মূল: আ’ল ও আসহাব (রা.)-এর পক্ষে জবাব ওয়েবসাইট
বঙ্গানুবাদ: এডমিন
এই লেখাটিতে আমরা বিশ্লেষণ করবো শিয়াদের এ দাবি, “আমরা ইমাম আল-হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর শাহাদাতের জন্য কান্নাকাটি করেছি, কারণ মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইমাম আল-হুসাইন (আ.)-এর জন্য কেঁদেছিলেন।” কেননা তাদের এটা একটা ভণ্ডামিপূর্ণ দাবি। আর এটা প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’এর শিক্ষার পরিপন্থীও।
আমরা নিবন্ধটি নিম্নলিখিত বিভাগে বিভক্ত করেছি:
১/ ইনতিক্বালপ্রাপ্ত ব্যক্তির জন্য তিন (৩) দিনের বেশি শোক পালন করা হারাম।
২/ কারো ইনতিক্বালে মাতম/বিলাপ করা নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক নিষিদ্ধ হয়েছিলো।
৩/ স্পষ্টীকরণ: কান্না করা মাতম তথা বিলাপ নয়।
৪/ রাসুল (দ.) অন্যদের জন্যও কেঁদেছিলেন, তাহলে আপনি কেন তাঁদের জন্য কাঁদেন না? কেন এ ডাবল স্ট্যান্ডার্ড/দ্বিমুখো নীতি?
৫/ ইনতিক্বালপ্রাপ্তদের প্রশংসা করা এবং সেই উদ্দেশ্যে জমায়েত করার হুকুম কী?
১/ – ইনতিক্বালপ্রাপ্ত ব্যক্তির জন্য তিন (৩) দিনের বেশি শোক পালন করা হারাম:
শিয়া লেখক ইয়াসের আল-মাদানী নিজের একটি প্রবন্ধে লেখেন:
আমরা ইমাম আল-হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর জন্য কান্নাকাটি করি, কারণ ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাই করেছিলেন। প্রতি বছর আমরা কারবালার ময়দানে আহলে বাইত (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম) যে অন্যায়ের শিকার হয়েছিলেন তার জন্য শোক ও কান্নার মাধ্যমে কারবালার বাণীকে পুনরুজ্জীবিত করি এবং জারি রাখি।
জবাব:
এটা সত্য যে হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন ইমাম হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর শাহাদাতের খবর পেয়েছিলেন তখন তিনি কেঁদেছিলেন; তবে এটাকে মহর্রম মাসে বা আশুরার দিন (মুহার্রমের ১০ তারিখ), নির্দিষ্টভাবে প্রতি বছর শোক পালন করার প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করা, একই নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর শিক্ষার পরিপন্থী। এমন কোনো প্রমাণ নেই যে প্রিয়নবী (সাঃ), ইমামে আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু), হযরত ফাতিমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) কিংবা সালাফ-মণ্ডলী (রহ.) ইমাম হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর শাহাদাতের খবর পাওয়ার পর প্রতি বছর আশুরা বা মহর্রমে শোক পালন করেছেন।
মুসলমান হিসেবে আমাদের জন্য এটা বিশ্বাস করা গুরুত্বপূর্ণ যে ইসলামকে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সবচেয়ে ভালো বুঝেছিলেন এবং তাঁর বেসাল শরীফের পরে তাঁর সাহাবাবৃন্দ ও তাঁদের পাশাপাশি আহলে বাইতমণ্ডলী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু আজমাঈন)-ও ভালো বুঝেছিলেন।। এমন কিছুকে ইসলামের অংশ বানিয়ে তাঁদেরকে ছাড়িয়ে যাওয়া অনুচিত, যা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অথবা তাঁর সাহাবা (রা.) কিংবা তাঁর আহলে বাইতের (রা.) কোনো ধারণা ছিল না। অর্থাৎ, মহর্রম মাসে বা আশুরায় (মহর্রমের ১০ তারিখ) বাৎসরিক শোক পালন করা এবং কালো বা ছেঁড়া কাপড় পরিধান করা, আর দুঃখ-শোক প্রকাশ করার জন্য এটাকে শোকের দিন হিসেবে গণ্য করা, উপরন্তু নিষিদ্ধ অতি প্রশংসাপূর্ণ স্তব পাঠ করা (লাতমিয়া/নওহা) এবং এটাকে শোকের দিন হিসেবে বিবেচনা করে সুগন্ধি ব্যবহার এড়িয়ে চলা, বা মহিলারা শোক দিবস হিসেবে বিবেচনা করে সৌন্দর্যবর্ধন এড়িয়ে চলা, ইত্যাদি।
যা স্পষ্ট করা দরকার তা হলো, কাঁন্না একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া এবং কেউ তখনই তাঁর প্রিয়জনের জন্য অশ্রু ফেলতে পারেন যখন তাঁরা তাঁদেরকে ’মিস’ করেন বা তাঁরা তাঁদের সাথে সম্পর্কিত একটি আবেগপূর্ণ মুহূর্ত স্মরণ করেন। এমন পরিস্থিতিতে তাঁদের আবেগের উপর কারো নিয়ন্ত্রণ থাকে না এবং এটা যে কোনো সময় যে কারো ঘটতে পারে। অতএব, কেউ যদি কারবালার মর্মান্তিক ঘটনার কথা স্মরণ করে ইমাম হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর জন্য অশ্রু ঝরান, বা মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিংবা অন্য কোনো সাহাবী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর বেসালপ্রাপ্তির কথা স্মরণ করে কান্নাকাটি করেন, তাহলে তা একেবারেই ঠিক, আর এই পরিস্থিতি বছরের যেকোনো সময়ে ঘটতে পারে ইমাম হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর সাথে একজন ব্যক্তির আত্মিক ঘনিষ্ঠতার উপর নির্ভর করে। আমি মুসলমানদেরকে ঈদের দিনে চোখের জল ফেলতে দেখেছি এ কারণে যে, তাঁদের প্রিয়জনরা আজ বেঁচে থাকলে কীভাবে ঈদ উপভোগ করতেন তা স্মরণ করে। আর এ সবই ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক সঠিক ও গ্রহণযোগ্য; কিন্তু যা আপত্তিকর এবং বিদআত হিসেবে বিবেচিত তা হলো, বাৎসরিক শোকের জন্য একটি দিন বা মাস নির্ধারণ করে শোক, হাহাকার, বিলাপ, বুক-পিঠ চাপড়ানো, অথবা নিজের গায়ে ধারালো কিছু দ্বারা আঘাত হানার উদ্দেশ্যে সমাবেশ করা, নিষিদ্ধ অতি প্রশংসাপূর্ণ (লাতমিয়া/নওহা) পাঠ করা, রঙ্গিন জামাকাপড় পরিহার করা এবং কালো কাপড় বা ছেঁড়া কাপড় পরিধান করা; দুঃখ ও শোক প্রকাশ বা প্রদর্শন করার জন্য এটাকে শোকের দিন হিসেবে গণ্য করা; সুগন্ধির ব্যবহারকে শোকের দিন হিসেবে বিবেচনা করে এড়ানো হয়, অথবা মহিলারা শোক দিবস হিসেবে বিবেচনা করে সৌন্দর্যবর্ধন এড়িয়ে চলে; মুহার্রম মাসে বিবাহ অনুষ্ঠিত হয় না এটাকে শোকের মাস হিসেবে বিবেচনা করে, ইত্যাদি। আমরা এই বিদ’আতের সাথে জড়িত শিয়াদের মনে করিয়ে দিতে চাই যে, এই আচার-অনুষ্ঠানগুলিকে আবেগের পরিবর্তে একাডেমিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা উচিত; কারণ আবেগ দ্বারা বিষয়াদি বিচার করে খ্রিষ্টানবর্গ মিথ্যা/ভ্রান্ত বিশ্বাস এবং অভ্যাসগুলি গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিলো।
জাবির ইবন আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, “রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর খুতবায় এমনভাবে আল্লাহর প্রশংসা করতেন যেভাবে তিনি প্রশংসার যোগ্য, তারপর বলতেনঃ ‘আল্লাহ যাকে পথ দেখান তাকে কেউই পথভ্রষ্ট করতে পারে না। আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তাকে কেউই পথ দেখাতে পারে না। সর্বোত্তম কথা হলো আল্লাহর কিতাব এবং সর্বোত্তম হেদায়েত হলো নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পথনির্দেশ। সবচেয়ে নিকৃষ্ট জিনিস হলো (মন্দ) বিদ’আত তথা নতুন উদ্ভাবন; প্রতিটি (মন্দ) নতুন প্রচলিত বস্তু একটি বিদআত (ধর্মে মন্দ উদ্ভাবন) এবং প্রতিটি (মন্দ) বিদআত বিপথগামী এবং প্রতিটি বিপথগামী (দোযখের) আগুনে রয়েছে’।” [সুনানে নাসাঈ, #১৫৭৯; হাদীসের মান – সহীহ
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) বলেছেন: “প্রতিটি (মন্দ) বিদআত (ধর্মে মন্দ নতুন প্রচলন) পথভ্রষ্টতা, যদিও লোকেরা এটিকে ভালো কিছু মনে করে।” [ইবনে নাসর কৃত ‘আস্ সুন্নাহ’, পৃষ্ঠা-৯৪, #৮৩; হাদীসের মান – সহীহ; ইমাম বায়হাক্বী (রহ.) রচিত আল-মাদখাল ইলাস্ সুনান, #১৯১
একইভাবে, আমরা শিয়া বইয়ে পাঠ করি যে ইমাম আবূ আবদুল্লাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেছেন: “আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘সকল (মন্দ) বিদআত (ধর্মের মধ্যে) গোমরাহী/পথভ্রষ্টতা এবং সমস্ত গোমরাহী-ই জাহান্নামে।'” [আল-কাফী, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৭; সহীহ হিসেবে বাকির বাহবুদী এটাকে তাঁর ‘আল-কাফী’ গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
হযরতে ইমামে আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু) বলেছেন: “কেউই (মন্দ) বিদআত (মানে ধর্মে উদ্ভাবন) অনুসরণ করতে পারে না সুন্নাত পরিত্যাগ ব্যতিরেকে।” [আল-কাফি, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৫৮; মজলিসীর মতে সহীহ, মিরআতুল-উকূল, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-২০০;
আসলেই ইমামে আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু)-এর কথাগুলো যে কতোখানি সত্য! যারা আশুরার শোকসম্পর্কিত (মন্দ) বিদআত তথা ধর্মে নতুন উদ্ভাবনে জড়িত, তারা প্রকৃতপক্ষে আশুরার রোজা রাখার ক্ষেত্রে প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাতকে পরিত্যাগ করেছে।
অধিকন্তু, উদ্ভাবিত অনুশীলনগুলি আসলে নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর শিক্ষাকে লঙ্ঘন করে, কারণ ইনতিকালপ্রাপ্তদের জন্য তিন (৩) দিনের বেশি শোক পালন তাঁরই (সা.) দ্বারা নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছিলো, যেমনটি আমরা নিম্নলিখিত হাদীসগুলিতে দেখতে পাবো।
ইনতিকালপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের স্মরণে তিন (৩) দিনের বেশি শোক পালন নিষিদ্ধকারী সুন্নী আহাদীস
(ক)
حَدَّثَنِي عَبْدُ اللهِ بْنُ عَبْدِ الْوَهَّابِ، حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ زَيْدٍ، عَنْ أَيُّوبَ، عَنْ حَفْصَةَ، عَنْ أُمِّ عَطِيَّةَ، قَالَتْ كُنَّا نُنْهَى أَنْ نُحِدَّ عَلَى مَيِّتٍ فَوْقَ ثَلاَثٍ، إِلاَّ عَلَى زَوْجٍ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَعَشْرًا، وَلاَ نَكْتَحِلَ، وَلاَ نَطَّيَّبَ، وَلاَ نَلْبَسَ ثَوْبًا مَصْبُوغًا، إِلاَّ ثَوْبَ عَصْبٍ، وَقَدْ رُخِّصَ لَنَا عِنْدَ الطُّهْرِ إِذَا اغْتَسَلَتْ إِحْدَانَا مِنْ مَحِيضِهَا فِي نُبْذَةٍ مِنْ كُسْتِ أَظْفَارٍ.
অর্থ: হযরত উম্মে আতিয়্যা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেনঃ আমাদেরকে নিষেধ করা হতো আমরা যেনো কারো ইনতিকালে তিন দিনের অধিক শোক পালন না করি। তবে স্বামীর ইনতিকালে চার মাস দশ দিন শোক পালন করতে হবে এবং আমরা যেনো সুরমা খোশবু ব্যবহার না করি আর রঙীন কাপড় যেনো পরিধান না করি। তবে হালকা রঙের হলে দোষ নেই। আমাদেরকে (এ মর্মে) অনুমতি দেওয়া হয়েছে, আমাদের কেউ যখন হায়েয শেষে গোসল করে পবিত্র হয় তখন সে (দুর্গন্ধ দূর করার জন্য) আযফার নামক স্থানের কুস্ত (সুগন্ধি) ব্যবহার করতে পারে। [সহীহ বুখারী, ৫৩৪১ এবং ৫৩৪২
(খ)
قَالَتْ زَيْنَبُ فَدَخَلْتُ عَلَى زَيْنَبَ ابْنَةِ جَحْشٍ حِينَ تُوُفِّيَ أَخُوهَا، فَدَعَتْ بِطِيبٍ فَمَسَّتْ مِنْهُ، ثُمَّ قَالَتْ أَمَا وَاللهِ مَا لِي بِالطِّيبِ مِنْ حَاجَةٍ غَيْرَ أَنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ عَلَى الْمِنْبَرِ “ لاَ يَحِلُّ لاِمْرَأَةٍ تُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ أَنْ تُحِدَّ عَلَى مَيِّتٍ فَوْقَ ثَلاَثِ لَيَالٍ إِلاَّ عَلَى زَوْجٍ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَعَشْرًا ”.
অর্থ: যাইনাব (রাঃ) বলেন: যাইনাব বিন্ত জাহশের ভাই ইনতিকাল করলে আমি তার (যায়নাবের) নিকট গেলাম। তিনিও খুশবু আনিয়ে কিছু ব্যবহার করলেন। এরপর বললেন: আল্লাহর কসম! খুশবু ব্যবহার করার কোনো প্রয়োজন আমার নেই। তবে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে মিম্বরের উপর বলতে শুনেছি, ’আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী কোনো নারীর জন্য কারো ইনতিকালে তিন দিনের বেশি শোক পালন করা হালাল হবে না; তবে তার স্বামীর ইনতিকালে চার মাস দশ দিন শোক পালন করতে পারবে। [সহীহ বুখারী, ৫৩৩৫; মুওয়াত্তা-এ-মালিক, বই-২৯, হাদীস-১০২;
(গ)
حَدَّثَنَا الْحُمَيْدِيُّ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، حَدَّثَنَا أَيُّوبُ بْنُ مُوسَى، قَالَ أَخْبَرَنِي حُمَيْدُ بْنُ نَافِعٍ، عَنْ زَيْنَبَ ابْنَةِ أَبِي سَلَمَةَ، قَالَتْ لَمَّا جَاءَ نَعْىُ أَبِي سُفْيَانَ مِنَ الشَّأْمِ دَعَتْ أُمُّ حَبِيبَةَ ـ رضى الله عنها ـ بِصُفْرَةٍ فِي الْيَوْمِ الثَّالِثِ، فَمَسَحَتْ عَارِضَيْهَا وَذِرَاعَيْهَا وَقَالَتْ إِنِّي كُنْتُ عَنْ هَذَا لَغَنِيَّةً، لَوْلاَ أَنِّي سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ “ لاَ يَحِلُّ لاِمْرَأَةٍ تُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ أَنْ تُحِدَّ عَلَى مَيِّتٍ فَوْقَ ثَلاَثٍ، إِلاَّ عَلَى زَوْجٍ، فَإِنَّهَا تُحِدُّ عَلَيْهِ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَعَشْرًا ”.
অর্থ: যায়নাব বিনত আবূ সালামাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত; তিনি বলেন, যখন সিরিয়া হতে হযরত আবূ সুফ্ইয়্যান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর ইনতিকালের খবর এসে পৌঁছুলো, এর তৃতীয় দিবসে হযরত উম্মু হাবীবাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হলুদ বর্ণের সুগন্ধি আনালেন এবং তাঁর উভয় গণ্ড ও বাহুতে মাখলেন। অতঃপর তিনি বললেন, অবশ্য আমার এর কোনো প্রয়োজন ছিলো না, যদি আমি প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে এ কথা বলতে না শুনতাম, যে স্ত্রীলোক আল্লাহ্ এবং কিয়ামতের দিবসের প্রতি ঈমান রাখে তার পক্ষে স্বামী ছাড়া অন্য কোনো ইনতিকালপ্রাপ্ত ব্যক্তির জন্য তিন দিনের বেশি শোক পালন করা বৈধ নয়। অবশ্য স্বামীর জন্য সে চার মাস দশ দিন শোক পালন করবে। [সহীহ বুখারী, ১২৮০ ; সহীহ মুসলিম, ১৪৮৬
ঘ)
وَحَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى، وَأَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ وَعَمْرٌو النَّاقِدُ وَزُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ ء وَاللَّفْظُ لِيَحْيَى ء قَالَ يَحْيَى أَخْبَرَنَا وَقَالَ الآخَرُونَ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ عُرْوَةَ، عَنْ عَائِشَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ “ لاَ يَحِلُّ لاِمْرَأَةٍ تُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ أَنْ تُحِدَّ عَلَى مَيِّتٍ فَوْقَ ثَلاَثٍ إِلاَّ عَلَى زَوْجِهَا ” .
অর্থ: হযরত আয়েশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) বর্ণনা করেন যে প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে নারী আল্লাহ ও আখেরাত দিবসে বিশ্বাস করে তার পক্ষে ইন্তিকালপ্রাপ্ত কারো জন্যে তিন দিনের বেশি শোক পালন করা হালাল নয়; ব্যতিক্রম শুধু তার স্বামীর বেলায় হবে।” [সহীহ মুসলিম, ১৪৯১ আন্তর্জাতিক
(ঙ)
হযরত সাফিয়্যা বিনতে আবী উবাইদ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত যে, তিনি প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পবিত্র স্ত্রী হযরত হাফসা বিনতে উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)-কে বলতে শুনেছেন, যিনি বর্ণনা করেন যে, প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “কোনো মহিলার জন্য এটা জায়েজ নয়, যে আল্লাহ ও শেষ বিচার দিবসের প্রতি ঈমান রাখে এ মর্মে যে, সে কারো ইনতিকালের তিন দিনের বেশি শোক পালন করবে; ব্যতিক্রম শুধু তার স্বামী যার জন্য চার মাস দশ দিন শোক পালন করা উচিত। [সুনানুন্ নাসাঈ, ৩৫৩৩; সহীহ