ইলমে গায়ব সর্ম্পকে হাদীস ব্যাখ্যাকারীদের উক্তি সমূহের বিস্তারিত আলোচনা। পার্ট-08

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

(১) ‘আইনী শরহে বুখারী’, ফতহুলবারী, ইরশাদুস সারী শরহে বুখারী, মিরকাত শরহে মিশকাত প্রভূতি গন্থে আলোচ্য অধ্যায়ের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে উল্লেখিত ১নং হাদিসের প্রেক্ষাপটে লিখা হয়েছে-

فِيْهِ دَلَالَةٌ عَلى اَنَّهُ اَخْبَرَ فِى الْمَجْلِسِ الْوَاحِدِ بِجَمِيْعِ اَحْوَالِ الْمَخْلُوْقَاتِ مِنْ اِبْتَدَاءِهَا اِلى اِنْتِهَائِهَا

(এ হাদিছ থেকে বোঝা গেল যে একই অবস্থানে হুযুর আলাইহিস সালাম সৃষ্টিকুলের আদ্যোপ্রান্ত যাবতীয় অবস্থার খবর দিয়েদিলেন) ।
(২) মিরকাত শরহে মিশকাত ‘শরহে শিফা’ মোল্লা আলী কারী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) রচিত ‘যুরকানী শরহে মওয়াহেব’ ও নসিমুর রিয়ায শরহে শিফা প্রভৃতি ব্যাখ্যা গ্রন্থ সমূহে ৪নং হাদীছের ব্যাখ্যায় লিখা হয়েছেঃ-

وَحَاصِلُهُ اَنَّهُ طُوِىَ لَهُ الْاَرْضَ وَجَعَلَهَا مَجْمُوْعَةً كَهَيْئَةِ كَفٍّ فِيْهِ مِرْءَةٌ يَنْظُرُ اِلى جَمْعِهَا وَطَوَاهَا بِتَقْرِيْبِ بَعِيْدِهَا اِلى قَرِيْبِهَا حَتَّى اِطَّلَعْتُ عَلى مَافِيْهَا

অর্থাৎঃ এ হাদীছের সারমর্ম হচ্ছেঃ হুযুর আলাইহিস সালামের জন্য পৃথিবীকে সঙ্কুচিত করে দেয়া হয় এবং এমনভাবে একত্রিত করে দেয়া হয় যেন কেউ এক হাতে আয়না নিয়ে সম্পূর্ণ আয়নাকে দেখছেন। যমীনকে এমনভাবে একত্রিত করে দেয়া হয় যাতে দূরবর্তী অংশ নিকটবর্তী অংশের একেবারে কাছাকাছি দৃষ্টিগোচর হয়। ফলে পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবকিছুই তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) দেখতে পেয়েছেন।
(৩) মিরকাত শরহে মিশকাত-এ ৫নং হাদীছের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে লিখা হয়েছে- এ ফয়েয প্রাপ্তির দরুণ আমি আসমান যমীনের মধ্যে যা কিছু আছে সবকিছুই জেনে নিয়েছি। অর্থাৎ আসমান যমীনের ফিরিশতাকূল গাছ-পালা ও অন্যান্য যা কিছু মহান আল্লাহ জ্ঞাত করিয়েছেন সবই জেনে নিয়েছি। এটা হচ্ছে তার (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) সেই ব্যাপক জ্ঞানের বর্ণনা যা আল্লাহ তা’আলা তার কাছে ব্যক্ত করেছেন। ইবনে হাজর (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) জেনে নিয়েছেন সমস্ত সৃষ্টি যা আসমান সমূহে বরং যা আসমানের উপরেও রয়েছে। (এ তথ্য মিরাজের বর্ণনা সম্বলিত হাদীছ থেকে জানা যায়) এবং জেনে নিয়েছেন যা কিছু পৃথিবীতে আছে এবং সে সমস্ত বস্তুও যা পৃথিবীর ৭টি স্তরেই বরং আরো নিচে রয়েছে। একথা সে সমস্ত হাদীছ থেকে বোঝা যায় যেগুলোতে এমন গাভী ও মাছের অস্তিত্বের কথা বলা হয়েছে যা’র উপর পৃথিবীর স্তরসমূহ  স্থিতাবস্থায় রয়েছে।
আশয়াতুল লুময়াত শরহে মিশকাত গ্রন্থে উপরোক্ত ৫নং হাদীছের ব্যাখ্যায় লিখা হয়েছেঃ- এ হাদীছে তার বিশিষ্ট ও সামগ্রিক জ্ঞান অর্জনের ও উহার পরিব্যাপ্তির কথা বলা হয়েছে।
(৪) আশয়াতুল লুময়াত শরহে মিশকাতে ৭নং হাদীছ সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ- আমার কাছে প্রত্যেক ধরনের জ্ঞান প্রতিভাত হয়েছে এবং আমি সবকিছুই জেনে নিয়েছি।
আল্লামা যুরকানী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) শরহে মওয়াহেব গ্রন্থে উক্ত ৭নং হাদীছের ব্যাখ্যায় বলেছেনঃ- আমার সামনে দুনিয়াকে প্রতিভাত করা হয়েছে, উন্মুক্ত করে  দেয়া হয়েছে যার ফলে আমার দৃষ্টি উহার সমস্ত বস্তুকে পরিবেষ্টন করেছে। সুতরাং আমি পৃথিবীকে এবং যা কিছু কিয়ামত পর্যন্ত এ পৃথিবীতে হবে এমনভাবে দেখতে পেয়েছি যেমনিভাবে আমার এ হাতকে দেখতে পাচ্ছি। এখানে একথারই ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে যে, হুযুর আলাইহিস সালাম বাস্তবরূপেই দেখেছেন। অতএব এ কথা আর বলা চলবে না যে نظر (নযর) শব্দ বলতে জ্ঞানকে বোঝানো হয়েছে।
(৫) ইমাম আহমদ কুসতলানী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) তার মওয়াহেব শরীফে ৮নং হাদীছের ব্যাখ্যায় বলেছেন- এতে কোন সন্দেহ নেই যে, আল্লাহ তা’আলা হুযুর আলাইহিস সালামকে এর থেকে (৮নং হাদিছে বর্ণিত বিষয় সমূহ) আরও অধিক বিষয়ে অবহিত করেছেন এবং তাকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) পুর্ববর্তী ও পরবর্তী সবার জ্ঞান দান করেছেন।
হযরত মোল্লা আলী কারী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) ১৭নং হাদীছ সম্পর্কে বলেনঃ-

يُخْبِرُ كُمْ بِمَا مَضى اَىْ سَبَقَ مِنْ خَبْرِ الْاَوَّلِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَمَاهُوَ كَائِنٌ بَعْدَكُمْ اَىْ مِنْ نَبَاءِ الْاخِرِيْنَ فِىْ الدُّنْيَا وَمِنْ اَحْوَالِ الْاَجْمَعِيْنَ فِى الْعُقْبى

(হুযুর আলাইহিস সালাম তোমাদেরকে পূর্ববর্তী লোকদের অতীত ঘটনাবলীর সংবাদ দিচ্ছেন তোমাদের পরবর্তী লোকদের খবর দিচ্ছেন অর্থাৎ ইহকালীন পরকালীন যাবতীয় বিষয়ের সংবাদ পরিবেশন করছেন।)
(৬) মিরকাতে ১৯নং  হাদীছ পসঙ্গে লিখা হয়েছেঃ-

فِيْهِ مَعَ كَوْبِه مِنَ الْمُعْجِزَاتِ دَلَالَةٌ عَلى اَنَّ عِلْمَهُ عَلَيْهِ السَّلَامُ مُحِيْطٌ بِالْكُلِّيَاتِ وَالْجُزْئِيَاتِ مِنَ الْكَائِنَاتِ وَغَيْرِهَا

(এ হাদীছের মধ্যে প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) এর মুজিযার উপলব্ধির সাথে সাথে এ কথাও বোঝা যায় যে, হুযুর আলাইহিস সালামের জ্ঞান সৃষ্টির যাবতীয় বিষয়কে এককভাবে ও সামগ্রিকরূপে পরিবেষ্টন করে রয়েছে।)
হাদীছবেত্তাগণের এসব ইঙ্গিত থেকে বোঝা গেল যে, হুযুর আলাইহিস সালাম সমস্ত জগতকে এবং এতে সৃষ্টির প্রথম দিন থেকে অনন্তকাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিতব্য যাবতীয় বিষয়কে এমনভাবে অবলোকন করছিলেন যেমনভাবে কেউ নিজ হাতে আয়না নিয়ে আয়নাতে তাকাচ্ছেন। উল্লেখ্য যে লওহে মাহফুজও জগতের অন্তর্ভুক্ত।
দ্বিতীয়তঃ এও জানা যায় যে, সমস্ত পূর্ববর্তী ও পরবর্তী জ্ঞানীদের অর্থাৎ আম্বিয়া কিরাম ফিরিশতা ও আওলিয়ার জ্ঞান তাঁকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) দান করা হয়েছে। নবীগণের মধ্যে হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) হযরত ইব্রাহীম খলীল (রহমতুল্লাহে আলাইহে) ও হযরত খিযির (আলাইহিস সালাম) ও অন্তর্ভুক্ত আছেন। আর ফিরিশতাদের মধ্যে আরশ বহনকারী ও লওহে মাহফুজের দায়িত্বে নিয়োজিত ফিরিশতাগণও অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন, যাদের জ্ঞান যা হয়েছে ও যা হবে ইত্যাদি বিষয়ে পরিব্যাপ্ত। তাহলে হুযুর আলাইহিস সালামের জ্ঞানের পরিব্যাপ্তি সম্পর্কে কোন প্রশ্ন করার কোন অবকাশ আছে কি? তার (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) জ্ঞানের সুবিস্তৃত পরিধির মধ্যে পঞ্চ عُلُوْمِ خَمْسَة  জ্ঞানও অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে। -সূত্রঃ জা’আল হক ১ম খন্ড-

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment