ডঃ আব্দুল বাতেন মিয়াজী
الحمدلله رب العالمين والصلاة والسلام على سيدنا محمد رسوله الكريم
কারবালার প্রান্তরে পবিত্র আশুরার দিবসে ইমাম হুসেইন (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’লা আনহু) এর শাহাদাত দ্বারা ৪টি জিনিস প্রমাণিত হয়! যথাঃ
১। নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নূর
২। তিনি (দঃ) হায়াতুন্নবী
৩। তিনি (দঃ) হাজের-নাজের এবং
৪। তাঁর (দঃ) ইলমে গায়েব রয়েছে
নিচে সহীহ হাদিসগুলো পর্যবেক্ষণ করলে আমরা উপরোক্ত বিষয়গুলোর প্রমাণ পাই।
প্রথম হাদীসঃ
————
মিশকাত শরীফে উল্লেখ রয়েছে, ইবনে আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি আশুরার দিন দুপুরে শুয়ে ছিলাম। হঠাৎ দেখি রাসূল (দঃ) অত্যন্ত শোকাহত, তার চুলগুলো উসকো খুসকো। এমতাবস্থায় একটি রক্তভরা শিশি নিয়ে তিনি উপস্থিত। আমি জিজ্ঞেস করলাম, “ইয়া রাসূল্লাল্লাহ! এই রক্ত কিসের?” নবীজী (দঃ) বললেন, “এইমাত্র হুসাইন এবং তার সাথীদের রক্ত কারবালার মাটিতে পড়েছে, আমি উঠিয়ে নিয়ে এসেছি। হাশরের দিন আমি এই রক্ত নিয়ে বিচার চাইব।” ইবনে আব্বাস রাঃ বলেন, “এরপর আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। আমি তারিখটা স্মরণ রাখলাম। পরে জানতে পারলাম যে, নবীজী (দঃ) যে সময় রক্তের শিশি হাতে নিয়ে আমার সামনে এসেছিলেন, ঠিক সেই সময় হযরত হুসাইন রাঃ কারবালায় শাহাদত বরণ করেছেন।”
(মুসনাদে আহমাদ বিন হাম্বাল- হাদিস নং ২১৬৫, তিরমিজী- হাদিস নং ১৬৪০। হাদিটির সনদ সাহীহ)
দ্বিতীয় হাদীসঃ
————–
উম্মে সালামা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) থেকেও অনুরূপ একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। হাদিসটি নিম্নরূপঃ
ইমাম তিরমিযী রহঃ বর্ণনা করেন- উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মে সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, একদা আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপস্থিত হয়েছেন। তাঁর চুল-দাঁড়ি মুবারকে মাটি লেগে রয়েছে। জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ! আপনার এই অবস্থা কেন? তিনি বললেন, হযরত ইমাম হুসাইনকে শহীদ করার সময় আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম।
[তিরমিজী-হাদিস নং ১৬২৭]
অন্য আরেক রেওয়াতে এসেছে যে, রাসুল্লুল্লাহ দঃ উম্মে সালামা রাঃ কে কারবালার এক বোতল মাটি দিয়ে বলেছিলেন যে, যেদিন এই মাটি লাল রঙ ধারণ করবে, সেদিন হুসেইন শাহাদাৎ বরণ করবে। উম্মে সালামা রাঃ উপরোক্ত স্বপ্ন দেখার পর তাঁর ঘরে রাখা মাটির বোতলের দিকে নজর দিয়ে দেখেন তা লাল রঙ ধারণ করেছে। তখন তিনি নিশ্চিত হলেন যে ইমাম হুসেইন রাঃ শাহাদাৎ বরণ করেছেন।
২৪ দিন পরে মদীনাতে কারবালার নৃশংস ঘটনার খবর এসে পৌঁছলে তাঁদের দুজনের স্বপ্ন সত্য বলে প্রমাণিত হয়। যেহেতু শয়তান রাসুলে পাকের আকৃতি ধারন করতে পারেনা আর স্বপ্নে কেউ রাসুল (দঃ) কে দেখলে সে সত্যিই তাঁকে দেখল।
এ হাদিস দুটি দ্বারা ৪ টি জিনিস প্রমাণিত হয়।
————————————————
১। রাসুল (দঃ) হায়াতুন নবী। ওহাবীদের মতে তিনি মরে মাটির সাথে মিশে গিয়ে থাকলে কারবালায় উপস্থিত হতে পারতেন না।
“হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল (দঃ) ইরশাদ করেছেন – নবীরা কবরে জীবিত। আর তারা সেখানে নামায পড়েন।” {মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৬৮৮৮, মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-৩৪২৫, সহীহ কুনুযুস সুন্নাতির নববিয়্যাহ, হাদীস নং-২২}
“হযরত আবু দারদা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল (দঃ) ইরশাদ করেছেন – তোমরা জুমআর দিন বেশি বেশি করে দুরুদ পড়। নিশ্চয় ফেরেস্তারা এর উপর স্বাক্ষ্যি থাকে। আর যখন কেউ আমার উপর দুরুদ পড়ে তখনই তা আমার নিকট পেশ করা হয়। আবু দারদা রাঃ বলেন – আমি জিজ্ঞাসা করলাম – মৃত্যুর পরেও কি তা পেশ করা হবে? উত্তরে তিনি বললেন – হ্যাঁ!, কেননা আল্লাহ তায়ালা জমিনের জন্য নবীদের দেহ ভক্ষণ করা হারাম করেদিয়েছেন।” {ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৬৩৭, ১৬৩৬, সুনানুস সাগীর লিল বায়হাকী, হাদীস নং-৪৬৯, আল মুজামুল আওসাত, হাদীস নং-৪৭৮০, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-১৫৭২, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৩৪৮৫, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৫৭৫৯}
২। রাসুল (দঃ) আশুরার দিন স্বশরীরে কারবালার ময়দানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি হাজের ও নাজের।
৩। তিনি কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনা সম্পর্কে জানতেন, কাজেই তাঁর ইলমে গায়েব রয়েছে, আল্লাহ তাঁকে সব জানান যেমনটি পবিত্র কুরানে এসেছে।
“আর আল্লাহ্ আপনার প্রতি কিতাব ও হেকমত নাযিল করেছেন এবং আপনি যা জানতেন না – তা আপনাকে শিখিয়েছেন। কেননা, আপনার প্রতি আল্লাহর অপরিসীম করুণা রয়েছে” (সূরা নিসা: ১১৩)।
“আর তিনি (নবী) গায়েবের ব্যাপারে কৃপণ নন”(সূরা তাকভীর: ২৪)।
“তিনি অদৃশ্যের জ্ঞানী। পরন্ত তিনি অদৃশ্য বিষয় কারও কাছে প্রকাশ করেন না। তাঁর মনোনীত রসূল ব্যতীত” (সুরা জীন ২৬-২৭)।
৪। তিনি নূরের তৈরি। আর এ কারনেই তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়েছে মুহূর্তের মধ্যে মদীনা থেকে কারবালা গিয়ে আবার ফিরে আসা। (তোমাদের কাছে একটি উজ্জল জ্যোতি [হযরত মুহাম্মাদ সা] এসেছে এবং একটি সমুজ্জল গ্রন্থ।সুরা মায়েদা ১৫।