ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। মানুষের সামাজিক জীবন,পারিবারিক জীবন ও রাষ্ট্রীয় জীবন কিভাবে পরিচালনা করবে ইসলাম তার সঠিক রুপরেখা দিয়েছেন।ইসলাম একদিকে যেমন হালাল রুজির উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।ঠিক তেমন ভাবে গুরুত্ব আরোপ করেছে মালিক শ্রমিকের সুসম্পর্ক ও শ্রমিকের মর্যাদা উপর।
বর্তমান সমাজে শ্রমিকদের কোন সামাজিক মর্যাদা নেই বললেই চলে।কিন্তু ইসলামে কোন বৈধ শ্রমের অমর্যাদা করে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-“আল্লাহ দুনিয়াতে এমন কোন নবী পাঠাননি যিনি ছাগল ও ভেড়া চরাননি। তখন সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন, হে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আপনিও?
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হ্যাঁ! আমিও কয়েক কীরাতের বিনিময়ে মক্কাবাসীদের ছাগল ও ভেড়া চরাতাম।” [বুখারী-হাদীস নং ১৩৪০]।
পবিত্র কুরআনে সূরা আল-বালাদ ৪ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,”নিশ্চয় আমি মানুষকে শ্রমনির্ভররূপে সৃষ্টি করেছি।” সারাবিশ্ব যখন শ্রমিকের রক্ত শুষে সভ্যতার বিনির্মানে ব্যস্ত সেখানে একমাত্র মানবতার ধর্ম ইসলামেই শ্রমিক বান্ধব শ্রমনীতি দিয়েছেন।
ইসলাম শ্রমিকের সঙ্গে নম্র ও ভদ্র আচরণ করার নির্দেশ দিয়েছে।।আবু যার (রা) থেকে বর্ণিত,রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের অধীনস্থরা তোমাদের ভাই।তোমরা যা খাও এবং পরিধান করো তাদেরকেও তা খাওয়াও এবং পরিধান করাও।আর তাদেরকে তাদের সাধ্যের বাহিরে অতিরিক্ত কোনো কাজ চাপিয়ে দিও না।(বুখারী ও মুসলিম)।বর্তমানে শ্রমিকদের মানুষ বলে মনে করেন না মালিক পক্ষ। কিন্তু ইসলাম বলে চাকর ও খাদেমদের তোমরা সাথে নিয়ে খাও (সহীহ মুসলিম)।
শ্রমিক নির্যাতন সম্পর্কে হুসিয়ারী করে পবিত্র কোরআনে সূরা ইউনুচ,২৩ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,তোমাদের যুলুম তোমাদের উপর বর্তাবে।
শ্রমিক নির্যাতনের বিষয়ে সতর্ক করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন
শ্রমিকের সাথে দৃর্ব্যবহারকারী জান্নাতে যাবে না।(জামে তিরমিজী, ইবনে মাজাহ)।
শ্রমিকের পারিশ্রমিক এটা শ্রমিকের হক্ক অথচ বর্তমানে মালিকপক্ষে কাজ আদায়ের পর শ্রমিকের পারিশ্রমিক প্রদানের ক্ষেত্রে ঘড়িমসি করে। এ বিষয়ে আল আদাবুল মুফরাদ এ আছে অধীনস্থদের হক্ব প্রদানে আল্লাহ কে ভয় করো।এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,শ্রমিকের মজুরী নির্ধারণ না করে তাকে কাজে নিয়োগ দিও না। (বুখারী)” মজুরি প্রদানের ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন তোমরা শ্রমিককে তার ঘাম শুকানোর আগেই পারিশ্রমিক দিয়ে দাও।” (ইবনে মাজাহ)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন -“মহান আল্লাহ বলেন, ক্বিয়ামতের দিন আমি তিন ব্যক্তির প্রতিপক্ষ হব। যে আমার নামে কোন চুক্তি করে তা বাতিল করেছে। যে ব্যক্তি কোন স্বাধীন মানুষকে বিক্রি করেছে এবং যে শ্রমিকের দ্বারা পুরোপুরি কাজ আদায় করে নিয়েছে, কিন্তু তার পারিশ্রমিক প্রদান করেনি।” [বুখারী-হাদীস নং ১৩২০]।হাদিসে আরো আছে, আল্লাহ তার সাথে ঝগড়া করবেন,যে ব্যক্তি মজুরের দ্বারা কাজ পুরোপুরি করে নিয়েছে কিন্তু তার পারিশ্রমিক দেয় নি।(বুখারী)।
ইসলাম একদিকে যেমন শ্রমিকের মর্যাদা ও নিরাপত্তার দিকে গুরুত্ব দিয়েছে অন্য দিকে মালিকপক্ষের স্বার্থ বিষয়ের উপরও গুরুত্ব আরোপ করেছে।সহি বুখারী ও মুসলিম শরীফে আছে,কর্মচারী বা শ্রমিক তার মালিকের সম্পদের দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং তাকে সে বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে।
আজ আমরা সমাজে দেখি মালিক ও শ্রমিক দুই মেরুর বাসিন্দার মত।মালিকপক্ষ শ্রমিকের উপর জুলুম/নির্যাতন করে অন্য দিকে শ্রমিকপক্ষ মালিকের হক্ব/সম্পদ নষ্ট বা অপচয় করে।শ্রমিক নির্যাতন বন্ধ করতে এবং মালিক ও শ্রমিকের মাঝে ভ্রতৃতের বন্ধন সৃষ্টি করতে চাইলে ৯৫% মুসলমানের এ দেশে ইসলামিক শ্রমনীতি প্রতিষ্ঠার কোন বিকল্প নেই।