হাশরের ময়দানে হাউজে কাউছার থেকে যারা বিতাড়িত হবে, তাদের মধ্যে জঘন্যতম দল হল মুরতাদ ও বিদআতীরা। যে সকল নামধারী মুসলমাগণ বিভিন্ন কারণে ইসলাম ধর্ম পরিত্যাগ করেছে তাদেরকে মুরতাদ বলা হয়। পবিত্র হাদিসসমূহে ارتدوا على ادبارهم দ্বারা এ দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। আর যে সকল নামধারী মুসলমান কুরআন সুন্নাহর অপব্যাখ্যা করে, নতুন নতুন বাতিল আকিদা আবিস্কার করেছে এবং আহলে সুন্নাত ওয়া জামায়াতের পরিপন্থী মত ও পথ গ্রহণ করেছে তাদেরকেই বেদআতী বলা হয়। পবিত্র হাদিসসমূহে ما احدثوا بعدك দ্বারা এ দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে আল্লামা হাফেজ আব্দুল জলিল (রহ.) তাঁর লিখিত হায়াত মউত কবর হাশর পুস্তকে ইমাম কুরতুবির একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন। নিম্নে তা প্রদত্ত হলো, তিনি লিখেছেন- হাদিসে উল্লেখিত اصحابى শব্দ দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, ঐ সমস্ত লোক ছিল পূর্বে মুসলমান ও হুজুরের সঙ্গী। পরে হয়ে গেছে মুরতাদ, ধর্মদ্রোহী, খারেজি, শিয়া এবং মুনকিরিনে যাকাত। আর হাদিসে উল্লেখিত هل تدرى শব্দটিকে استفهام تقديرى অর্থাৎ হ্যাঁ বোধক প্রশ্ন বলা হয়। এতে জিজ্ঞাসার সূর থাকলেও বিষয়বস্তুকে সাব্যস্ত করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। এ ধরনের বাক্যে কথার জোর হয় বেশি। যেমন বলা হয় ‘আপনি কি দেখেননি- আপনার রব হাতিওয়ালাদের সাথে কি ঘটনা ঘটিয়েছিলেন? এর উদ্দেশ্য হলো- ভালভাবে জানা ও দেখার স্বীকৃতি। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মতৃগর্ভে থেকেই আবরাহার ধ্বংসের চিত্র দেখেছিলেন। সুরা ফিল এর মধ্যে এদিকেই ইঙ্গিত করেই আল্লাহপাক বলেছেন- الم ترى ‘আপনি কি দেখেননি? অর্থাৎ অবশ্যই দেখেছেন। বাহ্যিকভাবে প্রশ্ন হলেও প্রকৃতপে স্বীকৃতি বুঝা যায়। (দেখুন আল্লামা তাহেরুল কাদেরীর কিতাবুল বিদআত পৃষ্ঠা ৫০) তদুপরি- হাদিসের শুরুতে বলা হয়েছে- হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই তাদেরকে হটিয়ে দিবেন। তারা বিতাড়িত দল।
আল্লামা কুরতুবির অভিমত
=============
বর্ণিত হাদিসসমূহে ‘ধর্মে নতুন জিনিস সংযোজন বা বিদআত আবিস্কারক’ বা মুরতাদ’ দ্বারা আল্লাহর কোরআনী নীতি বিবর্জিত মতবাদ’ দ্বীনের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত কারীদেরকেই বুঝানো হয়েছে। যেমন মোসায়লামা, যাকাত অস্বীকারকারী, খারিজি ও শিয়া সম্প্রদায়। তারা প্রথমে নবীজির সঙ্গীই ছিল। পরে নিত্য-নতুন বাতিল মতবাদ সৃষ্টি করে ইসলামের মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। এ জন্য হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে তাদেরকে হত্যা করেছিলেন। হাদিসে এদের প্রতি ইঙ্গিত করেই নবীজি এরশাদ করেছেন- এদেরকে হাশরের ময়দানে হাউজে কাউছারের কাছে ‘ঘেষতে দেয়া হবে না’। এরা হবে বিতাড়িত। উল্লেখ্য যে, দ্বীনের প্রয়োজনে যে সব ভাল উদ্যোগ নেয়া হয়েছে- তা অত্র হাদিসের অন্তর্ভুক্ত নয়।
ইমাম কুরতুবি বলেন- আরো পরবর্তীযুগে আগত রাফেযি, মোতাজিলা ও অন্যান্য ৭২টি বাতিল ফের্কার লোক হবে হাউজে কাউছার থেকে বিতাড়িত লোক। (হায়াত মউত কবর হাশর)