ইমাম হুসাইন (রা:)-এর শাহাদাত বরণের জন্য এয়াযীদের জরিত ছিল
এয়াযীদ কি ইমাম হুসাইন (রা:)-কে শহীদ করার জন্যে তার সৈন্যদের হুকুম দিয়েছিল? কেন দিয়েছিল? সে কি জানতো না যে হযরত ইমাম (রা:) আমাদের মহানবী (দ:)-এর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র? সে কি তাহলে এর জন্যে দায়ী নয়?
জবাব
এ সব প্রশ্নের উত্তরের দুটি অংশ রয়েছে: প্রথমতঃ আমাদের প্রমাণ করতে হবে এয়াযীদ-ই তার সৈন্যদের আদেশ দিয়েছিল ইমাম হুসাইন (রা:)-কে হত্যা করার জন্যে। দ্বিতীয়তঃ হযরত ইমাম (রা:) মহানবী (দ:)-এর প্রিয় দৌহিত্র, এ বিষয়টি জানা সত্ত্বেও এয়াযীদ কীভাবে এটি করতে পারলো তা নিয়ে আলোচনা করবো।
১/ – ইমাম হুসাইন (রা:)-কে শহীদ কারা করেছিল?
হযরত ইমাম (রা:)-কে এয়াযীদ-ই যে হত্যা করেছিল, তা স্পষ্ট ব্যাখ্যা করতে এ কথা বলার প্রয়োজন নেই যে সে সরাসরি গিয়ে নিজ হাতে হত্যা করেছিল; বরং তারই অধীনস্থ রাজন্যবর্গ তার নির্দেশ মোতাবেক এই পাপকার্য সংঘটন করে। আরেক কথায়, উবায়দউল্লাহ ইবনে যিয়াদ, উমর ইবনে সাআদ ও শিমর ইবনে যিল-জওশানের তরবারি দ্বারা এয়াযীদ হযরত ইমাম হুসাইন (রা:)-কে শহীদ করে।
এই প্রসঙ্গে ইসলামী উলামাবৃন্দের কিছু উদ্ধৃতি এখানে তুলে ধরা হলো:
ইমাম আল-যাহাবী লেখেন, “ইমাম হুসাইন (রা:) কুফা অভিমুখে রওয়ানা দেন। এমতাবস্থায় এয়াযীদ কুফার শাসক উবায়দউল্লাহ ইবনে যিয়াদকে পত্র লেখেন এই মর্মে যে, ইমাম হুসাইন (রা:) কুফার দিকে যাচ্ছেন এবং বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে তোমার নগরীকে বেছে নিয়েছেন; আর এটি তোমার শাসনকালের মধ্যে পড়েছে। আর তুমিও আমার মনোনীত প্রতিনিধিদের একজন। অতএব, নিজেকে মুক্ত করো, নতুবা দাসত্ব বরণ করো। এই পত্রের ফলশ্রুতিতে ইবনে যিয়াদ ইমাম সাহেব (রা:)-কে শহীদ করে এবং তাঁর কাটা শির মোবারক এয়াযীদের কাছে পাঠায়।
ইমাম সৈয়ুতী (রহ:) লেখেন, এয়াযীদ তার প্রাদেশিক শাসনকর্তা উবায়দউল্লাহ ইবনে যিয়াদকে ইমাম হুসাইন (রা:)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার এবং তাঁকে শহীদ করার অাদেশ দেয়। [তারিখুল খোলাফা, ১৯৩ পৃষ্ঠা, দারুল ফিকর, বৈরুত সংস্করণ]
আলী ইবনে আসীর নিজ ‘আল-কামিল ফীত্ তারিখ’ পুস্তকে বর্ণনা করেন যে ইবনে যিয়াদ মুসাফি ইবনে শারিহকে এক পত্রে লেখেছিল, আমি হুসাইন (রা:)-কে হত্যা করেছি, কেননা তাঁকে মারার বা আমার নিজেকে মারার এই দুটি পথের মধ্যে একটিকে বেছে নেয়ার স্বাধীনতা আমাকে দেয়া হয়েছিল। আমি হুসাইন (রা:)-কে হত্যা করি।
সিবত্ ইবনে জাওযীর ’তাযকেরাতুল খাওয়াস’ পুস্তকের ১৪৮ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, যখন নবী-বংশের সদস্যবৃন্দকে বন্দী করে সিরিয়ায় নিয়ে আসা হলো, তখন এয়াযীদ বল্লো, “উটের পালকিতে চড়ে যবে বন্দীরা এলো, একটি কাক কা কা রবে ডেকে উঠলো (আরবে অশুভ লক্ষণ)। আমি বল্লাম, ওহে কাক, ডাকো আর না-ই ডাকো, আমি মহানবী (দ:)-এর ওপর প্রতিশোধ নিতে পেরেছি কো।”
এয়াযীদ কেন ইমাম হুসাইন (রা:)-কে হত্যা করলো?
এয়াযীদ ভালভাবেই জানতো ইমাম হুসাইন (রা:) আমাদের মহানবী (দ:)-এর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র, যাঁকে তিনি খুবই আদর করতেন। কিন্তু সে তো ছিল না কোনো ঈমানদার এবং তার বেঈমানী সম্পর্কে সবাই জানতেন। মহান হাম্বলী আলেম আবূল ফারাজ ইবনে আল-জাওযী নিজ আল-রাদ্দ আলাল মুতা’আসসিব আল-আনিদ কেতাবে এয়াযীদের কিছু দ্বিচরণ পংক্তি উদ্ধৃত করেন:
”যদি মোহাম্মদ (দ:)-এর ধর্মে মদ্যপান হয় নিষিদ্ধ,
তবে তা হতে দাও,
আমি গ্রহণ করে নেবো খৃষ্টধর্ম।”
”এই দুনিয়া-ই একমাত্র, এরপর আর কিছু নেই,
তাই দুনিয়ার আনন্দ-ফূর্তি থেকে রবো না বঞ্চিত।”
এয়াযীদ যে মদ্যপান করতো, তার প্রমাণ রয়েছে ইবনে আল-এমাদ কৃত ‘শাতারাত আল-তাহাব’ (৩য় খণ্ড, ১৭৯ পৃষ্ঠা) ও আলী ইবরাহীম হাসান প্রণীত ‘তারিখ আল-ইসলাম আল-আম (৩য় সংস্করণ, ২৭০ পৃষ্ঠা) গ্রন্থগুলোতে। এ কথা বলা হয় যে মদ্যপান অন্যান্য পাপের চাবিকাঠি। এয়াযীদ অন্যান্য পাপকর্মেও লিপ্ত ছিল। এ ব্যাপারে তার তো কোনো অনুশোচনা ছিলই না, বরং সে এ আচরণকে সম্মান মনে করতো।




Users Today : 363
Users Yesterday : 759
This Month : 5397
This Year : 177268
Total Users : 293131
Views Today : 6679
Total views : 3461790