প্রশ্নঃ মৃত্যুর সময় কতক্ষণ পর্য্যন্ত তাওবাহ্ কবুল হয় এবং কখন এ সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়? আর মানুষচেনা বন্ধ হয় কখন? তাওবার অর্থ ও শর্ত কি কি? খাঁটি তাওবাহ্কারী কে?
জওয়াবঃ মৃত্যু ঘনিয়ে আসার আলামত দেখা গেলে বেশী বেশী তাওবাহ্ করা উত্তম। হযরত আদম আলাইহিস সালামের প্রথম ইবাদত ছিল তাওবাহ্। তিনি তিনশত বৎসর তাওবাহ্র উপর ছিলেন। রাসুল করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিনে সত্তরবার তাওবাহ্ করতেন। আল্লাহর কাছে তাওবাহ্র মত প্রিয়জিনিস আর কিছু নেই। কেননা, আল্লাহর কাছে হীনতা, দীনতা ও অসহায়ত্ব প্রকাশ করার মধ্যে রয়েছে বান্দার মুক্তি, সম্মান ও মর্যাদা। তাওবাহ্ করা ফরয। ইহা মুসলমানদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত।
(১) আল্লাহ্পাক তাওবাহ্র নির্দেশ দিয়ে এরশাদ করেন,
وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَا الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
“হে মোমেনগণ, তোমরা সবাই তাওবাহ্ করো- তাহলে অবশ্যই তোমরা সফলকাম হতে পারবে”। (ছুরা নুর- আয়াত ৩১)
(২) আরো এরশাদ করেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَّصُوحًا
“হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর কাছে খালেছ তাওবাহ্ করো” (ছুরা তাহরীম ৮ আয়াত)।
(২) তাওবাহ্ করার শেষ সময় কখন পর্য্যন্ত?
(ক) আল্লাহ্পাক এরশাদ করেন,
فَلَمْ يَكُ يَنفَعُهُم إيمانهم لَمَّا رَأوا بَأْسَنا
অর্থঃ “যখন তারা আমার শাস্তি দেখবে, তখন তাঁদের ঈমান গ্রহণ কোন উপকারে আসবেনা”। (ছুরা মোমেন ৮৫ আয়াত)।
(খ) আল্লাহ্পাক আরো এরশাদ করেন,
وَلَيْسَتِ التَّوْبَةُ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السَّيِّئَاتِ حَتَّى إِذَا حَضَرَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ إِنِّي تُبْتُ الآنَ ۔
অর্থাৎ “ঐ লোকদের জন্য কোন তাওবাহ্ বা ক্ষমা নেই- যারা মন্দকাজ করতে থাকে। এমনকি- যখন তাঁদের কারো মাথার উপর মৃত্যু উপস্থিত হয়- তখন বলতে থাকে- আমি এখন তাওবাহ্ করছি”। (ছুরা নিছা ১৮ আয়াত) জীবনভর গুনাহে লিপ্ত থাকাই বদ নসীবীর কারণ। (এই হুকুম অন্য আয়াত দ্বারা রহিত করা হয়েছে)।
(গ) ইবনে মাজাহ্তে হযরত আবু মূছা আশ্আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, আমি রাসুলেপাক (ﷺ) -এর খেদমতে আরয করলাম-
متی تنقطع معرفۃ العبد من الناس ال اذا عاین ۔ ای شاھد ملائکۃ لاموت وامور الاٰخرۃ ۔
অর্থঃ “ইয়া রাছুলাল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মূমূর্ষ ব্যক্তির মানুষ চেনা কখন বন্ধ হয়ে যায়? হুযুর (ﷺ) এরশাদ করলেন- “যখন সে দর্শন করে”।
“যখন সে দর্শন করে”- একথার দ্বারা তিনি বুঝাতে চেয়েছেন-যখন মালাকুত মউত অথবা অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ফিরিস্তাগণকে সে দেখে এবং পরকালের ঘটনাবলী প্রত্যক্ষ করে- তখন সে কোন মানুষকে আর চিনতে পারেনা”।
(ঘ) অন্য এক হাদীসে রাসুলেপাক (ﷺ) তাওবাহ্র দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে এরশাদ করেছেন-
ان اللّٰہ یقبل توبۃ العبد مالم یغرغر ۔ جرجہ الترمذی ای عند الغرغرۃ وبلوغ الروح الحلقوم یعاین ما یصیر الیہ من رحمۃ او ھوان ولا تنفع حینئذ توبۃ ولا ایمان ۔
অর্থাৎঃ “আল্লাহ্পাক বান্দার তাওবাহ্ ততক্ষণ পর্য্যন্ত কবুল করেন- যতক্ষণ না মৃত্যুর গরগরা আরম্ভ হয়”। (ইমাম তিরমিযি)
অর্থাৎ- মৃত্যুর গরগরা শব্দ আরম্ভ হলে এবং রূহ্ কণ্ঠনালীতে পৌঁছলে তাওবাহ্ কবুল হয়না। কেননা, তখন তার দিকে রহমত আস্ছে- নাকি লা’নত আস্ছে- বান্দা তা দেখে ফেলে। ঐ সময় তাওবাহ্ অথবা ঈমান কোনটাই উপকারে আসেনা”। ঈমান হলো অদৃশ্য বিশ্বাসের নাম।
অতএব তাওবাহ্ কবুল হওয়ার সময় জীবনভর ব্যাপ্ত- যতক্ষণ না সে মালাকুল মউতকে দেখবে। এই সময়েই রূহের গরগরা আরম্ভ হয়ে যায় এবং মানুষ চেনা বন্ধ হয়ে যায়। আর মৃত্যুগরগরা দেখা দেয় তখন- যখন রগগুলো কেটে দেয়া হয়। ঐ সময় রূহ্ সীনা হতে কণ্ঠনালী পর্য্যন্ত পৌঁছে যায়। আর ঐ সময়েই সে মালাকুত মউতকে দেখতে পায়।
ইমাম কুরতুবী বলেন –
فیجب علی الانسان ان یتوب قبل الغرغرۃ ولمعاینۃ وھو معنی قولہ تعالی ثم یتوبون من قریب واولئک یتوب اللّٰہ علیھم ۔
অর্থাৎ- ”গরগরা আরম্ভ হওয়া এবং মালাকুল মউত দর্শনের পূর্বেই তাওবাহ্ করা ওয়াজিব। ইহাই আল্লাহর বাণীর মর্মার্থ। আল্লাহ্ তায়ালা এরশাদ করেছেন- “যারা ভুলবশতঃ মন্দকাজ করে পূনঃ অনুতপ্ত হয়ে অনতিবিলম্বে তাওবাহ্ করে, তাঁদের তাওবাই আল্লাহ্পাক কবুল করেন”। (ছুরা নিছা ১৭ আয়াত)।
(ঙ) হযরত হাসান বসরী (রহঃ) হতে বর্ণিত আছে- “ইবলিসকে যখন যমিনে নামিয়ে দেয়া হলো- তখন সে দম্ভ করে বলেছিল- “হে আল্লাহ্! তোমার ইজ্জতের শপথ করে বল্ছি- আমি বনী আদমের পিছ ছাড়া হবোনা- যতক্ষণ তাঁর শরীরে প্রাণ থাকবে”। আল্লাহ্পাক বললেন- “আমিও আমার ইজ্জতের শপথ করে বলছি- যতক্ষণ বণী আদমের মৃত্যুগরগরা শুরু না হবে- ততক্ষণ পর্য্যন্ত আমি তাওবাহ্’র দরজা বন্ধ করবোনা”। (তাযকিরাহ্ পৃষ্ঠা ৫৪)।
(৩) তাওবাহ্ কবুলের ৪টি শর্তঃ
(ক) الندم بالقلب “মনে প্রাণে অনুতপ্ত হওয়া”।
(খ) وترک المعصیۃ فی الحال “তৎক্ষনাৎ গুনাহ্র কাজটি ছেড়ে দেয়া”।
(গ) العزم علی ان لا یعود الی مثلھا “এ ধরণের পাপের কাজে ভবিষ্যতে যাবেনা”।
(ঘ) و یکون ذلک حیاء من اللّٰہ تعالی আল্লাহর কাছে লজ্জিত হয়ে এবং আল্লাহর আযাবের ভয়ে পাপের কাজ ছেড়ে দেয়া- অন্য কারও ভয়ে বা লজ্জায় নয়”।
(৪) তাওবাহ্র হাকীকতঃ
=========
(ক) কাফেরদের তাওবাহ্র হাকীকত হচ্ছে ঈমান আনা এবং অতীতের অন্যায়ের জন্য আল্লাহর কাছে লজ্জিত থাকা। শুধূ ঈমান আনাই যথেষ্ঠ নয়- বরং অতীতের জন্য লজ্জিত থাকতে হবে।
(খ) আর মুমিনদের তাওবাহ্ দু’প্রকার। যথা (ক) হক্কুল্লাহ্ (খ) হক্কুল ইবাদ।
(ক) হক্কুল্লাহ্ঃ আল্লাহর হক্ব কোন কোন ক্ষেত্রে শুধু গুনাহ্ ছেড়ে দিলেই এবং উপরোক্ত ৪ টি শর্ত পূরণ করলেই অতীত গুনাহ্ মাফ হয়ে যায়- যেমন মদপান ইত্যাদি। আবার কিছু কিছু গুনাহ্ আছে- যেগুলো পুনরায় কাযা করতে হবে- যেমন, নামায ও রোযা। কিছু কিছু গুনাহ্ আছে- যেগুলোর কাযা এবং কাফফারা উভয়ই করতে হবে- যেমন, সঙ্গত কারণে শপথ ভঙ্গ করলে কাফফারা দিতে হবে এবং ভাল কাজও করতে হবে। এগুলো হচ্ছে আল্লাহর হক্ব। এগুলোর ক্ষমা আল্লাহর ইখ্তিয়ারাধীন।
(খ) হক্কুল ইবাদ বা বান্দার হক্বঃ বান্দার হক্ব নষ্ট করলে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং সেই সাথে উপরোক্ত ৪ টি শর্ত মোতাবেক তাওবাহ্ করতে হবে। যদি মালিক বা তাঁর উত্তরাধিকারী পাওয়া না যায়- তাহলে সদ্কা করে দিতে হবে- মালিকের পক্ষ হয়ে। আর যদি দেওয়ার সামর্থ না থাকে- তাহলে বান্দার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। আল্লাহর পক্ষ হতে ক্ষমার আশা করা যায়। এমতাবস্থায় গুনাহ্গার ব্যক্তির বেশী বেশী নেক আমল করতে হবে এবং মালিকের গুনাহ্ মাগফিরাতের জন্য বেশীবেশী করে দোয়া করতে হবে। ইহাই প্রকৃত তাওবাহ্। (তাযকিরাহ ৫৫ পৃষ্ঠা)
(৫) তাওবাহরীর গুণাবলী-
======
وقد رری مرفوعا فی صفۃ التائب من حدیث ابن مسعود ان النبی ﷺ قال وھو فی جماعۃ من اصحابہ ’’ اتدرون من التائب ؟ قالوا اللّٰھم لا ۔ قال اذا تا با لعبد ولم یرض خصماؤہ فلیس بتائب ۔ ومن تاب ولم یغیر لباسہ فلیس بتائب ۔ ومن تاب ولم یغیر مجلسہ فلیس بتائب ومن تاب ولم یغیر نفقتہ وزینتہ فلیس بتائب ومن تاب ولم یغیر فراشہ ووسادہ فلیس بتائب ۔ ومن تاب ولم یوسع خلقہ فلیس بتائب ۔ ومن تاب ولم یوسع قلبہ وکفہ فلیس بتائب ، ثم قال النبی ﷺ فاذا تاب عن ھذہ الخصال فذالک تائب حقا۔
অর্থঃ হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে মারফু হাদীসে বর্ণিত- “একসময়ে নবী করিম (ﷺ) সাহাবায়ে কেরামের একটি জামায়াতে উপস্থিত ছিলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন- “তোমরা কি জান- প্রকৃত তাওবাহ্কারী কে”? সাহাবায়ে কেরাম বললেন- আয় আল্লাহ্! আমরা তো জানিনা। রাসুল করিম (ﷺ) বলতে লাগলেন- “শুন- যেব্যক্তি তাওবাহ্ করেছে সত্য- কিন্তু তাঁর ফখর ও অহঙ্কারের লেবাছ পরিবর্তন করতে পারেনি- সে প্রকৃত তওবাকারী নয়”। “যেব্যক্তি তাওবাহ্ করে খারাপ সঙ্গ ত্যাগ করে সৎসঙ্গ লাভ করতে পারেনি- সেও প্রকৃত তাওবাহ্কারী নয়”। “যেব্যক্তি তাওবাহ্ করেছে সত্য- কিন্তু হারামখাদ্য ও উপার্জন এবং চাকচিক্য বন্ধ করতে পারেনি- সেও প্রকৃত তাওবাকারী নয়”। “যেব্যক্তি তাওবাহ্ করেছে সত্য- কিন্তু রাত্রের হারাম কাজ ছেড়ে দিয়ে গাফ্লতের নিদ্রা ত্যাগ করে বিছানা পরিবর্তন করতে পারেনি এবং রাত্রি জাগরণের অভ্যাস করতে পারেনি- সেও প্রকৃত তাওবাহ্কারী নয়”। “যেব্যক্তি বদ স্বভাব পরিবর্তন না করে শুধূ মুখে তাওবাহ্ করেছে- সেও প্রকৃত তাওবাহ্কারী নয়”। “যেব্যক্তি মন ও হাত প্রশস্ত না করে শুধু তাওবাহ্ করেছে- সেও প্রকৃত তাওবাকারী নয়”। “যেব্যক্তি তাওবাহ্ করেছে সত্য- কিন্তু পাওনাদারকে রাযী করাতে পারেনি- সেও প্রকৃত তাওবাহ্কারী নয়”। অত:পর রাসুল করিম (ﷺ) এরশাদ করলেন- ”যারা উপরোক্ত স্বভাব পরিবর্তন করে তাওবাহ্ করবে- তাঁরাই প্রকৃত তাওবাহ্কারী”। (ইবনে মাসউদ)।
(হাদীসটি খুবই আকর্ষণীয় ভাষায় বর্ণিত হয়েছে। তাসাউফপন্থীদের জন্য এই হাদীসখানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, লেখক)।
অত্র হাদীসের সার সংক্ষেপঃ
(ক) ফখর ও অহঙ্কার ত্যাগ না করে শুধু মুখে তাওবাহ্ করা নিরর্থক।
(খ) অসৎসঙ্গে থাকলে তা পরিবর্তন করে সৎসঙ্গ গ্রহণ না করলে প্রকৃত তাওবাহ্কারী নয়।
(গ) হারাম পথে উপার্জিত খাদ্য ত্যাগ করে হালাল উপার্জন না করলে প্রকৃত তাওবাহ্কারী নয়।
(ঘ) রাত্রে খারাপসঙ্গ ও খারাপ চরিত্র পরিবর্তন করে কিয়ামূল লাইল বা রাত্রের ইবাদত না করলে প্রকৃত তাওবাহ্কারী নয়।
(ঙ) খারাপ চরিত্র ও বদ স্বভাব পরিবর্তন করে প্রশস্ত মনের অধিকারী না হলে প্রকৃত তাওবাহ্কারী নয়।
(চ) কঠিন হৃদয় ছেড়ে দিয়ে কোমল হৃদয়ের অধিকারী না হলে প্রকৃত তাওবাহ্কারী নয়।
(ছ) মন ও হাত প্রশস্ত না করে তাওবাহ্ করলে প্রকৃত তাওবাহ্কারী নয়।
উপরের ৭টি বদ অভ্যাস পরিবর্তন করে এর বিপরীত গুনাবলীর অভ্যাস করতে পারলেই তাওবাহ্কারী বলে গণ্য হবে।
(৬) গুনাহ্ করে মনে মনে লজ্জিত হওয়ার নামও তাওবাহ্
সাহাবী আবদুল্লাহ্ ইবনে মুগাফফাল (রাঃ) বলেন- আমার পিতা হযরত মুগাফফাল (রাঃ) হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রাঃ) -এর নিকট বসা ছিলেন। আমিও আমার পিতার পাশেই বসা ছিলাম। আমার পিতা হযরত ইবনে মাসউদকে একটি হাদীস শুনিয়ে তাঁর মন্তব্য চাইলেন। হাদীসখানা হলো,
ان العبد اذا اعترف بذنبہ ثم تاب الی اللّٰہ عزوجل تاب اللّہ علیہ فقال ابن مسعود نعم سمعتہ یقول الندم التوبۃ۔
অর্থঃ নবীজীর এরশাদ -“বান্দা যখন মনে মনে গুনাহ্ স্বীকার করে আল্লাহর কাছে তাওবাহ্ করে- তখন আল্লাহ্ তাঁর তাওবাহ্ কুবল করেন”- ইহা সঠিক কিনা? জবাবে হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) বল্লেন- হ্যাঁ আমি রাসুুলুল্লাহ্ (ﷺ) কে এভাবে বলতে শুনেছি “লজ্জিত হওয়ার নামই তাওবাহ্”। (তাযকিরাহ্ ৫৬ পৃষ্ঠা)
বুঝাগেল- এক সাহাবী অন্য সাহাবী থেকে রাসুলেপাকের হাদীস শুনে বয়ান করেছেন।
(৭) নামায রোযা করলে এবং ৭টি কবিরা গুনাহ্ ছেড়ে দিলে জান্নাতের দরজা খুলে যায়,
عن ابی ھریرۃ رضی اللّٰہ عنہ وابی سعید الخدری رضی اللّٰہ عنہ ان رسول اللّٰہ ﷺ جلس علی المنبر ثم قال ’’ والذی نفسی بیدہ ‘‘ ثلاث مرات ثم سکت فاکب کل رجل من ا یبکی حزینا لیمین رسول اللّٰہ ﷺ ثم قال ’’ ما من عبد یودی الصلوات الخمس یصوم رمضان ویجتن الکبائرالسبع الافتحت لہ ابواب الجنۃ الثمانیہ یوم القیامۃ حتی انھا لتصفق ۔ ثم تلا قولہ تعالی ان تجتنبوا کبائر ا ما تنھون عنہ نکفر عنکم سبئاتکم ۔ رواہ البخاری ومسلم ۔
অর্থঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) ও হযরত আবু সায়ীদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত- রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিম্বার শরীফে বসলেন এবং তিনবার বললেন- “যার হাতে আমার প্রাণ- তাঁর শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ- তাঁর শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ- তাঁর শপথ”। এরপর তিনি দীর্ঘক্ষণ চুপ করে রইলেন। রাসুলেপাকের এ ধরণের শপথ ও কথার গাম্বীর্য শুনে আমরা সবাই চিন্তিত হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লাম।
দীর্ঘক্ষণ পর হুযুর (ﷺ) বলতে শুরু করলেন- “যেকোন বান্দা পাঞ্জেগানা নামায আদায় করবে, রমযানের রোযা রাখবে, সাতটি কবিরা গুনাহ্ থেকে বেঁচে থাকবে- নিশ্চয়ই তাঁর জন্য কেয়ামতের দিনে আটটি বেহেস্তের দরজা খুলে দেয়া হবে। তারপর জান্নাতের দরজা পূনরায় বন্ধ হবে”। (আবু হাতেম বিস্তী কৃত আল মুসনাদ আস সহীহ্)।
এরপর তিনি প্রাসঙ্গিক কোরআনের বাণী তিলাওয়াত করে শুনালেন- আল্লাহ্ বলেন -“যদি তোমরা কবিরা গুনাহ্সমূহ থেকে বেঁচে থাকতে পারো- যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে- তাহলে আমি অন্যান্য অপরাধ ক্ষমা করে দেবো” (ছুরা নিছা ৩১ আয়াত)।
সার কথাঃ
=====
(ক) নামায রোযা ইত্যাদি ফরয সমূহ আদায় করতে হবে এবং কবিরা গুনাহ্ থেকে বেঁচে থাকতে হবে। ছগিরা গুনাহ্ হতে বাঁচা সাধারণের পক্ষে সম্ভব নয়। (অন্য বর্ণনা অনুযায়ী কবিরা গুনাহ্ সাতশত পর্য্যন্ত)।
(খ) কবিরা গুনাহ্ থেকে বেঁচে থাকতে পারলে ছগিরা গুনাহ্ বিনা তাওবায় এমনিতেই মাফ হয়ে যায়।
(গ) সাহাবীগণ রাসুল মকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামান্য পেরেশানী দেখলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়তেন। কতটুকু নবীপ্রেম থাকলে এরূপ অবস্থা হতে পারে- তা সহজেই অনুমান করা যায়।
(ঘ) কবিরা গুনাহ্ তাওবাহ্ ছাড়া সাধারনতঃ মাফ হয় না।
(৮) ছগিরা গুনাহ্ বিনা তাওবায় অন্যান্য ইবাদতের দ্বারা মাফ হয়ে যাওয়ার প্রমাণ হলো- হযরত আবু হোরায়রার বর্ণিত হাদীস- যা মুসলিম শরীফে উদ্বৃত হয়েছে-
عن ابی ھریرۃ قال قال رسول اللّٰہ ﷺ الصلوات الخمس والجمعۃ الی الجمعۃ ورمضان الی رمضان مکفرات ما بینھن اذا اجتنبت الکبائر۔
অর্থাৎ, “পাঞ্জেগানা নামায, এক জুমা হতে আরেক জুমা এবং এক রমযান হতে অন্য রমযান পর্য্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ের ছগিরা গুনাহ্সমূহ নামায, জুমা ও রমযান ক্ষমা করে দেয়- যদি সে কবিরা গুনাহ্ থেকে বেঁচে থাকতে পারে”। (মুসলিম শরীফ)।