ঈদের দিন কি শুধু দুইটি..?

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

ঈদের দিন কি শুধু দুইটি..?? কোন ঈদের দিনে রোজা রাখা দুই বছরের গুনাহের কাফফারা..??

রঈসুল মুফাসসিরিন আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) নিম্নোক্ত আয়াতটি পাঠ করলেন (অনুবাদ): “আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে তোমাদের জন্য পূর্ণাঙ্গ করলাম, তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন মনোনীত করলাম”— (সূরা আল-মায়িদাহ ৩)। তার নিকট এক ইয়াহুদী উপস্থিত ছিল। সে বলল, আমাদের উপর এরূপ একটি আয়াত অবতীর্ণ হলে সেই দিনকে আমরা অবশ্যই ঈদের (খুশির) দিন হিসেবে পালন করতাম। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, এটি তো আমাদের দুই ঈদের দিন নাযিল হয়েছেঃ জুমআর দিন এবং আরাফার দিন। (সূনান আত তিরমিজী ৩০৪৪, মিশকাত ১৩৬৮)

বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে,

একদল ইয়াহূদী বলল, যদি এ আয়াত আমাদের প্রতি অবতীর্ণ হত, তাহলে আমরা উক্ত অবতরণের দিনকে ‘ঈদের দিন হিসেবে উদযাপন করতাম। তখন ‘উমার (রাঃ) তাদের জিজ্ঞেস করলেন, কোন আয়াত? তারা বলল, এই আয়াতঃ ‘‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন কে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত পরিপূর্ণ করলাম’’- (সূরা আল-মায়িদাহ ৫/৩)। তখন ‘উমার (রাঃ) বললেন, কোন্ স্থানে এ আয়াত অবতীর্ণ হয়েছিল তা আমি জানি। এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার সময় রাসূলুল্লাহ ﷺ আরাফায় দন্ডায়মান অবস্থায় ছিলেন। (সহীহ বুখারী ৪৪০৭)

হ্যাঁ, মহান আল্লাহ সুবহা’নাহু ওয়াতাআ’লা যাঁকে মহা অনুগ্রহ হিসেবে সমস্ত সৃষ্টিকুলের জন্য রহমতস্বরুপ পাঠিয়েছেন সেই নবীগণের সর্দারের আগমনের দিনকেও আমরা খুশি তথা ঈদের দিন মনে করি যাঁর আগমনের দিনে নারাজ হয়ে উচ্চস্বরে কেঁদেছিল একমাত্র শয়তান। কাফির হয়েও যাঁর আগমনে খুশি হওয়ার কারণে উত্তম প্রতিদান ভোগ করছে আবূ লাহাব। 

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা বলেন,

নিশ্চয় আল্লাহ মু’মিনদের প্রতি মহা অনুগ্রহ করেছেন যে, তিনি তাদের জন্য তাদেরই মধ্য হতে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন। যিনি তাদের নিকট তাঁর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে শুনাবেন, তাদেরকে পবিত্র করবেন এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দিবেন। অথচ ইতিপূর্বে তারা ছিল সুস্পষ্ট পথভ্রষ্টতায় নিমজ্জিত। (সূরা আলে ইমরান ১৬৪)

আল্লাহ পাক (মূসা আলায়হিস সালাম কে) নির্দেশ দেন,

“তাদেরকে আল্লাহর দিবসসমূহ (অনুগ্রহ কিংবা অনুগ্রহের দিনগুলো) স্মরণ করিয়ে দাও’। এতে তো নিদর্শন রয়েছে প্রত্যেক পরম ধৈর্যশীল ও পরম কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য।” (সূরা ইব্রাহিমঃ ৫)

এছাড়াও অনুগ্রহ এবং রহমত প্রাপ্তিতে আনন্দ প্রকাশ করার অনুমোদন তো আল্লাহ তায়া’লা দিয়েছেনই-

“(হে রাসূল!) আপনি বলুন, আল্লাহ’র-ই অনুগ্রহ (ফদ্বল) ও তাঁরই দয়া (রহমত) এবং সেটারই উপর তাদের আনন্দ প্রকাশ করা উচিত। এটা তারা যা (পার্থিব সম্পদ) সঞ্চয় করছে তা হতে অধিক উত্তম।’ (সূরা ইউনুসঃ ৫৮) 

“সুতরাং আল্লাহর অনুগ্রহগুলোকে স্মরণ করো এবং পৃথিবীতে ফিতনা-ফাসাদকারী হয়ে বিচরণ করো না।” (সূরা আ‘রাফঃ ৭৪)

আবার কেউ কেউ এই যুক্তি দেখায় যে ১২ই রবিউল আউয়ালকে ঈদের (খুশির) দিন বললে ঐ দিন রোজা রাখা নিষিদ্ধ হয়ে যাবে কেননা ঈদের দিন রোজা রাখা নিষিদ্ধ অন্যদিকে প্রিয় নবী ﷺ এঁর দুনিয়ায় আগমনের দিনে রোজা রাখা সুন্নত!!! তাহলে তাদেরকে বলতে চাই, তারা এমন জাহেল যে, তারা এটাও জানে না যে, আরাফার দিবসকেও ঈদের দিন বলা হয়েছে অথচ আরাফা দিবসের (৯ জিলহজের) রোজা পূর্ববর্তী ও পরবর্তী এক বছরের গুনাহের কাফফারা স্বরুপ। (সহিহ মুসলিম ২৬৩৬)।

সুতরাং দুই ঈদ ছাড়া আর কোন ঈদের (খুশির) দিন নাই, এমন কথা যে বলবে সে নিশ্চয়ই জাহেল-মূর্খ অথবা ধোঁকাবাজ। 

জুমুআর দিন-ই হযরত আদম আলায়হিস সালাম এঁর জন্ম ও ওফাত দিবস। এক রেওয়ায়েতে এসেছে,

প্রিয় নবী ﷺ বলেন, জুমুআর দিন হলো সপ্তাহের দিনসমূহের সর্দার এবং তা আল্লাহ্‌র নিকট অধিক সম্মানিত। এ দিনটি আল্লাহ্‌র নিকট কুরবানীর দিন ও ঈদুল ফিতরের দিনের চেয়ে অধিক সম্মানিত। এ দিনে রয়েছে পাঁচটি বৈশিষ্ট্যঃ 

১. এ দিন আল্লাহ আদম (আলায়হিস সালাম) কে সৃষ্টি করেন, ২. এ দিনেই আল্লাহ তাঁকে পৃথিবীতে পাঠান, ৩. এ দিনেই আল্লাহ তাঁকে ওফাত দান করেন, ৪. এ দিনে এমন একটি মুহূর্ত আছে, কোন বান্দা তখন আল্লাহ্‌র নিকট কিছু প্রার্থনা করলে তিনি তাকে তা দান করেন, যদি না সে হারাম জিনিসের প্রার্থনা করে এবং ৫. এ দিনেই ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে। নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতাগণ, আসমান-যমীন, বায়ু, পাহাড়-পর্বত ও সমুদ্র সবই জুমুআর দিন শংকিত হয়। (সুনানে ইবনে মাজাহ ১০৮৪, মিশকাত ১৩৬৩)

এখন প্রশ্ন জাগে, তাহলে কিভাবে ঐ দুই ঈদকেই সেরা ঈদ বলে দাবী করা হয়! হযরত আদম আলায়হিস সালাম এঁর দুনিয়াতে আগমনের দিন তথা জুমুআর দিনকে ঐ দুই ঈদ থেকে অধিক সম্মানিত বলা হচ্ছে এবং আরো বলা হয়েছে যে, এ দিনে এমন একটি মুহূর্ত আছে, কোন বান্দা তখন আল্লাহ্‌’র নিকট কিছু প্রার্থনা করলে তিনি তাকে তা দান করেন, যদি না সে হারাম জিনিসের প্রার্থনা করে- তাহলে যিনি নবীগণের সর্দার সেই ইমামুল আম্বিয়ার দুনিয়ায় আগমনের দিনটা কতটা সম্মানিত হতে পারে- দুআর মধ্যে যাঁর উপর দরুদ (ও সালাম) পাঠ করা ব্যতিত আমাদের দুআও কবুল হয় না…!! এতসব যে, ঈদ পেলাম কার মাধ্যমে! শরীয়ত পেলাম কার মাধ্যমে!

ঈদ মানে খুশি। কিছু পেলেই তো আমরা খুশি হই। খাদ্য পেয়েও খুশি হয়ে ঈদ উদযাপন করবে বলে দুআ করেছেন হযরত ঈসা আলায়হিস সালাম ও তাঁর অনুসারীরা। যার বর্ণনা রয়েছে পবিত্র কালামে পাকে। 

তাঁর ﷺ এঁর আগমনের দিনটা-ই কি সকল মুমিনের জন্য সবচেয়ে বড় খুশির দিন হওয়া উচিৎ নয় যিনি অন্যান্য খুশির দিনগুলো (ঈদ) নিয়ে এসেছেন!! এটাকে ঐ দুই ঈদের সাথে মিলাতে যান কেন? ঈদের নামাজ আর খুতবা খুঁজেন কেন?

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment