ইহরাম

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

ইহরাম

ইহরামের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে হারাম করা। যেহেতু হাজী যখন মীক্বাত থেকে হজ্জের নিয়্যাত করে ইহরাম করে তালবিয়াহ পড়ে নেয় তখন তার উপর কতগুলো হালাল ও বৈধ বস্তু হারাম হয়ে যায়। তাই একে ইহরাম বলা হয়।

ইহরাম হচ্ছে দুটি সেলাই বিহীন কাপড় (চাদর) পরিধান করা, যার একটা নাভী থেকে হাটু পর্যন্ত লুঙ্গির পরিবর্তে, অপরটা কাঁধের উপর লটকানো হয়। মাথা খোলা রাখতে হয়।

ইহরামের প্রকারভেদ:-

হজ্জ এর প্রকারভেদে ইহরামের পার্থক্য হয়। যেমনঃ

১. শুধু ওমরার জন্য ইহরাম করা।

২. ইফরাদ অর্থাৎ শুধু হজ্জের জন্য ইহরাম পরিধান করা। 

৩. ক্বিরান অর্থাৎ হজ্জ ও ওমরার জন্য সম্মিলিত ইহরাম। 

৪. তামাত্তু অর্থাৎ প্রথমে ওমরার ইহরাম করা এবং হজ্জের মৌসুমে ওমরা সম্পন্ন করার পর দ্বিতীয়বার হজ্জের ইহরাম করা। হানাফী মাযহাব মতে সর্বোত্তম হজ্জে ক্বিরান। এর পর তামাত্তু এরপর এফরাদ। মীক্বাতের বাইরে থেকে আগতদের জন্য যে কোন একটা করা জায়েয; কিন্তু মক্কার অধিবাসীদের জন্য ক্বিরান এবং তামাত্তু নিষিদ্ধ।

ইহরাম শুদ্ধ হওয়ার শর্তাবলী:-

১. মুসলমান হওয়া।

২. ইহরামের নিয়্যত করা এবং সাথে সাথে তালবিয়াহ পড়া। কেবল মনে মনে নিয়্যত করা যথেষ্ট নয় বরং নিয়্যতের সাথে তালবিয়্যাহ কিংবা কোন দো’আ ও যিকর করা আবশ্যকীয়।

ইহরামের ওয়াজিবসমূহ:-

১. মীক্বাত থেকে ইহরাম বাধা।

২. ইহরামের নিষিদ্ধ বস্তুসমূহ থেকে বেঁচে থাকা।

ইহরামের সুন্নাতসমূহ:-

১. হজ্জের মাসসমূহে ইহরাম বাঁধা।

২. নিজ দেশের মীক্বাত থেকে ইহরাম পরা যদি সে ওই পথ দিয়ে অতিক্রম করে।

৩. গোসল অথবা ওযূ করা। 

৪. চাদর বা সেলাই বিহীন কাপড় পরিধান করা।

৫. দু’রাকআত নফল নামায আদায় করা।

৬. উচ্চ স্বরে তিনবার তালবিয়াহ পড়া।

ইহরাম করার জন্য মুস্তাহাবসমূহ:-

১. শরীরের অপবিত্রতা দূর করা।

২. নখ কাটা।

৩. বগল পরিস্কার করা।

৪. নাভীতল পরিস্কার করা।

৫. ইহরামের নিয়্যতে গোসল করা।

৬. নতুন বা ধোলাই করা সাদা চাদর ব্যবহার করা।

৭. জুতার পরিবর্তে খোলা সেন্ডেল পরিধান করা।

৮. মৌখিক নিয়্যত করা।

৯. নিয়্যত নফল নামাযের পরে বসে বসে করা।

ইহরামের মুবাহসমূহ:-

ইহরাম অবস্থায় নিম্মলিখিত কাজগুলো বৈধ

গোসল করা, বাসস্থানে প্রবেশ করা, ছায়ায় বসা, ছাতা মাথায় দেয়া, ভাঙ্গা নখ কেটে ফেলা, আয়না দেখা, কাপড় পবিত্র করা, ডুব দেয়া, গরম বা ঠন্ডা পানি দিয়ে শরীর মালিশ ব্যতীত, গোসল করা, লুঙ্গির উপরে বা নিচে টাকার থলে বাঁধা, নিম্নভাগের চাদরে পকেট রাখা, অনিষ্টকারী প্রাণী যেমন ছারপোকা, সাপ ও বিচ্ছু ইত্যাদি মেরে ফেলা।

ইহরামের মাকরূহসমূহ:-

ইহরাম অবস্থায় সুগন্ধি স্পর্শ করা বা স্বেচ্ছায় সুগন্ধি নেয়া, চাদরে গিরা দিয়ে গর্দানের উপর বাঁধা, নিচের চাদরে গিরা দেয়া বা সুঁইসূতা দিয়ে সংযুক্ত করা, নাক ও থুতনীকে কাপড় দিয়ে ঢেকে ফেলা, মাথার চুল ও দাড়ি চিরুনী দিয়ে আচড়ানো। মাথার চুল ও দাড়িকে এমনভাবে চুলকানো যাতে চুল বা উকুন খসে পড়ার সম্ভাবনা থাকে, মাথা, দাড়ি ও শরীর সাবান দিয়ে ধৌত করা।

ইহরামের নিষিদ্ধ বস্তুসমূহ:-

সেলাই করা কাপড় পরিধান করা, এমন জুতা পরিধান করা যাতে পায়ের মধ্যবর্তী হাড় ঢেকে যায়, মাথায় ও চেহারার উপর পাট্টি বাঁধা, খুশবু লাগানো বা সুগন্ধিযুক্ত কাপড় পরা, চুল কাটা, নখ কাটা, ঝগড়া বিবাদ করা, স্ত্রী সঙ্গম, চুম্বন ও আলিঙ্গন করা, স্থলভাগে শিকার করা বা পশুগুলোকে উত্যক্ত করা, অন্যকে শিকারে উৎসাহিত বা সহযোগিতা করা, স্থলবাসী পশু পাখীর বাচ্চা বা ডিম ধ্বংস করা, উকুন মারা ইত্যাদি।

মহিলা ও শিশুর ইহরাম:-

মহিলাদের ইহরাম পুরুষদের মতই হবে পার্থক্য এতটুকু যে মহিলা মাথা ঢেকে থাকবে, মহিলাদের জন্য সেলাই করা কাপড় পরা বৈধ। রঙ্গীন হলেও অসুবিধা নেই। হজ্জ যাত্রী নাবালেগ হলে যদি সক্ষম হয় তবে নিজের ইহরাম নিজেই পরবে, অন্যান্য কাজও নিজেই সম্পন্ন করবে। অবুঝ শিশু হলে অভিভাবক তার পক্ষ থেকে ইহরাম করে নেবেন। তাওয়াফের নামায ছাড়া সকল কার্যক্রম নাবালেগের পক্ষ থেকে অভিভাবক সম্পন্ন করবে। 

ইহরামের গুরুত্ব ও তাৎপর্য:-

হজ্জ ও ওমরার ইহরাম নামাযের তাকবীরে তাহরীমার মতই। এটা দ্বারা বান্দা নিয়্যতের দৃঢ়তা ও অকৃত্রিমতা প্রকাশ করে এবং সর্ব প্রকার ভোগ-বিলাস পরিহার করে বন্দেগীর বাস্তব রূপ পরিগ্রহ করে। পরকালের যাত্রীর ন্যায় দু’টি সেলাই বিহীন চাদর জড়িয়ে সাদা-কালো, ধনী-দরিদ্র সকল ভেদাভেদ পরিহার করে এক বেশে এক সুরে মা’বূদে হাক্বীক্বীর দরবারে হাজিরা দেয়ার সুযোগ পায়।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment