ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় সুন্নাতের গুরুত্ব
কৃতঃ ডাঃ গাজী মোঃ নজরুল ইসলাম
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি রব্বুল আলামীন। দুরুদ ও সালাম রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি, তার পরিবারবর্গ, বংশধর, সাহাবায়ে কিরাম (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) ও সালেহীণ (রহমাতুল্লাহি আলাইহিম)-গণের প্রতি। আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই এবং মুহাম্মাদ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর বান্দা ও রসূল। নিশ্চয়ই শুভ পরিণতি কেবলমাত্র রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, খুলাফায়ে রাশিদীন এবং সাহাবা (রাদিয়াল্লাহু আনহুম)-গণের অনুসৃত কল্যাণময় আদর্শ অনুসরণের মধ্যেই নিহিত।
মানব জাতির আদি পিতা হযরত আদম আলাইহিসসালাম এর আদি নিবাস হল জান্নাত। তাই মুমীনগণের জীবনের চুড়ান্ত লক্ষ্য হল আল্লাহ তা’য়ালার পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও জান্নাত লাভ করা। আল্লাহ তা’য়ালা স্বয়ং মানব জাতিকে তাঁর পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও জান্নাতের দিকে দ্রুত অগ্রসর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন, আল্লাহ তা’য়ালা বলেনঃ “আর তোমরা দ্রুত অগ্রসর হও তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও জান্নাতের দিকে, যার পরিধি আসমানসমূহ ও যমীনের সমান, যা মুত্তাকীদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।” -[সূরা আলে-ইমরানঃ ১৩৩]
আল্লাহ তা’য়ালা ও তাঁর রসুলের হুকুম মান্যকারী আল্লাহ তা’য়ালার অনুগ্রহপ্রাপ্ত বান্দাগণই পরকালে রসূলুল্লাহ্ সল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে জান্নাতে অবস্থানের সৌভাগ্য অর্জন করবেন। এ প্রসংগে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন :
وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَالرَّسُولَ فَأُولَئِكَ مَعَ الَّذِينَ أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ مِنَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِينَ وَحَسُنَ أُولَئِكَ رَفِيقًا ০
-আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও রসুলের হুকুম মান্য করবে, সে তাদের সংগী হবে-যাদের প্রতি আল্লাহ নিয়ামত দান করেছেন, তারা হলেন নবীগণ, সিদ্দিকগণ, শহীদগণ ও সলেহীনগণ আর তাদের সান্নিধ্যই হল উত্তম। -(সূরা নিছা : ৬৯)
সুন্নাহ হল ইসলামী জীবন ব্যবস্থার অন্যতম ভিত্তিঃ
আল্লাহ তা’য়ালা বলেন : (হে রাসূল! আপনি) বলুন! যদি তোমরা আল্লাহর ভালবাসা পেতে চাও, তবে আমার অনুসরণ কর। তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহ সমুহ মাফ করে দিবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াময়। -(সূরা আলে ইমরান : আয়াত ৩১)
তিনি আরও বলেন : “রাসূল তোমাদের যা আদেশ দেন, তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন তা থেকে তোমরা বিরত থাক।” -[সূরা হাশরঃ আয়াত ৭]
তিনি আরও বলেন : “যে রাসূলের আনুগত্য করল, সে প্রকারান্তরে আল্লাহরই আনুগত্য করল। আর যে বিমুখ হল, আমি আপনাকে তাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে প্রেরণ করিনি”। -[সূরা নিসাঃ আয়াত ৮০]
তিনি আরও বলেন : “তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে যারা আল্লাহ ও শেষ দিনের আশা রাখে আর আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে।” -[সূরা আহযাবঃ আয়াত ২১]
তিনি আরও বলেন : “অতএব, তোমার পালনকর্তার কসম!সে লোক ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে (নবী সাঃ কে) ন্যায়বিচারক বলে মনে না করে। অতঃপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোন রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা হূষ্টচিত্তে তা কবুল করে নেবে”। -(সুরা নিসাঃ আয়াত ৬৫)
তিনি আরও বলেন : “আল্লাহ ও তাঁর রসূল কোন কাজের আদেশ করলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন ক্ষমতা নেই যে, আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্ট তায় পতিত হয়”।–[সূরা আল-আহযাবঃ আয়াত ৩৬]
তিনি আরও বলেন : “মু’মিনদেরকে যখন তাদের মাঝে ফায়সালা করার জন্য আল্লাহ ও তার রাসূলের দিকে ডাকা হয়, তখন মু’মিনদের জওয়াব তো এই হয় যে,তারা বলে, আমরা শুনলাম ও মেনে নিলাম, আর তারাই সফলকাম।” -[সূরা নূরঃ আয়াত ৫১]
তিনি আরও বলেন : “রাসূলের আহ্বানকে তোমরা তোমাদের একের প্রতি অন্যের আহ্বানের মত গণ্য করো না। আল্লাহ অবশ্যই তাদেরকে জানেন যারা তোমাদের মধ্যে চুপিসারে সরে পড়ে। কাজেই যারা তার আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা যেন তাদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসা অথবা যন্ত্রণাদায়ক আযাব পৌছার ভয় করে।” -[ সূরা নূরঃ আয়াত ৬৩]
তিনি আরও বলেন : “আর এটি তো আমার সোজা পথ। সুতরাং তোমরা তার অনুসরণ কর এবং অন্যান্য পথ অনুসরণ করো না, তাহলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে। এ গুলো তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর।” -[সূরা আনআমঃ আয়াত ১৫৩]
তিনি আরও বলেন : “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, রাসূলের আনুগত্য কর, আরও আনুগত্য কর তোমাদের মধ্যকার ক্ষমতাশীলদের, অতঃপর কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটলে তা উপস্থাপন কর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নিকট, যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে ঈমান এনে থাক। এ পন্থাই তোমাদের জন্য উত্তম এবং পরিণামে প্রকৃষ্টত্বর।” –(সূরা নিসাঃ আয়াত ৫৯)
তিনি আরও বলেন : “যারা আন নাবী আর উম্মী [হুজুর (ﷺ)] এর অনুসরণ করে, যার কথা তারা তাদের নিকট রক্ষিত তাওরাত ও ইঞ্জিলে লিখিত পায় [তিনি (ﷺ)] মানুষকে সৎ কাজের নির্দেশ দেন ও অন্যায় করতে নিষেধ করেন। তিনি তাদের জন্যে পবিত্র বস্তু সমূহ হালাল করে দেন এবং অপবিত্র বস্তু সমূহকে তাদের জন্যে হারাম করে দেন। আর তাদের উপর চাপানো বোঝা ও বন্ধন হতে তাদের মুক্ত করেন। অতএব যেসব লোক তাঁর প্রতি ঈমান এনেছে, তাঁর সাহচর্য লাভ করেছে, তাঁকে সাহায্য করেছে এবং সেই নূরের (কুরআনের) অনুসরণ করেছে যা তাঁর নিকট নাযিল হয়েছে, শুধুমাত্র তারাই সফলতা লাভ করেছে। (সূরা আরাফ: আয়াত ১৫৭)
সূন্নাহ বা হাদিস হল ওহীয়ে গায়রে মাতলুঃ ওয়াহী দুই প্রকার: এক- ওহীয়ে মাতলু ও দুই- ওহীয়ে গাইরে মাতলু। ওহীয়ে মাতলু হল, কুরআন মাজীদ। আর ওহীয়ে গায়রে মাতলু হল, সুন্নাহ বা হাদিস। সূন্নাহ বা হাদিস ও আল্লাহ তা’আলার পক্ষ হতে প্রেরিত ওহী। এ প্রসংগে আল্লাহ তা’আলা বলেন : “আর সে মনগড়া কথাও বলে না । তাতো ওয়াহী যা তার প্রতি প্রত্যাদেশ করা হয়।” -[সূরা নাজমঃ আয়াত ৩-৪]
আল্লাহ তা’আলা তা’আলা কুরআনে সূন্নাহকে হিকমাহ বলে আখ্যায়িত করেছেন। আয়াতে আল্লাহ তা’আলা যেমনিভাবে কুরআন নাযিল করার কথা বলেন, অনুরূপভাবে হিকমাহ অর্থাৎ সূন্নাহ নাযিল করার কথাও বলেন। এতে প্রমাণিত হয় যে, সূন্নাহও আল্লাহর পক্ষ হতে নাযিলকৃত অহী। সুতরাং কুরআন যেমন আল্লাহর ওহী অনুরূপভাবে সূন্নাহও আল্লাহর ওহী। আল্লাহ তা’আলা বলেন : “এবং আল্লাহ আপনার প্রতি গ্রন্থ ও হিকমাহ অবতীর্ণ করেছেন এবং আপনি যা জানতে না, তিনি তাই আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন।” -[ সূরা নিসাঃ আয়াত: ১১৩]
সুন্নাহ হল কুরআনের ব্যাখ্যা ও বাস্তব জীবনে এর প্রয়োগ পদ্ধতিঃ মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেন : “নিশ্চয় আল্লাহ মু’মিনদের প্রতি অত্যন্ত অনুকম্পা প্রদর্শন করেছেন যখন তাদের নিকট তাদের নিজস্ব একজনকে রাসূল করে পাঠিয়েছেন, সে তাদেরকে আল্লাহর আয়াত পড়ে শোনাচ্ছে, তাদেরকে পরিশোধন করছে, তাদেরকে কিতাব ও হিকমাহ (হাদিস) শিক্ষা দিচ্ছে।” -[সূরা আলে ইমরানঃ আয়াত: ১৬৪]
মুমিনের জীবনে সুন্নাহ-এর ব্যাপকতা ও অপরিহার্য্যতাঃ ইহ-পরকালীন নাজাত,কল্যাণ ও জান্নাতের পথ শুধুমাত্র কুরআন ও রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদর্শের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং খুলাফায়ে রাশিদীন ও সাহাবায়ে কিরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম-গণের আদর্শ পর্যন্ত ব্যপৃত। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শ ঐভাবে অনুসরণ করতে হবে যেভাবে সাহাবায়ে কেরাম বিশেষতঃ মুহাজীর ও আনসার (রাদিয়াল্লাহু আনহুম)-গণ অনুসরণ করেছেন। এ প্রসংগে মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেন :
-“মুহাজীর ও আনসারদের অগ্রগামী দল আর যারা যথাযথভাবে তাদের অনুসারী,আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট আর তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। তাদের জন্য প্রস্তুত রয়েছে এমন জান্নাত যার পাদদেশ দিয়ে নহরসমূহ প্রবাহিত। তারা সেখানে অনন্তকাল থাকবে। এটা হল মহান সফলতা।” -(সূরা তওবাহঃ আয়াত ১০০)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাত প্রসংগেঃ হযরত মালিক ইবনু আনাস (রহঃ) হতে মুরসালরূপে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “আমি তোমাদের মধ্যে দু’টি জিনিস রেখে যাচ্ছি। যতক্ষণ তোমরা সে দু’টি জিনিস আঁকড়ে থাকবে, পথভ্রষ্ট হবে না: আল্লাহর কিতাব ও আমার সুন্নাহ”। -[ মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হাদিস: ৩৩৩৮]
খুলাফায়ে রাশিদীনের সুন্নাত প্রসংগেঃ হযরত ইরবায বিন সারিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন। অতঃপর আমাদের দিকে ফিরে বসলেন। অতঃপর আমাদেরকে এমন মর্মস্পর্শী ভাষায় উপদেশ দিলেন যে, চক্ষু সমূহ অশ্রুসজল হয়ে গেল এবং হৃদয় সমূহ ভীত-বিহবল হয়ে পড়ল। এমন সময় একজন বলে উঠলো,হে আল্লাহর রাসূল! মনে হচ্ছে এটা যেন বিদায়ী উপদেশ। অতএব আপনি আমাদেরকে আরও বেশী উপদেশ দিন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি তোমাদেরকে আল্লাহভীতির উপদেশ দিচ্ছি। আমি তোমাদের আমীরের আদেশ শুনতে ও মান্য করতে উপদেশ দিচ্ছি যদিও তিনি একজন হাবশী গোলাম হন। কেননা আমার পরে তোমাদের মধ্যে যারা বেঁচে থাকবে, তারা সত্বর বহু মতভেদ দেখতে পাবে। তখন তোমরা আমার সুন্নাতকে এবং সুপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে আকড়ে ধরবে। তাকে কঠিনভাবে ধরবে এবং মাড়ির দাঁত সমূহ দিয়ে কামড়ে ধরে থাকবে। সাবধান! দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টিসমূহ হ’তে দূরে থাকবে। কেননা (দ্বীনের মধ্যে) যেকোন নতুন সৃষ্টি হ’ল বিদ‘আত। আর প্রত্যেক বিদ‘আত হ’ল পথভ্রষ্টতা।’ -[আহমাদ, আবুদাঊদ, তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ]
সাহাবাগণের সুন্নাত প্রসংগেঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্র্ণিত। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “বানী-ইসরাইলীগণ বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছিল আর আমার উম্মাত বিভক্ত হবে তিয়াত্তর দলে, সকলেই জাহান্নামে যাবে, কিন্তু একটি মাত্র দল জান্নাতে যাবে। সাহাবাগণ (রা) জিজ্ঞাসা করলেন- এই দল কারা? রসূলুলাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন : যারা আমার ও আমার সাহাবাগণের ছুন্নাতের উপর কায়েম থাকবে।” – (তিরমিযীঃ ২৫৭৮,আবু দাউদ, তারগীবঃ ৪৮)
অনুরূপ বর্ণনাঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্র্ণিত।রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “বনূ ইসরাঈলের যে অবস্থা এসেছিল অবশ্যই আমার উম্মাতের মধ্যে অনুরূপ অবস্থা আসবে। এমনকি তাদের কেউ যদি প্রকাশ্যে তার মায়ের সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়ে থাকে তবে আমার উম্মাতেরও কেউ তাতে লিপ্ত হবে। বনী ইসরাঈল ৭২ দলে বিভক্ত হয়েছিল। আমার উম্মাত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে। একটি দল ব্যতীত সবাই হবে জাহান্নামী। বলা হল একটি দল (যারা জান্নাতী) কারা ? তিনি বললেন: আমি এবং আমার সাহাবীরা আজকের দিনে যে আদর্শের উপর (প্রতিষ্ঠিত)।” – [তিরমিযিঃ হাদিস নং ২৬৪১]
মুমিনের জীবন ও কামনা-বাসনা হবে সুন্নাতের নমুনাঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না,যতক্ষণ না তার কামনা-বাসনা আমার আনীত আদর্শের অনুবর্তী হবে -(শারহুস সুন্নাহ)
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : ‘‘জান্নাত পেতে আগ্রহী নয় এমন ব্যক্তি ছাড়া আমার সকল উম্মাতই জান্নাতে প্রবেশ করবে। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! কে এমন ব্যক্তি আছে যে জান্নাতে যেতে অস্বীকৃতি জানায়? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করবে সে জান্নাতে যাবে, আর যে আমার নাফরমানী করবে ও অবাধ্য হবে, সেই জান্নাতে যেতে অস্বীকার করে’’। -[সহীহ বুখারী ]
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন : “আল্লাহ তা’আলা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আমাদের নিকট প্রেরণ করেছেন, আমরা কিছুই জানতাম না। আমরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে যে রূপ করতে দেখি, আমরাও সেরূপ করি।” [ ইবনু মাযাহঃ হাদিস নং ১০৬৬ সহীহ]
হযরত ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি সোনার আংটি পরতেন। তখন লোকেরাও সোনার আংটি পড়তে লাগল। এরপর (একদিন) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: আমি সোনার আংটি পরছিলাম-তারপর তিনি তা ছুঁড়ে ফেলে দিলেন এবং বললেন : আমি আর কোন দিনই তা পরব না। ফলে লোকেরাও তাদের আংটিগুলো ছুঁড়ে ফেলল।” -[বুখারীঃ হাদিস নং ৭২৯৮]
বিনা যুক্তিতে সুন্নাতের অনুসরণ করতে হবেঃ হযরত উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, তিনি হাজরে আসওয়াদের কাছে এসে তা চুম্বন করে বললেন, “আমি অবশ্যই জানি যে, তুমি একখানা পাথর মাত্র, তুমি কারও কল্যাণ বা অকল্যাণ করতে পার না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তোমায় চুম্বন করতে না দেখলে কখনো আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না।”-[ বুখারীঃ হাদিস নং ১৫৯৭]
হযরত জাবির বিন আব্দুল্লাহ রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঘুমন্ত অবস্থায় কিছু সংখ্যক ফিরিস্তা আসলেন, তাদের কেউ বললেন, তিনি ঘুমন্ত, আবার কেউ বললেন: তাঁর চক্ষু ঘুমন্ত কিন্তু অন্তর জাগ্রত। অতঃপর তারা বললেন,তাঁর একটি দৃষ্টান্ত রয়েছে তোমরা সে দৃষ্টান্ত বর্ণনা কর, অতঃপর বললেন, তাঁর দৃষ্টান্ত হল ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে সুসজ্জিত করে একটি গৃহ নির্মাণ করল, অতঃপর সেখানে খাওয়ার আয়োজন করল এবং একজন আমন্ত্রণকারী প্রেরণ করল, অতঃপর যে আমন্ত্রণ গ্রহণ করল, গৃহে প্রবেশ করল এবং আয়োজিত খানা খেল। আর যে আমন্ত্রণ গ্রহণ করল না, গৃহেও প্রবেশ করল না এবং আয়োজিত খানাও খেল না। এ দৃষ্টান্ত বর্ণনার পর তারা বললেন: দৃষ্টান্তের ব্যাখ্যা করে দিন তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুঝতে পারবেন, কারণ চক্ষু ঘুমন্ত হলেও অন্তর জাগ্রত, তখন তারা ব্যাখ্যায় বললেন, “নির্মিত গৃহটি হল জান্নাত, আর আমন্ত্রণকারী হলেন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, অতএব যে ব্যক্তি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আনুগত্য স্বীকার করে, সে যেন প্রকৃত পক্ষে আল্লাহ তা’আলরই আনুগত্য স্বীকার করল। আর যে ব্যক্তি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অমান্য করল, সে যেন প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তা’আলাকেই অমান্য করল। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন মানুষের মাঝে [ন্যায় ও অন্যায়ের] পার্থক্যকারী।” –[ বুখারিঃ হাদিস নং ৭২৮১]
সুন্নাহ অমান্য কারীর সঙ্গে সম্পর্ক কিরূপ হবেঃ হযরত উম্মু সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : অচিরেই তোমাদের উপর এমন কতিপয় শাসক হবে যাদের কিছু কাজ (সুন্নাহ অনুযায়ী হওয়ার কারণে) তোমরা পছন্দ করবে আর কিছু কাজ (সুন্নাহ বিরোধী হওয়ার কারণে) অপছন্দ করবে। যে ব্যক্তি অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করবে সে দায়িত্বমুক্ত হবে। আর যে ব্যক্তি এগুলোকে ঘৃণা করবে সেও দায়িত্বমুক্ত হবে। কিন্তু যে ব্যক্তি এরূপ কাজের প্রতি সন্তুষ্ট থাকবে এবং তার অনুসরণ করবে সে অন্যায়ের ভাগী হবে। সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমরা কি তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করবো না? তিনি বললেন : না,যতক্ষন তারা তোমাদের মাঝে নামাজ কায়েম রাখে।”- (মুসলিমঃ ৪৬৪৯ ও তিরমিযীঃ ২২১১)
অনুরূপ বর্ণনাঃ হযরত কাব বিন উজরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ ” জেনে রাখো অচিরেই অনেক জালিম শাসক আসবে। যারা সেই সকল শাসকদের সাথে আঁতাত করবে, তাদের অন্যায়গুলোকে সমর্থন দিবে এবং তাদের জুলুমে সহযোগিতা করবে সে আমার উম্মত নয় এবং আমিও তাঁদের দায়িত্ব নিবো না এবং (কিয়ামতের দিন) তাকে আমার হাউজে কাউসারের সামনে আসতে দেয়া হবে না। আর যাঁরা সেই সকল জালিম শাসকদের সাথে আঁতাত করবে না, তাদের জুলুমে সহায়তা করবে না তাঁরা আমার উম্মত এবং আমি তাঁদের দায়িত্ব নিবো এবং তাঁদেরকেই (কিয়ামতের দিন) হাউজে কাউসারের পানি পান করানো হবে। -[ তিরমিযি, হাদিস নং ৬১৪, হাদীস সহিহ]
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মুগাফ্ফাল রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা তার কাছে তার এক ভাতিজা বসা ছিল। সে তখন কংকর নিক্ষেপ করছিল। তিনি তাকে তা থেকে নিষেধ করলেন এবং বললেন : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কাজ থেকে নিষেধ করছেন। তিনি আরও বললেন : এতে না শিকার করা হয়, আর না শত্রু পরাভূত হয়, বরং তা দাঁত ভেঙ্গে দেয় অথবা চক্ষু নষ্ট করে দেয়। রাবী বলেন, তার ভাইপো পুনরায় পাথর নিক্ষেপ করলে তিনি [ইবনে মুগাফ্ফাল রা.] বলেন: আমি তোমাকে হাদিস শুনাচ্ছি যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ করতে নিষেধ করেছেন। অথচ এরপরও তুমি কংকর নিক্ষেপ করছ? আমি তোমার সাথে আর কখনও কথা বলব না। -[মুসলিমঃ হাদিস নং ১৯৫৪]
হযরত উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমরা আল্লাহর বান্দীদের (মহিলাদের) মসজিদে সালাত আদায় করতে মানা করো না। তখন ইবনে উমারের এক পুত্র বললেন: আমরা অবশ্যই তাদের নিষেধ করব। রাবী বলেন: এতে তিনি (ইবনে উমার) ভয়ানক রাগান্বিত হয়ে বললেন: আমি তোমার নিকট রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদিস বর্ণনা করছি, অথচ তুমি বলছ যে, আমরা অবশ্যই তাদের নিষেধ করব? -[ ইবনু মাযাহঃ হাদিস: ১৬ হাদিসটি সহীহ]
যারা সুন্নাহ পূণঃরোজ্জীবিত করে তাদের জন্য সুসংবাদঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনেমাসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেছেন : দ্বীন ইসলাম তো অপরিচিত অবস্থায় যাত্রা শুরু করেছিল এবং অচিরেই অপরিচিত অবস্থায় ফিরে আসবে। সুতরাং সুসংবাদ সেই অপরিচিতদের জন্য।(তিরমিযীঃ হাদীস নং ২৫৬৬) তাদের পরিচয় প্রসংগে বলা হয়েছে- যারা আমার ছুন্নাহমানুষের দ্বারা বিপর্যস্থ হয়ে যাওয়ার পর পুনরায় ইসলাহ বা পূণর্র্জীবিত করে। -[তিরমিযীঃ হাদীস নং ২৫৬৭]
সুন্নাতকে আঁকড়ে থাকায় একশত শহীদের সওয়াবঃ হযরত আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু‘আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আমার উম্মাতের বিপর্যয়ের সময় যে আমার ছুন্নাতকে আঁকড়ে থাকবে তার জন্য একশত শহীদের সওয়াব -(বায়হাকী)
রসূলের সাথে জান্নাতে যাবেঃ হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু‘আনহু থেকে বর্ণিত
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেনঃ ‘বেটা! সকাল-সন্ধ্যায় যদি এমনভাবে থাকতে পার যে, তোমার মনে কারো প্রতি বিদ্বেষ নেই তাহলেএমনভাবেই থাক। বেটা! এটি আমার সুন্নত।যে আমার সুন্নাতকে যিন্দা করে সেআমাকে ভালবাসে।আর যে আমাকে ভালবাসে সে আমার সাথে জান্নাতে থাকবে।’ -{জামে তিরমিযীঃ হাদীস নং ২৬৭৮}
অনুরূপ বর্ণনাঃ হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যে আমার কোন সুন্নাত জিন্দা করল সে যেন আমাকেজিন্দা করল। আর যে আমাকে জিন্দা করল সে আমার সাথে জান্নাতে যাবে।
-(তিরমিজীঃ ২খ.-৯৬ পৃ)
সুন্নাতের অবহেলাকারী রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উম্মাতভূক্ত নয়ঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার পিতা একজন কুরাইশি মেয়ের সাথে আমাকে বিয়ে করিয়ে দিলেন। উক্ত মেয়ে আমার ঘরে আসল। আমি নামায রোযা ইত্যাদি এবাদতের প্রতি আমার বিশেষ আসক্তির দরুণ তার প্রতি কোন প্রকার মনোযোগ দিলাম না। একদিন আমার পিতা- আমর ইবনে আস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) তার পুত্রবধুর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার স্বামীকে কেমন পেয়েছ? সে জবাব দিল, খুবই ভালো লোক অথবা বললো খুবই ভালো স্বামী। সে আমার মনের কোন খোঁজ নেয় না এবং আমার বিছানার কাছেও আসে না। এটা শুনে তিনি আমাকে খুবই গালাগাল দিলেন ও কঠোর কথা বললেন এবং বললেন, আমি তোমাকে একজন কুরাইশি উচ্চ বংশীয়া মেয়ে বিয়ে করিয়েছি আর তুমি তাকে এরূপ ঝুলিয়ে রাখলে? তিনি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে গিয়ে আমার বিরূদ্ধে নালিশ করলেন। তিনি আমাকে ডাকালেন। আমি উপস্থিত হলে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি দিনভর রোযা রাখ?আমি বললাম হ্যাঁ। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি রাতভর নামায পড়? আমি বললাম হ্যাঁ। তিনি বললেন, কিন্তু আমি রোযা রাখি ও রোযা ছাড়ি, নামায পড়ি ও ঘুমাই, স্ত্রীদের সাথে মেলামেশা করি। যে ব্যক্তি আমার সুন্নাতের প্রতি আগ্রহ রাখে না সে আমার দলভুক্ত না। -[মুসনাদে আহমাদঃ হাদিস নং- ৬৪৪১]
হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তিন ব্যক্তি রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রীদের নিকট তার ইবাদতের অবস্থা জানার জন্যআসেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইবাদতের খবর শুনে তারাযেন তার ইবাদতকে কম মনে করলেন। তারা পরস্পর আলাপ করলেন, রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তুলনায় আমরা কী? আল্লাহ তা’আলা তারআগের-পিছের সকল গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন। তাদের একজন বললেন, আমিসারা রাত সালাত আদায় করবো। দ্বিতীয়জন বললেন, আমি দিনে সিয়াম পালনকরবো, আর কখনো তা ত্যাগ করবো না। তৃতীয় জন বললেন, আমি নারী থেকে দূরেথাকব, কখনো বিয়ে করবো না। তাদের এই পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার সময়রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে পড়লেন এবং বললেন, “তোমরা কি এধরনের কথাবার্তা বলেছিলে? খবরদার! আমি আল্লাহকে তোমাদের চেয়ে বেশী ভয়করি, তোমাদের চেয়ে বেশী তাকওয়া অবলম্বন করি। কিন্তু এরপরও আমি কোন দিনসিয়াম পালন করি আবার কোন দিন সিয়াম পালন ছেড়ে দিই। রাতে সালাত আদায়করি আবার ঘুমও যাই। নারীদেরকে বিয়েও করি। এটাই আমার পথ। তাই যে ব্যক্তিআমার পথ ছেড়ে দিয়েছে সে আমার (উম্মতের মধ্যে) গণ্য হবে না”। -[ বুখারিঃ হাদিস নং ৫০৬৩]
হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা ‘আনহা হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : বিবাহ আমার সুন্নাত। যে আমার সুন্নাত অনুযায়ী আমল করে না, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়। তোমরা বিবাহ করো, কারণ আমি আমার উম্মতের আধিক্য নিয়ে আল্লাহর দরবারে গর্ব করবো। যার সামর্থ্য আছে সে অবশ্যই বিবাহ করবে আর যার সামর্থ্য নেই তার উপর কর্তব্য হলো রোজা রাখা। কারণ, রোজা তার জন্য প্রতিষেধক। -[ইবনে মাজাহ]
সুন্নাত অবহেলার ব্যাপারে সতর্কতাঃ আবু রাফে রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “আমি যেন তোমাদের মাঝে কাউকে এমন না পাই, সে তার খাটের উপর ঠেস দিয়ে বসে থাকবে। আর আমি যা আদেশ দিয়েছি অথবা যা থেকে নিষেধ করেছি, তা তার কাছে পৌছলে সে তখন বলবে: এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না,আমরা আল্লাহর কিতাবে যা পেয়েছি, তারই অনুসরণ করব।” -[আহমদ, হাদিস: ২৩৮৭৬; আবুদ দাউদ, হাদিস: ৪৬০৫; ইবনু মাযা,হাদিস: ১৩; তিরমিযি, হাদিস: ২৬৬৩]
সুন্নাত হল নাজাতের একমাত্র পথঃ ইসলাম একটি পূর্ণাংগ জীবন ব্যবস্থা। ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় নাজাতের একমাত্র পথ হল রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাতের পরিপূর্ণ অনুসরণ। সুন্নাত বাদ দিয়ে অন্য কোন আইন-কানুন, বিধি-বিধান,নীতিমালা, বিজাতীয় আদর্শ, রসম-রেওয়াজ, যাবতীয় পথ ও মত এবং নাফসানিয়াত সুস্পষ্ট গোমরাহী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে- যার পরিণতি হল জাহান্নাম। যেমন-
হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “শেষ জামানায় এমন সব দজ্জাল ও মিথ্যুকদের আর্বিভাব হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব হাদিস নিয়ে আসবে, যা তোমরা ইতিপূর্বে কখনো শোননি এবং তোমাদের পূর্ব পুরুষরাও কখনো শুনেনি। তোমরা তাদের থেকে সতর্ক থাকবে, যাতে তারা তোমাদের পথভ্রষ্ট করতে না পারে এবং তোমাদের বিপদে ফেলতে না পারে।” -[ মুসলিম, হাদিস: ৭]
যারা অন্য জাতির কালচারের সাথে সামঞ্জস্য রাখেঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে সামঞ্জস্য বা মিল রাখে, সে তাদেরই দলভুক্ত এবং তার হাশর- নশর তাদের সাথেই হবে।” -(মুসনাদে আহমদ)
হযরত আবু উমামা বাহেলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের কৃষ্টিকালচারের অনুকরণ করবে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত গণ্য হবে এবং যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়কে মহব্বত করবে,তাদের সাথে তার হাশর হবে।” -(সুনানে আবু দাউদঃ হাদীস নং ৩৫১৪)