ইসলাম (মুসলিম/মুসলমান) এর পরিচয়

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

ইসলাম

(মুসলিম/মুসলমান) এর পরিচয়

(আরবি: الإسلام‎ আল্-ইস্‌লাম্) একটি একেশ্বরবাদী ধর্ম । আল্-কুরআন দ্বারা পরিচালিত  যা  এমন এক কিতাব যা  হবহু আল্লাহর ( الله আল্লাহ ) বানী এবং নবী মুহাম্মদ মুস্তফা (সঃ) এর প্রদত্ত শিক্ষা পদ্ধতি, জীবনাদর্শ (সুন্নাহ এবং হাদিস নামে লিপিবদ্ধ রয়েছে ) এর ভিত্তি । হযরত মুহাম্মদ (সঃ) ইসলামের কে শেষ নবী ও রাসুল । “ইসলাম” শব্দের অর্থ “শান্তি”, “আত্মসমর্পণ”, বা একক স্রষ্টার নিকট নিজেকে সমর্পন করা।

হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এই ধর্মের প্রবর্তক নন বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত সর্বশেষ ও চূড়ান্ত রাসূল (পয়গম্বর)। খৃস্টিয় সপ্তম শতকে তিনি এই ধর্ম পুনঃপ্রচার করেন। পবিত্র আল্-কুরআন ইসলাম ধর্মের মূল ধর্মগ্রন্থ। এই ধর্মে বিশ্বাসীদের মুসলমান বা মুসলিম বলা হয়।

পবিত্র আল্-কুরআন আল্লাহর বাণী এবং এটি তার কর্তৃক মুহাম্মদ (সঃ) এর নিকট প্রেরিত এবং মুহাম্মদ (সঃ) আল্লাহর শেষ নবী। হাদিসে প্রাপ্ত তাঁর নির্দেশিত কাজ ও শিক্ষার ভিত্তিতে আল্-কুরআন এর ব্যাখ্যা করা হয়। তবে, কোনো হাদিসের মর্মার্থ কোরআনের বিরুদ্ধে গেলে, তা বাতিল বলে গণ্য হয়।

ইহুদি ও খৃস্ট ধর্মের ন্যায় ইসলাম ধর্মও ইব্রাহিমীয়। বর্তমান বিশ্বে মুসলমানের সংখ্যা আনুমানিক ১৬০ কোটি এবং তারা পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মাবলম্বী গোষ্ঠী।  বর্তমানে সমগ্র বিশ্ব জুড়ে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়া, পূর্ব আফ্রিকা, পশ্চিম আফ্রিকা, মধ্য এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, পূর্ব ইউরোপে মুসলমানরা বাস করেন। আরবে এ ধর্মের গোড়াপত্তন হলেও অধিকাংশ মুসলমান আন্যাংশ। আরব দেশের মুসলমানরা মোট মুসলমান জনসংখ্যার শতকরা মাত্র ২০ বিশ ভাগ।যুক্তরাজ্যসহ বেশ কিছু বলকান অঞ্চল দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম ইসলাম।

মুসলিম অধ্যষিত দেশগুলির এক তালিকা

ক্রমদেশজনসংখ্যামুসলিম %প্রধান শাখাধর্ম এবং দেশসরকারের ধরনসামরিক অধিকার (সক্রিয় সৈন্য)জিডিপি (পিপিপি) প্রতি মাথাপিছু (ইউএস$)
 ইন্দোনেশিয়া২২৯,৯৬৫,০০০৮৬.১%সুন্নিঅজানারাষ্ট্রপতি প্রজাতন্ত্র৩১৬,০০০৪,১৪৬.৩৮
 পাকিস্তান১৭২,৮০০,০০০৯৭%সুন্নিইসলামী প্রজাতন্ত্রস্বৈরতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র৫২৮,০০০২,৫৯২
 বাংলাদেশ১৬২,২২১,০০০৮৯%সুন্নিধর্মনিরপেক্ষসংসদীয় গণতন্ত্র১২০,০০০১,৩৭৮
 নাইজেরিয়া১৫৪,২৭৯,০০০৫০%সুন্নিঅজানারাষ্ট্রপতি কেন্দ্রীয় প্রজাতন্ত্র৭৮,৫০০২,০৩৫
 মিশর৭৭,১০০,০০০৯০%সুন্নিরাষ্ট্র ধর্মঅর্ধ-রাষ্ট্রপতি প্রজাতন্ত্র৪৫০,০০০৫,৪৯১
 তুরস্ক৭১,৫১৭,১০০৯৯.৮%সুন্নিধর্মনিরপেক্ষসংসদীয় গণতন্ত্র৫১৪,৮৫০১২,৮৮৮
 ইরান৭০,৪৯৫,৭৮২৯৮%শিয়াইসলামী প্রজাতন্ত্রঅর্ধ-রাষ্ট্রপতি প্রজাতন্ত্র এবং ধর্মীয় শাসন৫৪৫,০০০১০,৬২৪
 সুদান৩৯,৩৭৯,৩৫৮৭০%সুন্নিঅজানাস্বৈরতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র১০৪,৫০০২,১৭২
 আলজেরিয়া৩৩,৭৬৯,৬৬৯৯৯%সুন্নিরাষ্ট্র ধর্মরাষ্ট্রপতি কেন্দ্রীয় প্রজাতন্ত্র১২৭,৫০০৬,৫৩৮
১০ আফগানিস্তান৩২,৭৩৮,৩৭৬৯৯%সুন্নিইসলামী প্রজাতন্ত্ররাষ্ট্রপতি কেন্দ্রীয় প্রজাতন্ত্র৭০,০০০৭২৪
১১ মরোক্কো৩৩,৭২৩,৪১৮৯৯%সুন্নিরাষ্ট্র ধর্মসাংবিধানিক রাজতন্ত্র১৯৬,৩০০৪,০৭৬
১২ ইরাক২৮,২২১,১৮১৯৭%শিয়ারাষ্ট্র ধর্মসংসদীয় গণতন্ত্র২৫৪,৪১৮৩,৬০০
১৩ মালয়েশিয়া২৭,৭৩০,০০০৬০.৪%সুন্নিরাষ্ট্র ধর্মসংসদীয় গণতন্ত্র এবং নির্বাচিত রাজতন্ত্র১১০,০০০১৩,৩১৫
১৪ সৌদি আরব২৭,৬০১,০৩৮১০০%সুন্নিইসলামী প্রজাতন্ত্ররাজতন্ত্র১৯৯,৫০০২৩,২৪৩
১৫ উজবেকিস্তান২৭,৩৭২,০০০৮৮%সুন্নিধর্মনিরপেক্ষরাষ্ট্রপতি কেন্দ্রীয় প্রজাতন্ত্র৫৩,০০০২,৩৪৪
১৬ ইয়েমেন২৩,০১৩,৩৭৬৯৯%সুন্নি/শিয়াইসলামী প্রজাতন্ত্ররাষ্ট্রপতি কেন্দ্রীয় প্রজাতন্ত্র৬৫,০০০২,৩৩৫
১৭ সিরিয়া১৯,৪০৫,০০০৯০%সুন্নিঅজানাস্বৈরতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র২৯৬,০০০৪,৪৪৮
১৮ কাজাখস্তান১৫,২১৭,৭১১৫৭%সুন্নিধর্মনিরপেক্ষরাষ্ট্রপতি কেন্দ্রীয় প্রজাতন্ত্র৬৫,৮০০১১,০৮৬
১৯ নাইজার১৩,২৭২,৬৭৯৯০%সুন্নিধর্মনিরপেক্ষসংসদীয় গণতন্ত্র৫,৩০০৬৬৬
২০ বুর্কিনা ফাসো১৩,২২৮,০০০৫০%সুন্নিধর্মনিরপেক্ষঅর্ধ-রাষ্ট্রপতি প্রজাতন্ত্র৬,০০০১,২৫৩
২১ মালি১১,৯৯৫,৪০২৯০%সুন্নিধর্মনিরপেক্ষঅর্ধ-রাষ্ট্রপতি প্রজাতন্ত্র৭,৩৫০১,০৩১
২২ সেনেগাল১১,৬৫৮,০০০৯৪%সুন্নিধর্মনিরপেক্ষঅর্ধ-রাষ্ট্রপতি প্রজাতন্ত্র৯,৪০০১,৬৮৫
২৩ তিউনিসিয়া১০,৩৮৩,৫৭৭৯৮%সুন্নিরাষ্ট্র ধর্মঅর্ধ-রাষ্ট্রপতি প্রজাতন্ত্র৩৫,০০০৭,৪৭৩
২৪ গিনি১০,২১১,৪৩৭৮৫%সুন্নিধর্মনিরপেক্ষসামরিক শাসন৯,৭০০১,০৭৪
২৫ সোমালিয়া৯,৫৫৮,৬৬৬৯৯.৯%সুন্নিরাষ্ট্র ধর্মCoalition government১০,০০০৬০০
২৬ আজারবাইজান৮,৬৭৬,০০০৯৩.৪%শিয়াধর্মনিরপেক্ষরাষ্ট্রপতি কেন্দ্রীয় প্রজাতন্ত্র৯৫,০০০৭,৬৫৬
২৭ তাজিকিস্তান৭,২১৫,৭০০৯৭%সুন্নিধর্মনিরপেক্ষরাষ্ট্রপতি কেন্দ্রীয় প্রজাতন্ত্র৬,০০০১,৮৪১
২৮ সিয়েরা লিওন৬,২৯৪,৭৭৪৬০%সুন্নিNoneরাষ্ট্রপতি কেন্দ্রীয় প্রজাতন্ত্র১৩,০০০৬৯২
২৯ লিবিয়া৬,১৭৩,৫৭৯৯৭%সুন্নিরাষ্ট্র ধর্মJamahiriya Revolution৭৬,০০০১২,২৭৭
৩০ জর্দান৫,৫৬৮,৫৬৫৯৫%সুন্নিরাষ্ট্র ধর্মসাংবিধানিক রাজতন্ত্র১০০,৭০০৪,৮৮৬
৩১ সংযুক্ত আরব আমিরাত৫,৪৩২,৭৪৬৭৬%সুন্নিরাষ্ট্র ধর্মযুক্তরাষ্ট্রীয় সাংবিধানিক রাজতন্ত্র৫০,৫০০৩৭,২৯৩
৩২ কিরগিজিস্তান৫,৩৫৬,৮৬৯৭৫%সুন্নিধর্মনিরপেক্ষআংশিক-রাষ্ট্রপতি কেন্দ্রীয় প্রজাতন্ত্র১২,৫০০
৩৩ তুর্কমেনিস্তান৫,১১০,০২৩৮৯%সুন্নিধর্মনিরপেক্ষসংসদীয় গণতন্ত্র২৬,০০০৫,১৫৪
৩৪ চাদ৫,০৪১,৬৯০৫৪%সুন্নিধর্মনিরপেক্ষরাষ্ট্রপতি কেন্দ্রীয় প্রজাতন্ত্র৩০,৩৫০১,৬৭৫
৩৫ লেবানন৪,১৯৬,৪৫৩৬০%সুন্নি/শিয়াNoneসংসদীয় গণতন্ত্র৭২,১০০১১,২৭০
৩৬ কুয়েত৩,৩৯৯,৬৩৭৮৫%সুন্নিরাষ্ট্র ধর্মসাংবিধানিক রাজতন্ত্র১৫,৫০০৩৯,৩০৫
৩৭ আলবেনিয়া৩,১৭০,০৪৮৭৯.৯%সুন্নিঅজানাসংসদীয় গণতন্ত্র৯,৫০০৬,৮৯৭
৩৮ মৌরিতানিয়া৩,১২৪,০০০৯৯.৯৯%সুন্নিইসলামী প্রজাতন্ত্রসামরিক শাসন১৫,৭৫০২,০০৮
৩৯ ওমান২,৫৭৭,০০০৯৩%ইবাদীরাষ্ট্র ধর্মরাজতন্ত্র৪১,৭০০৩,৯৬৭
৪০ কসোভো২,১০০,০০০৯০%সুন্নিধর্মনিরপেক্ষসংসদীয় গণতন্ত্র১,৮০০
৪১ দ্য গাম্বিয়া১,৭০০,০০০৯০%সুন্নিধর্মনিরপেক্ষরাষ্ট্রপতি কেন্দ্রীয় প্রজাতন্ত্র৮০০১,৩২৬
৪২ বাহরাইন১,০৪৬,৮১৪৮১%শিয়ারাষ্ট্র ধর্মসাংবিধানিক রাজতন্ত্র১১,২০০৩২,৬০৪
৪৩ কোমোরোস৭৯৮,০০০৯৮%সুন্নিদেশ ধর্মFederal republic১,১২৫
৪৪ কাতার৭৪৪,০২৯৭৭.৫%সুন্নিদেশ ধর্মরাজতন্ত্র১২,৪০০৮০,৮৭০
৪৫ জিবুতি৪৯৬,৩৭৪৯৪%সুন্নিধর্মনিরপেক্ষঅর্ধ-রাষ্ট্রপতি প্রজাতন্ত্র৯,৮৫০২,২৭১
৪৬ ব্রুনাই৩৮১,৩৭১৬৭%সুন্নিদেশ ধর্মরাজতন্ত্র৭,০০০৫১,০০৫
৪৭ মালদ্বীপ৩৫০,০০০১০০%সুন্নিদেশ ধর্মঅর্ধ-রাষ্ট্রপতি প্রজাতন্ত্র১,০০০৪,৬০৪

ধর্মবিশ্বাস

বাংলাদেশের একটি মসজিদে মুসলমান পুরুষদের নামাযের দৃশ্য।

মুসলমানদের ধর্ম বিশ্বাসের মূল ভিত্তি আল্লাহর একত্ববাদ। মুসলমানরা বিশ্বাস করেন আল্লাহ মানবজাতির জন্য তাঁর বাণী ফেরেশতা জীবরাইল (আঃ) এর মাধ্যমে আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ (সাঃ) এর নিকট অবতীর্ণ করেন। আল্-কুরআন এ বর্ণিত “খতমে নবুয়্যত” এর ভিত্তিতে মুসলমানরা মুহাম্মদ (সঃ) কে শেষ বাণীবাহক (রাসূল) বলে বিশ্বাস করেন। মুসলমানরা  আরও বিশ্বাস করেন, তাদের পবিত্র গ্রন্থ আল্-কুরআন নিখুঁত, অবিকৃতভাবে মানব এবং জ্বিন জাতির উদ্দেশ্যে অবতীর্ণ আল্লাহর সর্বশেষ বাণী, যা পুনরুত্থান দিবস বা কেয়ামত পর্যন্ত বহাল ও কার্যকর থাকবে।

হযরত আদম (অাঃ) হতে শুরু করে আল্লাহ্-প্রেরিত সকল নবী ও রাসুলগন ইসলামের বাণীই প্রচার করে গেছেন। পবিত্র কোরআনের সূরা ফাতিরে বলা হয়েছে,

“নিঃসন্দেহে আমি আপনাকে (মুহাম্মদ) পাঠিয়েছি সত্যের সাথে সুসংবাদদাতা এবং সতর্ককারীরূপে। আর এমন কোনো সম্প্রদায় নেই, যাঁদের মধ্যে একজন সতর্ককারী পাঠানো হয়নি।”৩৫:২৪

ইসলামের দৃষ্টিতে ইহুদি ও খ্রিস্টান উভয় ধর্মাবলম্বীরাই এই শিক্ষার ঐতিহ্য পরম্পরা। উভয় ধর্মাবলম্বীকে কোরআনে “আহলে কিতাব” বলে সম্বোধন করা হয়েছে এবং বহুদেবতাবাদীদের থেকে আলাদা করা হয়েছে। পবিত্র আল্-কুরআন এর সূরা আলে ইমরানে আহবান করা হয়েছে,

“আপনি (মুহাম্মদ) বলুন, হে কিতাবীগণ, আসুন সেই কথায় যা আপনাদের এবং আমাদের মধ্যে এক; যেন আমরা আল্লাহ ব্যতীত কারও ইবাদত না করি। কোনো কিছুকেই তাঁর শরীক না করি। এবং আমাদের কেউ কাউকে আল্লাহ ব্যতীত উপাস্য হিসেবে গ্রহণ না করি। যদি তাঁরা মূখ ফিরিয়ে নেয় তবে বলুন, আপনারা স্বাক্ষী থাকুন; অবশ্যই আমরা মুসলিম।”৩:৬৪

এই ধর্ম দুটির গ্রন্থসমূহের বিভিন্ন ঘটনা ও বিষয়ের উল্লেখ আল্-কুরআন এ রয়েছে। ইসলামি বিশ্বাসানুসারে এই দুই ধর্মের অনুসারীগণ তাদের নিকট প্রদত্ত আল্লাহ্-এর বাণীর অর্থগত ও নানাবিধ বিকৃতসাধন করেছেন; ইহুদিগণ তৌরাতকে (তোরাহ) ও খৃস্টানগণ ইনজিলকে (নতুন বাইবেল)। মুসলমানদের বিশ্বাস ইসলাম ধর্ম আদি এবং অন্ত এবং স্রষ্টার নিকট একমাত্র গ্রহনযোগ্য ধর্ম।

আল্লাহ

মুসলমানগণ বিশ্বজগতের সৃষ্টিকর্তাকে ‘আল্লাহ’ বলে সম্বোধন করেন। ইসলামের মূল বিশ্বাস হলো আল্লাহর একত্ববাদ বা তৌহিদ। ইসলাম পরম একেশ্বরবাদী ও কোনোভাবেই আপেক্ষিক বা বহুত্ববাদী নয়। আল্লাহর একত্ব ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভের মধ্যে প্রথম, যাকে বলা হয় শাহাদাহ। এটি পাঠের মাধ্যমে একজন স্বীকার করেন যে, (এক) আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোনো উপাস্য নাই এবং (দুই) মুহাম্মদ [(সাঃ)] তাঁর প্রেরিত বাণীবাহক বা রাসূল সুরা এখলাছে আল্লাহর বর্ণনা দেয়া হয়েছে এভাবে,

[قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ. اللهُ الصَّمَدُ. لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ. لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ. وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ] {الاخلاص:১-৪}

“বলুন, তিনি আল্লাহ, এক, আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাঁকে জন্ম দেয়নি এবং তাঁর সমতুল্য কেউ নেই।”১১২:১-৪

আল্লাহ শব্দটি আল এবং ইলাহ যোগে গঠিত। আল অর্থ সুনির্দিষ্ট এবং ইলাহ অর্থ উপাস্য, যার অর্থ সুনির্দিষ্ট উপাস্য। খৃস্টানগণ খৃস্ট ধর্মকে একেশ্বরবাদী বলে দাবী করলেও মুসলমানগণ খৃস্টানদের ত্রিত্ববাদ (trinity) বা এক ঈশ্বরের মধ্যে পিতা, পুত্র ও পবিত্র আত্মার মিলন, এই বিশ্বাসকে বহু-ঈশ্বরবাদী ধারণা বলে মনে করেন। ইসলামি ধারণায় আল্লাহ সম্পূর্ণ অতুলনীয় ও পৌত্তলিকতার অসমতুল্য, যার কোনোপ্রকার আবয়বিক বর্ণনা অসম্ভব। এধরনের অবয়বহীনতার ধারণা ইহুদি ও কিছু খৃস্টান বিশ্বাসেও দেখা যায়। মুসলমানরা তাদের সৃষ্টিকর্তাকে বর্ণনা করেন তাঁর বিভিন্ন গুণবাচক নাম ও গুণাবলীর মাধ্যমে।

ফেরেশতা

ফিরিশতা বা ফেরেশতা ফারসী শব্দ। ফেরেশতা আরবী প্রতিশব্দ হলো ‘মালাইকা’। ফেরেশতায় বিশ্বাস ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসের একটি মূল নীতি। এরা অন্য সকল সৃষ্টির মতই আল্লাহর আরেক সৃষ্টি। তাঁরা মুলত আল্লাহর দূত। ফেরেশতারা নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করেন। তারা সর্বদা ও সর্বত্র আল্লাহর বিভিন্ন আদেশ পালনে রত এবং আল্লাহর অবাধ্য হবার কোনো ক্ষমতা তাদের নেই। ফেরেশতারা নূর তথা আলোর তৈরি। রূহানিক জীব বলে তারা খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করেন না। তারা সুগন্ধের অভিলাষী এবং পবিত্র স্থানে অবস্থান করেন। তারা আল্লাহর আদেশ অনুসারে যেকোনো স্থানে গমনাগমন ও আকৃতি পরিবর্তনের ক্ষমতা রাখেন।

ফেরেশতাদের সংখ্যা অগণিত। ইসলামে তাদের কোনো শ্রেণীবিন্যাস করা না হলেও চারজন গুরুদায়িত্ব অর্পিত প্রধান ফেরেশতার নাম উল্লেখযোগ্য:

  • জিবরাইল (আঃ) – ইনি আল্লাহর দূত ও সর্বশ্রেষ্ঠ ফেরেশতা। এই ফেরেশতার নাম তিনবার কুরআন শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে (সূরা ২:৯৭; ৯৮, ৬৬:৪)। সূরা ১৬:১০২ আয়াতে জিবরাইল ফেরেশতাকে পাক রূহ বা রুহুল ক্বুদুস বলা হয়েছে। আল্লাহর আদেশ-নিষেধ এবং সংবাদ আদান-প্রদান যেসব ফেরেশতার দায়িত্ব, জিবরাইল তাদের প্রধান। জিবরাইল-ই আল্লাহর বাণী নিয়ে নবীদের কাছে গমনাগমন করেন। এই ফেরেশতাকে ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সাঃ) তার নিজস্ব আকৃতিতে মোট দুইবার দেখেছেন। প্রাসঙ্গিক হাদিসসমূহ: মুসলিম শরীফ ৩২৯, ৩৩০, ৩৩২, ৩৩৩, ৩৩৪ এবং ৩৩৬
  • ফেরেশতা মিকাইল – কুরআনের ২:৯৭ আয়াতে এই ফেরেশতার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ইনি বৃষ্টি ও খাদ্য উৎপাদনের দায়িত্বপ্রাপ্ত।
  • ফেরেশতা ইসরাফিল – এই ফেরেস্তা আল্লাহর আদেশ পাওয়া মাত্র শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়ার মাধ্যমে কিয়ামত বা বিশ্বপ্রলয় ঘটাবেন।
  • মালাক আল-মাউত – ইনি মৃত্যুর ফেরেশতা ও প্রাণ হরণ করেন।

বিশেষ শ্রেণীর ফেরেশতা যাদেরকে কুরআনে ‘কিরামান কাতিবিন’ (অর্থ: সম্মানিত লেখকগণ) বলা হয়েছে তাঁরা প্রতিটি মানুষের ভালো মন্দ কাজের হিসাব রাখেন। কবরে মুনকির ও নাকির নামের দুই ফেরেশতা মানুষকে তার কৃত কর্মের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। মালিক নামের ফেরেশতা নরক বা জাহান্নামের রক্ষণাবেক্ষণ করেন এবং রিদওয়ান নামের আরেক ফেরেশতা জান্নাত বা বেহেশতের দেখভাল করেন বলে বর্ণিত আছে।

আল কোরআন

আল্-কুরআন মুসলমানদের মূল ধর্মগ্রন্থ। পবিত্র এই আল্-কুরআন আল্লাহর অবিকৃত, হুবহু বক্তব্য। এর আগে আললাহ প্রত্যেক জাতিকে বিভিন্ন গ্রন্থ পাঠিয়েছেন, কিন্তু সেগুলোকে বিকৃত করা হয়। আল্-কুরআন কে আরও বলা হয়  “কোরআন শরীফ”।

ইসলাম ধর্মমতে, জীবরাইল ফেরেশতার মাধ্যমে নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর নিকট ৬১০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৬৩২ খ্রিস্টাব্দ তাঁর মৃত্যু অবধি বিভিন্ন সময়ে আল্লাহ তায়ালা তাহার বাণী অবতীর্ণ করেন। এই বাণী নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর অন্তঃস্থ ছিলো, সংরক্ষণের জন্য নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর অনুসারীদের দ্বারা পাথর, পাতা ও চামড়ার ওপর লিখেও রাখা হয়।

অধিকাংশ মুসলমান পবিত্র আল্-কুরঅান এর যেকোনো পাণ্ডুলিপিকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করেন, স্পর্শ করার পূর্বে ওজু করে নেন। আল্-কুরঅান জীর্ণ ও ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়লে আবর্জনা হিসেবে ফেলে দেয়া হয় না, বরং কবর দেয়ার মত করে মাটির নিচে রেখে দেয়া হয় বা পরিষ্কার পানিতে ডুবিয়ে দেয়া হয়।

অনেক মুসলমানই আল্-কুরঅান এর মূল ভাষা আরবিতে মুখস্থ করে থাকেন। সম্পূর্ণ আল্-কুরঅান মুখস্থকারীদের হাফিজ (সংরক্ষণকারী) বলা হয়। মুসলমানরা আরবি আল্-কুরঅান কে ই কেবলমাত্র নিখুঁত বলে বিশ্বাস করেন। সকল অনুবাদ মানুষের কাজ বিধায় এতে ভুল-ত্রুটি থাকার সম্ভাবনা থেকে যায় এবং বিষয়বস্তুর মূল প্রেরণা ও সঠিক উপস্থাপনা অনুবাদকর্মে অনুপস্থিত থাকতে পারে বিধায় অনুবাদসমূহকে কখনোই আরবি কোরআনের সমতুল্য ও সমান নিখুঁত গণ্য করা হয় না, বরং এগুলোকে সর্বোচ্চ ‘অর্থানুবাদ’ হিসেবে অভিহিত করা হয়।

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)

বর্তমান সৌদি আরবের , হেজাজ অঞ্চলের , মদিনায় অবস্থিত মসজিদে নববী (নবীজীর মসজিদ) দৃশ্য । ইসলামে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ মসজিদ ।

মুহাম্মদ (সাঃ) ছিলেন তৎকালীন আরবের বহুল মর্যাদাপূর্ণ কুরাইশ বংশের একজন। নবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্বে তাঁর বিশেষ গুণের কারণে তিনি আরবে “আল-আমীন” বা “বিশ্বস্ত” উপাধিতে ভূষিত হন। আল্লাহর নিকট হতে নবুওয়াত প্রাপ্তির পর তিনি ইসলাম ধর্ম প্রচার করেন। হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কে ইসলামের সর্বশ্রেষ্ট ও সর্বশেষ নবী ও রাসুল হিসেবে শ্রদ্ধা ও সম্মান করা হয়। হযরত মুহাম্মদ (সঃ) আল্লাহ প্রেরিত নবী-পরম্পরার শেষ নবী যিনি আদম (আঃ) , ইব্রাহিম (আঃ) ও অন্যান্য নবীদের প্রচারিত একেশ্বরবাদী ধর্মেরই ধারাবাহিকতা রক্ষা করেন। হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর পূর্বের একেশ্বরবাদী ধর্ম বিভিন্ন সময় পরিবর্তিত ও বিকৃত হয়ে গিয়েছিল। তাই মুহাম্মদ (সাঃ) ইসলামকে শেষ প্রেরিত ধর্ম হিসেবে আল্লাহর পক্ষ থেকে উপস্থাপন করেন।

ইসলাম ধর্মমতে, তিনি চল্লিশ বছর বয়স হতে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ২৩ বছর যাবৎ ফেরেশতা জিবরাইল মারফত আল্লঅহর বাণী লাভ করেন। এই বাণীসমূহের একত্ররূপ হলো পবিত্র আল্-কুরআন, যা তিনি মুখস্ত করেন ও তাঁর অনুসারীগন (সাহাবায়ে কেরাম) তা বিভিন্ন পাথর,পাতা, কাপড় ইত্যাদিতে লিপিবদ্ধ করে ছিলেন

“তুমি তো এর আগে কোনো কিতাব পড় নি এবং স্বহস্তে কোনো কিতাব লেখনি যে অবিশ্বাসীরা সন্দেহ পোষণ করবে।”২৯:৪৮

মুহাম্মদ (সাঃ) ছিলেন একজন উৎকৃষ্ট চরিত্রের মানুষ। সকল মুসলমান বিশ্বাস করেন মুহাম্মদ (সাঃ) এই বাণী নির্ভুলভাবে প্রচার করেছেন। এবং তাতে কোনো কিছু যোগ করেননি।

আল্লাহর বানী““সে যদি আমার নামে কোনো কথা রচনা করতো, তবে আমি তাঁর ডান হাত ধরে ফেলতাম, অতঃপর কেটে দিতাম তাঁর গ্রীবা। তোমাদের কেউ তাকে রক্ষা করতে পারতে না।” ৬৯:৪৪-৪৭

মুসলমানদেরকে শেষ বাণীবাহক মুহাম্মদের নাম উচ্চারণ করার সাথে সাথে “সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম” বলতে হয়। এর অর্থ: ‘আল্লাহ (মুহাম্মদ (সঃ) এর উপর রহমত এবং শান্তি বর্ষণ করুন।’ একে বলা হয় দরুদ শরীফ। এছাড়াও আরও অনেক দরুদ হাদীসে বর্ণীত আছে। তাঁর মধ্যে এটাই সর্বপেক্ষা ছোট। কোনো এক বৈঠকে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) নাম নিলে দরুদ একবার বলা অবশ্য কর্তব্য (ওয়াজিব)।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment