*ইমাম হুসাইন (রা.)-এর জন্য কান্নাকাটির কারণ নবী (ﷺ) কেঁদেছিলেন! তাহলে ভণ্ডামি কেন? (২)*

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

মূল: আ’ল ও আসহাব (রা.)-এর পক্ষে জবাব ওয়েবসাইট

বঙ্গানুবাদ: এডমিন

(চ)

জয়নাব (বিনতে আবু সালামা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) বর্ণনা করেছেন: আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পবিত্র স্ত্রী হযরত উম্মে হাবীবা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)-এর কাছে গিয়েছিলাম, যখন তাঁর পিতা আবু সুফিয়ান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) ইনতিক্বাল করেছিলেন। উম্মে হাবিবা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) একটি সুগন্ধি চেয়ে পাঠালেন যাতে হলুদ বা এর মতো অন্য কিছু ছিলো এবং তিনি তা একটি মেয়ের গায়ে লাগিয়ে তার গালে ঘষে দিলেন; তারপর বললেন: আল্লাহর কসম, আমার কোনো সুগন্ধি লাগবে না কিন্তু আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে শুনেছি মিম্বরে বলতে, “আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাসী কোনো মহিলার জন্য ইনতিকালপ্রাপ্তদের জন্য তিন দিনের বেশি শোক করা বৈধ নয়, তবে স্বামীর (ইনতিকালের ক্ষেত্রে) চার মাস দশ দিন পর্যন্ত শোক করা বৈধ।” জয়নাব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, আমি তখন জয়নাব বিনতে জাহশ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)-এর কাছে গিয়েছিলাম যখন তাঁর ভাই ইনতিকাল করেন এবং তিনি সুগন্ধি পাঠালেন এবং লাগিয়ে দিলেন এবং বললেন: আল্লাহর শপথ, আমি আতরের কোনো প্রয়োজন অনুভব করি না কিন্তু আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মিম্বরে বলতে শুনেছি: “আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি বিশ্বাসী কোনো মহিলার জন্য স্বামীর জন্য পালনীয় চার মাস দশ দিন ছাড়া অন্য কারো ইনতিকালে তিন দিনের বেশি শোক পালন করা বৈধ নয়।” যয়নব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, আমি আমার মা উম্মে সালামা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)-কে বলতে শুনেছি: এক মহিলা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বল্লো, ইয়া রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। আমার একটি মেয়ে আছে যার স্বামী ইনতিকাল করেছে এবং তার চোখে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে; আমাদের কি তাতে কাজল প্রয়োগ করা উচিত? তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: “না (দুইবার বা তিনবার পুনরাবৃত্তি করেন, প্রতিবারই না বলেন)। অতঃপর তিনি বললেন: এটা মাত্র চার মাস এবং দশ দিন, অথচ ইসলামপূর্ব যুগে তোমাদের কেউ এক বছর অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত গোবর ফেলে দেয়নি।” হুমাইদ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেন: আমি জয়নাব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)- কে জিজ্ঞেস করলাম: এক বছর পার না হওয়া পর্যন্ত এই গোবর নিক্ষেপ কী? যয়নব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) বলেন: যখন কোনো মহিলার স্বামী মারা যায়, তখন সে একটি কুঁড়েঘরে যায় এবং তার নিকৃষ্ট কাপড় পরিধান করে এবং এক বছর শেষ না হওয়া পর্যন্ত সুগন্ধি বা অনুরূপ কিছু লাগায় না। অতঃপর তার কাছে গাধা, ছাগল, বা পাখির মতো কোনো প্রাণি আনা হলে সে সেটার গায়ে হাত দ্বারা ঘষে দেয়; আর এরকম ঘটতে পারে, সে যেটার গায়ে হাত ঘষলো সেটা মারা গেলো। তারপর সে তার ঘর থেকে বেরিয়ে আসে এবং তাকে গোবর দেওয়া হয় এবং সে তা নিক্ষেপ করে; তারপর সে তার পছন্দ মতো সুগন্ধি বা অন্য কিছু ব্যবহার করে। [সহীহ মুসলিম, ১৪৮৬ এ, ১৪৮৭ এ, ১৪৮৮ এ, ১৪৮৯

মন্তব্য:

এটা ভাবা উচিত নয় যে আহলে বাইত (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম)-এর মূল সদস্যবৃন্দ তথা ঈমানদার মুসলমানদের মাতাবৃন্দ, যাঁরা কোনো ব্যক্তির ইন্তেকালের পরে শোক পালনের নির্দিষ্ট সময় সম্পর্কে এই হাদীসগুলোর বেশিরভাগই বর্ণনা করেছেন, তাঁরা তাঁদের মরহূম প্রিয় আত্মীয়-স্বজনের জন্য ভবিষ্যতে কখনো কাঁদেননি। তাঁরা তাঁদের জন্য কাঁদতেই পারেন, যেমনটি আমরা ইতিমধ্যে ব্যাখ্যা করেছি, কিন্তু তাঁরা যা নিশ্চিতভাবে করেননি তা হলো, আত্মীয়-স্বজনের ইন্তেকালের তিন দিন পরে তাঁরা তাঁদের জন্য কখনো (বিলাপ করে) শোক পালন করেননি। অধিকন্তু, আমরা দেখতে পাই যে প্রিয়নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বয়ং তাঁর মায়ের জন্য কেঁদেছিলেন যিনি অনেক আগে ইন্তেকাল করেছিলেন, যেমনটি আমরা সহীহ মুসলিম #৯৭৬-এ দেখতে পাই।

শিয়া বর্ণনা:

ইমাম জা’ফর সাদিক্ব (রহমতুল্লাহি আলাইহি) বলেন: কারো ইনতিকালে তিন দিনের বেশি শোক পালন করা জায়েয নেই; ব্যতিক্রম শুধু ওই নারী যার স্বামীর ইনতিকালে সে শোক পালন করেছে যতোক্ষণ না তার ইদ্দত সময়কাল সম্পূর্ণ হয়েছে। [মান লা ইয়াহদুরুহু আল-ফক্বীহ, ১ম খণ্ড, ১৩০-১৩১ পৃষ্ঠা: মান লা ইয়াহদুরুহু আল-ফক্বীহ উর্দূ সংস্করণ, ১ম খণ্ড, ১৩২ পৃষ্ঠা

শাইখ যুবায়র আলী যা’ঈর মন্তব্য:

শোক (আরবী – হিদাদ) হালাল/বৈধ কিছু থেকে বিরত থাকাকে বোঝায়, উদাহরণস্বরূপ, গোসল করা, (পানি দ্বারা) শৌচ, ঘুমানো ইত্যাদি। এটা হারাম কাজ সংঘটনকে বোঝায় না, যেমন চিৎকার করা, আহাজারি করা, হাহাকার করা, বুক চাপড়ে কান্নাকাটি করা, মাথা কামানো ইত্যাদি (বিলাপ)। পুরুষদের জন্য তিন দিনের বেশি শোক পালন করাও অনুমোদিত নয়। এতে মহিলাদের বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, কেননা তারা সাধারণত পুরুষদের চেয়ে বেশি শোক পালন করে থাকে। [সুনানে নাসাঈ, ৪র্থ খণ্ড, ২৮৫ #৩৫৩৩

হাফেয ইবনে কাসীর বলেন:

চার শ হিজরী ও সমসাময়িককালে রাফিযী গোষ্ঠী বনী বুওয়াইহ রাজ্যে চরম পর্যায়ে চলে যায়। আশুরার দিনে বাগদাদ ও অন্যান্য শহরে ঢোল পিটানো হয়, রাস্তা-ঘাটে বালি ও খড় বিছিয়ে দেওয়া হয়, দোকানে চট ঝুলানো হয় এবং লোকেরা শোক প্রকাশ করে এবং কাঁদতে থাকে। ইমাম হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর প্রতি সহানুভূতিস্বরূপ তাদের অনেকেই সেই রাতে পানি পান করেনি; কারণ তিনি পিপাসার্ত অবস্থায় শহীদ হয়েছিলেন। অতঃপর মহিলাবর্গ অনাবৃত মুখে বেরিয়ে পড়ে, কান্নাকাটি করে এবং তাদের মুখ ও বুক চড় চাপড়ায়, আর বাজারে খালি পায়ে হাঁটে এবং অন্যান্য মন্দ বিদআত সংঘটন করে… প্রত্যেক মুসলমানের উচিত ইমাম হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর হত্যাকাণ্ডে শোকার্ত হওয়া, কেননা তিনি মুসলমানবৃন্দের একজন নেতা, সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-মণ্ডলীর মাঝে একজন বিদ্বান/আলেম এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কন্যার পুত্র, যে কন্যা প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কন্যাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠা ছিলেন। ইমাম হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) ছিলেন একনিষ্ঠ ইবাদতকারী এবং একজন সাহসী ও উদার ব্যক্তি। কিন্তু শিয়াচক্র (তাঁর শাহাদাতের প্রতি) দুঃখ ও শোক প্রকাশ করার জন্য যা করে তার মধ্যে ভালো কিছু নেই, যার বেশিরভাগই দেখানোর জন্য করা হতে পারে। তাঁর পিতা (হযরত আলী কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু) তাঁর চেয়েও উত্তম ছিলেন এবং তাঁকেও শহীদ করা হয়েছিলো, কিন্তু রাফেযী শিয়া গোষ্ঠী তাঁর শাহাদাত দিবসটিকে বার্ষিকী হিসেবে পালন করে না, ঠিক যেমনটি তারা ইমাম হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)’এর শাহাদাত দিবসে করে থাকে। চল্লিশ হিজরীতে রমজানের সতেরো তারিখে শুক্রবার ফজরের নামাজের পর মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় তাঁর পিতা খলীফা ইমামে আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু)-কে শহীদ করা হয়। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের মতানুসারে খলীফা হযরত উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হযরত ইমামে আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু)-এর চেয়ে উত্তম ছিলেন এবং ৩৬ হিজরী সালের যিলহজ্জ মাসের তাশরীকের দিনগুলিতে যখন তিনি তাঁর বাড়িতে অবরুদ্ধ ছিলেন তখন শহীদ হন। তাঁর গলার এক রগ থেকে অন্য রগ পর্যন্ত কেটে ফেলা হলেও মানুষ তাঁর শাহাদাত দিবসকে (শিয়াদের অনুরূপ) বার্ষিকী হিসেবে পালন করে না। খলীফা হযরত ‘উমর ইবনুল খাত্তাব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) সর্ব-হযরত ইমামে ‘আলী ও উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা)’এর চেয়ে উত্তম ছিলেন এবং তিনি মিহরাবে দাঁড়িয়ে ফজরের সালাত আদায ও কুর’আন তেলাওয়াত করার সময় তাঁকে শহীদ করা হয়েছিলো, কিন্তু মানুষ তাঁর শাহাদাত দিবসকে (শিয়াদের অনুরূপ) বার্ষিকী হিসেবে পালন করে না। খলীফা হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) খলীফা উমর ফারূক্ব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)’এর চেয়ে উত্তম ছিলেন, কিন্তু মানুষ তাঁর বেসাল দিবসকে (শিয়াদের অনুরূপ) বার্ষিকী হিসেবে পালন করে না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুনিয়া ও আখিরাতে আদম সন্তানদের সৈয়দ, এবং আল্লাহ তাঁকে তাঁর কাছে নিয়ে গিয়েছেন ঠিক যেমনিভাবে তাঁর পূর্ববর্র্তী পয়গাম্বর (আ.)-বৃন্দ বেসালপ্রাপ্ত হয়েছেন, কিন্তু কেউই তাঁদের বেসাল শরীফকে অমন বার্ষিকী হিসেবে পালন করেননি যেভাবে ইমাম হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)’এর শাহাদাত দিবসে এই গণ্ডমূর্খ রাফিযী গোষ্ঠী (মন্দকর্ম) করে থাকে…এটা এবং অনুরূপ বিপর্যয়ের কথা স্মরণ করার সময় সর্বোত্তম যেটা বলা যেতে পারে তা হলো যেটা ইমাম আলী ইবনুল হুসাইন (রহমতুল্লাহি আলাইহ) তাঁর দাদাজান রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন, যিনি বলেছেন: “এমন কোনো মুসলিম নেই, যে বিপর্যয়ের কষ্টে আক্রান্ত হয়, এবং যখন সে এটা স্মরণ করে এমন কী যদি তা ম্লান ও দূর অতীতেও হয়, তখন সে বলে – ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন (নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য এবং তাঁর কাছেই আমাদের প্রত্যাবর্তন); অতঃপর যেদিনটিতে ওই বিপর্যয় তার ওপরে এসেছিলো আল্লাহ তাকে সেদিনটির মতো কোনো দিনে একটি পুরস্কার দান করবেন।” সর্ব-ইমাম আহমদ ও ইবনে মাজাহ (রহমতুল্লাহি আলাইহিমা) এই হাদীস বর্ণনা করেছেন। [আল-বিদায়াহ ওয়ান্ নিহায়াহ, ৮ম খণ্ড, ২০২-২০৩ পৃষ্ঠা

ইসলাম-কিউ/এ (IslamQA) ওয়েবসাইটের পণ্ডিতবর্গ বলেন:

শিয়াচক্র কর্তৃক ‘আশূরা’-তে তাদের বুক চাপড়ানো, গালে থাপ্পড় মারা, কাঁধে শিকল দিয়ে আঘাত করা এবং রক্ত ​​প্রবাহিত করার জন্য তরবারি দিয়ে মাথায় ক্ষত সৃষ্টি ইত্যাদির সবই বিদআত যার কোনো ভিত্তি ইসলামে নেই। এই জিনিসগুলি এমন মন্দ যা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক নিষিদ্ধ, যিনি তাঁর উম্মতের কোনো নেতার ইন্তিক্বালে বা শহীদের শাহাদাতে, তাঁদের মর্যাদা যা-ই হোক না কেন, এই সমস্ত কিছু বা এর অনুরূপ কিছু করার নির্দেশ দেননি। তাঁর জীবদ্দশায় (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনেক প্রবীণ সাহাবা (রা.) শহীদ হয়েছিলেন এবং তিনি তাঁদের শাহাদাতে শোক প্রকাশ করেছিলেন, যেমন – সর্ব-হযরত হামজাহ ইবনে আবদুল মুত্তালিব, যায়েদ ইবনে হারিসা, জা’ফর ইবনে আবি তালিব এবং ‘আব্দ-আল্লাহ ইবনে রওয়াহা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম) প্রমুখের ক্ষেত্রে। কিন্তু শিয়াচক্র যে কাজগুলো করে তার কোনোটাই তিনি করেননি। এগুলো ভালো হলে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা আমাদের আগেই করতেন।

পয়গাম্বর ইয়াকুব (আলাইহিস্ সালাম) তাঁর বুকে আঘাত করেননি বা মুখে আঁচড় দেননি, রক্তপাত করেননি অথবা পুত্র পয়গাম্বর ইউসুফ (আলাইহিস্ সালাম)-এর হারিয়ে যাওয়ার দিনটিকে উৎসব বা শোকের দিন হিসেবে গ্রহণ করেননি; বরং তিনি তাঁর হারিয়ে যাওয়া প্রিয়জনকে স্মরণ করেছিলেন এবং তাঁর কারণে দুঃখিত ও ব্যথিত বোধ করেছিলেন। এটা এমন একটা বিষয় যার জন্য কাউকে দোষ দেওয়া যায় না। জাহেলিয়াহ যুগ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত কাজগুলোই পরবর্তীকালে ইসলাম ধর্মে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

আল-বুখারী (১২৯৪) গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে,

حَدَّثَنَا أَبُو نُعَيْمٍ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ حَدَّثَنَا زُبَيْدٌ الْيَامِيُّ عَنْ إِبْرَاهِيمَ عَنْ مَسْرُوقٍ عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم لَيْسَ مِنَّا مَنْ لَطَمَ الْخُدُودَ وَشَقَّ الْجُيُوبَ وَدَعَا بِدَعْوَى الْجَاهِلِيَّةِ.

মুসলিম শরীফ (১০৩) গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে,

حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى، أَخْبَرَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ، ح وَحَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ، وَوَكِيعٌ، ح وَحَدَّثَنَا ابْنُ نُمَيْرٍ، حَدَّثَنَا أَبِي جَمِيعًا، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مُرَّةَ، عَنْ مَسْرُوقٍ، عَنْ عَبْدِ اللهِ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ لَيْسَ مِنَّا مَنْ ضَرَبَ الْخُدُودَ أَوْ شَقَّ الْجُيُوبَ أَوْ دَعَا بِدَعْوَى الْجَاهِلِيَّةِ ‏”‏ ‏.‏ هَذَا حَدِيثُ يَحْيَى وَأَمَّا ابْنُ نُمَيْرٍ وَأَبُو بَكْرٍ فَقَالاَ ‏”‏ وَشَقَّ وَدَعَا ‏”‏ بِغَيْرِ أَلِفٍ ‏.‏

অর্থ: হযরত ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু মাস‘ঊদ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত; তিনি বলেন, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যারা (মৃত ব্যক্তির জন্য শোক প্রকাশে) গণ্ডে চপেটাঘাত করে, জামার বক্ষ ছিন্ন করে এবং জাহিলী যুগের মত চিৎকার দেয়, তারা আমাদের দলভুক্ত নয়।” [বঙ্গানুবাদকের নোট: মুসলিম শরীফের বর্ণনায় কিছু অতিরিক্ত কথা বিদ্যমান। তবে মূল কথা ‘ইসলামী প্রশ্নোত্তর’ ওয়েবসাইটের পেশকৃত অংশটুকুই]

আশূরার দিনে শিয়াচক্র যে নিন্দনীয় কাজগুলো করে ইসলামে তার কোনো ভিত্তি নেই। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এগুলো করেননি, তাঁর কোনো সাহাবী (রা.)-ও করেননি। তিনি বা অন্য কেউ বেসালপ্রাপ্ত হলে তাঁর সঙ্গীদের কেউই তা করেননি, যদিও হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বেসালপ্রাপ্তি ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদাতের চেয়েও বেশি শোকের ছিল।

শিয়া অপযুক্তি:

আমরা ‘কানযুল উম্মাল’ গ্রন্থের ১৫তম খণ্ডের ৭৩১ পৃষ্ঠায় পাঠ করি –

عن عبد الله بن عكرمة قال: عجبا لقول الناس إن عمر بن الخطاب نهى عن النوح! لقد بكى على خالد بن الوليد بمكة والمدينة نساء بني المغيرة سبعا يشققن الجيوب ويضربن الوجوه وأطعموا الطعام تلك الأيام حتى مضت ما ينهاهم عمر.

অর্থ: আবদুল্লাহ ইবনে আকরেমা (রা.) বলেছেন: “আমি এই লোক কাহিনীর ব্যাপারে আশ্চর্য হচ্ছি যে উমর বিন আল-খাতাব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) মক্কা ও মদীনায় শোক পালন করা নিষিদ্ধ করেছিলেন! বনী মুগীরা (গোত্রের) মহিলাবর্গ হযরত খালিদ বিন ওয়ালীদ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)’এর (বেসালের) জন্য ‘সাত দিন’ ধরে কান্নাকাটি করেছিলো; তারা জামার সামনের অংশ ছিঁড়েছিলো এবং গাল থাপড়েছিলো এবং লোকদের খাইয়েছিলো অথচ হযরত উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) তাদের নিষেধ করেননি।”

জওয়াব:

ইমাম ইবনে খালদুন (রহ.) তাঁর তারীখ/ইতিহাসগ্রন্থে চার খলিফার সাথে সম্পর্কিত একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নীতি উল্লেখ করেছেন। তিনি (রহ.) বলেন: “আর আইন-কানুন (নীতিমালা) হলো এই যে তাঁদের ক্রিয়াগুলো ‘সহীহ খবর/বিবরণের মাধ্যমে প্রকাশিত হবে এবং দুর্বলগুলোর’ দ্বারা নয়।” [তারীখু ইবনু খালদুন, ২য় খণ্ড, ৬৫১ পৃষ্ঠা

ইমাম আবদ আল-রহমান আল-মু’আল্লামী (রহ.) বলেছেন: “নিঃসন্দেহে হাদীসের বর্ণনাকারীদের অবস্থা জানার প্রয়োজনীয়তা হাদীসশাস্ত্রের চেয়ে ইতিহাসের ক্ষেত্রে বেশি, ‘কেননা ঐতিহাসিক বর্ণনায় মিথ্যা বলা এবং প্রশ্রয় বেশি ঘনঘন ঘটে থাকে’।” [ইলমুর্ রিজা‘ল ওয়া আহামিয়্যাতুহু, ৯১ পৃষ্ঠা;

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment