মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর বিরোধীরা প্রথমাবস্থায় একে বেদআত বা বর্জনীয় ও মন্দ নতুন প্রথা বল্লেও যখন আমরা এর সপক্ষে সেই হাদীসটি প্রদর্শন করি যা’তে প্রমাণিত হয় মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোযা রেখে নিজের মীলাদ দিবস পালন করেছিলেন, তখন তারা বলে যে আমাদের তা রোযা রেখে উদযাপন করা উচিত। ওই দিন বিরিয়ানী, হালুয়া-পরোটা না খাওয়াই উচিত! উপরন্তু, আমরা নাকি শুধু বিরিয়ানী খেতেই অভ্যস্ত! আসলে, তাদের কথা স্ববিরোধী। কেননা, এটি বেদআত হলে রোযা রাখার প্রশ্নই ওঠতো না। আর রোযা রাখার মতো সুন্নাত বলে বিরোধীরা স্বীকার করে নিলে তা কখনোই বেদআত হতে পারে না! অধিকন্তু, আল্লাহ কুরআন মজীদে এরশাদ করেছেন, “খাও সে সব জিনিস হতে যা আমি (তোমাদের জন্যে) হালাল করেছি।” এমতাবস্থায় এই বিরোধীরা আমাদেরকে বিরিয়ানী, হালুয়া-পরোটা খেতে নিষেধ করে খোদার মসনদে বসতে চায় এবং নিজেদের মনগড়া হুকুম জারি করতে চায়! বস্তুতঃ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর যিকর-তাযকেরা তারা সহ্য করতে পারছে না। হিংসায় প্রাণ যাচ্ছে তাদের! তাই নানা ফন্দি এঁটে ঈদে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে বন্ধ করতে অপতৎপর তারা। অতএব, মুসলমান সর্বসাধারণের উচিত এই বরকত তথা কল্যাণময় প্রথাকে জারি রাখা। আল্লাহ পাক তৌফিক দিন, আমীন! বেহুরমাতে সাইয়্যেদিল মুরসালীন (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)।
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَ بِرَحْمَتِهِ فَبِذَالِكَ فَلْيَفْرَحُوْا هُوَا خَىْرٌ مِمَّا ىَجْمَعُوْنَ
আর্থাৎ- “হে রাসুল আপনি বলুন আল্লাহর “অনুগ্রহ” ও “রহমত” প্রাপ্তিতে তাঁদের মুমিনদের খুশি উদযাপন করা উচিত এবং এটা হবে তাদের অর্জিত সকল কর্মফলের চেয়েও শ্রেষ্ট”।
[সুরা ঈউনূছ,আয়াত ৫৮]
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) এই আয়াতের তাফসীরে বলেন, এখানে আল্লাহ এর “অনুগ্রহ” দ্বারা ইলমে দ্বীন এবং “রহমত” দ্বারা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কথা বুঝানো হয়েছে।
[আদ্দুররুল মনসূর পৃঃ ৩৩০; তাফসীর রুহুল মা’আনী ১১তম খন্ড, পৃঃ ১৮৩]
সুতরাং আলোচ্য আয়াত এবং তাফসীরের মাধ্যমে বুঝা গেল, মিলাদুন্নাবী বা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দুনিয়ায় শুভাগমনের কারণে স্বয়ং আল্লাহ পাক নিজে আমাদের আনন্দ উৎসব করার আদেশ দিয়েছেন। আর মিলাদুন্নাবী বা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আগমন উপলক্ষে আনন্দ-উতসব বা খুশী উদযাপন করার নামই হল পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)।
শুধুমাত্র ইবলিশ শয়তান জীবনে নূর নবীজীর ﷺ দুনিয়াতে আগমনের সময়টাতেই খুব বেশি কেঁদেছে বা আফসোস/হা-হুতাশ করেছে।
أن إبليس رن أربع رنات حين لعن وحين أهبط وحين ولد رسول الله صلى الله عليه وسلم وحين أنزلت الفاتحة
১. আল্লাহ যখন তাকে অভিশপ্ত হিসেবে ঘোষণা দিলেন,
২. যখন তাকে বেহেস্ত থেকে বিতাড়িত করা হল,
৩. নূর নবীজীর ﷺ দুনিয়াতে আগমনের সময় এবং
৪. সূরা ফাতিহা নাযিল হবার সময়
[সূত্রঃ ইবন কাসির, আল আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা – ১৬৬]
আর তাই তো বুখারী শরীফের ব্যাখাকার বিশ্ববিখ্যাত মোহাদ্দিস আল্লামা কুস্তোলানী রহমাতুল্লাহে আলাইহি (ওফাত ৯২৩ হিজরী) বলেন-
“যে ব্যক্তি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর শুভাগমনের মোবারক মাসের রাতসমূহকে ঈদ হিসেবে গ্রহণ করে, আল্লাহ তার উপরে রহমত বর্ষণ করেন। আর উক্ত রাত্রকে ঈদ হিসেবে উদযাপন করবে এ জন্য যে, যাদের অন্তরে (নবী বিদ্বেষী) রোগ রয়েছে। তাদের ঐ রোগ যেন আরো শক্ত আকার ধারণ করে এবং যন্ত্রণায় অন্তর জ্বলে পুড়ে যায়”।
[শরহে জুরকানী আলাল মাওয়াহেব, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা নং- ২৬২]
হায় আফসোস! আজকের নামধারী আলেমরা তাদের অনুসারীদের এ কোথায় নিয়ে যাচ্ছে!!!