নাহমাদুহু ওয়ানূসাল্লি আলা রাসুলীহিল কারীম আম্মা বাদ। ইসলামি ইতিহাসের বিষাদময় অধ্যায়ের এক অবর্ণণীয় সাক্ষী আইবেরীয় অঞ্চলের ইতিহাস। যে ইতিহাস মুসলমানদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ করেন। এতো এতো হারানো ঐতিহ্যের মাঝেও তথায় জন্ম নিয়েছিলো বিশ্ববিখ্যাত বেশ কয়েকজন মনিষী। কাজী আয়াজ বিন মূসা (রহ.) তাদেরই একজন।
১৪০০ বছর পূর্বে বদ্বীপ আরবভূখন্ডে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) যে ইসলামের আলোতে উজ্জ্বলতার প্রদীপ জ্বেলেছিলো সেই আলোর রশ্মি চতুর্থদিকে চড়িয়ে পড়তে খুব একটা সময় নেয়নি। জাহেলিয়াতে অন্ধকারে নিমজ্জিত শহরগুলো সত্যের আলোয় আলোকিত হয়েছিলো। কাজী আয়াজ (রহ.) তেমনি একটি আলোকিত শহরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার জন্ম তারিখ নিয়ে সঠিক কোন তত্ত্ব পাওয়া না গেলেও ধারণা করা হয় ৪৭৬ হিজরির পরেই জন্মগ্রহণ করেছেন। আশ্চর্য হবেন, এখনো ৫০ ঊর্ধ্ব জন্ম নেওয়া অধিকাংশ মরক্কোর অধিবাসীদের মাঝে জন্ম সাল থাকলেও দিন এবং মাসের কোন সঠিক তারিখ নেই। পাসপোর্ট করতে গিয়ে ইচ্ছেমতো তারা তারিখ বসিয়ে দেন। এবার ভাবুন তখনকার সমাজব্যবস্থায় তারা কতটুকু অসচেতন ছিলো। অপ্রাসঙ্গিক মরক্কোর কথা কেন বলেছি বিস্তারিত লেখা পড়েই বুঝতে পারবেন। তাঁর পিতার নাম ছিলো মূসা। কাজী আয়াজ ( القاضي عياض ) মরক্কোর মূল ভূখণ্ডে অবস্থিত স্পেনের সেউতা নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। জিব্রাল্টার প্রনালী দক্ষিণ পাড়ে স্পেনের মূল ভূখণ্ডের বাইরে মরক্কোর মূল ভূখণ্ডে অবস্থিত এই সেউতা নামক এ জায়গাটি। ভিনদেশের মাটিতে স্পেনের একটি অংশে কাজী আয়াজ (রহ.) জন্মগ্রহণ করেছিলেন। স্পেনের নিয়ন্ত্রণ থাকলেও সেখানে প্রচুর মুসলমানদের বসবাস। জন্মের পর কাজী আয়াজ সেখানেই বড় হন।

জ্ঞানার্জন।
প্রথম জীবনে তিনি তার শহরেই শিক্ষাগ্রহণ করেছেন। পরবর্তীতে জ্ঞানার্জনের জন্য হাফিজে হাদিস কাজী আবু আলী গাসসানী (রহ.) এর সান্নিধ্য গ্রহণ করেন। কাজী আবু আলী গাসসানীর ইন্তেকালের পর কাজী আয়াজ (রহ.) আরও অধিক জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্যে স্পেনের মূল ভূখণ্ড গ্রানাডায় চলে আসেন। গ্রানাডা স্পেনের দক্ষিণাঞ্চলে আন্দালুসিয়া রাজ্যের একটি শহর। ইসলামি ঐতিহ্যের ধারক বাহক এই শহর। “আল-হামরা” এর মতো বিখ্যাত স্থাপনা এই গ্রানাডায় অবস্থিত। তিনি এখানকার তৎকালীন বিখ্যাত মনীষীদের কাছে ইলমে জ্ঞানার্জন করে জ্ঞানের ভান্ডারকে আরও সমৃদ্ধিশীল করেছিলেন। কুরআন হাদিসের ন্যায় তিনি ইলমে ফিকহেও গভীর পাণ্ডিত্য অর্জন করেছেন। পড়াশোনা শেষ করে নিজ এলাকায় বিচারকের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। কাজী আয়াজ (রহ.) পরবর্তীতে অভিজ্ঞতার পরিধি বাড়িয়ে স্পেনের গ্রানাডার বিচারকের দায়িত্বও পালন করেন। বিজ্ঞ ফকিহবিদ মুহাম্মদ বিন হামাদাহ সাবতি বলেন, কাজী আয়াজ ৩৫ বয়সে বিচারকের দায়িত্ব নেন।
▪️তাঁর প্রণীত আশ-শিফা বিতা’রিফি হুকুকিল মুস্তফা (ﷺ) যেটা বিখ্যাত শিফা শরীফ নামেই সর্বাধিক পরিচিত। এছাড়াও বিষয়ভিত্তিক বিভিন্ন কিতাবও রচনা করেছেন। তিনি মালিকি মাজহাবের অনুসারী ছিলেন। ৫৪৪ হিজরিতে অর্থাৎ ১১৪৯ সালে মরক্কোয় তাঁর ওফাত হয়। মরক্কোতে তাঁর নামে অনেক কিছুই নামকরণ করা হয়। দক্ষিণ মরক্কোর মারাক্কেস নামক স্থানে তাঁর সমাধি অবস্থিত।





Users Today : 203
Users Yesterday : 767
This Month : 14625
This Year : 186496
Total Users : 302359
Views Today : 7219
Total views : 3583962