মুসাল্লামাতুল্লাহ, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন হযরত খাদিজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনার সংক্ষিপ্ত সাওয়ানেহে উমরী মুবারক
প্রথম শাদী মুবারক:
উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার প্রথম শাদী মুবারক নিয়ে ঐতিহাসিকগণ বিভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তবে সর্বাধিক বিশুদ্ধ, মশহূর, দলীল ভিত্তিক, নির্ভরযোগ্য এবং সর্বোচ্চ প্রণিধানপ্রাপ্ত মতে, তামীম গোত্রের আবু হালাহ হিন্দ নাব্বাশ ইবনে জুরারা উনার সাথে উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার প্রথম শাদী মুবারক সম্পন্ন হয়। শাদী মুবারকের পর আবু হালাহ হিন্দ বেশি দিন যমীনে অবস্থান করেননি। উনার ঔরসে ৩ জন সন্তান বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন। একজন মেয়ে সন্তান বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন, উনার নাম রাখা হয় যাইনাব, তিনি অল্প বয়সেই বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। দুইজন ছেলে সন্তান বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন। উনারা হলেন- হযরত হিন্দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত হালাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।
কিতাবে উল্লেখ করা হয়, প্রাথমিক যুগে পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণকারীগণ উনাদের মধ্যে হযরত হিন্দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত হালাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা অন্যতম। হযরত হিন্দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সর্বদা নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছোহবত মুবারকে অবস্থান মুবারক করতেন। তিনি বদর-ওহুদসহ অনেক জিহাদে শরীক হয়েছেন। নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হুলিয়া মুবারক তিনি অত্যন্ত সুন্দরভাবে বর্ণনা করতেন। ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাসহ অনেকে হযরত হিন্দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার কিতাবসমূহে এবং আসমাউর রিজালে উনার সম্পর্কে আলোচনা রয়েছে। হযরত হিন্দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আমীরুল মু’মিনীন হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার মুবারক তত্ত্বাবধানে শেষ হায়াত মুবারক অতিবাহিত করেন। ৩৬ হিজরীতে সংঘটিত জঙ্গে জামালে তিনি পবিত্র শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!
হযরত হালাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিও দীর্ঘ সময় যমীনে অবস্থান মুবারক করেন। তিনি পবিত্র মক্কা শরীফে অবস্থান মুবারক করতেন। তথাপি তিনি সর্বদা নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে নিসবত মুবারক রাখতেন। প্রায়ই পবিত্র মদীনা শরীফে গমন করে ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করতেন। সুবহানাল্লাহ!
দ্বিতীয় শাদী মুবারক:
উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার দ্বিতীয় শাদী মুবারক নিয়েও ঐতিহাসিকগণ বিভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তবে সর্বাধিক বিশুদ্ধ এবং প্রণিধানপ্রাপ্ত মতে, মাখযূম গোত্রের আতীক্ব ইবনে আবিদ ইবনে আব্দুল্লাহ উনার সাথে উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার দ্বিতীয় শাদী মুবারক সম্পন্ন হয়। এ ঘরে ২ জন সন্তান বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন। একজন ছেলে সন্তান। উনার নাম রাখা হয় আব্দুল্লাহ। তিনি অল্প বয়সেই বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। আর একজন মেয়ে সন্তান উনার নাম রাখা হয় হিন্দাহ। তিনি পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের অন্তর্ভূক্ত হন। সুবহানাল্লাহ!
ব্যবসা-বাণিজ্য:
উম্মুল মু’মিনীন হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে সীরাতগ্রন্থসমূহে বিভিন্ন বক্তব্য পাওয়া যায়। যা লিপিবদ্ধ করলে কলবর অনেক বড় হয়ে যাবে। সংক্ষিপ্তাকারে মূলকথা হলো, উম্মুল মু’মিনীন হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার পিতা খুওয়াইলিদ ছিলেন পুরো আরব জাহানের বড় ব্যবসায়ীদের একজন। পিতার ইন্তেকালের পর ওয়ারিশ সূত্রে তিনি বিপুল সম্পদের মালিক হন। আবার ক্রমান্বয়ে দু’স্বামীর নিকট হতেও তিনি অনেক সম্পত্তি লাভ করেন। এই অঢেল সম্পত্তি নিয়ে তিনি ব্যবসা পরিচালনা করতেন। ব্যবসা নিয়ে তিনি বেশ চিন্তিত থাকতেন। উনার খাদেম ও গোলাম হযরত মাইসারা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ব্যবসা দেখা-শুনা করতেন। লোক দিয়ে ব্যবসা চালাতেন। সুদূর বসরা-সিরিয়া পর্যন্ত উনার বাণিজ্যিক নেটওয়ার্ক ছড়িয়েছিল। এই বৃহত্তম বাণিজ্যিক কাফেলাকে সততা ও আমানতদারীর সাথে শৃঙ্খলা, যোগ্যতা, সূক্ষ্ম কৌশলের মাধ্যমে পরিচালনার জন্য সুযোগ্য ও বিশেষ বৈশিষ্টপূর্ণ একজন লোক দরকার। কিন্তু অনেক খোঁজাখুজির পরেও এমন সুযোগ্য লোক নির্ধারণ সম্ভব হয়নি। এদিকে উম্মুল মু’মিনীন হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার পিতা ইন্তেকাল করার পর উনার চাচা আমর ইবনে আসাদ উনার অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেন। নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চাচা আবু তালিব উনার সাথে আমর ইবনে আসাদ উনার পরিচয় ছিলো, যোগাযোগ ছিল। আমর ইবনে আসাদ তিনি আবু তালিব উনার নিকট একজন সুযোগ্য ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে খোঁজ চাইলেন। তখন সেই সময় ‘আল আমীন’ লক্বব মুবারকে মশহূর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে আবু তালিব তিনি জানালেন। পর্যায়ক্রমে তা উম্মুল মু’মিনীন হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার নিকট বিষয়টি পৌছলো। তিনি রাজী হলেন। তিনি খুশি হলেন।
উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি উনার বাণিজ্যিক কার্যক্রমের সার্বিক মুবারক পৃষ্ঠপোষকতা করার জন্য নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে আরজি করেন, অনুরোধ করেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তৎক্ষনাত মুবারক ফায়সালা না দিয়ে নীরবতা পালন করেন। পরবর্তীতে আবু তালিব উনার সুপারিশের কারণে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি উনার বাণিজ্যিক কার্যক্রমের সার্বিক মুবারক পৃষ্ঠপোষকতা গ্রহণ করেন। অতঃপর বাণিজ্যিক কার্যক্রমের তারতীব নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা হয়।
পরিশেষে সিদ্ধান্ত হলো যে, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার মাল-সামানা মুদারাবার ভিত্তিতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যাবেন, বিক্রয় করবেন। মুনাফা দু’ভাগ করে উনারা দু’জন গ্রহণ করবেন।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বৃহত্তম বানিজ্যিক কাফেলার তত্ত্বাবধান মুবারক গ্রহণ করেন। বৃহত্তম বাণিজ্য কাফেলা নিয়ে তিনি সিরিয়ায় সফর মুবারক করেন। এ কাফেলাকে রহমত বরকতে পরিপূর্ণ করেন। সামান্য সময়ে ব্যবসায় অকল্পনীয় মুনাফা হয়। অল্প সময়ের ব্যবধানে সে সম্পত্তি কয়েক গুণ বৃদ্ধি হয়ে যায়। কিতাবে উল্লেখ করা হয়, সমগ্র মক্কা শরীফ উনার সমস্ত ব্যবসায়ীদের যত সম্পদ, উম্মুল মু’মিনীন হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার এককভাবে তার চেয়ে অনেক বেশী সম্পদ ছিল। সুবহানাল্লাহ! নূরে মুজাস্সাম,হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তত্ত্বাবধান মুবারকের দরূণ উম্মুল মু’মিনীন হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার সম্পদ আরো বহু গুণে বৃদ্ধি পায়। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিয়্যীন হিসেবেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূত পবিত্র অজুদ মুবারক সৃষ্টি করেছেন। বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে উনার বিশেষ বিশেষ শান-মান মুবারক প্রকাশিত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় সিরিয়া সফরে এমন কিছু ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে, যার মাধ্যমে আবারো নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিশেষ খুছুছিয়ত মুবারক দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট হয়।