গায়েব দুই প্রকারঃ (১) এক ধরনের গায়েব আছে, যা যুক্তি প্রমান ভিত্তিক অর্থাৎ প্রমাণাদি দ্বারা অনুভব করা যায় (২) আর এক ধরনের গায়েব আছে, যা দলিলের সাহায্যেও অনুভব করা যায় না । প্রথম প্রকারের গায়েবের উদাহরনঃ বেহেশত-দোজখ এবং আল্লাহ পাকের স্বত্বা ও গুনাবলী । এগুলো সম্পর্কে জগতের সৃষ্ট বস্তু ও কুরআনের আয়াতসমুহ দেখে জ্ঞান লাভ করা যায় । দ্বিতীয় প্রকারের গায়েবের উদাহরনঃ মহাপ্রলয় কখন সংঘঠিত হবে, মানুষ কখন মারা যাবে, স্ত্রীর গর্ভের সন্তান ভাগ্যবান না হতভাগা ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কিত জ্ঞান । এ গুলো সম্পর্কে দলিল প্রমানের সাহায্যেও জ্ঞান লাভ করা সম্ভবপর হবে না । এ দ্বিতীয় প্রকারের গায়েবকে মাফাতিহুল গায়েব বা অদৃশ্য জ্ঞান ভাণ্ডার বলে আখ্যায়িত করা হয় এবং এ ধরনের গায়েব সম্বন্ধে আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ
তিনি (আল্লাহ) তাঁর গায়বী বিষয়াদি সম্পর্কে কাহাকেও অবগত করান না, তবে তাঁর মনোনীত রসুলকে ( অদৃশ্য জ্ঞান দান করেন ) যাকে তিনি রসূল রুপে গ্রহন করে নিয়েছেন । )
তাফসীরে বায়যাবীতে بالغيب يؤمنون আয়াতটির ব্যখ্যায় বলা হয়েছে-
গায়েব শব্দ দ্বারা অদৃশ্য বিষয়কে বুঝানো হয়েছে, যা’ ইন্দ্রিয় সমূহের দ্বারা উপলব্দি করা যায় না ও সুস্পষ্টভাবে জ্ঞানানুভূতির আওতায় আসে না ।
তাফসীরে কবীরে সূরা বাকারার শুরুতে ওই একই আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখা হয়েছে –
সাধারণত তাফসীর কারকগনদের মতে গায়ব হল এমন বিষয় যা ইন্দ্রিয়সমূহ থেকে গোপন থাকে । অতঃপর গায়বকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়ঃ এক প্রকারের গায়ব হচ্ছে – সে সমস্ত অদৃশ্য বিষয়াদি, যেগুলো অবগতির জন্য কোনরুপ দলীল প্রমানের প্রয়োজন হয় না ।
তাফসীরে রুহুল বয়ানে সুরা বাকারার শুরুতে সেই আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে লিপিবদ্ধ আছে-
গায়ব হচ্ছে উহাই যা ইন্দ্রিয় ও জ্ঞানানুভূতি থেকে সম্পূর্ণরুপে এমনভাবে গোপন থাকে যে, কোন উপায়ে প্রথমদিকে স্পষ্টরুপে উপলব্দি করা যায় না । গায়ব দুই প্রকারঃ এক প্রকারের গায়ব হলো যার সম্পর্কে কোন প্রমান নেই । যেমন কুরআনের আয়াত عند مفاتيح الغيب ( আল্লাহর কাছেই রয়েছে গায়েবের চাবি সমূহ ) এ আয়াতে এ ধরনের গায়েবের কথাই বলা হয়েছে । অন্য প্রকারের গায়েব হচ্ছে- যার অবগতির জন্য দলীল প্রমাণ আছে । যেমন- আল্লাহ ও তাঁর গুনাবলী । بالغيب يؤمنون দ্বারা এগুলোর কথাই বলা হয়েছে ।
পাঠকগণের উপকারার্থে নিন্মের বিষয়টি উপস্থাপন করা হলো-
রং চোখ দ্বারা দেখা যায়, নাক দ্বারা ঘ্রান নেয়া হয়, মুখ দ্বারা স্বাদ ও কান দ্বারা স্বর অনুভব করা হয় । সুতরাং মুখ ও কানের জন্য রং হচ্ছে গায়ব অনুরুপ চোখের জন্য ঘ্রান হলো গায়ব । যদি কোন আল্লাহর প্রিয় বান্দা ঘ্রান ও স্বাদেকে বিশেষ আকৃতিতে সচক্ষে অবলোকন করেন, তবে এও আপেক্ষিক ইলমে গায়ব “ইলমে গায়েবে ইজাফি” হিসাবে গন্য হবে । যেমন কিয়ামতের দিন কৃতকর্ম সমূহ বিভিন্ন আকৃতিতে দেখা যাবে । যদি কেও সেগুলোকে ওই আকৃতিতে এখানেই ( এ জগতেই ) দেখে ফেলে, তবে তাও ইলমে গায়েব বা অদৃশ্য জ্ঞানের আওতায় পড়বে ।
হযরত গাউছে পাক রাদিয়াল্লাহু আনহু ফরমানঃ
এ জগতের কোন মাস বা কাল আমার কাছে এসে আমার অনুমতি না নিয়ে অতিবাহিত হয় না ।
এ রকম যা কিছু বর্তমানে মওজুদ বা আস্তিত্তবান না হওয়ার বা অনেক দূরে বা অন্ধকারে থাকার কারনে দেখা যায় না তাও গায়েব হিসাবে গন্য । এ সম্পর্কে জানাটাও অদৃশ্য জ্ঞান । যেমন হুজুর আলাইহি সালাম ভবিষ্যতে উদ্ভাবিত কিংবা আবিস্কৃত হবে- এমন বস্তূ সমূহ দেখেছেন বা হযরত উমর বাদিয়াল্লাহু আনহু মদীনা শরীফ থেকে নেহাওয়ান্দে অবস্থানরত হযরত সারিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু- কে দেখেছিলেন এবং স্বীয় আওয়াজ তাঁর কাছে পৌছে দিয়ে ছিলেন । অনুরুপ কেউ যদি পাঞ্জাবে বসে মক্কা মুয়াজ্জামা বা অন্যান্য দূরবর্তী দেশসমুহকে হাতের তালু দর্শনের মত স্পষ্টভাবে দেখতে পান, তবে তাও গায়েবের অন্তর্ভূক্ত হবে ।
উপকরন বা যন্ত্রপাতি সাহায্যে যেই সমস্ত অদৃশ্য বস্তুকে অবলোকন করা যায় , উহা ইলমে গায়েবের পর্যায়ে পড়ে না । যেমন যন্ত্রের সাহায্যে কোন মহিলার গর্ভস্থিত সন্তান সম্পর্কে জানা যায় বা টলিফোন ও রেডিও দ্বারা দূরের আওয়াজ শুনা যায় । এ গুলো ইলমে গায়েবের পর্যায়ে পড়ে না । কেননা গায়েবের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে যে, যা কিছু ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে অনুভব করা যায় না, তা’ই গায়েব । আর টেলিফোন ও রেডিও দ্বারা শ্রুত আওয়াজ ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে অনুভব করা যায় । যন্ত্রের সাহায্যে গর্ভবতীর শিশুর অবস্থা জানাও ইলমে গায়েব নয় ।
মোট কথা, যন্ত্রের ব্যবহারের ফলে যদি কোন অদৃশ্য বস্তু প্রকাশিত হয়ে যায় এবং প্রকাশিত হওয়ার পরেই আমরা উহার সম্যক ধারণা লাভে সক্ষম হই, তহলে উহা ইলমে গায়েবের পর্যায়ে পড়ে না । -সুত্রঃ জা’আল হক ১ম খন্ড-