আজকাল বিয়ের সময়ে virgin (কুমারী) শব্দটা শুনলে কিছু মেয়ে (অবশ্যই ভালো মেয়েদের কথা বলছিনা) হতভম্ব হয়ে যায়। তারা মনে করে, virgin (কুমারী) বিয়ে করতে চাওয়া অপরাধ; মেয়ের অতীত জানতে চাওয়া অপরাধ। ভার্জিনিটি তথা কুমারীত্ব গুরুত্বপূর্ণ না; বরং মেনার্সই গুরুত্বপূর্ণ। গোজামিলের সাথে রেফারেন্স হিসেবে কথিত ইসলামের বাণীও মিশ্রিত থাকে কিছু।
অথচ, হাদিসে স্পষ্টভাবে পাত্রী হিসেবে বিধবা নারীর উপর কুমারী নারীর পার্থিব শ্রেষ্ঠত্ব ফুটে উঠেছে; তাহলে ব্যভিচারিণী অতীতা নারীর থেকে একজন কুমারী নারীর মর্যাদা কত বেশি হবে তা সহজেই অনুমেয়। (স্পষ্টই, তাকদীরের পরীক্ষায় তালাকপ্রাপ্তা বা বিধবা হওয়া নারীদের কথা বলা হচ্ছে না, বিয়ের আগে ভার্জিনিটি বিলিয়ে দেওয়া অতীতা বা নষ্টাদের কথাই বলছি।)
‘আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) একদিন রাসুল ﷺ কে বললেন, “হে আল্লাহর রাসূল! মনে করুন, আপনি একটি ময়দানে পৌঁছেছেন। সেখানে একটি গাছ আছে যার কিছু অংশ খাওয়া হয়ে গেছে। আর এমন একটি গাছ পেলেন, যার কিছুই খাওয়া হয়নি। এর মধ্যে কোন্ গাছের পাতা আপনার উটকে খাওয়াবেন?
নবী ﷺ উত্তরে বললেন, “যে গাছ থেকে কিছুই খাওয়া হয়নি।”
বর্ণনাকারী বলেন, “(আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহার) এ কথার উদ্দেশ্য হল – নবী ﷺ তাঁকে ব্যতীত অন্য কোন কুমারীকে বিয়ে করেননি (সুতরাং তিনি নিজের কুমারীত্ব নিয়ে গর্ব প্রকাশ করেছেন)।” [সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫০৭৭]
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “তোমাদের কুমারী মেয়ে বিবাহ করা উচিত। কেননা তারা মিষ্টমুখী, নির্মল জরায়ুধারী এবং অল্পতেই তুষ্ট হয়।” [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১৮৬১]
জাবির রাদিআল্লাহু আনহু এক বিধবা নারীকে বিয়ে করলে রাসুল ﷺ বললেন, “তুমি কুমারী মেয়ে বিয়ে করলে না কেন? তার সাথে তুমি খেলতে; সেও তোমার সাথে খেলত। তুমি তাকে হাসাতে। সেও তোমাকে হাসাত।” অতঃপর জাবির রাদিআল্লাহু নিজের কারণ উপস্থাপন করলে রাসুল ﷺ নবদম্পতির জন্য দোয়া করেন। [সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫৩৬৭]
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, “কোন নারী সর্বোত্তম?”
উত্তরে তিনি বলেছিলেন, “যে নারী কথাবার্তার প্যাঁচ বুঝে না। পুরুষদের ভোজবাজি সম্পর্কেও ধারণা রাখে না। একদম নিষ্কলুষ হৃদয়ের অধিকারী। শুধু স্বামীর জন্য সাজগোজ করতে জানে, এবং তার পরিবারের সর্ববিষয়ে রক্ষণশীল হয়।” [রাগিব আল আসফাহানী, মুহাযিরাতুল উদাবা, ২/২২২]
(এখন অনেকে খাদিজা রাদিআল্লাহু আনহা ও অন্যান্য উম্মুল মুমিনীনদের কথা বলবেন। সেজন্যই বলেছি এটা পার্থিব মর্যাদা। প্রকৃত মর্যাদা তো শুধু তাকওয়ার মাঝেই রয়েছে।)
এ থেকে বোঝা গেল পুরুষ প্রাকৃতিকভাবেই কুমারী মেয়ের প্রত্যাশী। সুতরাং, এটা দোষের কিছু নয়। পুরুষ ফিতরাতগতভাবে এমন নারী পাওয়ার কামনা করে যে তার জন্য নিজেকে হেফাজত করবে৷ নিজের শরীর, মন সবকিছু তার জন্য গুছিয়ে রাখবে। এজন্য, আল্লাহ তায়ালা কুরআনে জান্নাতী হুরদের ব্যাপারে বলেছেন,
❝তারা হুর, তাঁবুতে সুরক্ষিতা। সুতরাং তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন কোন নি‘আমতকে অস্বীকার করবে? কোন জিন ও মানব পূর্বে তাদেরকে স্পর্শ করেনি।❞ [সূরা আর রহমান, আয়াত ৭২-৭৪]
❝এদেরকে আমি সৃষ্টি করেছি বিশেষরূপে। অতঃপর তাদেরকে করেছি চিরকুমারী। (স্বামীদের জন্য) প্রেমময়ী ও সমবয়স্কা।❞ [সূরা আল ওয়াক্বিয়াহ, আয়াত ৩৫-৩৭]
সুতরাং, নষ্টামি থেকে কুমারীত্ব রক্ষার বৈশিষ্ট্য মেয়েদের জন্য অবশ্যই মর্যাদার বিষয়। আর স্বাভাবিকভাবেই প্রতিটি পুরুষ এমন নারীর স্বামী হওয়ার সম্মান অর্জন করতে চায়।
এবার আসি, ‘অতীতা’ নারী বিয়ে করার ব্যাপারে, যে স্বামীর আমানত বিলিয়ে বেড়িয়েছে। এরূপ নারীর জন্য উত্তম হলো তার মত কোনো পুরুষকেই বিয়ে করা; কেননা সেই তার উপযুক্ত। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন,
❝দুশ্চরিত্রা নারী দুশ্চরিত্র পুরুষের জন্যে উপযুক্ত; দুশ্চরিত্র পুরুষ দুশ্চরিত্রা নারীর জন্যে উপযুক্ত; সচ্চরিত্রা নারী সচ্চরিত্র পুরুষের জন্যে উপযুক্ত এবং সচ্চরিত্র পুরুষ সচ্চরিত্রা নারীর জন্যে উপযুক্ত। লোকে যা (অপবাদ) বলে এরা তা হতে পবিত্র; এদের জন্যে আছে ক্ষমা এবং সম্মানজনক জীবিকা।❞ [সূরা আন নূর, আয়াত ২৬]
এ আয়াতের ব্যাখায় ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
“চরিত্রহীনা মেয়ে চরিত্রহীন পুরুষদের জন্যে, তাই চরিত্রহীনা মেয়েলোক চরিত্রবান পুরুষদের জন্যে বিবাহযোগ্য হতে পারে না। কেননা তা কুরআনে বর্ণিত চূড়ান্ত কথার খেলাফ। অনুরূপভাবে সচ্চরিত্রবান পুরুষ সচ্চরিত্রবর্তী মেয়েদের জন্যে। অতএব কোনো চরিত্রবান পুরুষই কোনো চরিত্রহীনা মেয়ের জন্যে বিয়ের যোগ্য হতে পারে না। কেননা তাও কুরআনের বিশেষ ঘোষণার পরিপন্থী।” [তাফসিরুল মুহাসিন আত-তাওয়ীল, ১১/৪৪৮৩]
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “তোমাদের নিকট এমন কোন ব্যক্তি বিবাহের প্রস্তাব নিয়ে এলের চরিত্র ও ধর্মানুরাগ সম্পর্কে তোমরা সন্তুষ্ট,তার সাথে (তোমাদের মেয়েদের) বিবাহ দাও। তোমরা যদি তা না করো, তাহলে পৃথিবীতে বিপর্যয় ও ব্যাপক বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়বে।” [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১৯৬৭]
এ হাদিসের ব্যাখায় ইমাম আল্লামা শওকানী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “এ হাদীস প্রমাণ করে যে, দ্বীনদারী ও চরিত্রের দিক দিয়ে কুফু (সমতা) আছে কিনা বিয়ের সময়ে তা অবশ্য লক্ষ্য করতে হবে।” [নীলুল আওতার, ২/২৯২]
সুতরাং, যে নারী দুশ্চরিত্রা তার উচিত দুশ্চরিত্র পুরুষের সাথে বিয়ে করা; কেননা সেই তার উপযুক্ত। এবং যে পুরুষ দুশ্চরিত্র তার উচিত দুশ্চরিত্রা নারীর সাথে বিয়ে করা; কেননা সেই তার উপযুক্ত।
কোনো চরিত্রবান পুরুষ কখনো দুশ্চরিত্রা মেয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয় না। শুধুমাত্র দুশ্চরিত্রের পুরুষই দুশ্চরিত্রা মেয়েকে বিয়ে করতে চাইবে।
❝ব্যভিচারী পুরুষ কেবল ব্যভিচারিণী নারী অথবা মুশরিকা নারীকেই বিয়ে করে এবং ব্যভিচারিণীকে কেবল ব্যভিচারী অথবা মুশরিক পুরুষই বিয়ে করে।❞ [সূরা আন নূর, আয়াত ৩]
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “যে ব্যভিচারীর উপর চাবুক লাগানো হয়েছে সে তার অনুরূপের সাথেই বিবাহিত হতে পারে।” [আবূ দাঊদ, হাদিস নং ২০৫২]
যদিও, আলেমদের মতে ব্যাভিচারীণী (বিয়ের আগে সতিত্ব বিলানো মহিলা) তওবা করলে তার সাথে বিবাহ করা দোষণীয় নয়। কিন্তু, এটা যে মানব–ফিতরাতের জন্য একটি অসম্মানজনক কাজ তা কুরআন-হাদিসের ভাষ্য থেকে বোঝা যায়।
সুতরাং, কোনো খিয়ানতকারী নারী যদি তওবা করে থাকে, তাহলে তার উচিত এমন কাউকেই বিয়ে করা যে তার অনুরূপ; আর না করলে এমন কাউকে যেন সে তার অতীত সহ্য করার ক্ষমতা রাখে। এযুগে হাজার চেষ্টা করেও অতীত গোপন রাখা যায় না; একদিন না একদিন প্রতারণা প্রকাশ হয়েই যাবে। তাই, অযথা কোনো নীরিহ গায়রতওয়ালা ছেলের ঘাড়ে চেপে তার জীবন নষ্ট না করাই উত্তম।
ছেলেদের জন্যেও একই কথা প্রযোজ্য।
~লেখনীর ছোঁয়া
~ হাফেজা ফারজানা তামান্না