৈক্য। এর মূল কারণ কেন্দ্রহীনতা। সুন্নিরা যদি একত্রিত হয়ও, কেন হবে? নেতৃত্ব কে দিবে? এটাই বড় প্রশ্ন। আজকে যদি কোনো বিপ্লব হয়ও, বিপ্লবের পরে একত্রিত হবে কোথায়? তখন রাণী শাসনের মত তৃতীয় কেউ আসবে না, তার নিশ্চয়তা কোথায়!

উম্মাহ চেতনা খুব বেশী দরকার। বৈশ্বিক মুসলিম চেতনা দরকার। এখানে ভুল বুঝবেন না। দেশের পরিচয় মুছে দেয়াই কেন্দ্রীয় চেতনা না। আমি মুসলিম। আমি বাঙালী। ৭১ অগ্রাহ্যের অধিকার আমার নেই। মাটিকে অস্বীকার আমরা মানি না।

কিন্তু মনে রাখতে হবে, দেশ মাটি হলে, আকাশটা কিন্তু মদিনা। আকশটা কিন্তু ইসলাম। মাটিতে কাঁটাতার বসানো যায়। কিন্তু আকাশটা অবিচ্ছিন্ন। এজন্যই ইসলাম অসম্প্রদায়িক। এজন্যই ইসলাম মহাবৈশ্বিক।

মুসলিমদের একটি কেন্দ্রীয় চেতনা খুব বেশী জরুরী। একজন নেতা জরুরী। নেতৃত্ব, কেন্দ্র না থাকলে ভেড়ার পালের মত ঘুরতে থাকব। সংখ্যা গরিষ্ঠ হয়ে লাভ নেই। শত ভেড়ার পিছনে একজন রাখালই যথেষ্ট।

যেমন ছিলেন- ইমাম আ’লা হযরত। তিনি একাই দাঁড়িয়েছেন। মাত্র একজন মানুষ। একদিকে ব্রিটিশ। অন্যদিকে ভূতনগরের মোল্লারা। একদিকে সাম্রাজ্যবাদী। অন্যদিকে সম্প্রদায়বাদী। কে থামাতে পেরেছে তাঁকে!

যেমন ছিলেন- আল্লামা ফজলে হক খয়রাবাদী। ইমাম আ’লা হযরত যার ভাবশিষ্য। তাঁকে রুখতে পুরো ব্রিটিশ বাহিনী লেগেছিল। আন্দামান দ্বীপের নির্জন কারাগারে শহীদ হন তিনি। মৃত্যু তাঁকে থামাতে পারে নি। যিনি জন্ম দিয়েছেন ইমাম আ’লা হযরত এঁর মত বীরের। সাম্রাজ্যবাদ বিরোধীদের।

যুবকদের আহ্ববান, এগিয়ে আসুন। ছাত্রসমাজ তৈরী হন। নেতৃত্ব দিতে হবে। নেতৃত্ব মানতে হবে। সবার সাথে চলুন। সবাইকে নিজের সাথে চালিত করুন। আপনার টার্গেট ষোল কোটি বাঙালী না। ১৫০ কোটি মুসলিম না। আপনার লক্ষ্য সাত শত কোটি মানুষ। আপনারা ফজলে হক খয়রাবাদী হন। সালাউদ্দীন আইয়ুবী হন। তাঁরা বাকিদের জন্য অপেক্ষায় থাকে নি। একাই বিশ্ব কাঁপিয়েছেন।

নিজে নেতৃত্ব না দিলে ৭০০ কোটি ভেড়ার পালে থাকবেন। নেতৃত্ব দিলে ১৫০ কোটি রাখালের দলে থাকবেন। সংখ্যার জোরে না, যোগ্যতার জোরে এগিয়ে আসুন। মনে রাখবেন,

হাজার মানুষ আপনার সাথে। এজন্য সাহসী আপনি? তাহলে মাত্র একটি বিজয় আসতে পারে। আর আপনার জন্য যদি হাজারো মানুষ সাহস পায়, তবে পুরো বিশ্বটাই আপনার।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment