বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিমআল্লাহুম্মা সল্লে আলা সাইয়্যেদেনা মুহাম্মাদিন
ওয়ালা আলি সাইয়েদেনা মুহাম্মাদিন ওয়া বারিক
ওয়াসাল্লিম।
“আশুরার ফযীলত ও আমল”
আশুরা শব্দটি আরবী (আইন+ শীন+রা) “আশারা” থেকে
গঠিত, যার অর্থ দশ। এখানে আশুরা দ্বারা হিজরী ১ম মাস
মুহাররাম’র দশম দিবস বুঝান হয়েছে। বুযুর্গানে দ্বীনের
কেউ কেউ বলেন, ওই তারিখকে আশুরা বলার পেছনে কারণ
হচ্ছে ওই দিন আল্লাহ তাআলা দশ জন নবী (আলাইহিমুস
সালাম)কে দশটি বিশেষ নেয়ামতদানে ধন্য করেছেন,
ঐদিন হযরত আদম আলাইহিমুস সালাম’র তওবা কবুল করা
হয়েছিল। হযরত নুহ আলাইহিস সালাম’র মহাতরী জু’দী
পাহাড়ে ভিড়েছিল।হযরত মুসা আলাইহিস সালামকে
ফিরাউনের কবল থেকে মুক্ত করা ও ফিরাউনকে নীল নদে
ডুবানো হয়েছিল। হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের বেলাদত
হয়েছিল এবং ঐদিনই তাকে আসমানে উঠানো হয়েছিল।
হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম মাছের পেট থেকে মুক্তি
পেয়েছিলেনন এবং ঐদিনই তাঁর উম্মতের পাপ মার্জনা করা
হয়েছিল।হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালামকে কুয়া থেকে
উঠানো হয়েছিল। প্রসিদ্ধ রোগ থেকে আইয়ুব আলাইহিস
সালামেরর আরোগ্য লাভ হয়েছিল। হযরত ইদ্রীস আলাইহিস
সালামকে আসমানে উওোলন করা হয়েছিল। হযরত ইব্রাহাম
আলাইহিস সালামেরর বেলাদত ও তাঁর জন্য নমরুদের
অগ্নিকান্ড ফুল বাগান হয়েছিল। হযরত সুলাইমান
আলাইহিস সালামকে বাদশাহী ও রাজত্ব দেয়া হয়েছিল।
এছাড়া আরো অনেক নেয়ামত ও মর্যাদা লাভ এবং বহু
ঘটনাবলি ঐদিন সংঘটিত হয়েছিল, যা হাদিসের
ব্যাখ্যাকারি এবং ইতিহাস ও জীবনী গ্রন্থকার ওলামায়ে
কেরাম উল্লেখ করেছেন। প্রতীয়মান হয় যে, কারবালার
ঘটনার আগেও আশুরা এক গুরুত্বপূর্ণ ও মহিমান্বিত দিন
হিসেবে বিবেচিত হত। হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে যে,
কিয়ামত বা মহাপ্রলয়ও ১০ মুহাররাম জুমার দিন তথা
আশুরার দিনেই সংঘটিত হবে। [ গুনিয়াতুত তালেবিন কৃতঃ
হযরত আবদুল কাদের জ্বিলানী রহঃ ]
“আশুরার আমলসমুহ”
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন,”
আমি নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে
আশুরার রোযা ছাড়া অন্য কোন (নফল) রোযা একটার উপর
অন্যটাকে ফযীলত দিয়ে তালাশ করতে দেখিনি। ( বুখারি
ও মুসলিম)
হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, হুযুরে
করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে
ব্যক্তি মুহাররামের প্রথম জুমার দিন রোযা রাখে, তার
পুর্ববর্তী গুনাহ সমুহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। আর যে ব্যক্তি
মুহাররামের যে কোন বৃহস্পতি,শুক্র ও শনিবার তিনটি
রোযা রাখে, আল্লাহ তাআলা তার আমলনামায় নয় বছরের
ইবাদত (এর সওয়াব) লিখে দেন। (নুযহাতুল মাজালিস ১/১৭৬)
হযরত আয়েশা সিদ্দকা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বলেন যে,
হুযুরে পাক সল্লাল্লা৩হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেন, যে ব্যক্তি আশুরা পর্যন্ত মুহাররাম’র দশটি রোযা
রাখে তাকে (জান্নাতুল) ফিরদাউস’র উচ্চ স্থানের ওয়ারিশ
করা হয়। (নুযহাতুল মাজালিস ১/১৭৭)
সুলতানুল আউলিয়া হযরত খাজা নিজামউদ্দীন আউলিয়া
মাহবুবে ইলাহী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, শায়খুল
ইসলাম কুতুবুল আকতাব হযরত ফরীদউদ্দীন মাসউদ গন্জ্ঞে
শাকার রাহমাতুল্লাহি আলাইহি আশুরার ফযীলত সম্পর্কে
বলেছেন যে,
“আশুরার দিন বনের হরিণীও খান্দানে রাসুল সল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামার প্রতি মহব্বতের কারণে নিজের
বাচ্চাদের দুধ দেয় না। তবে কেন এ রোযা ত্যাগ
করা?” (রাহাতুল কুলুব ৫৮)
হুযুরে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেছেন, যে ব্যক্তি আশুরার দিন চার রাকাত নামায
এভাবে আদায় করে যে, প্রতি রাকাতে সুরা ফাতিহার
সাথে এগার বার কুলহুয়াল্লাহু (সুরা একলাস) পড়ে, আল্লাহ
তাআলা তার ৫০ বছরের গুনাহ মাফ করে দেন। আর তার জন্য
একটি নুরের মিম্বর তৈরী করেন।(নুযহাতুল মাজালিস ১/১৭৮)
হুযুরে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো ইরশাদ
করেন, যে ব্যক্তি আশুরার দিন নিজের পরিবার পরিজনের
জন্য খানা পিনা স্বচ্ছন্দ পরিমাণে দেয়, আল্লাহ তার জন্য
সারা বছর স্বাচ্ছন্দ্য দান করেন (বায়হাকী, নুযহাতুল
মাজালিস ১/১৭৮)
“মুহাররামের অনুষ্ঠানাদি উদযাপন ও ঈসালে সওয়াব”
একবার হযরত সাদ বিন উবাদা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এসে
আরয করলেন ইয়া রসুল্লাল্লাহ, আমার শ্রদ্বেয় আম্মাজান
ইন্তেকাল করেছেন,(আমি জানতে চাই) কী ধরনের সদকা
উত্তম হবে?(যা আমি আমার মায়ের জন্য তার রুহে সওয়াব
পৌছাতে করতে চাই) তখন নবিজী ইরশাদ করলেন, “পানি”।
তখন তিনি(সাদ) একটি কূপ খনন করালেন।আর বললেন এটা
সাদের মায়র জন্য।( আবু দাউদ শরীফ,কিতাবুয যাকাত)
হযরত শাহ আবদুল আযীয মুহাদ্দিস দেহলভী(রাহমাতুল্লাহি
আলাইহি) বলেন,”হযরত (হসান ও হুসাইন) ইমামদ্বয়ের রুহে
সওয়াব পৌছানোর জন্য নেয়াযস্বরুপ যে খানা (পাকানো)
হয় এবং যার উপর ফাতেহা,কুলকানি ও দরুদ পড়া হয়,তা
তাবাররুকাত(বরকতমন্ডিত বস্তু) এ পরিণত হয়। সে খানা
গ্রহণ করা অতি উত্তম।(ফতয়ায়ে আজিজি ৭৫)