ইবনে তাইমিয়্যাকে জুতা পেটা

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

যে জঘণ্য আকিদার কারণে শাঈখ ইবনে তাইমিয়াকে প্রকাশ্যে জুতাপেটা করা হয়েছিল-

===================================

শাঈখ তকী উদ্দিন ইবনে তাইমিয়া আল হাররানী। তাকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কিছু নেই। আধুনিক সময়ে পেট্রো ডলারের দৌলতে এই পঁচা-দূর্গন্ধময় মাল অতীব সুশ্রী মোড়কে মুসলমানদের ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে।

ইসলামের নামে সন্ত্রাসী জঙ্গীবাদী কর্মকান্ড চালানো আই এস এবং এর সহযোগী যত দল আছে সবার পরম বরণীয় এই ব্যক্তিত্ব। হিজরী ৬৬১ সনে সিরিয়ার হাররান (বর্তমানে তুরষ্কের অন্তর্গত) প্রদেশে জন্ম গ্রহণ করেন তিনি। জ্ঞান-গুণে তৎকালীন অন্যতম শীর্ষস্থানীয় আলেম ও মুহাদ্দিস হিসেবে গণ্য করা হয় তাকে। অসাধারণ ব্যুৎপত্তি হাসিল করেও পূর্বাপর সকল ওলামায়ে আহলে সুন্নাতের নিকট তিনি পরিত্যাজ্য। ফিকহী যোগ্যতা, বদ আকিদাধারী শিয়া-রাফেজীদের বিরুদ্ধে তার কলম ছিল অতিশয় ক্ষুরধার। কিন্তু মুসলমানের নিকট সবার আগে বিবেচ্য বিষয় হল সঠিক সহিহ আকিদা। এই সূত্রেই শাঈখ ইবনে তাইমিয়া এত অসাধারণ প্রতিভা ও যোগ্যতা থাকা সত্তেও ওলামায়ে কেরাম তাকে বর্জন করেছেন, তার ভ্রান্ত আকিদার ব্যাপারে মুসলিম উম্মাহকে বারবার সতর্ক করেছেন। যদিও আমাদের অনেক আকাবের ইমাম যেমন: ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, জালালুদ্দীন সুয়ূতী, নাছেরুদ্দীন দামেশকী, মোল্লা আলী ক্বারী, ইমামুল হিন্দ শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দেস দেহলভী রাহেমাহুমুল্লাহ তাকে ইমাম, মুহাদ্দেস সহ বিভিন্ন বাক্য দ্বারা প্রশংসা করেছেন; এটা ছিল তাদের উদারতা এবং জ্ঞান ও যোগ্যতাকে সম্মান করা। আাবার তারাই ইবনে তাইমিয়ার ভ্রান্ত আকিদাগুলোর ব্যাপারে পৃষ্ঠার পৃষ্ঠা লিখেছেন।

✅ ইসলামী আকিদার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ‘মহান আল্লাহকে যাবতীয় বস্তুর সাথে সাদৃশ্য করা থেকে বিরত থাকা’। কারণ আল্লাহ কোন আকৃতি-প্রকৃতির মুখাপেক্ষী নন। সসীম সৃষ্টি অসীম আল্লাহর ব্যাপারে কোন দেহবাদী অর্থাৎ আকৃতি-প্রকৃতি বর্ণনা করতে অক্ষম। যারা আল্লাহকে আরশে আজীমে বসা আছেন কিংবা তিনি সৃষ্টির মতই উঠেন নামেন বসেন এমন আকিদা রাখে এককথায় মুজাসসিমা-মুশাব্বিহা আকিদা রাখে তারা আকিদার ইমামদের সর্বসম্মতিক্রমে কুফরীর উপরে আছে।

শাঈখ ইবনে তাইমিয়া ছিলেন এই জঘণ্য ঈমান বিধ্বংসী আকিদার পুরোধা, ধারক-বাহক ও প্রচারক। যার কারণে অনেক ইলমি যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও ওলামায়ে হক তাকে  গ্রহণ করেন নি। তার সময়ের বিখ্যাত আলেম ও মুহাদ্দেসরাই তার প্রতিরোধে সচেষ্ট হয়েছেন।

✅ প্রখ্যাত মুসলিম পর্যটক-পরিব্রাজক ও মুসলিম সমাজ বিজ্ঞানী মরক্কোর ইবনে বতুতা রহ. সমগ্র মুসলিম বিশ্ব ভ্রমণে বের হয়ে তৎকালীন সিরিয়ার রাজধানী দামেষ্কে হাজির হয়েছিলেন। সেখানে তার নিজ চোখে দেখা একটি ঘটনার বর্ণনা দেন এইভাবে-

وكان بدمشق من كبار الفقهاء الحنابلة تقي الدين بن تيمية كبير الشام يتكلم في الفنون. إلا أن في عقله شيئاً-

দামেষ্কে হাম্বলী মাজহাবের বড় ফকীহদের অন্যতম ছিলেন তকীউদ্দিন ইবনে তাইমিয়া, সিরিয়ার বড় ব্যক্তিত্ব, বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলতেন তবে তার আকলে কিছু (সমস্যা) ছিল।

নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে গিয়ে ইবনে বতুতা আরও বলেন আমি একদা জুমার দিন দামেষ্কের মসজিদে ছিলাম।

وهو يعظ الناس على منبر الجامع ويذكرهم. فكان من جملة كلامه أن قال: إن الله ينزل إلى سماء الدنيا كنزولي هذا ونزل درجة من درج المنبر فعارضه فقيه مالكي يعرف بابن الزهراء، وأنكر ما تكلم به. فقامت العامة إلى هذا الفقيه وضربوه بالأيدي والنعال ضرباً كثيراً حتى سقطت عمامته، وظهر على رأسه شاشية حرير فانكروا عليه لباسها واحتملوه الى دار عز  الدين بن مسلم قاضى الحنابلة فامر بسجنه-

ইবনে তাইমিয়া জামে মসজিদের মিম্বরে ওয়াজ করছিলেন। তার কথাসমূহের মধ্যে একটা ছিল এমন-

নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার আকাশে এভাবে নেমে আসেন যেভাবে আমি নেমে আসি, এই কথা বলে ইবনে তাইমিয়া খতিবের মিম্বর থেকে এক সিঁড়ি নেমে আসলেন (নাউযুবিল্লাহে মিন জালেক) তার এমন জঘণ্য উক্তিতে উপস্থিত একজন মালেকী মাজহাবের ফকীহ যিনি ইবনে জাহরা নামে পরিচিত ছিলেন তিনি কঠোর প্রতিবাদ করলেন এবং যা বলেছেন তা মানতে অস্বীকৃতি জানালেন। তার  প্রতিবাদের সাথে সাথেই উপস্থিত আম মুসল্লীরা দাঁড়িয়ে গেল এবং তাকে (ইবনে তাইমিয়াকে) হাত দ্বারা, জুতা দ্বারা এমনভাবে প্রহার করলো যে, তার মাথা থেকে পাগড়ী পড়ে গেল, মাথায় পরিহিত পশমী টুপি বের হয়ে পড়লো, তারা সেই পোষাকও (ইবনে তাইমিয়ার পরনে থাকুক) এটা অপছন্দ করলো। তাকে ধরে সেখানকার হাম্বলী মাজহাবের কাজী ইজ্জুদ্দীন বিন মুসলিমের কাছে নিয়ে গেলে তিনি ইবনে তাইমিয়াকে জেলে বন্দী করার নির্দেশ দেন।

[রিহলাতু ইবনে বতুতা/প্রথম খন্ড- ৫৭ ও ৫৮ পৃষ্ঠা- প্রকাশক: মাত্ববাআতুল আযহার, মিসর, ১৩৪৬ হিজরী]

আজকে এমন জঘণ্য আকিদ্বাধারী ইবনে তাইমিয়াকে সহিহ আকিদার ধারক হিসেবে ব্যাপক বাজারজাত করা হচ্ছে। অথচ আল্লাহর শানে, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর শানে, আহলে বাইতের শানে, ওলী-আওলিয়াদের শানে ইবনে তাইমিয়ার বেয়াদবীর বিষয়টি প্রমাণিত সত্য। মহান আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment