আহলে বায়তের প্রতি ভালোবাসা ফরয

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

আহলে বায়তের প্রতি ভালোবাসা ফরজ। কেননা জান্নাতে নারীদের নেতৃত্ব দেবেন হযরত মা ফাতেমাতুজ যাহরা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) আর পুরুষদের নেতৃত্ব দেবেন ইমাম হাসান এবং ইমাম হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)। এরাই নবীজীর আহলে বাইত তথা পাক পঞ্জতন। নবীপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আহলে বাইতের ধারা কিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। যাদেরকে ভালোবেসেই জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি পাবে নবীপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কোটি কোটি উম্মত। 

মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘হে হাবীব আপনি বলুন, আমি এর (তোমাদের নিকট রিসালাতের প্রচার। উপদেশ দান এবং সৎপথ প্রদর্শন) বিনিময়ে তোমাদের নিকট থেকে নিকটাত্মীয়ের (আহলে বাইত) ভালোবাসা ব্যতিত অন্য কোনো পারিশ্রমিক চাই না।’ [সূরা শুরা, আয়াত-২৩] 

অর্থাৎ মহান আল্লাহ সরকারে দুআলমকে তাকীদ করেছেন তিনি যেনো তাঁর উম্মতকে আহলে বাইতের ভালোবাসার শিক্ষা দেন। সে প্রেক্ষিতে হাদীসপাকে নবীপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন হযরত আবু যার (রাঃ) কাবা শরীফের দরজা ধরা অবস্থায় বলেন, আমি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘সাবধান! নিশ্চয় আমার আহলে বাইত তোমাদের নিকট নূহ (আলাইহিস সালাম)-এর নৌকার ন্যায়। যে তাতে আরোহণ করবে, সে রক্ষা পাবে। আর যে তার হতে পশ্চাতে থাকবে সে ধ্বংস হবে।’ [মুসনাদে আহমদ, মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা নং : ৫৭৩]

তাছাড়া বিদায় হজ্জ্বের ভাষণে নবীপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘হে লোকেরা, আমি তোমাদের মাঝে এমন জিনিস রেখে যাচ্ছি, তোমরা যদি তাকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করো, তবে তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। তা হলো আল্লাহর কিতাব এবং আমার ইতরাত অর্থাৎ আহলে বাইত।’ [তিরমিযি শরীফ, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা: ২১৯, হাদিস নং: ৩৭৮৬]।

অনুরূপ হযরত জায়েদ ইবনে আরকাম হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘আমি তোমাদের মাঝে এমন জিনিস রেখে যাচ্ছি, যদি তোমরা একে দূঢ়ভাবে ধারণ করো তবে তোমরা আমার পরে কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। তন্মধ্যে একটি আরেকটি অপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। একটি হলো আল্লাহর কিতাব তা একটি লম্বা রশির ন্যায়। যা আকাশ হতে জমিন পর্যন্ত বিস্তীর্ণ। আর অপরটি হলো আমার ইতরাত তথা আহলে বাইত। এ বস্তু দুটি কখনো বিচ্ছিন্ন হবে না। অবশেষে হাউজে কাউছারে আমার সাথে মিলিত হবে। সুতরাং তোমরা চিন্তা করো উভয়ের সাথে তোমরা কিরূপ ব্যবহার করছো।’ [তিরমিযী শরীফ, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা: ২১৯, হাদিস: ৩৭৮৮]

নবীপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, (আহলে বায়ত) হুসাইন আমি হতে আর আমি হুসাইন হতে। যে হুসাইনকে ভালোবাসবে আল্লাহ তাকে ভালোবাসবে। হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বংশসমূহ হতে একটি বংশ। [তিরমিযি শরীফ, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা: ২১৮, হাদিস: ৩৭৭৫]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমি আল্লাহ উভয়কে (হাসান+হুসাইন (রাঃ) ভালোবাসি সুতরাং আপনিও তাদেরকে ভালোবাসুন। আর যে উভয়কে ভালোবাসবে, আপনি তাদেরকেও ভালোবাসুন। (তিরমিযি শরীফ, ২য় খন্ড, পৃঃ ২১৭, হাদিস: ৩৭৬৯)

ফেতনা-ফাসাদের এ যুগে দেখা যাচ্ছে আহলে বায়তের প্রতি ভালোবাসা থাকা দূরের কথা, এক শ্রেণির মানুষ আহলে বায়তকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে, যা একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের কাছে অত্যধিক লজ্জাকর। যে আহলে বায়তের রক্তের বদৌলতে আমরা পেয়েছি নির্ভেজাল ইসলাম, সে আহলে বায়তের প্রতি শত্রুতা পোষণকারী নিঃসন্দেহে জাহান্নামী। যারা আহলে বায়তের প্রতি দুশমনি করলো আমি মনে করি, তার আল্লাহ ও তাঁর হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে দুশমনি করলো।

অবশেষে বলবো, আহলে বায়তের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ প্রদর্শন করে নবীজির মনে কষ্ট দেবেন না। কেননা নিশ্চয় যারা আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কষ্ট দেয় দুনিয়া ও আখেরাতে তাদের জন্যে আল্লাহর অভিসম্পাত এবং আল্লাহ তাদের জন্যে লাঞ্ছনার শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন। (সূরা আহযাব আয়ত-৫৭)।

সুতরাং, আহলে বায়তকে ভালোবেসে আল্লাহ ও তাঁর হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সন্তুষ্টি অর্জন করা আমাদের উপর অপরিহার্য।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে আহলে বায়তের প্রতি ভালোবাসা স্থাপন করে জীবন অতিবাহিত করার সুযোগ দান করুন। ‘আমিন’।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment