প্রশ্নঃ ইসলাম ধর্মে ঢোল, তবলা, হারমোনিয়ামসহ বিভিন্ন ধরনের বাদ্যযন্ত্রের মাধ্যমে আউলিয়া-ই কিরামের শান বর্ণনা করা জায়েয আছে কি? জানানোর জন্য বিনীত অনুরোধ করছি।
উত্তরঃ ঢোল, তবলা ও হারমোনিয়াম ইত্যাদি বাদ্য- বাজনাসহকারে গান-বাজনা বা আউলিয়া-ই কিরামের শান মান বর্ণনা করা নাজায়েয, হারাম। যা হারাম হওয়া সম্পর্কে অধিকাংশ আলেমগণ ও আউলিয়া-ই কিরামের উক্তি দ্বারা প্রমাণিত। অধিকাংশ ফকীহ্গণের মতে বাদ্যবাজনা সহকারে কাওয়ালী ইত্যাদি পরিবেশন করা হারাম হওয়া সম্পর্কে সন্দেহের অবকাশ নেই। বাদ্যবাজনা সহকারে সামা মাহফিল বা কাওয়ালী চিশতিয়া তরীকায় বৈধ মর্মে যে বর্ণনা করা হয়, তা সম্পূর্ণ বানোয়াট ও অপবাদ মাত্র। চিশতীয়া তরীকার অন্যতম বুযর্গ হযরত নেযামুদ্দীন আউলিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহির ছাত্র ও খলীফা হযরত মাওলানা ফখরুদ্দীন যাররাভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি আপন মুর্শিদের নির্দেশে লিখিত সামা বিষয়ক কাশফুল ফানা আন উসূলিস সামা গ্রন্থে লিখেছেন যে, আমাদের তরীকার মাশাইখগণের সামা বাদ্যযন্ত্রের অপবাদ থেকে মুক্ত ছিল। স্বয়ং হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি বাদ্য যন্ত্রসহকারে সামা নাজায়েয হওয়া মর্মে তাঁর সিয়ারুল আউলিয়া গ্রন্থে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। বিখ্যাত ফিক্হ্ ও ফতোয়াগ্রন্থ দুর্রে মুখতার ৫ম খণ্ডে উল্লেখ আছে যে,
قال ابن مسعود صوت اللھو الغناء ینبت النفاق فی القلب کما ینبت الماء النبات وفی البزازیۃ استماع صوت الملاھی کالضرب علی قضب ونحوہ حرام لقولہٖ علیہ السلام استماع الملاھی معصیۃ والجلوس علیھا فسق والتلذذبھا کفر ای بالنعمۃ
অর্থাৎ হযরত ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, গান-বাজনার শব্দ অন্তরে তেমনিভাবে কপটতা জন্ম দেয় যেমনিভাবে পানি উদ্ভিদকে জন্ম দেয়। ফতোয়া-ই বায্যাযিয়ায় উল্লেখ আছে, অনর্থক খেল-তামাশার শব্দ শ্রবণ করা যেমন, কাঠ বাজানো, অনুরূপভাবে অন্য কিছু বাজানো হারাম। কারণ, হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, খেল-তামাশা শ্রবণ করা নাফরমানী। তাতে বসা ফাসিকী এবং তা উপভোগ করা নিয়ামতের কুফরীর নামান্তর। তবে, বিশিষ্ট ফিক্হ্বিদ আল্লামা মুফতী সৈয়দ আমীনুল হক ফরহাদাবাদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং অন্যতম আলেমেদ্বীন আল্লামা আবদুস্ সালাম ঈসাপুরীসহ কিছু সংখ্যক উলামা-ই কিরাম উপরোক্ত অধিকাংশ ফকীহ্গণের মত ও দুর্রে মুখতারের উপরোক্ত অভিমতকে অশ্লীল গান-বাজনা ও অযথা খেল-তামাশা এবং বেহায়াপনার উপর প্রয়োগ করেছেন। তাঁরা আউলিয়া-ই কিরামের শান-মানে রচিত ভাল অর্থবোধক গজল এবং হাম্দ-নাত বাদ্যযন্ত্রসহকারে পবিত্র ও সুন্দর পরিবেশে বৈধ হওয়ার উপর মত ব্যক্ত করেছেন।
অবশ্য সাধারণ মুসলমানের জন্য সাধারণ অবস্থায় অধিকাংশ ফকীহগণের অভিমতের উপর আমল করাই নিরাপদ, শ্রেয় ও অপরিহার্য। যাতে হিতে বিপরীত না হয়। সামা বৈধ হওয়ার পক্ষে মুহাক্কিক আলিমগণ বিভিন্ন শর্ত উল্লেখ করেছেন। বর্তমানে প্রায় ওই শর্তসমূহ তোয়াক্কা করা হয় না বিধায় সামার মত একটি পবিত্র অনুষ্ঠান ঢং-তামাশায় পরিণত হয়ে আউলিয়া-ই কিরামের অনেক দরবার কলঙ্কিত ও আপত্তিকর পরিবেশে রূপান্তর হয়েছে এবং ওলীবিদ্বেষী কুচক্রীমহল নানামুখী অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রের অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। সুতরাং এ সব ব্যাপারে সকল ঈমানদার ও হক্কানী ওলীপ্রেমিক সুন্নী মুসলমানদের সুনজর অপরিহার্য। যেন ভন্ড, বে-শরাহ্, ফাসিক ও দুষ্টুচক্র সামা-কাওয়ালীর নামে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা সৃষ্টির সুযোগ না পায় এবং প্রকৃত আউলিয়া-ই কিরামের দরবারসমূহের পবিত্রতা রক্ষা পায়।
[সূত্র. যুগ-জিজ্ঞাসা, পৃ. নং 48-49]
মুফতি আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ অছিয়র রহমান,
প্রধান মুফতি-জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া, চট্টগ্রাম।
প্রকাশনায়ঃ- আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগ), ৩২১ দিদার মার্কেট, দেওয়ান বাজার, চট্টগ্রাম।