আহলে হাদিস নামধারনকারীদের “আমীন” জোরে বলার কোন দলিল নেই।
১ম দলিল খন্ডন/
ইমাম বুখারী রাহ. হযরত আবু হুরাইরা রা.-এর সূত্রে বর্ণিত একই হাদীসের দুই রেওয়ায়েত দুই পরিচ্ছেদে উল্লেখ করেছেন।
প্রথম পরিচ্ছেদে উল্লেখিত রেওয়ায়েতে আছে,
‘‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘ইমাম যখন আমীন বলে তখন তোমরাও আমীন বল।
কারণ যার আমীন ফেরেশতাদের আমীনের সাথে মিলবে তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।
‘ইবনে শিহাব বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমীন বলতেন’।’’
ﺇﺫﺍ ﺃﻣﻦ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﻓﺄﻣﻨﻮﺍ، ﻓﺈﻧﻪ ﻣﻦ ﻭﺍﻓﻖ ﺗﺄﻣﻴﻨﻪ ﺗﺄﻣﻴﻦ
ﺍﻟﻤﻼﺋﻜﺔ ﻏﻔﺮ ﻟﻪ ﻣﺎ ﺗﻘﺪﻡ ﻣﻦ ﺫﻧﺒﻪ ،
ﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﺷﻬﺎﺏ : ﻭﻛﺎﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ
ﻭﺳﻠﻢ ﻳﻘﻮﻝ : ﺁﻣﻴﻦ
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে আছে,
‘‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যখন ইমাম বলে
ﻏﻴﺮ ﺍﻟﻤﻐﻀﻮﺏ ﻋﻠﻴﻬﻢ ﻭﻻ ﺍﻟﻀﺎﻟﻴﻦ
তখন তোমরা বল আমীন।
কারণ যার কথা ফেরেশতাদের কথার সাথে মিলবে তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে’।’’
ﺇﺫﺍ ﻗﺎﻝ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﻏﻴﺮ ﺍﻟﻤﻐﻀﻮﺏ ﻋﻠﻴﻬﻢ ﻭﻻ ﺍﻟﻀﺎﻟﻴﻦ
ﻓﻘﻮﻟﻮﺍ ﺁﻣﻴﻦ، ﻓﺈﻧﻪ ﻣﻦ ﻭﺍﻓﻖ ﻗﻮﻟﻪ ﻗﻮﻝ ﺍﻟﻤﻼﺋﻜﺔ ﻏﻔﺮ
ﻟﻪ ﻣﺎ ﺗﻘﺪﻡ ﻣﻦ ﺫﻧﺒﻪ
[সূত্রঃ সহীহ বুখারী ১/১০৮]।
এই হাদীসে আমীন বলার ফযীলত এবং ইমাম-মুকতাদি সকলের আমীন বলার কথা আছে, কিন্তু আমীন কি আস্তে বলা হবে, না জোরে সে সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি।
অথচ ইমাম বুখারী রাহ. শিরোনাম দিয়েছেন জোরে আমীন বলা!
বুখারি মুসলিম ইত্যাদি গ্রন্থে উদ্ধৃত হাদিসে বলা হয়েছে ﺇﺫﺍ ﺃﻣﻦ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﻓﺄﻣﻨﻮﺍ،”এই বাক্যটির একটা অর্থ হল “ইমাম যখন আমিন বলে তখন তোমরাও আমিন বল”।
এ অর্থে ইমাম বুখারি রহ.’সহ অনেকেই জোরে আমিন বলা প্রমান করতে চেয়েছেন। কিন্তু প্রথমত হাদিসটা শুধু একটি অর্থই নয় বরং আরো অনেক অর্থ করা যায়।
ইমাম মালেক (রহ) বংশগত ভাবেই আরবি ভাষী এবং মদিনার অধিবাসী। তিনি এই হাদিসটার অর্থ করেছেন ইমাম যখন আমিন বলার স্থানে পৌছাবে তখন তোমরা আমিন বল। আরবী ভাষায় এমন নজিরও পাওয়া যায়। মালেকী মাযহাবের গ্রন্থগুলিতে এ সম্পরকে বিস্তারিত আলোচনা আছে।
আবার অনেকে অর্থ করেছেন ইমাম যখন আমিন বলতে চাবে তখন তোমরা আমিন বলবে। তাহলেই কেবল ফেরেশতা, ইমাম, এবং মুক্তাদির আমিন বলা এক সঙ্গে হবে বা হওয়া সম্ভব।
অন্যথায় ইমামের আমিন বলা শুনে যদি মুক্তাদি আমিন বলতে যায় তাহলে একসঙ্গে বলা হবে না।
এ দুটি অর্থে হাদিসটি দিয়ে জোরে আমিন বলার কোন প্রমানই হয় না।
দ্বিতীয়ত : যদি প্রথম অর্থটিই ধরা হয় তাহলেও জোরে আমিন বলার বেপারে এই নির্দেশনা সুস্পষ্ট নয়।
কেননা রাসুলে খোদা (صلى الله عليه و آله وسلم) এর পক্ষ থেকে যখন জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, এ সময় ইমামও আমিন বলে, তখন ইমাম যখন আমিন বলে কথাটির অর্থ দাঁড়াবে সুরা ফাতিহা শেষে ইমামতো আমিন বলবে তখন তোমরাও আমিন বলবে।
এই কারনেই বুখারি, মুসলিম, মুয়াত্তা মালেক গ্রন্থে এই হাদিসের শেষে ইবনে শিহাব যুহরী (রহ) এর এই কথাটিও উল্লেখ করা হয়েছে যে, রাসুলে কারিম (صلى الله عليه و آله وسلم) নিজেও এ সময় আমিন বলতেন।
প্রনিধান যোগ্য যে রাসুলে মাকবুল (صلى الله عليه و آله وسلم) যদি হর হামেশায় জোরে আমিন বলতেন তবে যুহরী (রহ) কে এ কথা পরিষ্কার করতে হল কেন যে রাসুলে খোদা (صلى الله عليه و آله وسلم)ও এ সময় আমিন বলতেন।
অন্য একটি হাদিস দেখলে ব্যাপারটা আরো স্পষ্টরুপে প্রতিভাত হবে।
এই হাদীসের এক রেওয়ায়েতে সহীহ সনদে আছে, ইমাম যখন বলে –
ﻏﻴﺮ ﺍﻟﻤﻐﻀﻮﺏ ﻋﻠﻴﻬﻢ ﻭﻻ ﺍﻟﻀﺎﻟﻴﻦ
তখন তোমরা বল আমীন। কারণ ফেরেশতাগণ বলেন আমীন এবং ইমামও বলেন আমীন। যার আমীন বলা ফেরেশতাদের আমীন বলার সাথে মিলবে তার পিছনের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।
ﺇﺫﺍ ﻗﺎﻝ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﻏﻴﺮ ﺍﻟﻤﻐﻀﻮﺏ ﻋﻠﻴﻬﻢ ﻭﻻ ﺍﻟﻀﺎﻟﻴﻦ
ﻓﻘﻮﻟﻮﺍ ﺁﻣﻴﻦ، ﻓﺈﻥ ﺍﻟﻤﻼﺋﻜﺔ ﺗﻘﻮﻝ ﺁﻣﻴﻦ، ﻭﺇﻥ ﺍﻹﻣﺎﻡ
ﻳﻘﻮﻝ ﺁﻣﻴﻦ، ﻓﻤﻦ ﻭﺍﻓﻖ ﺗﺄﻣﻴﻨﻪ ﺗﺄﻣﻴﻦ ﺍﻟﻤﻼﺋﻜﺔ ﻏﻔﺮ ﻟﻪ
ﻣﺎ ﺗﻘﺪﻡ ﻣﻦ ﺫﻧﺒﻪ
[সূত্রঃ সুনানে নাসাঈ ১/১৪৭]।
সুপ্রিয় পাঠক লক্ষ্য করুন, এখানে কি বলা হয়েছে?
এখানে বলা হয়েছেঃ
**ফেরেশতাগণ বলেন আমীন এবং ইমামও বলেন আমীন।**
ইমামও এ সময় আমিন বলে কথাটি তখনই বলা চলে যখন ইমাম নিঃশব্দে আমিন বলে। ফেরেশতাগন যেমন নিঃশব্দে আমিন বলার কারনে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, এসময় ফেরেশতাগন আমিন বলে। তদ্রুপ ইমামও নিঃশব্দে বলার কারনে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, এ সময় ইমামও আমীন বলে।
তাছাড়া এখানে ফেরেশতাগনের আমীন বলার সঙ্গে মিল রেখে আমীন বলতে বলা হয়েছে। আর তারা তো নিঃশব্দে আমীন বলে থাকেন। সুতরাং এই হাদিসের উপর আমল তাদেরই সহিহ হবে যারা নিঃশব্দে আমীন বলবে।
২য় দলিল খন্ডন/
ইমাম তিরমিযী রহ. তাঁর লিখিত হাদীছগ্রন্থ তিরমিযী শরীফের আমীন অধ্যায়ে হযরত সুফিয়ান সাওরী রহ. এর সনদের মাধ্যমে হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে হাদীছ রেওয়ায়ত করেছেন, তিনি বলেছেন, আমি শুনেছি, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লামকে যে তিনি নামাযের মধ্যে ‘‘গাইরিল মাগদ্বুবি আলাইহিম ওয়ালাদ্ দ্বাল্লীন’’ পড়ার পর ‘আমীন’ শব্দটি কিছু দীর্ঘ আওয়াজের সাথে পড়েছেন”।
[সূত্রঃ তিরমিযী শরীফ, খ.১, পৃ.৫৭]।
এই হাদিসে রাসুলে মাকবুল (صلى الله عليه و آله وسلم) এর জোরে আমিন বলা প্রমানিত হয়। কিন্তু এটাই কি রাসুলে খোদা (صلى الله عليه و آله وسلم) এর আমল ছিল নাকি উম্মাতকে শিক্ষা দেয়ার জন্য তিনি জোরে আমিন বলেছিলেন। তার একটি প্রমান এই হাদিস থেকে দেয়া যায়।
বোখারী শরীফের কিতাবুস সালাত, কেরাআতুয যোহর; ১ম খ. ১০৫ পৃষ্ঠাতে আছে, يسمع اأية أحيانا অর্থাৎ রাসূলে কারিমصلى الله عليه و آله وسلم যোহরের নামাযে যেখানে কেরআত চুপে চুপে পড়া ওয়াজিব, তিনি কখনো কখনো যোহরের নামাযে কোন্ সূরা পড়ছেন তা জানিয়ে দেয়ার জন্য দু’চার শব্দ আওয়াজ করে পড়তেন।
তদ্রুপ কেরাতুল আছর নামক অধ্যায়েও আছে, রাসূলصلى الله عليه و آله وسلم আছরের নামাযে কোন্ সূরা পড়ছেন তা জানানোর জন্য কখনো কখনো দুই-চার শব্দ আওয়াজ করে পড়তেন। রাসূলে কারিম صلى الله عليه و آله وسلمএর এই ধরণের আমলের উপর কিয়াস করে হানাফী ফুকহায়ে কেরাম বলেন, যেভাবে যোহর ও আছরের মূল হুকুম হল, কেরাত চুপে চুপে পড়া, তারপরেও রাসূলে মাকবুল صلى الله عليه و آله وسلم যোহর ও আছরের নামাযে কোন্ ধরণের সূরা পড়তেন তা জানিয়ে দেয়ার জন্য দু’ চার শব্দ আওয়াজ করে পড়তেন।
তদ্রুপ কোরআনের আয়াত ও ছহীহ হাদীছ দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে যে, দু‘আ চুপে চুপে করা উত্তম; আমীনও একটি দু‘আ তাই আমীনও চুপে চুপে বলা উত্তম।
তারপরেও রাসূলে আক্রাম صلى الله عليه و آله وسلم সূরা ফাতিহার পর আমীন পড়া যে সুন্নাত তা শিক্ষা দেয়ার জন্য তিনি মাঝে মাঝে আমীন উচ্চ আওয়াজে পড়তেন।
হযরত ওয়াইল বিন হুজর (রা) এর অন্যান্য বর্ণনা দেখেই এটা প্রমানিত হয় যে রাসুলে খোদা (صلى الله عليه و آله وسلم) কেবল শিক্ষা দেয়ার জন্য আমিন জোরে বলেছিলেন।
বর্ণনা নাম্বার ১/
হযরত ওয়াইল বিন হুজর (রা) ইয়ামান বাসী সাহাবি ছিলেন। তিনি নবীজি (صلى الله عليه و آله وسلم) এর দরবারে দ্বীন শিক্ষা করার জন্যই এসেছিলেন। তিনি ২০ দিন নবিজি (صلى الله عليه و آله وسلم) এর সুহবাতে ছিলেন এবং ৬০ ওয়াক্ত জোরে কিরআত ওয়ালা নামাজ পড়েছিলেন। রাসুল (صلى الله عليه و آله وسلم) নিজের ঠিক পিছনে তার জন্য জায়গা নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন, হযরত ওয়াইল বিন হুজর (রা) বলেন এই ৬০ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে মাত্র ৩ ওয়াক্ত নামাজে রাসুল (صلى الله عليه و آله وسلم) জোরে “আমিন” বলেছিলেন (আর ৫৭ ওয়াক্ত নামাজে “আমিন” আস্তে বলেছিলেন)। তো আমার বুজতে বাকি ছিল না যে রাসুল (صلى الله عليه و آله وسلم) আমাকে শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যেই এমনটি করেছিলেন।
[সূত্রঃ আল আসমাউ ওয়ালকুনা : ১/১৯৭; মাজমাউজ যাওয়াইদ : ২/১১৩; নাসাঈ হা/ ৯৩২, শরহুল মাওয়াহিব : ৭/১১৩ ; শরহে বুখারী দূলাবী প্রনীত]।
বর্ণনা নাম্বার ২/
হযরত ওয়াইল (রা) থেকে ই’লাউস সুনানে বর্ণিত “একদা রাসূলে আক্রাম صلى الله عليه و آله وسلم যখন নামায থেকে অবসর হলেন তখন তাঁর চেহারা মোবারকের ডানপাশ ও বামপাশ দেখেছি। রাসূলে খোদাصلى الله عليه و آله وسلم “গাইরিল মাগদ্বুবি আলাইহিম ওয়ালাদ্ব দ্বাল্লীন’’ পড়েছেন তখন আমীনকে টেনে একটু আওয়াজ করে পড়েছেন। আমি ধারণা করছি এই আওয়াজটা তিনি আমাদেরকে শিক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যে করেছেন।”
[সূত্রঃ ই’লাউস সুনান খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ২৫২, আল আসমা ওয়াল কুনা’ ১ম খন্ড, ১৯৭ পৃষ্ঠা]।
উক্ত হাদীছটি হাকেম ছহীহ বলেছেন।
বর্ণনা নাম্বার ৩/
নাসাঈ শরীফের রেওয়ায়েতে হযরত ওয়াইল (রা) বলেন – রাসুলে কারিম (صلى الله عليه و آله وسلم) সুরা ফাতিহা শেষ করলেন তখন আমীন বললেন। আমি যেহেতু তাঁর ঠিক পিছনেই ছিলাম তাই আমি শুনতে পেলাম।
[সূত্রঃ নাসাঈ ৯৩২]।
এই হাদিস থেকেও বুঝা যায়, কেবল তাঁকে শিখানোর জন্যেই রাসুল (صلى الله عليه و آله وسلم) আমীন ঈষৎ জোরে বলেছিলেন।
উপরিউক্ত জোরে “আমিন” বলার হাদিসটি সুফিয়ান ছাউরি (রহ) থেকে বর্ণিত।
চলুন দেখে নিই তাঁর কি আমল ছিল।
ক//
হযরত সুফিয়ান ছাওরি রহ নিজেও আমিন নিঃশব্দে পড়তেন।
[সূত্রঃ আল মুহাল্লা লি ইবনে হাযম, ২য় খন্ড, ২৯৫ পৃষ্ঠা]।
খ//
ইবনে মুনযির আল আওসাত গ্রন্থে বলেছেন,
হযরত সুফিয়ান সাওরি রহ বলেন, তুমি যখন সুরা ফাতিহা সমাপ্ত করবে তখন নিঃশব্দে আমীন বলবে।
[সূত্রঃ আল আওসাত ৩য় খন্ড, ২৯৫ পৃষ্ঠা]।
তাছাড়া মজার বিষয় হল, এই নামধারী আহলে হাদিস, তথাকথিত সালাফী, ওয়াহাবীরা হযরত সুফিয়ান ছাওরি (রহ) কে মুদাল্লিস রাবি বলেন। আর এরকম রাবি ‘আন’ শব্দে হাদিস আনলে তা গ্রহন যোগ্য নয়।
৩য় দলিল খন্ডন/
হযরত আবু হোরায়রা (রা) এর হাদিস, যা দারাকুতনির সুনান গ্রন্থে উদ্ধৃত হয়েছে, উক্ত হাদিসে বলা হয়েছে – রাসুল (صلى الله عليه و آله وسلم) ফাতিহা শেষ করে উচ্চ স্বরে আমিন বলতেন।”
এটি সহিহ নয়। এর সনদে ইয়াহইয়া ইবনে উসমান সমালোচিত রাবি। তার উস্তাদ ইসহাক ইবনে ইবরাহিম যুবাইদী দুর্বল রাবী ছিলেন।
হযরত আবু দাউদ ও নাসাঈ (রহ) তাঁকে যইফ সাব্যস্ত করেছেন।
হিমসের মুহাদ্দিস মুহাম্মদ আততায়ী (রহ) তাঁকে মিথ্যুক আখ্যা দিয়েছেন।
দারা কুতনী (রহ) সুনান গ্রন্থে হাসান আখ্যা দিলেও ইলাল গ্রন্থে এর সনদ ও মতনে এখতেলাফ উল্লেখ করে বলেন – হযরত আবু হোরায়রা (রা) থেকে যুহরী (রহ) এর সঠিক বর্ণনাটি হল :
ইমাম যখন আমীন বলে তোমরাও তখন আমীন বল।
[সূত্রঃ আছারুস সুনান, পৃষ্ঠা – ১২১, ১২২]।
৪র্থ দলিল খন্ডন/
হযরত ইবনে ওমর (রা) হতে দারাকুতনির সুনানে পুর্বোক্ত বক্তব্যের মতই আরেকটি হাদিস উদ্ধৃত হয়েছে।
[সূত্রঃ দারাকুতুনী, সুনান, ১ম খন্ড, ৩৩৫ পৃষ্ঠা]।
এর সনদে একজন বর্ণনাকারী আছেন বাহর আস সাক্কা, দারাকুতনি (রহ) হাদিসটি উল্লেখ করে বলেন, বাহর আস সাক্কা দ্বইফ।
৫ম দলিল খন্ডন/
হযরত আলী (রা) থেকে এই মর্মে একটি হাদিস সুনানে ইবনে মাজা’য় উদ্ধৃত হয়েছে। সেটিও দ্বইফ। এর সনদে মুহাম্মদ ইবনে আবি লাইলা আছেন তিনি দ্বইফ ও দুর্বল।
৬ষ্ঠ দলিল খন্ডন/
হযরত আতা ইবনে আবি রাবাহ (রহঃ) বলেন, “আমি মসজিদুল হারামে ২০০ জন সাহাবায়ে ইকরাম (রাঃ) কে পেয়েছি, যখন “ওয়ালা দ্বোয়াল্লিন” বলা হতো তখন সকলেই “আমিন” জোরে বলতেন।”
[সূত্রঃ বায়হাকী, ২/৫৯]।
এই হাদিসটিও সহিহ নয়।
কেননা হাসান বসরী (রহ) ছিলেন আতার চেয়ে বয়সে বড়। কিন্তু তিনি ১২০ জনের বেশি সাহাবির দেখা পাননি। হযরত মুজাহিদ (রহ) এর অবস্থাও তাই। তাহলে হযরত আতা (রহ) কি করে দেখা পেলেন, আবার তাদের জোরে আমিন বলাও শুনলেন। অধিকন্তু, হযরত আতা (রহ) হতে এটি বর্ণনা করেছেন খালেদ ইবনে আবি আইয়্যুব। তিনি মাজহুল তথা অজ্ঞাত – অখ্যাত বর্ণনাকারী। মাজহুল ব্যাক্তির হাদিস গ্রহনযোগ্য নয়।
৭ম দলিল খন্ডন/
হযরত আবু হোরায়রা রা থেকে একটি হাদিস রেওয়ায়েত করা হয়েছে সুনানে ইবনে মাজায়। সেখানে বলা হয়েছে –
লোকেরা আমীন বলা ছেড়ে দিয়েছে! অথচ নবী কারিম (صلى الله عليه و آله وسلم) যখন ‘গাইরিল মাগদ্বুবি আলাইহিম ওয়াদ্ব দ্বল্লীন’ বলতেন তখন এতটা জোরে আমীন বলতেন যে, প্রথম কাতারের সমস্ত লোক তা শুনতে পেতেন এবং মসজিদ বেজে উঠত।
[সূত্রঃ ইবনে মাযাহ ১ম খন্ড ৬২ পৃঃ]।
এ হাদিসটিও সহিহ নয়। এর সনদে আবু হোরায়রা রা এর চাচাত ভাই আছেন, যার সম্বন্ধে ভালো মন্দ কিছুই বলা যায় না। তার শাগরেদ বিশর ইবনে রাফে অত্যন্ত দ্বইফ বা চরম দুর্বল।
হযরত ইবনে হিব্বান (রহ) তাঁর সম্পরকে বলেন – তিনি জাল হাদিস বর্ণনা করতেন, মনে হয় যেন তিনিই এগুলোর আবিষ্কারক।
আবু দাউদ শরীফেও এই একই সনদে হাদিসটি বরনিত হয়েছে তবে সেখানে “মসজিদ বেজে উঠত” বাক্যটি নেই।
৮ম দলিল খন্ডন/
নারী সাহাবী উম্মে হোসাইন (রাঃ)
তিনি বলেন- রাসুলে খোদা (صلى الله عليه و آله وسلم) আমীন বললেন। আমি পিছনের মেয়েদের কাতার হতে তা শুনতে পেলাম।
[সূত্রঃ মাযমাউজ যাওয়াদ, ১৮৭ পৃঃ; তুহ্ফাতুল আহওয়াযী ১ম খন্ড ২০ পৃঃ; তালিকুল মুমাজ্জাদ ১০৫]।
এই হাদিসটিও সহিহ নয়। এর সনদে ইসমাইল ইবনে মুসলিম মক্কি আছেন, তিনি দ্বইফ বা দুর্বল।
আর কথিত আহলে হাদিস, নামধারী সালাফী ওহাবীদের জোরে আমিন বলার কোন কোন স্পষ্ট দলিলই নেই।