ইয়াজিদকে লানত দেয়া যাবে কি?

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

ইয়াজিদকে লানত দেয়া প্রসঙ্গেঃ

বিখ্যাত হাম্বলী আলেম ও ইতিহাসবিদ আল্লামা আবদুর রহমান ইবনুল জওযী (৫১০-৫৯৭) এর লেখা তাঁর ঐতিহাসিক
الرد على المتعصب العنيد المانع من ذم يزيد নামের কিতাবে তিনি বর্ণনা করেছেনঃ

إن الإمام أحمد لما سأله ولده عبد الله عن لعن يزيد قال: كيف لا يلعن من لعنه الله تعالى في كتابه؟ فقال عبد الله قد قرأت كتاب الله عز وجل فلم أجد فيه لعن يزيد؟ فقال الإمام: أن الله تعالى يقول : فهم عسيتم إن توليتم أن تفسدوا في الأرض وتقطعوا أرحامكم . أولئك الذين لعنهم الله [سورة محمد ، الآية رقم 23] وأي فساد وقطيعة أشد مما فعله يزيد. [روح المعاني – سورة محمد – تفسير الآية رقم ( 23 ) – الجزء : ( 17)].

অর্থঃ ইমাম আহমদকে তাঁর ছেলে আবদুল্লাহ যখন এজিদকে লানত করার কারণ জিজ্ঞেস করলো, তখন তিনি বললেন, ‘যাকে আল্লাহ তাঁর কিতাবে লানত করেছেন, তাকে কেন লানত করা হবে না?’ তখন আবদুল্লাহ বললো, আমিতো আল্লাহর কিতাব পড়েছি। তবে তাতে এজিদকে লানতের কথা পাইনি। তখন ইমাম আহমদ বললেন, ‘আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা কি এটার নিকটবর্তী হয়েছো যে, ক্ষমতাসীন হলে জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করবে এবং রক্তের সম্পর্ক ছিন্ন করবে? বস্তুত ওরা সেসব লোক, যাদেরকে আল্লাহ লানত করেছেন।” তো এজিদ যা করেছে, তার চেয়ে বড় ফাসাদ ও রক্তের সম্পর্ক ছিন্নকরণ আর কি হতে পারে?

প্রসঙ্গত,
★ আল্লামা দুমাইরীর হায়াতুল হায়াওয়ান, খন্ড- ২, পৃষ্ঠা- ১৭৫
★ বিখ্যাত হানাফী মুফাসসির আল্লামা আলুসী বাগদাদী (রহঃ) তাঁর রচিত তাফসীর ‘রুহুল মাআনী’তে সূরা মুহাম্মদের ২৩ নম্বরে আয়াতের তাফসীরেও ইমাম আহমদের উপরোক্ত বক্তব্যটি এনেছেন।


এবার আসুন এজিদকে লানত দেওয়া জায়েয ও উচিত বলেছেন এমন সালাফ ও খলফদের নাম শুনিঃ

১. ইমাম আবু হানীফা (দ্রষ্টব্যঃ আল্লামা দুমাইরীর হায়াতুল হায়াওয়ান, খন্ড- ২, পৃষ্ঠা- ১৭৫)
২. ইমাম মালেক বিন আনাস (দ্রষ্টব্যঃ ঐ)
৩. ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (দ্রষ্টব্যঃ ঐ এবং ইবনে কাছীরের আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়া, খন্ড- ৮, পৃষ্ঠা- ২২৩)
৪. কাজী আবু ইয়ালা হাম্বলী (দ্রষ্টব্যঃ ঐ)
৫. কাজী আবুল হুসাইন হাম্বলী (দ্রষ্টব্যঃ ঐ)
৬. আবুল ফরজ ইবনুল জওযী (দ্রষ্টব্যঃ তাঁর লিখিত ‘আর-রদ্দু আলাল মুতআচ্ছিবিল আনীদ আল-মানে মিন যম্মি ইয়াযীদ)
৭. ইবনে আকীল হাম্বলী (দ্রষ্টব্যঃ সিবত ইবনুল জওযীর তাযকিরাতুল খওয়াছ, পৃষ্টা- ২৬১)
৮. আল্লাম সাদুদ্দীন তাফতাজানী (দ্র্ষ্টব্যঃ শরহুল আকায়িদিন নাসাফিয়া, পৃষ্ঠা- ১৮১)
৯. হাফিজুদ্দীন আল-কুরদী আল-হানাফী (দ্রষ্টব্যঃ মানাভীর ফয়যুল কদীর, খন্ড- , পৃষ্ঠা- ২৬৫)
১০. কিওয়ামুদ্দীন আছ-ছফারী (দ্রষ্টব্যঃ ঐ)
১১. আল-মাওলা ইবনুল কামাল (দ্রষ্টব্যঃ ঐ)
১২. আল্লামা শাওকানী (দ্রষ্টব্যঃ তাঁর স্বরচিত নাইলুল আউতার, খন্ড- ৭, পৃষ্ঠা- ৩৬২)
১৩. আল্লামা আলুসী হানাফী (দ্রষ্টব্যঃ তাঁর স্বরচিত রূহুল মাআনী, খন্ড-২৬, পৃষ্ঠা- ৭৩)
১৪. আল্লামা আহমদ ছিদ্দীক আল-গুমারী (দ্রষ্টব্যঃ তাঁর স্বরচিত জুনাতুল আত্তার. খন্ড- ২, পৃষ্ঠা- ১৫৪)।


এজিদের রাজাগারির শুরু-শেষঃ

এ ব্যাপারে আল্লামা যাহাবী বলেছেনঃ
افتتح دولته بمقتل الشهيد الحسين ، واختتمها بواقعة الحرة ، فمقته الناس، ولم يبارك في عمره . وخرج عليه غير واحد بعدالحسين . كأهل المدينة قاموا لله … وابن الزبير بمكة.
অর্থ: ‘এজিদ তার রাজত্ব শুরু করেছিল শহীদ হুসাইনকে হত্যা করার মাধ্যমে, আর তার রাজত্বের সমাপ্তি হারার ঘটনার (মদীনায় গণহত্যা) মাধ্যমে। সুতরাং লোকজন তাকে অপছন্দ করে। তার হায়াতে বরকত হয়নি (৪০ বছরের আগেই ধ্বংস হয়েছে)। হুসাইনের পর তার বিরুদ্ধে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে লড়তে অনেকেই বের হয়েছেন, যেমন মদিনাবাসী (মদীনাতে), আবদুল্লাহ বিন যুবাইর মক্কাতে।’ [যাহাবী রচিত সিয়ারু আলামিন নুবালা, খ- ৪, পৃ- ৩৮]


এজিদকে আমীর বলার শাস্তিঃ

যাহাবী আরো লিখেছনঃ
عن نوفل بن أبي الفرات ، قال : كنت عند عمر بن عبد العزيز فقال رجل : قال أمير المؤمنين يزيد ، فأمر به فضرب عشرين سوطا.
অর্থ: ‘নওফাল বিন ফুরাত বলেন, আমি উমর ইবন আবদুল আযিযের সাথে ছিলাম । তখন এক ব্যক্তি এজিদের ব্যাপারে বললো, ‘আমিরুল মুমিনিন ইয়াযিদ।’ এটি শুনে উমর ইবন আবদুল আযিয সে লোককে বিশটি চাবুক মারতে আদেশ দিলেন।’
[যাহাবী রচিত সিয়ারু আলামিন নুবালা, খ- ৪, পৃ- ৩৯]

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment