বর্ণিত আছে, রসুলেপাক (ﷺ) এর মসজিদ শরীফের ছাদ খেজুর গাছের কাঠ দ্বারা নির্মিত হয়েছিলো। খেজুর গাছের একটি কা- যা খুঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিলো, মিম্বর শরীফ নির্মিত হওয়ার পূর্বে নবী করীম (ﷺ) তার উপর হেলান দিয়ে খোতবা প্রদান করতেন। পরবর্তীতে খুঁটিটি সেখান থেকে সরিয়ে দেয়া হলে সে সজোরে ক্রন্দন করেছিলো। বাচ্চাওয়ালা উটনীর নিকট থেকে তার বাচ্চাকে ছিনিয়ে নিলে সে যেমন করে কাঁদে, খুঁটিটি ঠিক তেমনি সশব্দে কেঁদেছিলো। হজরত আনাসের হাদীছে এসেছে, তার রোদনের আওয়াজে মসজিদ প্রকম্পিত হচ্ছিলো। কাষ্ঠখন্ডেরর এরূপ বিলাপ দেখে উপস্থিত সকলেই অস্থির হয়ে পড়েছিলেন।
এক বর্ণনায় এসেছে, নবী করীম (ﷺ) এর বিচ্ছেদ-বিরহে কাষ্ঠখন্ড ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছিলো। রসুলেপাক (ﷺ) তাঁর হাত মোবারক তার গায়ে বুলিয়ে দিলে সে শান্ত হয়েছিলো। নবী করীম (ﷺ) তখন বললেন, কাঠের খুঁটিটি আল্লাহ্র জিকির করা থেকে দূরে সরে পড়েছে বলে ক্রন্দন করছে। আমি তার গায়ে হাত না বুলিয়ে দিলে আল্লাহ্র নবীর বিরহব্যথায় কিয়ামত পর্যন্ত সে এভাবে কাঁদতেই থাকতো। নবী করীম (ﷺ) কাষ্ঠখ-টিকে মিম্বর শরীফের নীচে দাফন করে দেয়ার নির্দেশ দিলেন। এরপর রসুলেপাক (ﷺ) সেদিকে লক্ষ্য করে নামাজ আদায় করতেন।
আরেক বিবরণে আছে, ক্রন্দন শোনার পর রসুলেপাক (ﷺ) তাকে নিজের দিকে আহ্বান করলেন। আর অমনি সে মাটি চিরে দৌড়ে তাঁর সামনে এসে উপস্থিত হলো। হজরত বুরায়দা (رضي الله عنه) এর হাদীছে আছে, রসুলেপাক (ﷺ) খেজুর গাছের কা-টিকে বললেন, বলো তুমি কোনটি চাও? যদি চাও, তবে তোমাকে সেই বাগানে পুনরায় লাগিয়ে দেয়া হবে, যে বাগানে তুমি ছিলে। তোমার রগরেশাগুলো পরিপূর্ণ করে দেয়া হবে, তোমার ডালপালাকে সজীব করে দেয়া হবে এবং পুনরায় ফলে ফুলে সুশোভিত হয়ে যাবে তুমি। আর যদি তুমি চাও, তবে তোমাকে জান্নাতের বাগানে লাগিয়ে দেয়া হবে। আল্লাহ্প্রেমিক বান্দারা জান্নাতে তোমার ফল ভক্ষণ করবে। তারপর রসুলেপাক (ﷺ) তার কান মোবারক উন্তুনে হান্নানার নিকট নিয়ে গেলেন, সে কী বলে তা শোনার জন্য। এরপর বললেন, সে বলছে, ‘হে আল্লাহ্র রসুল! আমাকে জান্নাতেই লাগিয়ে দেয়া হোক, যাতে আমি আল্লাহ্র প্রেমিক বান্দাদেরকে আমার ফল ভক্ষণ করাতে পারি। সেখানে আমি কখনও বৃদ্ধ হবো না। ধ্বংসও হবো না।
রসুলেপাক (ﷺ) বললেন, হাঁ, আমি তাই করবো। কেনোনা তুমি ধ্বংসশীলতার চেয়ে চিরন্তনতাকে পছন্দ করেছো।
হজরত হাসান বসরী (رحمة الله) এই হাদীছখানা বর্ণনাকালে বলতেন, হে আল্লাহ্র বান্দারা! একটি কাষ্ঠখ- রসুলুল্লাহ (ﷺ) এর ভালোবাসায় যদি এরূপ রোদন করতে পারে, তবে তোমরাতো তার চেয়ে বেশী হকদার যে, তোমরা রসুলেপাক (ﷺ) এর দীদারের আশায় উন্মুখ হয়ে থাকবে। এই হাদীছটি বিভিন্ন শব্দের মাধ্যমে বিবৃত হয়েছে। তবে এখানে যতটুকু উল্লেখ করা হলো – তাই যথেষ্ট।
➥[কিতাবঃ মাদারেজুন নবুওয়াত। মূলঃ ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله)]