ইমাম হাসান (রা.)’এর খেলাফত ত্যাগের নেপথ্যে

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন

ইমাম ইবনে জারীর তাবারী (রহ.)’এর প্রণীত ইতিহাসগ্রন্থটির মধ্যে ‘ইমাম হাসান বিন আলী (রা.)’এর প্রতি আনুগত্যের শপথ’ শীর্ষক অধ্যায়টি (৪০ হিজরীর ঘটনাবলীর বর্ণনা) পাঠকমণ্ডলী মনোযোগসহ পুরোটুকু পড়ুন (বিশেষ করে পৃষ্ঠা ২-১০, ১৮তম খণ্ড)। ইংরেজি সংস্করণ অনুবাদে গবেষণা করেছিলেন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আরব ও অনারব অধ্যাপকমণ্ডলী। চল্লিশ খণ্ডের বিশাল বইটি প্রকাশ করেছিলো ইউনেস্কো। ১৯৭১ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত কাজ চলেছিলো। মাঝখানে ইরানে শিয়া বিপ্লব সংঘটিত হলে কাজে ছেদ পড়ে। কেননা গবেষকবৃন্দ ইরানের তাবারিস্তানে যেয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে পারেননি। তবে ইরান সরকার পরে তাঁদেরকে অনুমতি দেন এবং তাঁরা কাজ সুসম্পন্ন করেন।

ইতিহাসগ্রন্থটিতে জানা যায়, হযরত ইমাম হাসান (রা.) ইরাক্ববাসীদের গাদ্দারির প্রতি অতিষ্ঠ হয়ে ক্ষমতা আমীরে মু’য়াবিয়া (রা.)’এর বরাবর ছেড়ে দেন। তিনি এর জন্যে তিনটি কারণ ব্যক্ত করেন: ১/ ইমামে আলী (ক.)’এর সাথে গাদ্দারি ও তাঁকে হত্যা; ২/ হযরত ইমাম (রা.)’কে ছুরিকাঘাত (attempt on his eminence’s life) এবং ৩/ মাদাঈনে তাঁর সম্পদ লুণ্ঠন [ইমাম ইবনে জারীর তাবারী (রহ.) কৃত ‘তারীখ’, ১৮তম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৫]। বস্তুতঃ তিনি ইতিপূর্বে খলীফা হয়ে ইরাক্ববাসীদের প্রতি কিছু শর্তারোপ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “তোমরা পূর্ণ আনুগত্যশীল হবে; আমি যার সাথে শান্তি স্থাপন করবো, তার সাথে শান্তি স্থাপন করবে; আর যার সাথে লড়বো, তার সাথে তোমরাও লড়বে।” তারা এ কথায় বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। তারা বলে, “উনি আমাদের ইমাম নন, কেননা তিনি লড়তে চান না” [প্রাগুক্ত ‘তারীখ’, ১৮তম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৭]। অতঃপর তাঁকে ছুরিকাঘাত করা হয় এবং তাদের প্রতি তাঁর অসন্তুষ্টি আরো বৃদ্ধি পায়; আর তিনি তাদের তরফ থেকে শঙ্কিতও হন [প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা-৭]। ফলশ্রুতিতে তিনি আমীরে মু’য়াবিয়া (রা.)’এর সাথে সন্ধি করেন এবং ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।

সন্ধিচুক্তি করার সিদ্ধান্তের কথা জানার পরে ইমাম হুসাইন (রা.) হযরত ইমাম হাসান (রা.)’কে বলেন তিনি যেনো আমীরে মু’য়াবিয়া (রা.)’এর ভাষ্যে বিশ্বাস না করেন, বরং তাঁদের বাবা ইমামে আলী (ক.)’এর ভাষ্যে বিশ্বাস করেন। হযরত ইমাম (রা.) কড়া প্রত্যুত্তর দেন, “চুপ করো! তুমি এ ব্যাপারে আমার চেয়ে অধিক অবগত নও!” [প্রাগুক্ত ‘তারীখ,’ ১৮তম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৫] তাঁর এ কথাটা প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক হাদীসে ব্যক্ত দুটো বিবদমান মুসলিম বাহিনীর মধ্যে সন্ধি স্থাপন সংক্রান্ত ভবিষ্যদ্বাণীরই বাস্তবায়ন ছাড়া কিছু নয়।

শেষ কথা, ইরাক্ববাসীর গাদ্দারি-ই হযরত ইমাম (রা.)’এর খেলাফতের ইতি টানে। তারা আনুগত্যের শপথ নিয়ে উল্টো তাঁকেই হত্যার পরিকল্পনা এঁটেছিলো। সবাই মনে রাখবেন, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও প্রভাব বজায় রাখতে হলে জানবাজ অনুসারী দলের প্রয়োজন হয়। যেমনটি ছিলেন প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’এর সাহাবায়ে কেরাম (রা.); যেমনটি ছিলেন আমীরে মু’য়াবিয়া (রা.)’এর অনুসারী সিরিয়াবাসী; যেমনটি ছিলেন সুলতান গাজী সালাহউদ্দীন আইয়্যূবী (রহ.)’এর মুসলিম বাহিনী। কিন্তু ইরাক্ববাসী এক্ষেত্রে সন্দেহভাজন। ন্যূনতম আনুগত্যও তাদের ছিলো না। ইমাম হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)’কে দাওয়াত করে তাদের এলাকায় নিয়ে শত্রুদের হাতে ছেড়ে দিয়েছিলো! পাপিষ্ঠ এয়াযীদের চেয়েও বেশি দায়ী ছিলো এই গাদ্দারগুলো।

*সমাপ্ত*

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment