ইসলামিক সেরা গল্প – গল্পে গল্পে শিক্ষা

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

যখন নেমে আসে আঁধারের রাত

বেকার, অস্বচ্ছল এবং আর্থিকভাবে নিদারুণ কষ্টে আছে এমন বহু মানুষকেই আমি চিনি, যারা একটা মানসিক অস্থিরতার ভেতর দিয়ে দিন গুজরান করছে। সাধারণত বিপদ-আপদ, দুঃখ-দুর্দশা যখন আমাদের স্পর্শ করে, আমরা তখন খুব বিপন্ন হয়ে পড়ি এবং নিপতিত হই হতাশার ঘন গভীর অন্ধকারে। এমন কঠিন সময়ে আমাদের অন্তর কীভাবে যেন আল্লাহর স্মরণ থেকে বিস্মৃত হয়ে পড়ে। আমাদের ওপরে নিপতিত দুঃখ-দুর্দশা দূর করতে দুনিয়ার সম্ভাব্য সকল উপায় তখন মনের মধ্যে উকিঝুকি দিলেও, যিনি সকল সমস্যার সমাধানকারী- তাঁর দ্বারস্থ হওয়ার কথা আমরা যেন বেমালুম ভুলে যাই।

আমিসহ এমন অনেক মানুষই চারপাশে আছে, যারা জীবনের কঠিন সময়গুলোতে বেশ অগোছালো হয়ে পড়ে। দুঃখ আর দুর্দশার এমন কঠিন সময়গুলোতে সুন্নাহ আর নফল তো দূর থাকুক, ফরয আদায় করতেই কেমন যেন হাঁপিয়ে উঠি আমরা। আমাদের তখন সালাতে মন বসে না, যিকির-আযকারে মন বসে না, কুরআন তিলাওয়াতে মন বসে না। জীবন তখন আমাদের কাছে হিমালয় ডিঙানোর মতোই দুষ্কর ঠেকে।

কিন্তু এমনটা কি আদৌ হওয়ার কথা ছিলো?

মূসা আলাইহিস সালামের জীবনের একটা ঘটনা আমাকে বেশ ভাবনার মধ্যে ফেলে দেয়। দুঃখ আর দুর্দশার দিনে মূসা আলাইহিস সালামের অন্তরের দৃঢ়তা আর চিন্তার প্রখরতা আমাকে এমনভাবে নাড়া দেয় যে – আমার জীবনের দর্শনটাই উল্টেপাল্টে যায়।

যুবক অবস্থায় একবার এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার মুখোমুখি হয়ে মূসা আলাইহিস সালামকে নিজের মাতৃভূমি ছেড়ে মাদইয়ান নামক একটা জায়গায় পালিয়ে আসতে হয়। মাদইয়ানে মূসা আলাইহিস সালামের আসার ঠিক পরের একটা ঘটনা কুরআন বেশ গুরুত্ব সহকারে আমাদের সামনে তুলে ধরেছে। সেই ঘটনায় দেখা যায়—দুজন নারী তাদের বকরিকে পানি পান করাতে এসে একটা কুপের অদূরে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের দাঁড়িয়ে থাকবার কারণ হচ্ছে ওই সময়টায় কূপে কিছু পুরুষ মানুষ তাদের নিজ নিজ বকরিকে পানি পান করাচ্ছিলো। যেহেতু কূপের কাছে যারা আছে তারা সকলেই পুরুষ, তাই নারীদ্বয় ওই মুহূর্তে কূপের নিকটে না গিয়ে, অদূরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করাটাকেই নিজেদের জন্য সমীচীন মনে করলো। পুরুষেরা তাদের কাজ সেরে চলে গেলে তারা কূপের নিকটে যাবে এবং বকরিকে পানি পান করাবে—এমনটাই তাদের পরিকল্পনা।

https://googleads.g.doubleclick.net/pagead/ads?npa=1&gdpr=1&us_privacy=1—&gdpr_consent=CPziCYAPziCYAEsACBENDaCoAP_AAEPAAAIYINJB7D7FbSFCwH57aLsAMAhXRsCAQqQAAASBAmABQAKQIAQCkkAYFESgBAACAAAAICZBIQIMCAgACUABQAAAAAEEAAAABAAIIAAAgAEAAAAIAAACAIAAEAAIAAAAEAAAmQhAAIIACAAAhAAAIAAAAAAAAAAAAgCAAAAAAAAAAAAAAAAAAQQaQD2F2K2kKFgPi2QWYAQBCijYEAhUAAAAkCBIAAgAUgQAgFIIAwAIFAAAAAAAAAQEgCQAAQABAAAIACgAAAAAAIAAAAAAAQQAAAAAIAAAAAAAAEAQAAAAAQAAAAIAABEhCAAQQAEAAAAAAAQAAAAAAAAAAABAAAAAAAAAAAAAAAAAAAAgAA&addtl_consent=1~2072.70.89.93.108.122.149.196.2253.2299.259.2357.311.317.323.2373.338.358.2415.415.2506.2526.482.486.494.495.2568.2571.2575.540.574.2624.609.2677.2779.827.864.981.1048.1051.1095.1097.1201.1205.1276.1301.1365.1415.1449.1570.1577.1651.1716.1735.1753.1765.1834.1870.1878.1889.1958&client=ca-pub-1426523110009009&output=html&h=250&adk=2047454388&adf=3702679106&pi=t.aa~a.289897897~i.12~rp.4&w=728&fwrn=4&fwrnh=100&lmt=1697061769&num_ads=1&rafmt=1&armr=3&sem=mc&pwprc=7374466645&ad_type=text_image&format=728×250&url=https%3A%2F%2Fwww.loveislife1.com%2F2023%2F05%2Fblog-post_45.html&host=ca-host-pub-1556223355139109&fwr=0&pra=3&rh=182&rw=728&rpe=1&resp_fmts=3&wgl=1&fa=27&uach=WyJXaW5kb3dzIiwiMTUuMC4wIiwieDg2IiwiIiwiMTE3LjAuNTkzOC4xNTAiLFtdLDAsbnVsbCwiNjQiLFtbIkdvb2dsZSBDaHJvbWUiLCIxMTcuMC41OTM4LjE1MCJdLFsiTm90O0E9QnJhbmQiLCI4LjAuMC4wIl0sWyJDaHJvbWl1bSIsIjExNy4wLjU5MzguMTUwIl1dLDBd&dt=1697115324921&bpp=2&bdt=1164&idt=2&shv=r20231004&mjsv=m202310090101&ptt=9&saldr=aa&abxe=1&cookie=ID%3D1ee942d30082ee50-222d393765e0001f%3AT%3D1697114959%3ART%3D1697115149%3AS%3DALNI_MaBmSdtUY4R7_qtrDo_VbhJptGxnw&gpic=UID%3D00000cba06040dec%3AT%3D1697114959%3ART%3D1697115323%3AS%3DALNI_MYtHDQUHhtIZrRaF0Q4BOp_u_vmnA&prev_fmts=0x0%2C1073x280%2C290x600&nras=2&correlator=864746404008&frm=20&pv=1&ga_vid=896729878.1697114958&ga_sid=1697115324&ga_hid=744750869&ga_fc=1&u_tz=60&u_his=3&u_h=1080&u_w=1920&u_ah=1032&u_aw=1920&u_cd=24&u_sd=1&dmc=8&adx=415&ady=1638&biw=1903&bih=955&scr_x=0&scr_y=0&eid=44759876%2C44759927%2C31078363%2C31078701%2C44804783%2C44805099%2C44805113%2C31078301%2C31078680%2C31078663%2C31078665%2C31078668%2C31078670&oid=2&pvsid=4435972918152317&tmod=1819887879&uas=0&nvt=1&ref=https%3A%2F%2Fwww.loveislife1.com%2F2023%2F05%2Fblog-post_60.html&fc=1408&brdim=0%2C0%2C0%2C0%2C1920%2C0%2C1920%2C1032%2C1920%2C955&vis=1&rsz=%7C%7Cs%7C&abl=NS&fu=128&bc=31&td=1&nt=1&ifi=4&uci=a!4&btvi=1&fsb=1&xpc=bhznOA3urm&p=https%3A//www.loveislife1.com&dtd=13

মাদইয়ানে মূসা আলাইহিস সালাম তখন সদ্য পা রেখেছেন। এবং ঘটনাক্রমে ওই কূপের কাছেই একটা গাছের নিচে বসে ছিলেন তিনি। রূপে পুরুষদের আনাগোনা এবং অদূরে দুজন নারীর দাঁড়িয়ে থাকা এবং কূপের কাছে তাদের ঘেঁষতে না পারার বিষয়টা নজর কাড়লো মূসা আলাইহিস সালামের।

মেয়ে দুটো যেহেতু নিজেদের বকরিকে পানি পান করাতে পারছে না, তাই মূসা আলাইহিস সালাম তাদেরকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে গেলেন। তিনি স্বেচ্ছায় তাদের বকরিগুলোকে কূপ থেকে পানি পান করিয়ে তাদের কাছে ফিরিয়ে দিলেন এবং যে গাছটির নিচে বসা ছিলেন আগে, পুনরায় সেই গাছের নিচে এসে বসে পড়লেন।

গাছের নিচে ফিরে এসে তিনি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার কাছে একটা দুআ করেছিলেন সেদিন। সেই দুআটা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা এতো পছন্দ করলেন যে, সেটাকে তিনি গোটা মানবজাতির জন্য কুরআনে স্থান করে দিয়েছেন। কিয়ামত-কাল অবধি সেই দুআ আমরা পাঠ করবো—সালাতে, নিজেদের বিপদে-আপদে, নিজেদের সুখ আর দুঃখের দিনে।

গাছের নিচে ফিরে এসে মূসা আলাইহিস সালাম বলেছিলেন: 

رب الله لما الولك إن من خير فقيري

“আমার রব! আমার প্রতি যে অনুগ্রহই আপনি দান করবেন, আমি তার-ই মুখাপেক্ষী।” ( সূরা কাসাস ২৮: ২৪

খেয়াল করুন—নিজের মাতৃভূমি ছেড়ে মাদইয়ানে পালিয়ে এসেছেন তিনি। মাথা গোঁজার একটু ঠাঁই পর্যন্ত কোথাও নেই। নেই কোনো খাবারের বন্দোবস্ত। কী খাবেন, কী পরবেন, বাকি দিনগুলো কীভাবে কাটাবেন—কোনোকিছুই জানেন না তিনি।

সম্পূর্ণ নতুন এক জায়গায় যদি আপনাকে রেখে আসা হয়, যেখানে আপনার কোনো আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব নেই, কোনো পরিচিত লোক নেই, এমনকি আপনার হাতে একটা পয়সাও নেই যে আপনি থাকা-খাওয়ার সংস্থান করবেন, ভাবুন তো—এমন একটা অবস্থায় পড়লে আপনার মনের অবস্থাটা কী হবে? আল্লাহর কাছে যদি দুআ করতে হয়, আপনি তখন কীরকম দুআ করবেন?

আমি জানি আপনি কী দুআ করবেন। আপনি বলবেন — ইয়া আল্লাহ, আমাকে থাকার একটা জায়গা মিলিয়ে দিন। ইয়া আল্লাহ, আমাকে খাবারের বন্দোবস্ত করে দিন। ইয়া আল্লাহ, আপনি এই বিদেশ-বিভুঁইয়ে আমার জন্য একটা উত্তম আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দিন।’

কিন্তু দেখুন—এরকম একটা নাজুক পরিস্থিতিতে পড়েও মূসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর কাছে সেভাবে দুআ করেননি। তিনি আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাননি, মাথা গোঁজার ঠাই চাননি, এমনকি একবেলা আহারের ব্যবস্থার জন্যও দুআ করেননি। বরং তিনি বললেন – আমার রব! আমার প্রতি যে অনুগ্রহই আপনি দেখাবেন, আমি তার-ই মুখাপেক্ষী!”

“আমার প্রতি যে অনুগ্রহই আপনি দেখাবেন’—এই কথাটার মানে কী?

মানে হলো—যদি আপনি আমাকে খেতে দেন তো আলহামদুলিল্লাহ, খেতে না দিলেও আলহামদুলিল্লাহ। আমাকে থাকার একটা ব্যবস্থা করে দিলেও আলহামদুলিল্লাহ, যদি আমাকে নিরাশ্রয় করে রাখেন, তা-ও আলহামদুলিল্লাহ। আমার জন্য যা কিছুই আপনি নির্ধারণ করবেন— আমি নিঃসংকোচে, নির্ভাবনায় সেগুলোকে মাথা পেতে নেবো।

আরও লক্ষণীয়—একটু আগেই কিন্তু তিনি দুজন নারীর বকরিকে পানি পান করিয়ে তাদের উপকার করেছিলেন। তিনি যদি চাইতেন, সেই কাজটাকে উসিলা করে হলেও আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে পারতেন। তিনি বলতে আপনি জানেন মূসা আলাইহিস সালামকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সেদিন বিনিময় হিশেবে কী দিয়েছিলেন? একটা উত্তম আশ্রয়, একজন সৎকর্মশীলা স্ত্রী এবং একটা সুন্দর গোছানো পরিবার।

মূসা আলাইহিস সালাম কিন্তু আল্লাহর কাছে এসবের কিছুই চাননি। তিনি না আশ্রয় চেয়েছেন, না চেয়েছেন সঙ্গী হিশেবে একজন স্ত্রী, অথবা মিলেমিশে থাকার জন্য কোনো পরিবার। তিনি স্রেফ বলেছেন— আপনি যে অনুগ্রহ আমাকে দেবেন, আমি তাতেই খুশি। নিজের ইচ্ছাকে নয়, মূসা আলাইহিস সালাম বরণ করে নিয়েছিলেন আল্লাহর ইচ্ছাকেই। আর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা হচ্ছেন আশ শাকুর তথা উত্তম বিনিময় দাতা। দাতা হিশেবে তাঁর চেয়ে উত্তম আর কেউ নেই। দেওয়া না-দেওয়ার ভারটা মূসা আলাইহিস সালাম ন্যস্ত করেছিলেন আল্লাহর ওপর। তিনি তাওয়াক্কুল করেছিলেন কেবল তাঁর প্রতিপালকের ওপর—দুনিয়ার আর কোনো সত্তার ওপর নয়। আর যারা কেবল আল্লাহর ওপরে তাওয়াক্কুল তথ্য নির্ভরশীল হয় তাদেরকে মহান রব কীভাবে রিক প্রদান করেন জানেন?

يرزقه من حيث لا تحتسب ومن يتوكل على التوفير

 حملة يَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ يَحْتَسِب

 “এবং (আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক প্রদান করবেন, যা সে কল্পনাও করতে পারে না। আর যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে, তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।

মুখ ফুটে কিছু না চাওয়ার পরেও মূসা আলাইহিস সালামকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কল্পনাতীত উৎস থেকে রিজিক প্রদান করেছেন। একটু আগেও তিনি ভাবতে পারেননি যে যে কন্যাদ্বয়ের বকরির পালকে তিনি পানি খাওয়াচ্ছেন, তাদের পিতা তাকে ঘরে ডেকে নিয়ে যাবেন, থাকার আশ্রয় দেবেন এবং কন্যাদের একজনকে তার সাথে বিয়ে দেবেন। রিক্ত হস্তে আসা একজন দেশান্তরীকে মুহূর্তের মধ্যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা পাইয়ে দিয়েছেন জীবনে বাঁচবার জন্য যা-কিছু দরকার, তার সবটাই। খানিক আগেও যা ছিলো কল্পনারও অতীত, খানিক বাদেই তা হয়ে উঠলো দিবালোকের ন্যায় বাস্তবতা। কী অসীম দয়া আমার রবের! কতো প্রাচুর্যময় তিনি!

মূসা আলাইহিস সালাম আমাদের শিখিয়েছেন—দুঃখ আর দুর্দশার দিনে অস্থিরচিত্ত না হয়ে, দিশেহারা না হয়ে আল্লাহর দিকে নিবিড়ভাবে ঝুঁকতে হয়। নিজেকে আরও বেশি করে ব্যাপৃত রাখতে হয় আল্লাহর স্মরণে। তাঁর সিদ্ধান্তকে মাথা পেতে মেনে নিতে হয় এবং সর্বাবস্থায় নির্ভর করতে হয় তাঁরই ওপরে।

দুনিয়াতে ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট নিয়ে ভূরিভূরি বই, লেকচার, আর্টিকেল আর তত্ত্বকথা পাওয়া যাবে। কিন্তু মূসা আলাইহিস সালামের এই একটা দুআকে যদি আপনি জীবনে ধারণ করতে পারেন, যদি ঘনঘোর বিপদের দিনেও আপনি সন্তুষ্টচিত্তে বলতে পারেন, ‘আমার রব! আমার প্রতি যে অনুগ্রহই আপনি করবেন, আমি তার-ই মুখাপেক্ষী’, বিশ্বাস করুন—এর চেয়ে ভালো কোনো ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্টের পাঠ দুনিয়ার কোথাও আপনি শিখতে পারবেন না।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment