সোর্সঃ দাওয়াতে ইসলামী
সংকলকঃ মোহাম্মদ জোবায়েদ হোসেন আত্তারী
দরূদ শরীফের ফযীলত
প্রিয় নবী, রাসূলে আরবী صلى الله عليه وسلم নামাযের পর হামদ ও সানা এবং দরূদ শরীফ পাঠকারীকে ইরশাদ করেন: “দোয়া করাে কবুল করা হবে, চাও, প্রদান করা হবে।” (নাসায়ী, ২২০ পৃষ্ঠা, হাদীসঃ ১২৮১)
صلى الله على محمد
অবাক করে দেয়ার মতাে ঘটনা
হযরত সায়্যিদুনা ইবনে হাজর মক্কী শাফেয়ী رحمة الله عليه নেয়মাতুল কুবরা এর ৫২ পৃষ্ঠায় প্রিয় নবী, মাদানী মুস্তফা,হুযুর صلى الله عليه وسلم এর বিলাদতে হওয়া একটি ঈমান তাজাকারী এবং অবাক করে দেয়ার মতাে ঘটনা লিখেন: এক ব্যক্তি যার নাম ছিলাে “আমের ইয়ামেনী”, তার এক কন্যা ছিলাে, যে পেট ব্যথা ও শ্বেত ইত্যাদি রােগে আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি চলাফেরা করতে অপারগও ছিলাে, আমেরের নিকট একটি মূর্তি ছিলাে, সে তার মেয়েকে এর সামনে। বসাতাে এবং মূর্তিকে বলতাে: “যদি তুমি আরােগ্য দিতে পারাে তবে আমার মেয়েকে আরােগ্য দাও।” বছরের পর বছর ধরে সে এভাবে বলতাে, কিন্তু মূর্তি মূর্তি হয়েই ছিলাে, পাথরের মূর্তি আর কিইবা দিতে পারে! সামর্থ্য ও দয়ার বাতাস বইলাে যে, একদিন আমের তার স্ত্রীকে বলতে লাগলাে: আমরা আর কতদিন এই বােবা বধির পাথরকে উপাসনা করতে থাকবাে, যে না বলতে পারে, না শুনতে পারে। আমার মনে হয় না যে, আমরা সঠিক দ্বীন” এর উপর আছি। তার স্ত্রী বললাে: ঠিক আছে, তবে আমাদেরকে সাথে নিয়ে হেদায়তের সন্ধানে বের হয়ে যান, হয়তাে আমরা সত্যের প্রতি কোন নির্দেশনা পেয়ে যাবাে। উভয় স্বামী স্ত্রী তাদের বাড়ির ছাদে বসে এই কথা বলছিলাে, হঠাৎ তারা দেখলাে যে, একটি নূর, যা পুরাে আকাশে ছড়িয়ে আছে আর এর আলােয় সারা দুনিয়া ঝলমল করে উঠলাে! আল্লাহ পাক, তাদের চোখ থেকে অন্ধকারের পর্দা সরিয়ে দিলেন, যাতে তারা উদাসিনতার ঘুম থেকে জেগে উঠে, দেখলাে; ফিরিশতারা সারিবদ্ধ হয়ে একটি বাড়িকে ঘিরে রেখেছে, পাহাড় সিজদা করছে, পৃথিবী থমকে গেছে এবং বৃক্ষরাজি নত হয়ে আছে আর একজন ঘােষণাকারী ঘােষণা করছে” “মুবারক হােক! সত্যবাদী ও সর্বশষ নবী صلى الله عليه وسلم জন্মগ্রহণ করেছেন।”
মুবারক হাে কেহ খাতিমুল মুরসালিন তাশরীফ লে আয়ে,
জনাবে রাহমাতুলল্লিল আলামানি তাশরীফ লে আয়ে।
আমের তার মূর্তির দিকে তাকালাে তখন তা অধঃমুখে মাটির উপর নিকৃষ্টভাবে পড়েছিলাে! আমেরের স্ত্রী বলতে লাগলাে: এই মূর্তিটিকে তাে দেখুন! কিভাবে মাথা নত করে মাটিতে পড়ে আছে! এতটুকু শুনতেই মূর্তিটি বলে উঠলাে: “সাবধান হয়ে যাও! মহান সংবাদ প্রকাশ হয়ে গেছে, ঐ পবিত্র সত্তার শুভাগমন হয়ে গেছে, যিনি বিশ্বজগতকে সম্মান ও মর্যাদা দান করবেন, জেনে রাখাে! তিনিই শেষ নবী صلى الله عليه وسلم যাঁর আগমনের জন্য প্রত্যেকেই অপেক্ষা করছিলাে, যার সাথে গাছ ও পাথর কথা বলবে, তাঁর ইশারায় চাঁদ দ্বিখন্ডিত হবে এবং যিনি রাবিয়া ও মুদার গােত্রের সর্দার হবেন, প্রকাশ হয়েগেছেন। একথা শুনে আমের স্ত্রীকে বললাে: তুমি কি শুনছাে যে, এই পাথর কি বলছে! বললাে তাকে জিজ্ঞাসা করুন: সেই শুভাগমনকারী সৌভাগ্যবানের নাম কি, যাঁর নূরে আল্লাহ পাক সমস্ত জগতকে আলােকিত করে দিয়েছেন? আমের বললাে: হে অদৃশ্য থেকে আসা আওয়াজ! এই পাথরটি শুধু আজই কথা বলেছে, এটা তাে বলাে তাঁর নাম কি? উত্তর দিলাে: তাঁর পবিত্র নাম হলাে মুহাম্মদ صلى الله عليه وسلم যিনি সাহিবে যমযম ও সাফা (অর্থাৎ হযরত সায়্যিদুনা ইসমাইল عليه السلام) এর সন্তান, তাঁর জমিন হলাে “তাহামা” এবং তাঁর উভয় কাঁধের মাঝখানে “মােহরে নবুয়ত রয়েছে, তিনি যখন চলবেন তখন মেঘ তাঁকে ছায়া দিবে। (নয় নয় বরং মেঘ তাঁর কাছ থেকে ছায়া অর্জন করবে) দিবে। (নয় নয় বরং মেঘ তাঁর কাছ থেকে ছায়া অর্জন করবে) এমন সময় আমেরের অসুস্থ মেয়ে, যে নিচে অবচেতন অবস্থায় পড়ে ছিলাে, নিজের পায়ে হেটে ছাদে এসে গেলাে, আমের আশ্চর্য হয়ে বললাে: হে আমার কন্যা! তােমার ঐ ব্যথা কোথায় গেলাে, যাতে তুমি লিপ্ত ছিলাে এবং যা তােমার বেঁচে থাকাকে কষ্টকর করে দিয়েছিলাে? মেয়ে উত্তর দিলাে: আব্বাজান! আমি বিশ্বজগত থেকে অবচেতনই ছিলাম, এমন সময় আমি আমার সামনে নূরের তাজাল্লি দেখলাম, আমার সামনে একজন বুযুর্গ তাশরীফ আনলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম: এই নূর কিসের, যা আমি দেখছি এবং এই বুযুর্গ কে, যার মুবারক দাঁতের নূর আমাকে ছায়া দিয়ে আছে? উত্তর এলাে: ইনি আদনানের সন্তানের নূর (হযরত আদনান রাসূলে পাক صلى الله عليه وسلم এর পূর্বপুরুষদের মধ্যে একজন বুযুর্গ) যাঁর কারণে বিশ্বজগতে নূর বর্ষন হচ্ছে, তাঁর পবিত্র নাম হলাে মুহাম্মদ ও আহমদ, অনুগতদের প্রতি দয়া এবং গুনাহগারদের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করবেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম: তাঁর ধর্ম কি? উত্তর দিলাে: তিনি “দ্বীনে হানিফ” (অর্থাৎ সত্য দ্বীন) এর উপর প্রতিষ্ঠিত। আমি জিজ্ঞাসা করলাম: তিনি কার ইবাদত করেন? উত্তর এলাে: الله وحره لا شر يك এর অর্থাৎ ঐ আল্লাহ পাকের, যিনি এক ও তাঁর কোন অংশীদার নেই। আমি জিজ্ঞাসা করলাম: আপনি কে? তখন উত্তর আসলাে: আমি ঐসকল ফিরিশতাদের মধ্যে একজন ফিরিশতা, যাদেরকে নূরে মুহাম্মদী উঠানাের সৌভাগ্য প্রদান করা হয়েছে। আমি আর করলাম: আপনি কি আমার এই কষ্টকে দেখছেন না? ফিরিশতা বললাে: হ্যাঁ! তুমি নবীয়ে আহমদ صلى الله عليه وسلم এর ওসীলায় দোয়া করাে। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন: আমি আমার মাহবুবের সত্তায় আপন রহস্য ও দলীল রেখেছি, যে ব্যক্তি আমার নিকট আমার মাহবুবের ওসীলায় দোয়া করবে, তার সমস্যা দূর করে দিবাে। আর যারা আমার অবাধ্যতা করলাে আমি তাদের ব্যাপারে কিয়ামতের দিন আমার হাবীব صلى الله عليه وسلم কে সুপারিশকারী বানাবাে। তিনি সত্যি বলেছেন, আমি তা শুনেই আমার উভয় হাত প্রসারিত করে দিলাম এবং সত্য অন্তরে আল্লাহ পাকের নিকট দোয়া করলাম অতঃপর আমার হাতকে চেহারায় এবং শরীরে বুলিয়ে দিলাম, যখন ঘুম ভাঙ্গলাে তখন নিজেকে এমন দেখলাম, যেমনটি আপনারা আমাকে দেখছেন। একথা শুনে আমের ইয়ামেনী তার স্ত্রীকে বললাে: নিশ্চয় আমরা সেই মুবারক মনিষীর আশ্চর্যজনক নিদর্শন দেখেছি, আমি তাঁর প্রতি ভালবাসা ও দীদারের আগ্রহে জঙ্গল এবং কঠিন উপত্যকা অতিক্রম করবাে। অতএব আমের ইয়ামেনী ও তার পুরাে পরিবার নূরানী আক্কা, প্রিয় মুস্তফা صلى الله عليه وسلم সন্ধানে বের হয়ে গেলাে এবং মক্কায়ে
টিকা–আমরাও দোয়া করছি: হে আল্লাহ! আমাদের ঈমান নিরাপদ রেখাে, মওলায়ে করীম! মন্দ মৃত্যু থেকে বাঁচাও, হে আল্লাহ! গুনাহের রােগ থেকে আরােগ্য দান করাে, হে আল্লাহ! জাহেরী ও বাতেনী রােগ থেকে আরােগ্য দান করাে, পরওয়ার দিগার! নূরে আহমদীর সদকায় সর্বদার জন্য আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যাও, হে পরওয়ার দিগার! জশনে বিলাদতের ওসীলায় আমাদেরকে জান্নাতুল ফেরদাউসে তােমার প্রিয় হাবীব صلى الله عليه وسلم এর প্রতিবেশী হওয়ার সৌভাগ্য দান করাে, হে আল্লাহ! সকল উম্মতের মাগফিরাত করাে। أمين بجاه النبي الأمين صلى الله عليه واله وسلم
মুকাররমার সফরের ইচ্ছা পােষন করলাে, মক্কার পবিত্র ভূমিতে প্রবেশ করেই বিবি আমেনা رضى الله عنه মর্যাদাময় বাড়ির ঠিকানা জিজ্ঞাসা করে দরজায় করাঘাত করলাে। বিবি আমেনা খাতুন رضى الله عنه আসার কারণ জানতে চাইলে সে আরয করলাে আমাদেরকে আপনার কলিজার টুকরাে, নূরে নযরের নূর বর্ষনকারী চেহারা দেখিয়ে দিন, যাঁর আলােতে সমগ্র বিশ্বজগতকে আলােকিত করে দিয়েছেন, যাঁর ওসীলায় আল্লাহ পাক সমগ্র জগতকে আলােকিত করে দিয়েছেন। হযরত বিবি আমেনা رضى الله عنه ( বললেন: আমি এখনি আমার নূরে নযর (অর্থাৎ আমার প্রিয় সন্তানকে) তােমাদের দেখাবাে না, কেননা আমার ইহুদীদের প্রতি ভয় হয়, তারা তাঁর কোন ক্ষতি যেনাে করে না দেয় আর আমি জানিনা যে, তােমরা কারা আর কোথা থেকে এসেছাে? আমের ও তার পরিবারের সদস্যরা বললাে: আমরা তাে এই সর্বশেষ নবী صلى الله عليه وسلم এর ভালবাসায় নিজেদের দেশ এবং নিজেদের ধর্মকে (অর্থাৎ আমাদের বাতিল ধর্ম) ছেড়েছি যে, এই নূরানী নবী صلى الله عليه وسلمদীদার দ্বারা আমাদের চোখকে আলােকিত করবাে, যার দরবারে উপস্থিত হওয়া কেউই বিফল ফিরে যাবেনা। একথা শুনে বিবি আমেনা رضى الله عنه বললেন: আচ্ছা যদি আমার প্রিয় সন্তানের দীদার করা ছাড়া তােমাদের উপায় না থাকে তবে তাড়াহুড়ো করাে , কিছুক্ষণ অপেক্ষা করাে। একথা বলে তিনি তাঁর মহা ম্যাদাময় বাড়ির ভেতর চলে গেলেন, কিছুক্ষণ পরই বললেন: ভেতরে এসে যাও । অনুমতি পেতেই তারা সেই বরকতময় কক্ষে প্রবেশ করলাে, যাতে উভয় জগতের তাজেদার, প্রিয় নবী صلى الله عليه وسلم আরাম করছিলেন, সেখানকার নূর ও তাজাল্লিতে এমনভাবে বিভাের হয়ে গেলাে যে, দুনিয়া এবং দুনিয়ায় যা কিছু আছে, তা ভুলে গেলাে, তৎক্ষণাৎ আল্লাহ পাকের যিকির করতে লাগলাে, নূরানী চেহারা থেকে পর্দা সরাতেই হঠাৎ তার চিঙ্কার বের হয়ে গেলাে, এমনভাবে কাঁদলাে যে, হি উঠে গেলাে, শরীর থেকে রূহ বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়ে গিয়েছিলাে। অগ্রসর হয়ে রাসূলে পাক صلى الله عليه وسلم ছােট্ট ছােট্ট মুবারক হাতে চুমু খেলাে । হযরত বিবি আমেনা رضى الله عنه বললেন: এবার দ্রুত চলে যাও, অবশেষে না চাইতেই আমের ইয়ামেনী বুকে হাত চেপে ধরে কক্ষ থেকে বের হয়ে এলাে। আমের ইয়ামেনীর অবস্থা পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিলাে, সে সেই নূরানী চেহারার দীদারের আশিক হয়ে গিয়েছিলাে, পাগলের মতাে চিল্কার করে বলতে লাগলাে: আমাকে হযরত বিবি আমেনা رضى الله عنه এর বাড়িতে আবারাে নিয়ে চলাে আর আবারাে অনুরােধ করে যে,আমাকে যেনাে দীদার করিয়ে দেয়। বিবি আমেনা ও & এর বাড়িতে ফিরে এলাে, এবার আমের ইয়ামেনী হুযুর পুরনূর صلى الله عليه وسلم কে দেখতেই লাফিয়ে পড়লাে এবং কদমে পড়ে গেলাে অতঃপর জোরে একটি চিৎকার দিলাে আর তার রূহ সেই ছােট্ট ছােট্ট কদমে কুরবান হয়ে গেলাে। (নে’মতে কুবরা, ৫২ পৃষ্ঠা)
আমজাদ কা দিল মুঠি মে লে কর সােতে হাে কিয়া আনজান! নন্নে কদমোঁ মে সর কো রাখ কর হাে জাও কুরবান মাদানী আল্লাহ আল্লাহ আল্লাহ হু, লা ইলাহা ইল্লাহ হু আল্লাহ আল্লাহ আল্লাহ হু, লা ইলাহা ইল্লাহ হু
নবী করীম صلى الله عليه وسلم এর শুভাগমনের স্থান প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! যেই বরকতময় বাড়িতে আল্লাহ পাকের প্রিয় শেষ নবী صلى الله عليه وسلم এর শুভাগমন হয়, ইসলামী ইতিহাসে সেই স্থানের নাম হলাে “মাওলিদুন্নবী صلى الله عليه وسلم (অর্থাৎ প্রিয় নবীর শুভাগমনের স্থান), এটি খুবই বরকতময় স্থান। আল্লামা কুতুবুদ্দীন رحمة الله عليه বলেন: হুযুরে আকরাম صلى الله عليه وسلم এর বিলাদতের স্থানে দোয়া কবুল হয়ে থাকে। (বলদুল আমিন, ২০১ পৃষ্ঠা)
খলিফা হারুনুর রশীদ رحمة الله عليه এর আম্মাজান رضى الله عنه সেখানে মসজিদ নির্মান করিয়েছিলেন, এই মসজিদটি কয়েকবারই নির্মাণ করা হয়েছে, এটি খুবই সুন্দর দালান ছিলাে, যার অধিকাংশ অংশে স্বর্ণের কারুকাজ করা হয়েছিলাে। (জামেউল আ’সার, ২/৭৫১-৭৫২)
বরকতময় স্থান
আল্লামা আবুল হুসাইন মুহাম্মদ বিন আহমদ জুবাইর আন্দালুসী رحمة الله عليه এই আলিশান স্থানের আলােচনা করতে গিয়ে (নিজের যুগের হিসাবে) লিখেন: ঐ পবিত্র স্থান, যেখানে আল্লাহ পাকের প্রিয় নবী صلى الله عليه وسلم এর শুভাগমন হয়েছিলাে, সেই বরকতময় স্থানে রূপা দ্বারা সজ্জিত করা হয়েছিলাে (এই স্থানটি এরূপ লাগতাে) যেনাে ছােট্ট একটি পানির পুকুর, যার উপরিভাগ রূপা দ্বারা নির্মিত। এই বরকতময় বাড়ি রবিউল আউয়ালে সােমবার খােলা হতাে, কেননা রবিউল আউয়াল হুযুর পুরনূর صلى الله عليه وسلم এর। বিলাদতের মাস এবং সােমবার বিলাদতের দিন, লােকেরা এই বাড়িতে বরকত লাভের জন্য প্রবেশ করতাে। মক্কা শরীফে এইদিন সর্বদা “ইয়াওমে মাশহুদ” ছিলাে অর্থাৎ এই দিনে লােকেরা জড়াে হতাে। (তাযকিরাতু বিল আখবার আন ইত্তিফাকাতুল আসফার, ১২৭-১৮৭ পৃষ্ঠা)।
আল্লাহ পাকের দরবারে আমীরে আহলে সুন্নাত হযরত আল্লামা মাওলানা মুহাম্মদ ইলইয়াস আত্তার কাদেরী()আরয করেন:
মক্কে মে উন কি জায়ে বিলাদত পে ইয়া খােদা
ফির চশমে আশকবার জামানা নসীব হাে
শুভাগমনের স্থানে উপস্থিত হওয়ার সৌভাগ্য হায়!
এখন এসব মুবারক ব্যবস্থাপনা বন্ধ হয়ে গেছে আর বর্তমানে এই মহান বরকতময় স্থানটিতে লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এবং সেখানে সাইনবাের্ড লাগানাে আছে: مكتبة مكه المكر مة অর্থাৎ মাকতাবাতু মাক্কাতিল মুকাররমাতি। এই বরকতময় স্থানে পৌছার সহজ উপায় হচ্ছে, আপনি মারওয়া পর্বতের যে কোন নিকটবর্তী দরজা দিয়ে বাইরে চলে আসুন। সম্মুখেই নামাযীদের জন্য অনেক বড় করে ঘেরাও দেয়া আছে, ঘেরাও এর অপর প্রান্তে এই মহত্বপূর্ণ স্থানটি নিজের আলাে ছড়াচ্ছে, ان شاءالله عزوجل দূর থেকেই দৃষ্টি গােচর হবে। (আশিকানে রাসুলের ১৩০টি ঘটনাবলী, ১৮৩ পৃষ্ঠা)
মিলাদে মুস্তফা অনুষ্ঠানের রীতিমতাে সূচনাকারী বাদশাহ
হে আশিকানে রাসূল! “সর্বপ্রথম প্রচলিত পদ্ধতিতে রীতিমতাে জশনে বিলাদত উদ্যাপনের সূচনা করেন
আরবালের বাদশাহ আবু সাঈদ মুযাফফর رحمة الله عليه তাঁর অনুরােধে ইবনে দিহইয়া رحمة الله عليه মিলাদের বিষয়ে “আত তানভিরু বিমাওলিদিল বাশির ওয়ান্নাযির” কিতাব লিখেন। আবু সাঈদ মুযাফফর رحمة الله عليه ইবনে দিহইয়া رحمة الله عليه এ কে একহাজার স্বর্ণমুদ্রা উপহার স্বরূপ প্রদান করেন।” (জাওয়াহেরুল বাহার, ৪/৮৮)
سبحان الله عزوجل কিরূপ পবিত্র যুগ ছিলাে আর আশিকে রাসূলকে কেমন মূল্যায়নকারী ছিলাে যে, মিলাদ শরীফের কিতাব লিখাতে এত বড় অংকের উপহার দিলেন। এতে এটাও জানা যায়, পূর্বেকার বুযুর্গরা আপন পদ্ধতিতে জশনে বিলাদত উদযাপন করতেন।
মানানা জশনে মিলাদুন্নবী হার গিয না ছুড়েঙ্গে,
জুলুসে পাক মে জানা কভী হারগিয না ছুড়েঙ্গে।
লাগাতে জায়েঙ্গে হাম ইয়া রাসুলাল্লাহ কে নারে,
মাচানা মারহাবা কি ধুম ভি হারগিয না ছুড়েঙ্গে।
صلى الله على محمد
মদীনায় আজিমুশ্মান মিলাদের ইজতিমা
হযরত সায়্যিদুনা শায়খ আলী বিন মূসা মাদানী মালেকী رحمة الله عليه বলেন: মসজিদে নববী শরীফে অনেক বছর যাবৎ ১২ই রবিউল আউয়ালের দিন আজিমুশ্মন মিলাদের ইজতিমা হতাে, যাতে বড় বড় ইমামগণ বয়ান করতেন। ১২ই রবিউল আউয়ালের সকালের সূর্য উদিত হতেই মিলাদ শরীফের মাহফিল শুরু হয়ে যেতাে এবং মিলাদ পড়ার জন্য চারজন ইমাম নিযুক্ত থাকতেন। মাহফিল শরীফ হেরেম শরীফের উঠানে হতাে। প্রথমে একজন ইমাম সাহেব মিলাদ শরীফের নির্দিষ্ট চেয়ারে বসে হাদীস পাঠ করতেন অতঃপর দ্বিতীয় ইমাম রাসূলে পাক صلى الله عليه وسلم এর বিলাদত শরীফের বয়ান করতেন। অতঃপর তৃতীয় ইমাম। প্রিয় নবী صلى الله عليه وسلم এর শৈশবকালের বয়ান করতেন এরপর চতুর্থ ইমাম এসে হিজরতের বয়ান করতেন। অবশেষে লােকেরা শরবত পান করতো এবং বাদামের হালুয়া নিয়ে ফিরে যেতাে। (রাসায়িলে ফি তারিখুল মদীনা, ১৭৭ পৃষ্ঠা)
জব তলক ইয়ে চাঁদ তারে ঝিলমিলাতে জায়েঙ্গে,
তব তলক জশনে বিলাদত হাম মানাতে জায়েঙ্গে।
ইন কে আশিক নূর কি শময়ে জালাতে জায়েঙ্গে, জবকেহ হাসিদ দিল জালাতে ছটফটাতে জায়েঙ্গে।
নূরই নূর
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! الحمد الله عزوجل আমরাও জশনে বিলাদত উদযাপন করি, নেককারদের ওসীলায় আমাদের প্রচেষ্টাও কবুল হয়ে যায়। হযরত শাহ ওয়ালিওল্লাহ মুহাদ্দীস দেহলভী رحمة الله عليه বলেন: আমি মক্কা শরীফ মিলাদ শরীফের দিন রাসূলে পাক صلى الله عليه وسلم এর বিলাদতের স্থানে উপস্থিত ছিলাম, সবাই প্রিয় নবী صلى الله عليه وسلم এর প্রতি দরূদ ও সালাম পাঠ করছিলাে আর হুযুর صلى الله عليه وسلم এর বিলাদতের সময় যে ঈমান উজ্জীবিতকারী ঘটনা ঘটেছিলাে। তা আলােচনা করছিলাে, তখন আমি ঐ নূরের রশ্মি দেখলাম যা হঠাৎ সেই মাহফিলে প্রকাশ হয়েছিলাে আর আমি বলতে পারবাে না যে, এই নূর কি আমি আমার প্রকাশ্য চোখে দেখেছি নাকি অন্তরের চোখে দেখেছি, আল্লাহই ভাল জানেন। যখন আমি এই নূর ও তাজাল্লী সম্পর্কে ভাবছিলাম তখন জানতে পারলাম যে, এই নুর ও তাজাল্লী ঐসকল ফিরিশতাদের পক্ষ থেকে প্রকাশ হচ্ছে, যারা এই ধরনের নুরানী ও বরকতময় মাহফিলে অংশগ্রহণ করে আর আমি এটাও দেখেছি যে, ফিরিশতাদের কাছ থেকে প্রকাশ পাওয়া এই নূর আল্লাহ পাকের রহমতের নূর থেকেই পাচ্ছে। (ফুয়ুযুল হারামাইন, ২৬ পৃষ্ঠা)
সম্পূর্ণ মিলাদ মাহফিল দাঁড়িয়ে শ্রবণকারী বৃদ্ধ
মিলাদ শরীফের সম্মানে দাঁড়ানােকে বিদআত বলা এক ব্যক্তির ঘটনা পড়ন আর শিক্ষা অর্জন করুন। হযরত সায়্যিদুনা আল্লামা আব্বাস মালেকী s s; বলেন: আমি বায়তুল মুকাদ্দাসে ১২ই রবিউল আউয়াল রাতে মিলাদের মাহফিলে অংশগ্রহণ করেছিলাম, আমি দেখলাম যে, একজন। বৃদ্ধ লােক শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অত্যন্ত আদব সহকারে দাঁড়িয়ে মিলাদের মাহফিলে অংশগ্রহণ করেছিলাে। যখন কেউ সম্পর্ণ মাহফিল দাঁড়িয়ে শুনার কারণ জিজ্ঞাসা করলাে, তখন তিনি বললেন: আমি প্রিয় নবী صلى الله عليه وسلم এর কল্যাণময় আলােচনা শুনার সময় সম্মানার্থে দাঁড়ানােকে “বিদআতে সাইয়্যাহ” অর্থাৎ মন্দ বিদআত মনে করতাম। একদিন আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, আমি অনেক বড় একটি ইজতিমায় রয়েছি এবং লােকেরা রাসুলে পাক صلى الله عليه وسلم কে অভ্যর্থনা জানানাের জন্য দাঁড়ালাে, যখন প্রিয় নবী صلى الله عليه وسلم এর আগমন হলাে তখন সকলে অত্যন্ত আদব সহকারে হুযুর صلى الله عليه وسلم কে স্বাগত জানালাে, কিন্তু আমি সম্মানার্থে দাঁড়ালাম না। নবী করীম صلى الله عليه وسلم – ইরশাদ করলেন: “তুমি আর দাঁড়াতে পারবে না।” যখন চোখ খুললাে তখন দেখলাম যে, এখনাে আমি বসে আছি। এই বেদনায় এক বছর অতিবাহিত হয়ে গেলাে কিন্তু দাঁড়াতে পারলাম না । অবশেষে আমি মান্নত করলাম যে, যদি আল্লাহ পাক আমাকে এই রােগ থেকে আরােগ্য দান করে তবে আমি মিলাদ মাহফিল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দাঁড়িয়েই শুনবাে। এই মান্নতের বরকতে আল্লাহ পাক আমাকে সুস্থতা দান করলেন। আর এখন এটা আমার অভ্যাস হয়ে গেছে যে, নিজের মান্নত পূরণ করতে গিয়ে রাসূলে পাক صلى الله عليه وسلم এর সম্মানে সম্পূর্ণ মাহফিল দাঁড়িয়ে শ্রবন করি। (আল আলামু বিফাতাওয়া আয়িম্মাতিল ইসলাম, ৯৪ পৃষ্ঠা)
খুব বরসেগি জানাযে পর খােদা কি রহমতে
কবর হক সরকার কি নাতে সুনাতে জায়েঙ্গে
صلى الله على محمد
এমন মান্নত করুন, যা পূরণ করতে পারবেন
হে আশিকানে রাসূল! এখানে যে মান্নত তিনি করেছেন, তা শরয়ী মান্নত নয় বরং তা ছিলাে প্রচলিত মান্নত, প্রচলিত মান্নত পূরণ করা ওয়াজিব নয় কিন্তু এরূপ যে জায়িয মান্নত করা হয়, তা পূরণ করা উচিৎ, কেননা এতে কল্যাণ রয়েছে। ماشاءالله عزوجل তিনি মান্নত করেছেন আর আল্লাহ পাক আরােগ্য দান করলেন এবং তিনি মিলাদের মাহফিল দাঁড়িয়ে শুনতেন। এমন যেনাে না হয় যে, অতি উৎসাহিত হয়ে আপনিও এধরনের মান্নত করতে লেগে গেলেন, কেননা সম্পূর্ণ মাহফিল দাঁড়িয়ে শ্রবন করা সবার পক্ষে সম্ভব নয় আর যদি বড় ইজতিমা হয় এবং এর মাঝখানে আপনি দাঁড়িয়ে যান তবে আপনার পেছনে বসা লােকদের সমস্যা হবে আর বসানাের জন্য টানাটানি করবে, এতে সমস্যার সৃষ্টি হয়ে যাবে।
যিকরে মিলাদে মুবারক কেয়সে ছুড়ে হাম ভালা
জিন কা খাতেহে উনহি কে গীত গাতে জায়েঙ্গে
মানুষ শয়তান
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! বর্তমান স্যোশাল মিডিয়ার যুগে অনেক মূর্খ লােক, যারা জশনে বিলাদত উদযাপন করে না, তারা বিভিন্ন ধরনের কুমন্ত্রণা ছড়িয়ে আশিকানে রাসূলকে এই নেক ও বরকতময় কাজ থেকে বাঁধা দেয়ার বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকে। এই “شيا طين الانس ” অর্থাৎ মানুষ শয়তান পথভ্রষ্ট করার চেষ্টা করে থাকে এবং মনে সংশয় ও সন্দেহ দিয়ে থাকে। আয়িম্মায়ে দ্বীনরা বলেন: “মানুষ শয়তান, জ্বীন শয়তানের চেয়ে বেশি বিপদজনক হয়ে থাকে।” (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ১/৭৮০-৮১)
প্রিয় নবী صلى الله عليه وسلم হযরত সায়্যিদুনা আবু যর গিফারী رضى الله عنه কে ইরশাদ করেন: আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করাে মানুষ শয়তান এবং জীন শয়তানের অনিষ্ট থেকে আরয করলেন: মানুষের মাঝেও কি শয়তান হয়? ইরশাদ করলেন: হ্যাঁ। (মুসনাদে ইমাম আহমদ, ৮/১৩০, হাদীস ২১৬০২)
অতএব যত পথভ্রষ্ট ও বদমাযহাব রয়েছে, তারা সবাই “شيا طين الانس” অর্থাৎ মানুষ শয়তানের অন্তর্ভূক্ত আর ইবলিশের পাশাপাশি তাদের অনিষ্ট থেকেও আমাদের আশ্রয় প্রার্থনা করতে থাকা উচিৎ। কিন্তু আফসােস! অসংখ্য মুসলমান তাদের সাথে মেলামেশা রাখে এবং তাদের কথাবার্তাও মনােযােগ সহকারে শুনে। প্রােগ্রামেও অংশগ্রহণ করে থাকে, তাদের লেখনিও পড়ে, এই কারণেই তারা নিজের দ্বীন সম্পর্কে অবহিত না হওয়ার কারণে সন্দেহ ও সংশয়ে পড়ে যায় যে, তারা সঠিক নাকি আমরা সঠিক? অতঃপর অনেকে তাে তাদের ফাদে এমনভাবে ফেঁসে যায় যে, তাদেরই গুণ গাইতে থাকে এবং এমনকি এমনও শুনা যায় যে, “তারাও তাে সঠিক কথাই বলছে!”
সহানুভূতিশীল পরামর্শ
ইমামে আহলে সুন্নাত মাওলানা ইমাম আহমদ রযা খাঁন رحمة الله عليه এরূপ লােকদের কাছ থেকে বেঁচে থাকার প্রতি জোর দিয়ে বলেন: ভাইয়েরা! তােমরা তােমাদের লাভ ক্ষতি সম্পর্কে বেশি জানাে নাকি তােমাদের প্রতিপালক ও তোমাদের নবী – صلى الله عليه وسلم, তাঁদের নিদের্শ তাে হলাে, শয়তান তােমাদের কাছে কুমন্ত্রণা দিতে আসবে, তখন এরূপ সোজা উত্তর দিয়ে দাও যে, “তুই মিথুক” এরূপ করােনা যে, তুমি দৌড়ে দৌড়ে তাদের (কাফের বা বেদ্বীন ও বদ মাযহাবীদের) নিকট চলে যাবে। লােকেরা নিজেদের অজ্ঞতায় মনে করে যে, আমরা তাে মনে প্রাণে মুসলমান, আমাদের মাঝে তাদের কোন প্রভাব পড়বে না! অথচ রাসূলে পাক صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করেন: যে ব্যক্তি দাজ্জালের সংবাদ শুনবে, তার উপর ওয়াজিব যে, তার কাছ থেকে দূরে পালানাে, কেননা আল্লাহর শপথ! মানুষ তার নিকট যাবে এবং এটা মনে করবে যে, আমি তাে মুসলমান অর্থাৎ আমাকে সে কি ক্ষতি করবে, সেখানে তার প্রতারণার ফাঁদে পড়ে তার অনুসারী হয়ে যাবে। (আবু দাউদ, ৪/১৫৭, হাদীস ৪৩১৯)
শুধু কি দাজ্জাল দ্বারা সেই একটাই নিকৃষ্ট দাজ্জালকে বুঝায়, যে ভবিষ্যতে আসবে, কখনাে নয়! সমস্ত পথভ্রষ্টতার প্রতি আহবানকারী সকলেই দাজ্জাল আর সবার কাছে থেকেই দূরে পালানাের আদেশ দিয়েছেন এবং তাতে এই সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে। (ফতোয়ায়ে রযবিয়া, ১/৭৮১-৭৮২)
সরওয়ার দ্বী! লিজিয়ে আপনে নাতােয়ানোঁ কি খবর নফস ও শয়তা সায়্যিদা! কব তক দাবাতে জায়েঙে
মিলাদ শরীফ উদযাপন করতে
বারণকারীদের কুমন্ত্রণার উত্তর
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! অনেকে জশনে ঈদে মিলাদুন্নবী صلى الله عليه وسلم সম্পর্কে কুমন্ত্রণার শিকার হয়ে থাকে, তাদেরকে বুঝানাের চেষ্টার সাওয়াব এবং সহজ সরল আশিকানে রাসূলকে সংশয় থেকে বাঁচানাের ভাল ভাল নিয়্যতে কয়েকটি প্রশ্নোত্তর উপস্থাপন করছি। যদি একবার পাঠ করে সংশয় দূর না হয় তবে তিনবার পাঠ করে নিন, ان شاءالله عزوجل বিষয়গুলাে মনের মাঝে গেঁথে যাবে, কুমন্ত্রণা দূর হয়ে যাবে এবং প্রশান্ত মন নসীব হবে।
প্রশ্ন ১: কোরআন ও হাদীসে মিলাদ শরীফের আলােচনা নেই, অতএব মিলাদ উদযাপন করা উচিত নয়?
উত্তরঃ কোরআনে করীম থেকে তিনটি দলীল পাঠ করুন!
(১) আল্লাহ পাক সূরা আলে ইমরানের ১৬৪নং আয়াতে ইরশাদ করেন:((لَقَدْ مَنَّ ٱللَّهُ عَلَى ٱلْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولًۭ))
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদঃ নিশ্চয় আল্লাহর মহান অনুগ্রহ হয়েছে মুসলমানের উপর যে, তাদের মধ্যে তাদেরই মধ্য থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন।(সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৬৪)
(২) সূরা ইউনুসের ৫৮নং আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে
قُلْ بِفَضْلِ اللّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُواْ هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُونَ ﴿٥٨﴾
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: আপনি বলুন, ‘আল্লাহরই অনুগ্রহ ও তাঁরই দয়া, সেটারই উপর তাদের আনন্দ প্রকাশ করা উচিত। তা তাদের সমস্ত ধন-দৌলত অপেক্ষা শ্রেয়।(সুরা ইউনুস, আয়াত- ৫৮)
(৩) ৩০তম পারার সূরা দোহার ১১নং আয়াতে রয়েছে:((وَأَمَّا بِنِعْمَةِ رَبِّكَ فَحَدِّثْ ﴿١١﴾)) কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ আর আপন রবের নেয়ামতের ব্যাপক চর্চা করুন।
(পারা ৩০, সূরা দোহা, আয়াত-১১)
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! এই আয়াত সমূহ দ্বারা জানা গেলাে, আল্লাহ পাকের অনুগ্রহে খুশি উদযাপন করা স্বয়ং আল্লাহ পাকের নির্দেশ। রাসূলে পাক صلى الله عليه وسلم এর দুনিয়ায় আগমন সমস্ত নেয়ামতের চেয়ে বড় নেয়ামত, কেননা আল্লাহ পাক এই অনুগ্রহ দেখিয়ে দিয়েছেন, এর চর্চার করা এই আয়াতের উপরই আমল করা, এখন যদি কারাে ঘরে সন্তান জন্ম হয়, তখন সে প্রতি বছর জন্মদিন পালন করে, যেই তারিখে দেশ স্বাধীন হয়েছে, প্রতিবছর সেই তারিখ উদযাপন করা হয় এবং রেলি (জুলুস) বের করা হয় আর যারা এতে অভিযােগের তীর ছুঁড়ে তাকে দেশদ্রোহী বলা হয় তবে যেই তারিখে প্রিয় নবী صلى الله عليه وسلم। এ দুনিয়ায় আগমন করেন, তা কেনােইবা সবচেয়ে বড় খুশির দিন হবে না? সুতরাং মিলাদ শরীফ উদযাপন করা কোরআনী আদেশের প্রতি আমল করাই। আর এই আপত্তিকারীরা কি রাসূলে পাক صلى الله عليه وسلم এর বিলাদতকে আল্লাহ পাকের নেয়ামত ও আল্লাহ পাকের রহমত হিসাবে মান্য করে না, নাকি মিলাদের মাহফিলকে আল্লাহর নেয়ামতের চর্চা এবং তাঁর দয়া ও অনুগ্রহের খুশি মনে করে না, অথবা তারা এটা বলুক যে, কোরআন ও হাদীসে কোথায় মিলাদ মাহফিল নিষেধ আছে?
খাক হাে জায়ে অদি ও জ্বাল কর মগর হাম তাে রযা দম মে জব তক দম হে যিকির উন কা সুনাতে জায়েঙ্গে
প্রশ্ন ২: সাহাবায়ে কিরামরা رضى الله عنه কখনােই জশনে বিলাদত উদ্যাপন করেননি, তবে কি তােমরা তাঁদের চেয়ে বড় আশিকে রাসূল?
উত্তর: কোরআনে করীমের পর সবচেয়ে বেশি নির্ভরযােগ্য কিতাব হলাে “সহীহ বুখারী” এবং একে প্রায় সকল মুসলমানরাই মানে, ইমাম বুখারী رحمة الله عليه প্রতিটি হাদীসে মুবারাকা লিখার পূর্বে গােসল করতেন এবং দুই রাকাত নফল নামায আদায় করতেন। (নুজহাতুল ক্বারী, ১/১৩০)
অথচ সাহাবায়ে কিরামের رضى الله عنه মধ্যে এমন কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না যে, তাঁরা হাদীসে পাক বর্ণনা করার পূর্বে গোসল করতেন এবং দুই রাকাত নফল নামায পড়তেন, তাই এরূপ বলা যাবে যে, ইমাম বুখারী সাহাবায়ে কিরাম رضى الله عنه থেকে বড় আশিকে রাসূল? নাকি তাঁর মনে সাহাবায়ে কিরামের رضى الله عنه চেয়ে বেশি হাদীসে পাকের আদব বিদ্যমান? আরাে শুনুন! কোটি কোটি মালেকীদের মহান ইমাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মালেক رحمة الله عليه মদীনার অলিতে গলিতে খালি পায়ে চলাফেরা করতেন এবং মদীনার মাটির সম্মানে তিনি মদীনা মুনাওয়ারায় কখনােই প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দেননি, এজন্য তিনি رحمة الله عليه সর্বদা মদীনার হেরেম থেকে বাইরে চলে যেতেন, তবে অসুস্থ অবস্থায় অপারগ ছিলেন। (বুস্তানুল মুহসিন, ১৯ পৃষ্ঠা) তাই বলে কি এরূপ বলা যাবে যে, ইমাম মালেক رحمة الله عليه সাহাবায়ে কিরাম رضى الله عنه থেকে বেশি আশিকে রাসূল ছিলেন? কখনােই নয়, কোরআনে করীমে মূলনীতি বর্ণনা করে দেয়া হয়েছে আর তা হলাে:()কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদঃ আর রাসূলের সম্মান ও আদব করাে” এই আয়াতে মুবারাকার তাফসীরে মুফাসসীরগণ বলেন: রাসূলে পাক صلى الله عليه وسلم এর সম্মানে যেটাই প্রচলিত রয়েছে আর তা যেনাে শরীয়াতের সাথে সাংঘর্ষিক না হয়, তা সবই এই আয়াতের অন্তর্ভুক্ত, এখানে সম্মান ও আদবের জন্য কোন ধরনের বাধ্যবাধকতা বর্ণনা করা হয়নি, দাঁড়িয়ে সালাত ও সালাম পড়ুক বা অন্য কোন পন্থায় প্রিয় নবী صلى الله عليه وسلم এর সম্মান প্রদর্শন করা, যা শরীয়াত বিরােধী নয়, তা সবই করা যাবে। (তাফসিরে সীরাতুল জিনান, ৯৩৫৩) এমন অসংখ্য কাজ করা হয় যা সাহাবায়ে কিরাম رضى الله عنه এবং তাবেঈন رضى الله عنه এর যুগে ছিলাে না, কিন্তু ধর্মে প্রচলিত আছে এবং জশনে বিলাদত থেকে নিষেধকারী লােকেরাও এই কাজ করছে, যেমন প্রচলিত দরসে নিজামী কোর্স, প্রচলিত মাদরাসা ব্যবস্থাপনায় হিফয ও নাজারার আলাদা আলাদা ক্লাস, বেতন দিয়ে পড়ানাের জন্য শিক্ষক নিয়ােগ কা এবং এই বেতনের জন্য চাঁদা নেয়া, বুখারীর সূচনা, খতমে বুখারী বরং স্বয়ং সহীহ বুখারী, সাহাবায়ে কিরাম رضى الله عنهও তাবেঈনের رحمة الله عليه বরং তাবে তাবেঈনের رحمة الله عليه যুগের অনেক পরে লিখা হয়েছে, উড়ােজাহাজের মাধ্যমে হজ ও ওমরার সফর ইত্যাদি হাজারাে দ্বীনি কাজ রয়েছে, যা প্রতিনিয়ত করা হয়, কেউ তা নিষেধ করে না। নিজ নিজ নসীবের বিষয়, যে যাকে ভালবাসে, তার স্মরণ অধিকহারে করে থাকে, ঘরকে আলােকিত করে থাকে আর কেউ কেউ তাল-বাহানা করে করে অন্তর জালাতে থাকে।
জু হি আ’মদ মাহে মিলাদে মুবারক কি হােয়ী,
আহলে ঈর্মী ঝুম উঠে শয়তা কো গুচ্ছা আয়া হে।
হার মালাক হে শাদমাঁ খুশ আজ হার এক হুর হে,
হ্যাঁ! মগর শয়তান মাআ রুফাকা বড়া রঞ্জোর হে।
প্রশ্ন ৩: ইসলামে শুধুমাত্র দুটিই ঈদের উল্লেখ রয়েছে, সুতরাং ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন করা উচিৎ নয়? উত্তর: সিহাহ সিত্তায় (অর্থাৎ হাদীসে পাকের প্রসিদ্ধ ছয়টি কিতাব) রয়েছে আল্লাহ পাকের রাসূল صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করেন: জুমা হলাে ঈদের দিন, এই হিসাবে তাে সারা বছরে প্রায় ৪৮টি ঈদ হলাে এবং ঈদুর ফিতর ও ঈদুল আযহা মিলিয়ে মােট ৫০দিন ঈদ হলাে আর এই সকল ঈদ যেই ঈদের সদকায় অর্জিত হয়েছে তা হলাে “১২ই রবিউল আউয়াল শরীফ” الحمد الله عزوجل এটি আশিকানে রাসূলের জন্য ঈদেরও ঈদ, কেননা রাসূলে পাক صلى الله عليه وسلم যদি দুনিয়ায় তাশরীফ নিয়ে না আসতেন, তবে কোন ঈদই ঈদ হতাে না, কোন রাতই শবে বরাত হতাে না। প্রকৃতি ও বিশ্ব জগতের সকল আলাে এবং শান এই জগতের প্রাণ, প্রিয় নবী صلى الله عليه وسلم এর কদমের ধুলিরই সদকা স্বরূপ। হাদীসে পাকে বর্ণিত রয়েছে: (আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন) হে আমার হাবীব! আমি দুনিয়া এবং দুনিয়াবাসীকে এই জন্যই সৃষ্টি করেছি, যাতে আপনার যেই সম্মান ও মর্যাদা আমার নিকট রয়েছে, আমি তাদেরকে এর পরিচয় করিয়ে দিই এবং হে আমার হাবীব! যদি আপনি না হতেন তবে আমি দুনিয়াই সৃষ্টি করতাম না। (লুমআতুল তানকিহ, ৯/২২০। আল মাওয়াহিবুল লিদ দুনিয়াতি, ১/৪৪)
ওহ জু না থে তাে কুছু না থা, ওহ জু না হো তো কুছ না হাে
জান হে ওহ জাহান কি, জান হে তাে জাহান হে
প্রশ্ন ৪: ১২ই রবিউল আউয়াল বিলাদত শরীফের দিন নয়, এতে মতানৈক্য রয়েছে আর এটা ফতােওয়ায়ে রবীয়ায়ও রয়েছে, অতএব ১২ই রবিউল আউয়াল শরীফে জশনে ঈদে মিলাদুন্নবী صلى الله عليه وسلم উদযাপন করা উচিৎ নয়।
উত্তর: এই প্রশ্নের একটি উত্তর তাে এটাই যে, ফতােওয়ায়ে রযবীয়ায় আমার আকা আলা হযরত ইমামে আহলে সুন্নাত رحمة الله عليه বলেন: সবচেয়ে বেশি প্রসিদ্ধ, নির্ভরযােগ্য এবং গ্রহণযােগ্য বিষয় হলাে ১২ই রবিউল আউয়াল। (ফতােওয়ায়ে রযৰীয়া, ২৬/৪১১) দ্বিতীয় উত্তর হলাে, যদি আপনি ১২ই রবিউল আউয়াল শরীফকে জশনে বিলাদত উদযাপন করতে না চান তবে অন্য কোন তারিখ যেমন দুই, আট বা দশ রবিউল আউয়ালের উক্তিকেই গ্রহণ করে নিন এবং ব্যাপক ধুমধাম সহকারে প্রিয় নবী صلى الله عليه وسلم এর জশনে বিলাদত উদ্যাপন করুন।
ঝুম কর সারে খুশি সে বার বার “মারহাবা ইয়া মুস্তফা ফরমাইয়ে।
“ইয়া রাসূলাল্লাহ” কেহিয়ে জোর সে।শাক জিগার ইবলিশ কা ফরমাইয়ে
প্রশ্ন ৫: ১২ই রবিউল আউয়ালের জুলুস বের করা বিদআত এবং প্রত্যেক বিদআত পথভ্রষ্টতা আর জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার মতাে, সুতরাং মিলাদের জুলুস বের করা এবং এতে যাওয়া জায়িয নেই।
উত্তর: হে আমার সহজ সরল ইসলামী ভাইয়েরা! “বিদআত” এর অর্থই হলাে নতুন কাজ, যেমনিভাবে প্রত্যেক নতুন কাজ খারাপ নয়, তেমনিভাবে প্রত্যেক বিদআতও মন্দ হয় না, বরং যেই নতুন কাজ কোরআন ও সুন্নাতের পরিপন্থি, তা বিদআতে সাইয়্যা অর্থাৎ মন্দ বিদআত আর হাদীসে পাক “كل بدعة ضلا لة ” দ্বারা উদ্দেশ্য হলাে মন্দ বিদআত, যে নতুন কাজ কোরআন ও সুন্নাত, সাহাবাদের রীতিনীতি বা উম্মতের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের পরিপন্থি নয়, তা মন্দ নয়। যেমন তারাবীর জামাআত, যা প্রায় সকল মসজিদে করা হয়, তা তাে স্বয়ং হযরত সায়্যিদুনা ওমর ফারুকে আযম رضى الله عنه উত্তম বিদআত বলেছেন। অনেক বিদআত মুস্তাহাব বরং ওয়াজিবও হয়ে থাকে। আজ থেকে প্রায় পাঁচশত বছর পূর্বে লিখিত কিতাব “আইনুল ইলম” এ রয়েছে: যে বিষয়টিকে শুরু থেকে নিষেধ করা হয়নি এবং সাহাবা ও তাবেঈনদের যুগের পরই মানুষের মাঝে প্রচলন হয়, তাতে সাদৃশ্য রেখে মুসলমানদের মন খুশি করা উত্তম, যদিও সেই বিষয়টি বিদআতই (অর্থাৎ তা নতুন কাজ) হােক না কেন, এর দলীল হলাে সেই হাদীস, যা হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ رضى الله عنه নবী করীম صلى الله عليه وسلم এর বাণী এবং স্বয়ং তাঁর উক্তি দ্বারা বর্ণিত হয়েছে যে, মুসলমান যে বিষয়টি ভাল মনে করে, তা আল্লাহ পাকের নিকটও নেক কাজ। (আইনুল ইলম, ৪১২ পৃষ্ঠা)
প্রায় সাড়ে চারশত বছর পুরােনাে বুযুর্গ হযরত সায়্যিদুনা আল্লামা ইবনে হাজর رحمة الله عليه বলেন: বিদআতে হাসানা (অর্থাৎ ঐ নেক কাজ যা কোরআন ও হাদীসের পরিপন্থি নয়) মুস্তাহাব হওয়ার প্রতি ঐক্যমত রয়েছে এবং বিলাদত শরীফ উদযাপন করা ও এর জন্য লােক জড়াে করা। এই প্রকারেরই অন্তর্ভূক্ত। (অর্থাৎ মিলাদ শরীফ উদ্যাপন করা মুস্তাহাব ও নেক এবং ভাল কাজ ।) (ইনসানুল উজুন, ১/৮৪)
হযরত মাওলানা আলী শামী رحمة الله عليه বলেন: এটা সেই অস্বীকার করবে, যার অন্তরে আল্লাহ পাক মােহর মেরে দিয়েছেন। (ফতােওয়ায়ে রযবীয়া, ২৬/৫১৯)
লাখ শয়তাঁ হাম কো রুখে ফযলে রব সে তা আবাদ জশন আকা কি বিলাদত কা মানাতে জায়েঙ্গে
প্রশ্ন ৬ঃ পুরােনাে বুযুর্গরা মিলাদ শরীফ উদযাপনের ব্যাপারে কিছুই বলেননি, সুতরাং মিলাদ শরীফ উদযাপন করা উচিৎ নয়।
উত্তর: কমপক্ষে পাঁচশত বছর পূর্বে কয়েকজন বুযুর্গের বানী এবং তাঁদের কিতাব সম্পর্কে পড়ুন: আজ থেকে প্রায় সাড়ে আটশত বছর পূর্বে হযরত সায়্যিদুনা আল্লামা আব্দুর রহমান ইবনে জাওযী رحمة الله عليه “মাওলিদুল উরুশ” নামে একটি কিতাব লিখেন, যার একটি রেওয়ায়াত ১০নং পৃষ্ঠায় দৃষ্টি গােচর হয়, তিনি বলেন: হযরত সায়্যিদুনা আহমদে মুজতবা, মুহাম্মদে মুস্তফা صلى الله عليه وسلم এর জশনে বিলাদত উদযাপনকারীর বরকত, সম্মান, কল্যাণ এবং গৌরব অর্জিত হয়, মুক্তার পাগড়ী এবং সবুজ হুল্লা (অর্থাৎ সবুজ পােষাক) পরিধান করে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মাওলিদুল উরুশ, ২৮১ পৃষ্ঠা)
৯২৩ হিজরীর (অর্থাৎ প্রায় পাঁচশত বছর পূর্বে) মহান বুযুর্গ ইমাম আহমদ বিন মুহাম্মদ কাস্তালানীرحمة الله عليه বলেন: রাসূলে পাক صلى الله عليه وسلم এর বিলাদতের মাসে মুসলমান সর্বদা মিলাদের মাহফিল করে আসছে এবং বিলাদতের খুশিতে দাওয়াত দেয়, খাবার রান্না করে এবং ব্যাপক সদকা ও খয়রাত করে আসছে। ব্যাপকভাবে খুশি প্রকাশ করে আর মন খুলে ব্যয় করে, তাছাড়া হুযুর صلى الله عليه وسلم এর সৌভাগ্য মণ্ডিত বিলাদতের আলােচনার ব্যবস্থা করে আসছে, সুতরাং তাদের প্রতি আল্লাহ পাকের দয়া ও বরকত বর্ষিত হয়ে থাকে, মিলাদ শরীফ উদযাপন করাতে অন্তরের বাসনা পূরণ হয়, আল্লাহ পাক তার প্রতি রহমত বর্ষন করুক যে মিলাদ শরীফের রাতকে ঈদ (অর্থাৎ খুশির দিন) বানিয়ে নেয় । (তিনি আরাে বলেন:) মিলাদ শরীফের খুশি তাদের কঠিন বিপদের বিষয়, যাদের অন্তরে রােগ ও কপটতা রয়েছে। (যুৱকনি আলাল মাওয়াহেব, ১/১৩৯)
হযরত সায়্যিদুনা ইমাম আবু শাম্মা رحمة الله عليه (যিনি ইমাম নববী رحمة الله عليه এর উস্তাদ ছিলেন) বলেন: আমাদের যুগে যেই নতুন কাজ করা হয়, তা হলাে লােকেরা প্রতি বছর রাসূলে পাক صلى الله عليه وسلم এর বিলাদতের দিন সদকা ও খয়রাত এবং খুশি প্রকাশ করার জন্য নিজেদের ঘর এবং গলিকে সাজাতাে, কেননা এতে অনেক উপকারীতা রয়েছে সবচেয়ে বড় বিষয় হলাে যে, আল্লাহ পাক তাঁর প্রিয় মাহবুব صلى الله عليه وسلم কে সৃষ্টি করেছেন এবং রাহমাতুল্লিল আলামিন বানিয়ে পাঠিয়েছেন, এটা তাঁর আপন বান্দাদের প্রতি অনেক বড় দয়া, যার কৃতজ্ঞতা আদায় করার জন্য খুশি উদযাপন করা হয়ে থাকে। (আস সীরাতুল হালবিয়া, ১/৮০)
জু কেহ জলতে হে যিকিরে মওলুদ সে,
কর আতা উন কো তু সকর ইয়া রব!
প্রশ্ন ৭: ১২ই রবিউল আউয়ালে অনেক বেশি লাইটিং করে অপচয় করা হয়, যদি এই টাকা গরীবদের মাঝে বন্টন করা হয় তবে কত যে লােকের মঙ্গল হতাে। উত্তর: সর্বপ্রথম এই মূলনীতিটি মনে গেঁথে নিন যে, ওলামায়ে কিরাম বলেন: لا خير فى ا لاسراف و لا اسرا ف فى الخير অর্থাৎ অপচয়ে কোন কল্যাণ নেই এবং কল্যাণের কাজে ব্যয় করাতে কোন অপচয় নেই। মহান তাবেয়ী বুযুর্গ হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুজাহিদ رحمة الله عليه বলেন: যদি কোন ব্যক্তি উহুদের পাহাড় সমান সম্পদও আল্লাহর আনুগত্যে ব্যয় করে তবুও সে অপচয়কারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে না।( হিলইয়াতুল আউলিয়া, ৩/৩৩৩)
উপরে বর্ণিত রেওয়ায়াত দ্বারা যখন এটা প্রমাণিত হয়ে গেলাে, জশুনে বিলাদত উদযাপন করা নেকী এবং সাওয়াবের কাজ, এজন্য সাওয়াবের কাজে সম্পদ যত বেশি ব্যয় করা হবে তা কমই, অপচয় নয়। একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রতি বছর ২০ থেকে ২৫ মিলিয়ন রিয়াল ব্যয় করে কাবার গীলাফ প্রস্তুত করা হয়! বিয়ে ও নিত্য নতুন অনুষ্ঠানে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করা হয়, কেউ তাদেরকে গিয়ে যেনাে বুঝায় যে, এখানে ব্যয় করার পরিবর্তে গরীবদের মাঝে টাকা বিতরন করে দাও, তখন বুঝা যাবে বরং স্বয়ং নিজের ঘরের ডেকোরেশন এবং এক একটি নতুন মডেলের গাড়ি, মােবাইল ইত্যাদি দেখুন, এগুলাে গরীবদের মাঝে বিতরন করে কয়েক হাজার টাকা দামের বাইক এবং মােবাইল ফোন ব্যবহার করে গরীবের কল্যাণ করুন, তখন বুঝা যাবে। মােটকথা এমন অসংখ্য কাজ করা হয়, যাতে কোটি কোটি, শতকোটি টাকা প্রতি বছর খরচ হয়ে থাকে কিন্তু তা কেউ নিষেধ করে না, কিছুদিন পূর্বে করােনার কারণে হওয়া লকডাউনে স্যোশাল মিডিয়ায় একটি পােষ্ট ভাইরাল হয়েছে যে, দেখাে! গরীবদের মাঝে খাবার তারাই বন্টন করছে, যারা জশনে বিলাদতে আলােকসজ্জা করতে, যাইহােক গরীবদের সাহায্যও করুন এবং জশনে বিলাদতও উদ্যাপন করুন, কেন শুধু জশনে বিলাদতেই মনে কুমন্ত্রণা আসে, বিষয়টি অন্য কিছু নয় তাে? নফসে আম্মারা ও শয়তানকে লা হাওলা শরীফ পাঠ করে মারহাবা ইয়া। মুস্তফার শ্লোগান লাগিয়ে দূর করে দিন এবং ব্যাপক ধুমধাম সহকারে জশনে বিলাদত উদযাপন করুন।
লেহরাও সবজ পরছম এয় আকা কে আশিকো। ঘর ঘর কর চেরাগা কেহ সরকার আগেয়ে।
আলােকসজ্জা দেখে কাফের ইসলাম কবুল করে নিলাে
জশনে বিলাদতের লাইটিং এর কথা কি আর বলবাে। এক ইসলামী ভাই জানালাে যে, একবার জশনে বিলাদতের সময় মসজিদকে সাজিয়ে নব বধূর মতাে বানিয়ে দেয়া হয়েছিলাে, এক অমুসলিম মসজিদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সাজানাের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলাে, যখন তাকে বলা হলাে যে আমরা আমাদের প্রিয় নবী صلى الله عليه وسلم এর বিলাদতের খুশিতে এরূপ আলােকসজ্জা করেছি, তখন তার মন রাসূলে পাক صلى الله عليه وسلم এর মহত্বে পরিপূর্ণ হয়ে গেলাে যে, বিলাদতের ১৫০০ বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে, তবুও মুসলমান তাদের নবী صلى الله عليه وسلم এর এরূপ শান ও শওকত সহকারে জশনে বিলাদত উদ্যাপন করছে আর নিজেদের মসজিদ এবং ঘরকে এভাবে সাজাচ্ছে, তবে এই ধর্মই সত্যি। الحمد الله عزوجل সে কুফরী থেকে তাওবা করে কলেমা পাঠ করে মুসলমান হয়ে গেলাে।
ইয়া রাসুলাল্লাহ কা নারা লাগাও জোর সে,
উন কে দুশমন মুহ ফুলাতে বুড়বুড়াতে জায়েঙ্গে।
হাদীস শরীফে বর্ণিত রয়েছে, হুযুর صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি ইসলামে কোন নেক পদ্ধতি বের করলাে, তার পদ্ধতি বের করারও সাওয়াব অর্জিত হবে এবং তাতে আমলকারীদেরও সাওয়াব অর্জিত হবে আর। আমলকারীদের নিজেদের সাওয়াবে কোনরূপ কমতি হবে না এবং যে ব্যক্তি ইসলামে মন্দ পদ্ধতি বের করলাে, তবে তার উপর সেই পদ্ধতি বের করারও গুনাহ হবে এবং এই পদ্ধতির উপর আমলকারীদের গুনাহও হবে আর এই আমলকারীদের নিজেদের গুনাহে কোনরূপ কমতি হবে না। (মুসলিম, কিতাবুয যাকাত, ৫০৮ পৃষ্ঠা, হাদীস ৬৯(১০১৭))
প্রশ্ন ৮: ১২ই রবিউল আউয়ালের আলােকসজ্জার বিদ্যুৎ চুরি এবং অনেক বেশি আওয়াজে নাত চালিয়ে অন্যকে কষ্ট দেয়া হয়, তাছাড়া লঙ্গরকে এমনভাবে নিক্ষেপ করা হয়, যাতে রিযিকের অমর্যাদা হয়ে থাকে। অতএব জশনে ঈদে মিলাদুন্নবী صلى الله عليه وسلم উদযাপন করা উচিৎ নয়।
উত্তর: একটি মূলনীতি মনে গেঁথে নিন যে, নাকে মাছি বসলে মাছিকেই তাড়াতে হয়, নাক কাটা হয় না। এবার বলুন! পরিপূর্ণ শরীয়ত সম্মতভাবে বিবাহ কোথায় হচ্ছে? তবে কি কেউ এটা বলেছে যে, বিবাহ করা ছেড়ে দাও, কেননা এর কারণে অসংখ্য গুনাহ করতে হচ্ছে। বিজয় দিবসের দিন কত গুনাহ হয় কিন্তু তা কেউ নিষেধ করেনি যে, বিজয় দিবস উদযাপন করাে না, তবে কেন শুধু ঈদে মিলাদুন্নবী صلى الله عليه وسلم কে নিয়ে এতাে চিন্তিত হচ্ছাে? সমস্যা অন্য কোথাও নয় তাে???
মানায়েঙ্গে খুশি হাম হাশর তক জশনে বিলাদত কি, সাজাওয়াট অউর করনা রৌশনি হারগিয না ছোড়েঙ্গে। صلى الله على محمد