ইসলামের সঠিক বিশ্বাস ১
ইলাহ:-
আধুনিক যুগের মানুষের মন নতুনত্বের প্রতি আসক্ত। প্রত্যেক জিনিসের আধুনিক ফ্যাশন আজ কালের অতি প্রিয়। কতেক আধুনিক ধােকাবাজ তৌহীদের অর্থও আধুনিক করে নিয়েছে। রিসালত, নবুয়্যত ও ঈমানের শরবতকে আধুনিক কৌশলে পাত্রস্থ করে ব্যবহারে মত্ত হয়ে পড়েছে। ফলে মানুষের ঈমানে কাঁপন ধরেছে। কাজেই প্রয়ােজন অনুভব করা হলাে যে, মুসলিম মিল্লাতকে এ চার শব্দগুলাের ঐ পুরানাে নিখুঁত অর্থ বাতলায়ে দেয়া যাক, যা চৌদ্দশত বছর থেকে মেনে আসা হচ্ছে। প্রত্যেক ব্যক্তি জ্ঞাত আছেন যে, তৌহিদ এবং রেছালাত এমন মৌলিক আকিদা বা বিশ্বাস যার উপর ইসলামের মূলভিত্তি স্থাপিত। কালমা-ই- তায়্যৈবাلا اله الا الله محمد رسول الله
পড়ে সবাই ইসলাম ধর্মের মহান নেয়ামত ঈমান অর্জন করেন। কিন্তু আমাদের জানা দরকার اله“ইলাহ’ অর্থ কি? এবং উলুহিয়াত বা আল্লাহর একত্তবাদের পরিধি বা ভিত্তি কি জিনিসের উপর? উলুহিয়্যাত এবং আবদিয়াত (দাসত্ত) এর পৃথককারী জিনিসটি কি? এর অর্থ হচ্ছে আল্লাহ ব্যতিত কোন ইলাহ নেই। কিন্তু ইলাহ কি? সাধারণতঃ বলা হয়, যে, ইলাহ তিনিই যিনি গায়েব (অদৃশ্য) জানেন। ইলাহ তিনিই, যিনি মুশকিল কুশা (অসাধ্য সাধনকারী) হাজত রওয়াহ (মনবাসনা পূর্ণকারী) এবং অভিযােগ শ্রবণকারী, সাহায্যদাতা। ইলাহ তিনিই যিনি দূর থেকে শুনেন এবং দেখেন। এ বিশ্লেষণের উদ্দেশ্য এ যে সাধারণত মুসলিম মিল্লাত, আম্বিয়া-ই কেরাম, আউলিয়ায়ে এজাম বিশেষ করে হুযুর সায়্যৈদুল আম্বিয়া (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অদৃশ্য জ্ঞানী, হাজির নাজির, অভিযােগ শ্রবণকারী, সাহায্যদাতা হিসেবে জানেন এবং বিশ্বাস করেন।ওদের মতে এরা সব মুশরীক, কেননা তারা বান্দাদেরকে ইলাহ মানছে।
আরবের মুশরীকগণ তাদের মুর্তিগুলাের (প্রতিমা) ব্যাপারে এ আকিদা রাখতাে যে, এরা গায়ের (আদৃশ্য) জানে, প্রার্থনা কবুল করে ওরা মুশরীক ছিল। এ মুসলিমরাও নবী-ওলীগণের মধ্যে ক্ষমতা মেনে নিয়ে আরবের মুশরীকদের ন্যায় শির্কে গ্রেপ্তার হয়েছে। আমি দেখাচ্ছি যে, ইলাহ শব্দের এ অর্থ কোন মতে শুদ্ধ নয় এবং না এসব জিনিসের উপর উলুহিয়াত নির্ভরশীল। (যদি হয়) তাহলে কোরআনের আলােকে লক্ষাধিক ইলাহ মানতে হবে।
গায়েব জানা:-
যদি গায়েব জানা উলুহিয়াতের পরিধি বা ভিত্তি হয়, তবে পবিত্র কোরআন করীম হযরত ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর ব্যাপারে ফরমাচ্ছেন যে, তিনি তাঁর কাউম (গােত্র) কে এ বলে সম্বােধন করেন و ٱنبئكم بما تٱكلون و ما تدرون فى بيوتكم “এবং আমি তােমাদের সংবাদ দিচ্ছি যে, যা কিছু তােমরা তােমাদের ঘরে খেয়ে থাক এবং অবশিষ্ট রাখ”। স্মর্তব্য যে, تٱكلون এবং تدخرون উভয় ক্রিয়াই মােযারে, যেখানে (ক্রিয়ায়) বর্তমান আর ভবিষ্যৎ দুইটিকাল নিহিত আছে। তবে এর অর্থ হবে এ যে, যা কিছু তােমরা আপন ঘরসমূহের রান্না ঘরে বসে খাইতেছ, কিংবা খাবে, অবশিষ্ট রাখতেছ কিংবা রাখবে, আমি সব কিছুর খবর তােমাদের দিতে পারবাে। অর্থাৎ ক্ষেতসমূহে দানা বা বীজ, বাগান সমূহে ফল জন্মে, প্রত্যেক ফলের বীজের উপর ভক্ষনকারীর মােহর হয়। আমি ঐসব মােহর জানি এবং ভক্ষনকারীদেরও জানি। চিন্তা করুন তাে, আল্লাহ তায়ালা ঈসা মছিহ আলাইহিস সালামকে কত ইলমে গায়েবের ক্ষমতা প্রদান করেছেন।
যদি গায়েব জানা উলুহিয়াতের বৈশিষ্ট্য হয়, তবে কোরআনের আলােকে জনাব ঈসা মছিহ আলাইহিস সালাম ইলাহ্ হয়ে যাচ্ছে।
সৃষ্টিতে নির্দেশ জারী করা:-যদি সৃষ্টিতে নির্দেশজারী করা এবং পানি, চাঁদ সূর্য উলুহিয়াতের কব্জায় হয়; তবে কোরআন মজিদের দৃষ্টিতে হযরত সােলায়মান আলাইহিস সালামকে ইলাহ মানতে হবে। কারণ তাঁর (আলাইহিস সালাম) সম্বন্ধে কোরআন করীম বলেন-
و سخرنا له الريح تجرى بأمره رخاه حيث أصاب
অর্থাৎ তখন আমি তার অধীন করেছিলাম বায়ুকে যা তার আদেশে যেখানে ইচ্ছে সেথায় প্রবাহিত হতাে। আরও বলা হয়েছে
له الريح عاصفة تجرى بأمره
অর্থাৎ আমি তাঁর অধীনে করেছিলাম তেজস্সী বায়ুকে, যা তাঁর নির্দেশে প্রবাহিত হতাে।
প্রতিয়মান হলাে যে, আল্লাহতায়ালা প্রবল এবং স্বাভাবিক বায়ু সমূহেকে (পূর্বের হােক কিংবা, পশ্চিমের, দক্ষিণের হােক কিংবা উত্তরের) হযরত সােলাইমান (আলাইহিস সালাম) এর ফরমান পালনে বাধ্য করে দিয়েছেন। এটাও বুঝা গেল যে, বৃষ্টি দ্বারা (ফসল) উৎপাদন হয়, যার উপর তামাম জীবজন্তুর জীবন নির্ভরশীল। এ যুক্তির আলােকে সমস্ত সৃষ্টির রীতি-নীতি হক তায়ালা হযরত সােলাইমান আলাইহিস সালাম এর নির্দেশাধীন করে দিয়েছেন।
উলুহিয়াতের এ দৃষ্টিকোণ থেকে তাঁকেও ইলাহু মানতে হবে। (নাউযুবিল্লাহ মিন মিনহু।)
মূল: মুফতি আহমদ ইয়ার খান নইমী (রহ)